Thursday, December 16, 2021

বিজয় দিবস

সাল ১৯৭১। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, বর্তমান বাংলাদেশে চলছে পাকিস্তানের অকথ্য অত্যাচার। জলস্রোতের মত ভারতে আসছে শরণার্থীরা। ভারতের অর্থনীতির উপর ক্রমশই বাড়ছে চাপ আর তার সাথে ভাঁজ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী, ইন্দিরা গান্ধীর কপালে। নতুন দিল্লীর সাউথ ব্লকে চলছে একের পর এক মিটিং - ফিন্যান্স, মিলিটারি, ইন্টেলিজেন্স, বিদেশ দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের সাথে, উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত কথা বলে চলেছেন ইন্দিরা গান্ধী।


এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে, ৩০শে জানুয়ারি, শ্রীনগর থেকে জম্মু যাওয়ার পথে হাইজ্যাক করা হলো ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের 'গঙ্গা' (Fokker F-27) বিমান এবং হাইজ্যাকাররা, হাশিম কুরেশী ও তার ভাই আশরাফ কুরেশী, বিমানটিকে নিয়ে যায় লাহোরে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে 'গঙ্গা' ছিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইনসের সবচেয়ে পুরনো যাত্রীবাহী বিমান এবং সেটাকে বাতিল হিসাবে ঘোষণা করার পর, এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই পুনরায় সার্ভিসে ফেরত নেয়া হয়।


বিমানটি লাহোরে নিয়ে যাওয়ার পর, পাকিস্তানে হাইজ্যাকারদের রাজকীয় সম্মান প্রদর্শন করা হয়। তাদের সাথে দেখা করেন খোদ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, জুলফিকার আলি ভুট্টো। এরপর শুরু হয় দুই দেশের মধ্যে আলোচনা। অবশেষে, ১লা ফেব্রুয়ারি, অমৃতসর হয়ে, নিরাপদে ভারতে ফিরে আসেন বিমানকর্মী ও যাত্রী সমেত মোট ৩০ জন কিন্তু বিমানটিকে লাহোরে ধ্বংস করে দেয় হাইজ্যাকাররা। এই ঘটনায় সারা বিশ্বের কাছে পাকিস্তান হেয় হলেও পাকিস্তানের শাসকশ্রেণী এই ভেবেই খুশী ছিল যে ভারতকে ঝুঁকতে বাধ্য করা গেছে।


এই ঘটনার তিনমাসের মধ্যে, পাকিস্তানকে উগ্রপন্থীদের সাহায্যকারী দেশ হিসাবে চিহ্নিত করে, ভারতের বায়ুসীমায় নিষিদ্ধ করা হয় পাকিস্তানের বিমান। এরফলে, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের দূরত্ব মুহূর্তে বেড়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে যেসব সামগ্রী সিভিল এয়ারলাইনসে পাঠানো হতো সেগুলিকে এবার তিনগুণ বেশী পথ ঘুরে আর বাড়তি জ্বালানী খরচ করতে বাধ্য হলো। এর ফলে দুর্বল হয়ে গেল পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে বিমান যোগাযোগ। অসহায় হয়ে গেল পূর্ব পাকিস্তানে থাকা তাদের এয়ারফোর্স।


এতদিনে পাকিস্তান বুঝতে পারে যে হাইজ্যাকিং এর মাধ্যমে তাদের পুরো 'মুরগী' বানিয়েছে ভারতের গুপ্তচর সংস্থা, RAW (Research & Analytical Wing)। বাতিল এয়ারক্রাফট দিয়ে তাদের কিভাবে বোকা বানানো হয়েছে সেটা তারা এতদিনে বুঝতে পারে। যে কুরেশী ভাইদের তারা এতদিন হিরো বানিয়েছিল, তাদেরই এবার শত্রু হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। একইসাথে ধরপাকর শুরু হয় লাহোর, শাহী কিলা মুজফফরাবাদের কাছে দোলাই ক্যাম্পে। গ্রেপ্তার করা হয় JKNLF এর কয়েকশো সদস্যকে। পরে, ৬ জন JKNLF সদস্যকে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সহযোগিতা করার অভিযোগে বিচার করা হয়। মজার কথা হলো এদের অধিকাংশই উভয় দেশের কাছে অপরাধমূলক কাজে যুক্ত ব্যক্তি।


প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী'র সুযোগ্য নেতৃত্বে RAW জানুয়ারি মাসে যে অপারেশন করেছিল তারই সুফল মেলে ডিসেম্বর মাসের যুদ্ধে। আজ সেই বিজয় দিবস। বাংলাদেশের সৃষ্টি পাকিস্তানকে এতটাই আহত করে যে পাকিস্তানের তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল, পাকিস্তান পিপলস পার্টির মুখপাত্র, ডেইলি মুশায়ত তাদের ১৮ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের সম্পাদকীয়তে লেখে যে "Today the entire nation weeps tears of blood. Today the Indian Army has entered Decca. Today for the first time in 1000 years Hindus have won a victory over Muslims". ভারতবর্ষকে ত্রিখন্ডিত করে তৈরী হওয়া ইসলামিক পাকিস্তানকে, সৃষ্টির মাত্র ২৩ বছরের মধ্যে দ্বিখণ্ডিত করে, নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার এই শুভ দিনে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, ভারতীয় সেনা এবং সবার চোখের আড়ালে কাজ করে যাওয়া ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থা, RAW কে আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।

Sunday, December 12, 2021

বামপন্থা

না, বামপন্থীদের নিয়ে আমার কোন ছুৎমার্গ নেই বরং আমি মনে করি যে দক্ষিণপন্থীদের উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যে বামপন্থীদের থাকার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। এটা ভুলে যাওয়া চরম ভুল হবে যে বামপন্থার জন্ম হয়েছিল কালের নিয়মে, ক্ষমতাসীন দক্ষিণপন্থীদের শোষণমূলক নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অস্ত্র হিসাবে। তাই যতদিন দক্ষিণপন্থা থাকবে, সামাজিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্যে, ততদিন বামপন্থাও বেঁচে থাকবে।


বামপন্থীদের নামকরণ নিয়ে নানারকম মত প্রচলিত আছে, যার মধ্যে, আইনসভাতে তাদের স্পিকারের বাম দিকে বসার উল্লেখও আছে কিন্তু আমার মনে হয় এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে দেয়ার মতো কারণ তারা আইনসভাতে বসার আগেই নিজেদের আলাদা পরিচয় প্রতিষ্ঠা করেছিল আর সেই কারণেই তারা নির্বাচিত হয়েছিল। আমার ধারণা অনুসারে, সমাজের অধিকাংশ মানুষের যেহেতু ডান হাত বেশী সক্ষম, বাম হাতি মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক কম, তাই প্রথাগত ধারণা ও কাজের বাইরে আলাদা পরিচয় স্থাপন করার জন্যেই বামপন্থী পরিচয় তৈরী হয়েছে।


হ্যাঁ, এবার অনেকেই ভারতে সিপিএম, সিপিআই বা বিদেশের চেসেস্কু থেকে পল পটের উদাহরণ দিয়ে বামপন্থার খারাপ দিক তুলে ধরতে পারেন কিন্তু আমার কাছে এই খারাপ হওয়ার মূল কারণ হলো ক্ষমতা লাভ। যেকোন রাজনৈতিক দলের আদর্শকে দূষিত করে দেয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেয়া। বামপন্থা স্বভাবগতভাবে হলো ক্ষমতাসীনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অঙ্কুশ কিন্তু এই অঙ্কুশ যখন নিজেই ক্ষমতায় বসে যায় তখন তার ব্যবহার হয়ে যায় শূন্য। ফলে সেটাতে জং ধরতে বাধ্য। নকশালরা কখনও ক্ষমতায় বসেনি তাই তাদের আদর্শের প্রতি, আচরণের বিচ্যুতির কথা বলছিনা, এখনও অনেকে শ্রদ্ধাশীল। এমনকি SUCI এর মত একটা ছোট্ট সংগঠনের প্রতি তাদের যা ভরসা আছে সেটা ক্ষমতায় থেকে কলুষিত সিপিএমের প্রতি আর আসবেনা।


এই কারণেই আমি বামপন্থা আর কম্যুনিজমকে এক করে দেখিনা। বামপন্থা একটা শক্তি যেটার প্রয়োজন আছে। এবার ইলেকট্রিক বলতে কেউ যদি শুধু ইলেক্ট্রিক চেয়ার বোঝেন তাহলে আমি অসহায়।

Friday, November 26, 2021

সন্ত্রাসী হামলার জাত বিচার

বিগত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছি যে ঘটনায় সমাজের উচ্চবিত্তরা সরাসরি প্রভাবিত হয় সেটা নিয়ে, প্রশাসন থেকে মিডিয়া, বেশী তৎপর হয়। তাই ২০০৬-এর ১১ই জুলাই, মুম্বাইয়ের লোকাল ট্রেনে বিস্ফোরণে ২০৯ জন মারা গেলে বা ১৯৯২-এর ১২ই মার্চের বিস্ফোরণে ২৫৭ জন মারা গেলেও আমরা অধিকাংশই সেগুলির কথা ভুলে গেছি অথচ তাজ হোটেলে হামলার কথা মনে আছে যেখানে মৃতের সংখ্যা ১৭৫ জন।


১৯৯২ এর বোম্বে বিস্ফোরণ হোক বা ২০০৮ এর জয়পুর বিস্ফোরণ, ২০০৭ এর সমঝোতা এক্সপ্রেসে হামলা হোক বা ২০১৩ সালের হায়দ্রাবাদ বিস্ফোরণ - এগুলিতে সমাজের উচ্চবিত্তরা সরাসরি আক্রান্ত হয়নি, তাই মিডিয়া আর এগুলি আমাদের 'খাওয়ায়' না। এগুলো নিয়ে, প্রতি বছর, 'Never forget, never forgive' লেখা প্রকাশিত হয়না। এই একই কারণে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত সংলগ্ন একের পর এক এলাকা হিন্দু শূন্য হয়ে চললেও কলকেতার বাবুদের সেটা নিয়ে কোন হেলদোল নেই, সেগুলো 'ছোটলোক'দের সমস্যা কিন্তু রাজাবাজারে 'দুধ দেয়া গরুরা' রাস্তা অবরোধ করলে, মুখ্যমন্ত্রীর শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার বার্তা SMS-এর মাধ্যমে রাজ্যবাসীর কাছে পৌছে যায়।


তাজ হামলা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে নগরে আগুন লাগলে দেবালয় সেটা থেকে রক্ষা পায়না। আর্থিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার কৌলিন্যর ফলে যারা জেহাদি সমস্যার প্রতি চোখ বুজে থাকে ২৬/১১ তাদের প্রতি প্রত্যক্ষ বার্তা যে দেরীতে হলেও, তোমার নম্বরও আসবে। এটা জানার পরেও যদি তাদের চোখ না খোলে তাহলে নিশ্চিত যে কিছুদিন পরে, তাদের স্মরণেও আরেকটা ২৬/১১ পালিত হবে।

Sunday, November 14, 2021

ভারতের মুসলমান বনাম ভারতীয় মুসলমান

ভারতকেশরী, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একটা কথা বলেছিলেন, "অতীতকে গ্রহণ করো যুগানুকূল করে আর বিদেশী সংস্কৃতিকে গ্রহণ করো দেশানুকূল করে"। 


অতীত আমাদের কাছে প্রেরণা, শিক্ষা কিন্তু অতীত যদি বর্তমানকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে যায় তাহলে ভবিষ্যত অনিশ্চিত হতে বাধ্য। হিন্দু সমাজ বরাবরই গতিশীল। হ্যাঁ, টুলো পন্ডিতরা কিছু সময়ের জন্যে তার গতিপথ রোধ করতে পারলেও, গতিশীলতাকে ধ্বংস করতে পারেনি আর তাই হিন্দু সমাজ বিভিন্ন যুগে সংস্কারিত হয়েছে বুদ্ধ, নানক, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, নারায়ণ গুরু বা আম্বেদকরের মত ব্যক্তিদের নিরলস প্রচেষ্টায়। 


উল্টোদিকে, মুসলিম সমাজের মধ্যে সেই গতিশীলতারই অভাব। ফলে এখনও তারা ১৪০০ বছর আগের স্মৃতি আকড়ে বসে আছে। সুদূর আরবে, জলের অভাবে শুধু হাতের তালু ও পায়ের পাতা ভিজিয়ে প্রার্থনা করা হত বলে নদীমাতৃক এই দেশে এখনও তারা সেই অভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশী সংস্কৃতিকে অনুকরণ করতে গিয়ে তারা নিজেদের সংস্কারিত করতে পারেনি অথচ খোদ আরবে এখন মসজিদ ভেঙে রাস্তা, হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। 


আরব জানে যে তার নিজের দেশের লোকসংখ্যা দিয়ে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তাই তারা বিভিন্ন দেশে আরবীদের ক্লোন তৈরি রাখছে যারা থাকবে অন্য দেশে কিন্তু আনুগত্য থাকবে আরবের প্রতি। আর এই কাজে আরবের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল ইসলাম। 


ইসলামের কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুসলিমরা সেদেশের সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হতে পারছেনা। আর একাত্ম না হতে পারার জন্যেই সবসময় তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীণতা কাজ করে। আর সেটাকেই কাজে লাগায় আরবীয় সংস্কৃতি। খনিজ তেলের কল্যাণে আরবের অর্থের অভাব নেই আর সেই অর্থের একটা বড় অংশই ব্যয় করা হচ্ছে অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে নিরাপত্তাহীণতার বোধ তৈরি করার কাজে।


আজ উত্তরপ্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের কোন মুসলিম জেহাদের নামে দেশ বিরোধী কোন কাজে লিপ্ত হয়ে, নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে নিহত হলে আরবের কিছু যায় আসেনা কিন্তু তার মা বা স্ত্রী কি একইরকম নির্লিপ্ত থাকতে পারে? তার অনুপস্থিতি কি তার পরিবারের উপর প্রভাব ফেলেনা? অবশ্যই  ফেলে কিন্তু সেটা যাতে প্রকাশ না পায় তাই আরবের টাকায় সেই মৃত্যুকে গরিমান্বিত করার চেষ্টা করা হয় শহীদের মর্যাদা দিয়ে কিন্তু যে দেশের মাটিতে তাদের জন্ম হচ্ছে, তারা বড় হচ্ছে, এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মও জন্ম নেবে সেই দেশের ক্ষতি করলে লাভটা কার হবে? এই প্রশ্ন যাতে তাদের মনে না আসে তাই প্রতি শুক্রবার করে চলে মগজ ধোলাই যাতে মুসলিমদের বসবাসকারী দেশের প্রতি নয়, আরবের প্রতি আনুগত্য বজায় থাকে।


তাই ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে যে তারা কোন পরিচয় বেছে নেবেন, ভারতীয় মুসলমান না ভারতের মুসলমান। তাদের বুঝতে হবে যে তাদের শরীরে রামের রক্ত বইছে না বাবরের!

Wednesday, October 20, 2021

মোদী ও মমতা

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকেই কংগ্রেসকে দুর্বল করার জন্যে নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছেন মমতা ব্যানার্জী। এই কারণেই গোয়া বা আসামের কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধরা, আম আদমি পার্টির মত হিন্দি বলয়ের পার্টির বদলে, তৃণমূল কংগ্রেসের মত একটা আঞ্চলিক দলে যোগদান করছে। মমতার হাতে বিপুল সংখ্যক বিধায়ক থাকায়, বিক্ষুব্ধদের প্রলুব্ধ করার জন্যে, রাজ্যসভার আসন তো আছেই। এইভাবে, জাতীয় রাজনীতিতে, রাহুল গান্ধীর বদলে নম্বর দুই হতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জী।


২০২৪-এর নির্বাচনে মোদীকে লড়তে হবে বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠান (anti-incumbency) বিরোধিতার সাথে সাথে হিন্দুত্ববাদীদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে। 'সবকা বিশ্বাস' অর্জন করতে গিয়ে 'হিন্দু হৃদয় সম্রাটে'র আসন এখন টলোমলো। এরসাথে যুক্ত হয়েছে দলের প্রমুখদের সীমাহীন ঔদ্ধত্য আর বানিয়া নীতি। এমতাবস্থায় কংগ্রেস যদি, নিজেদের বর্তমান ৪৫ সাংসদ সংখ্যাকে একশো'র উপরে নিয়ে যায় তাহলে বাড়তি আসনগুলি সরাসরি প্রভাবিত করবে বিজেপিকে আর সেক্ষেত্রে বিজেপি সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে বাধ্য। এই কারণেই মোদী কংগ্রেসের আসন কমাতে বদ্ধপরিকর আর সেক্ষেত্রে তার সেরা বাজী অবশ্যই মমতা।


এটা মমতা'র জন্যে সম্পূর্ণ win-win পরিবেশ। তিনি নিজে চরম উচ্চাকাঙ্খী হলেও এটা বোঝেন যে জাতীয় স্তরে মোদীর বিকল্প হওয়ার মত যোগ্যতা তার এখনও নেই। তাই আপাতত তিনি ২ নম্বর আসন পেলেই খুশী থাকবেন আর চোখ রাখবেন ১৯৯৬ এর মত পরিস্থিতি তৈরী হয় কিনা যেখানে ডামাডোলের বাজারে, দেবেগৌড়া বা গুজরালের মত, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। কে বলতে পারে যে তুমুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বাজপেয়ী সরকার যেভাবে সোনিয়ার কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হয়েছিল, শাইনিং ইন্ডিয়া বা ফিল গুড-এর মৌতাতে থেকে 'বিকাশ পুরুষ' বা 'লৌহ পুরুষে'র যে পরিণতি হয়েছিল, ২০২৪ এ সেটার পুনরাবৃত্তি হবেনা? এটা মাথায় রেখেই মোদী এখন মমতা'কে জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় রেখে যাবেন আর মমতাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যাবেন। হ্যাঁ, এতে বঙ্গ বিজেপি রসাতলে যাবে ঠিকই তবে আরিয়ান খানের আব্বার কি একটা ডায়লগ আছে না, "কুছ পানে কে লিয়ে কুছ খোনা পড়তা হ্যায়" আর বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব ও কার্যকলাপ দেখার পরে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে তাদের বলি দিতে মোদীর কোন কুন্ঠা হবেনা।

Monday, October 18, 2021

বাঙালী

বিজেপি'র দলদাসরা বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতন নিয়ে মোদী বা ভাগবতের মৌনতাকে যথার্থ প্রমাণ করার চেষ্টা করবে এই বলে যে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি আশানুরূপ ফল করতে পারেনি। যদিও কয়েকদিন আগে তাদের নেতারাই গর্ব করে বলছিলেন যে তারা আড়াই কোটি হিন্দুর ভোট পেয়েছেন আর মমতা জিতেছে মুসলমানদের ভোটে। এরপরেও বাংলাদেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের সম্পর্ক কি সেটা শ্রী রামই জানেন। বিজয়া দশমীর শোভাযাত্রায় অনুরাগ পোদ্দারকে বিহার পুলিশ গুলি করে খুন করলে এরা অন্যায় দেখেনা কারণ সেখানে সরকার তাদের দলের সহযোগী। আসলে 'সহী হিন্দু' হওয়ার বাসনায়, তাদের মধ্যে বাঙালী বিদ্বেষ এতটাই ঢুকে গেছে যে কোন বাঙালী সেলিব্রিটি জাতীয় স্বার্থ বিরোধী কোন মন্তব্য করলে তারা গোটা জাতিকেই 'দেশদ্রোহী' তকমা দিয়ে দেয় কিন্তু গান্ধীর মত বিকৃতকাম দেশদ্রোহীর জন্ম দেয়ার পরেও গুজরাটিরা তাদের কাছে দেশপ্রেমী। আসলে এরা জানে যে নিজেদের পেট চালানোর জন্যে, টাকার যোগান বজায় রাখতে হলে কাকে তেল দিতে হবে। তাই এই সরলীকরণ। 


উল্টোদিকে তৃণমূলের দলদাসরা। তাদের না আছে কোন আদর্শগত ভিত্তি আর না আছে কোন দূরদর্শিতা। দলের চালিকাশক্তি একটা পরিবারের হস্তগত আর বাকি সব নেতার মানসিকতাই হলো কামিয়ে নেয়া। তাই ওপার বাংলা থেকে লাথি খেয়ে আসা ক্যাডাররাও, মমতা ব্যানার্জীর "দুধেল গাই"-এর তত্ত্ব শুনে ঘাড় কাত করে, নাহলে ধান্ধা বন্ধ হয়ে যাবে যে। আর দেশের বৃহত্তম বাঙালী রাজ্যের প্রধান হয়েও, প্রতিবেশী দেশে বাঙালীদের উপর পরিকল্পিত আক্রমণ নিয়ে মমতা ব্যানার্জী নীরব থাকেন। যদিও রাজ্য থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরে, আখলাখ বা আফরাজুলদের হত্যা হলে সেই মমতা ব্যানার্জীই সোচ্চার হয়ে ওঠেন কিন্তু বাঙালী হত্যা নিয়ে, এখনও অবধি, তিনি টুঁশব্দ করেননি কারণ দুর্গা পূজার নামে ক্লাবে ৫০,০০০ টাকা দিলেই তার দায়িত্ব শেষ। বাংলাদেশ থেকে কয়েক টন ইলিশ এনে দিলেই তার জয়ধ্বনি উঠবে। তিনি বুঝে গেছেন যে মেরুদন্ডহীন বাঙালীর বিবেকের মূল্য মাত্র মাসে ৫০০ টাকা।


