Tuesday, August 9, 2022

হর ঘর তিরঙ্গা

স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে, দেশের অন্তত ২০ কোটি বাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগানোর জন্যে কেন্দ্র সরকার 'হর ঘর তিরঙ্গা' প্রকল্প নিয়েছে। এই প্রকল্পের অঙ্গ হিসাবে সব ডাকঘর থেকে জাতীয় পতাকা বিক্রি করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের অধীনে পতাকা সরবরাহের দায়িত্ব পেয়েছে সালাউদ্দিন মন্ডল। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করার জন্যে ফ্ল্যাগ কোডে পরিবর্তন করেছে কেন্দ্র সরকার।

এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে প্রকল্পের সময়সীমা ১৩ থেকে ১৫ই আগস্ট হলেও জাতীয় পতাকার সম্মান কিন্তু চিরকালীন। তাই যারা এই প্রকল্পের অধীনে নিজেদের বাড়িতে জাতীয় পতাকা লাগাবেন তারা দয়া করে মাথায় রাখবেন যে ১৫ই আগস্টের পরেও যেন সেই পতাকা তার উপযুক্ত মর্যাদা পায়। বাড়ির উঠোনে বা রাস্তার পাশে পড়ে থাকা জাতীয় পতাকা শুধুমাত্র বিসদৃশ নয়, জাতির সম্মানের জন্যে যথেষ্ট অবমাননাকর।

প্রোফাইলে জাতীয় পতাকা লাগান, বাড়িতে পতাকা লাগান, ক্লাব, অফিস, দোকান - যেকোন যায়গাতেই জাতীয় পতাকা লাগান কিন্তু সেটা যেন কোন হুজুগের ফলে না হয়। জাতীয় পতাকা লাগানো তখনই সফল হবে যখন আপনার ভিতরে জাতীয় সত্ত্বার বিকাশ ঘটবে। জাতীয়তাবাদ জিনিসটা খুব একটা সস্তা নয়, এটা তাদেরই শোভা পায় যারা নিজেদের জাতীয় পরিচয় নিয়ে গর্বিত।

Sunday, July 17, 2022

অতীত নির্ভরশীলতা

অতীতের মৌতাতে কেবল তারাই বুঁদ হয়ে থাকতে পারে যারা ভবিষ্যতের ঝুঁকি নিয়ে ভয় পায়। ধীরুভাই কি করেছিলেন সেটা নিয়ে স্মৃতিমেদুর হয়ে থাকলে মুকেশ আম্বানি বিশ্বের অন্যতম ধনী হতেন না। শুধুমাত্র  সিনিয়র জর্জ বুশের শাসন নিয়ে গর্ব চালিয়ে গেলে জুনিয়র জর্জ বুশ আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হতেন না। বাজপেয়ীর প্রথম অকংগ্রেসী প্রধানমন্ত্রী হওয়া নিয়ে মেতে থাকলে মোদী কখনই দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন না।


অতীত যত সুখের বা আনন্দেরই হোক না কেন ভুলে গেলে চলবেনা যে সেটা অতীত। বর্তমান যদি শুধুমাত্র অতীত নির্ভর হয়ে যায় তাহলে ভবিষ্যৎ বিপন্ন হতে বাধ্য। মাধ্যমিকে স্টার মার্কস পাওয়া কোন শিক্ষার্থী যদি সেই আনন্দে বুঁদ হয়ে থাকে তাহলে উচ্চমাধ্যমিকে তার ফল কি হবে সহজেই অনুমেয়। অতীত প্রেরণা হতে পারে, শিক্ষা হতে পারে কিন্তু বর্তমানের নির্ণায়ক হতে পারেনা কারণ অতীত থেকে বর্তমানের মধ্যে একটা বিরাট পার্থক্য আছে আর সেটা হলো মহাকাল।


অতীত আঁকড়ে থেকে যারা সময়ের সাথে সাথে নিজেদের জীবনযাত্রা বা আচরণে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে না পারে তারা নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারেনা। বিশালদেহী ডাইনোসর বা ম্যামথরা পারেনি, হিন্দুরাও পারবেনা। গান্ধার থেকে ব্রহ্মদেশ অবধি বিস্তৃত ভারতের গরিমায় ডগমগ হিন্দুরা প্রায়শই ভুলে যায় যে গান্ধার বা ব্রহ্মদেশ - কোনটাই আজ ভারতের অঙ্গ নয়। হিন্দুদের বোঝা উচিত যে অতীতে দেশের বিরাট বিস্তৃতি যেমন সত্য ঠিক তেমনই সত্য তাদের বিযুক্তি। তারমানে অতীতে এমন ভুল নিশ্চয়ই হয়েছে যার পরিণতিতে দেশের সীমা সঙ্কুচিত হয়েছে। এমতাবস্থায়, শুধু "মা যা ছিলেন" নিয়ে গর্ব যথেষ্ট নয়। একইসাথে, "মা যা হয়েছেন" সেটার কারণও মনে রাখা দরকার যাতে "মা যা হইবেন" স্বপ্ন সফল হতে পারে।

Wednesday, June 29, 2022

অনিবার্য পরিণতি

রাজস্থানে মুসলমান জনসংখ্যার হার ১০ শতাংশের কম আর পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৩০ শতাংশ। প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ মুসলমানদের হাতে তুলে দেয়ার জন্যে রাজস্থানে কোন বিশেষ আইন নেই কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে OBC-A সংরক্ষণের মোড়কে প্রতিটি সরকারি নিয়োগে বিশেষ সুবিধা দেয়া হচ্ছে মুসলমানদের। পুলিশ থেকে আমলা- সব পদেরই দখল চলে যাচ্ছে হিন্দুদের থেকে। এতদিন হিন্দু বহুল থাকার পরেও ক্রমাগত বঞ্চিত হয়ে আপনি এখনও নিশ্চিন্ত আছেন যে জেহাদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, প্রশাসনের ভরসায়, আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে আপনি খুব সুরক্ষিত পরিবেশ রেখে যাচ্ছেন, তাই না?


১০ শতাংশের কম জনসংখ্যা সত্ত্বেও মুসলমানরা নুপুর শর্মার গ্রেপ্তারির দাবীতে মিছিল করলে রাজস্থান সরকার তাদের বিরুদ্ধে নীরব থাকে আর হিন্দুরা নুপুর শর্মার সমর্থনে মিছিল করলে তাদের বিরুদ্ধে কেস ফাইল করা হয়। বাঙালীরা অবশ্য এই দৃশ্যের সাথে পরিচিত। তারা দেখেছে যে কিভাবে শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয় ভিন্ন হওয়ার কারণে টিকিয়াপাড়া দাঙ্গায় পুলিশ'কে লাথি মারা ব্যক্তির বাড়িতে সরকারি উদ্যোগে রেশন পৌছে যায় আর তেলেনিপাড়া দাঙ্গায় পুলিশের নিস্ক্রিয়তা প্রকাশ করার জন্যে, করোনা অতিমারীর সময় ত্রাণ বিতরণ করে আসার দিনই প্রসূন মৈত্র'কে গ্রেপ্তার করা হয়।


আরেকটা বিষয় জানিয়ে রাখা দরকার যে ১৫ই জুন কানহাইয়া লালের পুলিশে দায়ের করা অভিযোগ অনুসারে তার প্রতিবেশী, নাজিম এবং তার পাঁচ জন সহযোগী বেশ কিছুদিন ধরে কানহাইয়া লাল'কে দোকান খুলতেও বাধা দেয়। বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কানহাইয়া লালের নাম ও ছবি দিয়ে প্রচারও করা হয় যে তাকে রাস্তায় বা দোকানে দেখলে যেন হত্যা করা হয়। পুলিশ, যথারীতি, তার অভিযোগকে কোন গুরুত্ব দেয়নি আর পরিণতিতে এই হত্যা।


তবে আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন যে আপনার প্রতিবেশীরা ওরকম নয়। কমলেশ তিওয়ারি, উমেশ কোলে, কানহাইয়া লালের মত পরিণতি আপনার হতেই পারেনা। তসলিমা'র বেলায় ফোর্ট উইলিয়াম থেকে সেনা ডাকতে হলেও বা জাতীয় সড়ক ও রেল স্টেশনে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরী হলেও বা প্রকাশ্য দিবালোকে সেনা ও পুলিশ অফিসারদের হত্যা করে বা বেধড়ক পিটিয়ে অপরাধীরা প্রমাণাভাবে বেকসুর খালাস হয়ে গেলেও আপনি নিশ্চিত থাকুন যে আপনার পরিবারের কোন বিপদ নেই। 


প্রতিটা হত্যার পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিন দুয়েক হল্লা হবে আর তারপর আবার উঠে আসবে নতুন ইস্যু। আজ রবি, রুদ্রেশ, অঙ্কিত সক্সেনা, পালঘর, কমলেশ তিওয়ারি, টোটোন দাস, মৌসুমি বিশ্বাস, বিকাশ দাস'দের কথা আর ক'জনের মনে আছে! আমাদের ক্ষোভের মেয়াদ প্রশাসনও জানে আর তাই তারা সেটা নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন হননা। আর আমাদের গুরু সমাজ তো আরেক কাঠি উপরে। তারা মরার পর আমি বিষ্ণুলোকে যাবো না ব্রহ্মলোকে সেটা নিয়ে প্রবচন দিতে পারেন, পরলোক নিরাপদ করতে শান্তি স্বস্ত্যয়ন করাতে পারেন কিন্তু ইহলোকের বিপদ সম্পর্কে তাদের মুখে টুঁশব্দ শুনবেন না। তাই যতই OBC-A দিয়ে অনুপ্রবেশ হোক, আপনার ধর্মীয় দায়িত্ব দক্ষিণেশ্বর, তারকেশ্বর বা তারাপীঠে পুজো দিয়েই শেষ। মাফ করবেন, এরকম সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে নিস্পৃহ, আত্মকেন্দ্রিক সমাজের ধ্বংস হয়ে যাওয়াই উচিত।

Monday, June 20, 2022

পশ্চিমবঙ্গ দিবস ও কিছু ভাবনা

আজ সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' নিয়ে মাতোয়ারা হয়ে আছেন তাদের মধ্যে ক'জন এই দিনের পিছনের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা নিয়েছেন সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। না, আমি শুধু হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যে বিভেদের কথা বলছিনা বা তাদের একত্রে বসবাসের কল্পনার কথা বলছিনা। আজ যে পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালিত হচ্ছে সেটা বাস্তবায়িত হওয়ার কারণ কিন্তু আরও গভীরে।


১৯৪৭ সালে, বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির যৌথ অধিবেশনে যখন প্রথম ভোটাভুটি হয় তখন ১২০-৯০ ভোটে সিদ্ধান্ত হয় যে বাংলা অবিভক্ত থাকবে। ১৯৪৬ সালের গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস-এর কুখ্যাত নায়ক, হাসান সোহরাওয়ার্দী এবং শরৎ চন্দ্র বোসের মত ব্যক্তিরা বঙ্গ বিভাজনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে, সওয়াল করেন অখণ্ড বাংলার পক্ষে যা ভারত ও পাকিস্তান কোন দেশেই যোগ দেবেনা। ব্যাপারটা বোঝার জন্যে আজকে কাশ্মীরের মুসলমানরা যে দাবী করছে সেটার সাথে মিলিয়ে দেখতে পারেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে তখন, আজকের হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় দুই কোটি জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় ৬০ লক্ষ মুসলমান অর্থাৎ প্রায় ৩০% আর পূর্ববঙ্গের প্রায় চার কোটি জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু ছিল দেড় কোটির মতন যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৩%।


