Monday, July 27, 2020

সৈন্যদল

যেকোন যুদ্ধে, যত বড় রাজা-মহারাজারাই জড়িত থাকুন না কেন, সৈন্যদের ভূমিকা অপরিসীম। যুদ্ধের কৌশল সেনাপতি তৈরী করতে পারেন কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সেটা সঠিকভাবে প্রয়োগের দায়িত্ব সৈন্যদলের। যুদ্ধ শেষে, জয় করা জমির দখল রাখার জন্যেও প্রয়োজন এই সৈন্যদলের। আর ক্ষাত্রশক্তিতে সমৃদ্ধ এই সৈন্যদের একটা বড় অংশের কাছে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার মূল প্রেরণা হলো গ্রাসাচ্ছাদন এবং পরিবার প্রতিপালন।  কেবলমাত্র আদর্শগত কারণেও অনেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য।

হ্যাঁ, আজকের দিনে, যখন সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তখন এটা আমাদের অনেকের পক্ষেই মেনে নেয়া কষ্টকর, বিশেষ করে যাদের পরিবারের কেউই সেনাবাহিনীতে যুক্ত নয়, যে সেনাদলে যোগদানের পিছনে দেশপ্রেম প্রধান অনুপ্রেরণা নয়, কিন্তু এটাই বাস্তব। সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের দেশপ্রেম আমাদের সমান বা তার থেকে অনেক বেশী এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সেটা তাদের যথেষ্ট প্রেরণাও প্রদান করে কিন্তু সেনাবাহিনীতে যোগদানের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশপ্রেম মূল প্রেরণা থাকেনা। আর রাষ্ট্র সেটা জানে বলেই বিভিন্ন কালখণ্ডের কার্যকাল নির্ধারণ করে থাকে। দেশপ্রেম একমাত্র প্রেরণা হলে, সেনাদলে যোগদান থেকে অবসর নেয়ার মধ্যেকার সময়ের আর কোন কালখণ্ড নির্ধারণ করার প্রয়োজনই হতনা।

ক্ষাত্রশক্তির এই সংগঠনকে আজ আমরা দেশপ্রেমের সাথে জড়িয়ে দেখলেও, আমরা যদি একটু পিছিয়ে যাই তাহলে দেখবো যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে, যুধিষ্ঠির দুই পক্ষের সেনাদের কাছেই আহ্বান জানিয়েছেন যে তাঁরা যদি চান, তাহলে পক্ষ বদল করতে পারেন। একইভাবে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, নিজের অধীনে থাকা আঠারো অক্ষৌহিণী সৈন্য দুর্যোধনকে দিয়ে দিয়েছিলেন যেখানে তিনি নিজে পাণ্ডবদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অতএব, এটা স্পষ্ট যে সৈন্যদের জন্যে পক্ষ, অর্থাৎ আদর্শ, প্রধান নয়, নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদন ও পরিবারের নিরাপত্তা পেলে তারা যেকোন পক্ষের হয়েই নিজেদের ক্ষাত্রশক্তির প্রমাণ দিতে পারে। আর এই কারণেই ভারতের সেনারা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চের হয়ে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই করতে গিয়েও, নিজেদের বীরত্বের জন্যে প্রশংসিত হয়েছেন।

ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীতটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল বলে ক্ষমাপ্রার্থী কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক দোষারোপের ফলে কিন্তু সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই সংগঠনগুলির মাঠেঘাটে কাজ করা সৈন্যরা। তারা কোন একটা সংগঠনের আদর্শে কাজ করলেও, তাদের প্রাথমিক প্রয়োজন, অর্থাৎ, গ্রাসাচ্ছাদন এবং পরিবার প্রতিপালন, যদি প্রভাবিত হয়, তাহলে কেবলমাত্র আদর্শের জোরে, তাঁরা দীর্ঘদিন সংগঠনে যুক্ত থাকতে পারবে না। তাই নেতৃবৃন্দের এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য কি, একে অপরকে দোষারোপ করা নাকি নিজেদের শক্তি সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে যে সময় হলো সবচেয়ে শক্তিশালী তাই বাকিটা সময়ের হাতেই ছেড়ে দিলাম।

