Friday, April 30, 2021

বিরোধী দলের দায়িত্ব

সাল ১৯৯৬। একাদশ লোকসভা নির্বাচনের শেষে, ১৬১ টা আসন নিয়ে, লোকসভার বৃহত্তম দল হিসাবে রাষ্ট্রপতির থেকে সরকার গঠনের নিমন্ত্রণ পেলেন অটল বিহারি বাজপেয়ী এবং দেশের দশম প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিলেন।

শপথ গ্রহণের পর, প্রথাগতভাবেই, বাজপেয়ীকে লোকসভায় নিজের সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে বললেন তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শঙ্কর দয়াল শর্মা এবং সেই অনুযায়ী লোকসভাতে আস্থা প্রস্তাব পেশ করলেন বাজপেয়ী। লোকসভার যোগ্যতম ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও, রামমন্দির পুনঃনির্মাণকে সমর্থন করা, বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর পাশে শিবসেনা ও অকালি দল ছাড়া ছিলনা আর খুব বেশী দল। ফলে, সরকারের পতন অনিবার্য ছিলই কিন্তু তখন লোকসভার কার্যকলাপের সরাসরি সম্প্রচার দূরদর্শনে শুরু হয়ে যাওয়ায় আস্থা ভোটের সময়, কংগ্রেস ও কম্যুনিস্টদের নোংরা রাজনীতিকে জনগণের সামনে স্পষ্ট করে দেয়ার এই সুযোগ ছাড়লেন না বাজপেয়ী এবং আদবানী। আস্থা ভোটের স্বপক্ষে বলতে উঠে কংগ্রেস ও কম্যুনিস্টদের একের পর এক উলঙ্গ করে দিলেন আদবানী, প্রমোদ মহাজন, অরুণ জেটলী, সুষমা স্বরাজরা।

যাবতীয় আলোচনার শেষে, জবাবী ভাষণ দিতে উঠলেন বাজপেয়ী এবং তার স্বভাবসিদ্ধ, অননুকরণীয় ভঙ্গিমায়, লোকসভাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখলেন। তার সেই ভাষণ এখনও ইউটিউবে আছে, আগ্রহীরা দেখতেই পারেন। কিন্তু যে কারণে এই লেখা এবার সেখানে আসছি। ভাষণের শেষে এসে বাজপেয়ী ঘোষণা করলেন যে তিনি আস্থা প্রস্থাব ফেরত নিয়ে নিচ্ছেন আর রাষ্ট্রপতির কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দিতে যাচ্ছেন। এরপরেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যার জন্যে এই লেখা। পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করার পর, নিজস্ব ভঙ্গিতে কিছুটা বিরতি নিয়ে, বাজপেয়ী পুনরায় বললেন যে, "আজ আপনারা, যারা নির্বাচনে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়েছেন, তারাই এখন জোট বানিয়ে, জনগণ দ্বারা নির্বাচিত বৃহত্তম দলকে সরকার থেকে সরিয়ে দিতে পারেন কিন্তু আমরা সবাই এই কক্ষেই থাকবো আর আপনাদের জগাখিচুড়ি সরকারের প্রতিটা সিদ্ধান্তের উপর কড়া নজর রাখবো। মনে রাখবেন, সরকারে থাকি বা বিরোধী আসনে, জনগণের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ চালিয়ে যাবো"। এই বলে বাজপেয়ী লোকসভা থেকে বেড়িয়ে গেলেন রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশ্যে। 

আগামী ২রা মে, নির্বাচনের ফল যে দলের পক্ষেই যাকনা কেন, বিরোধী দলে কি এমন নেতৃত্ব পেতে পারিনা যারা বাজপেয়ীর মত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে পারবেন যে সরকারে নাই বা থাকলাম, কিন্তু বিরোধী আসনে বসেও আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা পালন করে যাবো? সফল গণতন্ত্রের জন্যে কিন্তু শক্তিশালী শাসকের সাথে শক্তিশালী বিরোধী দল থাকাটাও অনিবার্য।

Thursday, April 29, 2021

শেষ হাসি কে হাসবেন?

গতিসূত্রের নিয়মানুসারে, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ না করলে, পদার্থের যে ধর্মের জন্য কোনো স্থির বস্তু বা গতিশীল বস্তু যে অবস্থায় আছে সে সেই অবস্থায় বজায় রাখার চেষ্টা করে, সেই ধর্মকে পদার্থের জাড্য ধর্ম বা জড়তা বলে। অর্থাৎ জড়তা, স্থিতি বা গতি, দু'রকমই হতে পারে।

এবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনের নিরিখে ভাবতে গেলে, তৃণমূল চাইবে যাতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে আর বিজেপি, স্বাভাবিকভাবেই, চাইবে যে ২০১৯ এ তারা যে গতি লাভ করেছিল সেটা ধরে রাখতে। এখানে একটা মজার ব্যাপার হল যে, গতিসূত্রের নিয়মানুসারে, বিজেপি কেবল নিজের গতি ধরে রাখলেই ক্ষমতা পাবেনা, তাকে গতি বাড়াতে হবে। তারমানে ২০১৯ এ যেখানে যে'কটা জিতেছে সেটা ধরে রাখার সাথে সাথে বাড়তি আসনে জিততে হবে আর এই জয় নিশ্চিত করার জন্যে তাদের তুরুপের তাস ছিল ভোটারদের ধর্মীয় মেরুকরণ করা আর তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরানো। দয়া করে কেউ বিকাশের কথা বা সোনার বাংলার কথা বলবেন না, সেটা যদি প্রাথমিকতা হতো তাহলে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচনের মাত্র ৫ দিন আগে 'সংকল্প পত্র' প্রকাশ করা হতনা।

