Tuesday, May 26, 2020

আইনের শাসন

গত রবিবার (১৭ই মে) রাতে, তিন গাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে, আমাকে বীজপুর থানায় নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তারের পর, সেই খবর বাড়ির লোককে জানানো হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশানুসারে, গ্রেপ্তার করতে আসা অফিসারের নিজের পরিচয়জ্ঞাপক পোশাক পরে আসা উচিত অথচ আমাকে গ্রেপ্তার করতে আসা প্রত্যেক অফিসারই ছিলেন বিনা ইউনিফর্মে।

আমার বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ এনেছে Injuring or defiling place of worship with intent to insult the religion of any class.—Whoever destroys, damages or defiles any place of worship, or any object held sacred by any class of persons with the intention of thereby insulting the religion of any class of persons or with the knowledge that any class of persons is likely to consider such destruction, damage or defile­ment as an insult to their religion, shall be punishable with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both. তারমানে, পুলিশের অভিযোগ অনুসারে আমি একটা বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের অপমানের উদ্দেশ্যে তাদের প্রার্থনা কক্ষ ধ্বংস করেছি। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী দ্বারা 'ফাইনাল গাজি' প্রকাশের খবর, একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রার্থনা কক্ষ ধ্বংসের সমানুপাতিক অথবা তাদের দ্বারা স্বীকৃত মানে any object held sacred by any class of persons মানে তাদের দ্বারা পবিত্র হিসাবে মান্যতা প্রাপ্ত কোন বিষয়ের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, পুলিশের অভিযোগ যদি যথার্থ বলে মানতে হয় তাহলে মেনে নিতেই হবে যে "গাজি" শব্দের যে ব্যখ্যা আমার পোস্টে দেয়া হয়েছে, সেটা সত্য।

মজার কথা হল যে অ্যারেস্ট মেমো আমি সই করে দিলেও, সেটার কপি আজ অবধি আমি বা আমার পরিবার পায়নি।

এতকিছুর পরেও, গত ১৮ই মে, আদালতের কাছে পুলিশ আমাকে পুনরায় তাদের হেফাজতে নেয়ার দাবী প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আমার পক্ষে দাঁড়ানো ৫ জন উকিলের সম্মিলিত প্রতিবাদ এবং যুক্তির সামনে পুলিশের দাবী ভেসে গেছে।

তবে খেলা তো সবে শুরু হলো, এটা এবার চলতেই থাকবে। আর পরবর্তী প্রত্যেকটা শুনানিতে পুলিশের খামতি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একজন সাধারণ নাগরিককে হেনস্থা করার প্রসঙ্গ উঠতেই থাকবে। থানায় এবং কমিশনারেটে, দু'বার জিজ্ঞাসাবাদের পর, কেন হঠাৎ মাঝরাতে গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন দেখা দিলো। দেখা যাক, দেশের সংবিধান, আদালতের মাধ্যমে কার পাশে দাঁড়ান।

Sunday, May 24, 2020

বিবেকের ডাক


স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটার অভ্যাসটা আজকের নয়, বহুদিনের। সেভেনে পড়াকালীন, সালটা ১৯৯০, সিপিএমের সূর্য তখন মধ্যআকাশে, ক্লাসে মহাপুরুষের ছবি হিসাবে লেনিনের ছবি লাগানোর বিরোধিতা করে বা টেরেসার সেবার আড়ালে ধান্ধাবাজীর কথা প্রকাশ্যে বলে ABTA-র সদস্য মাস্টারমশাইদের কাছে অপ্রিয় হয়েছি। SFI-র ডাকা বনধের দিনে স্কুলে উপস্থিত হয়ে বনধ সফল করতে স্কুলে উপস্থিত থাকা পুরসভার চেয়ারম্যানের সাথে ঝগড়া করে বহু নেতার কাছে অপ্রিয় হয়েছি। কিন্তু বিবেকবোধকে বিসর্জন দিয়ে কখনও স্রোতে গা ভাসানোর সহজ খেলায় যোগ দেইনি।
সেদিনও দেইনি, আজও দেবনা। আজ যারা ভাবছে মোদী মোদী করলেই জেহাদি সমস্যা মিটে যাবে সেই স্তাবকদের সাথে আমি একমত নই। স্তাবকরা নিজেদের দায় এড়াতে, জয়ধ্বনি দিয়েই ক্ষান্ত হতে পারে, কিন্তু আমি পারিনা। এই ধারার স্তাবকতা তখনও দেখেছি যখন বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন সঙ্ঘ পরিবারের সাথে যুক্ত থাকার ফলে পরিবারের সদস্যদের উল্লাস, স্তাবকতা আর হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মানসিকতা খুব কাছের থেকে দেখেছি। বিকাশ পুরুষ আর লৌহ পুরুষের যুগলবন্দী নিয়ে চর্চা চুপ করিয়ে দিয়েছিল বহু অপ্রিয় প্রশ্ন। জহরলাল নেহরুর পরে জম্মু ও কাশ্মীরের হিন্দুদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করার জন্যে দায়ী বাজপেয়ীকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা ছিলনা স্তাবকদের। কিন্তু চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। ২০০৪ সালে বিকাশ পুরুষের সরকার পতনের পরেই উঠতে লাগলো প্রশ্ন। লৌহ পুরুষের জিন্না বয়ান বা গুজরাটের দাঙ্গা (যা আদতে হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই ছিল) কেন্দ্রীয় সরকারের উপর একটা কুৎসিত দাগ জাতীয় বক্তব্য আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিল।

