Saturday, July 18, 2020

কুম্ভীরাশ্রু

সালটা ২০১৭। ১৪ই ফেব্রুয়ারী, হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠা দিবসে, ধর্মতলায় লক্ষাধিক হিন্দুর সমাগমে আয়োজিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্মরণাতীত কালের বৃহত্তম সমাবেশ। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-র সমাবেশকে ব্যর্থ করার জন্যে, একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ফুটবল প্রেমও হাওয়ায় উবে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের অবিসংবাদিত হিন্দু নেতা হিসাবে তপন ঘোষ স্বীকৃত। হিন্দুত্ব ভাঙিয়ে করেকম্মে খাওয়া বহু নেতারই মুখোশ খুলে পড়েছে। এমতাবস্থায়, তপন ঘোষকে বদনাম করার জন্যে, একটা বিশেষ 'ভবনে' রচিত হলো ষড়যন্ত্র। ১৭ই সেপ্টেম্বর 'দৈনিক যুগশঙ্খ' কাগজের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হলো "মমতার হয়ে চরম হিন্দুত্বের তাস খেলতে ময়দানে তপন ঘোষ"
শীর্ষক একটা খবর, যেখানে তপনদাকে, একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে, আরেকটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ আনা হলো।

অভিযোগ তো আনা হলো, কিন্তু অভিযোগটা করলো কে? না, সে প্রশ্নের কোন উত্তর লেখায় নেই, পুরোটাই নাকি "সূত্র" মারফত জানা গেছে। ব্র‍্যান্ডেড হিন্দু সংগঠনগুলির সমর্থনে প্রকাশিত সেই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সেই দিনই সংবাদপত্রের দপ্তরে প্রতিবাদপত্র পাঠালেন হিন্দু সংহতির তদানীন্তন সভাপতি, দেবতনু ভট্টাচার্য।
কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই প্রতিবাদপত্র প্রকাশিত হয়না। দু'দিন পরে, আমি পুনরায় প্রতিবাদপত্র পাঠাই কিন্তু সেটাও প্রকাশিত হয়না। অতএব বাধ্য হয়েই দ্বারস্থ হতে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার।

মজার কথা হচ্ছে যে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ জানাতেই 'দৈনিক যুগশঙ্খ' প্রতিবাদপত্রটা প্রকাশ করে এবং সেখানেও নিজেদের কলম চালিয়ে, হিন্দু সংহতির 'দল-নিরপেক্ষ' অবস্থানকে, 'ধর্ম নিরপেক্ষ' বানিয়ে দেয়।
এরপর প্রেস কাউন্সিলের থেকে সংবাদপত্রের জবাবদিহি চাওয়া হলে, যুগশঙ্খের তদানীন্তন প্রধান সাংবাদিক (জানিনা এখনও ঐ পদে আছেন কিনা), রক্তিম দাশ আমাকে ফোন করেন এবং যাবতীয় "ভুল বোঝাবুঝি" মিটিয়ে নেয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। আমি তার অনুরোধে সাড়া দেয়ার জন্যে শর্ত রাখি যে এই "ভুল বোঝাবুঝি" মেটানোর একটাই উপায় আর সেটা হলো যুগশঙ্খ কে, ঐ একই যায়গায় এটা প্রকাশ করতে হবে যে তাদের প্রকাশিত খবর মিথ্যা ছিল। রক্তিম বাবুর সাথে হওয়া কথোপকথন নীচে দেয়া ১ নং লিঙ্কে ক্লিক করে শুনতে পারেন।

তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। আমি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, দেবদত্তর গ্রামের বাড়িতে হওয়া বৈঠকে, তপনদা, দেবতনুদা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এবং সম্মতিতে হিন্দু সংহতি থেকে পদত্যাগ করেছি। ২০১৮ সালের ৩ রা আগস্ট, তপনদা তার প্রতিষ্ঠিত হিন্দু সংহতি বিলুপ্ত করে দেয়ার কথা বলেছেন আর সাথে এটাও বলেছেন কেউ যদি সেই সংগঠনের 'গুডউইল' ভাঙিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তিনি তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ জানাবেন না তবে তাদের কে, সংগঠনের গুডউইলের সাথে, লায়াবিলিটিও বহন করতে হবে। 

