Saturday, June 24, 2023

বাঙালীত্ব

ভারতে, সঙ্ঘী আর কম্যুনিস্ট - উভয়ের কাছেই পৃথিবীটা দ্বিমাত্রিক। সঙ্ঘীদের কাছে "মছলিখোর বংগালী" সহী হিন্দু নয় আর ঠিক একইভাবে, কম্যুনিস্টদের কাছে, ভারতমাতার জয়ধ্বনি দেয়া বাঙালীরা আসল বাঙালী নয়।


এই কারণেই কিছু অমর্ত্য সেন বা সাগরিকা ঘোষের মত বাঙালীর দেশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্যে সঙ্ঘীরা বাঙালী সমাজকে কাঠগড়ায় তুলতে পারে কিন্তু তিস্তা শীতলবাড় বা হেমন্ত কারকাড়ের জন্যে তারা সম্পূর্ন মারাঠা জাতিকে নিয়ে কদর্য মন্তব্য করেনা অথবা হর্ষদ মেহতা, কেতন পারেখ বা নীরব মোদীর জন্যে সব গুজরাটিকেই চোর বলেনা। আসলে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে সঙ্ঘীদের রাজনৈতিক অসাফল্য তাদের এই দুই জাতির বিরুদ্ধে আক্রোশের মূল কারণ।

উল্টোদিকে কম্যুনিস্টরা, যারা ভেনেজুয়েলাতে বৃষ্টি হলে কলকাতাতে ছাতা খুলে ঘোরে বা নিকারাগুয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উত্থানে পশ্চিমবঙ্গে বনধ ডাকে তারা কিন্তু কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতরা জেহাদি অত্যাচারের কারণে গৃহচ্যুত হলে কোন প্রতিবাদ করেনা কারণ তারা বাঙালী নয়। ঘরের পাশে বাংলাদেশে অসহায় হিন্দু বাঙালীদের ক্রমাগত রাষ্ট্রীয় আক্রমণেও কম্যুনিস্টদের কোন বনধ ডাকতে দেখা যায়না। হয়ত নিকারাগুয়া বা কিউবার নাগরিকদের থেকে বাংলাদেশের হিন্দুরা কম বাঙালী।

কিন্তু সৌভ্যাগ্যের বিষয় হল যে এই দুই মতাদর্শের বাইরেও হিন্দু বাঙালীর অস্তিত্ব ছিল, আছে এবং তাদের সংখ্যাই প্রতিদিন বাড়ছে যারা মছলিও খায় আবার বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠে ভারত মাতার জয়ধ্বনিও দেয়। যারা গঙ্গার পবিত্র জলে অবগাহন করে, মা কালীর মূর্তির সামনে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্যে জীবনদানের শপথ গ্রহণ করতো, যাদের কাছে "বন্দেমাতরম" এখনও একটা প্রেরণা। তাদের কাছে, শুধুমাত্র "জয় শ্রী রাম" বলাই হিন্দুত্বের পরিচায়ক নয়, "জয় মা কালী" হুঙ্কারও তাদের দেহে অ্যাড্রেনালিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। যাদের কাছে হিন্দুত্ব আর বাঙালিত্ব বিপ্রতীপ নয়, সমানুপাতিক ও পরিপূরক।

বকচ্ছপ

সারা পৃথিবীতে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রেরণা মূলত দু'টি - অর্থ ও ক্ষমতা। সাধারণ হিন্দুরা, বিশেষত বাঙালীরা, সেটার সাথে আদর্শ'কে যোগ করে, 'রাজনৈতিক মতাদর্শ' নামক এমন একটা বকচ্ছপ বানিয়েছে যেটা তাদের না যোগাতে পারে অর্থ, না দিতে পারে ক্ষমতা বরং লাভের মধ্যে কেড়ে নেয় তাদের সামাজিক নিরাপত্তা।

সভ্যতা'র মাপকাঠি

সভ্যতার অগ্রগতি মানে শুধু উন্নত জীবনযাত্রা বা প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা নয়, সভ্যতার অগ্রগতি মানে 'বিশ্বাস' থেকে 'কৌতূহল'-এ উপনীত হওয়া। সভ্যতা মানে নিজের অজ্ঞানতাকে স্বীকার করে, অজানাকে জানতে চাওয়া। সভ্যতা মানে আত্মকেন্দ্রীক মানসিকতা থেকে সার্বজনীন উন্নয়নে আগ্রহী হওয়া। সভ্যতা মানে স্মৃতি ও কল্পনার বশীভূত না হয়ে জীবন উপভোগ করা।