Monday, July 27, 2020

সৈন্যদল

যেকোন যুদ্ধে, যত বড় রাজা-মহারাজারাই জড়িত থাকুন না কেন, সৈন্যদের ভূমিকা অপরিসীম। যুদ্ধের কৌশল সেনাপতি তৈরী করতে পারেন কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সেটা সঠিকভাবে প্রয়োগের দায়িত্ব সৈন্যদলের। যুদ্ধ শেষে, জয় করা জমির দখল রাখার জন্যেও প্রয়োজন এই সৈন্যদলের। আর ক্ষাত্রশক্তিতে সমৃদ্ধ এই সৈন্যদের একটা বড় অংশের কাছে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার মূল প্রেরণা হলো গ্রাসাচ্ছাদন এবং পরিবার প্রতিপালন।  কেবলমাত্র আদর্শগত কারণেও অনেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য।

হ্যাঁ, আজকের দিনে, যখন সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তখন এটা আমাদের অনেকের পক্ষেই মেনে নেয়া কষ্টকর, বিশেষ করে যাদের পরিবারের কেউই সেনাবাহিনীতে যুক্ত নয়, যে সেনাদলে যোগদানের পিছনে দেশপ্রেম প্রধান অনুপ্রেরণা নয়, কিন্তু এটাই বাস্তব। সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের দেশপ্রেম আমাদের সমান বা তার থেকে অনেক বেশী এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সেটা তাদের যথেষ্ট প্রেরণাও প্রদান করে কিন্তু সেনাবাহিনীতে যোগদানের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশপ্রেম মূল প্রেরণা থাকেনা। আর রাষ্ট্র সেটা জানে বলেই বিভিন্ন কালখণ্ডের কার্যকাল নির্ধারণ করে থাকে। দেশপ্রেম একমাত্র প্রেরণা হলে, সেনাদলে যোগদান থেকে অবসর নেয়ার মধ্যেকার সময়ের আর কোন কালখণ্ড নির্ধারণ করার প্রয়োজনই হতনা।

ক্ষাত্রশক্তির এই সংগঠনকে আজ আমরা দেশপ্রেমের সাথে জড়িয়ে দেখলেও, আমরা যদি একটু পিছিয়ে যাই তাহলে দেখবো যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে, যুধিষ্ঠির দুই পক্ষের সেনাদের কাছেই আহ্বান জানিয়েছেন যে তাঁরা যদি চান, তাহলে পক্ষ বদল করতে পারেন। একইভাবে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, নিজের অধীনে থাকা আঠারো অক্ষৌহিণী সৈন্য দুর্যোধনকে দিয়ে দিয়েছিলেন যেখানে তিনি নিজে পাণ্ডবদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অতএব, এটা স্পষ্ট যে সৈন্যদের জন্যে পক্ষ, অর্থাৎ আদর্শ, প্রধান নয়, নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদন ও পরিবারের নিরাপত্তা পেলে তারা যেকোন পক্ষের হয়েই নিজেদের ক্ষাত্রশক্তির প্রমাণ দিতে পারে। আর এই কারণেই ভারতের সেনারা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চের হয়ে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই করতে গিয়েও, নিজেদের বীরত্বের জন্যে প্রশংসিত হয়েছেন।

ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীতটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল বলে ক্ষমাপ্রার্থী কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক দোষারোপের ফলে কিন্তু সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই সংগঠনগুলির মাঠেঘাটে কাজ করা সৈন্যরা। তারা কোন একটা সংগঠনের আদর্শে কাজ করলেও, তাদের প্রাথমিক প্রয়োজন, অর্থাৎ, গ্রাসাচ্ছাদন এবং পরিবার প্রতিপালন, যদি প্রভাবিত হয়, তাহলে কেবলমাত্র আদর্শের জোরে, তাঁরা দীর্ঘদিন সংগঠনে যুক্ত থাকতে পারবে না। তাই নেতৃবৃন্দের এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য কি, একে অপরকে দোষারোপ করা নাকি নিজেদের শক্তি সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে যে সময় হলো সবচেয়ে শক্তিশালী তাই বাকিটা সময়ের হাতেই ছেড়ে দিলাম।

No comments:

Post a Comment