Sunday, July 26, 2020

কার্গিল বিজয় দিবস

কার্গিল দিবসে ভারতের মহান সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় আমরা যেন সেই সৈনিকদের না ভুলে যাই যারা অপারেশন পরাক্রমে শহীদ হয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে অপারেশন পরাক্রমে ৭৯৮ জন সৈন্য শহীদ হয়েছিলেন আর এই সংখ্যাটা কার্গিল বিজয়ে শহীদ হওয়া সৈন্য সংখ্যা থেকে অনেক বেশী। 

"ইস বার আর-পার কি লড়াই হোগি"- বলেছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। সারা দেশ থেকে সৈন্যদের নিয়ে গিয়ে কাশ্মীরে জমায়েত করানো হয়েছিল। কিন্তু কোন অদৃশ্য চাপে অথবা অজানা কারনে, আর-পার কি লড়াই তো দূরের কথা, একটা গুলি পর্যন্ত চালানোর অনুমতি পায়নি ভারতীয় সেনা। সীমান্তের ওপার থেকে চালানো পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে অসহায়ভাবে শহীদ হয়েছিলেন আমাদের জওয়ানরা। বিক্রম বাটরা ও সৌরভ কালিয়ার হত্যাকারীরা সেদিন কোন শাস্তি পায়নি।

শাস্তি অবশ্য হেমরাজের হত্যাকারীরাও পায়নি। হেমরাজকে মনে আছে তো? হেমরাজ, যার কাটা মাথা দিয়ে পাকিস্তানিরা ফুটবল খেলেছিল। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভায় মোদীজী হেমরাজের কথা বলতেন। হেমরাজের সঙ্গে হওয়া নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে মনমোহন সরকার কোন ভূমিকা নেয়নি বলে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করতেন। আজ ছয় বছরের বেশী হয়ে গেছে মোদীজী এই দেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আজ অবধি তিনি দেশের জন্যে প্রাণ বলিদানকারী, হেমরাজের পরিবারের সাথে দেখা করেননি। তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরীফ আমন্ত্রিত হয়েছেন কিন্তু হেমরাজের বিধবা স্ত্রী কোন আমন্ত্রণ পাননি।

তাই বন্ধু আজ কার্গিল বিজয় দিবস উদযাপন করার সময় একটু ভাবুন যে শহীদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কতটা আন্তরিক আর কতটা দেখনাই। কোন একটি বিশেষ দিবস আসলেই আমাদের শহীদ প্রেম উথলে ওঠে, দেশভক্তির গান শোনার হিড়িক লেগে যায় কিন্তু সত্যিই কি আমরা শহীদদের ত্যাগ মনে রেখেছি? সত্যিই কি আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল? প্রশ্নটা আজকের দিনে গায়ে একটু জ্বালা ধরালেও উত্তরটা কিন্তু সত্যি জানা দরকার।

Friday, July 24, 2020

স্মৃতিচারণ

১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। এগারো বা বারো ক্লাসে তখন পড়ছি। তপনদা তখনও বিদ্যার্থী পরিষদের প্রান্তীয় সংগঠন সম্পাদকের দায়িত্বে। তারই কথায়, মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার পরে, বেলডাঙাতে একমাস বিদ্যার্থী পরিষদের বিস্তারক হিসাবে থাকার পর, বহরমপুর থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রথম শিক্ষাবর্ষ শেষ করে (সৌভাগ্যক্রমে বহরমপুর ক্যাম্পে বৌদ্ধিক বিভাগের প্রমূখ ছিল তপনদা), প্রায় দু'মাস পরে বাড়ি ফিরেছি। তখন দোতলায় একটাই ঘর ছিল। ফলে আমি আর ছোড়দি, নীচে বড় ঘরে শুতাম। ছোড়দি ক্যাম্প খাটে আর আমি চৌকিতে।