শরৎ চন্দ্র বোস বা সোহরাওয়ার্দী'র মত কিছু নেতা বা কৃষক প্রজা পার্টির মত দল স্বতন্ত্র বাংলার প্রচার করলেও, যা আদতে আরেকটা কাশ্মীরের জন্ম দিতো এবং সেই দূরদর্শিতার কারণেই, মুসলিম লীগের দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের দাবী সত্ত্বেও জিন্না কিন্তু সোহরাওয়ার্দীর দাবীকে সমর্থন করেছিলেন। এই দূরদর্শিতা ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায়েরও ছিল তাই তিনি ভারত ভাগের সাথে বাংলা ভাগের দাবীতে সোচ্চার হয়েছিলেন আর পাশে পেয়েছিলেন ডাক্তার বিধান চন্দ্র রায়, নির্মল চন্দ্র চ্যাটার্জি, স্যার যদুনাথ সরকার, ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার, ডঃ মেঘনাদ সাহা, ডঃ শিশির মিত্র, ডঃ সুনীতিকুমার চট্টপাধ্যায়, ডঃ সুরেন্দ্রনাথ মিত্র সহ আরও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের যারা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে অবিভক্ত বাংলার ছয় কোটি জনসংখ্যার পঞ্চাশ শতাংশ মুসলমান হলে সেখানে হিন্দুদের পরিণতি কি হতে পারে।


এবার আসি সেই ঘটনায় যেখান থেকে শুরু করেছিলাম এবং সেই শিক্ষা হিন্দুরা কতটা নিতে পেরেছে সেটা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলাম। লক্ষ্য করে দেখুন, সেই সময় ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় ছিলেন হিন্দু মহাসভার প্রতিনিধি আর বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের প্রাদেশিক আইনসভায় ছিল কংগ্রেসের আধিপত্য। এই ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান কিন্তু ডঃ মুখোপাধ্যায়ের নিজের জাতিকে রক্ষা করার প্রতি বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। বরং তিনি এবং অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা সম্মিলিতভাবে প্রাদেশিক সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন যাতে হিন্দুদের আলাদা হোমল্যান্ড তৈরী হয়। এরই পরিণতিতে, হিন্দু বহুল অঞ্চলগুলির প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আইনসভাতে আলাদা হোমল্যান্ড গঠনের দাবী ৫৮-২১ ভোটে জয়ী হয় এবং জন্ম নেয় পশ্চিমবঙ্গ।


আজকে যারা 'পশ্চিমবঙ্গ দিবস' পালন করছেন তাদের মধ্যে কতজনের মধ্যে জাতির স্বার্থে রাজনীতির ঊর্ধ্বে ওঠার ইচ্ছা বা ক্ষমতা আছে সেটা নিয়েই আমি সন্দিহান। সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখার কুফল বাংলাদেশের হিন্দুরা হাড়েহাড়ে টের পাচ্ছে। বাংলাদেশের হিন্দুদের সিংহভাগ বংশপরম্পরায় আওয়ামী লীগের সমর্থক। ফলে বিএনপি তাদের গুরুত্ব দেয়না তারা তাদের ভোটার নয় বলে আর আওয়ামী লীগের কাছে তো তারা হাতের পাঁচ। জাতির স্বার্থে রাজনীতিতে কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটা ডঃ শ্যামা প্রসাদ মুখোপাধ্যায় আমাদের শিখিয়ে দিয়েছেন এবং আমাদের যাবতীয় উদযাপন তখনই সফল হবে যখন আমরা তার প্রদর্শিত পথে চলতে পারবো।

Friday, June 17, 2022

অগ্নিপথ

দু'দিন আগে যারা বলতো যে সেনা মানে চাকরি নয়, আবেগ আর তাই সেটার আলাদা সম্মান আজ তারাই অগ্নিপথের লাভ বুঝাতে মাত্র চার বছর চাকরি করে লাখ টাকা জমানোর স্বপ্ন দেখাচ্ছে।


দু'দিন আগে যারা বলতো যে ভারতীয় সেনা মানে ত্যাগ আর নিষ্ঠার প্রতীক আজ অগ্নিপথের লাভ বুঝাতে তারাই বলছে যে সেনায় একবার ঢুকে গেলেই আরামে জীবন কাটানোর দিন এবার শেষ।


দু'দিন আগে যারা সারা বিশ্বে ভারতীয় সেনার শৌর্য নিয়ে, তাদের প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক সম্মানের ইতিহাস নিয়ে আমাদের গর্ব করতে বলতো আজ অগ্নিপথ বুঝাতে গিয়ে তারাই বলছে যে সেনাতে এবার তরুণ রক্ত ঢুকে তার কর্মক্ষমতা বাড়বে।


আমি গোলা লোক, বুঝিনা কোনটা ঠিক আর কোনটা ভুল। তবে দেশের প্রতিরক্ষাও যখন পরিসেবা, থুড়ি, পরিষেবা হয়ে গেছে তখন দেশকে তো তার মূল্য দিতেই হবে।

Sunday, June 5, 2022

OBC-A মামলা থেকে অব্যাহতি

আগেই বলেছিলাম যে আত্মদীপ-এর দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্বের প্রতি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা আর সমাজ যদি সেই কাজে সহযোগিতা করে তাহলে এগিয়ে যাওয়া। এরকমই একটা বিষয় ছিল বৈষম্যমূলক OBC-A আইন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা।


২০১২ সালে পাশ হওয়া OBC-A আইন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন সমালোচনা করলেও এটাকে বাতিল করার কোন উদ্যোগ নেয়নি। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আমরাই প্রথম এটাকে অসংবিধানিক বলে বাতিল করার দাবীতে আদালতে জনস্বার্থ মামলা করি এবং গত আড়াই বছর ধরে সেরা উকিলদের দিয়ে এই মামলা চালাতে থাকি। বিভিন্ন সময় সোশ্যাল মিডিয়াতে আবেদনের প্রেক্ষিতে বা কিছু ব্যক্তি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে সাহায্য করেছেন, আমরা তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রবাসী ভারতীয়রা দু-একটি শুনানির টাকা দিয়েছেন আমরা তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ।


কিন্তু এইভাবে যে টাকা যোগার হয়েছে সেটা নিয়মিত মামলা চালানোর জন্যে যথেষ্ট নয়। ২৬শে এপ্রিলের পর পরবর্তী শুনানির তারিখ হিসাবে ১৪ জুন নির্ধারিত হয়েছে। এখন প্রতিটা শুনানির খরচ ২৫০০০ টাকা এবং বিশেষ শুনানির সময় সিনিয়র উকিল নিলে বাড়তি খরচ ১.৫ লক্ষ টাকা। এতবড় আর্থিক দায়ভার নেয়ার সামর্থ আমাদের এই মুহূর্তে নেই আর সমাজের বড় অংশ, যার মধ্যে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনও আছে, এই দায় নিতে অনাগ্রহী হওয়ার কারণে আমরা উপলব্ধি করেছি যে সমাজ এখনও এই আইনের বিপদ সম্পর্কে এবং ভবিষ্যতের ছবি সম্পর্কে সচেতন নয়। 


এমতাবস্থায়, আমাদের সংকল্প অনুযায়ী আমরা এই মামলা থেকে অব্যাহতি নিচ্ছি। ভবিষ্যতে সমাজ যদি আগ্রহী হয় আর তখন যদি পরিস্থিতি বিপদসীমা পার না করে গিয়ে থাকে তখন আবার এটা নিয়ে চিন্তা করবো।

Friday, May 20, 2022

ধার্মিক

জেহাদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে, হিন্দুদেরও মুসলমানদের অনুকরণ করা জরুরী নয়। প্রত্যেকটা জাতির মানসিকতা, অভ্যাস, গঠন আলাদা। এক জাতির কাঠামো, আরেকজনের উপর বসিয়ে দিলে সেটা খাপ খায়না। যারা ভাবেন যে হিন্দুরা গন্ডা গন্ডা বাচ্চা প্রসব করলে জেহাদি প্রতিরোধ গড়ে উঠবে, আমি তাদের সাথে সহমত নই। যারা মুসলমানদের কাছে অত্যাচারিত হিন্দুরা কেন তাদের অত্যাচার নিয়ে সোচ্চার হননা বলে প্রশ্ন তোলেন, আমি তাদের প্রতি করুণা প্রকাশ করি।


আচ্ছা, বলুন তো, ভারত আর পাকিস্তানের লড়াই নিয়ে কত দিবস, কত সিনেমা তৈরী হয়েছে কিন্তু ভারত আর চীনের যুদ্ধ নিয়ে ক'টা দিবস বা ক'টা সিনেমা হয়েছে? না, ব্যর্থতাকে কেউ সেলিব্রেট করেনা। এই কয়েকদিন আগে, ডোকলাম নিয়ে চীনের সাথে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেটার সমাধানেরও কোন দিবস পালন করা হয় কি? না, সমঝোতার মাধ্যমে লব্ধ বিষয়ে উল্লাস করা যায়না। এই কারণেই মুসলমানদের কাছে অত্যাচারিত হিন্দুরা তাদের অত্যাচার নিয়ে নীরব। পরাজয়ের কথা বুক ফুলিয়ে বলা যায়না।


একইভাবে, যারা মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে রোখার জন্যে হিন্দুদেরও গন্ডা গন্ডা বাচ্চা নিতে উৎসাহ দেন, তাদের সেই মানসিকতাকেও আমার অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কিছু মনে হয়না। ভারতবর্ষ মুসলমানদের নয়, হিন্দুদের। মুসলমানরা এদেশে এসেছিল আক্রমণকারী হিসাবে, লুট করতে। তাই এই দেশের প্রতি তাদের কোন মমত্ব নেই। কিন্তু হিন্দুদের সেটা আছে। ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা যেখানে ইতিমধ্যেই ১৩০ কোটি পার হয়ে গেছে আর রিসোর্স সীমিত - সেখানে, নেতাদের খিদে মেটানোর পর, নিয়ন্ত্রণহীন জনসংখ্যার প্রয়োজন কতটা মেটানো সম্ভব হবে?


ইসলামি আগ্রাসনের সামনে হিন্দুদের ব্যাকফুটে থাকার একমাত্র কারণ হল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিন্দুরা ইসলামকে বিপদ বলে মনে করেনা। যেখানে হিন্দুদের সংখ্যা বেশী, সেখানে তারা মুসলমানদের ত্বাকিয়ার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে আর এইভাবে আস্তে আস্তে যখন দুই পক্ষই সমান সমান অবস্থায় আসে, তখন তারা আপোষ করা শুরু করে আর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলেই, অনিবার্য পরিণতি হিসাবে এলাকা ত্যাগ করে। এই প্রবণতা দিনের পর দিন, এলাকার পর এলাকায় ঘটে চলেছে কারণ হেরে যাওয়ার গ্লানি সবাই লুকাতে চায়।


এমতাবস্থায় যারা ভাবছেন যে শুধু সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের মাধ্যমে এই আগ্রাসনকে প্রতিহত করা যাবে, তাঁরা, আমার মতে, বাস্তব সম্পর্কে অবহিত নন। ইসলামিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই মোটেই একমুখী নয় যে কুরুক্ষেত্রের মত এসপারওসপার হয়ে যাবে। এই লড়াই যতটা মাটিতে হবে, ঠিক ততটাই হবে বৌদ্ধিক জগতে। এই লড়াইয়ে রাজনৈতিক দলগুলি সহ তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনকে - নিজেদের স্বপক্ষে আনতে না পারলেও অন্তত নিস্ক্রিয় রাখতে হবে - যেটা ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময়, মোদী অনেকাংশেই করেছিলেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, গুজরাট দাঙ্গার সময়, মোদী মোটেই গোধরাতে রেলের কামরা জ্বালিয়ে করসেবকদের পুড়িয়ে মারা এবং সেটাতে উল্লাস প্রকাশ করা জেহাদীদের উপর আক্রমণ করেননি, সেই কাজ গুজরাটের হিন্দুরাই করেছিল। মোদী শুধু কিছু সময়ের জন্যে প্রশাসনকে নিস্ক্রিয় করে রেখেছিলেন যাতে বিচারের সাম্যতা বজায় থাকে।


ইসলামিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু 'ব্লু কলার' বা 'কলারলেস'দের দিয়ে হবেনা, এই লড়াই করার জন্যে সমাজের 'হোয়াইট কলার'দের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা অনিবার্য। যারা এই সত্যকে অস্বীকার করে, শুধু তথাকথিত নিম্নবর্গের দ্বারা এই কাজ করতে চাইছেন, তাদের সাফল্য নিয়ে আমার সংশয় আছে। কারণ প্রশাসনিক জাড্যতা ও আইনি বাধার বিরুদ্ধে তাদের শক্তি এতটাই ক্ষয় পায় যে অনেক সময়ই মূল লক্ষ্য থেকে দৃষ্টি সরে যায়। সমাজ রক্ষার, ভবিষ্যৎ রক্ষার দায় যে গোটা সমাজের, এই বোধ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যেই আসতে হবে। হিন্দুদের একজোট হওয়ার জন্যে ধর্ম ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তাই সমাজ রক্ষার এই কাজ যে হিন্দুদের ধার্মিক কর্তব্য, এই উপলব্ধি হিন্দুদের মধ্যে আসা দরকার। 


এখানে ধর্ম মানে রিলিজিয়ন নয়, ধর্ম মানে দায়িত্ব, কর্তব্য। ঈশ্বরে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস, যাগযজ্ঞাদি, পূজার্চনা করা বা না করার সাথে মানুষের সামাজিক কর্তব্যের বা ধর্ম পালনের কোন সম্পর্ক নেই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী, বাজপেয়ী'র সৌজন্যে যেমন 'রাজধর্ম' শব্দটি বহুল পরিচিতি লাভ করেছে এবং সেখানে রাজধর্ম মানে মোটেই শাসকের পূজার্চনার কথা বোঝানো হয়নি, বরং তার কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে। একইভাবে, পুত্রধর্ম, ছাত্রধর্ম, পিতাধর্ম, শিক্ষকধর্ম ইত্যাদি দ্বারাও প্রত্যেক ক্ষেত্রের ব্যক্তিদের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে। ঠিক এইভাবেই থাকে নাগরিক দায়িত্ব যা তার ধর্ম আর এই ধর্ম যে ঠিকভাবে পালন করে সেই ধার্মিক।

Wednesday, May 18, 2022

বাঙালীর অস্তিত্ব

পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ইদানীং যে বাঙালীবাদ অথবা বাঙালী জাতীয়তাবাদের ধুয়ো উঠছে সেটা 'অনুপ্রেরণা' মূলত রাজনৈতিক। আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির উত্থানকে প্রতিহত করাই এই হঠাৎবাদের উৎস। প্রথমে এটা শুরু হয়েছিল তথাকথিত হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, কিন্তু হিন্দির বিরুদ্ধে মুখর হয়ে, উর্দুর বিরুদ্ধে মৌন থাকার চালাকিটা রাজ্যের ঘরপোড়া মানুষ বুঝে ফেলতেই এখন হিন্দি আর উর্দু- উভয়কেই নিশানা করা হচ্ছে।


কিন্তু এই তথাকথিত বাংলাপ্রেমীদের (অন্য অর্থে নেবেন না) মূল সমস্যা হল যে তাদের হিসাবে ভাষাই জাতির একমাত্র পরিচায়ক। তাই তাদের কাছে, দেশের পূর্বদিকের সীমান্তের পূর্ব ও পশ্চিমে বসবাসকারী উভয়েই বাঙালী। তাদের মনে কি কখনও প্রশ্ন জাগেনা যে উভয়পারের লোকের পরিচয় যদি বাঙালীই হবে তাহলে মাঝখানে সীমান্তটা আসলো কেন? হয়তো জাগে, কিন্তু রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা এবং কাঞ্চনমূল্যে সেই প্রশ্ন চাপা পড়ে যায়। তারা বোঝেনা বা বুঝতে চায়না যে ভাষা কখনও জাতির একমাত্র পরিচায়ক হতে পারেনা, কোন জাতির পরিচয় হল তার সংস্কৃতি। সীমান্তের পশ্চিমপারে বাঙালীদের সংস্কৃতি আর পূর্বপারে বাংলাভাষীদের সংস্কৃতি এখন আর এক নয়। সুজলা সুফলা পূর্বপারের অধিকাংশ মানুষ তাদের জন্যে এমন এক মরু সংস্কৃতিকে গ্রহণ করেছেন যেটা অন্য কোন সংস্কৃতির অস্তিত্ব মেনে নিতে পারেনা। আর সেই কারণেই রামধনু হয়ে যায় রঙধনু আর বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তির মত, ঢাকাতেও ভাঙা হতে থাকে মন্দির, মূর্তি। কারণ সেটা সেই মরু সংস্কৃতি অনুসারে, হারাম।


আগেই বলেছি যে এই হঠাৎবাদের অনুপ্রেরণা ও স্পনসর যেহেতু রাজ্যের বর্তমান শাসক দল এবং একমাত্র লক্ষ্য বিজেপির অগ্রগতি রোধ করা, তাই বাজারে আরও একটা নতুন তত্ত্ব আসছে আর সেটা হল বাঙালী জাতীয়তাবাদ। বিজেপি যেহেতু হিন্দু জাতীয়তাবাদকে পুঁজি করে আন্দোলন করছে, তাই সেই আন্দোলন থেকে বাঙালীদের আলাদা করা (পড়ুন ভোট কাটা) এই নতুন দলের লক্ষ্য। আর এই লক্ষ্যে মূলত তারাই কাজ করছে যারা এতদিন বিজেপির দুয়ারে হত্যে দিয়ে পড়েছিল আর এখন সেখানে পাত্তা না পাওয়াতে তাদের মনে হয়েছে যে বিজেপিকে দিয়ে কিছু হবেনা। ভাবটা এমন যেন বিগত দশ বছরে বিজেপিই এই রাজ্যে ক্ষমতায় ছিল আর কাংলাপাহাড়িতে দুর্গাপূজা বন্ধ বা তেহট্ট হাই স্কুলে সরস্বতীপূজা বন্ধ বিজেপিই করেছে। মহরমের জন্যে বিসর্জন বন্ধ করা বা তোতোন দাস, রোহিত তাঁতিদের হত্যাও হয়েছে বিজেপি প্রশাসনের কারণে। সমুদ্রগড়ের নিরীহ ছেলেদের, শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে, গাঁজা কেসে ফাঁসিয়ে, তিন বছর ধরে আটকে রেখেছে বিজেপি প্রশাসন আর তারক বিশ্বাসকে গ্রেপ্তারও করেছিল বিজেপি প্রশাসন। এরপর হয়তো শুনবো যে ইমামভাতা আর OBC-A সংরক্ষণ আইনও বিজেপিরই অবদান। সত্যি, মানুষকে এতটা বোকা ভাবেন? ভাবতে পারেন?


শাসকদলের মদতপুষ্ট যে সংগঠনগুলি হিন্দির 'আগ্রাসন', বকলমে রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে সোচ্চার তাদের কিন্তু বাংলার সংস্কৃতি রক্ষায় আগ্রহ নেই। বাংলার ধ্বংসপ্রাপ্ত মন্দিরগুলি সংরক্ষণ করার বা বাংলার লৌকিক পরম্পরাকে তুলে ধরতে তারা বিমুখ। তাদের কাজ খালি রেলওয়ে স্টেশনের নামের বোর্ডে হিন্দির উপর কালি লাগিয়েই শেষ। যদিও একই হিন্দি আর উর্দু মমতা ব্যানার্জী'র সরকারি লেটারহেডে থাকলে তাদের কোন আপত্তি নেই, প্রতিবাদ নেই। যার নুন খাচ্ছে তারই বদনাম করবে, এতটা 'নিমক হারাম' তারা নয়।


আজ বাংলা ভাষা যেভাবে এই রাজ্যে নিজের স্থান হারাচ্ছে তার জন্যে হিন্দি বা উর্দু দায়ী নয়, দায়ী বাঙালীরা। হিন্দির আগ্রাসন যদি সত্যিই বিপজ্জনক হতো তাহলে দক্ষিণ ভারতীয় রাজ্যগুলি এর প্রভাবমুক্ত থাকতে পারতনা। কিন্তু ঘটনা হলো যে অন্ধ্র, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক বা কেরালাতে হিন্দি মোটেই কোন বিপদ নয়। অনুকরণ প্রিয় বাঙালী নিজেদের বিয়ের অনুষ্ঠানে ঐতিহ্যবাহী ফুলের সাজের বদলে কুন্দন জুয়েলারি পরবে, ধুতি-পাঞ্জাবির বদলে শেরওয়ানি পরবে, রেড মিটের দোহাই দিয়ে মাংস-ভাত ছেড়ে চেটেপুটে মাটন বিরিয়ানি খাবে, আর তারপর কাঁদুনি গাইবে যে সংস্কৃতি বিপন্ন। বাংলা সিনেমা আর গানের কথা তো বাদই দিলাম। যে বাংলা চলচ্চিত্র আগে বম্বের সিনেমা জগতে ছড়ি ঘোরাতো আজ সেই বাংলা চলচ্চিত্রের প্রতিনিধি হয়ে গেছে মোহতা''রা। পরিচালকের রাজনৈতিক রঙ দেখে স্থির করা হচ্ছে কোন সিনেমা নন্দনে স্থান পাবে। হিন্দি বা ইংরেজি সিনেমার যেকোন সহ-অভিনেতা আজ অভিনয়ের মাপকাঠিতে বাংলা সিনেমার অধিকাংশ শিল্পীকে বলে বলে দশ গোল দেবে।


কিছুদিন আগেই কেরালা ঘুরতে গিয়েছিলাম, সেখানে কাউকে খৈনী বা গুঠখা খেতে দেখলাম না। সাধারণ লোকেরা এখনও আপ্পাম, ইডলি বা ধোসা খুশি মনে খায়। ম্যাক ডি বা কেএফসি'র আধিপত্য নেই। রাস্তার বিভিন্ন বিজ্ঞাপনেও স্থানীয় অভিনেতাদের ছবি। একটা জাতি এমনিতেই শ্রেষ্ঠ হয়ে যায়না, তার জন্যে কয়েকটা প্রজন্মকে স্বাভিমান বোধ বজায় রাখতে হয়। বাঙালী যেদিন সেটা বুঝবে, তাকে আর সস্তার রাজনীতি করে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে হবেনা।

Sunday, May 8, 2022

বঙ্গ রাজনীতিতে ২০২৪

আপনাদের, মানে বিজেপি ভক্তদের, বারবার বলি, চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেই তবুও আপনারা খেলাটা বোঝেন না বা বুঝতে চাননা। আপনারা যতই লাফালাফি করুন না কেন, ২০২৪ এ নরেন্দ্র মোদী কে তৃতীয়বারের জন্যে প্রধানমন্ত্রী দেখতে হলে বঙ্গ বিজেপি কে অনেক বলিদান দিতে হবে। আপনাদের সহকর্মী খুন হবে, খুনের দায়ে অভিযুক্তকেই সাদরে দলে নেয়া হবে, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থা মাঝেমধ্যে রাজ্যে এসে হম্বিতম্বি করে আপনাদের অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়াবে কিন্তু দিনের শেষে হাতে পড়ে থাকবে শুধুই পেনসিল। আজ যে ইস্যু নিয়ে বাজার গরম করা হচ্ছে কাল সেটা ভুলেই যাবেন কারণ বাজারে নতুন ইস্যু এসে গেছে।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে ২০২৪ কেন, সেটা এমন কি বিশেষ সাল? ২০২৪ হলো প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর শেষ নির্বাচন। ২০২৪ নির্বাচনের সময় ওনার বয়স হবে ৭৪ বছর অর্থাৎ ২০২৯ এ ওনার বয়স হয়ে যাবে প্রায় আশি। ভগবান ওনাকে দীর্ঘায়ু করুন কিন্তু সেই ঝুঁকি বিজেপি কতটা নিতে পারবে বা সেই সময় মোদী বাবুর স্বাস্থ্য কতটা স্বাভাবিক থাকবে সেটা নিয়ে আমি সন্দিহান। তাই ২০২৪ এ মোদী জিতলে, এবং সেটা প্রায় নিশ্চিত, তার শাসনকালেই উত্তরসূরী নিয়োগ হয়ে যাবে বলে আমার ধারণা। এতে মোদীর লিগ্যাসি আর উত্তরসূরীর ইমেজ - দুটোই ২০২৯ এ বিজেপি'র পক্ষে লাভজনক হবে। ঠিক যেমন জ্যোতি বসু আর বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য'র ক্ষেত্রে হয়েছিল।


