Saturday, March 27, 2021

মানসিকতার বদল

আমার বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে যখন হিন্দুদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলা হয় তখন প্রায়শই একটা প্রশ্ন আসে যে "ভোট কাকে দেবো?" অর্থাৎ অধিকাংশ ব্যক্তিরই ধারণা যে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্যে ভোটটাই একমাত্র উপায়। 


আমার মনে হয় এই মানসিকতাটাই হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা। যে সমাজ তার সামাজিক দায়িত্ব রাষ্ট্রের উপর ন্যস্ত করে নিজে নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে সেই সমাজের পতন অনিবার্য। সরকার হিন্দুদের স্বার্থে আইন করবে, পুলিশ হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবে এইরকম রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা নির্ভরতাই হিন্দুদের আরও ক্লীব বানিয়ে দিচ্ছে। 


আর এই মানসিকতার জন্যে কিন্তু কোন রাজনৈতিক দল দায়ী নয়, দায়ী আমাদের সমাজব্যবস্থা। হিন্দু ধর্মগুরুরা নিজেদের শিষ্যদের তাদের সামাজিক দায়িত্বের শিক্ষা না দিয়ে কেবল ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বা মুক্তির শিক্ষা দেন। সেই শিক্ষায় শিক্ষিত হিন্দুরা বিশেষ বিশেষ দিনে পুণ্যের আশায় মন্দিরে লাইন দেয়, নতুন গাড়ি কিনলে সেটার মঙ্গলকামনায় পূজো দেয় কিন্তু সেই মন্দিরের আরতির অনুষ্ঠান আজানের জন্যে বন্ধ হয়ে গেলে বা মন্দিরের বিগ্রহের অসম্মান হলে হিন্দুদের কিছু এসে যায়না। ওটাতো কমিটি বুঝবে বা পুলিশ সামলাবে এই রাষ্ট্রনির্ভর ধারণা তাকে আটকে রাখে। বালিগঞ্জে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ, রামকৃষ্ণ মিশনের কোন মন্দিরে বা অন্য যেকোন অভিজাত মন্দিরে গিয়ে দেখুন কেমন পরিপাটি করে সব সাজানো রয়েছে। ভক্তদের দানের টাকায় তৈরি এই ঝাঁ চকচকে প্রাসাদগুলি কতজন গরীব, অসহায় হিন্দুকে আশ্রয় দেয়, খাবার দেয়? কটা মন্দির তার আশেপাশে হিন্দুদের উপর বা অন্য মন্দিরের উপর হামলা হলে তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নিজেদের সহমর্মিতা প্রকাশ করে? একটাও নয়। 

উল্টোদিকে মুসলিমদের দেখুন, প্রতিটা মসজিদ কিভাবে এলাকার দুঃস্থ মুসলিমদের আশ্রয় দিয়ে, খাদ্য দিয়ে তাদের ভরসাস্থল হয়ে ওঠে। মুসলিমদের দেখুন তারা কিভাবে রাষ্ট্রশক্তির অপেক্ষায় বসে না থেকে কিভাবে নিজেদের অধিকারের জন্যে উদ্যোগী হয়। এটাই হচ্ছে হিন্দুদের সাথে মুসলিমদের মানসিকতার পার্থক্য - একপক্ষ নিজেদের অধিকারের জন্যেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে আর অন্যপক্ষ নিজেদের অন্যায্য দাবীও রাষ্ট্রকে মানতে বাধ্য করে সামাজিক সচেতনতার ক্ষমতা দেখিয়ে।

আজকের দিনে হিন্দুদের রাষ্ট্রীয় শক্তির উপর তাদের নির্ভরশীলতা কমিয়ে সামাজিক শক্তিকে বলশালী করার কাজটাই করাটাই আমার লক্ষ্য। জেহাদি আক্রমণের সময় মোদী বা মমতার উপর নির্ভর করে বা গোঁসা করে হিন্দু সমাজ তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত হিন্দুরা তাদের সামাজিক শক্তির মূল্য বুঝতে পারবে। তাই যারা জিজ্ঞাসা করছেন যে ভোট কাকে দেবো তাদের প্রতি একটাই উত্তর, ভোট তো পাঁচ বছরে একবার আসবে, সবার আগে নিজের সম্মান নিয়ে ততদিন টিঁকে থাকা নিশ্চিত করুন। আর সেটা যখন নিশ্চিত করতে পারবেন তখন আর আপনাকে ভোটের সময় বিকল্পের খোঁজ করতে হবেনা, সব রাজনৈতিক দলই আপনার সুরে সুর মেলাবে।

No comments:

Post a Comment