উল্টোদিকে, তৃণমূলের আগ্রহ স্বাভাবিকভাবেই ছিল নির্বাচকদের একটা feel good অনুভূতি দেয়া যাতে তাদের মধ্যে স্থিতি জাড্য কাজ করে। নির্বাচনের আগে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বা দুয়ারে সরকার নিয়ে প্রচার এই লক্ষ্যেই করা হয়েছে। কিন্তু তৃণমূলের পক্ষে নেগেটিভ ফ্যাক্টর ছিল সংখ্যালঘু তোষণ এবং দলের বিভিন্ন স্তরে মাত্রাহীন দুর্নীতি। নারদা কান্ডে দলের শীর্ষ স্তরের দুর্নীতি প্রকাশিত হওয়ার পরেও সাধারণ মানুষ তৃণমূলকে রেকর্ড আসনে জিতিয়েছে কারণ সেটা তাদের সরাসরি স্পর্শ করেনি কিন্তু কোভিড ও আম্ফান পরবর্তী ক্ষেত্রে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেগুলির ফলে সাধারণ মানুষ প্রভাবিত হয়েছেন আর তাদের ক্ষোভ বেড়েছে।

আজ অষ্টম পর্যায়ের নির্বাচন শেষ হয়ে যাওয়ার পর এটা স্বীকার করতে কোন বাধা নেই যে বিজেপি নির্বাচনে মেরুকরণের লক্ষ্যে অনেকটাই সফল, বিশেষত সেই যায়গাতে যেখানে জেহাদি আগ্রাসনের প্রভাব বেশী কিন্তু একইসাথে, শীতলকুচির ঘটনা এবং তারপর বিজেপি নেতাদের মাত্রাছাড়া বয়ানবাজির ফলে সংখ্যালঘু ভোট পুনরায় জোটবদ্ধ হয়েছে মমতা ব্যানার্জীর পিছনে। আগেই বলেছিলাম যে শীতলকুচি নিয়ে লাগামহীন বক্তব্য ওয়াটারলু হতে পারে, আর সেটাই হয়েছে।

ফলে, দিনের শেষে এটাই সত্যি যে তৃনমুল তার স্ট্র‍্যাটেজীতে লেগে থাকলেও বিজেপি তার স্ট্র‍্যাটেজিতে ব্যর্থ হয়েছে আর তার পরিণতিতে শেষ হাসি যদি মমতা ব্যানার্জীই হাসেন তাহলে আমি অবাক হবনা।

Tuesday, April 27, 2021

অনির্বানের বিরম্বনা

বলেছিলাম না, ঠ্যালায় না পড়লে বিড়াল গাছে ওঠেনা। আজ নির্বাচনের প্রাক্কালে অনির্বান বাবু বুঝেছেন যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একটা অপদার্থকে, বিশ্বভারতীর মত একটা ঐতিহ্যবাহী সংস্থার উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করা এবং তার বিভিন্ন অন্যায়কে চোখ বুজে মেনে নেয়ার পরিণতি কি।

গত আগস্ট মাসে, শান্তিনিকেতনের অলিতে-গলিতে ঘুরে আর এলাকাবাসীর সাথে কথা বলেই বুঝেছিলাম যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে বিশ্বভারতীর উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ একটা কলঙ্কিত ঘটনা। লোকটা তার নিজের ইগোর কারণে প্রতিষ্ঠানের সম্মান, নান্দনিকতা এবং ঐতিহ্যকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এলাকার বিভিন্ন যায়গায় জেলের মত পাঁচিল তোলা হোক বা সেই পাঁচিল নির্মানের কাটমানি খাওয়া, প্রার্থনাগৃহকে কারাগার বানানো হোক বা প্রতিবাদী কন্ঠস্বরকে বহিস্কার করা, বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সব অপরাধকে এতদিন চোখ বুজে মেনে নিয়েছে কেন্দ্র সরকার। স্বপন দাশগুপ্ত বাবুকে দিয়ে, CAA এর সমর্থনে একটা সভা দেখেই বিজেপি নেতৃত্ব ভেবে নিয়েছিল যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তী দারুণ জাতীয়তাবাদী। তাই আমি বারবার কেন্দ্র সরকার ও বিজেপি নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সত্ত্বেও তারা বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। একজন নেতা তো আমাকে এটাও বলেছিলেন যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর 'জ্যাক' নাকি অনেক উপরে লাগানো আছে। কিন্তু তারা বুঝতে পারেননি ধান্ধাবাজ কখনও জাতীয়তাবাদী হতে পারেনা, তার সব কাজেরই লক্ষ্য থাকে নিজের ধান্ধার পথ পরিস্কার রাখা। 

আজ ঠেলায় পড়ে, অনির্বাণ বাবু যতই উপাচার্যের সমালোচনা করুন এটা অস্বীকার কোন যায়গা নেই যে এই ভস্মাসুরের সৃষ্টি তারাই করেছেন আর এখন নিজেরা যখন সেই ভস্মাসুরের ছোঁয়া পেতে চলেছেন, তখন দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন। ২০১৯ সালের পৌষ মেলায় স্টল দেয়ার জন্যে ব্যবসায়ীদের থেকে নেয়া সিকিউরিটি মানি আজ থেকে আটকে নেই অনির্বান বাবু, এই ইতিহাস অনেক পুরনো। In fact, তাদের সিকিউরিটি মানির ৫০% আটকে রেখেছিল এই বিদ্যুৎ চক্রবর্তী আর গত সেপ্টেম্বর মাসে, আমি সেই বিষয়ে যাবতীয় তথ্য আমার ফেসবুক লাইভে তুলে ধরার পর, ৩০% টাকা ফেরত দেয়া হয়।