এবার মোদীর উত্তরসূরী কে হবেন সেটা লাখ নয়, কোটি টাকার প্রশ্ন। সমর্থকদের কাছে যোগী আদিত্যনাথ প্রথম পছন্দ হলেও গুজরাটের প্রতিনিধি হওয়ার কারণে কর্পোরেট লবির পছন্দ হলেন অমিত শাহ। শাহ'র জনপ্রিয়তা ও কঠোর প্রশাসকের একটা ভাবমূর্তি থাকলেও সেটা অনেকটাই মোদী নির্ভর এবং তার শারীরিক অবস্থাও একটা বড় প্রতিবন্ধক। যোগীর ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তা একটা বড় অ্যাডভান্টেজ। নিজের দ্বিতীয় পর্যায়ের শাসনে তিনি যদি, পূর্বের মতই, সমাজের সকল শ্রেণীকে শুধুমাত্র হিন্দু পরিচয়ে মিলিত করতে পারেন তাহলে তিনি দিল্লীর সিংহাসনের বড় দাবীদার হয়ে উঠবেন। কখনও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী না হলেও পরপর পাঁচ বার লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ এবং প্রায় দুই দশকের দিল্লীর রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকা তার জন্যে একটা বড় অ্যাডভান্টেজ। এই দুজন ছাড়াও, নিতিন গডকড়ি বা রাজনাথ সিং এর মত কিছু নেতা দৌড়ে থাকলেও তাদের সম্পর্কে আমি আশাবাদী নই। তাদের একমাত্র সুযোগ যদি বিজেপি এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় এবং সরকার গঠনের জন্যে সহযোগী দলগুলোর উপর নির্ভর করতে হয়। তবে এত বড় বড় নামের মধ্যে আমার হিসাবে একজন 'কালো ঘোড়া' আছেন আর তিনি হলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এ নিয়ে পরে কখনও লেখা যাবে।


এই হলো ২০২৪ এর মাহাত্ম্য। তাই ২০২৪ পর্যন্ত বঙ্গ বিজেপিকে বলিদান দিয়ে যেতেই হবে। কংগ্রেসকে নির্মূল করার জন্যে মোদীর কাছে মমতা ব্যানার্জী'র গুরুত্ব কতটা সেটা আগেই লিখেছি। আগ্রহীরা নীচের লিঙ্কে সেটা পড়ে নিতে পারেন। ২০২৪ এর ফল অনুযায়ী, সোজা কথায় বিজেপি'র প্রাপ্ত আসন সংখ্যা অনুযায়ী, তৈরী হবে বিজেপির পরবর্তী বঙ্গ বিজয়ের পরিকল্পনা। ততদিন বঙ্গ বিজেপির কর্মীরা শুধু লোকসভা নির্বাচন মাথায় রেখেই কাজ করে যান।


https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10158659084199865&id=620989864

Thursday, April 28, 2022

রাষ্ট্রীয় সম্মানের অন্যদিক

রাষ্ট্র প্রদত্ত যেকোন নাগরিক সম্মান আসলে ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নীতির প্রতিফলন মাত্র। যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তারা তাদের অনুগামী বা নির্বাচনে লাভের অঙ্ক কষেই প্রাপকদের তালিকা তৈরী করে। তাই পদ্ম সম্মান, ভারতরত্ন, দেশিকোত্তম, সাহিত্য অ্যাকাডেমি বা জাতীয় পুরস্কার নিয়ে আমি আর উচ্ছ্বসিত হতে পারিনা কারণ, কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিয়ে, এগুলো আসলে আনুগত্যের পুরস্কার।


এই কারণেই কিশোর কুমার বা রাহুল দেব বর্মণ তাদের বিপরীত রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে কখনও পদ্ম সম্মান পাননি আবার দাউদের সাহায্যকারী হওয়া সত্ত্বেও ইউসুফ খান ওরফে দিলীপ কুমার বা শারদ পাওয়ার পদ্ম সম্মানে বিভূষিত হয়েছেন। বছর খানেক আগে যখন 'অ্যাওয়ার্ড ওয়াপসি' ট্রেন্ড হয়েছিল তখনও সেটার মূল প্রেরণা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। এই কারণেই ২০১০ এ পদ্মশ্রী প্রাপকদের, যারমধ্যে রয়েছেন ওড়িশি নাচের অন্যতম কিংবদন্তি, অশীতিপর গুরু মায়াধর রাউত, সরকারের দেয়া বাসভবন ছাড়তে বাধ্য করতে পারেন।


হ্যাঁ, আমাদের পরিচিত বা একই বিষয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা কখনও এই সম্মানের জন্যে বিবেচিত হলে আমরা উৎফুল্ল হই, রাষ্ট্রপতি ভবনের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখে মুগ্ধ হই আর নিজেদের এই ভেবে আশ্বস্ত করি যে আমাদের কাজ অবশেষে সরকারি স্বীকৃতি পেল কিন্তু একটু ভেবে দেখুন তো সরকার মানে আসলে কি? সেটা কি নিছকই একটা রাজনৈতিক দলের বা তাদের মতাদর্শের প্রতিফলন নয়? প্রাচীনকালে যেভাবে একটা মেয়েকে ছোটবেলা থেকেই পরিমিত বিষ খাইয়ে তাকে বিষকন্যা করে তোলা হতো এখন সেই কাজ করে চলেছে লর্ড মেকলে প্রচলিত আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা। ছোটবেলা থেকেই আমাদের অবচেতনে ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে যে সরকার, সংবিধান, গণতন্ত্র, আইন ব্যবস্থা ইত্যাদি অত্যন্ত পবিত্র ব্যাপার। এগুলো নিয়ে প্রশ্ন তোলা অপরাধ, ক্ষেত্রবিশেষে দেশদ্রোহ।


কিন্তু ভেবে দেখুন এগুলো সবকটা রাজনৈতিক শাসনের অঙ্গ মাত্র। সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর। তথাকথিত পবিত্র সংবিধানকে নিজেদের সুবিধা অনুযায়ী হামেহাল বদলে নেয় শাসকদল। গণতন্ত্রের মহিমা স্পষ্ট হয়ে যায় যখন এক বোতল দেশী মদের বিনিময়ে ভোট নিশ্চিত হয়ে যায়। H.L. Wayland যথার্থই বলেছিলেন যে, "Universal suffrage without universal education will be a curse" মানে সর্বশিক্ষা ছাড়া সবার ভোটাধিকার মানে সেটা অভিশাপ। এখানে শিক্ষা মানে শুধু বিদ্যা নয়, চেতনাও জড়িত। এই চেতনার বৈষম্যের কারণেই ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির জন্যে আমেরিকার রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে হয় আর পেগাসাস বা নারদা বা তহেলকা'র পরেও আমরা নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান বজায় রাখি।


দেশের আইন ব্যবস্থাকেও আমরা অত্যন্ত পবিত্র বলে মানি কিন্তু কাজ করতে গিয়ে দেখেছি সেই সিস্টেমের মধ্যে কত ফাটল। অর্থের ভূমিকা ছাড়াও যশের প্রলোভন কিভাবে বিচারকে প্রভাবিত করে সেটা সামনে থেকে দেখেছি আর তাই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি তার অবসরগ্রহণের চার মাসের মধ্যেই রাজ্যসভায় মনোনীত হলে আর অবাক হইনা। কিছু বিচারকের অবসরগ্রহণের পর বিভিন্ন কমিশনের প্রধান হয়,  জনগণের ট্যাক্সের টাকায়, পাঁচতারা জীবন যাপন প্রমাণ করে দেয় তাদের কর্মজীবনের নিরপেক্ষতা।


এইসব দেখার পর আর কোন 'রাষ্ট্রীয়' যা আদতে 'দলীয়' সম্মান আর প্রভাবিত করেনা। সেনাদের সম্মানও এই প্রভাব মুক্ত নয়। ল্যান্সনায়ক হেমরাজের সাথে হওয়া অন্যায়ের উদাহরণ দিয়ে ক্ষমতায় আসার আট বছর পরেও তার পরিবারের সাথে দেখা করেননা প্রধানমন্ত্রী অথচ বিনা আমন্ত্রণে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে যেতে পারেন। শুধু হেমরাজ কেন, পাঠানকোট, উড়ি বা পুলবামা'র কোন শহীদের পরিবারের সাথেই দেখা করেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোন সদস্য অথচ ৪৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ঔরঙ্গজেব জঙ্গীদের আক্রমণে শহীদ হওয়া মাত্রই তার বাড়িতে পৌছে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, নির্মলা সীতারমণ সহ তদানীন্তন সেনাপ্রধান, বিপিন রাওয়াত। এরপরেও আপনারা যদি ভাবেন এটার মধ্যে রাজনীতি নেই, তবে তাই হোক। আমি এই ছেলেখেলাতে আর ভোলার ভুল করবনা।

Thursday, April 21, 2022

সামাজিক কার্যকর্তার প্রয়োজনীয়তা

আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে, আজকের দিনেই, উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের রাড়িয়া গ্রামে আয়োজিত এক জনসভাতে তপন'দার বক্তব্য ছিল যে "যুগে যুগে সমাজের জন্যে হিন্দু নেতা দরকার। রাজনীতি ও ক্ষমতায় গেলে সেই হিন্দু নেতা পরিচয়টা আর থাকবে না। রাজনৈতিক নেতা সমাজের প্রয়োজন মেটাতে পারেনা"।


এই বিষয় নিয়ে, কিছুদিন আগে, এক ভাতৃসম বন্ধুর সাথেও তার একটা পোস্টে আলোচনা হচ্ছিল। তার বক্তব্য ছিল যে সামাজিক পরিবর্তনের জন্যে সামাজিক কার্যকর্তাদের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন। সেটা করলেই, তার দাবী অনুযায়ী, সমাজের পরিবর্তন সম্ভব। আমি তার দাবীর সাথে সহমত হতে পারিনি কারণ রাজনীতির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো যেকোন উপায়ে ক্ষমতা দখল করা। সমাজ সংস্কার রাজনীতির কাজ নয়, তার কাজ হলো বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা। ফলে, কোন সামাজিক কার্যকর্তা যখনই রাজনীতির মঞ্চে যাবেন দলীয় নীতি অনুযায়ী তারও প্রাথমিক লক্ষ্য হবে রাজনৈতিক লাভ। সেই ভাতৃসম বন্ধুর কথা যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেই যে রাজনীতিতে গেলেই নীতি নির্ধারকের ভূমিকা লাভ করতে পারবে সেক্ষেত্রে সেই পর্যায়ে পৌছানো পর্যন্ত তাকে নিজের সামাজিক দায়িত্বর বদলে রাজনীতিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু এতেও নিশ্চয়তা নেই যে সেই ব্যক্তি দলে নীতি নির্ধারকের ভূমিকা লাভ করবেন কারণ তার সাথে, তারই মত আরও অনেকেই লাইনে থাকবে। আর সেই লাইনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে শুধু নিষ্ঠাই যথেষ্ট নয়, অর্থ, যোগাযোগ, শীর্ষস্থানীয়দের নেকনজর ইত্যাদি বহু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলতঃ, কোন একদিন রাজনীতিতে নীতি নির্ধারক হতে পারেন এই সম্ভাবনার ভিত্তিতে, মানে সম্পূর্ণ ভাগ্যের ভরসায়, সেই সামাজিক কার্যকর্তাকে নিজের সামাজিক দায়িত্বর বদলে রাজনীতি নিয়ে চলতে হবে।


