Friday, June 26, 2020

সীমান্ত সংঘর্ষ



লাদাখ সীমান্তে চীনের সাথে বেড়ে ওঠা উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে, আজ যারা "যুদ্ধ চাই, যুদ্ধ চাই" বলে উত্তেজক বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের মধ্যে কতজনের যুদ্ধকালীন বা যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। চীনের মত একটা দেশের সাথে সরাসরি যুদ্ধে যাওয়া মানে যে মোবাইলে পাবজি বা ফ্রি-ফায়ার গেম অথবা হলিউড সিনেমার মত নয়, এই উপলব্ধি যাদের আছে, তারা কখনই, কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে বা নিজেদের জাতীয়তাবাদী প্রমাণের জন্যে, যুদ্ধের ধুঁয়া তুলতে পারেন না।

যেকোন পরিস্থিতিতেই যুদ্ধ হল অন্তিম বিকল্প আর সেই বিকল্প গ্রহণের আগে অন্যান্য পথ অবশ্যই দেখে নেয়া উচিত আর বর্তমানে মোদী সরকার সেটাই করছেন। যুদ্ধ মানে শুধু অর্থক্ষয় নয়, একইসাথে বহু মানুষের অমূল্য জীবনহানির নিশ্চিত পরিণতি। ভেবে দেখুন, পাণ্ডবদের সাথে দুর্যোধন ক্রমাগত অন্যায় করে যাওয়ার পরেও, দুই পক্ষের প্রত্যক্ষ সংঘাত এড়ানোর জন্যে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ শান্তিদূতের ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অথচ যুদ্ধ যে হবেই এটা তিনি জানতেন আর সেই জন্যেই কৌরবদের প্রতিপক্ষ দ্রুপদের সাথে পাণ্ডবদের বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেছিলেন।

যে শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর কুরুক্ষেত্রের প্রাঙ্গণে অর্জুনকে যুদ্ধ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, যে শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ চলাকালীন ভীষ্মকে বধ করার জন্যে, নিজের শপথ ভেঙে, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, সেই শ্রীকৃষ্ণই কিন্তু যুদ্ধ ঠেকাতে শান্তিদূত হয়ে নিজে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁর এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভীম এবং দ্রৌপদী যখন তাঁকে নিজ নিজ শপথের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তখন সেই শ্রীকৃষ্ণই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাদের বলে দিয়েছিলেন যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তার সাপেক্ষে ভীম ও দ্রৌপদীর প্রতিজ্ঞা মূল্যহীন। তাঁর পরিস্কার বক্তব্য ছিল যে যুদ্ধ এড়ালে যদি তাদের ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞাভঙ্গ হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে খুবই কম মূল্য দেয়া হয়েছে।

আজকে যদি সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তার প্রভাব কেবলমাত্র সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকবেনা, সারা দেশে সেটার প্রভাব পড়তে বাধ্য। আজ যারা যুদ্ধের দাবীতে সোচ্চার হচ্ছেন, তারা যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে বাজারে বিভিন্ন সামগ্রীর প্রাপ্তির সম্ভাবনা ও তাদের দাম নিয়ে সচেতন তো? গত ১৭ দিন ধরে ক্রমাগত পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মিম বানাবেন, মোদীর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবেন আবার দাবী করবেন যে যুদ্ধ হোক? ভেবে দেখুন, কর্ণের বধের আগের রাতে, কুন্তী যখন তার শিবিরে গিয়ে তার এবং অর্জুন - উভয়েরই প্রাণরক্ষার প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন তখন কর্ণ তাঁকে প্রতিপ্রশ্ন করেছিলেন যে, ইতিহাস যদি কখনও তাঁকে জিজ্ঞাসা করে যে গান্ধারী তো যুদ্ধে নিজের পুত্রদের বলি দিয়েছেন, কিন্তু তিনি কি দিয়েছেন? ইতিহাসের সেই প্রশ্নের সামনে, তিনি নিজের জন্মদাত্রীকে অসহায় অবস্থায় দেখতে পারবেন না, তাই একজনের বলিদান আবশ্যিক। আজকে আমরা, যুদ্ধের দাবীদাররা, সেই বলিদান দেয়ার জন্যে প্রস্তুত আছি তো?

