Tuesday, August 24, 2021

শরণার্থীর আড়ালে

আয়লান কুর্দির কথা মনে আছে? হ্যাঁ, সেই বাচ্চাটার কথাই বলছি সাগরপাড়ে যার মৃতদেহ দেখিয়ে, ইউরোপবাসীদের উপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করা হয়েছিল সিরিয়ার মুসলিম শরণার্থীদের জন্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দরজা খুলে দেয়ার জন্যে। জার্মানিও খুলে দিয়েছিল নিজেদের সীমান্ত আর স্রোতের মত ঢুকেছিল শরণার্থীরা এবং পরিণতিতে, তাদের ধর্মানুভুতি আহত হচ্ছে বলে, জার্মানির বহু যায়গাতেই মহিলাদের বিকিনি পরার প্রতিবাদ করেছিল তারা। ছেলের মৃতদেহের সুবাদে বিখ্যাত ও লন্ডনে আশ্রয় পাওয়া আয়লানের বাবা আবেদন জানিয়েছিল যাতে অন্যান্য দেশগুলো শরণার্থীদের প্রতি আরও সহৃদয় হয়।


এরপর আসলো রোহিঙ্গা মুসলমান। মায়নমারে তাদের মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হওয়ার গল্প আর তাদের দেশত্যাগের ছবি ছড়িয়ে পড়লো বিশ্বজুড়ে। ডিঙি নৌকায় তাদের অস্ট্রেলিয়া পাড়ি দেয়ার আর নৌকাডুবির গল্প শুনে শিউরে উঠলাম আমরা। কোন জাদুবলে তারা ভারতে সীমান্ত নিরাপত্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পৌছে গেল দিল্লী, হরিয়ানা, কাশ্মীর অবধি। এরপর, কেন্দ্র সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যখন নোটিশ জারি করে, তাদেরকে দেশের নিরাপত্তার প্রতি বিপজ্জনক বললো, তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসলো দেশের সর্বোচ্চ আদালত। দেশের রাজধানীতে, জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, বিশাল বিশাল বাংলোর অধিবাসী আদালতের মহামান্য বিচারপতিরা রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিয়ে লম্বা আদেশ দিলেও তাদের একজনও কিন্তু নিজেদের বাংলোর অব্যবহৃত যায়গায় একটা রোহিঙ্গা পরিবারকেও বসাতে আগ্রহী হলেন না। ঝাড়ের বাঁশকে সেধে গাঁ* কে বা নিতে চায়!


এখন আবার এসেছে তালিবান উপদ্রুত অঞ্চলের শরণার্থীদের ঢল। কাবুল এয়ারপোর্ট আর বিমান থেকে পড়ে যাওয়ার ছবি দেখিয়ে জমি ইতিমধ্যেই তৈরী আর প্রতিবেশী দেশগুলিকে, আফগান শরণার্থীদের নেয়ার জন্যে সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে, বীজ ফেলার কাজও শুরু করে দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাইকমিশনার। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে আফগানিস্তান এখন হিন্দু শূন্য।


কখনও সিরিয়ান, কখনও রোহিঙ্গা আর কখনও আফগানদের দেখিয়ে এই খেলা চলতেই থাকবে। উদ্বৃত্ত জনসংখ্যা দ্বারা, অন্যের জমি দখল করার এই পরিকল্পনা সম্পূর্ণ ধর্মীয়। পবিত্র গ্রন্থ অনুসারে, এই পদ্ধতির নাম হিজরাত। শরণার্থীদের ধর্মীয় পরিচয় খেয়াল করে দেখুন, অঙ্কটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আর তারপরেও যদি আপনি মানবাধিকারের ভেক ধরতে চান তাহলে অভিনন্দন, আপনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে সুন্নত আর হিজাব সুনিশ্চিত করে ফেলেছেন।

Saturday, August 21, 2021

কল্যাণ সিং

ইংরেজিতে একটা কথা আছে, unsung hero, এটার বাংলা কি জানিনা তবে অখ্যাত নায়ক বলা যেতে পারে। রাম জন্মভূমি আন্দোলনের সেই unsung hero হলেন কল্যাণ সিং। মন্দির আন্দোলনে আদবানী, উমা ভারতী, বিনয় কাটিয়ার, এমনকি সাধ্বী ঋতম্ভরাও এক সময় যতটা প্রচার পেয়েছিলেন তার কণামাত্র পাননি কল্যাণ সিং অথচ ভারতের স্বাভিমানের উপর কলঙ্কচিহ্ন হয়ে থাকা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের জন্যে তিনি নিজের সরকারকে বিসর্জন দিতেও বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি।