সমাজের স্বার্থ নিয়ে সচেতন কোন কার্যকর্তা এই জুয়া খেলায় যোগ দিতে আগ্রহী হবেন না যদিনা তারা অর্থলোভী হন অথবা কোন পদ লাভের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা থাকে। এই কারণেই কোন একটা রাজনৈতিক দলের রঙ গায়ে লাগা মাত্রই সে আর হিন্দু নেতা থাকতে পারেনা, দলের নেতা হয়ে যায়। আর সেই দলের নেতা হিন্দুদের যতই রক্ত গরম করার ভাষণ দিন না কেন, তার সেই বক্তব্যের জন্যে দল বিরম্বনায় পড়লে তাকেই পিছু হাঁটতে হয়।


এই সহজ সত্যটা বুঝতে পেরেছে বলেই মুসলমানদের কোন সামাজিক বা ধর্মীয় নেতা সচরাচর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেন না, বরং রাজনীতিকে ব্যবহার করে কিভাবে নিজেদের সমাজের সুবিধা করে নেয়া যায় সেটা নিয়ে নিজেদের সমাজকে প্রশিক্ষণ দেন। তাই আজ তারা তথাকথিত সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সরকারি সুবিধা বা প্রকল্পের লাভ পুরোপুরি নিতে পারেন। শাসকের জামার রঙের থেকে কৌমের স্বার্থ রক্ষা তাদের কাছে বেশী দরকারী। তাই OBC-A সংরক্ষণ থেকে মুসলমানদের UPSC পরীক্ষার জন্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ, বিমানে জমজমের পানি আনা থেকে শাদী শগুনের উপহার - সবই তারা আদায় করে নিয়েছে। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মত কয়েকজন ব্যতিক্রম থাকলেও লক্ষ্য করে দেখবেন, জামায়েতের নেতা হিসাবে যে সিদ্দিকুল্লার এত দাপট ছিল যে তার সভায় IPS দের পিটালেও শাস্তি হতনা সেই লোকই মন্ত্রী হওয়ার পরে হারিয়ে গেছেন।


এই কারণেই, তপন'দার মত, আমিও বিশ্বাস করি যে সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যকর্তাদের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যাওয়া উচিত নয় বরং তাদের দায়িত্ব হলো সমাজকে এমন সশক্ত করা যাতে সমাজ দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক ক্ষমতার সুবিধা নিতে পারে। একজন রাজনৈতিক নেতার কার্যকাল ও পরিকল্পনার ব্যপ্তি একটা নির্বাচন থেকে পরের নির্বাচন পর্যন্ত কিন্তু একজন সামাজিক কার্যকর্তাকে অনেক বেশী দূরদর্শী হতেই হয়।

Saturday, April 9, 2022

মা অন্নপূর্ণা পূজা

"আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে"- বাঙালীর চিরন্তন এই প্রত্যাশাই মা অন্নপূর্ণা'র কাছে প্রকাশিত হয়েছিল ঈশ্বরী পাটনী রূপে। কিন্তু সন্তানকে দুধে-ভাতে রাখার জন্যে শুধু প্রত্যাশাই যথেষ্ট নয়, সেটাকে রূপায়িত করার জন্যে যথেষ্ট প্রয়োগ ক্ষমতাও থাকা দরকার। প্রত্যাশা তো একজন ভিখিরিরও থাকে কিন্তু প্রয়োগ ক্ষমতা বিহীন তার সেই প্রত্যাশা অন্য কারুর সদিচ্ছার উপর নির্ভরশীল। তাই প্রত্যাশা পূরণের জন্যে প্রয়োগ ক্ষমতা আবশ্যিক।


১৯৪৬ সালের ১০ই অক্টোবর, এক কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার দিন, অধুনা বাংলাদেশের নোয়াখালীতে হিন্দুরা যখন লক্ষ্মী পূজার আয়োজনে ব্যস্ত, তখনই তাদের উপর নেমে এসেছিল জেহাদিদের করাল থাবা। যে সন্তানদের দুধে-ভাতে রাখার জন্যে বাঙালী পূজা করছিল, সেই সন্তানদেরই ধর্ষিত, মৃত দেহ ছুঁড়ে ফেলা হয় তাদের সামনে। বাঙালী মহিলাদের পরামর্শ দেয়া হয় ধর্ষণের জ্বালা দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করার। অহিংসার মোড়কে তাদের প্রতিশোধস্পৃহা ধ্বংস করা হয়। সন্তানকে দুধে-ভাতে রাখার স্বপ্ন দেখা বাঙালী নিজেদের সর্বস্ব হারিয়ে, শুধু নিজেদের হিন্দু পরিচয়টুকু বাঁচানোর জন্যে, বেছে নেয় উদ্বাস্তু জীবন।


দিন বদলেছে, কিন্তু সময় বদলায়নি। আজও যখন কালিয়াচক, ধুলাগড়, বাদুড়িয়া, আসানসোল বা তেলেনিপাড়াতে সেই জেহাদি আক্রমণ হয়, তখনও সেই হিন্দুদেরই সংযম বজায় রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। টিকিয়াপাড়াতে পুলিশকে লাথি মারা ব্যক্তির বাড়িতে পৌছে যায় রেশন আর তেলেনিপাড়ার কথা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করে দেয়ার 'অপরাধে' পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করে। সুদূর উত্তর প্রদেশের আখলাক কে নিয়ে সবাই ব্যথিত হলেও রায়গঞ্জের টোটোন দাস, বাদুড়িয়ার নিতাই দাস, অশোকনগরের মৌসুমি বিশ্বাস, খড়গপুরের রোহিত তাঁতীদের কথা আমাদের বলাই হয়না। দিল্লীর নির্ভয়াকান্ডে, ধর্ষণ করেও মহঃ আফরোজ ছাড়া পেয়ে যায় শুধুমাত্র তার ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে অথচ বাদুড়িয়ার শৌভিক নাবালক হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ তাকে অনায়াসেই জুভেনাইল হোমের বদলে, জেলে ঢুকিয়ে দেয়।


তাই আজ শুধু "সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে" প্রার্থনাই যথেষ্ট নয়, সন্তানের সাথে যেন কোন বঞ্চনা না হয়, একইসাথে সেটা সুনিশ্চিত করাটাও প্রয়োজন। আর এই বঞ্চনার অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠেছে ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় পাশ হওয়া OBC আইন। যে আইন আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া ব্যক্তিদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনার সহায়ক হতে পারতো, সেটাকেই, ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে ব্যবহার করা হয়েছে আর প্রকৃত দাবীদারদের অগ্রাহ্য করে, একটা বিশেষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে অন্যান্যদের তুলনায় বাড়তি সুবিধা দেয়া হয়েছে। লক্ষ্যটা একদম স্পষ্ট, বছরের পর বছর ধরে, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও চাকরিতে একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের লোকের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়ে এমন একটা শৃঙ্খল তৈরী করা যেটা দিয়ে পুরো প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।


আজ আপনি নাহয় নিজের সন্তানকে খাঁটি দুধের বদলে জল মেশানো দুধ দিয়েই ভাত খাওয়াচ্ছেন, কিন্তু এই পরিস্থিতির যদি পরিবর্তন না ঘটানো হয়, তাহলে আপনার পরের প্রজন্মের সেই জল মেশানো দুধটা কেনার সামর্থ থাকবে তো? পুরো সিস্টেমটাই যদি একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, আপনি সেই প্রশাসনের থেকে সুবিচার পাবেন তো? নোয়াখালীর বাঙালীরা পেয়েছিল? কাশ্মীরি পন্ডিতরা পেয়েছিল? বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের হিন্দুরা পাচ্ছে তো?


এই কারণেই শুধু প্রত্যাশা যথেষ্ট নয়, সেটা পূরণ করার ক্ষমতাও থাকা দরকার। আজ আত্মদীপ সেই বিভেদমূলক OBC আইনের বিরুদ্ধে এগিয়ে এসে, যেটা আরও আগেই করা উচিত ছিল, কলকাতা হাইকোর্টে সেই আইনকে বাতিল করার আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু এই লড়াইটা শুধু আত্মদীপ-এর নয়, পশ্চিমবঙ্গের সব বাঙালীর কারণ বনে যখন আগুন লাগে, সেই আগুন কোন ভেদাভেদ করেনা। তাই আজ মা অন্নপূর্ণা পূজার দিন, যখন মায়ের পুজো করবেন তখন শুধু নিজের পরিবারের ধন, সম্পদ, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্য চেয়েই থেমে যাবেননা, সেগুলিকে রক্ষা করার মত শক্তিও যেন আপনার থেকে, সেটাও প্রার্থনা করুন। নাহলে পূর্ববঙ্গের বাঙালীদের মত, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের উদ্বাস্তু হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।

সবাইকে মা অন্নপূর্ণা পূজার শুভেচ্ছা জানাই।

Thursday, April 7, 2022

সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ

মেকলে প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থা এবং সেটাতে শিক্ষিতদের ধারণা যে বৈদেশিক আক্রমণের আগে ভারতবর্ষে কখনই ঐক্য ছিলনা। দেশ বলে কোন ধারণা ছিলনা। ভারত নেহাতই ছিল কতগুলো রাজ্যের সমষ্টি। ইসলামিক ও ব্রিটিশ শাসনই নাকি ভারতবর্ষকে প্রথম একটা সম্পূর্ণ দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করেছে। তাই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী অনায়াসেই বলতে পারেন যে "We are a nation in making"। অর্থাৎ, ভারতে জাতি বা জাতীয় সত্বা বলে কিছু নেই, সেটা নাকি সবেমাত্র তৈরী হচ্ছে।


১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হলেও সাদা চামড়ার ব্রিটিশদের থেকে ক্ষমতা গেল বাদামী চামড়ার নব্য সাহেবদের হাতে। তারপর থেকে ক্ষমতায় যারাই থেকেছে তারা সেই কলোনিয়াল মানসিকতা থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তাদের ধারণা অনুসারে ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত না হলে তারা প্রকৃত শিক্ষিত নয়। দেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল কিসে হবে সেটা নির্ধারণ করার যোগ্যতা ও অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে। একইসাথে তাদের ধারণা যে সংখ্যালঘুরা (পড়ুন মুসলমানদের) যাই করুক, তাদের রক্ষা করার দায় হিন্দুদের।


কিন্তু এখানে মজার কথা হল যে ভারতে বসবাসকারী মুসলমানরা এই দেশে ইসলামিক আগ্রাসনের আগের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে গর্বিত হওয়া তো দূরের কথা, আগ্রহী পর্যন্ত নয়। পাল যুগ, গুপ্ত যুগ, সেন যুগ তাদের আগ্রহ জাগায় না। অজন্তার গুহাচিত্র বা দক্ষিণ ভারতের মন্দিরশৈলী নিয়ে তাদের গর্ব নেই। চেঙ্গিস খান, তুঘলক, ঘোড়ি বা মোঘলদের মত বিদেশী ঠগ, গুন্ডা, হানাদারদের নিয়ে তারা গর্বিত হয় কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে, দেশের সংস্কৃতিকে রক্ষাকারী শিবাজি, রানা প্রতাপ, বিজয়নগরের হরিহর ও বুক্কো, শশাঙ্ক কে নিয়ে তাদের গর্ব হয়না। একমাত্র সঙ্গীত ছাড়া ভারতের আর কোন কলা - সেটা নির্মাণ শিল্প হোক, রন্ধন শিল্প হোক বা সাহিত্য - সম্পর্কেই তাদের আগ্রহ ছিলনা। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে তাদের আগ্রহের কারণ হল আরবী সংস্কৃতিতে সঙ্গীতের কোন স্থান ছিলনা এবং দ্বিতীয়ত বহু সঙ্গীতশিল্পীই ভয়ে বা রাজঅনুগ্রহ লাভের জন্যে ইসলামের মতাবলম্বী হয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও তারা আশা করে যে হিন্দুদের উচিত ভারতমাতা ও দেবী সরস্বতীর নগ্ন ছবি আঁকা ফিদা হুসেনের ছবি দেখে মুগ্ধ হওয়া, ইকবালের মত হিন্দু বিরোধীর রচনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত হওয়া বা শায়েরী ও গজল শুনে "ওয়াহ ওয়াহ" করা।