এতসব ঘটনা যখন ঘটছে, প্রেস কাউন্সিলের সাথে চিঠি চালাচালি চালিয়েই যাচ্ছিলাম এবং সেখানে ক্ষতিপূরণ হিসাবে পত্রিকার ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি, আর্থিক ক্ষতিপূরণও দাবী করেছিলাম।

সরকারি কাজ তাই দীর্ঘসূত্রিতা স্বাভাবিক আর সেই সূত্র মেনেই, দীর্ঘদিন চিঠি চালাচালির মাধ্যমে উত্তর ও প্রত্যুত্তরের পালা চলার পরে অবশেষে ২০১৯ সালের জুন মাসে, আমাকে চিঠি দিয়ে,
শুনানির দিন হিসাবে ৯ই জুলাই ধার্য্য করা হয় ।

আমি বর্তমানে হিন্দু সংহতির সাথে যুক্ত না থাকলেও ঘটনা ঘটার সময় যেহেতু যুক্ত ছিলাম তাই দায় এড়িয়ে যেতে চাইনি। ১৯শে জুন কাউন্সিলের চিঠি পাওয়া মাত্রই সেই বিষয়ে তপনদা ও বর্তমানে হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনুদা-র কাছে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলাম। দু'জনের থেকেই কোন মতামত না পেয়ে, ৬ই জুলাই তাদের রিমাইন্ডার দেয়ার পরে, দেবতনুদা জানায় যে এই বিষয়ে হিন্দু সংহতি আর এগোতে চায়না। দেবতনুদা-র মতামত জানার পরে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে তপনদা-র মতামত জানার কথা দেবতনুদা কে জানাই। আর ৮ই জুলাই তপনদা জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনিও এই বিষয় নিয়ে আর এগোতে চাননা। এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দ্বিতীয় লিঙ্কে ক্লিক করে পড়তে পারেন।

এতদূর অবধি যা চলেছিল সেটা মেনে নিয়েছিলাম আর এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে..." কাব্যে হয়, বাস্তবে নয় কিন্তু ভুল ভাঙলো প্রেস কাউন্সিল থেকে পাওয়া ১৩ই সেপ্টেম্বরের চিঠিতে যেখানে অভিযোগকারী হিসাবে আমাকে জানানো হয়েছে যে নির্দিষ্ট শুনানিতে উপস্থিত না থাকার জন্যে আমার মামলা বাতিল করা হয়েছে। এটা হওয়ারই ছিল, তাই অবাক হইনি। অবাক হলাম সেই চিঠিতে লেখা একটা তথ্যে যেখানে
প্রেস কাউন্সিল জানিয়েছে যে হিন্দু সংহতির পক্ষ থেকে, সংগঠনের সম্পাদক, শ্রী সুন্দর গোপাল দাস, ২রা জুলাই প্রেস কাউন্সিলকে জানিয়েছেন যে যুগশঙ্খের সম্পাদক নাকি এই অভিযোগের ভিত্তিতে ক্ষমা চেয়েছেন আর সেটা কাগজে প্রকাশিতও হয়েছে, তাই হিন্দু সংহতি আর এই মামলা চালাতে আগ্রহী নয়।

যুগশঙ্খ কবে তাদের এই মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের জন্যে ক্ষমা চাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে সেটা আমার তো চোখে পড়েনি, আপনাদের কারুর নজরে আসলে অবশ্যই অবগত করাবেন। তাহলে তপনদার মৃত্যুর পর, তার লেগাসীর দাবীদার হিসাবে যারা মাঠে নেমেছেন এবং সোশাল মিডিয়াতে অশ্রুপাত করছেন, তাদের সেই চোখের জলের কতটা কুম্ভীরাশ্রু আর কতটা প্রকৃত, সেটা বুঝতে সুবিধা হবে।

https://soundcloud.com/user2320526raktim-das-chief-reporter-jugasankhakha

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10156675866459865&id=620989864

No comments:

Post a Comment