কংগ্রেসের সমর্থনে, কেন্দ্রে যখন দেবেগৌড়ার সরকার গঠিত হয় তখন রাজ্যপাল রমেশ ভান্ডারীকে ঘুটি বানিয়ে, বরখাস্ত হয় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত কল্যাণ সিং-এর সরকার এবং বসানো হয় জগদম্বিকা পাল নামের এক পুতুলকে। তিন রাত্রি ক্ষমতায় থাকাকালীন জগদম্বিকা কত লক্ষ টাকার ফোনের বিল তোলেন সেটা, সেই সময় যারা রাজনৈতিক খবরাখবর রাখতেন, তাদের মনে আছে। যদিও প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী, রাজনাথ সিং, কল্যাণ সিং-এর মন্ত্রীসভাতেই শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে প্রথম প্রচারের আলোয় আসেন কিন্তু রাজনাথের 'কড়ি নিন্দা'র সংস্কৃতি কল্যাণ সিং-এর ছিলনা। তাই তিনি রাজ্যপালের অসাংবিধানিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যান এবং দেশের ইতিহাসে প্রথমবার, এবং এখনও অবধি সম্ভবত একবারই, বিধানসভাতে দুইজন মুখ্যমন্ত্রীর যুগপৎ আস্থাভোট নেয়া হয়। সেই ভোটে জগদম্বিকা পালকে হারিয়ে এবং কংগ্রেসের মুখে চুনকালি মাখিয়ে জয়ী হন কল্যাণ সিং। 


কল্যাণ সিং নিজে সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী থেকে রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় আসলেও না নিজের শিকড়কে কখনও ভুলেছেন আর না রাজনৈতিক স্বার্থে সেটার কখনও অপব্যবহার করেছেন। জাতপাতের রাজনীতিতে খন্ডিত উত্তর প্রদেশকে তিনি হিন্দুত্বের সুতোয় বাঁধার চেষ্টা করেছিলেন। তার মৃত্যু, নিঃসন্দেহে, দেশের রাজনীতিতে এক শূন্যতার সৃষ্টি করবে। ওম শান্তি!

Monday, August 16, 2021

গোপাল পাঁঠা এবং

মহম্মদ আলি জিন্নাহর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে'র আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে, ১৯৪৬ সালের ১৬ই আগস্ট সংগঠিত গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-এর রিপোর্ট করতে গিয়ে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকারের একটি মিলিটারি রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, The trouble started early on the morning of the 16th and both sites were equally responsible. The Hindus started putting up barricades at Tala Bridge and Belgachia Bridge and other places to prevent Muslims processions coming into the town and Muslims goondas went round forcing Hindus to close their shops। মানে, দাঙ্গার জন্যে নাকি হিন্দু-মুসলমান, উভয়েই দায়ী ছিল। এরকম সিদ্ধান্তের কারণ হলো মুসলমান গুন্ডারা যখন হিন্দুদের দোকান বন্ধ করতে করতে এগিয়ে আসছিল তখন তাদের প্রতিহত করার জন্যে টাল ব্রিজ, বেলগাছিয়া ব্রিজ সহ অন্যান্য স্থানে হিন্দুরা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। 


মানে, সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে, হিন্দুদের উচিত ছিল বিনা প্রতিরোধে, জেহাদিদের কাছে নিজেদের যথাসর্বস্ব সঁপে দেয়া। এই দাঙ্গার দুই মাস পরে, নোয়াখালীতে যখন হিন্দুদের উপর জেহাদিরা আক্রমণ করেছিল তখনও বানিয়া গান্ধী বলেছিল যে "হিন্দু রমণীদের দাঁতে দাঁত চেপে ধর্ষণের জ্বালা সহ্য করা উচিত"। এই কথাগুলো খুব চেনা চেনা লাগছে কি? আজ্ঞে হ্যাঁ, এই তত্ত্ব মেনেই, আজও পুলিশকে লাথি মারার পরেও বাড়িতে রেশন পৌছে যায় আর তেলেনিপাড়ার ঘটনায়, স্থানীয় পুলিশ কর্তা, হুমায়ুন কবীরের অপদার্থতা প্রকাশ করার জন্যে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্যেই মহরমের জন্যে দুর্গাপূজার বিসর্জন স্থগিত হয়ে যায়। সম্প্রীতির স্বার্থেই রবি, রুদ্রেশ, কমলেশ তিওয়ারিরা খুন হয়ে যায় কিন্তু NIA-এর দাবী মেনে PFI কে নিষিদ্ধ করা হয়না। সম্প্রীতির কারণেই জমজমের পানি আনার জন্যে বিমানের নিরাপত্তা বিধি বদলানো হয় আর কুম্ভমেলার সময় ভারতীয় রেল টিকিটের উপর অতিরিক্ত সারচার্জ নেয়।