ভারতের রাজনৈতিক শাসকদের এই ক্লীবতা এবং হিন্দু ধর্মগুরুদের সামাজিক দায়িত্ব সম্পর্কে নিস্পৃহতাই হিন্দুদের ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিয়েছে। ইসলামিক নিগ্রহকে তারা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত অমোঘ ও অপ্রতিরোধ্য ভেবে নিয়েছে। তাই ১৯৮২ সালে, NCERT রীতিমতো ঘোষণা করে ভারতের ইতিহাস পুনর্লেখনের নামে ইতিহাস থেকে ভারতের গৌরবময় ইতিহাসের কথা, বিশেষত গুপ্তযুগের কথা বিশদে বাদ দেয়ার জন্যে সার্কুলার জারি করলেও হিন্দুদের স্বাভিমানে সেটা আঘাত করেনা। অথচ বাস্তব হলো যে প্রত্যেকটা জাতিরই একটা স্বর্ণযুগ থাকে। চীনের ক্ষেত্রে মিঙ সাম্রাজ্য, জার্মানির বিসমার্ক, ইংল্যান্ডের এলিজাবেথের শাসনের মতই ভারতে গুপ্ত যুগ একটা স্বর্ণযুগ যখন প্রতিটা ক্ষেত্রে জাতির বিকাশ ঘটেছিল। একইভাবে, ১৯৮৯ সালে, তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার সার্কুলার দিয়ে ইতিহাস থেকে মুসলমান আক্রমণের বর্বরতার কথা মুছে দিতে চাইলেও হিন্দু সমাজ নীরব থেকে যায় কারণ দীর্ঘ পরিকল্পনার মাধ্যমে তার জাতীয় পরিচয়কেই মুছিয়ে দেয়া হয়েছে।


এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় যে আজ রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে, কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পরে, দেশের সামাজিক পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি ঘটেছে। না, রাজনৈতিক দলের উপর নির্ভর করে বা প্রশাসনের উপর ভরসা করে হিন্দুরা নিজেদের হৃতগৌরব ফেরাতে পারবেনা কিন্তু প্রদীপ জ্বালার আগে অন্তত সলতে পাকানোর কাজটা শুরু হয়েছে। যোগ বা আয়ুর্বেদের মত আবিস্কারের জন্যে বিশ্ব আবার ভারতের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নিজের হিন্দু পরিচয়কে accidental birth বলার বদলে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্ব প্রকাশ করছেন। তবে এতেই সন্তুষ্টির কোন যায়গা নেই কারণ এখনও বহু অসঙ্গতি রয়ে গেছে যেগুলো হিন্দু সমাজের জন্যে মঙ্গলকর নয়। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের সাথে সামাজিক ক্ষমতায়ন না হওয়া অবধি বিশ্রামের সুযোগ নেই।

Wednesday, March 30, 2022

মন্দিরে অহিন্দুর নাচে বাধা কতটা বৈধ?

কেরলের কম্যুনিস্ট সরকার নিয়ন্ত্রিত মন্দির কতৃপক্ষ অহিন্দু হওয়ার কারণে নৃত্যশিল্পী মানসিয়া দ্বারা মন্দিরে নাচ পরিবেশনে অনুমতি না দিলেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কিন্তু এক DNA-র কথা ভোলেনি। তাই তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত কোচির পাভাক্কুলম মন্দিরে সেই মানসিয়া'কে নৃত্য পরিবেশনের আহ্বান জানিয়েছে। হুঁ হুঁ, একেই বলে অরাজনৈতিক হিন্দু সংগঠন। তবে খ্রিষ্টান হওয়ার কারণে, মানসিয়া'র মত, সৌম্যা সুকুমারণও বিখ্যাত কুদালমাণিক্যম মন্দিরে নাচের অনুমতি না পাওয়ায় তাকেও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ তাদের নিয়ন্ত্রিত মন্দিরে নাচ পরিবেশনের আমন্ত্রণ পেয়েছেন কিনা জানা নেই।


সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা মানসিয়া'কে মন্দিরে নাচতে অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্তে মন্দির কর্তৃপক্ষকে কাঠগড়ায় তুলছেন তাদের জানা উচিত যে সংবাদমাধ্যমে যখন এই অনুষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল তখন স্পষ্ট জানানো হয়েছিল যে শিল্পীকে হিন্দু হতেই হবে। মানসিয়া সেটা দেখেও আবেদন করেন। এরপর কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এটা স্পষ্ট করতে চান যে তার স্বামী যেহেতু হিন্দু, তিনিও কি হিন্দু মতাদর্শে বিশ্বাসী। উত্তরে মানসিয়া লিখিতভাবে জানান যে তিনি কোন ধর্মে বিশ্বাস করেননা। এরপরেও যারা মন্দির কর্তৃপক্ষের কল্লা চাইছেন তারা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে যেতেই পারেন।


ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যকে মূলত চারটে ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত, আদি পর্ব, যেখানে নাচ মানে ছিল ভাব প্রকাশের মাধ্যম। হরপ্পা বা মহেঞ্জোদারো হোক অথবা বেদ বা উপনিষদ এমনকি খ্রীস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীর উদয়গিরি জৈন মন্দিরের দেয়ালেও এই মূদ্রা দেখা যায়। দ্বিতীয় পর্বের ব্যপ্তি মূলত খ্রীস্টপূর্ব নবম শতাব্দী থেকে দ্বিতীয় শতাব্দী পর্যন্ত এবং এই পর্যায়েই নাচ, নিছক ভাব প্রকাশের মাধ্যম থেকে, ঈশ্বরের উপাসনায় পরিণত হয়। এই সময়েরই বিখ্যাত নিদর্শন হল সাঁচি, ভজ, অমরাবতী, নাগার্জুনকোন্ডা এবং ইলোরার গুহাচিত্র। এই সময়েই দেবদাসী প্রথার উৎপত্তি হয় যারা মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের আরাধনার সঙ্গে সমানতালে নৃত্য পরিবেশন করতেন। পনের থেকে ষোল প্রকারের কলা দ্বারা তারা বিগ্রহের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করতেন। তৃতীয় কুলোতুঙ্গার রাজত্বকালে পুদুক্কোলতাই শিলালিপিতে এর বিবরণ আছে যা Marie Gaston তার Bharat Natyam: From Temple to Theatre বইতে উল্লেখ করেছেন।


তৃতীয় ভাগের বিস্তার প্রধানত খ্রীষ্টপূর্ব দশম শতক থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত। এই পর্যায়ে শাস্ত্রীয় নৃত্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রভাব প্রতিফলিত হয় এবং এই কালখন্ডেই শাস্ত্রীয় নৃত্য, শুধুমাত্র ঈশ্বরের উপাসনা থেকে একটা শিল্প এবং শিক্ষায় রূপান্তরিত হয়। চতুর্থ ভাগের সূত্রপাত হয় অষ্টাদশ শতাব্দী, অর্থাৎ ব্রিটিশ আক্রমণের পর থেকে। নাচের অনুষ্ঠানে যেহেতু জনসমাগম ঘটতো তাই সেটা শাসকের পক্ষে খুব একটা সুখকর ছিলনা। তাই ব্রিটিশ শিক্ষা শাস্ত্রীয় নৃত্যকে শিল্প হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করলো এবং সেই শিক্ষায় শিক্ষিতরাও শাস্ত্রীয় নৃত্যকে কালিমালিপ্ত করতে শুরু করলো। এরই পরিণতিতে শাস্ত্রীয় নাচ ধীরে ধীরে জনসমক্ষ থেকে সরে মন্দির, ধনীদের ব্যক্তিগত গৃহ ও বেশ্যালয়ে আশ্রয় লাভ করলো।


মন্দির গঠনেও নাচের প্রভাব অপরিসীম। দ্রাবিড়ীয় মন্দির নির্মাণের যে মূল তিনটি শৈলী- লয়ন, গুহধারা এবং গুহরাজা - সেগুলো প্রাপ্ত হয় ঋষি ভরত রচিত, ৩৭টি অধ্যায় সম্বলিত, প্রাচীন গ্রন্থ নাট্যশাস্ত্র থেকে। নাট্যশাস্ত্র'র প্রথম ভাগে রস, দ্বিতীয় ভাগে সাহিত্য আর তৃতীয় ভাগে গঠনশৈলী (architecture) নিয়ে বিশদে লেখা আছে। মন্দিরের নাট্যমঞ্চ কেমন হবে সেটার ব্যখ্যা দেয়া মন্ডপারিধনম অধ্যায়ে। প্রমোদ কালে তার The Theatric Universe বইতে বলেছেন যে সেই নাট্যমঞ্চ তৈরী হতো নর্তকীর দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, দর্শকদের নয়। নর্তকীদের গুরুত্ব দেয়ার কারণ হল তারা নাচের মাধ্যমে নিজেদেরকে বিগ্রহের প্রতিমূর্তি হিসাবেই তুলে ধরতেন। গঠন অনুসারে নাট্যমঞ্চগুলি ছিল ৬৪ হস্ত মাপের ত্রস্র, ৩২ হস্ত মাপের চতুস্র এবং ৩২x৬৪ হস্ত মাপের বিকৃষ্ট। হস্ত বা মুষ্টি হল ভারতে দৈর্ঘ্য পরিমাপের এক প্রাচীন একক। এক হস্ত মানে মোটামুটি ১৮ ইঞ্চি বা ৪৫ সেন্টিমিটার। 


যাইহোক, মূল কথা হল যে ভারতনাট্যম ও মন্দির, একে অপরের সাথে অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবধ্য। এমনকি ভারতনাট্যম শব্দবন্ধটিও গঠিত হয়েছে নাচের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় অনুসারে। ভা মানে ভাব বা আবেগ, রা মানে রাগ বা সুর ও বাদ্য, তা মানে তাল বা ছন্দ এবং নৃত্যম মানে নাচ। তাই নাট্যশাস্ত্র অনুযায়ী ভারতনাট্যম হল তাল ও বাদ্য সহযোগে নাচের দ্বারা আবেগ প্রকাশ। এক্ষেত্রে কেউ যদি সনাতন ধর্মের প্রতি আবেগই না রাখেন তাহলে তার নাচ অসম্পূর্ণ এবং ত্রুটিপূর্ণ। আর কে না জানে যে হিন্দুরা নিঁখুত জিনিস ব্যতীত কিছুই দেবতাকে নিবেদন করেন না।

Thursday, February 24, 2022

যুদ্ধের পরিণতি

কম্যুনিস্টদের চিরকালীন স্লোগান "লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই" আর যুদ্ধ শুরু হলেই সেই স্লোগান বদলে "যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই" এর ভনিতা মাথায় রেখেই বলছি যে আমি যুদ্ধের পক্ষপাতী নই। শুধু আমি কেন, আমার মনে হয় যুদ্ধের প্রতি আকর্ষণ কেবল তাদেরই রয়েছে যাদের পরিবারের কেউ কখনই যুদ্ধক্ষেত্রে যায়নি। সৈনিক যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত থাকে কিন্তু সে কখনও যুদ্ধ চায়না। দুর্ভাগ্যবশত, যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাটা সৈনিকের হাতে থাকেনা।