অনির্বান বাবু, গত আগস্ট থেকে আমি যখন ধারাবাহিক ভাবে উপাচার্যের বিভিন্ন অন্যায়কে তুলে ধরছি তখন আপনার দলের সমর্থকেরাই আমাকে তৃণমূল বলে দাগিয়েছিল। তাই আজ যখন আপনি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতার কথা বলছেন, ভারী মজা লাগছে। তবে দায় শুধু কেন্দ্র সরকার ও বিজেপির নয়, কলকাতা হাইকোর্টও এই মামলায় একদেশদর্শী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোন অজ্ঞাত কারণে, এই মামলাতে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা আক্ষরিক অর্থেই miscarriage of justice। আত্মদীপ সেই মামলার সাথে যুক্ত এবং সেই রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাওয়ার রাস্তা আমাদের এখনও খোলা আছে। তবে আপনার ক্ষেত্রে অনেক দেরী হয়ে গেছে, অনির্বাণ বাবু। আজ যতই বলুন যে শিক্ষা মন্ত্রক উপাচার্যের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে, এতে বরফ গলবে না। You have missed the bus, Sir.

https://react.etvbharat.com/bengali/west-bengal/state/birbhum/bengal-election-2021-anirban-ganguly-the-bjp-candidate-of-bolpur-pressmeet-against-visva-bharati-vice-chancellor/wb20210427123308687

Wednesday, April 21, 2021

রাম নবমী

হিন্দু শাস্ত্র বলে যে "শিবং ভূত্বাঃ শিবং যজেৎ" অর্থাৎ শিবের পূজা করার জন্যে নিজেদেরও শিবের মত হতে হবে। একই কথা রামনবমী উদযাপনের জন্যেও প্রযোজ্য, শ্রী রামের বন্দনা করতে হলেও নিজেদেরকেও তাঁর আদর্শে গড়ে তুলতে হবে, নাহলে সেই পূজা অসম্পূর্ণ।

শ্রী রাম কোন ঈশ্বর ছিলেননা, তিনিও আমাদের মতই রক্তমাংসের মানুষ ছিলেন। কিন্তু নিজ চরিত্র, কর্ম ও আদর্শের দ্বারা তিনি দেবত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন। তাই শ্রী রামের আরাধনা করতে হলে তিনি যেভাবে গুহক চন্ডালের মত সমাজের, তথাকথিত, নিম্নশ্রেণীর ব্যক্তিদের আপন করে নিয়েছিলেন আমাদেরও সেই আদর্শে ব্রতী হতে হবে। শ্রী রাম যেভাবে অবহেলিত বানরসেনাদের যোগ্য সম্মান দিয়ে তাদের ক্ষত্রিয়করণ করেছিলেন, আমাদেরও সমাজের অবহেলিত ক্ষত্রিয়সমাজকে যথাযোগ্য সম্মান দিতে হবে। শ্রী রাম যেভাবে সেতুবন্ধনের মত আপাত অসম্ভব কাজকে রূপায়িত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন এবং সেটা বাস্তবায়িত করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন আমাদের মধ্যেও সেরকম উদ্যমের বিকাশ ঘটাতে হবে। শ্রী রাম যেভাবে তাঁর স্ত্রীর অপহরণের জন্যে পরাক্রমশালী রাবণের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করতে পিছপা হননি আমাদেরও তেমনি নিজেদের ঘরের মহিলাদের সম্মানরক্ষা করার মূল্য চোকাতে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আজকের দিনে জেহাদিরা আমাদের মাটি দখল করছে, মা-বোনের সম্মানহরণ করছে আর তাদের পিছনে আছে তাদের কৌমের উম্মাহ। খ্রিস্টান মিশনারীরা আমাদের বনবাসী সমাজকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করছে আর তাদের পিছনেও আছে তাদের ধর্মীয় প্রেরণা। আমাদের শ্রী রামের বন্দনা তখনই সার্থক হবে যখন আমরা আজকের দিনের এই রাবণদের বিরুদ্ধে  সাহস ও শক্তি অর্জন করে তাদের ধ্বংস করার সক্রিয়তা দেখাতে পারবো। শুধুমাত্র শ্রী রামের নামে শোভাযাত্রা করে আর টিনের তলোয়ার হাতে সেল্ফি নিলেই সেই দায়িত্ব সম্পূর্ণ হবেনা।

জয় শ্রী রাম। 

Tuesday, April 20, 2021

করোনা টিকা

করোনা টিকা নিয়ে যে যার খুশী পিঠ চুলকাতে পারে কিন্তু বাস্তব হলো যে প্রয়োজনের তুলনায় টিকার সরবরাহ যথেষ্ট কম। CoWin নামক সাইটটা ঠিক কিসের ভিত্তিতে চালানো হচ্ছে সেটা খোদায় মালুম। CoWin সাইটের নির্দিষ্ট স্লট অনুযায়ী, গতকাল বিকেলে মা আর বড়মাকে দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকা দেয়ার জন্যে স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে  গিয়ে শুনলাম যে টিকা শেষ। নির্দিষ্ট বুকিং থাকা সত্ত্বেও টিকা কিভাবে শেষ হলো তার উত্তর কারুর কাছে নেই। তাদের পরামর্শ হলো যে "কালকে সকাল ১১টা নাগাদ আসুন, পেতে পারেন"। অগত্যা আজ সকাল ১১টা নাগাদ আবার গেলাম, গিয়ে দেখি অন্তত ২০০ লোকের লাইন আর আশেপাশে আরও কয়েকজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। শুনলাম ওখানে নাকি সবাই ভোরবেলা থেকে লাইন দিয়ে রাখেন। ভোরবেলায় গিয়ে যদি লাইনেই দাঁড়াতে হবে তাহলে CoWin এর কি দরকার?