সন্তোষ বাবু বা রাজেশ ওরাংদের মৃতদেহ বহন করতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? যেসব ক্ষেত্রে স্বদেশী বিকল্প আছে, আমরা অর্থের চিন্তা না করে, সেই বিকল্প বেছে নিতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? যুদ্ধের খরচ তোলার জন্যে, বাড়তি করের বোঝা বহন করতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? যুদ্ধ চলাকালীন, সেনাবাহিনীর নিষ্ঠা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে, তার মুখ ভেঙে দিতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? প্রশাসনের নেয়া যেকোন সিদ্ধান্ত বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? 

উপরের সবক'টা প্রশ্নের উত্তরই যদি সদর্থক হয়, তখনই আমাদের যুদ্ধের দাবী শোভা পায়, তার আগে নয়। আর এই কথাগুলির উত্তর কি হতে পারে, সেটা নরেন্দ্র মোদী খুব ভাল করেই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি প্রত্যক্ষ সংঘাতকে শেষ বিকল্প হিসাবেই রেখেছেন। আর এই কারণেই তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণকারী অর্থনীতি ও কূটনীতি দিয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপর ভরসা আছে যে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও সেনার স্বাভিমান রক্ষা করতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম।

Saturday, June 20, 2020

সম্পূর্ণা

আচ্ছা, ধরুন আমার বাড়িতে চোর ঢুকে, বেশ কিছু জিনিস নিয়ে পালাচ্ছিল। এমন সময় আমি সজাগ হয়ে গেলাম এবং চোরকে তাড়া করলাম। তাড়া খেয়ে পালাবার সময়, আমার সাথে ধাক্কাধাক্কিতে, চোরের ঝোলা থেকে, আমার বাড়ি থেকেই চুরি করা একটা মোবাইল পড়ে গেল আর আমি, চোরকে ধরতে না পারলেও, একটা মোবাইল ফেরত নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এমতাবস্থায়, আমি কি সেই মোবাইলটা পেয়েছি বলে উল্লসিত হবো নাকি বাকি জিনিস হারানোর জন্যে দুঃখিত হবো এবং সেগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবো?

না, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত হতে পারছিনা কারণ এটাও, আমার কাছে, সেই পড়ে যাওয়া মোবাইলের মতই, আংশিক প্রাপ্তি। আচ্ছা, জেহাদি হাত থেকে ছিনিয়ে আনা নিজেদেরই অংশ নিয়ে যদি রাজ্যের জন্মদিন পালন করতে হয়, তাহলে কি ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ কে ভারতের জন্মদিন হিসাবে ধরতে হবে? আমাদের দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ইত্যাদি তাহলে মাত্র সত্তর বছরের? তাহলে তো বলতে হবে যে নেহরু ঠিকই বলেছিলেন যে India is a nation in making। না, নেহরু ঠিক বলেননি, ভারতের জন্ম মোটেই ১৯৪৭ সালে নয়, রাজনৈতিক বিভাজন মোটেই দেশের জন্মদিন নির্ধারণ করেনা।

একইভাবে, বঙ্গমাতার জন্মদিনও মাত্র কয়েক দশকের পুরনো ঘটনা নয়। মা কে খন্ডিত করলেই তার জন্মদিন বদলে যায়না। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ, মাস্টারদার স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম, মাইকেল মধুসূদন দত্তের যশোর প্রভৃতি স্থান বিহীন বঙ্গমাতা আজও খন্ডিতা। তাই, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়, মা যা ছিলেন আর মা যা হবেন, আমি সেটার স্বপ্ন দেখি, মা যা হয়েছেন, সেটা নিয়ে উল্লসিত হতে পারিনা। তাই আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টি উল্লাসের নয়, বেদনার স্মৃতি বয়ে আনে। বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির কাছে পরাজয়ের বেদনা, নিজের দেশের ঐতিহ্যবাহী ভূমিখণ্ড হারানোর বেদনা, নিজের মাতৃভূমিকে জেহাদিদের হাতে খন্ডিত হতে দেয়ার বেদনা। আর এই বেদনার উপশম সেদিন হবে যেদিন আমরা মায়ের খন্ডিত অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারবো। আমার মা পূর্ব আর পশ্চিমে বিভক্ত নয়, তিনি সম্পূর্ণা।