কিন্তু মজার কথা হল যে, প্রশ্নগুলির উত্তর না পেয়েই ২০০৯ সালে সেই লৌহ পুরুষকেই তথাকথিত হিন্দুত্ববাদীরা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করলো। অর্থাৎ যে ব্যক্তিকে দল চালানোর অযোগ্য মনে করে দলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাকেই দেশ চালানোর যোগ্য হিসাবে মনোনীত করা হলো। কিন্তু দেশের লোক সেই বিশ্বাসঘাতকে তাদের নেতা হিসাবে গ্রহণ করলো না, আর ২০০৪ থেকে নিম্নমুখী হওয়া বিজেপির গ্রাফ আরও নেমে গেল।
২০১৪ সালে মোদীর নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত যাকে ইংরেজিতে বলে more compulsion than choice। ২০০২ পরবর্তী সময়ে মোদীর যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল তারই প্রতিফলন ঘটে ২০১৪ ও ২০০৯ সালের ভোটে। সেই লোকসভা নির্বাচন ছিল মোদীর, বিজেপি নয়, বাকিদের লড়াই। সারাজীবন সেকুলারদের (পড়ুন মুসলিম তোষণবাদীদের) চাপে বিপর্যস্ত হওয়া হিন্দু জনতা মনপ্রাণ ঢেলে আশীর্বাদ করে নির্বাচন করলো মোদী সরকার। কিন্তু এত বড় দেশের দায়িত্ব কি একজনের পক্ষে সামলানো সম্ভব? তারও কি ভুলচুক হতে পারে না? সেক্ষেত্রে সেটা ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কার? স্তাবকরা সেটা করবেনা কারন তাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু নিহিত স্বার্থ আছে কিন্তু যারা জেহাদি শক্তিকে দমন করার জন্যে মোদীকে নির্বাচিত করেছেন তাদের কাছে মোদী লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য পূরণের অস্ত্র মাত্র। সেই অস্ত্রে যদি মরচে ধরে বা ধার কমে যায় তাহলে সেটাকে শোধন করার অধিকার প্রত্যেক হিন্দুর আছে। তাই আমি মোদীর হিন্দু স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে যদি স্তাবকদের গায়ে জ্বালা ধরে তাহলে আমি নিরুপায়।

স্তাবকরা তাদের যুক্তিহীনতা ও মেধাগত দৈন্যদশার প্রেক্ষিতে আমার বা আমার সংঠনের অবস্থানকে, তাদের সহজ যুক্তিতে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে জুড়ে, আত্মতুষ্টি লাভ করতে পারে বা যে নেতার খিদমতগারি করছে, তার সুনজরে পড়ার উপায় মনে করতে পারে, কিন্তু সেটাতে বাস্তবটা বদলাবেনা। যে #আত্মদীপ বা বিবেকের মত অনুসারে এতদিন কাজ করে এসেছি, এখনও তাই করবো। মমতা ব্যানার্জী বহুদিন থেকেই আমাকে পশ্চিমবঙ্গে, ওনার ভাষায়, "দাঙ্গাবাজ" বলে চিহ্নিত করে এসেছেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, তাঁর অন্যতম স্তাবক, রাজ্যের তদানীন্তন পুলিশ প্রধান এবং বর্তমানে অবসরভাতা হিসাবে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদ প্রাপ্ত, সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ কে দিয়ে এই মর্মে সাংবাদিক সম্মেলনও করিয়েছিলেন যে আমিই নাকি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক গুজব ছড়ানোর মূল পান্ডা। খবরে নামটা প্রকাশ না করলেও ইঙ্গিত স্পষ্ট।

তবে ২০১৭ সালে সেই ঢাকঢোল পিটিয়ে করা ঘোষণার পরে, তিন বছরের বেশী সময় কেটে গেলেও, মমতা ব্যানার্জীর প্রশাসন জেহাদিদের নিয়ন্ত্রণ করতে আজও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই আজও ঘটে চলে আসানসোল, টিকিয়াপাড়া বা তেলেনিপাড়া আর প্রশাসন রেশন পৌছে দিয়ে আসে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তর বাড়িতে পাছে 'দুধেল গাই' রা সপাটে লাথি মারে। তাই ধুলাগড় দাঙ্গার পরে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অধিকর্তা, সব্যসাচী রমন মিশ্র কে সেই পদ থেকে সড়িয়ে দেয়া হলেও, তেলেনিপাড়ার পরেও হুমায়ুন কবীর নিজের পদে দিব্যি বহাল রয়েছেন। দিদি যাঁর "ফাইনাল গাজি" বই উদ্বোধন করেন, তাঁর সাতখুন মাফ না হোক, তেলেনিপাড়া তো মাফ হতেই পারে।

আগেই বলেছি যে স্রোতের সাথে সাঁতার কাটতে সবাই পারে কিন্তু আমার কাছে বিবেকটা অনেক বেশী মূল্যবান। তাই তাদের পছন্দ হোক আর নাই হোক, প্রশাসনকে আয়না দেখানোর কাজটা চালিয়েই যাবো। বর্তমানে প্রশাসনে কর্মরত বা অবসরভাতা প্রাপ্ত কিছু ব্যক্তি, চেয়ারের জোরে, নিজেদের ঈশ্বর বলে ভাবতেই পারেন আর সেই ভাবনার বশীভূত হয়ে আমার মত সাধারণ নাগরিকদের, অন্যায়ভাবে, গ্রেপ্তার করাতেই পারেন কিন্তু দিনের শেষে, আদালতে তাদের নিজেদেরই মুখ পোড়ে। জনগণের কাছে নিজেদের প্রহসনে পরিণত করেন। অতএব, যে যাই বলুক আর যে যাই করুক, #আত্মদীপের আলোতে, আমার মেয়ে সহ হিন্দুদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যাতে অসভ্য আরবী সংস্কৃতির ভার বহন করতে না হয়, বোরখা পরতে না হয়, সেই লড়াই জারী থাকবে।

https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/tighten-screw-on-social-media-rumour-mongering-cm-to-dgp/articleshow/57195139.cms

Friday, May 22, 2020

Pets

WB Police, pet of Mamata Banerjee, tried their best to suppress voice of conscience by illegally arresting me in the night of 17th May but they forgot about about something called the Constitution. After 3 days of conditional bail, given on Monday, asking me not to make activities in social media for 3 days, today court has given me bail. Now, it is quite evident that WB Police is working as party cadre of Trinamool & trying to choke every single voice against irregularities of party and the govt. Its disgraceful to find IPS officers, incapable to stop communal violence, are using their authority to target voice of opposition. What a poor role model of parenting they are setting before their children.

পোষ্যবর্গ

মমতা ব্যানার্জীর পোষ্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের সর্বশক্তি লাগিয়ে দিয়েছিল সত্যের কন্ঠরোধ করতে আর সেই কারণেই তারা দু'বার জিজ্ঞাসাবাদের পরেও, গত ১৭ই মে রাতে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে অবৈধভাবে গ্রেপ্তার করে এবং সেই খবর বাড়ির লোককে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনা। কিন্তু ক্ষমতার মদগর্বে তারা ভুলে গিয়েছিল যে দেশে সংবিধান নামে একটা জিনিস আছে। মহামান্য আদালত ১৮ তারিখেই, পুলিশের আবেদন অগ্রাহ্য করে, আমাকে তিন দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন এবং তিন দিনের জন্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কার্যকলাপ করতে নিষেধ করেন। আজ আদালতে পুনরায় মামলা উঠলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। তবে পুলিশের আচরণে এটা স্পষ্ট যে পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হিসাবে কাজ করছে এবং দল ও সরকারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলেই, অন্যায়ভাবে অভিযোগকারীর গলা চেপে ধরতে চাইছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক যে দাঙ্গা ঠেকাতে অক্ষম IPS অফিসাররা নিজেদের পদের অপব্যবহার করে বিরোধীদের আওয়াজকে থামিয়ে দিতে চাইছেন। এরপরেও এরা নিজেদের সন্তানদের  চোখে চোখ রেখে, আদর্শের কথা বলতে পারেন কি?

