Saturday, March 27, 2021

মানসিকতার বদল

আমার বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে যখন হিন্দুদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলা হয় তখন প্রায়শই একটা প্রশ্ন আসে যে "ভোট কাকে দেবো?" অর্থাৎ অধিকাংশ ব্যক্তিরই ধারণা যে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে ভোটটাই একমাত্র উপায়। 


আমার মনে হয় এই মানসিকতাটাই হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। যে সমাজ তার সামাজিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত করে নিজে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে সেই সমাজের পতন অনিবার্য। সরকার হিন্দুদের স্বার্থে আইন করবে, পুলিশ হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবে এইরকম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নির্ভরতাই হিন্দুদের আরও ক্লীব বানিয়ে দিচ্ছে। 


আর এই মানসিকতার জন্যে কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল দায়ী নয়, দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা। হিন্দু ধর্মগুরুরা নিজেদের শিষ্যদের তাদের সামাজিক দায়িত্বের শিক্ষা না দিয়ে কেবল ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বা মুক্তির শিক্ষা দেন। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হিন্দুরা বিশেষ বিশেষ দিনে পুণ্যের আশায় মন্দিরে লাইন দেয়, নতুন গাড়ি কিনলে সেটার মঙ্গলকামনায় পূজো দেয় কিন্তু সেই মন্দিরের আরতির অনুষ্ঠান আজানের জন্যে বন্ধ হয়ে গেলে বা মন্দিরের বিগ্রহের অসম্মান হলে হিন্দুদের কিছু এসে যায়না। ওটাতো কমিটি বুঝবে বা পুলিশ সামলাবে এই রাষ্ট্রনির্ভর ধারণা তাকে আটকে রাখে। বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশনের কোন মন্দিরে বা অন্য যেকোন অভিজাত মন্দিরে গিয়ে দেখুন কেমন পরিপাটি করে সব সাজানো রয়েছে। ভক্তদের দানের টাকায় তৈরি এই ঝাঁ চকচকে প্রাসাদগুলি কতজন গরীব, অসহায় হিন্দুকে আশ্রয় দেয়, খাবার দেয়? কটা মন্দির তার আশেপাশে হিন্দুদের উপর বা অন্য মন্দিরের উপর হামলা হলে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের সহমর্মিতা প্রকাশ করে? একটাও নয়। 

উল্টোদিকে মুসলিমদের দেখুন, প্রতিটা মসজিদ কিভাবে এলাকার দুঃস্থ মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে তাদের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। মুসলিমদের দেখুন তারা কিভাবে রাষ্ট্রশক্তির অপেক্ষায় বসে না থেকে কিভাবে নিজেদের অধিকারের জন্যে উদ্যোগী হয়। এটাই হচ্ছে হিন্দুদের সাথে মুসলিমদের মানসিকতার পার্থক্য - একপক্ষ নিজেদের অধিকারের জন্যেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে আর অন্যপক্ষ নিজেদের অন্যায্য দাবীও রাষ্ট্রকে মানতে বাধ্য করে সামাজিক সচেতনতার ক্ষমতা দেখিয়ে।

আজকের দিনে হিন্দুদের রাষ্ট্রীয় শক্তির উপর তাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে সামাজিক শক্তিকে বলশালী করার কাজটাই করাটাই আমার লক্ষ্য। জেহাদি আক্রমণের সময় মোদী বা মমতার উপর নির্ভর করে বা গোঁসা করে হিন্দু সমাজ তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত হিন্দুরা তাদের সামাজিক শক্তির মূল্য বুঝতে পারবে। তাই যারা জিজ্ঞাসা করছেন যে ভোট কাকে দেবো তাদের প্রতি একটাই উত্তর, ভোট তো পাঁচ বছরে একবার আসবে, সবার আগে নিজের সম্মান নিয়ে ততদিন টিঁকে থাকা নিশ্চিত করুন। আর সেটা যখন নিশ্চিত করতে পারবেন তখন আর আপনাকে ভোটের সময় বিকল্পের খোঁজ করতে হবেনা, সব রাজনৈতিক দলই আপনার সুরে সুর মেলাবে।

