Thursday, April 21, 2022

সামাজিক কার্যকর্তার প্রয়োজনীয়তা

আজ থেকে ঠিক চার বছর আগে, আজকের দিনেই, উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের রাড়িয়া গ্রামে আয়োজিত এক জনসভাতে তপন'দার বক্তব্য ছিল যে "যুগে যুগে সমাজের জন্যে হিন্দু নেতা দরকার। রাজনীতি ও ক্ষমতায় গেলে সেই হিন্দু নেতা পরিচয়টা আর থাকবে না। রাজনৈতিক নেতা সমাজের প্রয়োজন মেটাতে পারেনা"।


এই বিষয় নিয়ে, কিছুদিন আগে, এক ভাতৃসম বন্ধুর সাথেও তার একটা পোস্টে আলোচনা হচ্ছিল। তার বক্তব্য ছিল যে সামাজিক পরিবর্তনের জন্যে সামাজিক কার্যকর্তাদের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন। সেটা করলেই, তার দাবী অনুযায়ী, সমাজের পরিবর্তন সম্ভব। আমি তার দাবীর সাথে সহমত হতে পারিনি কারণ রাজনীতির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো যেকোন উপায়ে ক্ষমতা দখল করা। সমাজ সংস্কার রাজনীতির কাজ নয়, তার কাজ হলো বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতিকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা। ফলে, কোন সামাজিক কার্যকর্তা যখনই রাজনীতির মঞ্চে যাবেন দলীয় নীতি অনুযায়ী তারও প্রাথমিক লক্ষ্য হবে রাজনৈতিক লাভ। সেই ভাতৃসম বন্ধুর কথা যদি তর্কের খাতিরে মেনেও নেই যে রাজনীতিতে গেলেই নীতি নির্ধারকের ভূমিকা লাভ করতে পারবে সেক্ষেত্রে সেই পর্যায়ে পৌছানো পর্যন্ত তাকে নিজের সামাজিক দায়িত্বর বদলে রাজনীতিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। কিন্তু এতেও নিশ্চয়তা নেই যে সেই ব্যক্তি দলে নীতি নির্ধারকের ভূমিকা লাভ করবেন কারণ তার সাথে, তারই মত আরও অনেকেই লাইনে থাকবে। আর সেই লাইনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে শুধু নিষ্ঠাই যথেষ্ট নয়, অর্থ, যোগাযোগ, শীর্ষস্থানীয়দের নেকনজর ইত্যাদি বহু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলতঃ, কোন একদিন রাজনীতিতে নীতি নির্ধারক হতে পারেন এই সম্ভাবনার ভিত্তিতে, মানে সম্পূর্ণ ভাগ্যের ভরসায়, সেই সামাজিক কার্যকর্তাকে নিজের সামাজিক দায়িত্বর বদলে রাজনীতি নিয়ে চলতে হবে।


সমাজের স্বার্থ নিয়ে সচেতন কোন কার্যকর্তা এই জুয়া খেলায় যোগ দিতে আগ্রহী হবেন না যদিনা তারা অর্থলোভী হন অথবা কোন পদ লাভের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্খা থাকে। এই কারণেই কোন একটা রাজনৈতিক দলের রঙ গায়ে লাগা মাত্রই সে আর হিন্দু নেতা থাকতে পারেনা, দলের নেতা হয়ে যায়। আর সেই দলের নেতা হিন্দুদের যতই রক্ত গরম করার ভাষণ দিন না কেন, তার সেই বক্তব্যের জন্যে দল বিরম্বনায় পড়লে তাকেই পিছু হাঁটতে হয়।


এই সহজ সত্যটা বুঝতে পেরেছে বলেই মুসলমানদের কোন সামাজিক বা ধর্মীয় নেতা সচরাচর প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যোগ দেন না, বরং রাজনীতিকে ব্যবহার করে কিভাবে নিজেদের সমাজের সুবিধা করে নেয়া যায় সেটা নিয়ে নিজেদের সমাজকে প্রশিক্ষণ দেন। তাই আজ তারা তথাকথিত সংখ্যালঘু হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সরকারি সুবিধা বা প্রকল্পের লাভ পুরোপুরি নিতে পারেন। শাসকের জামার রঙের থেকে কৌমের স্বার্থ রক্ষা তাদের কাছে বেশী দরকারী। তাই OBC-A সংরক্ষণ থেকে মুসলমানদের UPSC পরীক্ষার জন্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ, বিমানে জমজমের পানি আনা থেকে শাদী শগুনের উপহার - সবই তারা আদায় করে নিয়েছে। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর মত কয়েকজন ব্যতিক্রম থাকলেও লক্ষ্য করে দেখবেন, জামায়েতের নেতা হিসাবে যে সিদ্দিকুল্লার এত দাপট ছিল যে তার সভায় IPS দের পিটালেও শাস্তি হতনা সেই লোকই মন্ত্রী হওয়ার পরে হারিয়ে গেছেন।


এই কারণেই, তপন'দার মত, আমিও বিশ্বাস করি যে সামাজিক ও ধর্মীয় কার্যকর্তাদের প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে যাওয়া উচিত নয় বরং তাদের দায়িত্ব হলো সমাজকে এমন সশক্ত করা যাতে সমাজ দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক ক্ষমতার সুবিধা নিতে পারে। একজন রাজনৈতিক নেতার কার্যকাল ও পরিকল্পনার ব্যপ্তি একটা নির্বাচন থেকে পরের নির্বাচন পর্যন্ত কিন্তু একজন সামাজিক কার্যকর্তাকে অনেক বেশী দূরদর্শী হতেই হয়।

No comments:

Post a Comment