কিন্তু এই দুই-এর বাইরেও বাঙালী আছে যাদের মেরুদণ্ড এখনও বিক্রিত বা বিকৃত হয়নি। তাদের কাছে বাঙালীত্ব আর হিন্দুত্ব পরিপূরক। তারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্যে, কোন রাজনৈতিক মতাদর্শের কাছে মাথা বিকিয়ে দেয়নি। বাঙালী আক্রান্ত হলে তারা সোচ্চার হবেই সেটা কোন রাজনৈতিক দাদা বা দিদির অনুমতি থাকুক বা নাই থাকুক। হ্যাঁ, তারাই বাংলার ভবিষ্যৎ রক্ষা করবে। 'জয় মা কালী' তাদের মন্ত্র, তাদের প্রেরণা।

Friday, October 15, 2021

অসি বনাম মসি

অশুভকে ধ্বংসের প্রতীক মা দুর্গার পুজোকে বাঙালী 'শারোদৎসব' বানাবে, আরাধনার সময় মা'কে অস্ত্রহীন করে অসহায় মহিলার প্রতীক বানাবে, যবনদের দোকান থেকে হালাল মাংস কিনে, সেটা কবজি ডুবিয়ে খেলেও বলি প্রথা নিয়ে আপত্তি করবে, সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে পূজামণ্ডপে আযানের সময়সূচি টানাবে আর তারপরেও আশা করবে যে বাকি সবাই যেন তাদের 'মেধা'কে সম্মান করে। বিগত কয়েক দশক ধরে, শৌর্য ও সাহসিকতার মত গুণাবলীকে, তথাকথিত, বৌদ্ধিক ক্ষমতার থেকে হীন দৃষ্টিতে দেখা বাঙালীর পতনের অন্যতম কারণ।


ঘটনা কতটা সত্যি সেটা বোঝা যায় আমাদের ক্ষুদিরাম বা নেতাজী প্রীতির বদলে গান্ধীভক্তি দেখে। সংঘাতের বদলে আপোষকেই আমরা আমাদের মূলমন্ত্র হিসাবে মেনে নিয়েছি। তাই ক্ষুদিরাম এখন বাঙালীর কাছে "বাড় খাওয়া" র প্রতীক। আর এই স্বভাব কিন্তু একদিনে হয়নি, হয়েছে বছরের পর বছর আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভ্রান্ত শিক্ষার ফলশ্রুতিতে। বর্তমান প্রজন্মে এই মানসিকতার জন্যে, তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের পরিবারও সমানভাবে দায়ী। আর তার সঙ্গে দায়ী আমাদের ধর্মগুরুরা যারা সমাজকে ধর্মের শিক্ষা অর্থাৎ সামাজিক কর্তব্য পালনের শিক্ষা দেয়ার বদলে, তাঁদের শিষ্যদেরকে কেবলমাত্র আত্মবিকাশ ও আত্মপ্রচারের পথে চালিত করেছেন।


এরই ফলস্বরূপ বাঙালী, বিশেষত, তাদের যুবসমাজ এমন এক ট্যাঁশ প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে যাদের সামনে সমাজের জন্যে কাজ করার কোন পরিকল্পনা নেই, পিছনে কোন অনুপ্রেরণা নেই। ফলে শিঁকড় বিহীন, বিবেক শূন্য এই যুবসম্প্রদায় স্রোতের জলে কচুরিপানার মত ভেসে চলেছে লক্ষ্যহীন ভাবে। পুঁথিগত শিক্ষার ফলে তাঁদের মধ্যে বিদ্যা তো আসছে কিন্তু অভাব দেখা দিচ্ছে শিক্ষার। যে শিক্ষা তার পাওয়া উচিত ছিল তার পরিবার থেকে, শিক্ষকদের থেকে, ধর্মীয় গুরুদের থেকে। শিক্ষার অভাবের ফলে তাদের জীবন শুধু বর্তমান কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।


অথচ অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে এই অসুবিধা নেই। তাদের পরিবার, সমাজ, ধর্মগুরুরা আজও তাদের কারবালার কথা বলে অনুপ্রাণিত করেন, গ্বাজা এ হিন্দের স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করে দেন। ফলে নিজেদের শিঁকড়ের সাথে তাদের যোগসূত্র প্রতিদিন আরও দৃঢ় হয়। আর তাদের এই দৃঢ়তার সামনে হীনমন্যতায় ভোগে বাঙালী যুবসমাজ। তাই তাদেরই অনুকরণ করে, অনুসরণ করে, নিজেদের সীমাবদ্ধতা লুকাতে চায়। আর কচুরিপানার পক্ষে সেটা খুব অস্বাভাবিক নয়।


হালাল খাদ্যে সম্মতি দেয়া, বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার সঙ্গে নবী দিবস পালনে সম্মত হওয়া, মসজিদের সামনে দিয়ে শবদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় হরিধ্বনি না দেয়া, এই সবই আপোষের পরিচায়ক। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে আপোষের দ্বারা কোন জাতি নিজের পরিচয় ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারেনি। সেটাই যদি পারতো তাহলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পরেও, হিন্দুবহুল ভারতে কাশ্মীর বা কালিয়াচক বা আজাদ ময়দান ঘটতো না, ভারতের মাটিতে "ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে, ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ" বা "আফজল হাম শরমিন্দা হ্যায়, তেরে কাতিল জিন্দা হ্যায়" স্লোগান উঠতো না।


আপোষ করে পরিচয় ও ধর্ম রক্ষা করা যায়না। মহাভারতের সময়ে, কৌরবদের থেকে মাত্র পাঁচটা গ্রামের দাবী হোক বা বর্তমান সময়ে বিদ্যালয়ে চিরাচরিত সরস্বতী পূজার দাবী - আবেদন নিবেদনের দ্বারা কখনই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়না। অধিকার কোন ভিক্ষা নয় যা চাইলে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অধিকার হল দাবী যা দাবীদারের মধ্যে ছিনিয়ে নেয়ার শক্তি থাকা দরকার। যারা বলেন যে অসির চেয়ে মসির ক্ষমতা বেশী, আমি তাদেরকে শুধু এটাই মনে করিয়ে দিতে চাই যে মসি তখনই অসির চেয়ে শক্তিশালী যখন সেই মসির সুরক্ষায় একটা অসি নিযুক্ত থাকে।

Thursday, October 14, 2021

কুমিল্লার ঘটনা

কুমিল্লা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে কাঁদুনি গাইতে পারেন, অ্যাংরি রিঅ্যাক্ট করতে পারেন, বুদ্ধিজীবীদের একদেশদর্শীতার জন্যে গালাগাল দিতে পারেন, লম্বা লম্বা থিওরি নামাতে পারেন বা এই সুযোগে নিজের দলের প্রচারটাও সেরে নিতে পারেন কিন্তু এর কোনটাতেই আরেকটা কুমিল্লা হওয়া বন্ধ হবেনা। 


ব্রাহ্মণবেড়িয়া, নাসিরনগর, কুমিল্লা ইত্যাদি হতেই থাকবে কারণ গত কয়েকশো বছর ধরে, খুব সুপরিকল্পিতভাবে, হিন্দুদের নিবীর্যকরণের পরিকল্পনা চলছে, শক্তিহীন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে আর দুর্বল কেবলমাত্র বিলাপই করতে পারে, প্রতিশোধ নিতে পারেনা। তাই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, মূলত হিন্দুদের, উপর ক্রমাগত অত্যাচার হওয়া সত্ত্বেও কোন সংখ্যালঘু সংগঠন মানববোমার কথা ভাবেনা, ঈদের জমায়েতে বাস চালিয়ে দেয়ার কথা ভাবেনা। তারা খালি প্রত্যাশায় থাকে যে ভারত তাদের বাঁচাবে, আমেরিকা তাদের বাঁচাবে। তাদের অবচেতন মনে 'মিলেমিশে থাকার' মানসিকতার শিকড় এখনও এমন গভীরভাবে ঢুকে গেছে যে প্রিয়া সাহা'র মত কেউ হিন্দুদের উপর হওয়া নিয়মিত অত্যাচার নিয়ে সোচ্চার হলে, তার বিরুদ্ধেই ফতোয়া জারি করে।


বাংলাদেশের বহু হিন্দুই পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের এলাকায় জমি কিনে রেখেছে যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পালিয়ে আসতে পারে কিন্তু মজার কথা হলো যে পালিয়ে আসার পরেও, তারা কখনই স্বীকার করবেনা যে তারা তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হওয়া অত্যাচারের প্রেক্ষিতে পালিয়ে এসেছে। কেউ অজুহাত দেবে মা'য়ের চিকিৎসার, কেউ ছেলের উচ্চশিক্ষার বা কেউ মেয়ের বিয়ের। বরং নিজেদের সেকুলার প্রমাণ করার জন্যে, মোদী কেন CAB বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে, প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত লোকেদের ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকত্ব দেয়ার মাপকাঠি বানিয়েছেন, সেটা নিয়ে লেকচার দেবে।


বাংলাদেশের হিন্দুরা যতদিন পর্যন্ত না তাদের এই দ্বিচারিতা থেকে মুক্তি পাবে ততদিন তারা অত্যাচারের শিকার হতেই থাকবে। কিল খেয়ে কিল হজম করা ব্যক্তিদের কেউ রক্ষা করতে পারেনা। লাখখানেক রোহিঙ্গা যদি গোটা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের এক কোটি হিন্দু সেটা পারবেনা, এই কথা আমি বিশ্বাস করিনা। কিন্তু অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে তাদের নিজেদের ঠকানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের এক কোটি হিন্দু যদি, একযোগে, তাদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে সোচ্চার হয় এবং ভারতে আশ্রয় চায় তাহলে গ্যারান্টি দিতে পারি যে ভারত সহ গোটা পৃথিবী তাদের পাশে দাঁড়াবে। এবার সিদ্ধান্ত তাদের যে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার আন্দোলনেই খুশী, কালো রঙের ডিপিতেই খুশী নাকি চিরস্থায়ী সমাধান চান।

Sunday, September 26, 2021

সম্প্রীতির মূল্য

তেলেঙ্গানা রাজ্যের অষ্টম শ্রেণীর সোশ্যাল সাইন্সের বইয়ের একটা ছবি নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। ছবিটাতে একজন মুসলমান সন্ত্রাসবাদীকে কোরান আর অন্য হাতে রকেট লঞ্চার নিয়ে দেখা যাচ্ছে বলে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ কাঠামো নাকি বিপন্ন। এই বইয়ের প্রকাশকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্যে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর কাছেও দরবার করেছে স্টুডেন্টস ইসলামিক অর্গানাইজেশনের (SIO) সদস্যরা মানে যাদের একহাতে কোরান আর অন্য হাতে কম্পিউটার আছে। SIO-এর সভাপতি, ডঃ ফৈয়াজুদ্দিনের মতে এই ছবি নাকি বিদ্যার্থীদের মনকে দূষিত করবে আর তাদের মধ্যে ইসলামভীতির জন্ম দেবে। এতে নাকি সমাজের সম্প্রীতি, ঐক্য আর সংহতিও বিপন্ন হবে।

সত্যিই তো, একজন মুসলমান সন্ত্রাসবাদী একহাতে কোরান আর অন্য হাতে রকেট লঞ্চার নিতেই পারে, আজাদ ময়দানে অমর জওয়ান জ্যোতি স্তম্ভে লাথি মারতেই পারে, ইয়াকুব মেমনের জানাজায় লক্ষাধিক মুসলিম শোক পালন করতেই পারে, আফজাল গুরুর ফাঁসির জন্যে লজ্জাবোধ করতেই পারে, আল্লাহ-হু-আকবর বলে ভীড়ের মধ্যে বাস চালিয়ে দিতেই পারে, স্কুলে মিলাদ উল নবী পালিত না হলে সরস্বতী পূজা হতে না দেয়ার দাবী করতেই পারে, গ্বাজা-এ-হিন্দের স্বপ্ন দেখতেই পারে কিন্তু তাই বলে বালক বিদ্যার্থীদের মনে ইসলামভীতি তৈরী করা কখনই উচিত নয় আর সেই জন্যেই তো জ্যোতি বসুর সরকার একদম সার্কুলার জারি করে বলে দিয়েছিল যে ইসলামিক শাসকদের দ্বারা মন্দির ভাঙার কোন তথ্য ইতিহাস বইতে দেয়া যাবেনা।

এই মূর্খ প্রকাশক যে ভুল করেছে তারজন্যে কাল যদি কেউ তার কল্লা নামিয়ে দেয় তাহলে কিন্তু ভুল বুঝবেন না। সমাজে সম্প্রীতি ও ঐক্য বজায় রাখার জন্যে এই দায়িত্ব তো কাউকে নিতেই হবে, তাই না?


https://www.news18.com/news/india/telangana-govt-urged-to-delete-islamophobic-content-showing-terrorist-with-quran-from-school-textbook-4247354.html

Tuesday, August 24, 2021

শরণার্থীর আড়ালে

আয়লান কুর্দির কথা মনে আছে? হ্যাঁ, সেই বাচ্চাটার কথাই বলছি সাগরপাড়ে যার মৃতদেহ দেখিয়ে, ইউরোপবাসীদের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল সিরিয়ার মুসলিম শরণার্থীদের জন্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দরজা খুলে দেয়ার জন্যে। জার্মানিও খুলে দিয়েছিল নিজেদের সীমান্ত আর স্রোতের মত ঢুকেছিল শরণার্থীরা এবং পরিণতিতে, তাদের ধর্মানুভুতি আহত হচ্ছে বলে, জার্মানির বহু যায়গাতেই মহিলাদের বিকিনি পরার প্রতিবাদ করেছিল তারা। ছেলের মৃতদেহের সুবাদে বিখ্যাত ও লন্ডনে আশ্রয় পাওয়া আয়লানের বাবা আবেদন জানিয়েছিল যাতে অন্যান্য দেশগুলো শরণার্থীদের প্রতি আরও সহৃদয় হয়।


এরপর আসলো রোহিঙ্গা মুসলমান। মায়নমারে তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার গল্প আর তাদের দেশত্যাগের ছবি ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বজুড়ে। ডিঙি নৌকায় তাদের অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেয়ার আর নৌকাডুবির গল্প শুনে শিউরে উঠলাম আমরা। কোন জাদুবলে তারা ভারতে সীমান্ত নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পৌছে গেল দিল্লী, হরিয়ানা, কাশ্মীর অবধি। এরপর, কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যখন নোটিশ জারি করে, তাদেরকে দেশের নিরাপত্তার প্রতি বিপজ্জনক বললো, তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দেশের রাজধানীতে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, বিশাল বিশাল বাংলোর অধিবাসী আদালতের মহামান্য বিচারপতিরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে লম্বা আদেশ দিলেও তাদের একজনও কিন্তু নিজেদের বাংলোর অব্যবহৃত যায়গায় একটা রোহিঙ্গা পরিবারকেও বসাতে আগ্রহী হলেন না। ঝাড়ের বাঁশকে সেধে গাঁ* কে বা নিতে চায়!


এখন আবার এসেছে তালিবান উপদ্রুত অঞ্চলের শরণার্থীদের ঢল। কাবুল এয়ারপোর্ট আর বিমান থেকে পড়ে যাওয়ার ছবি দেখিয়ে জমি ইতিমধ্যেই তৈরী আর প্রতিবেশী দেশগুলিকে, আফগান শরণার্থীদের নেয়ার জন্যে সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে, বীজ ফেলার কাজও শুরু করে দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আফগানিস্তান এখন হিন্দু শূন্য।


কখনও সিরিয়ান, কখনও রোহিঙ্গা আর কখনও আফগানদের দেখিয়ে এই খেলা চলতেই থাকবে। উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা দ্বারা, অন্যের জমি দখল করার এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ধর্মীয়। পবিত্র গ্রন্থ অনুসারে, এই পদ্ধতির নাম হিজরাত। শরণার্থীদের ধর্মীয় পরিচয় খেয়াল করে দেখুন, অঙ্কটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর তারপরেও যদি আপনি মানবাধিকারের ভেক ধরতে চান তাহলে অভিনন্দন, আপনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে সুন্নত আর হিজাব সুনিশ্চিত করে ফেলেছেন।

Saturday, August 21, 2021

কল্যাণ সিং

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, unsung hero, এটার বাংলা কি জানিনা তবে অখ্যাত নায়ক বলা যেতে পারে। রাম জন্মভূমি আন্দোলনের সেই unsung hero হলেন কল্যাণ সিং। মন্দির আন্দোলনে আদবানী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার, এমনকি সাধ্বী ঋতম্ভরাও এক সময় যতটা প্রচার পেয়েছিলেন তার কণামাত্র পাননি কল্যাণ সিং অথচ ভারতের স্বাভিমানের উপর কলঙ্কচিহ্ন হয়ে থাকা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্যে তিনি নিজের সরকারকে বিসর্জন দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি।


কংগ্রেসের সমর্থনে, কেন্দ্রে যখন দেবেগৌড়ার সরকার গঠিত হয় তখন রাজ্যপাল রমেশ ভান্ডারীকে ঘুটি বানিয়ে, বরখাস্ত হয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কল্যাণ সিং-এর সরকার এবং বসানো হয় জগদম্বিকা পাল নামের এক পুতুলকে। তিন রাত্রি ক্ষমতায় থাকাকালীন জগদম্বিকা কত লক্ষ টাকার ফোনের বিল তোলেন সেটা, সেই সময় যারা রাজনৈতিক খবরাখবর রাখতেন, তাদের মনে আছে। যদিও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী, রাজনাথ সিং, কল্যাণ সিং-এর মন্ত্রীসভাতেই শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে প্রথম প্রচারের আলোয় আসেন কিন্তু রাজনাথের 'কড়ি নিন্দা'র সংস্কৃতি কল্যাণ সিং-এর ছিলনা। তাই তিনি রাজ্যপালের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবার, এবং এখনও অবধি সম্ভবত একবারই, বিধানসভাতে দুইজন মুখ্যমন্ত্রীর যুগপৎ আস্থাভোট নেয়া হয়। সেই ভোটে জগদম্বিকা পালকে হারিয়ে এবং কংগ্রেসের মুখে চুনকালি মাখিয়ে জয়ী হন কল্যাণ সিং। 


কল্যাণ সিং নিজে সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী থেকে রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় আসলেও না নিজের শিকড়কে কখনও ভুলেছেন আর না রাজনৈতিক স্বার্থে সেটার কখনও অপব্যবহার করেছেন। জাতপাতের রাজনীতিতে খন্ডিত উত্তর প্রদেশকে তিনি হিন্দুত্বের সুতোয় বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন। তার মৃত্যু, নিঃসন্দেহে, দেশের রাজনীতিতে এক শূন্যতার সৃষ্টি করবে। ওম শান্তি!