Saturday, May 16, 2020

Experience at Commissionerate

Today, again, I was called by police. This time it was Barrackpore Police Commissionerate. He told that many complaints have been filed against me alleging fanning of Telenipara violence. I asked him what stopped police to act against perpetrators? Didn’t non-action of police allowed riot to blow? Then he asked if I had shot the videos myself. I said, no and claimed to have received from source. He asked for details of sources but I denied to provide. He asked how can I be sure those were of that area? I asked him if he accompanied Neil Armstrong to Moon, if not, how on Earth could he know that he stepped on the Moon? I continued by saying he knows that as it was told by a credible source. Similarly the videos I shared was from credible sources. Yet, if he consider those were false & fabricated, he is free to take appropriate action. Then I reminded him that I filed complaint against Muslim Buddhijibi Mahal for posting vulgar images about Hindu Gods & Goddesses in this commissionerate, hate speech by Kabir Suman to Kolkata Police but nobody took action and now they are calling me as I exposed the reality. The officer warned me that he’ll arrest me if I do any such thing in future. I replied that I’ll continue to my constitutional duties & he is also free to do his duty. If our duties confront each other, let the court of law take the call on who was right & who was wrong.

এবার কান্ড কমিশনারেটে

আজকে আবার ব্যারাকপুর কমিশনারেটে আমাকে যেতে বলা হয়েছিল। কোন অফিসে যাবো, সেটা না জানায়, বীজপুর থানা থেকে একটা এসকোর্ট ভ্যানও দেয়া হয়। বাড়ি থেকে ১১ঃ১৫ নাগাদ বেড়িয়ে, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে এসকোর্ট ভ্যানের সাথে দেখা হয় এবং অতঃপর সোজা কমিশনারেটের এক বড় কর্তার অফিস।

সংশ্লিষ্ট অফিসার আমার কুশলাদি এবং পারিবারিক খোঁজখবর নেয়ার পর জানালেন যে আমার বিরুদ্ধে নাকি এই মর্মে অনেক অভিযোগ জমা পরেছে যে আমি দাঙ্গা ছড়াচ্ছি। ওনার উত্তর শুনে আমিও বললাম যে আমার কাছেও অনেক অভিযোগ এসেছে যে পুলিশ সময়মত উপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণ করেনি আর সেটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে আজ নদীর একপারের পুলিশকে, অন্য পারের পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তরটা অফিসারের পছন্দসই হয়নি, তাই তিনি প্রসঙ্গ বদলে জানতে চাইলেন যে আমি এই দাঙ্গা কারা করছে সেই বিষয়ে কিছু জানি কিনা। আমি ওনাকে স্পষ্ট ভাষায় জানালাম নির্দিষ্টভাবে কোন তথ্য না থাকলেও তারাই করছে যাদের মনে এই নিশ্চয়েতা আছে যে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেনা।

এই উত্তরটাও ওনার পছন্দ হলনা। এবার উনি জানতে চাইলেন যে এই ভিডিওগুলো আমি নিজে গিয়ে শুট করেছি কিনা আর সাথে উনি ভিডিওগুলো ওনাকে পাঠিয়ে দিতেও বললেন। ভিডিওগুলো পাঠিয়ে বলে দিলাম যে এগুলো নিজে শুট করিনি তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পেয়েছি। এর উত্তরে উনি বললেন যে সূত্র যে নির্ভরযোগ্য সেটা কি করে বুঝলাম। তারা তো অন্য কোথাকার ভিডিও তুলে, এলাকার বলে দাবী করতে পারেন। এর উত্তরে আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে উনি নীল আর্মস্ট্রং-র সাথে চাঁদে গিয়েছিলেন কিনা! উনি প্রশ্নটা বুঝতে না পারায়, আবার করলাম এবং স্বাভাবিকভাবেই ওনার উত্তর নঞর্থক হওয়ায় বললাম যে তাহলে নীল আর্মস্ট্রং যে চাঁদেই গিয়েছিলেন, সেটা নিয়ে নিশ্চিত হলেন কিভাবে? কারণ সেটা নাসার মত একটা বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা বলেছিল, তাই তো? আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। আমিও ভিডিওগুলো এরকম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেই পেয়েছি। যে কারণে আমার পোস্টের দু'দিন পরেই টাইমস নাউ চ্যানেলেও ঐ ব্যক্তিদের সাক্ষাতকার দেখানো হয়েছে। এরপরেও যদি প্রশাসনের মনে হয় ভিডিওগুলো মিথ্যা, তাহলে তারা অনায়াসে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এরপর আমি ওনাকে মনে করিয়ে দিলাম যে বছর তিনেক আগে, খোদ ওনার কমিশনারেটেই আমি পশ্চিমবঙ্গ মুসলিম বুদ্ধিজীবী মহলের কিছু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে পারে এমন পোস্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলাম, আজ অবধি সেটা নিয়ে কোন ব্যবস্থাই তাঁর প্রশাসন নেয়নি। কবীর সুমনের হেট স্পিচের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশে জানানো অভিযোগ আজও সেরকম অবস্থাতেই পড়ে আছে। আর আমি তেলেনিপাড়া নিয়ে বাস্তব তথ্য তুলে ধরায়, ওনার পুলিশ আমার থেকে কৈফিয়ত চাইছেন, আমাকে দাঙ্গাবাজ বলছেন। প্রশাসন যদি ধারাবাহিকতার সাথে দ্বিচারিতা চালিয়ে যায় তাহলে নাগরিকদের কাছে আর বিকল্প কি থাকে?

আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই উনি বললেন যে আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে আর এটাই আমাকে দেয়া শেষ ওয়ার্নিং। এরপর যদি এরকম কাজ করি তাহলে ওনারা গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবেন আর সেটা আমার কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারের জন্যে সুখকর হবেনা। উত্তরে আমিও ওনাকে জানিয়ে দিলাম যে আমার কর্মক্ষেত্র ও পরিবারের ভালমন্দের খেয়াল রাখতে আমি একাই যথেষ্ট আর তাই যদি এরকম ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটে, আমার ভূমিকাও অপরিবর্তিত থাকবে। সংবিধান অনুসারে আমার যা অধিকার আছে সেটা আমি পালন করবো আর সংবিধান অনুসারে ওনাদের যে অধিকার আছে সেটা ওনারা পালন করুন। দু'জনের পথে যদি সংঘাত ঘটে তাহলে কোনটা ঠিক সেটা নাহয় আদালতেই ফয়সালা হবে।

ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে আসার সময় মনে পড়লো যে বীজপুর থানার বড়বাবু বলেছিলেন যে উনি সোমবার আমাকে ত্রাণ বিতরণ করতে দেবেন না। সেই কথা ওনাকে জিজ্ঞাসা করায় উনি স্পষ্ট বলে দিলেন যে আমরা যেহেতু রেজিস্টার্ড NGO, তাই ত্রাণ দিতে আপত্তি করার কোন অবকাশই নেই। পুনরায় ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে অফিস ছাড়লাম।

গতকালের অভিজ্ঞতা

কাল অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম একজন পরিচিতাকে ডিসচার্জড করিয়ে আনতে। হাসপাতালে থাকাকালীনই মা ফোন করে জানালো যে বাড়িতে থানার বড়বাবু এসেছিলেন, আমি না থাকায় ফেরার পর থানায় দেখা করতে বলে গেছেন।

হাসপাতাল থেকে ফিরলাম ৫ঃ৩০ নাগাদ। তারপর বীজপুর থানার বড়বাবুকে ফোন করাতে, উনি ৬ টা নাগাদ থানায় আসতে বললেন। যথাসময়ে থানায় পৌছালাম এবং বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম, সঙ্গে ছিল অর্পিতা। ৬ঃ৪৫ এ বড়বাবু আসলেন এবং আমি ভিতরে ঢুকলাম।

আমাকে দেখেই বড়বাবুর মেজাজ সপ্তমে। আমি নাকি দাঙ্গাবাজ (শব্দটা পরিচিত লাগছে কি?)। আমি, আমার স্বভাব অনুযায়ী, খুবই শান্তভাবে জানতে চাইলাম ওনার এরকম সার্টিফিকেট প্রদানের কারণটা কি। ওনার বক্তব্য যে তেলেনিপাড়া নিয়ে আমি নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভগ্ন করেছি। আমি গোলা মানুষ, ব্যাপারটা ঠিক আমার কাছে পরিস্কার হলনা। জানতে চাইলাম যে উনি কি বলতে চাইছেন যে তেলেনিপাড়ার ঘটনায় রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে? এতে উনি আরও তেতে উঠলেন এবং বললেন যে, তেলেনিপাড়ার ঘটনায় নয়, সেটা নিয়ে আমার করা পোস্টে সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। এই কথা শুনে আমি তো আর ঠাঁই পাইনা, ঘটনাতে যদি সম্প্রীতি নষ্ট না হয়, তাহলে সেটা নিয়ে বলাতে নষ্ট হয় কেমন করে? এই প্রশ্ন করাতেই উনি মেজাজ হারালেন আর বললেন যে উনি আমার ফোন সিজ করবেন আর আমার কথাবার্তা ভিডিও রেকর্ড করে, আমাকে জেলে ঢুকাবেন। এরপর উনি জানতে চাইলেন যে ভিডিও গুলি আমি নিজে শুট করেছি কিনা। নঞর্থক উত্তর দেয়ায় উনি ওগুলো ডিলিট করতে বলতেন। এরও উত্তর নঞর্থক হওয়ায় উনি জানতে চাইলেন যে আমি ওগুলো কোথা থেকে পেয়েছি। উত্তরে আমি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিলাম যে সেটা আমি জানাবনা। আমি পোস্ট করেছি, সব দায় আমার। উনি যদি গ্রেপ্তার করতে চান, তাহলে যেন আজকেই করেন কারণ কাল কোর্ট থেকে জামিনের বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তাছাড়া রবিবার আর সোমবার আমাকে বেহালা আর হালিসহরে ত্রাণ বিতরণ করতে যেতে হবে। "আপনার মত দাঙ্গাবাজকে আমি আমার এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতেই দেবনা", চিৎকার করে উঠলেন তিনি। আমিও, আমার স্বভাব অনুযায়ী, শান্তভাবেই জানালাম, ত্রাণ তো আমি দেবই, পারলে উনি রুখে দেখান।

নিজেকে বেশ একটা কেউকেটা গোছের মনে হচ্ছিল কিন্তু সেই প্রলোভন দমন করেই ওনাকে বললাম যে ফালতু ফোন নিয়ে লাভ নেই কারণ আমার টাইমলাইন সম্পূর্ণ পাব্লিক, নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন আর যে যে ভিডিও নিয়ে ওনার আপত্তি আছে, সেগুলো তো আমি নিজেই ওনাকে ফরওয়ার্ড করে দিতে পারি। অতঃপর, আরেকটা ঘরে গেলাম আর খোলা হল আমার ফেসবুক। গত দু'মাসের পোস্ট ঘেঁটেও ওনারা উত্তেজক কোন লেখা পেলেন না। বরং ওনার সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ওনাকে জানালেন যে, "স্যার, উনি তো অনেক ভাল ভাল কাজই করেছেন। গুজরাট থেকে ট্রেনও নিয়ে এসেছেন।" (সত্যি বলছি, আমি যে গুজরাট থেকে ট্রেন এনেছি, এটা আমি নিজেও জানতাম না)।

এই শুনে বড়বাবু বললেন যে আমার যখন এতটাই পরিচিতি আছে যে "ট্রেন চালাতে পারি", তাহলে খামোখা এরকম সাম্প্রদায়িক পোস্ট কেন করি। দুটোরই কারণ এক - আমি বললাম। আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে আপনার কি মনে হয়, আমি উদ্যোগ না নিলে সরকার গুজরাট থেকে ট্রেন চালাতনা? নিশ্চয়ই চালাতো, হয়তো আরও দু'দিন পরে। আমি ঘটনাটা নিয়ে লেগে থাকায়, কাজটা একটু আগে হয়েছে। ঠিক একইভাবে, তেলেনিপাড়ার হিংসা নিয়ে আমার পোস্ট ফেসবুক ও ট্যুইটারে ভাইরাল হওয়ার পরেই সরকার এলাকার সংশ্লিষ্ট অধিকারীর সাথে, আরও অধিকারীকে এলাকার দায়িত্ব দিয়েছেন। উত্তরে বড়বাবু জানালেন যে তেলেনিপাড়ার ক্ষেত্রে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটাই তো উনি জানতেন না। "সেটা আপনার দুর্ভাগ্য"- আমি বললাম কিন্তু আপনি জানতেন বলে তো আর বাস্তব বদলাবে না!