স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিকার আশা ছেড়ে CoWin সাইটে আবার Reschedule করতে বসলাম। দেখা গেল যে কাছাকাছির মধ্যে, ব্যারাকপুর টেকনো গ্লোবাল হাসপাতালে, ২৮শে এপ্রিল টিকার স্লট খালি আছে। স্লট বুক করে, হাসপাতালে ফোন করে শুনলাম যে আপাতত তাদের স্টকে কোন টিকা নেই, কবে আসবে সেটা জানেননা, আমি যেন এক সপ্তাহ পরে আবার ফোন করে খবর নিয়ে তারপর স্লট বুক করি। CoWin সাইটে স্লট দেখানো সত্ত্বেও হাসপাতালে টিকা না থাকার দায়িত্বটা ঠিক কে নিচ্ছে? সবটাই কি রাম ভরোসে?

টেকনোতে আশাহত হওয়ার পর এবার একটু বড় যায়গাতে হয় কিনা দেখার জন্যে ফোন করলাম অ্যাপেলো গ্লেনঈগলস হাসপাতালে। সেখানে অপারেটর জানালেন যে যেদিন টিকা নিতে চাই সেদিন সকালে ফোন করে খোঁজ নিতে হবে যে টিকা আছে নাকি নেই। থাকলে সেদিনই যেতে হবে। আর হ্যাঁ, যেতে যেতে যদি টিকা ফুরিয়ে যায় তাহলে কিছু করার নেই। মানে, টিকা আছে শোনার পর, আমি দু'জন বয়স্ক নাগরিককে নিয়ে হালিসহর থেকে কলকাতা যাবো এই প্রার্থনা করতে করতে যাতে টিকা শেষ না হয়ে যায়। অসাধারণ!

এরমধ্যেই আবার সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ১৮+ হলেই নাগরিকরা এবার টিকা পাবেন। মানে, যাদের এক পর্যায়ের টিকা নেয়া হয়ে গেছে তাদের দ্বিতীয় পর্যায়ের টিকা সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকলেও শুধু সস্তা জনপ্রিয়তার জন্যে টিকা তালিকাতে যোগ করা হলো আরও কয়েক কোটি মানুষের নাম। চিন্তায় পড়ে গেছি যে করোনার প্রতিষেধক বা প্রতিরোধক আসলে কোনটা, টিকা নাকি টিকা তালিকায় নাম থাকা?

Thursday, April 15, 2021

ভোটরঙ্গ

জনগণ সাধারণগত দুটি কারনে ভোট দেন- ১) কোন দলের কাজে খুশি হয়ে সেই দলের পক্ষে ভোট। এটা পজিটিভ ভোট। আর ২) কোন দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে সেই দলের বিরুদ্ধে ভোট। এটা নেগেটিভ ভোট। পজিটিভ ভোটের ক্ষেত্রে দল নির্দিষ্ট থাকলেও নেগেটিভ ভোটের কিন্তু সেরকম কোন দল নেই। যে দলের বিরুদ্ধে মানুষ বীতশ্রদ্ধ, সেই দলকে হারানোর জন্যে বিভিন্ন এলাকার মানুষ সেই এলাকায় যে দল শক্তিশালী বিকল্প হতে পারে, তাকেই ভোট দেয়।

শাষক দল বরাবরই চেষ্টা করে পজিটিভ ভোট করানোর আর তাই আদর্শ নির্বাচনী বিধি বলবৎ হওয়ার আগে পর্যন্ত সরকারী খরচে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিজেদের সাফল্যের খতিয়ান প্রচার করে। ভোট প্রচার পর্বেও তারা পজিটিভ ভোটের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করে। উল্টোদিকে, বিরোধী দলগুলির চেষ্টা থাকে নেগেটিভ ভোটের সংখ্যা যাতে বেশি হয়। 

এই চিরাচরিত পদ্ধতির ব্যতিক্রম দেখা গিয়েছিল ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের সময়। তখন ক্ষমতাশীল কংগ্রেস নিজের পজিটিভ ভোট বাড়ানোর বদলে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভোট তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। উল্টোদিকে নরেন্দ্র মোদী বিরোধী দলের হয়েও তাঁর প্রচারে জোর দিয়েছিলেন বিজেপির পজিটিভ ভোট তৈরি করতে। ফলাফল কি হয়েছিল আজ সেটা ইতিহাস।

এরাজ্যে এবারের বিধানসভা নির্বাচনেও এরকমই এক নতুন সমীকরণের খেলা চলছে। শাসকদল হিসাবে তৃণমূল কংগ্রেস শুরুতে পজিটিভ ভোট তৈরির চেষ্টায় থাকলেও ক্রমেই সেটা পরিণত হচ্ছে বিরোধী দলগুলির, থুড়ি, এখন তো রাজ্যে আর বিরোধী দলগুলি বলা যাবেনা কারণ দিদি ইতিমধ্যেই অপারেশন সূর্যোদয়ের ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব বাবুকে সার্টিফিকেট দিয়ে দিয়েছেন, তাই বলা ভাল যে বিজেপির বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভোট তৈরির প্রচেষ্টায়। শাসকদল যখন পজিটিভ থেকে নেগেটিভ ভোটকে বেশি গুরুত্ব দেয় তখন এটা বোঝা যায় যে তার পায়ের তলার মাটি সরতে শুরু করেছে। 

২০১৬ সালে মমতা ব্যানার্জীর সৌভাগ্য ছিল যে এরাজ্যের মানুষের মনে সিপিএমের প্রতি বিদ্বেষ তখনও এতটাই তীব্র যে তিনি সেই সেন্টিমেন্টের জোরেই সেবারের মত বৈতরণী পার হয়ে গেছেন। কিন্তু তার সরকারের মুসলিম তোষন নীতি যে রাজ্যের জনগণ ভালভাবে মেনে নেয়নি তার প্রমান যে হিজাব পরে মুসলিমদের জন্যে দানছত্র খোলার পরেও আজ মমতাকেও নিজের হিন্দু পরিচয় জাহির করতে হচ্ছে কারণ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতির আকাশে বিজেপির আবির্ভাব। 

