Wednesday, March 20, 2024

গণতন্ত্র ও নির্বাচন

যেকোন 'তন্ত্র' সফল হওয়ার জন্যে যার নামে তন্ত্র, তার শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। যেমন, রাজতন্ত্রে যদি রাজা দুর্বল হয়ে যায় তাহলে দেশে মাৎস্যন্যায় দেখা দেয়। একনায়কতন্ত্রে যদি সেই একনায়ক দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তার দশা কি হয় তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ চেসেস্কু। দলতন্ত্রে যদি দল দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তার পরিণতি কি হয় তার প্রমাণ পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম।


একইভাবে, গণতন্ত্র সফল হওয়ার জন্যে জনগণের শক্তিশালী হওয়া আবশ্যক। সেটা না হলে শাসক রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করবেই। শুধু পাঁচ বছর অন্তর ভোট দেয়াই গণতন্ত্র নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র হল শাসকের উপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। আধুনিক যুগের ইতিহাসে পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ আমেরিকাতে জনগণ এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে বলেই প্রবল প্রতাপান্বিত আমেরিকার রাষ্ট্রপতি, নিক্সনকে নিছক ফোনের বার্তালাপ বিনা অনুমতিতে রেকর্ড করার জন্যে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে ইস্তফা দিতে হয়। 


আমেরিকার দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সাপেক্ষে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস নেহাতই শিশু তাই আমরা প্রায়শই ভুলে যাই যে কেন্দ্র বা রাজ্যের শাসকদলের প্রশংসা করা জনগণের দায়িত্ব নয়, সে কাজের জন্যে তাদের যথেষ্ট সক্ষম ও শক্তিশালী মিডিয়া টিম আছে। জনগণের দায়িত্ব তাদের ত্রুটি, বিশেষত সেগুলো যেগুলোকে তারা অর্থ ও জনবল দ্বারা ঢাকতে চায়, প্রকাশ করা। তাদের যে কাজের ফলে তাদের রাজনৈতিক লাভ হলেও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলিকে তুলে ধরা। কিন্তু তারপরেও পাঁচ বছর পর আসে সেই একটা দিন যেদিন জনগনকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে তারা কার হাতে পরবর্তী পাঁচ বছরের দায়িত্ব তুলে দেবে। আগামী ১৯শে এপ্রিল থেকে ১লা জুন অবধি দেশের বিভিন্ন অংশে খন্ডে খন্ডে আসবে সেই দিন যখন জনগণকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে দেশের দায়িত্ব কার হাতে দেবে।


প্রশ্ন যখন সার্বিকভাবে দেশের তখন আমি কখনোই কোন আঞ্চলিক দলকে সেই দায়িত্বভার দেবনা। কারণ যেকোন আঞ্চলিক দল খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে এতটা সংবেদনশীল থাকে যে দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে তারা উপেক্ষা করে। তাছাড়া একাধিক রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে যদি কেন্দ্রে কোন সরকার গঠন করে তাহলে তাদের স্থায়িত্ব যে কতটা ক্ষণস্থায়ী হয় তার দৃষ্টান্ত দেবেগৌড়া বা গুজরাল সরকারের পরিণতি হিসাবে আমাদের সামনেই আছে।


জাতীয় দল হিসাবে কংগ্রেসকেও আমি বেছে নেবনা তার কারণ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে তাদের আপোষের ইতিহাস। নেহেরুর সময় চীন আগ্রাসন হোক বা নৌসেনা ও উপকূল রক্ষী বাহিনীকে সরিয়ে নিয়ে দাউদ ইব্রাহিমকে বম্বেতে বিস্ফোরক প্রবেশে সাহায্য - সবই হয়েছে কংগ্রেস আমলে। তাদের না বাছার আরেকটা কারণ হলো তাদের জিনে থাকা হিন্দুবিদ্বেষ। গভীর রাতে শঙ্করাচার্যকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হোক বা ওয়াকফ আইন, ধর্মস্থান সংক্রান্ত আইন - সব ক্ষেত্রেই তাদের নেতৃত্বের হিন্দু বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে।


নোটা কখনোই আমার পছন্দ হবেনা কারণ বর্তমান প্রেক্ষিতে সেটা ভোট নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু নয়। নোটা'তে এক লক্ষ ভোট পড়লেও সেটা হাজার ভোট পাওয়া প্রার্থীকে হারাতে পারবেনা যদি সেটা বাকি প্রার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক হয়। তাছাড়া সামাজিক কাজে আমাদের নিয়মিত যাদের সাথে সাংস্কৃতিক সংঘাত হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে তারা কখনোই নোটা'তে ভোট দেবেনা, দেবে কৌমের স্বার্থে।


এমতাবস্থায় আমারও কর্তব্য স্বজাতির স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্যে ভোট দেয়া। আর সেটা করতে গিয়ে আমি কখনোই কোন দলকে "অতটা হিন্দুত্ববাদী নয়" বলে হিন্দুবিদ্বেষী কোন দলকে নিজের মূল্যবান ভোট দেবনা। হ্যাঁ, ভোট দেয়ার আগে অবধি নিজের ভোটের মূল্য উসুল করতে সেই দলকে দেশের ও স্বজাতির স্বার্থ রক্ষার জন্যে বাধ্য করাটাও আমারই দায়িত্ব আর সেই কাজ করার দায়িত্ব আমি অন্য কাউকে ইজারা দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারিনা কারণ দেশও আমার আর সংস্কৃতিটাও আমার। এর রক্ষা আমার দায়িত্ব।

No comments:

Post a Comment