Friday, June 19, 2020

পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ

"যাদৃশো জায়তে রাজা, তাদৃশো'স্য জনো ভবেৎ" অর্থাৎ দেশের রাজা অর্থাৎ প্রধান যেমন হয়ে থাকেন, সেই দেশের প্রজারাও তেমনি হবেন। নেতৃত্বর গুণাবলীর উপরেই অনুগামীদের কর্মদক্ষতা নির্ভর করে। এই কারণেই ভারতের প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ, জেনারেল ভি.কে. সিং বলেছিলেন যে "সিংহের নেতৃত্বাধীন একপাল হরিণ, হরিণের নেতৃত্বাধীন একদল সিংহ অপেক্ষা বেশী ভয়ঙ্কর"।

হিন্দুরা বরাবরই সাহসী জাতি কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে তারা নেতৃত্ব হিসাবে পেয়েছে গান্ধী-নেহরুর মত ভীতু ও চরিত্রহীনদের। উল্টোদিকে, মুসলিমরা বরাবরই ভীরুর জাত হওয়া সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্বে ছিল আলি ভাতৃদ্বয় ও জিন্নার মত ব্যক্তিগণ। ফলে যখন হিন্দুদের মাতৃভূমিকে টুকরো করার পরিকল্পনা করা হলো তখন হিন্দুরা সেটার বিরোধিতা করার সাহস দেখাতে পারলো না, ইসলামিক দাবীর সামনে মাথা ঝুঁকাতে বাধ্য হলো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেয়া দুটি রাজ্য- বাংলা আর পাঞ্জাবকে টুকরো করেই জন্ম নিল পবিত্র ইসলামিক জমি- পাকিস্তান, কারণ দুটি প্রদেশেই মুসলিমরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই একই কারণে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হলো হিন্দুরা। একটি সার্বভৌম দেশের সরকার মিলিটারি দিয়েও মুসলিমবহুল কাশ্মীরে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলো না। ২৭ বছর পার হয়ে গেলেও আজও কাশ্মীরের হিন্দুরা নিজভূমে পরবাসী।

আজ পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের সামনেও একইরকমভাবে উদ্বাস্তু হওয়ার পরিণতির ইঙ্গিত স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা মুসলিমবহুল হওয়ার সাথে সেখানকার হিন্দুদের অধিকার সঙ্কুচিত হচ্ছে। কাংলাপাহাড়ি, তেহট্ট, নন্দীগ্রাম প্রভৃতি স্থানে হিন্দুদের পূজাপাঠের অধিকার খর্ব হচ্ছে। মালদা, মুর্শিদাবাদের মত মুসলিমবহুল জেলায় হিন্দুদের শঙ্খধ্বনি, মঙ্গলধ্বনি এমনকি শ্মশানযাত্রার উপরেও নানারকম বিধিনিষেধ জারি করা হচ্ছে। হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, নদীয়া, বীরভূম সহ বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাথা চাড়া দিচ্ছে জেহাদি কার্যকলাপ যার শিকার হচ্ছে সাধারণ হিন্দুরা। কিন্তু তারপরের প্রশাসন, মিডিয়া, একেবারে নীরব পাছে "সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি" নষ্ট হয়। নিজেদের জীবন ও সম্পত্তি বিসর্জন দিয়ে সম্প্রীতি রক্ষার দায় শুধু হিন্দুদের।

শুধু প্রশাসন কেন, আগামীদিনে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখা এই রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও এই জেহাদি বিপদ সম্পর্কে মৌন। মুসলিম ভোটের লোভ তো আছেই, তারসাথে এদের ভীরু মানসিকতাও তাদের মৌনতার অন্যতম কারন। বিরোধী দলগুলির নেতৃবৃন্দ তাদের সহজাত ভীরু মানসিকতার কারণেই ইসলামিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। আর তাদের এই ভীরুতাই প্রবাহিত হয় তাদের অনুগামীদের মধ্যে, ফলে পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরও ভীরুতা গ্রাস করে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে শ্রীকৃষ্ণ যখন শান্তিপ্রস্তাব নিয়ে কৌরবদের সভায় গেছিলেন এবং তাঁর প্রস্তাব যখন দুর্যোধন ফিরিয়ে দিয়েছিল তখন সেই সভায় ভীষ্ম আর দ্রোণাচার্যের মত মহারথী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যদি একবার বলতেন যে তাঁরা দুর্যোধনের হয়ে এই অন্যায় যুদ্ধে লড়াই করবেননা তাহলে দুর্যোধনকে যুদ্ধের ব্যাপারে আরেকবার ভাবতে হতো। ভীষ্ম বা দ্রোণ যুদ্ধ না করার কথা ঘোষণা করলে কৃপাচার্য, অশ্বত্থামাও সেই পথ অনুসরণ করতেন। কিন্তু অসীম জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেরকম ঘোষণা করেননি। তাদের আনুগত্য ধর্মের চেয়েও বেশী সিংহাসনের প্রতি ছিল। তাই কৌরবসভা থেকে ফিরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, "ন চ ভীষ্ম ন চ দ্রোণো যুক্তং তত্রাহতুর্বচ"। একমাত্র বিদুরই এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি সভাগৃহে শান্তিপ্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। "সর্বে তমনুবর্ভন্তে ঋতে বিদুরমচ্যুত"।