Monday, August 16, 2021

গোপাল পাঁঠা এবং

মহম্মদ আলি জিন্নাহর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে'র আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে, ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট সংগঠিত গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-এর রিপোর্ট করতে গিয়ে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের একটি মিলিটারি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, The trouble started early on the morning of the 16th and both sites were equally responsible. The Hindus started putting up barricades at Tala Bridge and Belgachia Bridge and other places to prevent Muslims processions coming into the town and Muslims goondas went round forcing Hindus to close their shops। মানে, দাঙ্গার জন্যে নাকি হিন্দু-মুসলমান, উভয়েই দায়ী ছিল। এরকম সিদ্ধান্তের কারণ হলো মুসলমান গুন্ডারা যখন হিন্দুদের দোকান বন্ধ করতে করতে এগিয়ে আসছিল তখন তাদের প্রতিহত করার জন্যে টাল ব্রিজ, বেলগাছিয়া ব্রিজ সহ অন্যান্য স্থানে হিন্দুরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। 


মানে, সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে, হিন্দুদের উচিত ছিল বিনা প্রতিরোধে, জেহাদিদের কাছে নিজেদের যথাসর্বস্ব সঁপে দেয়া। এই দাঙ্গার দুই মাস পরে, নোয়াখালীতে যখন হিন্দুদের উপর জেহাদিরা আক্রমণ করেছিল তখনও বানিয়া গান্ধী বলেছিল যে "হিন্দু রমণীদের দাঁতে দাঁত চেপে ধর্ষণের জ্বালা সহ্য করা উচিত"। এই কথাগুলো খুব চেনা চেনা লাগছে কি? আজ্ঞে হ্যাঁ, এই তত্ত্ব মেনেই, আজও পুলিশকে লাথি মারার পরেও বাড়িতে রেশন পৌছে যায় আর তেলেনিপাড়ার ঘটনায়, স্থানীয় পুলিশ কর্তা, হুমায়ুন কবীরের অপদার্থতা প্রকাশ করার জন্যে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্যেই মহরমের জন্যে দুর্গাপূজার বিসর্জন স্থগিত হয়ে যায়। সম্প্রীতির স্বার্থেই রবি, রুদ্রেশ, কমলেশ তিওয়ারিরা খুন হয়ে যায় কিন্তু NIA-এর দাবী মেনে PFI কে নিষিদ্ধ করা হয়না। সম্প্রীতির কারণেই জমজমের পানি আনার জন্যে বিমানের নিরাপত্তা বিধি বদলানো হয় আর কুম্ভমেলার সময় ভারতীয় রেল টিকিটের উপর অতিরিক্ত সারচার্জ নেয়।


সৌভাগ্যক্রমে, গোপাল পাঁঠা বানিয়া ছিলেননা আর স্বজাতির আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে, সেকুলার সাজার দায়ও তাঁর ছিলনা। তাই বানিয়া গান্ধী তাঁকে অস্ত্র সমর্পণের কথা বললে, মা কালীর ভক্ত বঙ্গসন্তান সেটা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। পাঁঠা কাটার অস্ত্র তিনি অনায়াসে স্বজাতিকে রক্ষা করতে পারেন। হ্যাঁ, এটাই বাঙালীর বিশেষত্ব, তারা যেমন বুক দিয়ে আগলে রাখতে পারে, প্রয়োজন হলে বুকে চেপে বসে দাড়ি উপড়ে ফেলতেও পারে। যে কাঠায় মাপ, সে কাঠায় শোধ দেয়ার মানসিকতা বাঙালীর রক্তে রয়েছে। 

জয় মা কালী।

Sunday, August 8, 2021

ছবি আর বাস্তবতা

রাজনীতিতে দেখনদারির মূল্য অসীম। সেখানে, কেউ কি করছে সেটা বড় নয়, কিভাবে সেটা দেখাচ্ছে, সেটাই প্রধান। ইংরেজিতে এটাকে বলে optics বা ছবি। কোন দলের রাজনৈতিক IT cell এর কাজই হলো এরকম optics তৈরী করা। এই optics এর উপর ভিত্তি করেই, সেটার target people মানে যাদের উদ্দেশ্যে সেটা তৈরী করা হয়েছে, তারা খুশী হয়ে যায় আর দলকে সমর্থন দেয়।


এমনই একটা ছবি গত কয়েকদিন ধরে social media তে দেখা যাচ্ছে যেখানে কাশ্মীরের লালচকে, যেখানে ২০১১ সালে পাকিস্তানের পতাকা দেখা গিয়েছিল সেখানে আজ তিরঙ্গা শোভা পাচ্ছে। দৃশ্যটা নিঃসন্দেহে সব ভারতীয়র কাছেই অত্যন্ত আবেগপূর্ণ এবং গৌরবের কিন্তু ছবি দেখে এটা কতজন বুঝতে পারছেন যে ২০১১ সালের ঘটনার সময় লালচক ছিল স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা পরিপূর্ণ আর ২০২১ এ ত্রিবর্ণরঞ্জিত লালচকে কেবল বিশেষ কয়েকজনই উপস্থিত আছেন।


এটাই optics এর মাহাত্ম্য। ছবি দেখে আপনি ভাববেন যে এককালের উপদ্রুত কাশ্মীর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের জোয়ার এসেছে কিন্তু বাস্তবে ঘটনা মোটেও তা নয়। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা উঠেছে ঠিকই কিন্তু তার ফলে না কাশ্মীরবাসীদের মানসিকতায় কোন বদল হয়েছে না সেখানে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছে। আর সেটা ঘটবেও না যতক্ষণ না পর্যন্ত সেখানে কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হিন্দুদের, উপযুক্ত নিরাপত্তা সমেত পুনর্বাসন দিয়ে, এলাকার জনবিন্যাসের পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে ভারতের যে এলাকাতেই হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েছে সেই এলাকাগুলিই হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বর্গরাজ্য হয়েছে অথবা দেশ থেকে আলাদা হয়ে গেছে অথচ তারপরেও আমরা শুধু একটা ছবি দেখেই নিজেদের সান্ত্বনা দেই যে all is well in Kashmir। 


এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেয়া যায় যে ১৯৯২ সালের ২৬শে জানুয়ারী, একতা যাত্রার শেষে, বিজেপির তদানীন্তন সভাপতি, মুরলী মনোহর যোশীও লালচকে জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন। সেই ছবিও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কিন্তু যেটা হয়নি সেটা হলো যে নরসিংহ রাও সরকার কিভাবে মিলিটারি দিয়ে লালচককে ঘিরে, চরম সুরক্ষা বলয়ের মাধ্যমে যোশীজি কে নিয়ে গিয়ে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ করেছিলেন। সেদিনও আমরা অর্ধসত্য দেখে নিজেদের ভুল বুঝিয়েছিলাম আর আজও সেই কাজই করে চলেছি। কাশ্মীরকে পুনরায় হিন্দু অধ্যুষিত না করতে পারা অবধি যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান নেই এই সত্য যতদিন পর্যন্ত নিজেরা না উপলব্ধি করতে পারবো, optics আমাদের বিপথে চালিত করতেই থাকবে।

Saturday, July 24, 2021

গুরু পূর্ণিমা

জুড়িয়া চরণ মুদিয়া নয়ন

প্রণমি তোমারে প্রভু,

রহিবে বিবেক সে শুধু আমার

বিকাবো না তারে কভু।


ঈশ্বর আর বিবেক ছাড়া আমার আর কোন গুরু নেই। হ্যাঁ, পথপ্রদর্শক বা অনুপ্রেরণা (অন্যভাবে নেবেন না) অনেক আছে, কিন্তু গুরু নেই। ব্যক্তি গুরুর দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে ভেবে, ডক্টরজী যে কারণে গৈরিক ধ্বজকে সঙ্ঘের গুরু হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন, ছোটবেলায় শোনা সেই কথাই হয়তো অবচেতন মনে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলে দিয়েছে।

না, তাই বলে আমি জীবনে গুরুর প্রয়োজনের কথা অস্বীকার করিনা। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে হয়তো তাঁর দরকার পড়ে কিন্তু সেক্ষেত্রে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই সব ক্ষেত্রে গুরু মানতে হবে, এটা মানতে পারিনা। বিশেষত সেই গুরুদের তো একদমই গুরুত্বহীন মনে হয় যারা জীবিত অবস্থায় সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ভক্তদের অবগত না করিয়ে মৃত্যুর পরে কিভাবে মোক্ষলাভ হবে তার উপায় বলেন। ঐহিক জীবনে ধার্মিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ কোন ব্যক্তির পারত্রিক জীবন বৈকুণ্ঠধামে বা শিবলোকে কাটবে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।

তাই, ঈশ্বর আর বিবেকই আমার গুরু। ঈশ্বর শক্তি যোগান আর বিবেক সঠিক পথ দেখায়। এই আত্মদীপের আলোতেই যেন সারা জীবন চলতে পারি এটাই মা কালীর কাছে প্রার্থনা। 

সবাইকে গুরু পূর্ণিমার শুভেচ্ছা।

Wednesday, July 7, 2021

আপনি আচরি ধর্ম

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তখন সিংহাসনে বিরাজমান আর তার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আসীন স্বয়ং চাণক্য, গ্রীকদের পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত তখন চক্রবর্তী সম্রাট, এমন সময়ে ভারতে এলেন গ্রীক পর্যটক, মেগাস্থিনিস। ভারতে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই তিনি রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেরালেন। রাজকর্মচারী থেকে প্রজা- সবার সাথেই কথাবার্তা বললেন। আর সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলার তিনি উপলব্ধি করলেন যে চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যের মূল চালিকাশক্তি হলেন চাণক্য। তাই তিনি চাণক্যর সাথে একদিন দেখা করার জন্যে সময় চাইলেন।

অতিথিকে দেবতা হিসাবে দেখা দেশে, মেগাস্থিনিসের আবেদন মঞ্জুর হতে দেরী হলনা। গ্রীক পর্যটককে জানিয়ে দেয়া হলো যে প্রধানমন্ত্রী কবে আর কখন, নিজ বাসগৃহে, তার সাথে দেখা করবেন। নির্দিষ্ট দিনে, সন্ধ্যার সময়, মেগাস্থিনিস উপস্থিত হলেন চাণক্যর বাড়িতে। তাকে দেখে, চাণক্য একটু অপেক্ষা করতে বলে, রাজসভার কিছু কাজ সেরে, তাকে ডাকলেন। মেগাস্থিনিস চাণক্যকে যথোচিত অভিবাদন করে বললেন যে তিনি চাণক্যর বিষয়ে অনেক কিছু শুনেছেন, তাই তাঁকে কিছু প্রশ্ন করতে চান। তার এই প্রস্তাব শুনে চাণক্য তাকে প্রতিপ্রশ্ন করলেন যে তিনি তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করতে চান নাকি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সাথে। এই কথা শুনে মেগাস্থিনিস বললেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নয়, ব্যক্তি চাণক্যর সাথেই কথা বলতে আগ্রহী।

মেগাস্থিনিসের উত্তর শুনে, চাণক্য তাঁর পাশে জ্বলা প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়ে, পাশের আরেকটা প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে প্রশ্ন শুরু করতে বললেন। মেগাস্থিনিস বললেন যে, "এটাই আমার প্রথম প্রশ্ন যে আপনি ঐ প্রদীপটা নিভিয়ে, আরেকটা প্রদীপ কেন জ্বালালেন"? তার প্রশ্ন শুনে চাণক্য মৃদু হেসে বললেন যে, "আমি যে প্রদীপটা নিভালাম সেটার তেল খরচ রাজ্যের কোষাগার থেকে আসে। আমি এতক্ষণ রাজকার্য করছিলাম, তাই ঐ প্রদীপ জ্বলছিল। আপনি আমার সাথে ব্যক্তিগত আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাই ঐ প্রদীপটা নিভিয়ে, এটা জ্বালালাম কারণ এটার তেল খরচ আমার প্রাপ্ত সাম্মানিক দিয়ে হয়"। এই কথা শুনে মেগাস্থিনিস বললেন যে আমার আর কোন প্রশ্ন নেই। সবাই চাণক্যর কথা কেন বলে সেটা আমি বুঝে গেছি।

ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীতটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল কিন্তু ঘটনা হচ্ছে যে মমতা ব্যানার্জী নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে যে মামলা করেছেন সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়, মুখ্যমন্ত্রীর বিষয় নয়। তাই এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই মামলার খরচ এবং জরিমানা, যদি দেয়া হয় এবং না দিয়ে যদি ফের সুপ্রিম কোর্টে যান সেক্ষেত্রেও যে খরচ সেটা কে বহন করছে, মমতা ব্যানার্জী নিজে নাকি রাজ্যের কোষাগার? 

Monday, June 21, 2021

আমার চোখে পশ্চিমবঙ্গ দিবস

আচ্ছা, ধরুন আমার বাড়িতে চোর ঢুকে, বেশ কিছু জিনিস নিয়ে পালাচ্ছিল। এমন সময় আমি সজাগ হয়ে গেলাম এবং চোরকে তাড়া করলাম। তাড়া খেয়ে পালাবার সময়, আমার সাথে ধাক্কাধাক্কিতে, চোরের ঝোলা থেকে, আমার বাড়ি থেকেই চুরি করা একটা মোবাইল পড়ে গেল আর আমি, চোরকে ধরতে না পারলেও, একটা মোবাইল ফেরত নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এমতাবস্থায়, আমি কি সেই মোবাইলটা পেয়েছি বলে উল্লসিত হবো নাকি বাকি জিনিস হারানোর জন্যে দুঃখিত হবো এবং সেগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবো?

না, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত হতে পারছিনা কারণ এটাও, আমার কাছে, সেই পড়ে যাওয়া মোবাইলের মতই, আংশিক প্রাপ্তি। আচ্ছা, জেহাদি হাত থেকে ছিনিয়ে আনা নিজেদেরই অংশ নিয়ে যদি রাজ্যের জন্মদিন পালন করতে হয়, তাহলে কি ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ কে ভারতের জন্মদিন হিসাবে ধরতে হবে? আমাদের দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ইত্যাদি তাহলে মাত্র সত্তর বছরের? তাহলে তো বলতে হবে যে নেহরু ঠিকই বলেছিলেন যে India is a nation in making। না, নেহরু ঠিক বলেননি, ভারতের জন্ম মোটেই ১৯৪৭ সালে নয়, রাজনৈতিক বিভাজন মোটেই দেশের জন্মদিন নির্ধারণ করেনা।

একইভাবে, বঙ্গমাতার জন্মদিনও মাত্র কয়েক দশকের পুরনো ঘটনা নয়। মা কে খন্ডিত করলেই তার জন্মদিন বদলে যায়না। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ, মাস্টারদার স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম, মাইকেল মধুসূদন দত্তের যশোর প্রভৃতি স্থান বিহীন বঙ্গমাতা আজও খন্ডিতা। তাই, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়, মা যা ছিলেন আর মা যা হবেন, আমি সেটার স্বপ্ন দেখি, মা যা হয়েছেন, সেটা নিয়ে উল্লসিত হতে পারিনা। তাই আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টি উল্লাসের নয়, বেদনার স্মৃতি বয়ে আনে। বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির কাছে পরাজয়ের বেদনা, নিজের দেশের ঐতিহ্যবাহী ভূমিখণ্ড হারানোর বেদনা, নিজের মাতৃভূমিকে জেহাদিদের হাতে খন্ডিত হতে দেয়ার বেদনা। আর এই বেদনার উপশম সেদিন হবে যেদিন আমরা মায়ের খন্ডিত অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারবো। আমার মা পূর্ব আর পশ্চিমে বিভক্ত নয়, তিনি সম্পূর্ণা।

Saturday, June 19, 2021

কালনেমির লঙ্কাভাগ

জাতীয় সুরক্ষার নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভাজন করার পরিকল্পনা আসলে বিজেপির রাজনৈতিক হতাশার প্রতিফলন। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে, সম্পূর্ণ কম্যুনিস্ট কায়দায়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ গড়ে তোলার কাজ করে চলেছে বিজেপি। কম্যুনিস্টদের শ্রেণীশত্রুর অনুকরণে, বিজেপি জন্ম দিয়েছে জাতিশত্রুর। বাঙালীর সাথে অবাঙালীর, জেলার সাথে শহরের, এমনকি একই এলাকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যেও, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে, পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ করে গেছে বিজেপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলি। এককালে এই পদ্ধতি নিয়েছিল বামপন্থীরা। কৃষকের সাথে জমির মালিকের দ্বন্দ্ব, শ্রমিকের সাথে কারখানা মালিকের দ্বন্দ্ব, ছাত্রের সাথে শিক্ষকের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। অথচ মজার কথা হলো, বিরোধরত প্রতিটা পক্ষেরই প্রতিনিধিত্ব করতো বামপন্থীরা। পশ্চিমবঙ্গে, নির্বাচনের আগে, বিজেপিও ঐ একই লাইন নিয়েছিল।

সমাজের এই ভেদাভেদকে কাজে লাগিয়ে, বিজেপি ভেবেছিল, বিরাট সাফল্য পাবে। কিন্তু নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর যখন সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় তখন সেটা গ্রহণ করা তাদের পক্ষে সহজ হয়না। পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন ছিল মোদী আর শাহর কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই আর সেই লড়াইয়ে, অযোগ্য নেতাদের উপর নির্ভর করে, মোদী আর শাহ সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত। এই ফলাফলে তাদের হাত থেকে শুধু পশ্চিমবঙ্গই হাতছাড়া হয়নি, জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। আর ঠিক এই কারণেই, ফল প্রকাশের পর, রাজ্যপাল হোক বা সিবিআই, বিজেপির হাতে যা অস্ত্র আছে, সেগুলো বিজেপি প্রয়োগ করে যাচ্ছে যাতে মমতা ব্যাকফুটে থাকেন। 

এই খেলারই নতুন অঙ্গ হলো পশ্চিমবঙ্গকে ত্রিখন্ডিত করার প্রস্তাব। 'জাতীয় সুরক্ষার' স্বার্থে নাকি এটা আবশ্যিক। তাই গোর্খাল্যান্ড, জঙ্গলমহল আর মধ্যভূমি নিয়ে, রাজ্যকে তিন টুকরো করার প্রস্তাব হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজেপির মতে, হিমালয় থেকে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের একমাত্র রাজ্যকে তিন টুকরো করে দিলেই নাকি 'অপুত্রকের পুত্র হবে আর নির্ধনের ধন, মর্তে স্বর্গসুখ, মরলে বৈকুন্ঠ গমণ' একদম নিশ্চিত। গতকাল বিজেপির এক নেতার সাথে এই বিষয়ে কথা চলাকালীন তিনি বললেন যে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে, রাজ্যকে ভেঙে, তিনটে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা নাকি আশু প্রয়োজন। আমি যখন পালটা জানতে চাইলাম যে বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত তো আসাম আর ত্রিপুরারও আছে, সেখানেও কি একই পদক্ষেপ নেয়া হবে? তখন তার উত্তর যে ওখানকার পরিস্থিতি আলাদা।

আসলে পশ্চিমবঙ্গে পরাজয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। আর যে পরিমাণ অর্থ তারা খরচ করেছে, সেটার পর মেনে নেয়াও খুব সহজ নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা হোসপাইপে করে অর্থ ঢেলেছেন ঠিকই কিন্তু সেটা ঠিক যায়গায় পড়েছে কিনা সেটা নিয়ে তারা চোখ বুজে ছিলেন। আজ যখন চোখ খুলেছে তখন দেখছেন যে টাকাও নেই আর ক্ষমতাও নেই। কেন্দ্রে এককভাবে ৩০৩ জন সাংসদ আর খোদ এই রাজ্য থেকে ১৮ জন সাংসদ থাকলেও রাজ্যের নেতারা নিজেরা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার আড়ালে লুকিয়ে আছেন। নিজেদের আরামদায়ক ঘরে বসে, কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার কথা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বড় বড় কথা বলে আর আক্রান্তদের ছবি দেখিয়ে টাকা তুলেই তাদের দৌড়ে শেষ। রাজ্য নেতারা একে অপরের নামে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেরই অভিযোগ যে অন্যজন টাকা খেয়েছে। এমতাবস্থায়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর কাছে কুমিরের শেষ বাচ্চা হলো রাজ্য ভাগ। তারাও জানে যে দলদাসরা, সব ভুলে, আবার ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাই তো সেই নেতা অনায়াসেই বলতে পারেন যে, "লোকসভা নির্বাচন আসতে তো এখনও তিন বছর বাকি। ততদিনে সবাই সব কিছু ভুলে যাবে"।

Thursday, June 17, 2021

আগামীর রাজনীতি

উপর্যুপরি তিনবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর, এবার, খুব স্বাভাবিকভাবেই, মমতা ব্যানার্জীর কাছে পাখির চোখ হল দিল্লীর মসনদ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১৪ তে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার আগে, নরেন্দ্র মোদীও তিনবার তার দলকে গুজরাট বিধানসভাতে বিজয়ী করেছিলেন। তবে নরেন্দ্র মোদীর মত মমতা ব্যানার্জী কোন সর্বভারতীয় দলের নেত্রী নন, তার সঙ্গে শারদ পাওয়ারের সামঞ্জস্য বেশী। পাওয়ার যেমন মহারাষ্ট্রকে ভিত্তি করে, সর্বভারতীয় স্তরে উঠেছিলেন, মমতাও একইভাবে, পশ্চিমবঙ্গকে ভিত্তি করে, জাতীয় রাজনীতিতে নিজের যায়গা বানাতে চাইবেন।

বিগত নির্বাচনে ব্যপক সাফল্য লাভের পর, মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃণমূল প্রথমেই চাইবে বঙ্গ বিজেপিকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে আর এই কাজে প্রধান সেনাপতি হবেন মুকুল রায় - দলবদল ও দলভাঙানোর খেলাতে যিনি প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌছে গেছেন। একটা জিনিস এখানে খেয়াল রাখবেন, প্রধান সেনাপতি বলেছি, রাজা নয়। কারণ এক্ষেত্রে রাজার ভূমিকা নেবেন অভিষেক ব্যানার্জী, যিনি খুব সন্তর্পণে যুব তৃণমূল থেকে মূল ধারায় যুক্ত হয়ে গেছেন। বঙ্গ বিজেপিকে ভাঙার সাথে সাথে, তৃণমূলের লক্ষ্য হবে ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড এবং আসাম সহ দেশের বিভিন্ন বাঙালী বহুল এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা। তৃণমূলের বাড়তি সুবিধা হল যে আগামী এক বছর পার্টির যাবতীয় নজর থাকবে উত্তর প্রদেশের দিকে, তাই পশ্চিমবঙ্গে পার্টির অবস্থা সামলানোর লোক খুবই কম।

একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে যে বিগত ছয়-সাত মাসে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাজকর্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের চরম অভাব দেখা যাচ্ছে। কৃষক আন্দোলন হোক বা নতুন IT আইন, সরকারের অসহায়তা প্রতি ক্ষেত্রেই ফুটে উঠছে। ভাবা যায়, বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের কৃষকদের মধ্যে এমন প্রভাব নেই যা আন্দোলনের গতিধারা নির্ধারণ করতে পারে! নরেন্দ্র মোদীর মুশকিল হচ্ছে যে না তিনি খুব বেশী সহযোগীকে বিশ্বাস করেন না খুব বেশী সহযোগী তাকে বিশ্বাস করেন। এই কারণেই তার পীযুষ গোয়েল বা নির্মলা সীতারামনকে ক্ষমতার অতিরিক্ত দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে।

তবে তৃণমূলের এই পরিকল্পনা যতটা সহজে বললাম, অতটা সহজে বাস্তবায়িত হবেনা তার প্রধান কারণ প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর ইমেজ। এখনও অবধি বিরোধী দলগুলি যার কোন বিকল্প তুলে ধরতে পারেনি। মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে অসম্ভব জনপ্রিয় হতে পারেন কিন্তু এখনও অবধি তার সর্বভারতীয় ইমেজ মোদীর তুলনায় নগন্য। মোদীর যেভাবে গুজরাট মডেলের বিকাশ দিয়ে সারা ভারতে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মমতাও, আগামী তিন বছর, একইভাবে, চাইবেন রাজ্যের উন্নয়নকে মার্কেটিং করতে আর তিনি যাতে সেই কাজে সফল না হন তাই মমতা ব্যানার্জীর ইমেজের উপর বারবার আক্রমণ হবে, কখনও নারদা কেস নিয়ে বা কখনও রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে যাতে মমতাকে সবসময় ব্যাকফুটে খেলতে হয়।