Friday, March 26, 2021

সুমহান গণতন্ত্র

পশ্চিমবঙ্গের ৩০ টা বিধানসভা কেন্দ্রের সচেতন জনতা আগামীকাল ভোট শেষ হতেই আবার শীতঘুমে চলে যাবেন। পাঁচ বছর অন্তর, একটা বোতাম টিপেই তাদের সামাজিক দায়িত্ব শেষ। এরপর না তাদের এলাকায় হেলিকপ্টার নামবে আর না তাদের বাড়ি কোন নেতা খেতে যাবেন। কালকের পরে তাদের অবস্থা হবে ব্যবহৃত কন্ডোমের মত। আজ অবধি কন্ডোম ডটেড না ফ্লেভার্ড - এই নিয়ে যত আলোচনাই হোক না কেন, ব্যবহারের পরে তার মূল্য শূন্য। 

আর জনগণই বা কি করেন, তারা নিজেদের রোজনামচা নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকেন যা অন্যদিকে নজর দেয়ার সময় কোথায়? বাচ্চার পড়াশোনা, পরিবারের খাদ্য, বস্ত্র আর বাসস্থানের যোগার, ভবিষ্যতের সঞ্চয় ইত্যাদি বিষয়ে তারা এতটাই নিয়োজিত যে এর বাইরে ভাবার সুযোগই নেই। অথচ নেতানেত্রীদের দেখুন, তাদের কেউ অর্থকষ্টে আছে বলে মনে করেন? না তাদের রেশন তুলতে হয়, না লাইন দিয়ে জল নিতে হয়, না দুর্যোগের পরে ত্রাণ নেয়ার জন্যেও ঘুষ দিতে হয়। সত্যি কথা বলতে তারা আমাদের ভাল করার জন্যে এতটাই নিবেদিতপ্রাণ যে ৩০,০০,০০০ টাকার বেশী শুধু খরচ করবেন যাতে আমরা তাদের সেবা করার সুযোগটুকু দেই। আর সেখানেও এত প্রতিযোগিতা যে কেবা আগে প্রাণ করিবেক দান, তার লাগি তাড়াতাড়ি!

আমাদের মহান দেশের সুমহান গণতন্ত্র, বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক বলে আমাদের গর্বের অন্ত নেই কিন্তু সেই গণতন্ত্রে প্রকৃত জনগণের ভূমিকা ঠিক কতখানি? একটু ভেবে দেখুন, ভেড়ার পাল থেকে কি কিছুমাত্র আলাদা? রাখাল যেদিকে নিয়ে যাবে, পাল সেদিকেই যাবে। এই মহান গণতন্ত্রে আপনি কি চান, সেটা বড় কথা নয়, আসল কথা হলো আপনাকে বিশ্বাস করানো যে আপনি আসলে কি চাইছেন। তাই নির্বাচন আসলে কেউ বাসন মেজে দেয়ার অফার দেন বা কেউ বিনা নিমন্ত্রণেই বাড়িতে এসে পাত পেড়ে খেয়ে যান, কেউ ভাঙা পা দেখিয়ে সহানুভূতি চান তো কেউ কর্মীদের লাশের কথা বলে, কিন্তু ভাবুন তো আপনাদের পরিবারের কারুর পা ভাঙলে আপনারা কতজন কলকাতার নামজাদা হাসপাতালে ভর্তি ও হাসপাতাল অবধি গ্রীন করিডোরের সুবিধা পান? যারা নিজেদের কর্মীদের লাশ দেখিয়ে সহানুভূতি চাইছেন, তারা কিভাবে নিজেদের কর্মীদের খুনের অভিযুক্তকে নিজেদের দলে যায়গা দেন?