এরইমধ্যে বড়বাবুর ফোনে তাঁর কোন উচ্চতর আধিকারিক ফোন করলেন এবং আমাকে ফোন দিতে বললেন। সেই অধিকারী আমাকে বললেন যে ওনার সাথে তো আমার পরিচয় আছে, কথাবার্তাও হয়। তাহলে এরকম যে ঘটনা থানায় ঘটছে, সেটা ওনাকে জানাইনি কেন? আমি বিনীতভাবে জানালাম যে আইনকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য আর সেটাই করছি। ব্যক্তিগত কারণে খামোখা ওনাদের বিরক্ত করতে আমার ইচ্ছা হয়নি। তারপর উনি বড়বাবুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন, বড়বাবুর মুখের অভিব্যক্তি দেখে আন্দাজ করতে পারলাম যে কি কথা হলো।

ইতিমধ্যে ঘন্টা দেড়েক সময় কেটে গেছে। আমি এবার সরাসরি বললাম যে আপনি কি আমাকে গ্রেপ্তার করছেন? যদি করেন, তাহলে আমার স্ত্রী বাইরে গাড়িতে বসে আছেন, ওনাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি পৌছে দেবেন। উত্তরে উনি প্রায় লাফিয়ে উঠলেন আর বললেন, না স্যার, এখন তো গ্রেপ্তার করার প্রশ্নই উঠছেনা। আমি তাহলে যেতে পারি, জিজ্ঞাসা করলাম। ওনার সদর্থক উত্তর পেয়ে বেরোতে যাবো তখন উনি পিছন থেকে বললেন যে বাইরে একটা কুকুর বাঁধা আছে, একটু সাবধানে যাবেন। আমি বললাম, জানি, ওর নাম 'হান্ড্রেড' তো? ও আমাকে খুবই ভালবাসে। তারপর ওনার অভিব্যক্তি দেখার অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে আসলাম আর 'হান্ড্রেড' যথারীতি আদর খাওয়ার জন্যে লাফিয়ে উঠলো। তারপর ওকে একটু আদর করে, থানা থেকে বেরিয়ে আসলাম।

Thursday, May 14, 2020

নিধিরামের সাফল্য


আপনারা অবগত আছেন যে গুজরাটের সুরাট ও ভালসারে আটক বাঙালীদের কিছু আর্থিক সাহায্য এবং স্থানীয় পরিচিতদের মাধ্যমে তাদের রেশনের ব্যবস্থা #আত্মদীপ-এর উদ্যোগে করা হয়েছে। সুরাটে আটকে যাওয়া এইরকমই একজন ব্যক্তি গতকাল রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ফোন করেন এবং কবে বাড়িতে ফিরতে পারবেন এই হতাশায় কান্নাকাটি শুরু করেন। বাকি রাজ্যের লোকেরা ফিরে যাচ্ছে আর ওনারা আটকে আছেন, এই বলে তিনি হতাশায় ভেঙে পড়েন। ভদ্রলোকের অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে, আমি ওনাকে আশ্বস্ত করি যে সাতদিনের মধ্যেই গুজরাট থেকে ওনাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবো।

ওনাকে তো আশ্বস্ত করে দিলাম কিন্তু আমি নিজে তো ঢাল-তলোয়ার বিহীন নিধিরাম সর্দার। তাই কাল রাত থেকেই শুরু করলাম বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ।
পাব্লিকলি ট্যুইটারে লেখা থেকে শুরু করে মেসেজ করা শুরু করলাম প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের। আজ সারাদিন ধরে লেগেছিলাম এই কাজেই যাতে ঐ ব্যক্তিকে দেয়া কথার খেলাপ না হয়ে যায়। কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের এবং উভয় ক্ষেত্রের শাসক দলের বিভিন্ন নেতানেত্রীদের কাছে সারাদিন ধরে চললো দরবার।

কিছুক্ষণ আগে সুরাট থেকে সেই ভদ্রলোক ফোন করে জানালেন যে তাঁরা মেসেজ পেয়েছেন যে গুজরাট থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফেরার জন্যে তিনটি ট্রেন দেয়া হয়েছে। সারাদিন ধরে যে কাজে রত ছিলাম, দিনের শেষে সেটা সাফল্যের মুখ দেখলে ভাল তো লাগেই কিন্তু এক্ষেত্রে ভাললাগার থেকেও বেশী ছিল তৃপ্তি যে তাঁরা অবশেষে ঘরে ফিরতে পারবেন।
পরে যখন ঐ ব্যক্তির থেকে মেসেজের কপিটা চাইলাম, দেখলাম যে গুজরাট থেকে ৩টে নয়, ৫টা ট্রেন দেয়া হয়েছে। ভদ্রলোক আবারও ফোন করছেন যে সেই ট্রেনে তাঁরা কিভাবে ফিরবেন সেটার পদ্ধতি জানতে। কালকে সারাদিন হয়তো এটা নিয়েই কেটে যাবে। তবে
এটা হওয়াতে যা আনন্দ পেয়েছি, সেটা বলে বুঝাতে পারবনা।

Tuesday, May 12, 2020

ঘরে ফেরার গল্প


ভিনরাজ্যে আটক হওয়া শ্রমিকদের ফেরানোর উদ্দেশ্যে চালু হওয়া ট্রেন পরিসেবা নিয়ে মমতা ব্যানার্জী প্রশাসনকে লেখা অমিত শাহর চিঠিতে রাজনৈতিক পয়েন্ট নেয়ার খেলা থাকতে পারে, কিন্তু সেটা মোটেই কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার পরিচায়ক নয়। বরং আমার মনে হয় যে এই চিঠি চালাচালি দু'পক্ষের সম্মিলিত একটা খেলা যাতে জনগণের দৃষ্টি মূল বিষয় থেকে অনেকটাই দূরে থাকে। মূল বিষয়টা তাহলে কি? মূল বিষয় হলো ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের #নিরাপদে, প্রথমে নিজ রাজ্যে আর তারপর নিজেদের বাড়িতে পৌছানো। ঠিক যেমনটা বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানে #নিরাপদ শব্দটাকে ইচ্ছা করেই হাইলাইট করেছি কারণ সেটাই প্রাথমিক শর্ত।