তাই, আপনারা তৈরী থাকুন, ২০২৪ এর নির্বাচন, যেকোন রাজনীতির ছাত্রর কাছে, একটা শিক্ষনীয় বিষয় হতে চলেছে। মোদী আর মমতার দ্বৈরথ যে খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

Thursday, June 10, 2021

সহী হিন্দু

অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম যে ভারতে সহী হিন্দু যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে সেটা একমাত্র বাঙালী, অন্য কেউ নয়। এটা শুনে আশ্চর্য হবেননা, বরং ভেবে দেখুন, সহমত হবেন। আচ্ছা, একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি।

দেখুন, হিন্দুরা কোনদিন বলপূর্বক কারুর জমি দখল করতে যায়নি, বরং শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্যেই হোক বা আক্রমণকারীদের হামলার ফলে নিজেদের জমির অধিকার হারিয়েছে। বাঙালীদের ক্ষেত্রেও দেখুন একই অবস্থা। দেশভাগ হোক বা ল্যান্ড বিল এগ্রিমেন্ট -নিজের জমি ছাড়তে বাঙালী সবার আগে। এমনকি অন্য দেশ বা রাজ্য থেকে ব্যক্তিদের জমি ছাড়তে ছাড়তে, নিজেরা বাস্তুচ্যুত হলেও বাঙালীর কোন হুশ নেই।

এবার আসুন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। এককালে সারা বিশ্বে সনাতন ধর্মের যে প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল সেটা হয়েছিল মূলতঃ সাংস্কৃতিক কারণে। একইভাবে, বাঙালীরাও বিশ্বাস করে যে রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ আর নন্দন দিয়েই তারা সারা বিশ্বকে জয় করতে পারবে। আপনি দেশের যেকোন রাজ্যে যান, সেখানে বিহার বা উত্তর প্রদেশের মূলগত জনগোষ্ঠী যেখানে বাস করে সেটা সেখানকার পরিবেশ দেখে নিজেই বুঝতে পারবেন। এমনকি ওড়িয়া বা তামিল অধ্যুষিত এলাকাতেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। কিন্তু কোন যায়গা বাঙালী অধ্যুষিত হলে সেখানকার আলাদা কোন পরিচয় গড়ে ওঠেনা।

একইভাবে, বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আপন করতে, যেটা বসুধৈব কুটুম্বকমের ভিত্তি, বাঙালীর কোন জুড়ি নেই। তাই বিরিয়ানি থেকে খৈনী, ধোকলা থেকে গুটকা - সবেতেই তার চরম উৎসাহ কিন্তু যাবতীয় বাছবিচার শুরু হয় মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে। মহরমের তাজিয়ায় বাঙালী হিংসা না দেখলেও চড়কের ঘূর্ণী তাকে ব্যথিত করে। মাংসের দোকানে লাইন দিয়ে, আড়াই পোচে কাটা মাংস কিনতে তার আপত্তি না থাকলেও বলিপ্রথা তার কাছে চরম নিষ্ঠুরতার নিদর্শন।

পরমতসহিষ্ণুতার চরম নিদর্শন দেখিয়ে বাঙালী রামনবমীতে টিনের তলোয়ার আর DJ নিয়ে মিছিল করতে পারে কিন্তু কাংলাপাহাড়িতে দুর্গাপূজা বা তেহট্টে সরস্বতী পূজা বন্ধ হলে তার কিছু এসে যায়না। ধুপের মত সে নিজেকে পুড়িয়েই অন্যকে খুশী করতে চায়। আর এই প্রবৃত্তিই তাকে এতটা পরনির্ভরশীল করে দিয়েছে যে যেকোন আগ্রাসনের সময় সে অন্যদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে, নিজে এগোতে পারেনা। এরপরেও কি বাঙালীদেরই একমাত্র সহী হিন্দু বলা যাবেনা?

Sunday, June 6, 2021

টিকা নেয়ার শিক্ষা

অবশেষে বিড়াল, থুড়ি, আমার ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়লো, মানে টিকা জুটলো। পরশুদিন বিকালে দেখলাম যে সোদপুরের সুরক্ষা ডায়গনিস্টিক সেন্টারে আজকের স্লট খালি আছে। অতএব, করে দিলাম কর্তাগিন্নির বুকিং।

সকাল ১০-১১টার স্লট বুক করা ছিল। আজ ওখানে,অর্পিতাকে নিয়ে, ১০ঃ৩০ নাগাদ পৌঁছে দেখলাম লম্বা লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে শুনলাম যে সকাল ৯টার স্লটে বুকিং করা অনেকেই তখনও টিকা পাননি। সিড়ির ঘর হয়ে লাইনটা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেছে। লাইনে, পুরুষ আর মহিলা নিয়ে প্রায় জনা চল্লিশেক দাঁড়িয়ে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সিটিজেনও আছেন। আধঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরেও উল্লেখযোগ্য স্থান পরিবর্তন হলনা। লাইনে সবাই এই ধীর গতিতে কাজ হওয়া থেকে শুরু করে মোদীর টিকানীতি - সবকিছু নিয়েই আলোচনা করছে কিন্তু তাতেও লাইন এগিয়ে চললো না। বুঝলাম যে লাইনে দাঁড়িয়ে, আলোচনা করে গায়ের ঝাল মিটতে পারে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবেনা। অতএব বাধ্য হয়েই, লাইনে এড়িয়ে ভিতরে ঢুকলাম।

ভিতরে গিয়ে, সেন্টারের ইনচার্জ কে আছেন জানতে চাওয়ায় প্রথমে উপস্থিত কয়েকজন কর্মচারী মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন আর তারপর একজন জন মহিলা বললেন যে তিনি আজকে দায়িত্বে আছেন। আমি তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম যে এতজন লোক, এতক্ষণ ধরে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের বসার কোন ব্যবস্থা নেই কেন? উত্তরে উনি অসহায়ের মত বললেন যে "আমাদের এত লোককে বসতে দেয়ার মত পরিকাঠামো নেই"। পরিকাঠামো নেই তাহলে স্লট নিলেন কেন? টিকা বেচে আয় করবেন আর ক্রেতাদের ন্যুনতম স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রাখবেন না, এটা তো হয়না - উত্তর দিলাম আমি। আমার কথা শুনে ভদ্রমহিলা বললেন যে আপনি চলুন স্যার, আপনারটা করিয়ে দিচ্ছি। মাথাটা গরম হয়ে গেলেও, খুব ঠান্ডা স্বরেই বললাম যে, অসুবিধাটা শুধু আমার নয়, অন্যদেরও হচ্ছে। ওভাবে ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকলে, এখান থেকেও রোগ ছড়াতে পারে, আপনি সেটার দায়িত্ব নিচ্ছেন তো? ভদ্রমহিলা আমতা-আমতা করে বললেন যে, "আসলে আজকে তো রবিবার, তাই কর্মী সংখ্যা কম। তাছাড়া, কম্পিউটারে বিল বের করতেও কিছু অসুবিধা হচ্ছে"। কম্পিউটারে বিল করতে অসুবিধা হলে, হাতে লেখা বিল দিন, আমি বললাম। আমরা তো টিকা নিতে এসেছি, বিল নয়। টিকাকরণ শেষ হয়ে গেলে নাহয় কম্পিউটারে আপডেট করে নেবেন। আর একটা এক্সেল শীটে এক থেকে পঞ্চাশ অবধি তালিকা প্রিন্ট নিয়ে সবাইকে দিয়ে দিন। সবাই আলাদা যায়গায় বসুক, যখন যার নম্বর আসবে, সে ডাক পাবে।

মজার কথা হলো যে আমি যখন সবার হয়ে সেন্টারের সাথে তর্ক করছি তখন উপস্থিত আর কেউ আমার সমর্থনে এগিয়ে আসলো না। বুঝলাম, এদের ক্ষোভও সেই শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতি প্রতিবাদ করার মতো। যাইহোক, ভদ্রমহিলা তারপর দু'জনকে ডেকে কিছু বললেন আর আমাকে আবার অনুরোধ করলেন আগে টিকা নিয়ে নিতে। আমি আর ওনার কথা ফেললাম না, উপরে গিয়ে, হ্যাঁ, লাইনে থাকা বাকিদের আগেই, দুজনের টিকার দাম দিয়ে, টিকা নিলাম। ও হ্যাঁ, এবার হাতে লেখা বিলই দেয়া হলো। টিকা নেয়ার পরে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন নেমে আসছি তখন সিড়িতে দেখলাম তিন-চারজন দাঁড়িয়ে আছেন আর সেন্টারের অন্য একটা অংশ খুলে দেয়ায়, বাকিরা সেখানে বসে আছেন। আর কি, দু'জনে হাসতে হাসতে গাড়ির দিকে চললাম।

Monday, May 31, 2021

বিজেপির হতাশা

নারদা কান্ডে চার্জশিট পেশের সময় গ্রেপ্তারি হোক বা মুখ্যসচিব পদে এক্সটেনশন দেয়ার পর বদলির আদেশ, এসবই আসলে অমিত শাহর হতাশার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তিনি এখনও ভাবতেই পারছেননা যে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে, চলতি ভাষায়, মুরগী বানিয়ে, নিজেদের পকেট ভারী করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপি নিজেদের যাবতীয় শক্তি ঢেলে দেয়ার পরেও যে ফল হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বিপর্যয়। 

আসলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবস্থা অনেকটা বলিউডে ক্যাটরিনা কাইফের মত হয়েছে। দীর্ঘদিন বলিউডে কাজ করার পরেও, ক্যাটরিনার হিন্দি উচ্চারণ এতটাই যান্ত্রিক যে এখনও তিনি খাঁটি ভারতীয়র ভূমিকায় খাপ খাওয়াতে পারেননা। তাকে যদি কোন সিনেমায় 'গাঁও কি গোরী' হিসাবে দেখানো হয় তাহলে সেই সিনেমার পরিণতি কি হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। এই কারণে চিত্রনাট্য তৈরীই করা হয় তাকে প্রবাসী ভারতীয় হিসাবে দেখাতে। প্রায় একইরকম সমস্যা ছিল বাংলা সিনেমাতে অরুন্ধতী দেবীর। তার অ্যাপেয়ারেন্সটা এতটাই বনেদী ছিল যে তাকে গ্রামের কোন সরল, সাধাসিধা মেয়ের ভূমিকায় মানাতনা। এই নিয়ে তিনি নিজেও ক্ষেদ প্রকাশ করেছেন কিন্তু পরিচালকের কিছু করার ছিলনা।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবস্থাও হয়েছে সেই ক্যাটরিনা কাইফের মত। যাই করুক না কেন, 'জয় শ্রী রাম' না বললে ঠিক কমফোর্ট জোনে যেতে পারেনা। এমনকি কফি হাউসের দখল নিতেও গেছিল গেরুয়া গেঞ্জি পরে। না, কফি হাউস বাংলার সংস্কৃতির একমাত্র প্রতীক নয় কিন্তু যারা সেটার দখল নিতে যাচ্ছে, তারা তো সেটা ভেবেই যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে, যস্মিন দেশে, যদাচার করতে বাধা কোথায়? বাধা সেই ক্যাটরিনা কাইফ। তাকে NRI দেখালে তবে কনফিডেন্স আর কমফোর্ট পায় আর বঙ্গ বিজেপির কনফিডেন্স আর কমফোর্ট হলো গেরুয়া শার্ট আর জয় শ্রী রাম। 

এরইফলে, মমতা ব্যানার্জী ক্রমাগত বিজেপিকে বহিরাগত বলে আক্রমণ করেছেন আর বিজেপিও নিজেদের চেনা ফর্মুলার বাইরে না বেরিয়ে, সেই অভিযোগকেই যথার্থ প্রমাণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে লাভ জেহাদ যে একটা বড় বিপদ সেটা নিয়ে তপন ঘোষ প্রথম যখন সোচ্চার হয়েছিল তখন সেটার মধ্যে মাটির গন্ধ ছিল। কেউ সেটাকে বাঙালী পরিচয়ের প্রতি থ্রেট বলে ভাবেনি। কিন্তু বিজেপি নেতারা যখন তাদের ভাষণে 'অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড' তৈরীর প্রতিশ্রুতি দেন, বাঙালী তখন সেটার সাথে একাত্ম হতে পারেনা। বরং আতঙ্কিত হয় যে এই রাজ্যকেও বোধহয় বদলানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বঙ্গবিজেপি যতদিন না পর্যন্ত এই ক্যাটরিনা কাইফ সিনড্রোম থেকে বেরোতে পারবে, তাদের পক্ষে সাফল্য পাওয়া কঠিন। অনেকেই হয়তো এটা শুনে ২০১৯ এর ১৮টা আসনের উদাহরণ দেবেন কিন্তু তারা ভুলে যাবেননা যে সেই নির্বাচন হয়েছিল পুলবামা আর বালাকোটের আবহে, জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষাপটে। সেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আঞ্চলিক পরিচয়ের থেকেও জাতীয় পরিচয় নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। তবে সময় কখনও থেমে থাকেনা। রাজনীতিতে সাফল্য আর ব্যর্থতা - দুই-ই ক্ষণস্থায়ী। ভুল থেকে যে দল তাড়াতাড়ি শিক্ষা নিতে পারবে, তারই লাভ।

Thursday, May 27, 2021

ডিজিটাল দ্বারপাল

ডিজিটাল পৃথিবীতে কোন কিছুই আর গোপন নয়। আপনার করা প্রতিটি বার্তালাপ (conversation), প্রতিটি বিনিময় (transaction) এর ছাপ থেকে যায় সারা জীবনের জন্যে। আপনি হয়তো Incognito অথবা VPN ব্যবহার করে নিজেকে নিরাপদ ভাবছেন কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন যে ব্রাউজার এবং আপনার ব্যবহৃত কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের ব্রাউজিং ইতিহাসে সেই তথ্যের প্রতিলিপি থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার বিনিময় করা তথ্যের নিরাপত্তার জন্যে আপনি বিশ্বাস করছেন গুগল, ফেসবুক, ট্যুইটার বা হোয়াটসঅ্যাপের মত কারিগরি দৈত্যদের (technical giants) দেয়া আশ্বাসবাণীর উপরে যে আপনার তথ্য পুরোপুরি encrypted। এবার এই encryption কতটা সত্যি আর কতটা নিরাপদ সেটা নিয়ে আপনি তো ছাড়, কোন সরকারেরও পুরোপুরি ধারণা নেই। এই কারিগরি দৈত্যদের মুখ্যালয়ে, যেখানে বিভিন্ন সার্ভারের মাধ্যমে বিনিময় বা সঞ্চিত হচ্ছে আপনার তথ্য, সেখানে প্রবেশাধিকার রয়েছে কেবলমাত্র বিশেষাধিকার প্রাপ্ত কিছু ব্যক্তির। ফলে, তাদের দেয়া আশ্বাসবাণীর কতটা ঠিক, সেটা বিচার করার ক্ষমতা নেই আমার বা আপনার।

এই পরিস্থিতিতে, ভারত সরকার বর্তমান IT আইনে কিছু পরিবর্তন করে, সোশ্যাল মিডিয়াকে, তাদের মাধ্যমে প্রচারিত তথ্যের বিষয়ে দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। এটা অস্বীকার করার কোন যায়গা নেই যে আজ থেকে ১৫ বছর আগে চলা অর্কুট বা ইয়াহু মেসেঞ্জার ছিল মূলত ব্যক্তিগত আলাপচারিতার মাধ্যম। এমনকি প্রাথমিক অবস্থায় ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের ব্যবহারও ছিল প্রধানত ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু বর্তমানে হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মতাদর্শ প্রচারের এবং তার মাধ্যমে স্বার্থসিদ্ধির অন্যতম হাতিয়ার। দেশের বিভিন্ন যায়গায় গণপিটুনির ফলে যেসব মৃত্যু ঘটেছে সেগুলি ঘটানোর পিছনে ব্যবহৃত হয়েছে হোয়াটসঅ্যাপের মত অ্যাপ। তাই, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনের পরিবর্তনটাও জরুরী আর সেটা মাথায় রেখেই, পরিবর্তিত আইনে, সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচারিত কোন বার্তার, যা দেশের একতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হতে পারে, দায় নিতে হবে সেই মিডিয়াকেও। প্রয়োজনে প্রশাসনকে জানাতে হবে যে সেই বার্তার উৎস কোথা থেকে হয়েছে। আর সেই কাজ করার জন্যেই কোম্পানিগুলোকে বলা হয়েছে একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার (যিনি দেখবেন যে আইন ঠিকমত অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা), একজন নোডাল অফিসার (যিনি প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রাখবেন) এবং একজন অভিযোগ সুরাহার অফিসার বা Grievance Redressal Officer (যার কাছে অভিযোগ জানানো যাবে) আর এদের তিনজনেরই ভারতের কোন ঠিকানা দিতে হবে যাতে অনির্দিষ্টকালের জন্যে উত্তরের অপেক্ষায় বসে না থাকতে হয়। আর একইসাথে, প্রতি মাসে, অভিযোগ প্রাপ্তি ও সেগুলির সুরাহার বিষয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে।

এখানেই বড় কোম্পানিগুলোর ব্যথা হচ্ছে যে এতদিন তারা, encryption ও ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার বাহানায় যে দায়িত্ব এড়িয়ে যেত এবার থেকে সেগুলির দায় তাদের নিতে হবে। গ্রাহকদের বিভিন্ন তথ্য, এমনকি তাদের বিনা অনুমতিতে নেয়া তথ্য বেচেও তারা যে বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করতো অথচ সেগুলির দায় তাদের ছিলনা, এবার সেই পরিস্থিতি বদলাতে যাচ্ছে। আপনার তথ্যের বিনা অনুমতিতে ব্যবহার কিভাবে হয় সেটা খুব সহজে বুঝতে ফ্লিপকার্ট বা অ্যামাজনে যেকোন একটা জিনিস নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করুন আর তারপর ফেসবুক খুলুন, দেখবেন সেই প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন আপনার টাইমলাইনে ভেসে উঠবে। অফ-ফেসবুক অ্যাক্টিভিটির মাধ্যমে ক্রমাগত এই গোয়েন্দাগিরি চালিয়েই যাচ্ছে বিভিন্ন অ্যাপ। এমনকি অ্যালেক্সা বা গুগল ডট-এর মত স্বর চালিত (voice driven) প্রযুক্তির যন্ত্রগুলি, আপনার অনুমতি ছাড়াই রেকর্ড করে নিচ্ছে আপনার পরিবারের আভ্যন্তরীণ আলোচনা।

এমতাবস্থায়, আমি ভারত সরকারের নতুন আইনকে অবশ্যই সমর্থন করি। ডিজিটাল দুনিয়া থেকে আজকে আর বেরিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় কিন্তু সেখানে যখন থাকতেই হবে তখন সেই দুনিয়ার দ্বারপাল হিসাবে, সিলিকন ভ্যালির কোন অজ্ঞাত সার্ভারের বদলে আমি আমার নির্বাচিত সরকার ও প্রশাসনের উপরেই বেশী ভরসা রাখবো।

Saturday, May 22, 2021

পটপরিবর্তন

গণতন্ত্রে প্রত্যেকটা নির্বাচিত সরকারের একটা নির্দিষ্ট সময়কাল আছে আর, আমার বিশ্বাস, কোন সরকারের বিচার তার পূর্ণ সময়কালের ভিত্তিতেই করা উচিত। এই সময়কালের মধ্যে সেই নির্বাচিত সরকার যে কাজ করবে, সেটা আমাদের পছন্দ হোক বা অপছন্দের, সেগুলোকে এক-একটা ফিডব্যাক বা ডাটা হিসাবে মনে রাখা উচিত কিন্তু একটা বা দু'টো কাজের পরিপ্রেক্ষিতে কখনোই সেই সরকার সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়।

উদাহরণস্বরূপ, করোনা পরিস্থিতিতে, বিশেষত দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমণের সময়, নরেন্দ্র মোদী সরকার এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা নেয়া থেকে বিরত থেকেছেন যেগুলো অন্যভাবে হলে হয়তো ভাল হতো কিন্তু তার মানে এই নয় যে মাত্র দু'বছর আগে, গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ চাইবো। হ্যাঁ, সমালোচনা হতেই পারে আর সেটাই গণতন্ত্রে কাম্য কিন্তু একইসাথে সহযোগিতার হাতও বাড়িয়ে দিতে হবে। ভজন মন্ডলী তাদের স্তাবকতা বন্ধ করবেনা এটা স্বাভাবিক কিন্তু সুস্থ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্বার্থে, সহযোগিতা ও সমালোচনা একসাথে চলা উচিত।

একইভাবে, রাজ্যের ক্ষেত্রেও এই যুক্তি প্রযোজ্য। সদ্যনির্বাচিত একটা সরকারকে খামোখা উত্যক্ত করার পক্ষপাতী আমি নই। মমতা ব্যানার্জী সরকারের কিছু সিদ্ধান্ত আমার মনমতো নাই হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে আমার কাছে প্রতিবাদ করার রাস্তাও রয়েছে। যদিও গতবছর মমতা ব্যানার্জী সেই সমালোচনা সহ্য করতে পারেননি এবং আমাকে গ্রেপ্তার করান কিন্তু তা সত্বেও আমার গণতন্ত্র ও সংবিধানের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে আর তাই ভাল কে ভাল আর খারাপ কে খারাপ বলার জন্যে দলের অনুমোদনের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকিনা।

