Saturday, February 29, 2020

নতুন রূপ


আজ দিল্লীর দাঙ্গা নিয়ে মিডিয়াগুলির একাংশ যেভাবে নির্লজ্জ আর একপেশে সংবাদ পরিবেশন করে চলেছে সেটা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেত যদি মোদী সরকার ২০১৬ সালে NDTV-র বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারতো। দেশবিরোধী কাজে অভিযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও মোদী তখন NDTV-র বিরুদ্ধে এগোতে পারেননি। এক পা এগিয়েও, দুই পা পিছিয়ে আসতে হয়েছিল। শাস্তি নিয়ে সমঝোতা করে, শাস্তি প্রক্রিয়াটাই বাতিল করে দেয়া হয়েছিল।

আর এই রকম একাধিক ঘটনা কেন ঘটেছিল সেটা আমার অনেক পুরনো একটা পোস্টেই (https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10156231022014865&id=620989864) লিখেছি। হ্যাঁ, সেই সময়, দিল্লীর রাজনীতিতে নবাগত মোদী, সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগেছিলেন। আর তার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল জেটলীর মত নেতাদের প্রতি তাঁর নির্ভরতা। জেটলী ছিলেন নেহরু ভাবধারার সেই নেতা যিনি সবার সাথেই রসেবশে থাকতে পছন্দ করতেন। এই কারণেই তিনি মোদী সরকারের দ্বিতীয় বর্ষপালনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত না থেকে, NDTV-র আইনি পরামর্শদাতা, সুহেল শেঠের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অরুণ জেটলী, প্রমোদ মহাজন, সুষমা স্বরাজ প্রমুখ নেতারা বাজপেয়ী আমলের নেতা যাদের সঙ্গে মোদী-শাহর রাজনীতি অচল।

আজ মোদী২ সরকারে জেটলী বা সুষমার মতন নেতারা নেই আর তাদের না থাকার ফল সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে স্পষ্ট। লক্ষ্য করে দেখুন, আজ কেজরিওয়াল সরকার কানহাইয়া কুমারের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা চালানোর অনুমতি দিচ্ছেন, দিল্লীর দাঙ্গা সম্পর্কে মমতা ব্যানার্জী সংযম দেখাচ্ছেন, এগুলি কিসের প্রতীক? এগুলো কি প্রমাণ করেনা যে দেশের স্বার্থ জড়িত এমন ঘটনা গুলিতে মোদী সরকার বিরোধীদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন?

বাজারে মমতা ব্যানার্জীর যা ইমেজ, তার প্রেক্ষিতে এই নীরবতা অনেক কিছুই বুঝিয়ে দেয়। আর সেই কারণেই পশ্চিমবঙ্গেই যদি দ্বিতীয় শাহিনবাগ হয় তাহলে আমি অবাক হবনা। বিশ্বস্ত সূত্রের মতে, ফুরফুরা থেকে প্রচুর ইন্ধন যোগানো হচ্ছে যাতে এই রাজ্যের পরিস্থিতিও দিল্লীর মত করা যায় কিন্তু মোদীর সমর্থনে বলীয়ান মমতা ব্যানার্জী কোন সাপকেই ফণা তুলতে দেবেননা বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা যাচ্ছে।

হ্যাঁ, আমি এখনও বিশ্বাস করি যে এই রাজ্যের প্রশাসন জেহাদি আগ্রাসনকে দমন করতে যথেষ্ট সক্ষম যদিনা তাদের উপর রাজনৈতিক চাপ থাকে। আত্মদীপ শুধু তাদের বিবেকের ডাকে সাড়া দেয়ার আবেদন রেখে যাবে।

Friday, February 28, 2020

পুলবামার অন্যদিক

পুলবামা হামলা কান্ডে, দেশের সবচেয়ে বিশ্বস্ত তদন্তকারী সংস্থা NIA, উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করতে ব্যর্থ হলো আর তারই পরিণতিতে জামিনে মুক্ত পেল হামলার অন্যতম অভিযুক্ত, ইউসুফ চোপান। কর্পোরাল অভিমণ্যু গৌরের হত্যাকান্ডে, কলকাতা পুলিশ উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ যোগার করতে অক্ষম হওয়ায়, যেভাবে জামিন পেয়েছিল সাম্বিয়া সোহরাব, ঠিক একইভাবে জামিল পেল ইউসুফ চোপান।