এমতাবস্থায়, পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের সাহসিকতায় উদ্বুদ্ধ করারই প্রত্যেকের প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। এমন জ্ঞানীগুণী লোকের আমাদের দরকার নেই যারা জেহাদি আগ্রাসনের সামনে ভীষ্ম আর দ্রোণের মত অসহায় হয়ে থাকবে আর হিন্দুদের সংযম ও সংস্কারের উপদেশ দেবে। যারা ১৯৪৭-এ দেশভাগ রুখতে পারেনি, ১৯৯০-এ কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি তারা আগামীদিনে পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের রক্ষা করবে এটা ভাবা মুর্খামি। তাই হিন্দুদের মাটি বাঁচানোর লড়াই হিন্দুদেরই দলমত নির্বিশেষে, একজোট হয়ে করতে হবে। এই খন্ডিত বাংলাকে যদি প্রকৃতই ধর্মনিরপেক্ষ রাখতে হয়, তাহলে সংঘর্ষ থেকে পিছু হটলে চলবেনা। প্রত্যেকের মধ্যে দৃঢ়তা আনতে হবে যে আমরা কখনই বাংলার সংস্কৃতিকে, বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির সামনে বিকিয়ে দেবনা।

জয় মা কালী।

Tuesday, June 16, 2020

মন্দির সংস্কার


পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত বাঁকুড়ার মন্দিরগুলির গায়ের পোড়ামাটির কাজ বহুদিন ধরেই এলাকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ১৯৯৭ সালে, জেলা সদর বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলো ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মর্যাদা পেয়ে সংরক্ষণের কাজ শুরু হলেও, জেলার অন্যান্য অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা মন্দিরগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ অবহেলিত রয়ে গেছে। এরকমই কয়েকটা মন্দির রয়েছে শুশুনিয়া পাহাড় সংলগ্ন কাদাশোল, নতুনগ্রাম, বেলিয়াতোড় এবং বেলুট-গোবিন্দপুর গ্রামগুলিতে। ধর্মেশ্বর, লক্ষীনারায়ন বা শিবের যে মন্দিরগুলি এইসব যায়গায় রয়েছে, সংরক্ষণের অভাবে সেইগুলির কয়েকটা পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে আর এখনই উদ্যোগ না নিলে, বাকিগুলিরও একই পরিণতি হবে।

এলাকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ তপশিলি জাতি এবং ৩০ শতাংশ তপশিলি উপজাতিভুক্ত এবং অধিকাংশই দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করেন। অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি বা পশুপালন হলেও, কেবলমাত্র বৃষ্টির জলের উপর নির্ভরশীল হয়ে, অনুর্বর জমিতে চাষাবাদ যথেষ্টই কষ্টসাধ্য। ফলে গ্রামের অধিকাংশ সক্ষম পুরুষ ও মহিলারা কাজের খোঁজে মূলত 'পূবে যান' মানে জেলার পূর্বদিকে অবস্থিত বর্ধমান, আসানসোল প্রভৃতি যায়গায় যান এবং ইঁটভাটা বা কলকারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন।
এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, গ্রামবাসীরা নিজেরাই সাধ্যানুযায়ী চাঁদা তুলে একটা শিব মন্দিরের সংস্কার করেন (৪ নং ছবি) এবং সেখানে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী, সনাতন সংস্কৃতি অনুসারে, শুদ্ধি অনুষ্ঠান ও নরনারায়ণের সেবা করা হয়। কিন্তু সংস্কারের জন্যে যথেষ্ট অর্থ না থাকায়, মন্দিরে চিরাচরিত পোড়ামাটির কাজের বদলে সাধারণ ইঁট ও সিমেন্টের ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এরসাথে যদি দৈনিক দুধ, মধু, ঘি, প্রসাদ এবং পূজারীর দক্ষিণা যোগ করা হয় তাহলে প্রতিটা মন্দিরের বার্ষিক খরচ দাঁড়ায় প্রায় দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা। বাৎসরিক উৎসব পালনের খরচও প্রায় তিন লক্ষ টাকা।
মন্দিরগুলিকে তাদের পুরনো রূপ ফিরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটা মন্দির সংস্কারের খরচ লাগবে প্রায় ৬ (ছয়) লক্ষ টাকা এবং সময় লাগবে কম করে হলেও ছয় মাস। অর্থাৎ পাঁচটা মন্দির সংস্কারের মোট খরচ প্রায় ৩০ (তিরিশ) লক্ষ টাকা এবং তাদের বার্ষিক খরচ প্রায় ১০ (দশ) লক্ষ টাকা।