মোদী ঠিক না ভুল এটা আবার নির্ণয় করার সুযোগ আসবে আজ থেকে তিন বছর পরে। এই তিন বছর নিজের মস্তিষ্ক আর বুদ্ধিমত্তাকে উন্মুক্ত রাখুন যাতে এই সময়ের মধ্যে হওয়া যাবতীয় ঘটনা আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। আর হ্যাঁ, তখন যদি আপনার সিদ্ধান্ত হয় যে মোদী ভুল ছিল তাহলে আপনাকেই বাছতে হবে যে মোদীকে সরিয়ে দিলে, তার স্থানে, বিকল্প কে হবে। পশ্চিমবঙ্গে এই বিকল্প মুখ না থাকার কারণেও বিজেপি কাঙ্ক্ষিত সাফল্য পায়নি, যদিও আমি যখন সেই প্রসঙ্গ তুলেছিলাম তখন ভজন মন্ডলীর অনেকেই আমার কথার প্রতিবাদ করে, আসাম, উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি যায়গার উদাহরণ দিয়েছিল। তখনও বলেছিলাম আর এখনও বলছি যে সব রাজ্যের চরিত্র এক নয়। তাই যাকে অপছন্দ, তার বদলে কাকে পছন্দ সেটা এখন থেকেই ভেবে রাখুন।

Thursday, May 20, 2021

প্ল্যান বি

অজয় দেবগণের দৃশ্যম সিনেমাটার কথা মনে আছে? মূল সিনেমাটা শুনেছি যে একটা মালয়ালম সিনেমা থেকে 'অনুপ্রাণিত', তবে মূল সিনেমাটা আমি দেখিনি বলে অজয় দেবগণের সিনেমাটার কথাই বলছি। সিনেমাটাতে অজয় দেবগণ বারবার নিজের পরিবারের নির্দোষ হওয়ার কথা বললেও আর সেটাকে বিভিন্ন সাক্ষী সমর্থন করলেও হঠাৎ একজন সাক্ষী বলেন যে অজয় ও তার পরিবারের সাথে তার সেই ঘটনার দিনের পরেও দেখা হয়েছিল আর তাই তার এতকিছু বিশদে মনে আছে। এটা শুনেই গোয়া পুলিশের ডিআইজির ভূমিকায় অভিনয় করা টাবু বুঝতে পেরে যান যে অজয় কিভাবে পুলিশকে বোকা বানিয়েছে।


হ্যাঁ, ঐ সিনেমার মতই কৈলাশ, মুকুল, দিলীপ বা শিবপ্রকাশরা পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মোদী-শাহ-নাড্ডাদের একটা সিনেমা দেখিয়েছেন। তারা খুব পরিকল্পিত ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর সামনে সিনেমার মত দৃশ্য তুলে ধরে দেখিয়েছেন যে বঙ্গ বিজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর এই দৃশ্য দেখিয়ে তারা শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর থেকে নয়, বিভিন্ন টিকিট প্রাপক ও ব্যবসায়ীদের থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের এই দৃশ্য রচনা দেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর মত স্থানীয় কর্মীরাও আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু তারা কেউই বুঝতে পারেনি যে আনারকলি সিনেমার রাজসভায়, পৃথ্বিরাজ কাপুর আকবর সাজতে পারেন কিন্তু তার ফলে তিনি বাস্তবে আকবর হয়ে যাবেন না। 

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও রাজ্যের কর্মীরা স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবের রুক্ষ জমিতে মুখ থুবড়ে পড়েন নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে। বঙ্গ বিজয় নিশ্চিত ভেবে বিজেপি তার যাবতীয় শক্তি পশ্চিমবঙ্গে উজাড় করে দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর প্রায় দুই ডজন সভা হোক বা অর্ণবকে দিয়ে রিপাবলিকের বাঙলা চ্যানেল খোলানো- কার্পণ্য করা হয়নি এতটুকু। অথচ তারপরেও যখন দেখা যায় ২০০ আসনে জয়লাভের দাবী করা বিজেপি বাস্তবে ১০০ টা আসনেও জিততে পারেনি তখন মুখরক্ষা করার জন্যে বিজেপিকে কিছু একটা করতেই হতো নাহলে ক্যাডারদের সামলানো যেতনা।

এই ড্যামেজ কন্ট্রোলের প্রথম ধাপ হিসাবে প্রচার করা হলো যে বিজেপি নাকি একশ'র বেশী আসনে ১০০০ এর কম ভোটে হেরেছে। যদিও বাস্তব হলো যে ১০০০ এর কম ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ৭টা আসনে আর তারমধ্যে বিজেপি জিতেছে - দিনহাটা, ঘাটাল, বলরামপুর ও কুলটি - ৪টি আসনে আর হেরেছে - জলপাইগুড়ি, তমলুক ও দাঁতন - ৩টি আসনে। এরপরে প্রচার হলো যে রাজ্যের সব আসনের পূনঃর্গণনা চেয়ে তারা নাকি আদালতের শরণাপন্ন হবে কিন্তু ফলপ্রকাশের পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনও তারা আদালতে যেতে পারলেন না।

আসলে তাদের এই প্রচারগুলির সবক'টাই ছিল ক্যাডারদের ও ডোনারদের বোকা বানানো যাতে তারা জবাবদিহি চাইতে না পারে। এখন রাজ্যের দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রী সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার যে খেলা চলছে সেটাও সেই distraction game এর অঙ্গ। তাই নারদা কেসে, CBI এর পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে সংসদের স্পিকারদের কাছে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলী ঘোষ দস্তিদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার অনুমতি চাওয়া হলেও আজ অবধি সেই অনুমতি পাওয়া যায়না। "বহুত হুয়া ভ্রষ্টাচার, আব কি বার মোদী সরকার" স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদী যে ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর তার প্রমাণ অগাস্তা ওয়েস্টল্যান্ড, 2G, এয়ারসেল ম্যাক্সিস থেকে সুনন্দা পুস্করের মৃত্যুর তদন্তেই প্রমাণিত। সারদা কেসে সুদীপ ব্যানার্জী, মদন মিত্র, তাপস পাল সহ বিভিন্ন অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হলেও তদন্তের কোন পরিণতি আজও হয়নি। তাই আজ CBI হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে, চারজনকে গ্রেপ্তার করে, হেফাজতে রাখার জন্যে যতই অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে কলকাতা হাইকোর্টে নিয়ে আসুন, মোদী সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকেই যাবে।

Monday, May 3, 2021

ঠোঁট ও কাপের ফাঁক

দলবদলু বা ভোলবদলুদের দিয়ে যে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়না সেই শিক্ষা, আশা করি, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পেয়েছেন। রাজীব ব্যানার্জী, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, প্রবীর ঘোষাল বা বৈশালী ডালমিয়া, সব্যসাচী দত্ত, জিতেন্দ্র তিওয়ারি বা শীলভদ্র দত্তরা নিজেদের লার্জার দ্যান লাইফ ইমেজ বানাতে পেরেছিলেন কেবলমাত্র মমতা ব্যানার্জীর ইমেজ আর প্রশাসনিক সাহায্যকে মূলধন করে। তাদের ব্যক্তিগত সাপোর্ট বেস শূন্য।

একইভাবে, নন্দীগ্রামে হিন্দুদের উপর চরম অত্যাচার করা শুভেন্দু অধিকারী, যে দলবদল করেই হিন্দুত্ববাদীদের কাছে ব্লু আইড বয় হয়ে গিয়েছিল, কোনরকমে নিজের আসন রক্ষা করতে পারলেও পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টা আসনের মধ্যে ১০টা জিতে গিয়েছে তৃণমূল। যে লোকসভা থেকে শুভেন্দু দুইবার জয়ী হয়েছিলেন সেই তমলুক লোকসভার অন্তর্গত ৭টা বিধানসভার মধ্যে মাত্র দু'টোতে জিততে পেরেছে শুভেন্দুর নতুন দল। নন্দীগ্রামে মমতা ব্যানার্জীকে অন্তত ৫০ হাজার ভোটে না হারাতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার দাবী করা শুভেন্দু অধিকারী নিজের কথা রাখেন কিনা সেটা তো জনগণ নজরে রাখবেই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে জনগণ কিন্তু সব মনে রাখে আর সময়মত শোধ দিয়ে দেয়।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভেবেছিল যে আসাম আর ত্রিপুরার মত পশ্চিমবঙ্গেও দলবদলুরা আসলেই সরকার হেঁটে হেঁটে বাড়ি চলে আসবে আর তাদের সেই কল্পনায় হাওয়া দিয়েছিল এই রাজ্যের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন কিছু দলবদলুরা।  পরিণতিতে, বিজেপির আমও গেছে আর ছালাও গেছে। এরসাথে যোগ করুন বিজেপি নেতাদের মাত্রাছাড়া ঔদ্ধত্য। ক্ষমতায় আসার আগেই তাদের প্রতিটা আচরণে অহংকার চুইয়ে পড়েছে। সমর্থকরা সামান্য ক্ষোভ বা অভিমান প্রকাশ করলেই তাদের সাথে কুকুর- বেড়ালের মত ব্যবহার করেছে রাজ্য নেতা ও তাদের স্তাবকরা। এর মূল্য তো দিতেই হবে।

নির্বাচনে হারার পর, খুব প্রত্যাশিতভাবে, বিজেপি ও তার আইটি সেল সব দোষ দেবে মছলিখোর বাঙালীদের। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা নিদান দেবেন যে বাঙালীরা সহী হিন্দু নয়, তাই বিজেপিকে ভোট দেয়নি। অথচ ফলাফল যদি উল্টো হতো, তাহলে রাজ্য বিজেপিতে গজিয়ে উঠতো প্রচুর 'চাণক্য' আর সোশ্যাল মিডিয়ার যোদ্ধারা হয়ে উঠতেন কলিযুগের অর্জুন। কিন্তু হায়, সেরকম যেহেতু হয়নি তাই সব দোষ বঙ্গালীর। ব্যর্থতা বরাবরই অনাথ হয় আর এখানেও তার ব্যতিক্রম হবেনা। 

অনেকে বলতে পারেন যে ঊনিশের নির্বাচনে বিজেপি দলবদলুদের নিয়ে তো সাফল্য পেয়েছিল। তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে ২০১৯এ দলবদলু নিয়েও সাফল্যলাভের দু'টো কারণ ছিল - ১. প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর কোন বিকল্প না থাকা এবং ২. পুলবামা হামলা ও পরবর্তীতে বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদের জোয়ার। ২০২১ এ, এই রাজ্যের নির্বাচনে, মমতা ব্যানার্জীর বিকল্প মুখ কে? জনগণ যখন মমতাকে সরানোর জন্যে বোতাম টিপবে, তখন সে মমতার বদলে কার মুখ ভাববে, দিলীপ, শুভেন্দু, মুকুল, অর্জুন, লকেট, স্বপন নাকি অন্য কেউ? আগেও বহুবার বলেছি নির্দিষ্ট কোন মুখ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে যাওয়া মূর্খতা। সেই কথা যখন বলেছি তখন অনেক দলদাস আসাম, ত্রিপুরা বা উত্তরপ্রদেশের দৃষ্টান্ত দিয়ে, সেই সিদ্ধান্তকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছিল। তখন যেটা বলেছিলাম, এখনও সেটাই বলবো, প্রত্যেকটা রাজ্যের চরিত্র আলাদা, একটা কমন ফর্মুলা সব যায়গাতে চলেনা। তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের চিন্তার যায়গাটাও বুঝতে পারছি। কোন মুখ ঘোষণা করা হয়নি বলে আজ দলের বিধায়ক সংখ্যা তবু ৭৭ এ গেছে, মুখ বলে দিলে যে অন্তর্ঘাতের ফলাফল কি হতো সেটা শ্রী রামই জানেন।

Friday, April 30, 2021

বিরোধী দলের দায়িত্ব

সাল ১৯৯৬। একাদশ লোকসভা নির্বাচনের শেষে, ১৬১ টা আসন নিয়ে, লোকসভার বৃহত্তম দল হিসাবে রাষ্ট্রপতির থেকে সরকার গঠনের নিমন্ত্রণ পেলেন অটল বিহারি বাজপেয়ী এবং দেশের দশম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন।

শপথ গ্রহণের পর, প্রথাগতভাবেই, বাজপেয়ীকে লোকসভায় নিজের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বললেন তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা এবং সেই অনুযায়ী লোকসভাতে আস্থা প্রস্তাব পেশ করলেন বাজপেয়ী। লোকসভার যোগ্যতম ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও, রামমন্দির পুনঃনির্মাণকে সমর্থন করা, বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর পাশে শিবসেনা ও অকালি দল ছাড়া ছিলনা আর খুব বেশী দল। ফলে, সরকারের পতন অনিবার্য ছিলই কিন্তু তখন লোকসভার কার্যকলাপের সরাসরি সম্প্রচার দূরদর্শনে শুরু হয়ে যাওয়ায় আস্থা ভোটের সময়, কংগ্রেস ও কম্যুনিস্টদের নোংরা রাজনীতিকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করে দেয়ার এই সুযোগ ছাড়লেন না বাজপেয়ী এবং আদবানী। আস্থা ভোটের স্বপক্ষে বলতে উঠে কংগ্রেস ও কম্যুনিস্টদের একের পর এক উলঙ্গ করে দিলেন আদবানী, প্রমোদ মহাজন, অরুণ জেটলী, সুষমা স্বরাজরা।

যাবতীয় আলোচনার শেষে, জবাবী ভাষণ দিতে উঠলেন বাজপেয়ী এবং তার স্বভাবসিদ্ধ, অননুকরণীয় ভঙ্গিমায়, লোকসভাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন। তার সেই ভাষণ এখনও ইউটিউবে আছে, আগ্রহীরা দেখতেই পারেন। কিন্তু যে কারণে এই লেখা এবার সেখানে আসছি। ভাষণের শেষে এসে বাজপেয়ী ঘোষণা করলেন যে তিনি আস্থা প্রস্থাব ফেরত নিয়ে নিচ্ছেন আর রাষ্ট্রপতির কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিতে যাচ্ছেন। এরপরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যার জন্যে এই লেখা। পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করার পর, নিজস্ব ভঙ্গিতে কিছুটা বিরতি নিয়ে, বাজপেয়ী পুনরায় বললেন যে, "আজ আপনারা, যারা নির্বাচনে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছেন, তারাই এখন জোট বানিয়ে, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত বৃহত্তম দলকে সরকার থেকে সরিয়ে দিতে পারেন কিন্তু আমরা সবাই এই কক্ষেই থাকবো আর আপনাদের জগাখিচুড়ি সরকারের প্রতিটা সিদ্ধান্তের উপর কড়া নজর রাখবো। মনে রাখবেন, সরকারে থাকি বা বিরোধী আসনে, জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবো"। এই বলে বাজপেয়ী লোকসভা থেকে বেড়িয়ে গেলেন রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশ্যে। 

আগামী ২রা মে, নির্বাচনের ফল যে দলের পক্ষেই যাকনা কেন, বিরোধী দলে কি এমন নেতৃত্ব পেতে পারিনা যারা বাজপেয়ীর মত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারবেন যে সরকারে নাই বা থাকলাম, কিন্তু বিরোধী আসনে বসেও আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা পালন করে যাবো? সফল গণতন্ত্রের জন্যে কিন্তু শক্তিশালী শাসকের সাথে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকাটাও অনিবার্য।

Thursday, April 29, 2021

শেষ হাসি কে হাসবেন?

গতিসূত্রের নিয়মানুসারে, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে, পদার্থের যে ধর্মের জন্য কোনো স্থির বস্তু বা গতিশীল বস্তু যে অবস্থায় আছে সে সেই অবস্থায় বজায় রাখার চেষ্টা করে, সেই ধর্মকে পদার্থের জাড্য ধর্ম বা জড়তা বলে। অর্থাৎ জড়তা, স্থিতি বা গতি, দু'রকমই হতে পারে।

এবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের নিরিখে ভাবতে গেলে, তৃণমূল চাইবে যাতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে আর বিজেপি, স্বাভাবিকভাবেই, চাইবে যে ২০১৯ এ তারা যে গতি লাভ করেছিল সেটা ধরে রাখতে। এখানে একটা মজার ব্যাপার হল যে, গতিসূত্রের নিয়মানুসারে, বিজেপি কেবল নিজের গতি ধরে রাখলেই ক্ষমতা পাবেনা, তাকে গতি বাড়াতে হবে। তারমানে ২০১৯ এ যেখানে যে'কটা জিতেছে সেটা ধরে রাখার সাথে সাথে বাড়তি আসনে জিততে হবে আর এই জয় নিশ্চিত করার জন্যে তাদের তুরুপের তাস ছিল ভোটারদের ধর্মীয় মেরুকরণ করা আর তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরানো। দয়া করে কেউ বিকাশের কথা বা সোনার বাংলার কথা বলবেন না, সেটা যদি প্রাথমিকতা হতো তাহলে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনের মাত্র ৫ দিন আগে 'সংকল্প পত্র' প্রকাশ করা হতনা।

উল্টোদিকে, তৃণমূলের আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই ছিল নির্বাচকদের একটা feel good অনুভূতি দেয়া যাতে তাদের মধ্যে স্থিতি জাড্য কাজ করে। নির্বাচনের আগে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বা দুয়ারে সরকার নিয়ে প্রচার এই লক্ষ্যেই করা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষে নেগেটিভ ফ্যাক্টর ছিল সংখ্যালঘু তোষণ এবং দলের বিভিন্ন স্তরে মাত্রাহীন দুর্নীতি। নারদা কান্ডে দলের শীর্ষ স্তরের দুর্নীতি প্রকাশিত হওয়ার পরেও সাধারণ মানুষ তৃণমূলকে রেকর্ড আসনে জিতিয়েছে কারণ সেটা তাদের সরাসরি স্পর্শ করেনি কিন্তু কোভিড ও আম্ফান পরবর্তী ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলির ফলে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন আর তাদের ক্ষোভ বেড়েছে।

আজ অষ্টম পর্যায়ের নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এটা স্বীকার করতে কোন বাধা নেই যে বিজেপি নির্বাচনে মেরুকরণের লক্ষ্যে অনেকটাই সফল, বিশেষত সেই যায়গাতে যেখানে জেহাদি আগ্রাসনের প্রভাব বেশী কিন্তু একইসাথে, শীতলকুচির ঘটনা এবং তারপর বিজেপি নেতাদের মাত্রাছাড়া বয়ানবাজির ফলে সংখ্যালঘু ভোট পুনরায় জোটবদ্ধ হয়েছে মমতা ব্যানার্জীর পিছনে। আগেই বলেছিলাম যে শীতলকুচি নিয়ে লাগামহীন বক্তব্য ওয়াটারলু হতে পারে, আর সেটাই হয়েছে।

ফলে, দিনের শেষে এটাই সত্যি যে তৃনমুল তার স্ট্র‍্যাটেজীতে লেগে থাকলেও বিজেপি তার স্ট্র‍্যাটেজিতে ব্যর্থ হয়েছে আর তার পরিণতিতে শেষ হাসি যদি মমতা ব্যানার্জীই হাসেন তাহলে আমি অবাক হবনা।

Tuesday, April 27, 2021

অনির্বানের বিরম্বনা

বলেছিলাম না, ঠ্যালায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠেনা। আজ নির্বাচনের প্রাক্কালে অনির্বান বাবু বুঝেছেন যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একটা অপদার্থকে, বিশ্বভারতীর মত একটা ঐতিহ্যবাহী সংস্থার উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা এবং তার বিভিন্ন অন্যায়কে চোখ বুজে মেনে নেয়ার পরিণতি কি।

গত আগস্ট মাসে, শান্তিনিকেতনের অলিতে-গলিতে ঘুরে আর এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেই বুঝেছিলাম যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ একটা কলঙ্কিত ঘটনা। লোকটা তার নিজের ইগোর কারণে প্রতিষ্ঠানের সম্মান, নান্দনিকতা এবং ঐতিহ্যকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন যায়গায় জেলের মত পাঁচিল তোলা হোক বা সেই পাঁচিল নির্মানের কাটমানি খাওয়া, প্রার্থনাগৃহকে কারাগার বানানো হোক বা প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে বহিস্কার করা, বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সব অপরাধকে এতদিন চোখ বুজে মেনে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। স্বপন দাশগুপ্ত বাবুকে দিয়ে, CAA এর সমর্থনে একটা সভা দেখেই বিজেপি নেতৃত্ব ভেবে নিয়েছিল যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দারুণ জাতীয়তাবাদী। তাই আমি বারবার কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও তারা বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। একজন নেতা তো আমাকে এটাও বলেছিলেন যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর 'জ্যাক' নাকি অনেক উপরে লাগানো আছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেননি ধান্ধাবাজ কখনও জাতীয়তাবাদী হতে পারেনা, তার সব কাজেরই লক্ষ্য থাকে নিজের ধান্ধার পথ পরিস্কার রাখা। 