আজ থেকে ঠিক চোদ্দ দিন আগেই যারা পুলবামা হামলার বার্ষিকী নিয়ে সমাবেশ করেছিলেন, নিজেদের সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট সেই নারকীয়  হামলার বিবরণ দিয়ে ভরিয়ে দিয়েছিলেন, আজ তাদের মধ্যে কতজন NIA-র এই ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

চার্জশিট দাখিলে ব্যর্থতা শুধু ইউসুফ চোপানের জামিনের রাস্তাই করে দিলনা তার সাথে অনুচ্চারিত থেকে অনেক প্রশ্নের উত্তরও। যেমন, কেন হামলার সম্ভাবনা জেনেও জওয়ানদের এয়ারলিফটের আবেদন অগ্রাহ্য করা হল? কিভাবে ৩০০ কেজি বিস্ফোরক ভারতে প্রবেশ করলো এবং সবার নজর এড়িয়ে পুলবামা পৌছে গেল? কিভাবে একটা সিভিলিয়ান গাড়ি, বিনা বাধায়, মিলিটারি কনভয়ের কাছে পৌছে গেল? এরকম আরও অনেক প্রশ্নের উত্তর আর হয়তো কখনই পাওয়া যাবেনা।

ভারতমাতার ৪০ জন সন্তানকে প্রকাশ্য দিবালোকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল সেটা নিয়ে আর আমাদের খুব বেশী আগ্রহ আছে বলে মনে হয়না। ঠিক যেমনভাবে সাম্বিয়া সোহরাব বা ইন্সপেক্টর তাপস চৌধুরী হত্যায় মুন্না ইকবালের কথা আজ আমরা অনেকেই ভুলে গেছি, যেমনভাবে উড়ি, পাঠানকোটের কথা ভুলে গেছি, সেভাবেই হয়তো ভুলে যাবো পুলবামার কথা। হয়তো পরবর্তী নির্বাচনের আগে আবার তৈরী হবে বালাকোট-দ্য এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে কোন সিনেমা আর আমরাও দেশপ্রেমের আবেগে বুঁদ হয়ে, ভিড় জমাবো হলে। কিন্তু কখনই প্রশ্ন করবনা যে ৪০ জন জওয়ানের হত্যার দায় কার। বিনা প্রশ্নে সেনাদের সম্মান দেয়াটাই তো দেশভক্তির প্রমাণ আর তাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই সেটা দেশদ্রোহিতা।

https://www.sangbadpratidin.in/india/nia-refutes-claims-of-pulwama-attack-accused-yusuf-chopan/

https://www.newindianexpress.com/nation/2020/feb/27/pulwama-attack-accused-granted-bail-as-nia-failed-to-file-chargesheet-2109378.html

বিকল্প

কয়েকটা প্রশ্ন মাথায় ঘোরাফেরা করছে, উত্তর পাচ্ছিনা -

১) তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয়া বিধায়কদের বিরুদ্ধে তৃণমূল দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেয়নি কেন?

২) রোজভ্যালি, সারদা, নারদা ইত্যাদি মামলাগুলির কথা মিডিয়া থেকে হারিয়ে গেছে কেন?

৩) বিমানবন্দরে সোনা নিয়ে আটক করা কেসের বর্তমান অবস্থা কি?

৪) লোকসভা নির্বাচনের আবহে জেতা পৌরসভাগুলির নিয়ন্ত্রণ হাতবদল হল কেন?

৫) রাজীব কুমার নিয়ে সিবিআইয়ের সিংহবিক্রম সহসা সিক্ত মার্জারে পরিণত হল কেন?