এমতাবস্থায়, আত্মদীপ-এর পক্ষ থেকে আমরা, সমাজের সকলের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে, মন্দিরগুলিকে সংস্কার করে, তাদের পুরনো রূপ ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছি। এই উদ্দেশ্যে আমরা ক্রাউড ফান্ডিং শুরু করেছি যার মাধ্যমে, যেকোন ব্যক্তি, তাঁর সাধ্যানুযায়ী সাহায্য করতে পারবেন। এই কাজে সহযোগিতা করতে আপনারা নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে অনুদান দিতে পারেন বা https://milaap.org/fundraisers/support-prasun-maitra/upi_deeplink এই লিঙ্কে ক্লিক করে UPI এর মাধ্যমে সরাসরি অনুদান দিতে পারেন। আমাদের ঐতিহ্যকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের গৌরবময় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করানো আমাদের কর্তব্য।

https://milaap.org/fundraisers/support-prasun-maitra?utm_source=whatsapp&utm_medium=fundraisers-title&mlp_referrer_id=960287




Friday, June 12, 2020

চুপিচুপি

স্তাবক চ্যানেলগুলির ঢক্কানিনাদের মাঝে, অজয় শুক্লার মত প্রতিরক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ সাংবাদিক যখন দাবী করেন যে লাদাখ অঞ্চলে চীন তাদের ভারতের অভ্যন্তরে অধিকৃত অঞ্চলের দখল এখনও ছাড়েনি এবং সরকার যখন সেই বিষয়ে নীরব থাকে, তখন এটা আন্দাজ করা স্বাভাবিক যে এমন কিছু সত্যিই ঘটছে যা সরকারের পক্ষে গৌরবজনক নয়। গত ১২ এবং ১৩ই মে, চীনের সৈন্যারা যে ভারতের সৈন্যদের সরাসরি সংঘাত হয় এবং ৭২ জন ভারতীয় সৈন্যকে, চিকিৎসার জন্যে স্থানান্তরিত করা হয়, অজয় শুক্লার এই দাবী কিন্তু এখনও খন্ডন করেনি সরকার।



তারমানে লাদাখের গালোয়ান ও পেনং অঞ্চলে, কোভিডের কারণে ভারতীয় সেনা তাদের নিয়মিত টহলদারি বন্ধ করার সুযোগে, চীন ভারতের ভূখণ্ডের কিছু অংশ দখল করেছে এবং ভারতীয় সৈন্যদের আক্রমণও করেছে। পাকিস্তান নিয়ে গলাবাজি করা সরকারের, চীনের আগ্রাসন নিয়ে নীরবতা অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছে। পাকিস্তানের বেলায় যে পেটোয়া চ্যানেলগুলি, মোবাইল টাওয়ারের সিগনাল ধরে, বালাকোটে নিহতদের সংখ্যা অবধি বলে দিচ্ছিল আজ জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে যে ঢাকঢাক গুড়গুড় চলছে, সেটা মোটেই ভারতের পক্ষে সুখকর নয়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর থেকে একটা 'কড়ি নিন্দা' তো দেশবাসী আশা করতেই পারে, তাই না?

