Sunday, August 8, 2021

ছবি আর বাস্তবতা

রাজনীতিতে দেখনদারির মূল্য অসীম। সেখানে, কেউ কি করছে সেটা বড় নয়, কিভাবে সেটা দেখাচ্ছে, সেটাই প্রধান। ইংরেজিতে এটাকে বলে optics বা ছবি। কোন দলের রাজনৈতিক IT cell এর কাজই হলো এরকম optics তৈরী করা। এই optics এর উপর ভিত্তি করেই, সেটার target people মানে যাদের উদ্দেশ্যে সেটা তৈরী করা হয়েছে, তারা খুশী হয়ে যায় আর দলকে সমর্থন দেয়।


এমনই একটা ছবি গত কয়েকদিন ধরে social media তে দেখা যাচ্ছে যেখানে কাশ্মীরের লালচকে, যেখানে ২০১১ সালে পাকিস্তানের পতাকা দেখা গিয়েছিল সেখানে আজ তিরঙ্গা শোভা পাচ্ছে। দৃশ্যটা নিঃসন্দেহে সব ভারতীয়র কাছেই অত্যন্ত আবেগপূর্ণ এবং গৌরবের কিন্তু ছবি দেখে এটা কতজন বুঝতে পারছেন যে ২০১১ সালের ঘটনার সময় লালচক ছিল স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা পরিপূর্ণ আর ২০২১ এ ত্রিবর্ণরঞ্জিত লালচকে কেবল বিশেষ কয়েকজনই উপস্থিত আছেন।


এটাই optics এর মাহাত্ম্য। ছবি দেখে আপনি ভাববেন যে এককালের উপদ্রুত কাশ্মীর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবাদের জোয়ার এসেছে কিন্তু বাস্তবে ঘটনা মোটেও তা নয়। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা উঠেছে ঠিকই কিন্তু তার ফলে না কাশ্মীরবাসীদের মানসিকতায় কোন বদল হয়েছে না সেখানে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটেছে। আর সেটা ঘটবেও না যতক্ষণ না পর্যন্ত সেখানে কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হিন্দুদের, উপযুক্ত নিরাপত্তা সমেত পুনর্বাসন দিয়ে, এলাকার জনবিন্যাসের পুনর্গঠন করা হচ্ছে। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে যে ভারতের যে এলাকাতেই হিন্দুরা সংখ্যালঘু হয়েছে সেই এলাকাগুলিই হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের স্বর্গরাজ্য হয়েছে অথবা দেশ থেকে আলাদা হয়ে গেছে অথচ তারপরেও আমরা শুধু একটা ছবি দেখেই নিজেদের সান্ত্বনা দেই যে all is well in Kashmir। 


এই প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দেয়া যায় যে ১৯৯২ সালের ২৬শে জানুয়ারী, একতা যাত্রার শেষে, বিজেপির তদানীন্তন সভাপতি, মুরলী মনোহর যোশীও লালচকে জাতীয় পতাকা তুলেছিলেন। সেই ছবিও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কিন্তু যেটা হয়নি সেটা হলো যে নরসিংহ রাও সরকার কিভাবে মিলিটারি দিয়ে লালচককে ঘিরে, চরম সুরক্ষা বলয়ের মাধ্যমে যোশীজি কে নিয়ে গিয়ে, মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে গোটা প্রক্রিয়াটা সম্পূর্ণ করেছিলেন। সেদিনও আমরা অর্ধসত্য দেখে নিজেদের ভুল বুঝিয়েছিলাম আর আজও সেই কাজই করে চলেছি। কাশ্মীরকে পুনরায় হিন্দু অধ্যুষিত না করতে পারা অবধি যে কাশ্মীর সমস্যার সমাধান নেই এই সত্য যতদিন পর্যন্ত নিজেরা না উপলব্ধি করতে পারবো, optics আমাদের বিপথে চালিত করতেই থাকবে।

No comments:

Post a Comment