আসলে আমার দেশের নির্বাচন মানে হল আপনার পাঁচ বছরের ক্ষোভ, শান্তিপূর্ণ উপায়ে, বের করে দেয়ার উপায় মাত্র। বিগত পাঁচ বছরে যে যাই করুক, ভোট মিটলেই আবার সব শূন্য থেকে শুরু হবে। তাই নেতা-নেত্রীরা অনায়াসেই জামার রঙ পালটে পাপমুক্ত হয়ে যেতে পারেন আর আমরাও আমাদের নতুনভাবে সান্ত্বনা দেই যে এবার থেকে সব ভাল হবে।

ভারতের গণতন্ত্র দীর্ঘজীবী হোক।

Friday, March 19, 2021

The stooge

Mamata Banerjee is a street smart politician. She knew that she wouldn’t be able to cope with BJP led by Narendra Modi once he settles down in his office. 2016 wasn’t a tough ride for Mamata as Modi was new in Lutyens culture and most importantly, Modi & Shah was eyeing Uttar Pradesh as their primary target  That’s why, after winning the assembly election in 2016, she played this gamble to plant one of her most trusted lieutenant, Mukul Roy, in BJP. Mukul Roy brought some scraps from his previous party and projected them as valuables.

Now, the questions are, were Modi & Shah so naive that they couldn’t see this? Could they be so easily manipulated? Is it possible that someone sabotaged them for past 4 years yet they didn’t realise? The answer is simple, they might have realised and that's why, earlier, there was rumours that Mukul may return to Trinamool but their problem was not having a person with his capacity in the party. So, they were left with no option but live with it. In 2019, Mukul brought 18 Lok Sabha seats for them & they were happy. They possibly forgot that Lok Sabha had never been Didi’s ambition. She is only eager to maintain her zamindari in the state.

Mukul was sent with a mission and how successful he has been is clearly evident from the names of candidates in the 3rd phase. In spite of such blunt selection of candidates, BJP may still win because of the charisma of Narendra Modi and huge anti-incumbency factor against Mamata govt but what could have been a cakewalk for the party, has turned into a fierce battle. I believe BJP high-command has realised the game now. That’s why Amit Shah skipped such a vital meeting on candidates & forced Mukul Roy to contest.

Tuesday, March 9, 2021

মনুস্মৃতি ও নারী স্বাধীনতা

বছরখানেক আগেও একটা ফ্যাশন ছিল যে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মনুস্মৃতি পোড়ানো। এই কাজের নেতৃত্বে প্রধানত থাকতো দিল্লীর জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। মনুস্মৃতি পুড়িয়ে তারা নিজেদের বিপ্লবী সত্ত্বার প্রমাণ দিত, ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতো, আর সবশেষে সনাতন ধর্ম যে ব্যাকওয়ার্ড সেটা তুলে ধরার করতো।

প্রথমত, যেসব ছাত্ররা নারীস্বত্বার অবমানকারী মনুস্মৃতি পুড়িয়ে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করতো তারা একই কারনে, মনুস্মৃতির সাথে কোরানও পুড়াতনা কেন? কোরান অনুসারে নারীর অস্তিত্ব শুধু সন্তান উৎপাদনকারী হিসাবে। পুরুষের যৌন ইচ্ছা চরিতার্থ করা ছাড়া তাদের আর কোন স্বত্বা নেই। এরপরেও কি প্রতিবাদকারীরা বিশ্বাস করে যে কোরান নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছে?