৬) লোকসভা ভোটের আগে গোটা রাজ্যে দাপিয়ে বেড়ানো মুকুল রায়কে হঠাৎ ফ্রিজ করে দেয়া হল কেন?

এইসব প্রশ্নের একটা উত্তর হল যে সবগুলিই কাকতালীয়। কিন্তু সেটা যদি না হয়, তাহলে যাঁরা হিন্দুস্বার্থ রক্ষায়, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে এই রাজ্যে বিজেপির আগমনের প্রতীক্ষায় আছেন, তাদের ব্যাকআপ পরিকল্পনা তৈরী রাখা উচিত।

Saturday, February 22, 2020

কচুরিপানা

"Valor, bravery are attributes which are considered inferior to, so called, intellectualism in Bengal. I am not sure of reason but I could see and feel it for last 10 years of my stint in Bengal." অর্থাৎ "শৌর্য ও সাহসিকতার মত গুণাবলীকে, তথাকথিত, বৌদ্ধিক ক্ষমতার থেকে হীন দৃষ্টিতে দেখা হয়। এর কারণ সম্পর্কে আমি নিশ্চিত নই তবে পশ্চিমবঙ্গে আমার গত ১০ বছরের কার্যকালে আমি এটা লক্ষ্য এবং অনুভব করেছি"। আমার গতকালের শিবরাত্রি বিষয়ক প্রবন্ধটি পড়ে, এই মন্তব্য করেছেন রাজ্য পুলিশের এক উচ্চপদস্থ অফিসার।

ভদ্রলোকের অনুধাবন যে কতটা সত্যি সেটা বোঝা যায় আমাদের ক্ষুদিরাম বা নেতাজী প্রীতির বদলে গান্ধীভক্তি দেখে। সংঘাতের বদলে আপোষকেই আমরা আমাদের মূলমন্ত্র হিসাবে মেনে নিয়েছি। আর এই স্বভাব কিন্তু একদিনে হয়নি, হয়েছে বছরের পর বছর আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভ্রান্ত শিক্ষার ফলশ্রুতিতে। বর্তমান প্রজন্মে এই মানসিকতার জন্যে, তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের পরিবারও সমানভাবে দায়ী। আর তার সঙ্গে দায়ী আমাদের ধর্মগুরুরা যারা সমাজকে ধর্মের শিক্ষা অর্থাৎ সামাজিক কর্তব্য পালনের শিক্ষা দেয়ার বদলে, তাঁদের শিষ্যদেরকে কেবলমাত্র আত্মবিকাশ ও আত্মপ্রচারের পথে চালিত করেছেন।

এরই ফলস্বরূপ বাঙালী, বিশেষত, তাদের যুবসমাজ এমন এক ট্যাঁশ প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে যাদের সামনে সমাজের জন্যে কাজ করার কোন পরিকল্পনা নেই, পিছনে কোন অনুপ্রেরণা নেই। ফলে শিঁকড় বিহীন, বিবেক শূন্য এই যুবসম্প্রদায় স্রোতের জলে কচুরিপানার মত ভেসে চলেছে লক্ষ্যহীন ভাবে। পুঁথিগত শিক্ষার ফলে তাঁদের মধ্যে বিদ্যা তো আসছে কিন্তু অভাব দেখা দিচ্ছে শিক্ষার। যে শিক্ষা তার পাওয়া উচিত ছিল তার পরিবার থেকে, শিক্ষকদের থেকে, ধর্মীয় গুরুদের থেকে। শিক্ষার অভাবের ফলে তাদের জীবন শুধু বর্তমান কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।

অথচ অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে এই অসুবিধা নেই। তাদের পরিবার, সমাজ, ধর্মগুরুরা আজও তাদের কারবালার কথা বলে অনুপ্রাণিত করেন, গ্বাজা এ হিন্দের স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করে দেন। ফলে নিজেদের শিঁকড়ের সাথে তাদের যোগসূত্র প্রতিদিন আরও দৃঢ় হয়। আর তাদের এই দৃঢ়তার সামনে হীনমন্যতায় ভোগে বাঙালী যুবসমাজ। তাই তাদেরই অনুকরণ করে, অনুসরণ করে, নিজেদের সীমাবদ্ধতা লুকাতে চায়। আর কচুরিপানার পক্ষে সেটা খুব অস্বাভাবিক নয়।