বিজেপির আবির্ভাবের সাথে সাথেই, এই রাজ্যে যে 'হিন্দু ভোট' বলেও একটা বিষয় হতে পারে সেটা উপলব্ধি করেছেন সাধারণ মানুষ। না, ব্যাপারটা এমন নয় যে রাজ্য বিজেপির নেতারা দারুণ হিন্দু হিতৈষী বা হিন্দুদের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়েন, বরং তারা তো এতটাই উদার যে নিজেদের দলীয় কর্মীকে খুনের দায়ে অভিযুক্তকেও সাদরে বুকে টেনে নেন। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে এরপরেও হিন্দুরা বিজেপির উপর ভরসা করছে কেন বা বিজেপির প্রভাব বাড়ছে কেন, উত্তর একটাই - নরেন্দ্র মোদী। হ্যাঁ, এটা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন হলেও বিজেপি এটাকে সফলভাবে দেখাচ্ছে মোদী সরকারের গঠন রূপে আর রাজনীতি যেখানে perception এর খেলা, নরেন্দ্র মোদী সেখানে ক্রিকেটের তেন্ডুলকর আর ফুটবলের পেলে।

যে 'হিন্দু ভোট' এতদিন অবহেলিত ছিল আজ তারা বিজেপির সুবাদে একটা আওয়াজ পেয়েছে। বাকি দলগুলি যেখানে 'সেকুলার' হয়ে থাকার তাগিদে ক্রমাগত হিন্দুদের অস্তিত্ব ও অধিকার নিয়ে আপোষ করে গেছে, বিজেপি সেই যায়গাটাতেই নিজেদের সাফল্যের ভিত্তি বানিয়েছে। আজ মমতা ব্যানার্জী বিজেপিকে যতই বহিরাগত বলুন না কেন, বাস্তবে তার দলও আজ বহু যায়গায় রাম নবমী পালন করতে বাধ্য হচ্ছে যে রাম নবমীকে বছর দুয়েক আগেও তিনি ও বাংলার তথাকথিত বুদ্ধিজীবিরা বিজাতীয় সংস্কৃতি বলে অবিহিত করেছিল। আজ রাম নবমী শুধু একটা পুজো বা উৎসব নয়, হিন্দুদের দাপট দেখানোর মঞ্চ।

২০১৯ এর নির্বাচনে ভরাডুবির পর, এবার বামপন্থীদের কাছেও নিজেদের প্রভাব বৃদ্ধি করার ভাল সুযোগ ছিল। লকডাউনের সময় বিভিন্ন যায়গায়, বিশেষত রাঢ় বঙ্গে, ত্রাণ দিতে গিয়ে দেখেছি যে বামপন্থীরা সাধারণ মানুষদের সেবায় অনেক কাজ করেছেন। হেঁসেল খুলে খাওয়ানো হোক বা ভিনরাজ্য থেকে আগত শ্রমিকদের সাহায্য, বামপন্থীরা যথেষ্ট ভাল কাজ করেছেন। করোনা অতিমারী, লকডাউনের আর অর্থনৈতিক নিম্নগতির ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল সেটাকে কিভাবে নিজেদের দলীয় স্বার্থে কাজে লাগাতে হয় সেটা বামপন্থীদের থেকে ভাল আর কেউ জানেনা কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে তাদের নেতৃত্ব সমঝোতা করে বসলো আব্বাস সিদ্দিকীর সাথে। আব্বাসের সাথে সমঝোতা করে বামপন্থীদের যতটা না লাভ হবে, ক্ষতি হয়েছে তার থেকে অনেক বেশী। সাধারণ হিন্দু ভোটার যারা সংখ্যালঘু তোষণের কারণে তৃণমূলের উপরে এবং একইসাথে অর্থনৈতিক এবং তৃণমূলের দলত্যাগীদের আশ্রয় দেয়ার কারণে বিজেপির উপরে ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং বিকল্প হিসাবে হয়তো বামপন্থীদের বেছে নিতেন, তারা আব্বাসের কারণেই আর বামপন্থীদের ভোট দেবেন না। ফলে, জোটের কারণে যদি কারুর লাভ হয়ে থাকে তাহলে সেটা আব্বাসের আর বিজেপির। কুয়োর ব্যাঙ আব্বাস পেয়ে গেছে গোটা রাজ্যের বিচরণক্ষেত্র আর বিজেপির লাভ হলো তাদের প্রতি ক্ষুব্ধ ভোটারদের বিকল্প কোন পথ না থাকা।

আর মমতা ব্যানার্জী ও পিকে এটা বুঝেছেন বলেই তারা চাইছেন বামপন্থীরা একটু চাঙ্গা হোন। নন্দীগ্রাম গুলি কান্ডে বুদ্ধদেবকে ক্লিনচিট দেয়ার একমাত্র কারণ দলের ক্যাডারদের চাগানো। মমতা নিজে দলের ৪২-৪৪% শতাংশ ভোট ধরে রাখার ব্যাপারে নিশ্চিত তাই তার লক্ষ্য বামপন্থীদের ভোটের পরিমাণ ২০১৯ সালের ৭% থেকে অন্তত ১৫-১৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যাতে বিজেপির যাত্রা পন্ড হয়। উল্টোদিকে বামপন্থীরা আবার মমতাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর বিষয়ে বেশী আগ্রহী তাই তারাও আব্বাসকে জড়িয়ে ধরে নিজেদের ভোট কমাতে বদ্ধপরিকর। অনেকটা সেই "কেবা আগে প্রাণ করিবেক দান, তার লাগি তাড়াতাড়ি"-এর মত কেস।