দ্বিতীয়ত, বেদে স্ত্রীলোকের বেদপাঠের অধিকার নেই বলে যারা উল্লেক করে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই "স্ত্রীশূদ্রদ্বিজবন্ধনাং ত্রয়ী ন শ্রুতিগোচরা" শ্লোকটির উল্লেখ করে থাকেন কিন্তু এটিও কোন বৈদিক সূত্র নয়। এটির রচনাকাল খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম থেকে খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের মধ্যে কারন সেই সময়েই সূত্রসাহিত্য সংকলিত হয়। শ্লোকে তিন প্রকার ব্যক্তির কাছে বেদপাঠ নিষিদ্ধ বলা হয়েছে কিন্তু ছান্দোগ্যোপনিষদে বলা হয়েছে যে


"যথেয়ন্ন প্রাকত্বত্ত: পুরা বিদ্যা ব্রাহ্মণান

গচ্ছতি তস্মাদুসর্ব্বেষু লোকেষু ক্ষত্রস্যৈব

প্রশাসনমভূদিমি" - ছান্দোগ্য ৫|৩|৭|

অর্থাৎ, বাহ্মণদের সমান্তরালে আদিযুগে ক্ষত্রিয় রাজারাও ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করতেন আর ব্রাহ্মণরা তাঁদের শিষ্যত্বও গ্রহণ করে থাকতেন। যেমন বিশ্বামিত্র মুনি, কাশীমহিষী মদালসা প্রমুখ।

এছাড়া, বৃহদারণ্যকোপনিষদে ইহার রচয়িতা যাজ্ঞবল্ক্য স্বয়ং স্বীকার করে গেছেন জনক রাজার সভায় তাঁর সঙ্গে মহীয়সী গার্গীর কথোপকথনের ইতিবৃত্ত। এখানে মনে রাখা দরকার যে সিনেমায় হিরো যেমন সবার শেষে এন্ট্রি নিয়ে সবাইকে মাত করে দেয় তেমনই ভাবে ঐ সভায় যাজ্ঞবল্ক্যর সাথে জনকরাজের কূল পুরোহিত অশ্বল, আর্তভাগ ঋষি, চাক্রায়ণ উষস্ত, কৌষীতকেয় কহোল এদের সবার শেষে গার্গী উঠে দাঁড়িয়েছিলেন এবং তার প্রশ্ন দ্বারা যাজ্ঞবল্ক্যকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছিলেন যে মহর্ষি বলতে বাধ্য হয়েছিলেন যে "গার্গী মাতিপ্রাক্ষীর্মা তে মূর্ধ্বা ব্যপপ্তৎ"(৩|৬|১) অর্থাৎ গার্গী আর বেশী প্রশ্ন করনা, তোমার মাথা খসে পড়বে। বলা বাহুল্য যে এই সতর্কবাণীর মধ্যে ঋষিবরের পরাজয়ের ব্যঞ্জনাই ফুটে উঠেছে। কিন্তু ভুললে চলবে না যে বৃহদারণ্যকোপনিষদ স্বয়ং যাজ্ঞবল্ক্যের রচনা। তিনি চাইলে এই বিরম্বনার কথা উহ্য রাখতে পারতেন কিন্তু নিজের ত্রুটির এই স্বীকৃতি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