হালাল খাদ্যে সম্মতি দেয়া, বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার সঙ্গে নবী দিবস পালনে সম্মত হওয়া, মসজিদের সামনে দিয়ে শবদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় হরিধ্বনি না দেয়া, এই সবই আপোষের পরিচায়ক। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে আপোষের দ্বারা কোন জাতি নিজের পরিচয় ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারেনি। সেটাই যদি পারতো তাহলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পরেও, হিন্দুবহুল ভারতে কাশ্মীর বা কালিয়াচক বা আজাদ ময়দান ঘটতো না, ভারতের মাটিতে "ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে, ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ" বা "আফজল হাম শরমিন্দা হ্যায়, তেরে কাতিল জিন্দা হ্যায়" স্লোগান উঠতো না।

আপোষ করে পরিচয় ও ধর্ম রক্ষা করা যায়না। মহাভারতের সময়ে, কৌরবদের থেকে মাত্র পাঁচটা গ্রামের দাবী হোক বা বর্তমান সময়ে বিদ্যালয়ে চিরাচরিত সরস্বতী পূজার দাবী - আবেদন নিবেদনের দ্বারা কখনই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়না। অধিকার কোন ভিক্ষা নয় যা চাইলে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অধিকার হল দাবী যা দাবীদারের মধ্যে ছিনিয়ে নেয়ার শক্তি থাকা দরকার। যারা বলেন যে অসির চেয়ে মসির ক্ষমতা বেশী, আমি তাদেরকে শুধু এটাই মনে করিয়ে দিতে চাই যে মসি তখনই অসির চেয়ে শক্তিশালী যখন সেই মসির সুরক্ষায় আরেকটা অসি নিযুক্ত থাকে।

Friday, February 21, 2020

মহা শিবরাত্রি


আমরা, বাঙালীরা, শ্রীকৃষ্ণকে পূজো করি কিন্তু যোদ্ধা রূপকে নয়, প্রেমিক রূপকে। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ যেখানে মাত্র ১০ বয়সে বৃন্দাবন ছেড়ে যাবার পর আর ওমুখো হননি, সেখানে আমরা নিজেদের ঘাটে যাবার বয়সেও প্রেমরস আর বাৎসল্য রসে নিজেদের এমন জারিত করে রাখলাম যে চক্রধারীর পূজো করার আর সময় পেলাম না। যুদ্ধ করার দম আমাদের নেই, তাই চক্রধারীও আমাদের পূজ্য নয়।

যোগীশ্বর মহাদেবকেও আমরা আমাদের সুবিধা অনুসারে এক গোলগাল নাদুসনুদুস চেহারায় কল্পনা করে নিয়ে সারা জীবন তার মাথায় জল ঢেলে পূন্য কামিয়ে গেলাম। তাঁর দোহাই দিয়ে শুধু নেশাকেই জাস্টিফাই করে গেলাম। যোগীরাজ হিসাবে পূজো করলে আর তার মত হতে হলে যেহেতু কষ্ট করতে হবে, ঘাম ঝড়াতে হবে তাই এই সহজ সমাধান।

একইভাবে গণেশের ক্ষেত্রেও তাঁর পাণ্ডিত্য ও শত্রুদের প্রতি তাঁর নির্মম মানসিকতাকে অগ্রাহ্য করতে আমরা তাকে এক বোকাসোকা চরিত্র হিসাবে কল্পনা করে নিলাম। আমাদের গণেশ শত্রুবিনাশি নয়, বড়বাজারের গদিতে, তাকিয়ায় হেলান দিয়ে বসে থাকা এক চর্বির পাহাড় মাত্র। তাই কাউকে 'গোবর গণেশ' বলে আমরা আত্মপ্রসাদ অনুভব করি।

