Saturday, July 24, 2021

গুরু পূর্ণিমা

জুড়িয়া চরণ মুদিয়া নয়ন

প্রণমি তোমারে প্রভু,

রহিবে বিবেক সে শুধু আমার

বিকাবো না তারে কভু।


ঈশ্বর আর বিবেক ছাড়া আমার আর কোন গুরু নেই। হ্যাঁ, পথপ্রদর্শক বা অনুপ্রেরণা (অন্যভাবে নেবেন না) অনেক আছে, কিন্তু গুরু নেই। ব্যক্তি গুরুর দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে ভেবে, ডক্টরজী যে কারণে গৈরিক ধ্বজকে সঙ্ঘের গুরু হিসাবে নির্বাচিত করেছিলেন, ছোটবেলায় শোনা সেই কথাই হয়তো অবচেতন মনে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলে দিয়েছে।

না, তাই বলে আমি জীবনে গুরুর প্রয়োজনের কথা অস্বীকার করিনা। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে হয়তো তাঁর দরকার পড়ে কিন্তু সেক্ষেত্রে একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই সব ক্ষেত্রে গুরু মানতে হবে, এটা মানতে পারিনা। বিশেষত সেই গুরুদের তো একদমই গুরুত্বহীন মনে হয় যারা জীবিত অবস্থায় সম্মুখীন হওয়া বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে ভক্তদের অবগত না করিয়ে মৃত্যুর পরে কিভাবে মোক্ষলাভ হবে তার উপায় বলেন। ঐহিক জীবনে ধার্মিক কর্তব্য পালনে ব্যর্থ কোন ব্যক্তির পারত্রিক জীবন বৈকুণ্ঠধামে বা শিবলোকে কাটবে বলে আমি বিশ্বাস করিনা।

তাই, ঈশ্বর আর বিবেকই আমার গুরু। ঈশ্বর শক্তি যোগান আর বিবেক সঠিক পথ দেখায়। এই আত্মদীপের আলোতেই যেন সারা জীবন চলতে পারি এটাই মা কালীর কাছে প্রার্থনা। 

সবাইকে গুরু পূর্ণিমার শুভেচ্ছা।

Wednesday, July 7, 2021

আপনি আচরি ধর্ম

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তখন সিংহাসনে বিরাজমান আর তার প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আসীন স্বয়ং চাণক্য, গ্রীকদের পরাজিত করে চন্দ্রগুপ্ত তখন চক্রবর্তী সম্রাট, এমন সময়ে ভারতে এলেন গ্রীক পর্যটক, মেগাস্থিনিস। ভারতে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই তিনি রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে বেরালেন। রাজকর্মচারী থেকে প্রজা- সবার সাথেই কথাবার্তা বললেন। আর সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলার তিনি উপলব্ধি করলেন যে চন্দ্রগুপ্তের সাম্রাজ্যের মূল চালিকাশক্তি হলেন চাণক্য। তাই তিনি চাণক্যর সাথে একদিন দেখা করার জন্যে সময় চাইলেন।

অতিথিকে দেবতা হিসাবে দেখা দেশে, মেগাস্থিনিসের আবেদন মঞ্জুর হতে দেরী হলনা। গ্রীক পর্যটককে জানিয়ে দেয়া হলো যে প্রধানমন্ত্রী কবে আর কখন, নিজ বাসগৃহে, তার সাথে দেখা করবেন। নির্দিষ্ট দিনে, সন্ধ্যার সময়, মেগাস্থিনিস উপস্থিত হলেন চাণক্যর বাড়িতে। তাকে দেখে, চাণক্য একটু অপেক্ষা করতে বলে, রাজসভার কিছু কাজ সেরে, তাকে ডাকলেন। মেগাস্থিনিস চাণক্যকে যথোচিত অভিবাদন করে বললেন যে তিনি চাণক্যর বিষয়ে অনেক কিছু শুনেছেন, তাই তাঁকে কিছু প্রশ্ন করতে চান। তার এই প্রস্তাব শুনে চাণক্য তাকে প্রতিপ্রশ্ন করলেন যে তিনি তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলাপ করতে চান নাকি রাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সাথে। এই কথা শুনে মেগাস্থিনিস বললেন যে তিনি প্রধানমন্ত্রী নয়, ব্যক্তি চাণক্যর সাথেই কথা বলতে আগ্রহী।

মেগাস্থিনিসের উত্তর শুনে, চাণক্য তাঁর পাশে জ্বলা প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়ে, পাশের আরেকটা প্রদীপ জ্বালিয়ে তাকে প্রশ্ন শুরু করতে বললেন। মেগাস্থিনিস বললেন যে, "এটাই আমার প্রথম প্রশ্ন যে আপনি ঐ প্রদীপটা নিভিয়ে, আরেকটা প্রদীপ কেন জ্বালালেন"? তার প্রশ্ন শুনে চাণক্য মৃদু হেসে বললেন যে, "আমি যে প্রদীপটা নিভালাম সেটার তেল খরচ রাজ্যের কোষাগার থেকে আসে। আমি এতক্ষণ রাজকার্য করছিলাম, তাই ঐ প্রদীপ জ্বলছিল। আপনি আমার সাথে ব্যক্তিগত আলাপের আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তাই ঐ প্রদীপটা নিভিয়ে, এটা জ্বালালাম কারণ এটার তেল খরচ আমার প্রাপ্ত সাম্মানিক দিয়ে হয়"। এই কথা শুনে মেগাস্থিনিস বললেন যে আমার আর কোন প্রশ্ন নেই। সবাই চাণক্যর কথা কেন বলে সেটা আমি বুঝে গেছি।

ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীতটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল কিন্তু ঘটনা হচ্ছে যে মমতা ব্যানার্জী নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে যে মামলা করেছেন সেটা তার ব্যক্তিগত বিষয়, মুখ্যমন্ত্রীর বিষয় নয়। তাই এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে এই মামলার খরচ এবং জরিমানা, যদি দেয়া হয় এবং না দিয়ে যদি ফের সুপ্রিম কোর্টে যান সেক্ষেত্রেও যে খরচ সেটা কে বহন করছে, মমতা ব্যানার্জী নিজে নাকি রাজ্যের কোষাগার?