আজ ঠেলায় পড়ে, অনির্বাণ বাবু যতই উপাচার্যের সমালোচনা করুন এটা অস্বীকার কোন যায়গা নেই যে এই ভস্মাসুরের সৃষ্টি তারাই করেছেন আর এখন নিজেরা যখন সেই ভস্মাসুরের ছোঁয়া পেতে চলেছেন, তখন দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। ২০১৯ সালের পৌষ মেলায় স্টল দেয়ার জন্যে ব্যবসায়ীদের থেকে নেয়া সিকিউরিটি মানি আজ থেকে আটকে নেই অনির্বান বাবু, এই ইতিহাস অনেক পুরনো। In fact, তাদের সিকিউরিটি মানির ৫০% আটকে রেখেছিল এই বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আর গত সেপ্টেম্বর মাসে, আমি সেই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য আমার ফেসবুক লাইভে তুলে ধরার পর, ৩০% টাকা ফেরত দেয়া হয়।

অনির্বান বাবু, গত আগস্ট থেকে আমি যখন ধারাবাহিক ভাবে উপাচার্যের বিভিন্ন অন্যায়কে তুলে ধরছি তখন আপনার দলের সমর্থকেরাই আমাকে তৃণমূল বলে দাগিয়েছিল। তাই আজ যখন আপনি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতার কথা বলছেন, ভারী মজা লাগছে। তবে দায় শুধু কেন্দ্র সরকার ও বিজেপির নয়, কলকাতা হাইকোর্টও এই মামলায় একদেশদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোন অজ্ঞাত কারণে, এই মামলাতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা আক্ষরিক অর্থেই miscarriage of justice। আত্মদীপ সেই মামলার সাথে যুক্ত এবং সেই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার রাস্তা আমাদের এখনও খোলা আছে। তবে আপনার ক্ষেত্রে অনেক দেরী হয়ে গেছে, অনির্বাণ বাবু। আজ যতই বলুন যে শিক্ষা মন্ত্রক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, এতে বরফ গলবে না। You have missed the bus, Sir.

https://react.etvbharat.com/bengali/west-bengal/state/birbhum/bengal-election-2021-anirban-ganguly-the-bjp-candidate-of-bolpur-pressmeet-against-visva-bharati-vice-chancellor/wb20210427123308687

Wednesday, April 21, 2021

রাম নবমী

হিন্দু শাস্ত্র বলে যে "শিবং ভূত্বাঃ শিবং যজেৎ" অর্থাৎ শিবের পূজা করার জন্যে নিজেদেরও শিবের মত হতে হবে। একই কথা রামনবমী উদযাপনের জন্যেও প্রযোজ্য, শ্রী রামের বন্দনা করতে হলেও নিজেদেরকেও তাঁর আদর্শে গড়ে তুলতে হবে, নাহলে সেই পূজা অসম্পূর্ণ।

শ্রী রাম কোন ঈশ্বর ছিলেননা, তিনিও আমাদের মতই রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন। কিন্তু নিজ চরিত্র, কর্ম ও আদর্শের দ্বারা তিনি দেবত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাই শ্রী রামের আরাধনা করতে হলে তিনি যেভাবে গুহক চন্ডালের মত সমাজের, তথাকথিত, নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তিদের আপন করে নিয়েছিলেন আমাদেরও সেই আদর্শে ব্রতী হতে হবে। শ্রী রাম যেভাবে অবহেলিত বানরসেনাদের যোগ্য সম্মান দিয়ে তাদের ক্ষত্রিয়করণ করেছিলেন, আমাদেরও সমাজের অবহেলিত ক্ষত্রিয়সমাজকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে হবে। শ্রী রাম যেভাবে সেতুবন্ধনের মত আপাত অসম্ভব কাজকে রূপায়িত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এবং সেটা বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন আমাদের মধ্যেও সেরকম উদ্যমের বিকাশ ঘটাতে হবে। শ্রী রাম যেভাবে তাঁর স্ত্রীর অপহরণের জন্যে পরাক্রমশালী রাবণের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে পিছপা হননি আমাদেরও তেমনি নিজেদের ঘরের মহিলাদের সম্মানরক্ষা করার মূল্য চোকাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আজকের দিনে জেহাদিরা আমাদের মাটি দখল করছে, মা-বোনের সম্মানহরণ করছে আর তাদের পিছনে আছে তাদের কৌমের উম্মাহ। খ্রিস্টান মিশনারীরা আমাদের বনবাসী সমাজকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করছে আর তাদের পিছনেও আছে তাদের ধর্মীয় প্রেরণা। আমাদের শ্রী রামের বন্দনা তখনই সার্থক হবে যখন আমরা আজকের দিনের এই রাবণদের বিরুদ্ধে  সাহস ও শক্তি অর্জন করে তাদের ধ্বংস করার সক্রিয়তা দেখাতে পারবো। শুধুমাত্র শ্রী রামের নামে শোভাযাত্রা করে আর টিনের তলোয়ার হাতে সেল্ফি নিলেই সেই দায়িত্ব সম্পূর্ণ হবেনা।

জয় শ্রী রাম। 

Tuesday, April 20, 2021

করোনা টিকা

করোনা টিকা নিয়ে যে যার খুশী পিঠ চুলকাতে পারে কিন্তু বাস্তব হলো যে প্রয়োজনের তুলনায় টিকার সরবরাহ যথেষ্ট কম। CoWin নামক সাইটটা ঠিক কিসের ভিত্তিতে চালানো হচ্ছে সেটা খোদায় মালুম। CoWin সাইটের নির্দিষ্ট স্লট অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে মা আর বড়মাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকা দেয়ার জন্যে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে  গিয়ে শুনলাম যে টিকা শেষ। নির্দিষ্ট বুকিং থাকা সত্ত্বেও টিকা কিভাবে শেষ হলো তার উত্তর কারুর কাছে নেই। তাদের পরামর্শ হলো যে "কালকে সকাল ১১টা নাগাদ আসুন, পেতে পারেন"। অগত্যা আজ সকাল ১১টা নাগাদ আবার গেলাম, গিয়ে দেখি অন্তত ২০০ লোকের লাইন আর আশেপাশে আরও কয়েকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। শুনলাম ওখানে নাকি সবাই ভোরবেলা থেকে লাইন দিয়ে রাখেন। ভোরবেলায় গিয়ে যদি লাইনেই দাঁড়াতে হবে তাহলে CoWin এর কি দরকার?

স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকার আশা ছেড়ে CoWin সাইটে আবার Reschedule করতে বসলাম। দেখা গেল যে কাছাকাছির মধ্যে, ব্যারাকপুর টেকনো গ্লোবাল হাসপাতালে, ২৮শে এপ্রিল টিকার স্লট খালি আছে। স্লট বুক করে, হাসপাতালে ফোন করে শুনলাম যে আপাতত তাদের স্টকে কোন টিকা নেই, কবে আসবে সেটা জানেননা, আমি যেন এক সপ্তাহ পরে আবার ফোন করে খবর নিয়ে তারপর স্লট বুক করি। CoWin সাইটে স্লট দেখানো সত্ত্বেও হাসপাতালে টিকা না থাকার দায়িত্বটা ঠিক কে নিচ্ছে? সবটাই কি রাম ভরোসে?

টেকনোতে আশাহত হওয়ার পর এবার একটু বড় যায়গাতে হয় কিনা দেখার জন্যে ফোন করলাম অ্যাপেলো গ্লেনঈগলস হাসপাতালে। সেখানে অপারেটর জানালেন যে যেদিন টিকা নিতে চাই সেদিন সকালে ফোন করে খোঁজ নিতে হবে যে টিকা আছে নাকি নেই। থাকলে সেদিনই যেতে হবে। আর হ্যাঁ, যেতে যেতে যদি টিকা ফুরিয়ে যায় তাহলে কিছু করার নেই। মানে, টিকা আছে শোনার পর, আমি দু'জন বয়স্ক নাগরিককে নিয়ে হালিসহর থেকে কলকাতা যাবো এই প্রার্থনা করতে করতে যাতে টিকা শেষ না হয়ে যায়। অসাধারণ!

এরমধ্যেই আবার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ১৮+ হলেই নাগরিকরা এবার টিকা পাবেন। মানে, যাদের এক পর্যায়ের টিকা নেয়া হয়ে গেছে তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকা সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকলেও শুধু সস্তা জনপ্রিয়তার জন্যে টিকা তালিকাতে যোগ করা হলো আরও কয়েক কোটি মানুষের নাম। চিন্তায় পড়ে গেছি যে করোনার প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক আসলে কোনটা, টিকা নাকি টিকা তালিকায় নাম থাকা?

Thursday, April 15, 2021

ভোটরঙ্গ

জনগণ সাধারণগত দুটি কারনে ভোট দেন- ১) কোন দলের কাজে খুশি হয়ে সেই দলের পক্ষে ভোট। এটা পজিটিভ ভোট। আর ২) কোন দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সেই দলের বিরুদ্ধে ভোট। এটা নেগেটিভ ভোট। পজিটিভ ভোটের ক্ষেত্রে দল নির্দিষ্ট থাকলেও নেগেটিভ ভোটের কিন্তু সেরকম কোন দল নেই। যে দলের বিরুদ্ধে মানুষ বীতশ্রদ্ধ, সেই দলকে হারানোর জন্যে বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেই এলাকায় যে দল শক্তিশালী বিকল্প হতে পারে, তাকেই ভোট দেয়।

শাষক দল বরাবরই চেষ্টা করে পজিটিভ ভোট করানোর আর তাই আদর্শ নির্বাচনী বিধি বলবৎ হওয়ার আগে পর্যন্ত সরকারী খরচে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিজেদের সাফল্যের খতিয়ান প্রচার করে। ভোট প্রচার পর্বেও তারা পজিটিভ ভোটের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করে। উল্টোদিকে, বিরোধী দলগুলির চেষ্টা থাকে নেগেটিভ ভোটের সংখ্যা যাতে বেশি হয়। 

এই চিরাচরিত পদ্ধতির ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের সময়। তখন ক্ষমতাশীল কংগ্রেস নিজের পজিটিভ ভোট বাড়ানোর বদলে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভোট তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। উল্টোদিকে নরেন্দ্র মোদী বিরোধী দলের হয়েও তাঁর প্রচারে জোর দিয়েছিলেন বিজেপির পজিটিভ ভোট তৈরি করতে। ফলাফল কি হয়েছিল আজ সেটা ইতিহাস।

এরাজ্যে এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও এরকমই এক নতুন সমীকরণের খেলা চলছে। শাসকদল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেস শুরুতে পজিটিভ ভোট তৈরির চেষ্টায় থাকলেও ক্রমেই সেটা পরিণত হচ্ছে বিরোধী দলগুলির, থুড়ি, এখন তো রাজ্যে আর বিরোধী দলগুলি বলা যাবেনা কারণ দিদি ইতিমধ্যেই অপারেশন সূর্যোদয়ের ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব বাবুকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন, তাই বলা ভাল যে বিজেপির বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভোট তৈরির প্রচেষ্টায়। শাসকদল যখন পজিটিভ থেকে নেগেটিভ ভোটকে বেশি গুরুত্ব দেয় তখন এটা বোঝা যায় যে তার পায়ের তলার মাটি সরতে শুরু করেছে। 

২০১৬ সালে মমতা ব্যানার্জীর সৌভাগ্য ছিল যে এরাজ্যের মানুষের মনে সিপিএমের প্রতি বিদ্বেষ তখনও এতটাই তীব্র যে তিনি সেই সেন্টিমেন্টের জোরেই সেবারের মত বৈতরণী পার হয়ে গেছেন। কিন্তু তার সরকারের মুসলিম তোষন নীতি যে রাজ্যের জনগণ ভালভাবে মেনে নেয়নি তার প্রমান যে হিজাব পরে মুসলিমদের জন্যে দানছত্র খোলার পরেও আজ মমতাকেও নিজের হিন্দু পরিচয় জাহির করতে হচ্ছে কারণ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির আকাশে বিজেপির আবির্ভাব। 

বিজেপির আবির্ভাবের সাথে সাথেই, এই রাজ্যে যে 'হিন্দু ভোট' বলেও একটা বিষয় হতে পারে সেটা উপলব্ধি করেছেন সাধারণ মানুষ। না, ব্যাপারটা এমন নয় যে রাজ্য বিজেপির নেতারা দারুণ হিন্দু হিতৈষী বা হিন্দুদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন, বরং তারা তো এতটাই উদার যে নিজেদের দলীয় কর্মীকে খুনের দায়ে অভিযুক্তকেও সাদরে বুকে টেনে নেন। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এরপরেও হিন্দুরা বিজেপির উপর ভরসা করছে কেন বা বিজেপির প্রভাব বাড়ছে কেন, উত্তর একটাই - নরেন্দ্র মোদী। হ্যাঁ, এটা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন হলেও বিজেপি এটাকে সফলভাবে দেখাচ্ছে মোদী সরকারের গঠন রূপে আর রাজনীতি যেখানে perception এর খেলা, নরেন্দ্র মোদী সেখানে ক্রিকেটের তেন্ডুলকর আর ফুটবলের পেলে।

যে 'হিন্দু ভোট' এতদিন অবহেলিত ছিল আজ তারা বিজেপির সুবাদে একটা আওয়াজ পেয়েছে। বাকি দলগুলি যেখানে 'সেকুলার' হয়ে থাকার তাগিদে ক্রমাগত হিন্দুদের অস্তিত্ব ও অধিকার নিয়ে আপোষ করে গেছে, বিজেপি সেই যায়গাটাতেই নিজেদের সাফল্যের ভিত্তি বানিয়েছে। আজ মমতা ব্যানার্জী বিজেপিকে যতই বহিরাগত বলুন না কেন, বাস্তবে তার দলও আজ বহু যায়গায় রাম নবমী পালন করতে বাধ্য হচ্ছে যে রাম নবমীকে বছর দুয়েক আগেও তিনি ও বাংলার তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে অবিহিত করেছিল। আজ রাম নবমী শুধু একটা পুজো বা উৎসব নয়, হিন্দুদের দাপট দেখানোর মঞ্চ।

২০১৯ এর নির্বাচনে ভরাডুবির পর, এবার বামপন্থীদের কাছেও নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করার ভাল সুযোগ ছিল। লকডাউনের সময় বিভিন্ন যায়গায়, বিশেষত রাঢ় বঙ্গে, ত্রাণ দিতে গিয়ে দেখেছি যে বামপন্থীরা সাধারণ মানুষদের সেবায় অনেক কাজ করেছেন। হেঁসেল খুলে খাওয়ানো হোক বা ভিনরাজ্য থেকে আগত শ্রমিকদের সাহায্য, বামপন্থীরা যথেষ্ট ভাল কাজ করেছেন। করোনা অতিমারী, লকডাউনের আর অর্থনৈতিক নিম্নগতির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল সেটাকে কিভাবে নিজেদের দলীয় স্বার্থে কাজে লাগাতে হয় সেটা বামপন্থীদের থেকে ভাল আর কেউ জানেনা কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে তাদের নেতৃত্ব সমঝোতা করে বসলো আব্বাস সিদ্দিকীর সাথে। আব্বাসের সাথে সমঝোতা করে বামপন্থীদের যতটা না লাভ হবে, ক্ষতি হয়েছে তার থেকে অনেক বেশী। সাধারণ হিন্দু ভোটার যারা সংখ্যালঘু তোষণের কারণে তৃণমূলের উপরে এবং একইসাথে অর্থনৈতিক এবং তৃণমূলের দলত্যাগীদের আশ্রয় দেয়ার কারণে বিজেপির উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং বিকল্প হিসাবে হয়তো বামপন্থীদের বেছে নিতেন, তারা আব্বাসের কারণেই আর বামপন্থীদের ভোট দেবেন না। ফলে, জোটের কারণে যদি কারুর লাভ হয়ে থাকে তাহলে সেটা আব্বাসের আর বিজেপির। কুয়োর ব্যাঙ আব্বাস পেয়ে গেছে গোটা রাজ্যের বিচরণক্ষেত্র আর বিজেপির লাভ হলো তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ভোটারদের বিকল্প কোন পথ না থাকা।

আর মমতা ব্যানার্জী ও পিকে এটা বুঝেছেন বলেই তারা চাইছেন বামপন্থীরা একটু চাঙ্গা হোন। নন্দীগ্রাম গুলি কান্ডে বুদ্ধদেবকে ক্লিনচিট দেয়ার একমাত্র কারণ দলের ক্যাডারদের চাগানো। মমতা নিজে দলের ৪২-৪৪% শতাংশ ভোট ধরে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত তাই তার লক্ষ্য বামপন্থীদের ভোটের পরিমাণ ২০১৯ সালের ৭% থেকে অন্তত ১৫-১৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যাতে বিজেপির যাত্রা পন্ড হয়। উল্টোদিকে বামপন্থীরা আবার মমতাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর বিষয়ে বেশী আগ্রহী তাই তারাও আব্বাসকে জড়িয়ে ধরে নিজেদের ভোট কমাতে বদ্ধপরিকর। অনেকটা সেই "কেবা আগে প্রাণ করিবেক দান, তার লাগি তাড়াতাড়ি"-এর মত কেস।

এমতাবস্থায়, এইবারের নির্বাচনের ফলাফল খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে। বামপন্থীরা যদি নিজেদের ভোট বাড়াতে পারে তাহলে বহু আসনের ফলাফল নির্ধারিত হবে খুব অল্প মার্জিনের ভিত্তিতে আর ২০১৯ এর মতই যদি বাম বিলীন হয়ে যায় তাহলে বিজেপি বলীয়ান হবেই। সেক্ষেত্রে, দ্বিমুখী লড়াই হলে অবশ্যই অ্যাডভান্টেজ বিজেপি।

Sunday, April 11, 2021

শিরোনামে বিশ্বভারতী

আবারও শিরোনামে বিশ্বভারতী। আবারও শিরোনামে সেখানকার কুখ্যাত উপাচার্য, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারা গেছে যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কার্যকলাপের ফলে, স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে, বিশ্বভারতীর উপাচার্য এবং তাকে নিয়োগকারী, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এতটাই তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে যে বোলপুর আসনে বিজেপি প্রার্থী, ডঃ অনির্বাণ গাঙ্গুলী পক্ষে স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে জয়লাভ করা অত্যন্ত কঠিন। অতএব, এখন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে দিল্লীতে তলব করা হয়েছে এবং বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রারের থেকে সিনিয়রমোস্ট ব্যক্তিদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন হয়তো বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেয়া হবে বা লম্বা ছুটিতে পাঠানো হবে এবং অন্য কেউ দায়িত্ব নেবেন।

অথচ এরকম পরিস্থিতি তৈরীই হতনা যদি কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকেই পরিস্থিতির সঠিক পর্যালোচনা করে, উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতেন। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কোনদিনই বিজেপি বা সঙ্ঘপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেননা। তিনি বরাবরই একজন ধান্ধাবাজ। কর্মক্ষেত্রে মহিলা সহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের দোষী প্রমাণিত হওয়া এই ব্যক্তিকে বিশ্বভারতীর মত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া ছিল মোদী সরকারের প্রথম ভুল। তথাকথিত পাঁচিল ভাঙা থেকে শুরু করে মেলার মাঠে পাঁচিল দেয়ার সিদ্ধান্ত, বিশ্বভারতীর বিভিন্ন এলাকায় ১২ ফুটের পাঁচিল তোলা থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে রাখা - এই সবই ছিল বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একজন আত্মকেন্দ্রিকের ব্যক্তিগত ইগো জাহির করার ফল। আমি এই বিষয়ে গত আগস্ট মাস থেকে এই ফেসবুকেই লিখেছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের ট্যাগ করে ট্যুইট করেছি, এমনকি বিজেপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছি কিন্তু আফসোসের বিষয় হল যে তারা তখন পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিদ্যুৎ তাদের বুঝিয়েছিল যে তার এই কাজে যারা ক্ষুব্ধ হচ্ছে তারা কম্যুনিস্ট বা আর্বান নকশাল আর বিজেপি নেতৃত্বও সেই কথা বিশ্বাস করে এতদিন চুপ করে বসেছিল।

আমি নিজে দুই বার শান্তিনিকেতনে গিয়েছি এবং এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত চষে ফেলেছি। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে আমার কখনও মনে হয়নি যে তাদের ক্ষোভের পিছনে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ কাজ করেছে। যেটা তাদের প্রকৃতই ক্ষুব্ধ করেছে সেটা হল উপাচার্যের নেতৃত্বে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য ও নান্দনিকতার গণহত্যা। শিক্ষক, কর্মী, বিদ্যার্থী, রবীন্দ্রপ্রেমীদের নিয়ে একযোগে সিদ্ধান্ত নেয়ার যে পরম্পরা বিশ্বভারতীতে ছিল, যে উন্মুক্ততা শান্তিনিকেতনের পরিচয় ছিল, নিজের ধান্ধা চালানোর জন্যে সেটার মূলেই আঘাত করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত অযোগ্য ব্যক্তি। এই প্রসঙ্গে আমার বিভিন্ন পোস্টে ও ফেসবুক লাইভে বিশদে জানিয়েছি। আগ্রহী ব্যক্তিরা সেগুলি দেখে নিতে পারেন।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার যে আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আদালতের রায়ে মনে হয়েছে যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার থেকে, একটা বিশেষ পক্ষের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আদালত যে ভূমিকা নিয়েছেন এবং কমিটির সদস্য হিসাবে যাদের মনোনীত করেছেন তাদের পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, তাদের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এমনকি গত ২৪শে নভেম্বর, আত্মদীপ-এর দায়ের করা ইন্টারভেনশন মামলায়, যেখানে আমরা খোদ বিশ্বভারতী আইনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছি, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন যে কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে এবং শুনানির দিন হিসাবে ১২ই জানুয়ারি ধার্য্য করা হয় অথচ কোন এক অজ্ঞাত কারণে, ১২ই জানুয়ারির সেকেন্ড হাফে বেঞ্চ বসেই না। এরপর হঠাৎই ১৫ই জানুয়ারি ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন যে ১৮ই ডিসেম্বর নাকি কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কমিটির প্রধান ততদিনে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বদলি হয়ে গেছেন, এবং মামলার ফয়সালা হয়ে গেছে বলে জানান। অর্থাৎ আমাদের ফাইল করা ইন্টারভেনশন পিটিশনের মেরিট বিচার না করেই, কেবলমাত্র যেন কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে গঠিত কমিটির রায় আপ্তবাক্যের মত মেনে নেয়া হলো।