আত্মপরিচয় বিসর্জন দিয়ে, সেকুলার সাজার ভুত আমাদের এমনভাবে গ্রাস করেছে যে ইদানীং আমরা, থীমের বাহানায়, মা দুর্গাকেও অস্ত্র বিহীন করে দিয়েছি। অশুভকে ধ্বংসের জন্যে যে শক্তির সৃষ্টি, তাঁকেও আমরা, নিজেদের মত, শক্তিহীন করে দিয়েছি।

যতদিন না পর্যন্ত আমরা আমাদের উপাসিত দেবী-দেবতাদের প্রকৃত রুপকে অর্চনা করতে শিখবো, তাদের সেই রূপকে নিজেদের ব্যবহারিক জীবনে আনতে শিখবো, ততদিন আমরা যতই পূজো করিনা কেন, ঈশ্বরের কৃপাদৃষ্টি লাভ করবনা। তাই আমাদের শাস্ত্রে বলেছে, 'শিবং ভূত্বাঃ শিবং যজেৎ" অর্থাৎ শিবের উপাসনা করার জন্যে শিবের মতই হওয়া উচিত।

সবাইকে মহাশিবরাত্রির শুভেচ্ছা জানাই।

Thursday, February 20, 2020

ভারতের রাজনৈতিক দিশা

বর্তমানে হিন্দুত্ববাদী বা জাতীয়তাবাদীদের (দুটোই আমার কাছে সমার্থক কারণ ভারতে হিন্দুত্বই জাতীয়ত্ব) একটা স্বাভাবিক ঝোঁক বিজেপির প্রতি রয়েছে। জাতীয়তাবাদ কোন একটা বিশেষ দলের পেটেন্ট হতে পারেনা কারণ জাতির ব্যাপকতা পার্টির থেকে অনেক অনেক বেশী, কিন্তু তবুও ভারতে এই মনোভাবের প্রচলন ঘটেছে এবং ক্রমশ এই মানসিকতার উপর ভিত্তি করেই যাবতীয় মেরুকরণ ঘটছে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে তবে মূখ্য কারণ দু'টো।

এক) দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ও তার শাখা সংগঠনগুলি সমাজের বিভিন্ন স্তরে এই কাজের জমি তৈরী করে আসছে। সঙ্ঘের যেকোন শাখা সংগঠনেরই, সেটা বিদ্যার্থী পরিষদ হোক মজদুর সঙ্ঘ, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ হোক বা বনবাসী কল্যাণ আশ্রম, অন্যান্য সাংগঠনিক কাজের সাথে পরোক্ষভাবে জুড়ে থাকে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধির লক্ষ্য। তাই এই সংগঠনগুলির সাথে যারা যুক্ত থাকেন তারা বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে যেমন কিছু বাড়তি সুবিধা পান, তেমনিভাবেই অবিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসলে এদের প্রভাব দমন করার চেষ্টা করেন। ফলে, বিজেপির প্রতি এদের নির্ভরশীলতা ও আসক্তি ধীরে ধীরে বেড়ে যায়।

দুই) বিজেপি বাদে অন্যান্য দলগুলির নেতৃত্ব, আবার বলছি, নেতৃত্ব, সাধারণ কর্মীরা নয়, সেকুলার সাজার জন্যে ওরফে মুসলমানদের ভোট পাবার জন্যে হিন্দুদের ধর্মবিশ্বাস ও স্বার্থের পরিপন্থী কথা বলে, নিজেদেরকে হিন্দুদের থেকে ক্রমশ দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন। যতদিন সবক'টা দল এই কাজ করতো এবং বিপরীত চিন্তা যোগানোর কোন বিকল্প ছিলনা, ততদিন তাদের রুজিরোজগারের অসুবিধা হয়নি। কিন্তু যে মূহুর্তে হিন্দুদের তথা জাতীয়তাবাদের পক্ষে কথা বলার মত বিকল্প শক্তির আবির্ভাব হয়েছে, এদের চিরাচরিত পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে।