যুদ্ধ একেবারে অন্তিম পথ আর সেই পথ বেছে নেয়ার আগে, যাবতীয় বিকল্প পর্যালোচনা করে দেখা দরকার। এই কারণেই, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠার সময়েও স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, শান্তিদূত হয়ে, কৌরব রাজসভায় গিয়েছিলেন এবং পান্ডবদের প্রতি হওয়া যাবতীয় বঞ্চনার প্রতিদান হিসাবে মাত্র পাঁচটা গ্রাম প্রার্থনা করেছিলেন। কংস ও শিশুপালকে বধ করা শ্রীকৃষ্ণের এহেন সিদ্ধান্তে অখুশি হয়ে, দ্রৌপদী তাঁকে নিজের খোলাচুল দেখিয়ে, দুঃশাসনের রক্ত দিয়ে সেই চুল বাঁধার প্রতিজ্ঞা মনে করালে শ্রীকৃষ্ণ তাকেও তিরস্কার করে বলেন যে যুদ্ধ হলে যত সৈন্য নিহত হবেন, তাদের প্রাণের থেকে দ্রৌপদীর চুলের মূল্য বেশী নয়।


ভাবুন তো, অপারেশন পরাক্রমের সময়, "ইস বার আড়-পার কি লড়াই হোগি" বলে সৈন্যদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে, একটাও গুলি ছোঁড়ার আদেশ না দিয়ে, যখন ফিরিয়ে আনা হলো তখন দেখা গেল যে সেই কাজে, অপারেশন বিজয়, মানে কার্গিল বিজয়ের অভিযান থেকেও বেশী সৈন্য মারা গেছেন। সৌরভ কালিয়া, হেমরাজ, সন্তোষ বাবু, রাজেশ ওরাং, গঙ্গাধর দোলুই বা বিশ্বজিত ঘোড়াইয়ের মত অসংখ্য সৈনিক যারা দেশের হয়ে যুদ্ধে প্রাণ বলিদান দিয়েছেন তাদের কতজনের কথা আমাদের মনে আছে? ১৫ই আগস্ট আর ২৬শে জানুয়ারির দেশভক্তি বাকি ৩৬৩ দিন হারিয়ে যায়।


আর এটা দোষের নয়, বরং এটাই স্বাভাবিক। ঠিক ততটাই স্বাভাবিক শহীদদের পরিবারের তাদের সদস্যর অনুপস্থিতি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা। কেউ হারায় সন্তান, কেউ স্বামী আর কেউ তার বাবাকে। হ্যাঁ, এদের অনেকেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামরিক সম্মান পান কিন্তু সেটা কখনই তাদের উপস্থিতির বিকল্প নয়। অশোকচক্র খোদিত সার্টিফিকেট মানে সেটা রাজনৈতিক শাসনের স্বীকৃতি কিন্তু সমাজ কতদিন তাদের বলিদানকে মনে রাখে? কাশ্মীর হোক বা নকশাল অধ্যুষিত এলাকা - প্রায়শই শহীদ হন আমাদের জওয়ান, কতজন জানি তাদের কথা?


তাই যুদ্ধ হওয়া উচিত অন্তিম বিকল্প আর সেই যুদ্ধ এমন হওয়া উচিত যাতে সেই যুদ্ধের পরবর্তীতে বাকি সব যুদ্ধের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা খেলে, সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে, কর্পোরেট দুনিয়ার খবরদারি কাম্য নয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের আবহে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে বার্তালাপের উদ্যোগ নিয়েছেন আশা করি সেটা কার্যকর হবে এবং যুদ্ধের ছায়া কেটে যাবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে বর্তমানে যুযুধান পক্ষের কাছে যেসব মারণাস্ত্র আছে সেগুলি ব্যবহৃত হলে পরবর্তী যুদ্ধ কিন্তু আবার সেই তীর-ধনুক দিয়ে লড়তে হবে।

Tuesday, February 22, 2022

সম্মানের মূল্য

ল্যান্সনায়ক হেমরাজ, যার কাটা মুন্ডু নিয়ে ফুটবল খেলেছিল পাকিস্তান সেনা আর ২০১৪ সালে, নিজের নির্বাচনী প্রচারে, সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে, ভোট চেয়েছিলেন মোদী কিন্তু ক্ষমতায় আসার প্রায় আট বছর হতে চললেও সেই হেমরাজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি মোদী। বরং বিনা নিমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী, নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে। শুধু হেমরাজ কেন, পাঠানকোট, উড়ি বা পুলবামা'র কোন শহীদের পরিবারের সাথেই দেখা করেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোন সদস্য অথচ ৪৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ঔরঙ্গজেব জঙ্গীদের আক্রমণে শহীদ হওয়া মাত্রই তার বাড়িতে পৌছে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, নির্মলা সীতারমণ সহ তদানীন্তন সেনাপ্রধান, বিপিন রাওয়াত। তফাৎটা স্পষ্ট।


একইভাবে, ২০০৭ সালে রিজওয়ানুর হত্যার পরে, সেটা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী, মমতা ব্যানার্জী। পুলিশি অত্যাচার ও ভুয়ো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় করেছিলেন রাজ্য রাজনীতি অথচ খোদ তারই শাসনে, বাদুড়িয়ার নিতাই দাস, ভিন্ন ধর্মে প্রেম করার জন্যে, তাকে হত্যা করে, ব্লেড দিয়ে গায়ের চামড়া ছাড়িয়ে নিলেও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলে দেয় যে "আঘাতের কোন চিহ্ন নেই"। আবার সুদূর রাজস্থানে, আফ্রাজুল নিহত হলে, সেই মমতা'ই কেঁদে ওঠেন। একইভাবে, দাড়িভিটে, পুলিশের গুলিতে, রাজেশ আর তাপসের হত্যা নিয়ে টুঁশব্দ না করা মমতা ব্যানার্জীই এখন আনিশ খানের মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৎপর হয়ে উঠেছেন।


দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রবি, রুদ্রেশ, অঙ্কিত সক্সেনা বা কমলেশ তিওয়ারি'র মত জাতীয়তাবাদের হত্যা করা হলে বা পালঘাটে সাধুদের হত্যা নিয়ে এমনকি ভুয়ো NRC প্রক্রিয়ার পরিণতিতে, আসামে ডজনখানেক হিন্দুর আত্মহত্যা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী একটা কথাও বলেননা কিন্তু এক হতাশাগ্রস্ত বামপন্থী ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করলে সেটাতে তিনি ভারতমাতা কে সন্তানহারা হতে দেখেন।


এতগুলো কথা বলার কারণ একটাই, হিন্দুরা যাতে নিজেদের ভোটের মূল্য বুঝতে পারে। মুসলমান বা কম্যুনিষ্টদের ক্ষেত্রে একটা 'কৌম' ফ্যাক্টর কাজ করে যেটা হিন্দুদের ক্ষেত্রে ব্যপকভাবে অনুপস্থিত। 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান বা খয়রাতিতেই সন্তুষ্ট সমাজ কখনই নিজেদের প্রাপ্য পেতে পারেনা। অন্যকে দোষারোপ করতে পারে, বঞ্চনা নিয়ে হাহাকার করতে পারে কিন্তু সম্মান পেতে পারেনা।

Sunday, February 20, 2022

আমাদের দায়িত্ব

বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে Exclusion শব্দটার সংস্কৃতে কোন প্রতিশব্দ নেই, কারণ হিন্দুরা Inclusion এ বিশ্বাসী। আর এই কারণেই ৮০০ বছরের মুসলিম শাসন ও ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের পরেও ভারতবর্ষ ইসলাম বা খ্রিস্টানের অধীন হয়ে যায়নি, নিজের স্বরূপ বজায় রেখেছে।


ঠিক একইভাবে Secularism শব্দটারও কোন প্রতিশব্দ সনাতন সংস্কৃতিতে ছিলনা। ধর্মনিরপেক্ষতা নামক অনুবাদ এখানে প্রক্ষিপ্ত। অন্য সম্প্রদায়ের প্রার্থনাপদ্ধতি বা আচার-অনুষ্ঠানে বাধা দেয়ার মানসিকতা সনাতন ধর্মে কোনদিনই ছিলনা, তাই জোর করে ধর্মনিরপেক্ষতা ঢোকানোর দরকার হয়নি। ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ বা চার্চ হিন্দু রাজাদের অনুগ্রহের ফলেই তৈরি হয়। এই সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে ১৯৪৭ সালে, তথাকথিত, স্বাধীনতা লাভের পর যখন দেশের সংবিধানে ভারতের সংস্কৃতিকে সনাতন সংস্কৃতি বলে স্বীকৃতি দেয়ার বদলে মিশ্র অর্থাৎ খিচুড়ি সংস্কৃতি বলে অবিহিত করা হয়।


পৃথিবীর অন্য কোন দেশে আক্রমণকারীর সংস্কৃতিকে সেই দেশের সংস্কৃতি বলে মান্যতা দেয়া হয়নি। কিন্তু নেহরু, কালাম আজাদ, প্যাটেলরা সেই কাজটাই করেছিলেন নিজেদের মৌরুসিপাট্টা কায়েম রাখার স্বার্থে। সাথে পেয়েছিলেন নিজেদের বশংবদ কম্যুনিস্টদের। তাই সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল ২৫ থেকে ৩০ ধারা যেগুলো বিশেষ সুবিধা দিয়েছে কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের। এইভাবে, সম্পূর্ণ সাংবিধানিক বৈধতা পেয়েছিল হিন্দুদের প্রতি বঞ্চনা ও বিদ্বেষ। আর এই কাজে, কফিনে শেষ পেরেকটি মারেন ইন্দিরা গান্ধী যখন তিনি বিরোধী বিহীন সংসদে আইন পাশ করে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণা করে দেন।


এতগুলো কথা বলার কারণ একটাই, হিন্দুদের খ্রীষ্টমাস পালন। রামকৃষ্ণ মিশনে খ্রীষ্টমাস পালনে যারা গেল গেল রব তোলেন তাদের জানা দরকার যে এই পরম্পরা কিন্তু স্বয়ং বিবেকানন্দই শুরু করেছিলেন। আর তার কারণ ছিল হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষায় ভারতের হিন্দুদের নিস্পৃহতা। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর কাজের জন্যে যত অনুদান পেতেন সেটার সিংহভাগই আসতো বিদেশী ভক্তদের থেকে। সেই ভক্তরা খ্রিস্টান হলেও বিবেকানন্দের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষার জন্যে মুক্ত হস্তে দান করতেন। তাই তাদের খুশী করার জন্যে এবং সনাতন সংস্কৃতির Inclusive চরিত্র মেনে মিশনে খ্রীষ্টমাস পালন করতে বিবেকানন্দ কোন অন্যায় দেখেননি। 


আজও যারা মিশনে খ্রীষ্টমাস পালন নিয়ে বা ইস্কনে ইফতারের আয়োজন নিয়ে ফেসবুকে সোচ্চার হন তারা নিজেরা হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষায় ঠিক কত টাকা খরচ করেন? আবার বলছি, ধর্ম ও সমাজ রক্ষা, কোন রাজনৈতিক দলের ফান্ডে বা নিজের পরিবারের কল্যাণ কামনায় মন্দিরে পুজো দেয়ার কথা বলছিনা। উদাহরণ স্বরূপ, একজন হিন্দু নিজের ধর্মরক্ষার কাজে জেলে গেলে তার আইনি খরচের দায়িত্ব বা তার পরিবারের ভরনপোষণের দায়িত্ব, একজন বিধর্মী তার স্বধর্মে ফিরে আসলে তাকে কিছুদিন আশ্রয় দেয়ার দায়িত্ব, ইত্যাদি। মাসে ২০০-২৫০ টাকার ডাটা প্ল্যান মোবাইলে অ্যাক্টিভেট করে, ফেসবুকে জ্ঞান দেয়া ছাড়া তাদের অবদান কতটা? ডিজিটাল হিন্দু দিয়ে হিন্দু সমাজ বাঁচবেনা, দরকার ফিজিক্যাল হিন্দু আর যতদিন না সেই কাজ পূর্ণমাত্রায় শুরু হবে ততদিন অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার কোন অধিকার আমাদের নেই।

Monday, February 14, 2022

ভারতীয় না ভারতের?