এমতাবস্থায়, এইবারের নির্বাচনের ফলাফল খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে। বামপন্থীরা যদি নিজেদের ভোট বাড়াতে পারে তাহলে বহু আসনের ফলাফল নির্ধারিত হবে খুব অল্প মার্জিনের ভিত্তিতে আর ২০১৯ এর মতই যদি বাম বিলীন হয়ে যায় তাহলে বিজেপি বলীয়ান হবেই। সেক্ষেত্রে, দ্বিমুখী লড়াই হলে অবশ্যই অ্যাডভান্টেজ বিজেপি।

Sunday, April 11, 2021

শিরোনামে বিশ্বভারতী

আবারও শিরোনামে বিশ্বভারতী। আবারও শিরোনামে সেখানকার কুখ্যাত উপাচার্য, বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারা গেছে যে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কার্যকলাপের ফলে, স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে, বিশ্বভারতীর উপাচার্য এবং তাকে নিয়োগকারী, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে এতটাই তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে যে বোলপুর আসনে বিজেপি প্রার্থী, ডঃ অনির্বাণ গাঙ্গুলী পক্ষে স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়ে জয়লাভ করা অত্যন্ত কঠিন। অতএব, এখন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে দিল্লীতে তলব করা হয়েছে এবং বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রারের থেকে সিনিয়রমোস্ট ব্যক্তিদের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে এখন হয়তো বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেয়া হবে বা লম্বা ছুটিতে পাঠানো হবে এবং অন্য কেউ দায়িত্ব নেবেন।

অথচ এরকম পরিস্থিতি তৈরীই হতনা যদি কেন্দ্রীয় সরকার প্রথম থেকেই পরিস্থিতির সঠিক পর্যালোচনা করে, উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতেন। বিদ্যুৎ চক্রবর্তী কোনদিনই বিজেপি বা সঙ্ঘপরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেননা। তিনি বরাবরই একজন ধান্ধাবাজ। কর্মক্ষেত্রে মহিলা সহকর্মীকে যৌন নির্যাতনের দোষী প্রমাণিত হওয়া এই ব্যক্তিকে বিশ্বভারতীর মত ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব দেয়া ছিল মোদী সরকারের প্রথম ভুল। তথাকথিত পাঁচিল ভাঙা থেকে শুরু করে মেলার মাঠে পাঁচিল দেয়ার সিদ্ধান্ত, বিশ্বভারতীর বিভিন্ন এলাকায় ১২ ফুটের পাঁচিল তোলা থেকে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের টাকা আটকে রাখা - এই সবই ছিল বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একজন আত্মকেন্দ্রিকের ব্যক্তিগত ইগো জাহির করার ফল। আমি এই বিষয়ে গত আগস্ট মাস থেকে এই ফেসবুকেই লিখেছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষদের ট্যাগ করে ট্যুইট করেছি, এমনকি বিজেপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছি কিন্তু আফসোসের বিষয় হল যে তারা তখন পরিস্থিতি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিদ্যুৎ তাদের বুঝিয়েছিল যে তার এই কাজে যারা ক্ষুব্ধ হচ্ছে তারা কম্যুনিস্ট বা আর্বান নকশাল আর বিজেপি নেতৃত্বও সেই কথা বিশ্বাস করে এতদিন চুপ করে বসেছিল।

আমি নিজে দুই বার শান্তিনিকেতনে গিয়েছি এবং এলাকার বিভিন্ন প্রান্ত চষে ফেলেছি। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে আমার কখনও মনে হয়নি যে তাদের ক্ষোভের পিছনে কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ কাজ করেছে। যেটা তাদের প্রকৃতই ক্ষুব্ধ করেছে সেটা হল উপাচার্যের নেতৃত্বে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্য ও নান্দনিকতার গণহত্যা। শিক্ষক, কর্মী, বিদ্যার্থী, রবীন্দ্রপ্রেমীদের নিয়ে একযোগে সিদ্ধান্ত নেয়ার যে পরম্পরা বিশ্বভারতীতে ছিল, যে উন্মুক্ততা শান্তিনিকেতনের পরিচয় ছিল, নিজের ধান্ধা চালানোর জন্যে সেটার মূলেই আঘাত করেছেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত অযোগ্য ব্যক্তি। এই প্রসঙ্গে আমার বিভিন্ন পোস্টে ও ফেসবুক লাইভে বিশদে জানিয়েছি। আগ্রহী ব্যক্তিরা সেগুলি দেখে নিতে পারেন।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার যে আদালতের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। আদালতের রায়ে মনে হয়েছে যে ন্যায় প্রতিষ্ঠার থেকে, একটা বিশেষ পক্ষের সিদ্ধান্তকে বাস্তবায়িত করাই তাদের মূল লক্ষ্য ছিল। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে আদালত যে ভূমিকা নিয়েছেন এবং কমিটির সদস্য হিসাবে যাদের মনোনীত করেছেন তাদের পূর্ব ইতিহাস পর্যালোচনা করলে, তাদের মনোনয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। এমনকি গত ২৪শে নভেম্বর, আত্মদীপ-এর দায়ের করা ইন্টারভেনশন মামলায়, যেখানে আমরা খোদ বিশ্বভারতী আইনের বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছি, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন যে কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পরে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে এবং শুনানির দিন হিসাবে ১২ই জানুয়ারি ধার্য্য করা হয় অথচ কোন এক অজ্ঞাত কারণে, ১২ই জানুয়ারির সেকেন্ড হাফে বেঞ্চ বসেই না। এরপর হঠাৎই ১৫ই জানুয়ারি ডিভিশন বেঞ্চ রায় দেন যে ১৮ই ডিসেম্বর নাকি কমিটি তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে, প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে কমিটির প্রধান ততদিনে কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বদলি হয়ে গেছেন, এবং মামলার ফয়সালা হয়ে গেছে বলে জানান। অর্থাৎ আমাদের ফাইল করা ইন্টারভেনশন পিটিশনের মেরিট বিচার না করেই, কেবলমাত্র যেন কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে গঠিত কমিটির রায় আপ্তবাক্যের মত মেনে নেয়া হলো।