তখন তপনদা মাঝেমধ্যেই আসতেন, রাতে থাকতেন। তপনদা রাতে থাকলে ছোড়দি অন্য ঘরে ঘুমাতো। এরকমই একদিন তপনদা এসেছিল আর শোয়ার সময় কে কোথায় শোবে, মানে ক্যাম্প খাটে কে শোবে আর চৌকিতে কে শোবে সেটা নিয়ে দ্বিধা। ক্যাম্প খাটে শুলে ফ্যানের হাওয়া বেশী লাগবে আর চৌকিতে শুলে যায়গা বেশী পাবে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা যে কোথায় শুতে বলবো।

কিছুক্ষণ আমার সমস্যা পর্যবেক্ষণ করার পরে সমাধানটা তপনদাই করে দিলো। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো যে, "তোর কোনটায় শুতে ইচ্ছে করছে? যেটায় তোর নিজের শুতে ইচ্ছা করছে, সেখানে আমাকে শুতে দে, কারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল যে নিজের জন্যে সেরা টা বেছে নেয়া।" যাবতীয় সমস্যার সমাধান শেষে, দু'জনে একসাথে চৌকিতেই শুলাম এবং আরও অনেক রাত্রির মত, সে রাত্রিটাও গল্প (নাকি তর্ক?) করেই কেটে গেল। পরেরদিন সকালে তপনদা চা-জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে গেলেও, সেই শিক্ষাটা এখনও মনে আছে।

Saturday, July 18, 2020

কুম্ভীরাশ্রু

সালটা ২০১৭। ১৪ই ফেব্রুয়ারী, হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠা দিবসে, ধর্মতলায় লক্ষাধিক হিন্দুর সমাগমে আয়োজিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্মরণাতীত কালের বৃহত্তম সমাবেশ। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-র সমাবেশকে ব্যর্থ করার জন্যে, একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ফুটবল প্রেমও হাওয়ায় উবে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের অবিসংবাদিত হিন্দু নেতা হিসাবে তপন ঘোষ স্বীকৃত। হিন্দুত্ব ভাঙিয়ে করেকম্মে খাওয়া বহু নেতারই মুখোশ খুলে পড়েছে। এমতাবস্থায়, তপন ঘোষকে বদনাম করার জন্যে, একটা বিশেষ 'ভবনে' রচিত হলো ষড়যন্ত্র। ১৭ই সেপ্টেম্বর 'দৈনিক যুগশঙ্খ' কাগজের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হলো "মমতার হয়ে চরম হিন্দুত্বের তাস খেলতে ময়দানে তপন ঘোষ"
শীর্ষক একটা খবর, যেখানে তপনদাকে, একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে, আরেকটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ আনা হলো।

অভিযোগ তো আনা হলো, কিন্তু অভিযোগটা করলো কে? না, সে প্রশ্নের কোন উত্তর লেখায় নেই, পুরোটাই নাকি "সূত্র" মারফত জানা গেছে। ব্র‍্যান্ডেড হিন্দু সংগঠনগুলির সমর্থনে প্রকাশিত সেই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সেই দিনই সংবাদপত্রের দপ্তরে প্রতিবাদপত্র পাঠালেন হিন্দু সংহতির তদানীন্তন সভাপতি, দেবতনু ভট্টাচার্য।
কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই প্রতিবাদপত্র প্রকাশিত হয়না। দু'দিন পরে, আমি পুনরায় প্রতিবাদপত্র পাঠাই কিন্তু সেটাও প্রকাশিত হয়না। অতএব বাধ্য হয়েই দ্বারস্থ হতে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার।