এবার চিঠি চালাচালির খেলা থেকে একটু নজর ঘুরিয়ে দেখুন যে শ্রমিকদের আনার জন্যে যে ট্রেন চালু করা হচ্ছে, সেটাকে রাজধানী এক্সপ্রেসের সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মানে, ট্রেনের ভাড়া, গতি এবং গমনপথ হবে রাজধানীর সমতুল্য। অর্থাৎ প্রায় দু'মাস ধরে কর্মহীন শ্রমিকদের গুনতে হবে রাজধানীর সমপরিমাণ ভাড়া আর সেই ট্রেনে কোনও সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানা হবেনা, মানে সব আসনের জন্যেই বুকিং নেয়া হবে। তারমানে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম উপেক্ষা করে, প্রত্যেকটা কামরায় ৪৫ জনের বদলে আসবেন ৭২ জন। রাজধানীর হিসাবে ভাড়া নেয়া হলেও আগত শ্রমিকদের দেয়া হবেনা খাবার ও বিছানা, সেটাতে নাকি সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে, যদিও প্রতি কামরায় ২৭ জন বাড়তি লোক নিলে অবশ্য সংক্রমণ বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। শ্রমিকরা রাজধানীর ভাড়া গুনে ট্রেনে চাপলেও, তাদের বাড়ি থেকেই নিয়ে আসতে হবে খাবার ও বিছানা। তবে সেটার জন্যে তাদের রেল ভাড়াতে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। এমনকি একটা কামরাতে ৭২ জন লোক ট্রেনের টয়লেট ব্যবহার করলেও, সেটা নিয়মিত পরিস্কার করার কোন পরিকাঠামো ট্রেনে থাকবেনা। মানে প্রতি কামরাতে ৭২ জনকে পুরো ভগবানের ভরসায় যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হবে। তবে ভারতীয় রেল মোটেই হৃদয়হীন নয়, তাই তারা ট্রেনে, আজ্ঞে হ্যাঁ, রাজধানীর সমপর্যায়ের ট্রেনে, প্যাকেটজাত খাবার বিক্রি করবেন যা শ্রমিকরা কিনে খেতে পারেন।

এরকম তিনশোটা ট্রেন চালানোর পর, মহামান্য রেলমন্ত্রী, পীযুষ গোয়েল, হাসিহাসি মুখে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে PM Care Fund-এ রেলের পক্ষ থেকে অর্থ জমা করবেন আর মিডিয়াতে সেই ছবি দেখে আর স্তাবকদের প্রশংসা শুনে আমরা ধন্য ধন্য করবো যে ভারতীয় রেল কি দারুণ কাজই না করেছে। এরইমধ্যে যদি খবর আসে যে ভিনরাজ্য থেকে আগত কোন শ্রমিকের মধ্যে করোনা সংক্রমণের লক্ষ্মণ দেখা গেছে, আমরা চোখ বুজে সেই 'ছোটলোক লেবার'টাকেই গালাগালি করবো আর চায়ের কাপে তুফান তুলে সিদ্ধান্ত নেবো যে এদের জন্যেই ভারতে ভাল কিছু হবেনা।

https://indianexpress.com/article/india/railways-trains-begin-irctc-rajdhani-booking-india-lockdown-coronavirus-6404346/

Monday, May 11, 2020

জনসংখ্যা

যারা বলেন যে জনসংখ্যা গণতন্ত্রের নিয়ন্ত্রক, আমি তাদের সাথে সহমত নই। ভারতে হিন্দুদের জনসংখ্যা এখনও ৮০ শতাংশের কাছাকাছি আর মুসলিমদের জনসংখ্যা সেখানে ১৫ শতাংশ মত। অথচ তারপরেও, OBC-A কোটা হোক বা জমজমের পানি আনার নিয়ম, দেশের অধিকাংশ নীতি নির্ধারিত হয় ভাইজানদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে। তাহলে জনসংখ্যা কিভাবে নিয়ন্ত্রক হলো?

গোটা পৃথিবীর সাপেক্ষে, ইহুদীদের জনসংখ্যা কত? অথচ দেখুন তাবড়-তাবড় দেশগুলির উপর তারা ছড়ি ঘুরিয়েই যাচ্ছে। উল্টোদিকে, ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষের অবস্থানটা লক্ষ্য করুন। আসলে গণতন্ত্র বলুন আর অন্য যেকোন তন্ত্র, তাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক হলো অর্থ যেটার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বণিক শ্রেণীর হাতে। এই কারণেই ইহুদী হোক বা মারোয়ারী, প্রভাব বিস্তারের জন্যে তাদের সংখ্যার দরকার হয়না।

যারা ভাবছেন যে হিন্দুরাও মুসলমানদের মত গণ্ডাগণ্ডা বাচ্চা পয়দা করলেই 'ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে', তারা মূর্খের স্বর্গে বসবাস করছেন। হ্যাঁ, হিন্দুদের জনসংখ্যা ৮০% থেকে কমে ৫০% শতাংশ হলে তাদের গলার স্বর আরও কমবে ঠিকই কিন্তু সেটা ৮৫% হলেও তাদের স্ট্যাটাসে আহামরি কোন পরিবর্তন ঘটবেনা। নিজেদের অধিকার অর্জন করার ক্ষমতা রাখার মেকানিজম তৈরী না হলে, শুধু জনসংখ্যা দিয়ে লাভের লাভ কিছুই হবেনা, বরং দেশের আরও বিপদ বাড়বে।

Sunday, May 10, 2020

লকডাউন

যথেষ্ট হয়েছে লকডাউন, যথেষ্ট হয়েছে আতঙ্ক নিয়ে বাঁচা, এটাকে বেঁচে থাকা বলেনা। দেশ জুড়ে খুলে দেয়া হচ্ছে মদের দোকান, সেখানে নিয়মকানুন শিকেয় তুলে ভীড় জমাচ্ছে লক্ষ লক্ষ লোক, অথচ দেশে নাকি লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে, বিনা পরীক্ষাতে, নিয়ে আসা হচ্ছে বহু মানুষ, যাদের আগমনের সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সরকার মরকজ নিয়ে নীরব, মরকজের প্রধান, মৌলানা সাদকে আজও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ব্র‍্যান্ডেড হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রধান বলছেন কয়েকজনের জন্যে কোন সম্প্রদায়কে দায়ী করা যায়না অথচ দলদাসরা 'সিঙ্গল সোর্স' নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে ট্রেন্ড করছে।

লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, ইত্যাদি গালভরা কথার পরেও করোনার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বিমানচালক, বিমানসেবিকা, সৈন্যবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা। ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা না করেই যেমন হঠাৎ করে চালু করা হয়েছিল লকডাউন, তেমনি হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে এবার তাদের ফেরাতে হবে। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম, তাই ফেরানোর পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করার আগেই সেটা নিয়ে ঘোষণা হয়ে গেছে যাতে রাজনৈতিক ফয়দা তোলা যায়। আর এই 'তু তু ম্যায় ম্যায়' এর চক্করে বেচারা শ্রমিকদের অবস্থা এখন করুণ। পায়ে হেঁটে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিতেও তারা আর ভীত নয়। প্রশাসনের উপর কতটা ভরসা থাকলে কেউ এতটা ঝুঁকি নিতে পারে সেটা ভাবুন।

তাই এই লোকদেখানো লকডাউন চালিয়ে আর কোন লাভ নেই। প্রত্যেকটা সরকারই আস্তে আস্তে সব ক্ষেত্রই চালু করে দেবে কিন্তু লকডাউন তোলার কথা সরাসরি ঘোষণা করবেনা যাতে পরবর্তী পরিস্থিতির দায় সরাসরি তাদের উপর না পড়ে। কিন্তু এরই মধ্যে লাভের গুড় তারা খেতেই থাকবে, সেটা মদের উপর বাড়তি রাজস্ব বসিয়েই হোক বা পেট্রোল ও ডিজেলের উপর বাড়তি এক্সাইজ ডিউটি, প্রতিমাসে সরকারি কর্মীদের একদিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে নিয়েই হোক বা রেশনে আসা অতিরিক্ত সামগ্রীর পার্টি অফিসের মাধ্যমে ব্যবসা - এরপরেও বলবেন যে দুর্যোগের কোন ভাল দিক নেই?

Friday, May 8, 2020

কবি প্রণাম

"মাটি তো কিছুটা নড়ে বড় গাছ পতনে"
বলেছিলেন রাজীব গান্ধী ইন্দিরার নিধনে।
কর্পোরেটে একেই বলে কোল্যাটারাল ড্যামেজ
গুডবুকে যান তিনি করেন যিনি ম্যানেজ।
লাইনে পড়লে কাটা গোটা কয়েক মজুর
সান্ত্বনার কথা বলে দায় ঝাড়েন হুজুর।
কেন তাঁরা হাঁটছিল সে প্রশ্নে নীরব
ফান্ডে টাকা দেয়া নিয়েই মন্ত্রী সরব।
ভাইরাস নিয়ে ঘুরতে পারে বড়লোকের সন্তান
গরীব খাবার চেয়ে পায় কীটনাশকের দান।
ফিরতে হলে নিজের বাড়ি গুনতে হবে ভাড়া
এরই মধ্যে আকাশ থেকে ঝড়বে ফুলের তোড়া।
যাক না শুকিয়ে ফুলগুলো একদিন পরেই
কেতা দেখে হাততালি দেবে তো সকলেই।
আজ নেই রবিঠাকুর যিনি ছাড়বেন 'নাইট'
সরকারি একরোখামিতে গরীবের হাল টাইট।
তাই আজও বেশী করে মিস করি যে তোমাকে
স্তাবকদের ভীড়ে আজও কবিগুরু ব্যতিক্রম থাকে।

Thursday, May 7, 2020

আত্মদীপ


পরিনির্বাণের উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেব অন্তিম শয্যায় শায়িত। ভগবান বিষ্ণুর নবম অবতারের নশ্বর দেহকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে শয্যা ঘিরে উপচে পড়ছে ভক্তবৃন্দের ভীড়। সবারই চোখ থেকে জল ঝরে পড়ছে অঝোর ধারায়। এমন সময় এক ভক্ত, অশ্রুসিক্ত নয়নে ভগবান বুদ্ধের সামনে এসে, করজোড়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে, আপনি তো আজ নির্বাণলাভ করছেন, আপনার অবর্তমানে আমাদের পথ দেখাবে কে? ন্যায়-অন্যায়ের শিক্ষা দেবে কে?

ভক্তের প্রশ্ন শুনে ভগবান চোখ খুললেন এবং মৃদু হেসে বললেন, "আত্মদীপ ভবঃ। আত্মশরণ ভবঃ। অনন্যশরণ ভবঃ।" মানে, নিজের বিবেকের অগ্নি প্রজ্বলিত করো। সেই আলোতে নিজেই নিজের পথ খুঁজে নাও। পথের জন্যে অন্যের শরণাপন্ন হয়োনা। এই কথাগুলি বলে ভগবান বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করলেন।

একজন সাধারণ মানুষ কতটা অসাধারণ পর্যায়ে উন্নিত হতে পারলে মাত্র ছ'টা শব্দে প্রত্যেকের জীবনের আদর্শ স্থির করে দিতে পারেন সেটা বোঝার জন্যে হয়তো আমাদের সারা জীবনও যথেষ্ট নয়। অথচ উনি নিজের পরিনির্বাণ শয্যায়, কত সহজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে মানুষের প্রকৃত গুরু হওয়া উচিত তাদের বিবেক। জ্বালিয়ে রাখা দরকার তাদের #আত্মদীপ

আজ সেই মহামানবের জন্মতিথিতে, তাঁকে অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা জানাই আর প্রার্থনা করি যেন তাঁর দেখানো পথেই চিরকাল চলতে পারি।

Monday, May 4, 2020

ইতিহাসের শিক্ষা

বেশ কিছুদিন আগে, নেটফ্লিক্সে মোসাদের উপর একটা তথ্যচিত্র দেখেছিলাম যেখানে মোসাদের কয়েকজন প্রাক্তন অধিকর্তার সাক্ষাৎকার দেখানো হয়েছিল। সেখানে একজন বলেছিলেন যে, মুসলিম সমাজের বিশেষত্ব হচ্ছে যে তারা ইতিহাসকে মনে রাখে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেই ইতিহাস বয়ে চলে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি বলেন, আরব, ইরান সহ অন্যান্য ইসলামিক দেশে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন যে তিনি হয়তো কোন গ্রামে গিয়ে কোনও ব্যক্তির বাড়ির খোঁজ করলেন, গ্রামের লোকেরা তার খোঁজ দেবে এই বলে যে "ঐ গদ্দারের পরিবার" বা "ঐ চোরের বাড়ি"? মজার কথা হল যে ঐ বাড়ির সাত পুরুষেও কেউ হয়তো গদ্দারি বা চুরি করেনি, কিন্তু তাও সেটা গদ্দার বা চোরের পরিবার কারণ খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে ঐ পরিবারের অষ্টম পুরুষ হয়তো এরকম কিছু করেছিল আর পুরো গ্রাম সেটা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মনে রেখেছে।