এইসব অন্যায়ের প্রতিফলনই আজ বোলপুরের বিজেপি প্রার্থী, অনির্বাণ বাবুকে পেতে হচ্ছে। অনির্বাণ বাবু নিঃসন্দেহে একজন যোগ্য ব্যক্তি কিন্তু বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর মত একজন ধান্ধাবাজের সঙ্গে তার সখ্যতা এবং বারবার বলা সত্ত্বেও তাকে উপাচার্য পদে রেখে দেয়ার প্রভাব তার রাজনৈতিক পথকে প্রভাবিত করতে পারে। আজ যদি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে সেই পদ থেকে সরানোও হয় তাহলেও আমি বলবো যে, বড্ড দেরী হয়ে গেছে।

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157875928109865&id=620989864

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10157814418494865&id=620989864

Thursday, April 8, 2021

বহুত হুয়া ভ্রষ্টাচার

নরেন্দ্র মোদী সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা হল দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে না পারা। মোদীর প্রচারে, "বহুত হুয়া ভ্রষ্টাচার, আব কি বার মোদী সরকার", দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলা হয়েছিল কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল যে ইউপিএ আমলে জেলে যাওয়া লোকেরাও মোদীর শাসনে দিব্যি জামিন পেয়ে গেল। 2G হোক বা কোলগেট, এয়ারসেল ম্যাক্সিস হোক বা অগাস্তা ওয়েস্টল্যান্ড, এমনকি আমাদের অতি পরিচিত সারদা, নারদা বা রোজভ্যালী কোন ক্ষেত্রেই মোদী সরকার এমন কোন ভূমিকা গ্রহণ করেনি যেটা দেখে মনে হতে পারে যে অভিযুক্তদের দোষী প্রমাণ করতে তারা আগ্রহী।

দুষ্টু লোকেরা বলতো যে অরুণ জেটলির প্রভাবেই মোদী এই ধীরে চলো নীতি নিয়েছিলেন। মোদীর প্রথম দফার সরকারে জেটলির যে যথেষ্ট প্রভাব ছিল সেটা অনস্বীকার্য। দিল্লীর রাজনীতিতে নবাগত মোদীর কাছে ল্যুটিয়েন কালচারে পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ জেটলি ছিলেন অন্যতম পথপ্রদর্শক। আর ল্যুটিয়েন কালচারের নিয়মই হল মিলেমিশে খাওয়া। তাই দেশবিরোধী কাজের জন্যে NDTV এর সম্প্রচার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হোক বা নীরা রাডিয়ার চাঞ্চল্যকর টেপ, সব ক্ষেত্রেই মোদী সরকার এক পা এগিয়ে, দুই পা পিছিয়েছেন। আজ মোদী নিজের নির্বাচনী প্রচারে সোনিয়া ও রাহুলের জামিনে থাকা নিয়ে যে খোঁটা দেন সেই ন্যাশনাল হেরাল্ড কেসটাও কিন্তু তার সরকারের নয়, ডঃ স্বামীর উদ্যোগে হয়েছে।

আসলে মোদী হয়তো উপলব্ধি করেছেন যে বিভিন্ন অর্থনৈতিক দুর্নীতির কেসে, অভিযুক্তদের অপরাধ প্রমাণ করা যথেষ্টই শক্ত। Money trail এতটাই বিস্তৃত যে সব কেসে, সবাইকে সাজা দেয়া সম্ভব নয়। এর সাথে আছে বিচার বিভাগের দীর্ঘসূত্রিতা আর স্বার্থান্বেষী কর্পোরেট গোষ্ঠীর চাপ - যা সরকার বদলালেও সমানভাবে কার্যকর থাকে। এমতাবস্থায়, মোদী, সম্ভবত, তাই অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার বদলে, তাদের সেই দুর্বলতাকে হাতিয়ার বানিয়ে, তাদের অপদস্ত করতেই বেশী স্বচ্ছন্দ। এই কারণেই সুনন্দা পুস্করের হত্যা মামলায় শশী থারুরের ভূমিকা হোক বা সারদা মামলায় মমতা ব্যানার্জীর ভূমিকা - সবই চলছে perception এর ভিত্তিতে। গান্ধী পরিবারের দাসত্ব ছেড়ে কংগ্রেস যদি শশী থারুরের মত ব্যক্তির নেতৃত্বে যেত তাহলে সেটা মোদীর পক্ষে সুখকর হতনা, তাই সুনন্দা হত্যার কাঁটা টা বাঁচিয়ে রাখা দরকার। একইভাবে অগাস্তা হেলিকপ্টার বা সারদা বা 2G এই কেসগুলোর ধুলো মাঝেমধ্যে ঝাড়া হয় শুধু বিপক্ষকে একটু চমকে দিতে, কাজের কাজ কিছু হয়না।

Party with a difference

রাজনীতিতে ভাল আর খারাপের বাছাবাছি করতে গেলে হাতে পড়ে থাকবে পেনসিল। তাই বাছাইটা হয় খারাপ আর কম খারাপের মধ্যে। এটা অনস্বীকার্য যে বিজেপি কোন ধোয়া তুলসীপাতা নয়। সত্যি কথা বলতে, বিজেপি বাকি আর পাঁচটা দলের মতই একটা রাজনৈতিক দল যার মূল লক্ষ্য হল যেনতেন উপায়ে ক্ষমতা দখল করা। কারণ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে কোন আদর্শই পূরণ করা সম্ভব নয়।