বিজেপি নিজেও এই সেকুলার রোগ থেকে মুক্ত নয় আর সেই কারণেই এককালে বিজেপিতে হিন্দুত্বের পোস্টারবয়, আদবানী, জিন্নাহ কে সেকুলার বলেছিলেন, বাবরি মসজিদ ভাঙার দিনকে নিজের জীবনের কালো দিন বলেছিলেন এবং গুজরাটে হিন্দুদের লড়াইকে সরকারের উপর দাগ বলে বর্ণনা করেছিলেন। আর সেই কারণেই ছয় বছর ভালভাবে সরকার চালানোর পরেও বাজপেয়ী সরকার ক্ষমতায় ফিরতে পারেননি। কারণ দলের সমর্থকেরা বিজেপির থেকে এই রূপ প্রত্যাশা করেননা। তাই সেই আদবানীই ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হলে, দেশ তাকে প্রত্যাখ্যান করে।

নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহর সাফল্য হল যে তাঁরা এই জাতীয়তাবাদকে, নিজেদের ইমেজের সাথে সুচারুভাবে মিশিয়ে দিতে পেরেছেন। সার্জিক্যাল স্ট্রাইক বা বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইকের মত সামরিক অভিযানকে তাঁরা কঠোর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রমাণ হিসাবে প্রতিপন্ন করতে পেরেছেন। অথচ মমতা ব্যানার্জীর আমলে কাটোয়ার ত্রাস, জঙ্গল শেখ সহ বহু মুসলমান অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে, জেলে ভরা হলেও মমতা সেগুলোকে কখনও নিজের সাফল্য বলে প্রচার করতে পারেননি, পাছে মুসলমানদের ভোট সরে যায়। এমন নয় যে মোদী বা শাহর আমলে মুসলমান তোষণ হয়নি, জমজমের পানি আনার জন্যে মুসলমানদের বিশেষ অনুমতি দেয়া হোক বা ইউপিএ আমলে ৯০ টা জেলায় শুরু হওয়া মুসলমানদের উন্নয়ন কাজকে ৩০৮ টা জেলায় ছড়িয়ে দেয়া হোক, মোদী সরকার কারুর থেকেই পিছিয়ে নেই। কিন্তু তাদের সুবিধা হল যে এই বিষয়ে তাদের আক্রমণ করার মত কোন দল নেই কারণ সবাই মুসলমানদের ভোটের লোভে মত্ত। অথচ অন্য কোন দল একই কাজ করলে, বিজেপি অনায়াসেই তাদের আক্রমণ করে, নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক আরও সংগঠিত করতে পারে।

এমতাবস্থায়, বিরোধী দলগুলিকে যদি বিজেপির সঙ্গে প্রকৃত মোকাবিলা করতেই হয় তাহলে তাদেরকে বিজেপির গড়ে হামলা করতে হবে। মানে নিজেদের সেকুলার সাজার লোভ সংবরণ করে, জাতীয়তাবাদী মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। লক্ষ্য করে দেখুন, সদ্য দিল্লী নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পাওয়া কেজরীওয়াল, নিজে CAA-র বিরোধী হলেও, কিন্তু শত প্রলোভন সত্ত্বেও, একবারও শাহিনবাগে যাননি বা তাদের সমর্থনে কোন কথা বলেননি। আর সেই কারণেই শাহিনবাগ নিয়ে দিল্লী নির্বাচনে মেরুকরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। বিরোধী দলগুলি যদি এখনও সংখ্যালঘু ভোটের আশায়, সংখ্যাগুরুর আবেগ ও স্বার্থগুলিকে অস্বীকার করতে থাকে তাহলে আগামী লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপির বিজয়রথ থামবেনা।

Tuesday, February 18, 2020

কৌশলের লড়াই

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী, নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োজিত প্রশান্ত কিশোরের পরামর্শ অনুযায়ী, কেবলমাত্র মহিলা নির্বাচকদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের জন্যে তৈরী হয় শর্বাণী ফাউন্ডেশন। সোশাল মিডিয়াতে ব্যাপক প্রচারের দ্বারা, নিজেদের লক্ষ্য পূরণে সাফল্য অর্জনের পরে, প্রশান্ত কিশোরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে বিজেপি এবং তারপরে বন্ধ করে দেয়া হয় এই NGO এর কাজ।