একই কথা ইহুদিদের জন্যেও প্রযোজ্য। প্রায় দু'হাজার বছর নিজেদের পিতৃভূমি থেকে বিতাড়িত থাকার পরেও তারা সেটা পুনরুদ্ধার করতে পেরেছিল কারণ তারা ইতিহাসকে নিজেদের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিল। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে, প্রতিটা নববর্ষের দিন তারা প্রার্থনা করেছে যে পরের নববর্ষ তারা জেরুজালেমে পালন করবে। আর এরই পরিণতিতে, বিভিন্ন প্রতিকূলতা অতিক্রম করে, পুনরুদ্ধার করে তাদের দেশ, ইজরায়েল যা আজ আর্থিক ও সামরিক শক্তিতে বহু প্রাচীন রাষ্ট্রকেই পিছনে ফেলে দিয়েছে।

উল্টোদিকে বাঙালীদের দেখুন, মাত্র সাত দশকের মধ্যেই তারা দেশ কেন টুকরো হয়েছিল সেটা ভুলে গেছে। দেশভাগের সময় তাদের পরিবারের উপর হওয়া অবর্ণনীয় অত্যাচারের কথা ভুলে গেছে। ১৯৪৬ এ খোদ কলকাতার বুকে, সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে হওয়া হিন্দু গণহত্যার কথা ভুলে গেছে। নোয়াখালী গণহত্যার কথাও ভুলে গেছে। বাংলার ক'জন প্রখ্যাত সাহিত্যিক বা চিত্রপরিচালক দেশভাগ, গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং বা নোয়াখালী নিয়ে বই লিখেছেন বা সিনেমা তৈরী করেছেন সেটা বলতে পারবেন? সত্যজিৎ থেকে সৃজিৎ, সুনীল থেকে শীর্ষেন্দু - এদের কারুর কাছেই এই উপমহাদেশের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা কোনও সৃষ্টির বিষয় হলনা কেন? আর খুচখাচ যে'কটা সিনেমা বা সাহিত্য রচিত হয়েছে তাতেও  সেকুলারিজমের নামে বিকৃতি ভরা হয়েছে যেখানে হাইলাইট করা হয়েছে একজন 'ভাল মুসলমান' কিভাবে একটা হিন্দু পরিবারকে রক্ষা করেছে আর প্রোজেক্ট করা হয়েছে যে সেটাই প্রকৃত ইসলাম।

আর আমরাও দিনের পর দিন ধরে এই জঞ্জালগুলোই গিলেছি আর নিজেদের সান্ত্বনা দিয়েছি যে এটাই হয়তো সত্যি, নিজেদের পরিবারের সাথে যেটা হয়েছে, সেটাই হয়তো ব্যতিক্রম। ক্যানিং ব্যাতিক্রম, কালিয়াচক ব্যতিক্রম, ধুলাগড় ব্যাতিক্রম, তেহট্ট ব্যাতিক্রম, বাদুড়িয়া ব্যতিক্রম, জামুড়িয়া ব্যতিক্রম, কাংলাপাহারি ব্যতিক্রম, উলুবেড়িয়া ব্যতিক্রম, টিকিয়াপাড়া ব্যতিক্রম, সবই ব্যতিক্রম যতক্ষণ না নিজের সাথে ঘটছে। এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত সাহিত্যিক হিমাদ্রী কিশোর বাবুর সাথে আলোচনায় উনি বলেছিলেন যে লেখকরা লেখেননা কারণ প্রকাশক ছাপবেনা আর প্রকাশক ছাপবেনা কারণ পাঠক-পাঠিকারা "খাবে না"। কথাটা যে কতবড় সত্যি সেটা তসলিমা নাসরিনের সাড়া জাগানো 'লজ্জা' বইটার ইতিহাস ফলো করলেই বুঝবেন। বাবরী মসজিদ ধ্বংসের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচারের প্রেক্ষিতে লেখা বইটার চোরা এডিশন পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু সেটা মূলত হয়েছে বইটা সেদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে। তাই এদেশে আনন্দ পাবলিশার্স যখন আইনত সেই বই বিক্রি করলো, সেটা পাঠক-পাঠিকাদের সেরকম নাড়া দিলনা। একই লেখিকার, 'লজ্জা'র থেকেও বেশী মর্মস্পর্শী রচনা ছিল 'ফেরা', জানিনা পশ্চিমবঙ্গের পাঠককূলের কতজন সেই বইটার নামটাও শুনেছেন।

এমতাবস্থায়, দেশের রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা যদি তোষণের প্রতিযোগিতায় নামেন তাহলে দোষটা কার, তাদের না আমাদের? নেতা-নেত্রীরা তো সমাজ সংস্কারক নয় যে তারা বিবেক অনুযায়ী চলবেন, তাদের একমাত্র কাজ হলো সমাজের বর্তমান পরিস্থিতির সদ্ব্যবহার করে, নিজেদের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখা। এখানে বর্তমান পরিস্থিতি ব্যাপারটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আর সেটা বুঝতে হলে মমতা ব্যানার্জীর হিজাব পরা ছবি থেকে রামনবমী পালনের উত্তরণ দেখুন, স্পষ্ট হয়ে যাবে। দিনের শেষে, একটা সমাজ ততটাই যোগ্য নেতা বা নেত্রী পায় যতটা তার নিজের যোগ্যতা। আপনি যদি ব্যতিক্রমের গল্পে ভুলে, সত্যকে অস্বীকার করেন তাহলে আপনাকেও "কয়েকজন ব্যক্তির ভয় বা রাগের কারণে করা কাজের জন্যে, গোটা সমাজকে দায়ী করা উচিত নয়" ধরণের উপদেশ বা পুলিশকে আক্রমণকারী পরিবারের দায়ভার পুলিশকেই বহন করে চলার মত ঘটনা মেনে নিতেই হবে।