Wednesday, June 3, 2020

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি

আগেও বলেছি, আবারও বলছি পশ্চিমবঙ্গের জনগণ বিজেপির জন্যে প্রস্তুত হলেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জন্যে কতটা প্রস্তুত সেটা আমি এখনও নিশ্চিত নই এবং ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারবনা যতক্ষণ না পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী বা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মত কোন হেভিওয়েট নেতা তৃণমূল ছেড়ে বেড়িয়ে না আসেন অথবা সৌরভ গাঙ্গুলীর মত কোন জনপ্রিয় মুখ বিজেপিতে যোগদান না করেন।

তবে এটা নিশ্চিত যে তৃণমূল কংগ্রেসের, বড় থেকে ছোট, অনেক নেতাই ধরে নিয়েছেন যে ২০২১-এই গল্প শেষ আর তাই যে যার সাধ্যমত লোটালুটিতে সামিল হয়েছেন। করোনা হোক বা সাইক্লোন - লুটের রাজত্ব চলছে সর্বস্তরে। দিদি-মোদী সেটিং-এ এতদিন আস্থা থাকলেও সেটার স্থায়িত্ব নিয়ে অনেকেই এখন সন্দিহান। পুলিশের একটা বড় অংশও, শুধু উপরমহল নয়, সিভিক ভলান্টিয়ার লেভেলেও, আর দিদির উপর বাজী রাখতে পারছেন না, অপেক্ষায় আছেন বিজেপির।

কিন্তু মোদী-শাহর মাথায় কি রয়েছে সেটা নিয়ে সবাই ধন্ধে। রাজ্যের নবনিযুক্ত কমিটি, যা আদতে নতুন বোতলে পুরনো মদ, সেই ধন্ধ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে যে মোদী-শাহ আদৌ পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব সরাসরি নিতে আগ্রহী নাকি, ভাইপোর জুজু দেখিয়ে, দিদিকে সামনে রেখে যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, এমতাবস্থায় সরাসরি দায়িত্ব নিলে সেটার সম্পূর্ণ দায়ভার গিয়ে চাপবে মোদী আর শাহর উপরে। মোদী-শাহকে ভাবতে হবে যে সেরকম পরিস্থিতিতে দায় নেয়ার মত যোগ্য মুখ এই রাজ্যে দলের আছে কিনা। বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্ত, জনসংখ্যার ভারসাম্যের দ্রুত পরিবর্তন, শিল্পপতিদের বিরূপ মনোভাব, এরকম অনেক বিষয়ের বোঝা এসে পড়বে দলের উপর যেগুলির জন্যে এখন অন্যকে দোষারোপ করেই দিব্যি কেটে যাচ্ছে।

এর সাথে আছে রাজ্যে কম্যুনিস্টদের উপস্থিতি যা নিঃসন্দেহে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্যে অসুখকর বিষয়। এটা নিশ্চিত যে তৃণমূল একবার সরকার থেকে চলে গেলে দলটারই আর অস্তিত্ব থাকবেনা কারণ বাস্তবে এটা কোন দলই নয়, রাজ্য থেকে সিপিএম কে সরানোর একটা আন্দোলন মাত্র। এমতাবস্থায়, বিজেপি সরকার গড়লে যদি তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে যায় তাহলে স্বাভাবিক উত্থান হবে কম্যুনিস্টদের আর যেকোন দিনে, মোদীর কাছে, বিপক্ষ হিসাবে, কম্যুনিস্টদের থেকে মমতা ব্যানার্জী অনেক বেশী কাম্য।

তাই আমি এখনও ২০২১ এ, বিজেপির আগ্রহ নিয়ে সন্দিহান। আপনারা প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, যদি বিজেপি নাও চায়, কিন্তু জনগণ চায়, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হলেও তো জনগণ বিজেপিকে ভোট দিতে পারে, সেক্ষেত্রে কি হবে? ঠিকই বলেছেন, এরকম হতেই পারে তবে আমি বিশ্বাস করি যে মোদী-শাহ যদি এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে না চান, তাহলে রাজ্য নেতারা একের পর এক ভুলভাল বক্তব্য দিয়ে যাবেন যাতে তাদের থেকে স্বাভাবিক ভোটও সরে যায় আর সেরকম পরিস্থিতিতে, রাজ্যের কোন নেতা যদি নির্বাচনের আগে, গোর্খাল্যান্ড বা রাজ্যের স্বার্থ বিরোধী কোন বিষয়কে সমর্থন জানিয়ে দেন, তাহলেও আমি অবাক হবনা। নির্বাচন মিটলে কোন কেন্দ্রীয় নেতা সেই বক্তব্যকে নস্যাৎ করে দিতেই পারেন।

তাই আমি এখনই স্রোতে ভাসতে রাজী নয়। আগামী দুই-তিন মাসের ঘটনাবলীর উপর শুধু নজর রেখে যাবো।

https://bangla.hindustantimes.com/nation-and-world/pm-modi-much-popular-than-mamata-banerjee-in-west-bengal-says-c-voter-survey-31591109268643.html