এরপর, বিহারের নির্বাচনে বিজেপি খুব খারাপভাবে পরাজিত হলে, এই রকম সংগঠনের উপযোগিতা পুনরায় উপলব্ধি করেন নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ, এবং তারই ফলশ্রুতিতে শর্বাণী ফাউন্ডেশনকে রূপান্তরিত করা হয় অ্যাসোসিয়েশন অফ বিলিয়ন মাইন্ডস (ABM) নামক একটা NGO তে, যার দায়িত্ব পান দীপক প্যাটেল এবং হিমাংশু সিং।

ABM এর মূল দায়িত্ব পর্দার পিছনে বিজেপির পক্ষে জমি তৈরী করা। বর্তমানে প্রশান্ত কিশোর তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে যেভাবে স্ট্র‍্যাটেজি তৈরী করছেন, অমিত শাহর তত্ত্বাবধানে সেই একই কাজ করে ABM। পশ্চিমবঙ্গে আগামী ২০২১ সালের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে, ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে এই সংগঠন। মোদীর সঙ্গে যতদিন 'সেটিং' ঠিকঠাক চলবে ততদিন বিজেপি এই রাজ্যের জন্যে না ঝাঁপালেও, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যাতে বিজেপিকে বিপাকে না পড়তে হয় সেই লক্ষ্যে নীরবে জমি তৈরীর কাজ করে চলেছে এই সংগঠন।

মহারাষ্ট্র, ঝাড়খন্ড, দিল্লী হাতছাড়া হওয়ার পরে, পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে মোদী ও শাহ কতটা আগ্রহী সেটার উত্তর সময়ের গর্ভে তবে জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই রাজ্যে ABM এর কাজের সাথে যুক্ত হয়েছেন এই রাজ্যেরই একজন জনপ্রিয় হিন্দুত্ববাদী নেতা। জনশ্রুতি যদি সত্যি হয়ে থাকে তাহলে আগামী ভোটে বিজেপি এই রাজ্যে হিন্দুত্বের ইস্যুতে মেরুকরণের মাধ্যমে নির্বাচনে গেলে আমি অবাক হবনা। তবে একটা বিষয় নিশ্চিত যে আগামী বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে প্রশান্ত কিশোর ও অমিত শাহর স্ট্র‍্যাটেজির লড়াই। কে কতটা জনমতকে প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত করতে পারেন, সেটার উপরেই বিধানসভার ফলাফল নির্ভর করবে।

https://m.huffingtonpost.in/entry/how-modi-shah-turned-a-women-s-rights-ngo-into-a-secret-election-propaganda-machine_in_5ca5962ce4b05acba4dc1819?ncid=other_whatsapp_catgqis0hqm&utm_campaign=share_whatsapp

Monday, February 10, 2020

সংখ্যার জোর

মনে করুন যে আপনি একটা গাড়ি চালাচ্ছেন, হঠাৎ একটা কাঠবিড়ালি যদি আপনার গাড়ির সামনে চলে আসে, তাহলে আপনি হয়তো লক্ষ্যও করবেন না। কাঠবিড়ালির বদলে যদি একটা কুকুর হয়, তাহলে আপনি হয়তো সেটাকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন কিন্তু বাঁচাতে না পারলেও নিজেকে সান্ত্বনা দেবেন যে আপনার কিছু করার ছিলনা। এবার, কুকুরের বদলে যদি একটা গরু এসে যায়, তাহলে আপনি সেটাকে বাঁচানোর জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করবেন আর দুর্ভাগ্যবশতঃ সেটাতে সফল না হলে, একটা আত্মগ্লানি আপনাকে গ্রাস করবে। কিন্তু গরুর বদলে যদি হঠাৎ একটা হাতি চলে আসে, তখন আপনি যেভাবেই হোক সংঘর্ষ এড়ানোর চেষ্টা করবেন কারণ সংঘাত হলে আপনার ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক বেশী।