বৈদিক যুগেও নারীশিক্ষার দুটি ধারা লক্ষ্য করা যায়- ১) ব্রহ্মবাদিনী এবং ২) সদ্যোদ্বাহা। বিয়ের আগে যারা গুরুগৃহে বা নিজগৃহে বিদ্যালাভ করতেন তাদের বলা হত বহ্মবাদিনী আর বিবাহিতা অথবা বৈধব্যদশায় যারা বিদ্যাচর্চা করতেন তাদের বলা হত সদ্যোদ্বাহা। বৈদিকযুগে স্বামীস্ত্রী যে একত্রে যজ্ঞে অংশগ্রহণ করতেন, অর্থাৎ স্ত্রীরও যে ধর্মাচরণে সমানাধিকার ছিল, তার বহু প্রমান আছে। "বি ত্বা ততস্রে মিথুনা অবস্যবো ব্রজস্য সাতা..."। ঋগ্বেদ (১|১৩১|৩)। অর্থাৎ যজমান দম্পতি যৌথভাবে অগ্নিকে আহুতি দিচ্ছেন। পঞ্চম মন্ডলের আঠাশতম সূক্তে অগ্নিদেবতাকে বলা হয়েছে "সং জস্পত্যং সযমমা কৃণুস্ব" অর্থাৎ আপনি আমাদের দাম্পত্যসম্পর্ক শৃঙ্খলাবদ্ধ করুন (৫|২৮|৩)। শুধু ঋগ্বেদের সূত্রকারদের মধ্যে অন্তত ২৭ জন ছিলেন মহিলা। তাদের মধ্যে গার্গী, যাজ্ঞবল্ক্যর পত্নী মৈত্রেয়ী, বিশ্ববারা প্রমুক। এছাড়াও আছেন অগস্ত্যপত্নী লোপামুদ্রা, অত্রির কন্যা অপালা, ঋষি কক্ষিবৎ কন্যা ঘোষা, অম্ভৃণ কন্যা বাক এবং ইন্দ্রের পত্নী ইন্দ্রাণী। সেকালে কুমারী মেয়েদের উপনয়ন হত, তাদের সাবিত্রীমন্ত্র জপ ও অধ্যাপনের অধিকারও ছিল- "পুরাকল্পে কুমারীণাং মৌঞ্জী বন্ধনমিষ্যতে / অধ্যাপং চ বেদানাং সাবিত্রীবচনং তথা"। 

এরপরে বেদের শিক্ষার পথে আবির্ভূত হল দুটি অন্তরায়- ১) বেদবিরোধী কর্মবাদের প্রবক্তা গৌতম বুদ্ধের আবির্ভাব আর ২) শ্রুতিপথরোধী জ্ঞানবাদের প্রবক্তা জৈন তীর্থঙ্করের দল। চার্বাকের লোকায়ত দর্শনও এই ক্ষেত্রে অনেকটাই দায়ী। এইসবের প্রভাবে শ্রুতি পরিণত হল স্মৃতিতে। আর আবির্ভাব হল মেধাতিথি, কুল্লুকভট্ট প্রমুখ টিকাকারদের। বেদের সময় প্রতিটি সিদ্ধান্তের হিতাহিতের ব্যাক্ষা দেয়া হত কিন্তু স্মার্ত পন্ডিতরা ব্যাক্ষা দেবার ধারকাছ দিয়ে গেলেন না বরং মুসলিমদের ফতোয়ার মত আপ্তবাক্য ধরনের হুকুম জারী করতে থাকলেন। বৈদিক কালে মেয়েদের বিয়ের বয়স সচরাচর ষোলো-সতের ধরা হত কিন্তু এই যুগে সেটা কমিয়ে আনা হল নয়-দশে। কেন? সেটার ব্যাক্ষা দেবার দায় স্মার্ত পন্ডিতদের নেই। মুসলিম আক্রমণ নারীদের পর্দানশীন করে তুললো। তারা ক্রমে শিক্ষার অধিকার হারালো। আর টুলো পন্ডিতরা নিদান হাঁকলো যে অক্ষর পরিচয় আর অকাল বৈধব্য নাকি পরস্পর সম্পর্কিত।

কিন্তু হিন্দুধর্মের মহত্ব এখানেই যে তারা চিরকাল বিবর্তিত হয়ে চলেছে। কালের নিয়মে সমাজে গোঁড়ামি এসেছে কিন্তু হিন্দুরা সেটাকে আঁকড়ে বসে থাকেনি। তাই মনু যেখানে বেদকে সর্বসমক্ষে প্রকাশ করতে মানা করছেন সেখানে ব্যাসদেব বলছেন "ভবন্তু বহুলা: সন্তু বেদো বিস্তর্য্যতাময়ম" অর্থাৎ এই বেদবিদ্যা ছড়িয়ে পড়ুক। এই কারনেই হিন্দু সমাজে রামমোহন, বিদ্যাসাগর, নারায়ণ গুরু বা দয়ানন্দ সরস্বতীর মত ব্যক্তিদের জন্ম হয় যারা সমাজকে কুসংস্কারের জাল থেকে বের করে এক নতুন স্তরে উন্নীত করেন।