মজার কথা হচ্ছে যে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ জানাতেই 'দৈনিক যুগশঙ্খ' প্রতিবাদপত্রটা প্রকাশ করে এবং সেখানেও নিজেদের কলম চালিয়ে, হিন্দু সংহতির 'দল-নিরপেক্ষ' অবস্থানকে, 'ধর্ম নিরপেক্ষ' বানিয়ে দেয়।
এরপর প্রেস কাউন্সিলের থেকে সংবাদপত্রের জবাবদিহি চাওয়া হলে, যুগশঙ্খের তদানীন্তন প্রধান সাংবাদিক (জানিনা এখনও ঐ পদে আছেন কিনা), রক্তিম দাশ আমাকে ফোন করেন এবং যাবতীয় "ভুল বোঝাবুঝি" মিটিয়ে নেয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। আমি তার অনুরোধে সাড়া দেয়ার জন্যে শর্ত রাখি যে এই "ভুল বোঝাবুঝি" মেটানোর একটাই উপায় আর সেটা হলো যুগশঙ্খ কে, ঐ একই যায়গায় এটা প্রকাশ করতে হবে যে তাদের প্রকাশিত খবর মিথ্যা ছিল। রক্তিম বাবুর সাথে হওয়া কথোপকথন নীচে দেয়া ১ নং লিঙ্কে ক্লিক করে শুনতে পারেন।

তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। আমি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, দেবদত্তর গ্রামের বাড়িতে হওয়া বৈঠকে, তপনদা, দেবতনুদা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এবং সম্মতিতে হিন্দু সংহতি থেকে পদত্যাগ করেছি। ২০১৮ সালের ৩ রা আগস্ট, তপনদা তার প্রতিষ্ঠিত হিন্দু সংহতি বিলুপ্ত করে দেয়ার কথা বলেছেন আর সাথে এটাও বলেছেন কেউ যদি সেই সংগঠনের 'গুডউইল' ভাঙিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তিনি তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ জানাবেন না তবে তাদের কে, সংগঠনের গুডউইলের সাথে, লায়াবিলিটিও বহন করতে হবে। 

এতসব ঘটনা যখন ঘটছে, প্রেস কাউন্সিলের সাথে চিঠি চালাচালি চালিয়েই যাচ্ছিলাম এবং সেখানে ক্ষতিপূরণ হিসাবে পত্রিকার ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি, আর্থিক ক্ষতিপূরণও দাবী করেছিলাম।

সরকারি কাজ তাই দীর্ঘসূত্রিতা স্বাভাবিক আর সেই সূত্র মেনেই, দীর্ঘদিন চিঠি চালাচালির মাধ্যমে উত্তর ও প্রত্যুত্তরের পালা চলার পরে অবশেষে ২০১৯ সালের জুন মাসে, আমাকে চিঠি দিয়ে,
শুনানির দিন হিসাবে ৯ই জুলাই ধার্য্য করা হয় ।

আমি বর্তমানে হিন্দু সংহতির সাথে যুক্ত না থাকলেও ঘটনা ঘটার সময় যেহেতু যুক্ত ছিলাম তাই দায় এড়িয়ে যেতে চাইনি। ১৯শে জুন কাউন্সিলের চিঠি পাওয়া মাত্রই সেই বিষয়ে তপনদা ও বর্তমানে হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনুদা-র কাছে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলাম। দু'জনের থেকেই কোন মতামত না পেয়ে, ৬ই জুলাই তাদের রিমাইন্ডার দেয়ার পরে, দেবতনুদা জানায় যে এই বিষয়ে হিন্দু সংহতি আর এগোতে চায়না। দেবতনুদা-র মতামত জানার পরে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে তপনদা-র মতামত জানার কথা দেবতনুদা কে জানাই। আর ৮ই জুলাই তপনদা জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনিও এই বিষয় নিয়ে আর এগোতে চাননা। এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দ্বিতীয় লিঙ্কে ক্লিক করে পড়তে পারেন।

