Saturday, February 10, 2024

নরসিংহ রাও ও ভারতরত্ন

পি ভি নরসিংহ রাও'কে ভারতরত্ন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় প্রধানমন্ত্রী হিসাবে বিরত রাখা (দৈনন্দিন পূজা উপলক্ষে) আর মনমোহন সিংহ'কে মুক্ত অর্থনীতি প্রণয়নের স্বাধীনতা নেয়া দেয়া ছাড়া জাতীয় স্বার্থে তার আর খুব বেশী অবদান নেই। যদিও সেই সময় সঙ্ঘ পরিবার মুক্ত অর্থনীতির তুমুল বিরোধিতা করেছিল। স্বদেশী জাগরণ মঞ্চ নামে একটা অভিযান শুরু করেছিল। আমার মনে আছে, ১৯৯২ সালে কল্যাণী শিবিরের সান্ধ্যকালীন বৈঠকে RSS-এর তদানীন্তন সহঃ সরকার্যবাহ, মদন দাস দেবী, এই নিয়ে বিশেষ প্রবচনও দিয়েছিলেন।


নরসিংহ রাওয়ের আমলেই পাশ হয় Places of Worship Act (1991) যা অনুসারে ভারতের সব ধর্মস্থানের স্থিতাবস্থা ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট অনুযায়ী বহাল রাখতে হবে। ওয়াকফ অ্যাক্ট (১৯৯৫) যা অনুসারে ওয়াকফ বোর্ড যেকোন সম্পত্তিকে নিজেদের বলে দাবী করতে পারে আর সেটা অপ্রমাণের দায় প্রতিবাদীর। হর্ষদ মেহতার থেকে ১ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ হোক বা সংসদে আস্থা ভোটে জেতার জন্যে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার সদস্যদের টাকা দেয়ার মামলা হোক, নরসিংহ রাওয়ের ইমেজ মোটেই নিষ্কলুষ নয়। তার দুর্বল মেরুদন্ডের আরেকটা বড় দৃষ্টান্ত হলো সব ব্যবস্থা হয়ে যাওয়ার পরেও আমেরিকার চাপে পারমাণবিক পরীক্ষার সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যাওয়া। পরে বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হবার পরে তাকে বলেছিলেন যে "আমি সব ব্যবস্থা করে গেলাম, আপনি প্রয়োগ করবেন"। তবে তার একটা বড় কৃতিত্ব হলো গান্ধী পরিবারের বাইরে, প্রথম কংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, সাফল্যের সাথে পাঁচ বছর সংখ্যালঘু সরকার চালানো। 


আমি মনে করি যে কোন অন্যায় সিদ্ধান্ত যদি ভাল উদ্দেশ্য সাধন করার জন্যে নেয়া হয় তাহলে সেই সিদ্ধান্ত মোটেই অন্যায় নয় মানে End justifies the means। সত্য, শিব আর সুন্দর পরস্পর সম্পৃক্ত। কোন অসুন্দর পথে শিবে উপনীত হওয়া যায়না আর শিবে উপনীত হওয়ার কোন পথই অসুন্দর হতে পারেনা। এই কারণেই আমি ব্যক্তিগতভাবে নরসিংহ রাওকে ভারতরত্ন সম্মানের যোগ্য মনে না করলেও তাকে এই সম্মান প্রদানের নরেন্দ্র মোদীর এই সিদ্ধান্তের সাথে সহমত। এই সম্মান দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে মোদীর গ্রহণযোগ্যতা বাড়াবে। কংগ্রেসে থেকে, গান্ধী পরিবারের স্তাবক না হয়েও যে আলাদা উচ্চতায় ওঠা যায় সেটা মনে করিয়ে দেবে এবং একইসাথে RSS কেও তাদের চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা বুঝিয়ে দেবে।

Tuesday, February 6, 2024

সম্প্রদান

ইদানীং কিছু যাদবপুরী বিজ্ঞ কন্যাদানে আপত্তি জানাচ্ছে। তাদের মতে কন্যা কোন বস্তু নয় যে তাকে দান করা যাবে। এই বিজ্ঞরা হয়তো কালকে 'জীবনদান' বা 'মতদান' নিয়েও একই আপত্তি তুলবে। কিন্তু এই হঠাৎ বিজ্ঞদের জানা নেই যে বিবাহ একটা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আর কন্যা সম্প্রদান তার একটা অংশ বিশেষ।

"ওঁ এতস্যৈ সবস্ত্রায়ৈ সালঙ্কারায়ৈ কন্যায়ৈ নমঃ"

মন্ত্র বলে যে কন্যাকে সম্প্রদান করা হয় সে কতটা অসাধারণ তার বর্ণনা রয়েছে পরবর্তী আচার গ্রন্থিবন্ধনে।

"সাবিত্রী সত্যভামা হিমগিরিতনয়াহুরুন্ধতী জহ্নূকন্যা লোপামুদ্রা সুভদ্রাহদিতি রতি কমলা রুক্মিনী রেবতী চ। রম্ভা মেনা যশোদা সুরূপতিবনিতা কৈটভি বানপুত্রী, সৌভাগ্যং পুত্রলাভং সকলশুভকরং মঙ্গলং বো দিশ্ম।"

হ্যাঁ, কন্যা, যার উৎপত্তি কম ধাতু অর্থাৎ কামনা থেকে, হলো মা-বাবার শ্রেষ্ঠ কামনার ধন তথা কাম্য অভিজ্ঞান। আর সেই ঐশ্বর্যকে আরও মহিমান্বিত করা হয় সে কোন সংস্কৃতির প্রতিনিধি সেই বিবৃতি দ্বারা। সাবিত্রী, সত্যভামা, পার্বতী, অরুন্ধতী সহ অন্যান্য মহীয়সীদের সার্থক উত্তরসূরী এই কন্যাকে দান করার মত উদারতা দাতার থাকতে হয় আর সেই দান গ্রহণ করে, তাকে রক্ষা করার যোগ্যতা গ্রহীতার থাকতে হয়। তাই বলা হয় - 

"দূর্বাপুষ্পং ফলঞ্চৈব বস্ত্রং তাম্বুলমেবচ

এভি কন্যা ময়া দত্তা রক্ষণং পোষণং কুরু।"

এই মহার্ঘ দান গ্রহণ করার পর গ্রহীতার যাতে কোন হীনমন্যতা না আসে তাই পরবর্তী মন্ত্রই হচ্ছে

"ওঁ যথেন্দ্রানী মহেন্দ্রস্য; স্বাহা চৈব বিভাবসোঃ। রোহিনী চ যথা চন্দ্রে, দময়ন্তী যথা নলে। যথা বৈশ্রবনেভদ্রা, বশিষ্টে চাপ্যরুন্ধতী। সীতা চ রামচন্দ্রে, গৌরীশঙ্কর এব চ, যথা- নারায়নে লক্ষী স্তথাত্বং ভব ভর্ত্তারি।"

একের পর এক পারফেক্ট কাপলের উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হচ্ছে যে সম্পর্কটা ঠিক কেমন হবে। দান ও গ্রহীতা যাতে পরস্পরের পরিপূরক হয়ে উঠতে পারে সেই লক্ষ্যেই হয় গ্রন্থিবন্ধন।