তাই মনুস্মৃতি পুড়িয়ে নারী স্বাধীনতা উদযাপনকারীদের কাছে অনুরোধ যে আপনারা যদি সত্যিই নারীদের স্বাধীনতা নিয়ে সচেতন থাকেন তাহলে মনুস্মৃতির সঙ্গে কোরানটাও পুড়ান। কারন হিন্দুসমাজ নিজেকে মনুস্মৃতির নিদান থেকে মুক্ত করে ফেলেছে কিন্তু মুসলিমরা আজও সেই কোরানের বন্ধনে আবদ্ধ রয়ে গিয়েছে। তবে তাদের সেই ক্ষমতা যে সেটা তারাও জানে আর আমরাও জানি। কারণ দিনের শেষে, ঘাড়ের উপর তো একটাই মাথা আছে, তাই না?

Monday, March 8, 2021

আন্তর্জাতিক নারী দিবস

তখন বোধহয় ফাইভ-সিক্সে পড়তাম, স্কুলে গরমের ছুটির সময় টিভিতে কলকাতা কেন্দ্র থেকে বেলা ১২টা থেকেই বোধহয় 'ছুটি ছুটি' বলে একঘণ্টার একটা অনুষ্ঠান প্রচারিত হওয়া শুরু হলো। অনুষ্ঠানটা ডিডি৭-এ প্রচারিত হতো না ন্যাশনাল চ্যানেলের কলকাতা স্লটে, সেটা এখন মনে নেই। তবে অনুষ্ঠানটা ছিল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে। ফেলুদার বা গুপি গাইন-বাঘা বাইনের সিনেমা, ম্যাজিক শো, কথা বলা পুতুল ইত্যাদি ছিল অনুষ্ঠানটির অংশ। মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মত অনুষ্ঠানটি খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল আমাদের মত ছাত্রছাত্রীদের কাছে।

দূরদর্শন কলকাতার ডিরেক্টর তখন রতিকান্ত বসু। ইনি পরে দূরদর্শনের সর্বভারতীয় অধিকর্তা হয়েছিলেন এবং আরও পরে স্টার টিভিতে যোগ দেন। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে 'ছুটি ছুটি'-র অসাধারণ জনপ্রিয়তার ফলশ্রুতি হল যে পরের বছর সেই অনুষ্ঠানের শুরু হল সুমন চট্টোপাধ্যায়ের গান দিয়ে। তখনও সুমন দ্বিতীয় ক্ষেপের কবীর সুমন হয়নি। ছাত্রছাত্রীদের সেই অনুষ্ঠানের টাইটেল গানে সুমন গাইলো- 

"যে ছেলেটা কাজ করে খায়

রাস্তার চায়ের দোকানে,

তার ছুটি হারালো কোথায়

তার ছুটি রাখা কোনখানে?"

অসাধারণ সাম্যবাদী গান গাইলো সুমন চট্টোপাধ্যায়। হোক না গানের টার্গেট অডিয়েন্স ছাত্রছাত্রীরা, তাই বলে কি তৎকালীন বামপন্থী সুমন তার আদর্শ প্রচারে বিরত থাকতে পারে! 

কিন্তু আজ, কোথায় গেল সেই সুমনের সেই আপোষহীন বামপন্থী মানসিকতা? কোথায় গেল তার বিপ্লবী সত্ত্বা? আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে কবীর সুমনকে তো লিখতে দেখলাম না যে,

যে মেয়েটার মুখ ঢেকেছে

বোরখার আবছা আঁধারে,

তার স্বাধীনতা আজকেফোঁ

পায় যে দেয়াল মাঝারে।

তাহলে কি যত বিপ্লবীয়ানা খালি হিন্দুদের ক্ষেত্রে? নাম পালটে কবীর হলেই বিপ্লব শেষ? আফটার অল, ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সম্মান, তাই না?