এতদূর অবধি যা চলেছিল সেটা মেনে নিয়েছিলাম আর এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে..." কাব্যে হয়, বাস্তবে নয় কিন্তু ভুল ভাঙলো প্রেস কাউন্সিল থেকে পাওয়া ১৩ই সেপ্টেম্বরের চিঠিতে যেখানে অভিযোগকারী হিসাবে আমাকে জানানো হয়েছে যে নির্দিষ্ট শুনানিতে উপস্থিত না থাকার জন্যে আমার মামলা বাতিল করা হয়েছে। এটা হওয়ারই ছিল, তাই অবাক হইনি। অবাক হলাম সেই চিঠিতে লেখা একটা তথ্যে যেখানে
প্রেস কাউন্সিল জানিয়েছে যে হিন্দু সংহতির পক্ষ থেকে, সংগঠনের সম্পাদক, শ্রী সুন্দর গোপাল দাস, ২রা জুলাই প্রেস কাউন্সিলকে জানিয়েছেন যে যুগশঙ্খের সম্পাদক নাকি এই অভিযোগের ভিত্তিতে ক্ষমা চেয়েছেন আর সেটা কাগজে প্রকাশিতও হয়েছে, তাই হিন্দু সংহতি আর এই মামলা চালাতে আগ্রহী নয়।

যুগশঙ্খ কবে তাদের এই মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের জন্যে ক্ষমা চাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে সেটা আমার তো চোখে পড়েনি, আপনাদের কারুর নজরে আসলে অবশ্যই অবগত করাবেন। তাহলে তপনদার মৃত্যুর পর, তার লেগাসীর দাবীদার হিসাবে যারা মাঠে নেমেছেন এবং সোশাল মিডিয়াতে অশ্রুপাত করছেন, তাদের সেই চোখের জলের কতটা কুম্ভীরাশ্রু আর কতটা প্রকৃত, সেটা বুঝতে সুবিধা হবে।

https://soundcloud.com/user2320526raktim-das-chief-reporter-jugasankhakha

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10156675866459865&id=620989864

Sunday, July 5, 2020

শ্রী তপন ঘোষ ও বঙ্গসমাজ

তপনদা করোনা আক্রান্ত হয়ে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, এখন যারা তপনদার কথা ও কাজের কথা ভেবে আক্ষেপ করছেন তাদের জন্যে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা করলাম। তপনদা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের জন্যে কি করেছে সেটার মূল্যায়ন তার সমসাময়িক হিন্দু সমাজ করতে পারেনি আর সেটা সমাজের দুর্ভাগ্য, তপনদার নয়। তপনদা কর্মযোগী, নদীর স্রোতের মত বয়েই যাবেন কিন্তু আশঙ্কা করছি যে তাকে চিনতে না পারার মূল্য দেয়ার জন্যে হিন্দু সমাজ প্রস্তুত তো?

বড্ড দেরী করে ফেলেছেন। এটা শুধু আপনার দোষ নয়। এটা আমাদের জাতির দোষ। জাতিটা বড্ড বুড়ো হয়ে গেছে। পুড়লে সাধু উড়লে ছাই, তবে সাধুর গুন গাই। কিন্তু তখন আর গুন গেয়ে কি হবে? সেই সাধু তো আর কিছু করতে পারবে না। আমেরিকার হিন্দুরা ২০০৬ সালে তপনদাকে চিহ্নিত (identify) করেছিল। স্বীকৃতি দিয়েছিল। বিপুলভাবে সাহায্য করেছিল। তাকে তিনবার আমেরিকায় নিয়ে গেছে। ওরাই দাদার একবার নেপাল, একবার লন্ডন যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এমনকি ইজরায়েলও যে গেছেন সেটাও ওদেরই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায়।

আপনারা একটু নিজেদের সঙ্গে ওদের তুলনা করে দেখুন। ওরা জানতে পারল, বুঝতে পারল, আপনারা এত কাছে থেকেও পারলেন না কেন? ওই স্থবিরতা। স্থিতি জাধ্য। Inertia. এটাই তমোগুনের চিহ্ন। হিন্দুরা নির্বোধের মতো একে সত্ত্বগুণ ভাবে। স্বামীজি বলেছিলেন, সারা দেশে রজোগুণের বন্যা বইয়ে দে। খুব কম হয়েছে। 