এইসব অন্যায়ের প্রতিফলনই আজ বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী, অনির্বাণ বাবুকে পেতে হচ্ছে। অনির্বাণ বাবু নিঃসন্দেহে একজন যোগ্য ব্যক্তি কিন্তু বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একজন ধান্ধাবাজের সঙ্গে তার সখ্যতা এবং বারবার বলা সত্ত্বেও তাকে উপাচার্য পদে রেখে দেয়ার প্রভাব তার রাজনৈতিক পথকে প্রভাবিত করতে পারে। আজ যদি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সেই পদ থেকে সরানোও হয় তাহলেও আমি বলবো যে, বড্ড দেরী হয়ে গেছে।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157875928109865&id=620989864

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157814418494865&id=620989864

Thursday, April 8, 2021

বহুত হুয়া ভ্রষ্টাচার

নরেন্দ্র মোদী সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে না পারা। মোদীর প্রচারে, "বহুত হুয়া ভ্রষ্টাচার, আব কি বার মোদী সরকার", দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল যে ইউপিএ আমলে জেলে যাওয়া লোকেরাও মোদীর শাসনে দিব্যি জামিন পেয়ে গেল। 2G হোক বা কোলগেট, এয়ারসেল ম্যাক্সিস হোক বা অগাস্তা ওয়েস্টল্যান্ড, এমনকি আমাদের অতি পরিচিত সারদা, নারদা বা রোজভ্যালী কোন ক্ষেত্রেই মোদী সরকার এমন কোন ভূমিকা গ্রহণ করেনি যেটা দেখে মনে হতে পারে যে অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণ করতে তারা আগ্রহী।

দুষ্টু লোকেরা বলতো যে অরুণ জেটলির প্রভাবেই মোদী এই ধীরে চলো নীতি নিয়েছিলেন। মোদীর প্রথম দফার সরকারে জেটলির যে যথেষ্ট প্রভাব ছিল সেটা অনস্বীকার্য। দিল্লীর রাজনীতিতে নবাগত মোদীর কাছে ল্যুটিয়েন কালচারে পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ জেটলি ছিলেন অন্যতম পথপ্রদর্শক। আর ল্যুটিয়েন কালচারের নিয়মই হল মিলেমিশে খাওয়া। তাই দেশবিরোধী কাজের জন্যে NDTV এর সম্প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হোক বা নীরা রাডিয়ার চাঞ্চল্যকর টেপ, সব ক্ষেত্রেই মোদী সরকার এক পা এগিয়ে, দুই পা পিছিয়েছেন। আজ মোদী নিজের নির্বাচনী প্রচারে সোনিয়া ও রাহুলের জামিনে থাকা নিয়ে যে খোঁটা দেন সেই ন্যাশনাল হেরাল্ড কেসটাও কিন্তু তার সরকারের নয়, ডঃ স্বামীর উদ্যোগে হয়েছে।

আসলে মোদী হয়তো উপলব্ধি করেছেন যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক দুর্নীতির কেসে, অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ করা যথেষ্টই শক্ত। Money trail এতটাই বিস্তৃত যে সব কেসে, সবাইকে সাজা দেয়া সম্ভব নয়। এর সাথে আছে বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতা আর স্বার্থান্বেষী কর্পোরেট গোষ্ঠীর চাপ - যা সরকার বদলালেও সমানভাবে কার্যকর থাকে। এমতাবস্থায়, মোদী, সম্ভবত, তাই অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার বদলে, তাদের সেই দুর্বলতাকে হাতিয়ার বানিয়ে, তাদের অপদস্ত করতেই বেশী স্বচ্ছন্দ। এই কারণেই সুনন্দা পুস্করের হত্যা মামলায় শশী থারুরের ভূমিকা হোক বা সারদা মামলায় মমতা ব্যানার্জীর ভূমিকা - সবই চলছে perception এর ভিত্তিতে। গান্ধী পরিবারের দাসত্ব ছেড়ে কংগ্রেস যদি শশী থারুরের মত ব্যক্তির নেতৃত্বে যেত তাহলে সেটা মোদীর পক্ষে সুখকর হতনা, তাই সুনন্দা হত্যার কাঁটা টা বাঁচিয়ে রাখা দরকার। একইভাবে অগাস্তা হেলিকপ্টার বা সারদা বা 2G এই কেসগুলোর ধুলো মাঝেমধ্যে ঝাড়া হয় শুধু বিপক্ষকে একটু চমকে দিতে, কাজের কাজ কিছু হয়না।

Party with a difference

রাজনীতিতে ভাল আর খারাপের বাছাবাছি করতে গেলে হাতে পড়ে থাকবে পেনসিল। তাই বাছাইটা হয় খারাপ আর কম খারাপের মধ্যে। এটা অনস্বীকার্য যে বিজেপি কোন ধোয়া তুলসীপাতা নয়। সত্যি কথা বলতে, বিজেপি বাকি আর পাঁচটা দলের মতই একটা রাজনৈতিক দল যার মূল লক্ষ্য হল যেনতেন উপায়ে ক্ষমতা দখল করা। কারণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কোন আদর্শই পূরণ করা সম্ভব নয়।

একইসাথে, বাকি দলগুলির মত বিজেপির মধ্যেও বেনোজল আছে, ধান্ধাবাজ আছে, চোরও আছে। আর কোন দল যখন ক্ষমতার গন্ধ পায় তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এদের সংখ্যা বাড়ে। তাই যারা বিজেপিকে party with a difference ভেবে, এই সব নমুনাদের দলে নেয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তাদের মাথায় রাখা উচিত যে দলটা ৪০ বছর ভারতের রাজনীতিতে টিঁকে থাকার পরেও আপনি তার থেকে এই প্রত্যাশা রাখছেন, তখন দলটার মধ্যে আলাদা কিছু তো অবশ্যই আছে। 

হ্যাঁ, রাজনীতির এই পাঁকে থেকে পদ্ম হয়ে ফোটার জন্যে আলাদা কিছু তো অবশ্যই লাগে আর সেটা বিজেপির আছে বলেই দিদির আর কোন হিজাব পরা ছবি আর দেখা যাচ্ছেনা। আলাদা কিছু আছে বলেই কেরালাতে বিজেপির প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে, এককালে ধর্মকে আফিম বলে ব্যঙ্গ করা দলের নেতা পিনারাই বিজয়নকে বলতে হচ্ছে যে "আয়াপ্পা দেবের আশীর্বাদ তাদের দলের উপরেই আছে"। হ্যাঁ, এটাই বিজেপিকে বাকি দলগুলোর থেকে আলাদা করে দেয়। হ্যাঁ, আপনি তর্ক করার জন্যে কয়েকজন চোর-ছ্যাঁচড়ের দিকে আঙুল তুলতেই পারেন কিন্তু দিনের শেষে, দলের যারা মেরুদণ্ড অর্থাৎ কর্মীরা, তারাই নিজেদের আচরণে বাকিদের সাথে পার্থক্যটা গড়ে দেয়।

লক্ষ্য

গতকাল রাতে ফেসবুকের এক বামপন্থী বন্ধু ইনবক্সে জোটকে সমর্থন করার আহ্বান জানালেন। আমি আমার অক্ষমতা ব্যক্ত করায় তিনি বললেন যে এবার আমি জোটকে সমর্থন দিয়ে তৃণমূলকে হটালে এরপর তিনি নিজে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে আমার সাথে কাজ করবেন। অর্থাৎ তার ধারনা আমি বিজেপির সমর্থক।

এদিকে বিজেপির কিছু ফেসবুক সমর্থকের ধারনা যে আমি তৃণমূলের সমর্থক আর তাই মোদীর কাজের খুঁত ধরি। ফেসবুক সমর্থক কথাটা ইচ্ছে করেই ব্যবহার করলাম কারন এই সমর্থকদের যাবতীয় কার্যকলাপ ফেসবুকে, নিজেদের গণ্ডির মধ্যে একে অপরের পিঠ চুলকানোতেই সীমাবদ্ধ। 

বাকি রইল তৃণমূল। এদের তো বদ্ধমূল ধারনা যে আমি বিজেপির হয়ে কাজ করি। এদের অঙ্ক হল হিন্দু জাগরণের যে কাজ আমি করছি সেটার অটোমেটিক রাজনৈতিক ফলশ্রুতি হল বিজেপির ভোট।

এমতাবস্থায় একটা জিনিস স্পষ্ট করে দেয়া দরকার যে আমার রাজনৈতিক আনুগত্য কোন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি নেই- না তৃণমূল না বিজেপি। সিপিএম হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। নির্বাচনের সময় নাগরিক হিসাবে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করি তবে সেটা কখনই কোন নেতা বা নেত্রীর কথার উপর ভিত্তি করে নয়, কাজের উপর ভিত্তি করে।

তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী বন্ধুদের পরিস্কার করে জানিয়ে দিতে চাই যে আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে, সাহসী হিন্দুদের নিয়ে, ছলে-বলে-কৌশলে, পশ্চিমবঙ্গকে জেহাদি আক্রমণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা। এই কাজে, দলমতনির্বিশেষে, হিন্দুদের একতাবদ্ধ হবে। আগে সব হিন্দু একতাবদ্ধ হবে, তারপর লড়াই হবে, এরকম অলীক ধারণায় আমি বিশ্বাসী নই। কারণ ইতিহাস সাক্ষী যে সবাই কখনও একজোট হয়না, হতে পারেনা। আজ মাস্টার'দা বা ভগৎ সিং যদি সবার একজোট হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতেন, তাহলে দেশ স্বাধীন হতনা। এমতাবস্থায় একটি বিশেষ দলের হয়ে প্রচার করে অন্যান্য দলের হিন্দুদের দূরে সরিয়ে দিলে সেটা লক্ষ্যপূরণের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।

দেশভাগ হোক বা কাশ্মীর থেকে হিন্দু বিতাড়ন, কালিয়াচক হোক বা তেহট্ট, ইতিহাস সাক্ষী যে রাজনীতি করে সেই সর্বনাশ রোখা যায়নি। তাই, আবার রাজনীতির পাকেচক্রে জড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গর ভবিষ্যৎকে নিয়ে জুয়া খেলতে চাইনা। রাজনেতারা তাদের কাজ করুন আর আমরা আমাদের কাজ করে চলবো।

Saturday, March 27, 2021

মানসিকতার বদল

আমার বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে যখন হিন্দুদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলা হয় তখন প্রায়শই একটা প্রশ্ন আসে যে "ভোট কাকে দেবো?" অর্থাৎ অধিকাংশ ব্যক্তিরই ধারণা যে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে ভোটটাই একমাত্র উপায়। 


আমার মনে হয় এই মানসিকতাটাই হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। যে সমাজ তার সামাজিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত করে নিজে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে সেই সমাজের পতন অনিবার্য। সরকার হিন্দুদের স্বার্থে আইন করবে, পুলিশ হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবে এইরকম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নির্ভরতাই হিন্দুদের আরও ক্লীব বানিয়ে দিচ্ছে। 


আর এই মানসিকতার জন্যে কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল দায়ী নয়, দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা। হিন্দু ধর্মগুরুরা নিজেদের শিষ্যদের তাদের সামাজিক দায়িত্বের শিক্ষা না দিয়ে কেবল ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বা মুক্তির শিক্ষা দেন। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হিন্দুরা বিশেষ বিশেষ দিনে পুণ্যের আশায় মন্দিরে লাইন দেয়, নতুন গাড়ি কিনলে সেটার মঙ্গলকামনায় পূজো দেয় কিন্তু সেই মন্দিরের আরতির অনুষ্ঠান আজানের জন্যে বন্ধ হয়ে গেলে বা মন্দিরের বিগ্রহের অসম্মান হলে হিন্দুদের কিছু এসে যায়না। ওটাতো কমিটি বুঝবে বা পুলিশ সামলাবে এই রাষ্ট্রনির্ভর ধারণা তাকে আটকে রাখে। বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশনের কোন মন্দিরে বা অন্য যেকোন অভিজাত মন্দিরে গিয়ে দেখুন কেমন পরিপাটি করে সব সাজানো রয়েছে। ভক্তদের দানের টাকায় তৈরি এই ঝাঁ চকচকে প্রাসাদগুলি কতজন গরীব, অসহায় হিন্দুকে আশ্রয় দেয়, খাবার দেয়? কটা মন্দির তার আশেপাশে হিন্দুদের উপর বা অন্য মন্দিরের উপর হামলা হলে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের সহমর্মিতা প্রকাশ করে? একটাও নয়। 

উল্টোদিকে মুসলিমদের দেখুন, প্রতিটা মসজিদ কিভাবে এলাকার দুঃস্থ মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে তাদের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। মুসলিমদের দেখুন তারা কিভাবে রাষ্ট্রশক্তির অপেক্ষায় বসে না থেকে কিভাবে নিজেদের অধিকারের জন্যে উদ্যোগী হয়। এটাই হচ্ছে হিন্দুদের সাথে মুসলিমদের মানসিকতার পার্থক্য - একপক্ষ নিজেদের অধিকারের জন্যেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে আর অন্যপক্ষ নিজেদের অন্যায্য দাবীও রাষ্ট্রকে মানতে বাধ্য করে সামাজিক সচেতনতার ক্ষমতা দেখিয়ে।

আজকের দিনে হিন্দুদের রাষ্ট্রীয় শক্তির উপর তাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে সামাজিক শক্তিকে বলশালী করার কাজটাই করাটাই আমার লক্ষ্য। জেহাদি আক্রমণের সময় মোদী বা মমতার উপর নির্ভর করে বা গোঁসা করে হিন্দু সমাজ তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত হিন্দুরা তাদের সামাজিক শক্তির মূল্য বুঝতে পারবে। তাই যারা জিজ্ঞাসা করছেন যে ভোট কাকে দেবো তাদের প্রতি একটাই উত্তর, ভোট তো পাঁচ বছরে একবার আসবে, সবার আগে নিজের সম্মান নিয়ে ততদিন টিঁকে থাকা নিশ্চিত করুন। আর সেটা যখন নিশ্চিত করতে পারবেন তখন আর আপনাকে ভোটের সময় বিকল্পের খোঁজ করতে হবেনা, সব রাজনৈতিক দলই আপনার সুরে সুর মেলাবে।

Friday, March 26, 2021

সুমহান গণতন্ত্র

পশ্চিমবঙ্গের ৩০ টা বিধানসভা কেন্দ্রের সচেতন জনতা আগামীকাল ভোট শেষ হতেই আবার শীতঘুমে চলে যাবেন। পাঁচ বছর অন্তর, একটা বোতাম টিপেই তাদের সামাজিক দায়িত্ব শেষ। এরপর না তাদের এলাকায় হেলিকপ্টার নামবে আর না তাদের বাড়ি কোন নেতা খেতে যাবেন। কালকের পরে তাদের অবস্থা হবে ব্যবহৃত কন্ডোমের মত। আজ অবধি কন্ডোম ডটেড না ফ্লেভার্ড - এই নিয়ে যত আলোচনাই হোক না কেন, ব্যবহারের পরে তার মূল্য শূন্য। 

আর জনগণই বা কি করেন, তারা নিজেদের রোজনামচা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যা অন্যদিকে নজর দেয়ার সময় কোথায়? বাচ্চার পড়াশোনা, পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র আর বাসস্থানের যোগার, ভবিষ্যতের সঞ্চয় ইত্যাদি বিষয়ে তারা এতটাই নিয়োজিত যে এর বাইরে ভাবার সুযোগই নেই। অথচ নেতানেত্রীদের দেখুন, তাদের কেউ অর্থকষ্টে আছে বলে মনে করেন? না তাদের রেশন তুলতে হয়, না লাইন দিয়ে জল নিতে হয়, না দুর্যোগের পরে ত্রাণ নেয়ার জন্যেও ঘুষ দিতে হয়। সত্যি কথা বলতে তারা আমাদের ভাল করার জন্যে এতটাই নিবেদিতপ্রাণ যে ৩০,০০,০০০ টাকার বেশী শুধু খরচ করবেন যাতে আমরা তাদের সেবা করার সুযোগটুকু দেই। আর সেখানেও এত প্রতিযোগিতা যে কেবা আগে প্রাণ করিবেক দান, তার লাগি তাড়াতাড়ি!

আমাদের মহান দেশের সুমহান গণতন্ত্র, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক বলে আমাদের গর্বের অন্ত নেই কিন্তু সেই গণতন্ত্রে প্রকৃত জনগণের ভূমিকা ঠিক কতখানি? একটু ভেবে দেখুন, ভেড়ার পাল থেকে কি কিছুমাত্র আলাদা? রাখাল যেদিকে নিয়ে যাবে, পাল সেদিকেই যাবে। এই মহান গণতন্ত্রে আপনি কি চান, সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হলো আপনাকে বিশ্বাস করানো যে আপনি আসলে কি চাইছেন। তাই নির্বাচন আসলে কেউ বাসন মেজে দেয়ার অফার দেন বা কেউ বিনা নিমন্ত্রণেই বাড়িতে এসে পাত পেড়ে খেয়ে যান, কেউ ভাঙা পা দেখিয়ে সহানুভূতি চান তো কেউ কর্মীদের লাশের কথা বলে, কিন্তু ভাবুন তো আপনাদের পরিবারের কারুর পা ভাঙলে আপনারা কতজন কলকাতার নামজাদা হাসপাতালে ভর্তি ও হাসপাতাল অবধি গ্রীন করিডোরের সুবিধা পান? যারা নিজেদের কর্মীদের লাশ দেখিয়ে সহানুভূতি চাইছেন, তারা কিভাবে নিজেদের কর্মীদের খুনের অভিযুক্তকে নিজেদের দলে যায়গা দেন?

আসলে আমার দেশের নির্বাচন মানে হল আপনার পাঁচ বছরের ক্ষোভ, শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বের করে দেয়ার উপায় মাত্র। বিগত পাঁচ বছরে যে যাই করুক, ভোট মিটলেই আবার সব শূন্য থেকে শুরু হবে। তাই নেতা-নেত্রীরা অনায়াসেই জামার রঙ পালটে পাপমুক্ত হয়ে যেতে পারেন আর আমরাও আমাদের নতুনভাবে সান্ত্বনা দেই যে এবার থেকে সব ভাল হবে।

ভারতের গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।

Friday, March 19, 2021

The stooge

Mamata Banerjee is a street smart politician. She knew that she wouldn’t be able to cope with BJP led by Narendra Modi once he settles down in his office. 2016 wasn’t a tough ride for Mamata as Modi was new in Lutyens culture and most importantly, Modi & Shah was eyeing Uttar Pradesh as their primary target  That’s why, after winning the assembly election in 2016, she played this gamble to plant one of her most trusted lieutenant, Mukul Roy, in BJP. Mukul Roy brought some scraps from his previous party and projected them as valuables.

Now, the questions are, were Modi & Shah so naive that they couldn’t see this? Could they be so easily manipulated? Is it possible that someone sabotaged them for past 4 years yet they didn’t realise? The answer is simple, they might have realised and that's why, earlier, there was rumours that Mukul may return to Trinamool but their problem was not having a person with his capacity in the party. So, they were left with no option but live with it. In 2019, Mukul brought 18 Lok Sabha seats for them & they were happy. They possibly forgot that Lok Sabha had never been Didi’s ambition. She is only eager to maintain her zamindari in the state.

Mukul was sent with a mission and how successful he has been is clearly evident from the names of candidates in the 3rd phase. In spite of such blunt selection of candidates, BJP may still win because of the charisma of Narendra Modi and huge anti-incumbency factor against Mamata govt but what could have been a cakewalk for the party, has turned into a fierce battle. I believe BJP high-command has realised the game now. That’s why Amit Shah skipped such a vital meeting on candidates & forced Mukul Roy to contest.

Tuesday, March 9, 2021

মনুস্মৃতি ও নারী স্বাধীনতা

বছরখানেক আগেও একটা ফ্যাশন ছিল যে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মনুস্মৃতি পোড়ানো। এই কাজের নেতৃত্বে প্রধানত থাকতো দিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। মনুস্মৃতি পুড়িয়ে তারা নিজেদের বিপ্লবী সত্ত্বার প্রমাণ দিত, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতো, আর সবশেষে সনাতন ধর্ম যে ব্যাকওয়ার্ড সেটা তুলে ধরার করতো।

প্রথমত, যেসব ছাত্ররা নারীস্বত্বার অবমানকারী মনুস্মৃতি পুড়িয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতো তারা একই কারনে, মনুস্মৃতির সাথে কোরানও পুড়াতনা কেন? কোরান অনুসারে নারীর অস্তিত্ব শুধু সন্তান উৎপাদনকারী হিসাবে। পুরুষের যৌন ইচ্ছা চরিতার্থ করা ছাড়া তাদের আর কোন স্বত্বা নেই। এরপরেও কি প্রতিবাদকারীরা বিশ্বাস করে যে কোরান নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে?