সৌভাগ্যক্রমে, গোপাল পাঁঠা বানিয়া ছিলেননা আর স্বজাতির আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে, সেকুলার সাজার দায়ও তাঁর ছিলনা। তাই বানিয়া গান্ধী তাঁকে অস্ত্র সমর্পণের কথা বললে, মা কালীর ভক্ত বঙ্গসন্তান সেটা প্রত্যাখ্যান করতে পারেন। পাঁঠা কাটার অস্ত্র তিনি অনায়াসে স্বজাতিকে রক্ষা করতে পারেন। হ্যাঁ, এটাই বাঙালীর বিশেষত্ব, তারা যেমন বুক দিয়ে আগলে রাখতে পারে, প্রয়োজন হলে বুকে চেপে বসে দাড়ি উপড়ে ফেলতেও পারে। যে কাঠায় মাপ, সে কাঠায় শোধ দেয়ার মানসিকতা বাঙালীর রক্তে রয়েছে। 

জয় মা কালী।

Sunday, August 8, 2021

ছবি আর বাস্তবতা

রাজনীতিতে দেখনদারির মূল্য অসীম। সেখানে, কেউ কি করছে সেটা বড় নয়, কিভাবে সেটা দেখাচ্ছে, সেটাই প্রধান। ইংরেজিতে এটাকে বলে optics বা ছবি। কোন দলের রাজনৈতিক IT cell এর কাজই হলো এরকম optics তৈরী করা। এই optics এর উপর ভিত্তি করেই, সেটার target people মানে যাদের উদ্দেশ্যে সেটা তৈরী করা হয়েছে, তারা খুশী হয়ে যায় আর দলকে সমর্থন দেয়।


এমনই একটা ছবি গত কয়েকদিন ধরে social media তে দেখা যাচ্ছে যেখানে কাশ্মীরের লালচকে, যেখানে ২০১১ সালে পাকিস্তানের পতাকা দেখা গিয়েছিল সেখানে আজ তিরঙ্গা শোভা পাচ্ছে। দৃশ্যটা নিঃসন্দেহে সব ভারতীয়র কাছেই অত্যন্ত আবেগপূর্ণ এবং গৌরবের কিন্তু ছবি দেখে এটা কতজন বুঝতে পারছেন যে ২০১১ সালের ঘটনার সময় লালচক ছিল স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা পরিপূর্ণ আর ২০২১ এ ত্রিবর্ণরঞ্জিত লালচকে কেবল বিশেষ কয়েকজনই উপস্থিত আছেন।


এটাই optics এর মাহাত্ম্য। ছবি দেখে আপনি ভাববেন যে এককালের উপদ্রুত কাশ্মীর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের জোয়ার এসেছে কিন্তু বাস্তবে ঘটনা মোটেও তা নয়। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা উঠেছে ঠিকই কিন্তু তার ফলে না কাশ্মীরবাসীদের মানসিকতায় কোন বদল হয়েছে না সেখানে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছে। আর সেটা ঘটবেও না যতক্ষণ না পর্যন্ত সেখানে কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হিন্দুদের, উপযুক্ত নিরাপত্তা সমেত পুনর্বাসন দিয়ে, এলাকার জনবিন্যাসের পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে ভারতের যে এলাকাতেই হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েছে সেই এলাকাগুলিই হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বর্গরাজ্য হয়েছে অথবা দেশ থেকে আলাদা হয়ে গেছে অথচ তারপরেও আমরা শুধু একটা ছবি দেখেই নিজেদের সান্ত্বনা দেই যে all is well in Kashmir। 


এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেয়া যায় যে ১৯৯২ সালের ২৬শে জানুয়ারী, একতা যাত্রার শেষে, বিজেপির তদানীন্তন সভাপতি, মুরলী মনোহর যোশীও লালচকে জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন। সেই ছবিও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কিন্তু যেটা হয়নি সেটা হলো যে নরসিংহ রাও সরকার কিভাবে মিলিটারি দিয়ে লালচককে ঘিরে, চরম সুরক্ষা বলয়ের মাধ্যমে যোশীজি কে নিয়ে গিয়ে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ করেছিলেন। সেদিনও আমরা অর্ধসত্য দেখে নিজেদের ভুল বুঝিয়েছিলাম আর আজও সেই কাজই করে চলেছি। কাশ্মীরকে পুনরায় হিন্দু অধ্যুষিত না করতে পারা অবধি যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান নেই এই সত্য যতদিন পর্যন্ত নিজেরা না উপলব্ধি করতে পারবো, optics আমাদের বিপথে চালিত করতেই থাকবে।