যাই হোক, বড্ড দেরী হয়ে গেছে। যদি এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, তাহলে সবাইকে বলে যান, উঠতি সূর্যকে নমস্কার করতে। ডুবন্ত সূর্যকে নয়। আর যৌবনকে স্বীকৃতি দিতে ও ভরসা করতে। সাদা মাথাকে নয়।

গুরুপূর্ণিমা


আজ গুরুপূর্ণিমা। স্মরণাতীত কাল থেকে, আজকের দিনটি ভারতবর্ষে গুরু পূজনের দিন হিসাবে পালিত। যদিও গুরুকে তাঁর শিষ্যরা প্রতিদিনই শ্রদ্ধা জানান কিন্তু আজকের দিনে যেহেতু মহর্ষি ব্যাসদেবের জন্ম, তাই দিন মাহাত্ম্য হিসাবে আজকের দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়।

সামাজিক জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই গুরুর প্রয়োজন আবশ্যিক। ছোটবেলায় বাড়ির গুরুজনেরা শিশুর গুরুর ভূমিকা পালন করেন। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরে জীবনে আসেন শিক্ষাগুরু। শিক্ষা অন্তে, কর্মজীবনে প্রবেশ করলে সেখানে এবং গার্হস্থ্য জীবনেও উপযুক্ত গুরুর পথনির্দেশ সেই ক্ষেত্রগুলিকে সুন্দর করে তোলে।

ব্যক্তি ও সমাজজীবনের প্রতিটা পর্যায়ে গুরুর অপরিসীম ভূমিকা থাকলেও সাথে এটাও মাথায় রাখা উচিত যে প্রত্যেকের গুরুই, যিনি নশ্বর দেহের অধিকারী, তাঁর প্রতিটা সিদ্ধান্তই নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই তাঁকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা মহেশ্বরের সাথে তুলনা করা মানে উভয়েরই অপমান। কোনও অযোগ্য ব্যক্তিও কিছুলোকের কাছে, কিছু সময়ের জন্যে, গুরু হিসাবে স্বীকৃতি পেতেও পারে। এমতাবস্থায়, তাকে ঈশ্বরত্ব প্রদান মানে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে চালানোর প্রচেষ্টা মাত্র। কারণ প্রকৃত গুরু নিজে কখনই লক্ষ্য নন, আর তিনি সেটা সাজার চেষ্টাও করেন না, বরং লক্ষ্যে পৌছানোর পথপ্রদর্শক মাত্র। সম্ভবত এই কারণেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা, ডাক্তারজী, কোন ব্যক্তি গুরুর বদলে ধ্যেয় বা আদর্শের প্রতীক গেরুয়া পতাকাকে বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুরু হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন।

প্রকৃত গুরুর পথনির্দেশ যেমন জীবনকে সুন্দর পথে নিয়ে যেতে পারেন তেমনি গুরু যদি স্থুল স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হন, তাহলে তার পথনির্দেশ শিষ্যদের বিভ্রান্ত করতে বাধ্য। এমতাবস্থায় আমাদের প্রত্যেকের কাছেই এমন একজন গুরু আছেন যে কখনও বিপথে চালিত করতে পারেনা, আর সেই গুরু হলেন আত্মদীপ বা আমাদের বিবেক। এই কারণেই পরিনির্বাণের সময়, ভগবান বুদ্ধ, নিজের অবর্তমানে, শিষ্যদেরকে আত্মদীপের পথে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আপনি জীবনে অন্য গুরুর সান্নিধ্যে যদি নাও পান, আপনার ভিতরের গুরু, কম্পাসের মত, সবসময়ই আপনাকে ঠিক রাস্তা চিনিয়ে দেবে। তবে আপনি সেই রাস্তায় চলবেন কিনা, সেটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।