একইসাথে, বাকি দলগুলির মত বিজেপির মধ্যেও বেনোজল আছে, ধান্ধাবাজ আছে, চোরও আছে। আর কোন দল যখন ক্ষমতার গন্ধ পায় তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই এদের সংখ্যা বাড়ে। তাই যারা বিজেপিকে party with a difference ভেবে, এই সব নমুনাদের দলে নেয়ার বিরুদ্ধে সোচ্চার হন তাদের মাথায় রাখা উচিত যে দলটা ৪০ বছর ভারতের রাজনীতিতে টিঁকে থাকার পরেও আপনি তার থেকে এই প্রত্যাশা রাখছেন, তখন দলটার মধ্যে আলাদা কিছু তো অবশ্যই আছে। 

হ্যাঁ, রাজনীতির এই পাঁকে থেকে পদ্ম হয়ে ফোটার জন্যে আলাদা কিছু তো অবশ্যই লাগে আর সেটা বিজেপির আছে বলেই দিদির আর কোন হিজাব পরা ছবি আর দেখা যাচ্ছেনা। আলাদা কিছু আছে বলেই কেরালাতে বিজেপির প্রভাব বাড়ার সাথে সাথে, এককালে ধর্মকে আফিম বলে ব্যঙ্গ করা দলের নেতা পিনারাই বিজয়নকে বলতে হচ্ছে যে "আয়াপ্পা দেবের আশীর্বাদ তাদের দলের উপরেই আছে"। হ্যাঁ, এটাই বিজেপিকে বাকি দলগুলোর থেকে আলাদা করে দেয়। হ্যাঁ, আপনি তর্ক করার জন্যে কয়েকজন চোর-ছ্যাঁচড়ের দিকে আঙুল তুলতেই পারেন কিন্তু দিনের শেষে, দলের যারা মেরুদণ্ড অর্থাৎ কর্মীরা, তারাই নিজেদের আচরণে বাকিদের সাথে পার্থক্যটা গড়ে দেয়।

লক্ষ্য

গতকাল রাতে ফেসবুকের এক বামপন্থী বন্ধু ইনবক্সে জোটকে সমর্থন করার আহ্বান জানালেন। আমি আমার অক্ষমতা ব্যক্ত করায় তিনি বললেন যে এবার আমি জোটকে সমর্থন দিয়ে তৃণমূলকে হটালে এরপর তিনি নিজে, অর্থাৎ ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে আমার সাথে কাজ করবেন। অর্থাৎ তার ধারনা আমি বিজেপির সমর্থক।

এদিকে বিজেপির কিছু ফেসবুক সমর্থকের ধারনা যে আমি তৃণমূলের সমর্থক আর তাই মোদীর কাজের খুঁত ধরি। ফেসবুক সমর্থক কথাটা ইচ্ছে করেই ব্যবহার করলাম কারন এই সমর্থকদের যাবতীয় কার্যকলাপ ফেসবুকে, নিজেদের গণ্ডির মধ্যে একে অপরের পিঠ চুলকানোতেই সীমাবদ্ধ। 

বাকি রইল তৃণমূল। এদের তো বদ্ধমূল ধারনা যে আমি বিজেপির হয়ে কাজ করি। এদের অঙ্ক হল হিন্দু জাগরণের যে কাজ আমি করছি সেটার অটোমেটিক রাজনৈতিক ফলশ্রুতি হল বিজেপির ভোট।

এমতাবস্থায় একটা জিনিস স্পষ্ট করে দেয়া দরকার যে আমার রাজনৈতিক আনুগত্য কোন একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি নেই- না তৃণমূল না বিজেপি। সিপিএম হওয়ার তো প্রশ্নই নেই। নির্বাচনের সময় নাগরিক হিসাবে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করি তবে সেটা কখনই কোন নেতা বা নেত্রীর কথার উপর ভিত্তি করে নয়, কাজের উপর ভিত্তি করে।

তাই বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী বন্ধুদের পরিস্কার করে জানিয়ে দিতে চাই যে আমার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে, সাহসী হিন্দুদের নিয়ে, ছলে-বলে-কৌশলে, পশ্চিমবঙ্গকে জেহাদি আক্রমণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা। এই কাজে, দলমতনির্বিশেষে, হিন্দুদের একতাবদ্ধ হবে। আগে সব হিন্দু একতাবদ্ধ হবে, তারপর লড়াই হবে, এরকম অলীক ধারণায় আমি বিশ্বাসী নই। কারণ ইতিহাস সাক্ষী যে সবাই কখনও একজোট হয়না, হতে পারেনা। আজ মাস্টার'দা বা ভগৎ সিং যদি সবার একজোট হওয়ার অপেক্ষায় বসে থাকতেন, তাহলে দেশ স্বাধীন হতনা। এমতাবস্থায় একটি বিশেষ দলের হয়ে প্রচার করে অন্যান্য দলের হিন্দুদের দূরে সরিয়ে দিলে সেটা লক্ষ্যপূরণের পথে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে।

দেশভাগ হোক বা কাশ্মীর থেকে হিন্দু বিতাড়ন, কালিয়াচক হোক বা তেহট্ট, ইতিহাস সাক্ষী যে রাজনীতি করে সেই সর্বনাশ রোখা যায়নি। তাই, আবার রাজনীতির পাকেচক্রে জড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গর ভবিষ্যৎকে নিয়ে জুয়া খেলতে চাইনা। রাজনেতারা তাদের কাজ করুন আর আমরা আমাদের কাজ করে চলবো।