দ্বিতীয়ত, বেদে স্ত্রীলোকের বেদপাঠের অধিকার নেই বলে যারা উল্লেক করে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই "স্ত্রীশূদ্রদ্বিজবন্ধনাং ত্রয়ী ন শ্রুতিগোচরা" শ্লোকটির উল্লেখ করে থাকেন কিন্তু এটিও কোন বৈদিক সূত্র নয়। এটির রচনাকাল খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের মধ্যে কারন সেই সময়েই সূত্রসাহিত্য সংকলিত হয়। শ্লোকে তিন প্রকার ব্যক্তির কাছে বেদপাঠ নিষিদ্ধ বলা হয়েছে কিন্তু ছান্দোগ্যোপনিষদে বলা হয়েছে যে


"যথেয়ন্ন প্রাকত্বত্ত: পুরা বিদ্যা ব্রাহ্মণান

গচ্ছতি তস্মাদুসর্ব্বেষু লোকেষু ক্ষত্রস্যৈব

প্রশাসনমভূদিমি" - ছান্দোগ্য ৫|৩|৭|

অর্থাৎ, বাহ্মণদের সমান্তরালে আদিযুগে ক্ষত্রিয় রাজারাও ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করতেন আর ব্রাহ্মণরা তাঁদের শিষ্যত্বও গ্রহণ করে থাকতেন। যেমন বিশ্বামিত্র মুনি, কাশীমহিষী মদালসা প্রমুখ।

এছাড়া, বৃহদারণ্যকোপনিষদে ইহার রচয়িতা যাজ্ঞবল্ক্য স্বয়ং স্বীকার করে গেছেন জনক রাজার সভায় তাঁর সঙ্গে মহীয়সী গার্গীর কথোপকথনের ইতিবৃত্ত। এখানে মনে রাখা দরকার যে সিনেমায় হিরো যেমন সবার শেষে এন্ট্রি নিয়ে সবাইকে মাত করে দেয় তেমনই ভাবে ঐ সভায় যাজ্ঞবল্ক্যর সাথে জনকরাজের কূল পুরোহিত অশ্বল, আর্তভাগ ঋষি, চাক্রায়ণ উষস্ত, কৌষীতকেয় কহোল এদের সবার শেষে গার্গী উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তার প্রশ্ন দ্বারা যাজ্ঞবল্ক্যকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন যে মহর্ষি বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে "গার্গী মাতিপ্রাক্ষীর্মা তে মূর্ধ্বা ব্যপপ্তৎ"(৩|৬|১) অর্থাৎ গার্গী আর বেশী প্রশ্ন করনা, তোমার মাথা খসে পড়বে। বলা বাহুল্য যে এই সতর্কবাণীর মধ্যে ঋষিবরের পরাজয়ের ব্যঞ্জনাই ফুটে উঠেছে। কিন্তু ভুললে চলবে না যে বৃহদারণ্যকোপনিষদ স্বয়ং যাজ্ঞবল্ক্যের রচনা। তিনি চাইলে এই বিরম্বনার কথা উহ্য রাখতে পারতেন কিন্তু নিজের ত্রুটির এই স্বীকৃতি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বৈদিক যুগেও নারীশিক্ষার দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায়- ১) ব্রহ্মবাদিনী এবং ২) সদ্যোদ্বাহা। বিয়ের আগে যারা গুরুগৃহে বা নিজগৃহে বিদ্যালাভ করতেন তাদের বলা হত বহ্মবাদিনী আর বিবাহিতা অথবা বৈধব্যদশায় যারা বিদ্যাচর্চা করতেন তাদের বলা হত সদ্যোদ্বাহা। বৈদিকযুগে স্বামীস্ত্রী যে একত্রে যজ্ঞে অংশগ্রহণ করতেন, অর্থাৎ স্ত্রীরও যে ধর্মাচরণে সমানাধিকার ছিল, তার বহু প্রমান আছে। "বি ত্বা ততস্রে মিথুনা অবস্যবো ব্রজস্য সাতা..."। ঋগ্বেদ (১|১৩১|৩)। অর্থাৎ যজমান দম্পতি যৌথভাবে অগ্নিকে আহুতি দিচ্ছেন। পঞ্চম মন্ডলের আঠাশতম সূক্তে অগ্নিদেবতাকে বলা হয়েছে "সং জস্পত্যং সযমমা কৃণুস্ব" অর্থাৎ আপনি আমাদের দাম্পত্যসম্পর্ক শৃঙ্খলাবদ্ধ করুন (৫|২৮|৩)। শুধু ঋগ্বেদের সূত্রকারদের মধ্যে অন্তত ২৭ জন ছিলেন মহিলা। তাদের মধ্যে গার্গী, যাজ্ঞবল্ক্যর পত্নী মৈত্রেয়ী, বিশ্ববারা প্রমুক। এছাড়াও আছেন অগস্ত্যপত্নী লোপামুদ্রা, অত্রির কন্যা অপালা, ঋষি কক্ষিবৎ কন্যা ঘোষা, অম্ভৃণ কন্যা বাক এবং ইন্দ্রের পত্নী ইন্দ্রাণী। সেকালে কুমারী মেয়েদের উপনয়ন হত, তাদের সাবিত্রীমন্ত্র জপ ও অধ্যাপনের অধিকারও ছিল- "পুরাকল্পে কুমারীণাং মৌঞ্জী বন্ধনমিষ্যতে / অধ্যাপং চ বেদানাং সাবিত্রীবচনং তথা"। 

এরপরে বেদের শিক্ষার পথে আবির্ভূত হল দুটি অন্তরায়- ১) বেদবিরোধী কর্মবাদের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব আর ২) শ্রুতিপথরোধী জ্ঞানবাদের প্রবক্তা জৈন তীর্থঙ্করের দল। চার্বাকের লোকায়ত দর্শনও এই ক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী। এইসবের প্রভাবে শ্রুতি পরিণত হল স্মৃতিতে। আর আবির্ভাব হল মেধাতিথি, কুল্লুকভট্ট প্রমুখ টিকাকারদের। বেদের সময় প্রতিটি সিদ্ধান্তের হিতাহিতের ব্যাক্ষা দেয়া হত কিন্তু স্মার্ত পন্ডিতরা ব্যাক্ষা দেবার ধারকাছ দিয়ে গেলেন না বরং মুসলিমদের ফতোয়ার মত আপ্তবাক্য ধরনের হুকুম জারী করতে থাকলেন। বৈদিক কালে মেয়েদের বিয়ের বয়স সচরাচর ষোলো-সতের ধরা হত কিন্তু এই যুগে সেটা কমিয়ে আনা হল নয়-দশে। কেন? সেটার ব্যাক্ষা দেবার দায় স্মার্ত পন্ডিতদের নেই। মুসলিম আক্রমণ নারীদের পর্দানশীন করে তুললো। তারা ক্রমে শিক্ষার অধিকার হারালো। আর টুলো পন্ডিতরা নিদান হাঁকলো যে অক্ষর পরিচয় আর অকাল বৈধব্য নাকি পরস্পর সম্পর্কিত।

কিন্তু হিন্দুধর্মের মহত্ব এখানেই যে তারা চিরকাল বিবর্তিত হয়ে চলেছে। কালের নিয়মে সমাজে গোঁড়ামি এসেছে কিন্তু হিন্দুরা সেটাকে আঁকড়ে বসে থাকেনি। তাই মনু যেখানে বেদকে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করতে মানা করছেন সেখানে ব্যাসদেব বলছেন "ভবন্তু বহুলা: সন্তু বেদো বিস্তর্য্যতাময়ম" অর্থাৎ এই বেদবিদ্যা ছড়িয়ে পড়ুক। এই কারনেই হিন্দু সমাজে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, নারায়ণ গুরু বা দয়ানন্দ সরস্বতীর মত ব্যক্তিদের জন্ম হয় যারা সমাজকে কুসংস্কারের জাল থেকে বের করে এক নতুন স্তরে উন্নীত করেন।

তাই মনুস্মৃতি পুড়িয়ে নারী স্বাধীনতা উদযাপনকারীদের কাছে অনুরোধ যে আপনারা যদি সত্যিই নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে সচেতন থাকেন তাহলে মনুস্মৃতির সঙ্গে কোরানটাও পুড়ান। কারন হিন্দুসমাজ নিজেকে মনুস্মৃতির নিদান থেকে মুক্ত করে ফেলেছে কিন্তু মুসলিমরা আজও সেই কোরানের বন্ধনে আবদ্ধ রয়ে গিয়েছে। তবে তাদের সেই ক্ষমতা যে সেটা তারাও জানে আর আমরাও জানি। কারণ দিনের শেষে, ঘাড়ের উপর তো একটাই মাথা আছে, তাই না?

Monday, March 8, 2021

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

তখন বোধহয় ফাইভ-সিক্সে পড়তাম, স্কুলে গরমের ছুটির সময় টিভিতে কলকাতা কেন্দ্র থেকে বেলা ১২টা থেকেই বোধহয় 'ছুটি ছুটি' বলে একঘণ্টার একটা অনুষ্ঠান প্রচারিত হওয়া শুরু হলো। অনুষ্ঠানটা ডিডি৭-এ প্রচারিত হতো না ন্যাশনাল চ্যানেলের কলকাতা স্লটে, সেটা এখন মনে নেই। তবে অনুষ্ঠানটা ছিল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে। ফেলুদার বা গুপি গাইন-বাঘা বাইনের সিনেমা, ম্যাজিক শো, কথা বলা পুতুল ইত্যাদি ছিল অনুষ্ঠানটির অংশ। মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মত অনুষ্ঠানটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল আমাদের মত ছাত্রছাত্রীদের কাছে।

দূরদর্শন কলকাতার ডিরেক্টর তখন রতিকান্ত বসু। ইনি পরে দূরদর্শনের সর্বভারতীয় অধিকর্তা হয়েছিলেন এবং আরও পরে স্টার টিভিতে যোগ দেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে 'ছুটি ছুটি'-র অসাধারণ জনপ্রিয়তার ফলশ্রুতি হল যে পরের বছর সেই অনুষ্ঠানের শুরু হল সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গান দিয়ে। তখনও সুমন দ্বিতীয় ক্ষেপের কবীর সুমন হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের সেই অনুষ্ঠানের টাইটেল গানে সুমন গাইলো- 

"যে ছেলেটা কাজ করে খায়

রাস্তার চায়ের দোকানে,

তার ছুটি হারালো কোথায়

তার ছুটি রাখা কোনখানে?"

অসাধারণ সাম্যবাদী গান গাইলো সুমন চট্টোপাধ্যায়। হোক না গানের টার্গেট অডিয়েন্স ছাত্রছাত্রীরা, তাই বলে কি তৎকালীন বামপন্থী সুমন তার আদর্শ প্রচারে বিরত থাকতে পারে! 

কিন্তু আজ, কোথায় গেল সেই সুমনের সেই আপোষহীন বামপন্থী মানসিকতা? কোথায় গেল তার বিপ্লবী সত্ত্বা? আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে কবীর সুমনকে তো লিখতে দেখলাম না যে,

যে মেয়েটার মুখ ঢেকেছে

বোরখার আবছা আঁধারে,

তার স্বাধীনতা আজকেফোঁ

পায় যে দেয়াল মাঝারে।

তাহলে কি যত বিপ্লবীয়ানা খালি হিন্দুদের ক্ষেত্রে? নাম পালটে কবীর হলেই বিপ্লব শেষ? আফটার অল, ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান, তাই না?

Sunday, February 28, 2021

জাভেদ শামিমের পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি

জাভেদ শামিম "পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অফিসার"? হাসাইলে মোরে আনন্দবাজার। হ্যাঁ, তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পদলেহন যদি পরিচ্ছন্নতা ও নিরপেক্ষতার সূচক হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই তিনি পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির অফিসার কিন্তু বাস্তবটা হল যে জাভেদ শামিম, হুমায়ুন কবীর বা নজরুল ইসলামরা কখনও নিরপেক্ষ হতে পারেননা। তাদের ধার্মিক শিক্ষা নিরপেক্ষ হতে দেয়না। এই কারণেই পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পরে, হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠান বানচাল করতে উঠেপড়ে লেগেছিল জাভেদ শামিমের নেতৃত্বে মমতা ব্যানার্জীর প্রশাসন।

২০১২ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারী, রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ারে হিন্দু সংহতিকে চতুর্থ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান পালনের অনুমতি দিয়েও শেষ মুহূর্তে সেটা বাতিল করে দেয় কলকাতা কর্পোরেশন ও কলকাতা পুলিশ। প্রশাসনের এই খামখেয়ালিপনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করা হয় এবং বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জী সভার অনুমতি দেন কিন্তু তারপরেও কলকাতা পুলিশের তদানীন্তন যুগ্ম কমিশনার (সদর), জাভেদ শামিমের নেতৃত্বে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। আদালতের আদেশের পরেও এলাকা জুড়ে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা যাতে সমাবেশ না হতে পারে। বিচারপতি ইন্দিরা ব্যানার্জীর রায়ের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে যায় সরকার এবং সেখানেও চরম তিরস্কৃত হয় তারা। এরপরেও জাভেদ শামিম তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে, নিজের পদের চরম অপব্যবহার করে, সভায় আগত হিন্দু সংহতির কর্মীদের ধমকাতে থাকেন। তার এই ন্যক্কারজনক কাজের বিরুদ্ধে পুনরায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় হিন্দু সংহতি এবং বিচারপতি জয়ন্ত বিশ্বাস আদেশ দেন যে ঐ অনুষ্ঠান যাতে সুষ্ঠভাবে হতে পারে সেটা কর্পোরেশন, যুগ্ম কমিশনার (সদর), মুচিপাড়া থানা সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের নিশ্চিত করতে হবে। এরপর আর শামিম বাবুর কিছু করার থাকেনা, অনুষ্ঠান হতে দিতেই হয় কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ হতেই তপন'দাকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

এরপরেও কেউ যদি জাভেদ শামিমকে "পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির" বা নিরপেক্ষ অফিসার বলে সার্টিফিকেট দেয় তাহলে বলতেই হয় যে, "আস্তে কন কত্তা, ঘুড়ায় হাসবো"। জাভেদ শামিম হোক বা হুমায়ুন কবীর বা নজরুল ইসলাম - এদের একমাত্র আনুগত্য তাদের কৌমের স্বার্থরক্ষার প্রতি আর সেই কাজে তারা প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে কাজে লাগায় আর আমরা বোকার মত, বিশদে না জেনেই, মিডিয়ার দেয়া সার্টিফিকেটের উপর বিশ্বাস করে ফেলি। ভুলে যাই যে দিনের শেষে মিডিয়াও একটা ধান্ধা যার লক্ষ্য মুনাফা লোটা।

Sunday, February 21, 2021

নির্বাচনী ইস্তেহার

যে দলের নির্বাচনী ইস্তেহারে


১. পশ্চিমবঙ্গের ভূমিসন্তানদের শিক্ষা ও জীবিকার ক্ষেত্রে সিংহভাগ সংরক্ষণ ঘোষণার নির্দিষ্ট সময়সীমা,

২. রাজ্য জুড়ে শিল্প স্থাপনের বিভিন্ন ক্লাস্টার তৈরী করা। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, জলপাইগুড়ির মত এলাকায় শিল্প স্থাপনে শিল্পপতিদের বাড়তি সুবিধা,

৩. বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সীমানা দিয়ে রাজ্যে যাতে অনুপ্রবেশ না ঘটে সে বিষয়ে কেন্দ্রের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা,

৪. বাংলা ভাষাকে ক্লাসিকাল ভাষার মর্যাদা দেয়ার জন্যে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া,

৫. রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে গজিয়ে ওঠা অসংখ্য অনুমোদন বিহীন মাদ্রাসাগুলি অবিলম্বে বন্ধ করা,

৬. সরকারি ক্ষেত্রে শূন্য পদগুলি অবিলম্বে পূরণ করা,

৭. MSME এবং ভ্রমণ শিল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা,

৮. OBC-A এর মত বৈষম্যমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল করে আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা,

৯. রাজ্যের পুলিশ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর জন্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা,

১০. তথ্যের অধিকার আইন কঠোরভাবে চালু করা, ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিশ্রুতি থাকবে তাদের প্রতিই আমার সহানুভূতি থাকবে।

Saturday, February 20, 2021

প্রত্যাবর্তন

যেকোন সংগঠনের ঋদ্ধ হওয়ার মূলমন্ত্র হল মানব সম্পদ। দলীয় তত্ত্ব যত ভালই হোকনা কেন, কর্মীরা যদি সেটা বুঝতে, বুঝাতে ও প্রয়োগ করতে সক্ষম না হয় তাহলে সংগঠনের দীর্ঘকালীন শ্রীবৃদ্ধি ঘটা সম্ভব নয়। বামপন্থীরা এই সত্যটা বুঝেছে বলেই তারা দলীয় কর্মীদের মেধা বৃদ্ধির প্রতি যত্নশীল এবং এই কারণেই, ক্ষমতায় না থাকলেও, প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বামপন্থীদের প্রভাব আজও অমলিন। উল্টোদিকে, দক্ষিণপন্থীরা নিজেদের কর্মীদের মেধার উন্মেষ ঘটানোর বদলে সংখ্যার উপর বেশী নির্ভরশীল। শিকড় মজবুত না হলে যে ফলন্ত গাছও উপড়ে যেতে পারে, এই সত্যটা তারা বুঝতেই চায়না। ফলতঃ, দক্ষিনপন্থীরা হয়ে ওঠে বিশেষ নেতা বা নেত্রীর মুখ নির্ভর যেখানে বামপন্থীদের শক্তি হল টিম-গেম।

একুশের নির্বাচনে বিজেপির ক্ষমতায় আসা নিয়ে আমার কোন দ্বিধা নেই কিন্তু চিন্তা হচ্ছে ছাব্বিশ নিয়ে। বিজেপির থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের যে বিরাট প্রত্যাশা রয়েছে সেগুলোর সবক'টার সমাধান চটজলদি সম্ভব নয়। কিন্তু ক্ষমতায় আসার বছর দুয়েক পর থেকেই বাড়তে থাকবে প্রত্যাশা পূরণের চাপ। ক্ষমতা থেকে সরে গেলে তৃণমূল দলটার (যা বাস্তবে সিপিএম কে ক্ষমতাচ্যুত করার একটা আন্দোলন) অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে যাবে আর প্রধান বিরোধী হিসাবে, মুসলমানদের সমর্থন নিয়ে, উঠে আসবে কম্যুনিস্টরা। লড়াই সরাসরি লেফট বনাম রাইট। এমতাবস্থায়, বিজেপি যদি ভাল নেতা আর দক্ষ কর্মীদল তৈরী করতে না পারে তাহলে প্রোপাগাণ্ডার রাজনীতিতে ডক্টরেট করা কম্যুনিস্টরা সরকারকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়বে।

তাই ছাব্বিশে প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত করার চিন্তা বিজেপিকে এখন থেকেই করতে হবে। সেই অনুযায়ী ঘুটি সাজাতে হলে বিজেপিকে সরকার আর দল, দু'টোকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। সরকার বানাতে গিয়ে যদি সংগঠন অবহেলিত হয় তাহলে ছাব্বিশে খেলা কঠিন হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে যে দলই সরকারকে ক্ষমতাসীন করেছে আর নির্বাচনে দলই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। দু'টোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা তাই একান্ত প্রয়োজন।

Friday, February 19, 2021

তৌবা তৌবা

আজ শেখ ইয়াসিন, বাবু মাস্টার প্রমুখরা বিজেপিতে যোগদান করাতে যারা তৌবা তৌবা করছেন তারা হয় রাজ্যের জনসংখ্যার গঠন সম্পর্কে অজ্ঞ অথবা তাদের এই কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনের পিছনে অন্য কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যার ৩০% 'সংখ্যালঘু'দের হওয়ার জন্যে মোদী বা শাহ দায়ী নয়, দায়ী এখানকার হিন্দুরা যারা এতদিন ধরে চোখ বুজে ছিল। বানতলা, ধানতলা, দেগঙ্গা, কালিয়াচক, ধুলাগড়ি, বাদুড়িয়া ইত্যাদি ঘটার পরেও নিজেদের চোখে সেকুলারিজমের পট্টি বেঁধে, নিজেদের সম্প্রদায়ের স্বার্থের উপরে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থকে যায়গা দিয়েছিল। তাই আজ বিজেপি যখন সেই সামাজিক গঠনকে ভিত্তি করে নিজেদের ঘুটি সাজাচ্ছে, তখন, সবাইকে ছেড়ে শুধু তাকে দোষারোপ করা মানে ভাবের ঘোরে চুরি করা। দেশের সংবিধান অনুসারে বিজেপি কখনই নিজেকে হিন্দুত্ববাদী দল বলে দাবী করেনা কিন্তু এই কথা অস্বীকার কোন যায়গা আছে কি যে বর্তমান পরিস্থিতিতে, হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় সবথেকে সরব দলের নাম বিজেপি? তাই বাবু মাস্টার বা শেখ ইয়াসিনদের দলভুক্তির জন্যে বিজেপির দিকে যখন একটা আঙুল তুলবেন, মনে রাখবেন, তিনটে আঙুল কিন্তু আপনার দিকেও থাকবে। আপনার নিস্পৃহতার কারণেই আজ এমন অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে যেগুলো আপনি সচেতন থাকলে নেয়ার প্রয়োজনই হতনা। 

এই প্রসঙ্গে, ২০১৫ সালের একটা লেখার লিঙ্ক নীচে দিলাম। পড়ুন, আর পরিস্থিতি ভেবে দেখুন।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10152857401834865&id=620989864