আগেও বলেছি আর আবারও বলছি যে ভারতে বসবাসকারী হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে মিলনের ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা হল অসভ্য আরবী সংস্কৃতি ও মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ যা তাদেরকে বসবাসকারী দেশ ও সেখানকার সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বদলে সেটাকে অপমানিত করার ও ধ্বংস করার শিক্ষা দেয়।


ভারতের মুসলমানরা যদি এদেশে আগত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মত ভারতের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তাহলে তাদের পৃথক ধর্মাচরণ কখনই তাদের সাথে হিন্দুদের বৈরীতার সম্পর্ক তৈরি করবেনা। সনাতন ধর্মের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী, গৌতম বুদ্ধকে যদি হিন্দুরা বিষ্ণুর দশাবতারের একজন হিসাবে মেনে নিতে পারে তাহলে আমি, প্রসূন মৈত্র, গ্যারান্টি দিচ্ছি হিন্দুদের তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর সাথে মহম্মদকেও জুড়ে নিতে হিন্দুদের বিন্দুমাত্র আপত্তি থাকবেনা।


কিন্তু সেক্ষেত্রে একমাত্র শর্ত হলো এদেশের সনাতন ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে চলা। ব্যাপারটা এমন কিছু কঠিনও নয় কারণ বিশ্বের বৃহত্তম মুসলমান জনসংখ্যার দেশ, ইন্দোনেশিয়াতে আজও সনাতন সংস্কৃতিকে উপযুক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। তাদের উপাসনা পদ্ধতির ভিন্নতা কখনোই সংস্কৃতির পথে বাধা হয়ে যায়নি। ভারতে এই প্রথার একমাত্র বাধা হলো আরবি সাম্রাজ্যবাদ। অর্থের জোরে তারা ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের, ভারতীয় মুসলমানের বদলে ভারতের মুসলমান বানিয়ে রেখেছে।


ব্যাপারটা যদি একটু গোলমেলে লাগে তাহলে বোঝার জন্যে RSS-এর উদ্যোগে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ আর মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের উদাহরণ দেখুন। যতক্ষণ প্রাথমিক শব্দ রাষ্ট্রীয় ছিল ততক্ষণ এই সংগঠনের উদ্যোক্তারা বসে বসে মাছি মেরেছেন আর নাম বদলে মুসলিম-এ প্রাথমিকতা দেয়ার পরেই সংগঠনের ব্যপ্তি ঘটেছে। এটা আলাদা প্রশ্ন যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নামের মধ্যে হিন্দু শব্দ না থাকা সত্ত্বেও কেন আলাদা মুসলিম মঞ্চ তৈরী করতে হলো আর তৈরী করে কি বার্তা দেয়া হলো। একই যুক্তি কম্যুনিস্টদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা চিরকাল ভারতের of India) কম্যুনিস্ট পার্টি রয়ে গেল, কখনোই ভারতীয় (Indian) কম্যুনিস্ট পার্টি হতে পারলো না।

Thursday, February 10, 2022

জেহাদি পরিকল্পনা ও আপনার ভবিষ্যৎ

বিগত পাঁচ বছরে মাত্র ৬১০ জন কাশ্মীরী হিন্দু নিজেদের সম্পত্তি ফেরত পেয়েছেন। কাগজে সম্পত্তি ফেরত পেলেও, এদের মধ্যে কতজন, নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সুনিশ্চিত হয়ে, বাস্তবে সেই সম্পত্তিতে বসবাস করছেন সেই তথ্য প্রকাশিত হয়নি। তবে পাঁচ বছরে ৬১০ জন মানে প্রতি বছর গড়ে ১২০ জন মানে মাসে মাত্র ১০ জন।


ভাবুন, কেন্দ্রে গত সাড়ে সাত বছর ধরে নরেন্দ্র মোদী সরকার, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী, সারা দেশে জাতীয়তাবাদের জোয়ার অথচ তারপরেও দিল্লী নিরাপত্তা দিতে পারেনি কাশ্মীরের বিতাড়িত হিন্দুদের। এখন পরিকল্পনা হচ্ছে যে তাদেরকে ট্রান্সিট ক্যাম্পে রাখার ঠিক যেমন হিটলারের আমলে ইহুদিদের ঘেটো বানিয়ে রাখা হতো। কাশ্মীরের মূল ধারায় তারা কোনদিনই যুক্ত হতে পারবেনা যতদিন না কেন্দ্র সরকার, বাজপেয়ী প্রণীত ইন্সানিয়ৎ, জমহুরিয়াৎ আর কাশ্মীরিয়ৎ, যা আদতে ইসলামিয়তের মায়া থেকে বেরিয়ে, উপত্যকার জনবিন্যাসের ভারসাম্য ঘটাবেন।


দিল্লীর নাকের ডগায় থাকা কাশ্মীরে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছে তারা সুদূর পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারবে বলে এখনও বিশ্বাস করেন? জনসংখ্যার বিন্যাস বদল হওয়ার সাথে সাথেই পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম এগিয়ে চলেছে কাশ্মীর হওয়ার পথে আর কর্ণাটক, কেরালা রাজ্যগুলি এগিয়ে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ বা আসাম হওয়ার পথে। আজ থেকে দশ-পনেরো বছর আগেও, বারাসাত, বসিরহাট সহ রাজ্যের অন্যান্য সীমান্ত সন্নিহিত অঞ্চলে গিয়ে আপনি ক'জনকে বোরখা, হিজাব, লুঙ্গি বা টুপি পরে রাস্তায় চলতে দেখতেন? আজ সেই যায়গাগুলিতেই আবার গিয়ে দেখুন, বাজী রাখছি, মনে হবে বাংলাদেশে এসে গেছেন। এটাই ইসলামের বিস্তারের স্বাভাবিক নিয়ম। সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথেই নিজেদের আলাদা আইডেন্টিটি প্রকাশ হতে থাকে, দাবী বাড়তে থাকে।


কর্ণাটকের বোরখা বিতর্কও একই পরিকল্পনার অঙ্গ। ২০০১ সালের জনগণনাতে দক্ষিণ কর্ণাটকে, যে এলাকার একটি কলেজে ইদানীং বোরখা বিতর্ক শুরু হয়েছে, মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৪,১৮,৯০৪ জন অর্থাৎ ২২.০৭ শতাংশ আর ২০১১ সালেই সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫,০১,৮৯৬ জন অর্থাৎ ২৪.০২ শতাংশে। ২০২১ এর গণনা প্রকাশিত হলে দেখবেন সেটা হয়তো ২৬ শতাংশ পেড়িয়ে গেছে আর তাই এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে বোরখার দাবী ঠিক যেভাবে তেহট্টের বিদ্যালয়ে, নবী দিবস পালনের দাবীতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সরস্বতী পূজা। মহরমের জন্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খন্ডে স্থগিত করে দেয়া হয়েছিল দুর্গাপূজার বিসর্জন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে পশ্চিমবঙ্গে বিসর্জন বন্ধ করেছিল দিদি'র সরকার, ঝাড়খন্ডে বন্ধ করেছিল বিজেপি সরকার আর পাটনা'তে একই কাজ করেছিল বিজেপির শরীক, নীতিশ কুমারের সরকার।


এতকিছুর পরেও যদি আপনি আগত দিনের ছবি দেখতে না পারেন এবং রাজনৈতিক দল বা তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের উপরে ভরসা করেই নিজের ভাগ্য সঁপে দেন তাহলে আপনার চিন্তাশক্তি ও বাস্তববোধের উপর প্রশ্নচিহ্ন উঠতে বাধ্য। আপনার পরিবার ও সম্পত্তি রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব একান্তই আপনার। ফায়ার ব্রিগেড আছে বলে বাড়িতে যদি অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্থা না রাখেন তাহলে ক্ষতিটা আগুন বা সরকারের নয়, আপনারই হবে আর দায়টা আপনাকেই নিতে হবে।

Tuesday, February 8, 2022

আসন্ন বিপদ

২০০৭ সালে পেশ করা রঙ্গনাথ মিশ্র কমিটির রিপোর্ট অনুসারে, মুসলমান ও খ্রিষ্টানদেরও তপশিলি জাতিভুক্ত হওয়ার সুবিধা দেয়ার কথা বিবেচনা করছেন নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংবিধানের ৩৪১ নং ধারায় প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার অনুযায়ী বর্তমানে শুধু হিন্দু, শিখ আর বৌদ্ধরাই তপশিলি জাতিভুক্ত হিসাবে বিবেচিত হয়।


মিশ্র কমিটির রিপোর্টে, তপশিলি জাতি হিসাবে বিবেচিত হওয়ার মাপকাঠি হিসাবে ধর্মীয় পরিচয়কে গ্রাহ্য না করে, সব দলিতদেরই তপশিলভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১২ সালে মমতা ব্যানার্জী সরকারের পাশ করা OBC-A আইন অনুসারে, যে SC রা খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম SC সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে পিছনের দরজা দিয়ে সংরক্ষণের সুবিধা দেয়ার জন্যে OBC তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের দাবীতে আত্মদীপ-এর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলাটি এখনও আদালতের বিবেচনাধীন।


নরেন্দ্র মোদী সরকার যদি সত্যিই, মিশ্র কমিটির রিপোর্ট মেনে, মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের তপশিলি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে সেটার ফলে প্রকৃত তপশিলি জাতির ব্যক্তিরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। তপশিলি জাতিভুক্তদের অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্যে পাশ করা সংবিধানের ৩৪১(১) ধারাও এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপন্ন হবে। সুনীতা সিং বনাম উত্তর প্রদেশ ও অন্যান্য মামলায় [(2018) 2 SCC 493] সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে "the caste or community of a person is to be decided on the basis of her/his birth in the said community" মানে কোন ব্যক্তির জাত ও সম্প্রদায় নির্ধারিত হবে সেই সম্প্রদায়ে তার জন্মের ভিত্তিতে।


যদিও তথাকথিত লিবারেল, যারা জাতের প্রসঙ্গ উঠলেই মনুবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদকে গালাগালি করে আর এই প্রথা প্রচলনের জন্যে হিন্দু ধর্মকে ছোট দেখায় এবং জাত-পাত বিহীন উদার ধর্ম হিসাবে ইসলাম বা খ্রিষ্ট ধর্মের তুলনা টানে, তারা অবশ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে কোন অন্যায় দেখবেনা আর হিন্দুত্বের নামে ভোটের একচ্ছত্র অধিকার নিয়ে বসে থাকা বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্ত বলে বহু হিন্দুত্ববাদী এই সিদ্ধান্তে কোন অন্যায় দেখবেনা কিন্তু এর ফলে তপশিলি জাতিভুক্ত ব্যক্তিদের অধিকার ও সীমা শুধু খর্ব হবে তাই নয়, এটা বাস্তবায়িত হলে তাদের প্রতিযোগিতা হবে সেই তপশিলি জাতিভুক্তদের সাথে যাদের কাছে সংখ্যালঘু নামক একটা বাড়তি রক্ষাকবচ আছে। ফলে, শিক্ষা হোক কর্মসংস্থান, সব যায়গাতেই থাবা বসাবে নব্য তপশিলিরা আর সঙ্কুচিত হতে থাকবে প্রকৃত তপশিলিদের, যাদের সুরক্ষা ও অগ্রগতির জন্যে এই আইনের সৃষ্টি, স্থান। মমতা হিন্দু OBC দের ভাগ কাটবেন, মোদী SC দের ভাগ কাটবেন আর সাধারণ মানুষ রাজনীতির উপর ভরসা করেই নিজেদের সঁপে দেবেন আর ভাগ্যকে দোষারোপ করবেন।


https://m.economictimes.com/news/india/centre-mulls-panel-to-explore-scheduled-caste-benefits-for-muslim-christian-dalits/articleshow/89104198.cms