একইভাবে, আপনি যদি ৫ জনকে নিয়ে কোন সরকার বিরোধী মিছিল করেন, মূহুর্তের মধ্যে পুলিশ জেলে ভরে দেবে। সংখ্যাটা যদি ৫০ হয়, তাহলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করবে। সংখ্যাটা যদি ৫০০ হয়ে যায় তখন পুলিশ আলোচনা করে, একটা নির্দিষ্ট স্থান অবধি যেতে দেবে। কিন্তু সংখ্যাটা যদি ৫০০০ হয়ে যায়, তখন সেই পুলিশই উপযুক্ত নিরাপত্তা নিয়ে মিছিলকে নিজের গন্তব্যস্থলে নিয়ে যাবে।

উপরের দুটো উদাহরণে স্পষ্ট যে size matters। আকার যত বড় হবে, বিরোধীরা ততই সমীহ করবে। CAA নিয়ে মুসলমানদের প্রতিবাদ হল নিজেদের আকার দেখানোর একটা উপায়। দিল্লীর শাহিনবাগ, বিহারের শান্তিবাগ বা কলকাতার পার্ক সার্কাস, পুরোটাই একই সূত্রে বাঁধা আর সেটা হল ইসলাম। কেন্দ্র সরকারের রামমন্দির, ৩৭০ ধারা, তিন তালাক আইন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, ইত্যাদি একের পর এক পদক্ষেপে, নিজেদের কৌমের প্রভাব ও প্রতিপত্তি নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠা মুসলমানরা নিজেদের কৌমের সংখ্যা, প্রভাব আর প্রতিপত্তি বজায় রাখার জন্যেই এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। দুঃখের বিষয় হল যে, কিছু হিন্দু নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে বা অজ্ঞানতার কারণে এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন আর নিজেদের জাতের স্বার্থের কথা ভুলে, নিজেদেরকে বিধর্মীদের স্বার্থসিদ্ধির ঘুটি বানিয়ে ফেলেছেন।

Sunday, February 2, 2020

আইনের শাসন

না, আমি সাধারণ নাগরিকদের নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার পক্ষপাতী নই। আইন মানে কিছু শুকনো ধারা নয়, আইন মানে নিয়ম - যা মেনে চললে সামাজিক পরিকাঠামো ও নিরাপত্তা বজায় থাকে। তাই আইনের শাসন বজায় থাকা দরকার। এখন প্রশ্ন করতেই পারেন যে আইনের রক্ষকরাই যদি তাদের দায়িত্ব পালনে অক্ষম হন, সামাজিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন, তাহলে সাধারণ নাগরিকদের কাছে উপায় কি। সেক্ষেত্রেও আমি আইন ব্যবস্থার উপরেই নির্ভরশীল থাকাই পছন্দ করবো। প্রয়োজনে, উচ্চতর আধিকারিকের কাছে এই বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে, যথোপযুক্ত সমাধানের প্রচেষ্টা করবো। আর সেটাও যদি সফল না হয়, সেক্ষেত্রে বিষয়টা জনতার দরবারে নিয়ে যাবো।

এক্ষেত্রে একটা কথা স্পষ্ট করে দেয়া দরকার যে কোন ঘটনার ফলে যদি আক্রান্ত ব্যক্তির তৎক্ষনাৎ কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকে তাহলে সে নিজের বা সহনাগরিকের জীবন বা সম্পত্তি রক্ষা করার জন্যে যেটা প্রয়োজনীয়, সেই পদক্ষেপ নিতেই পারেন। সেই পদক্ষেপ আপাতদৃষ্টিতে আইনের বিরোধী হলেও আদতে আইনসম্মত।

কিন্তু যে বিষয় আমার সরাসরি ক্ষতি করছেনা, কিন্তু আমার বিশ্বাস যে তার ফলে ভবিষ্যতে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে, সেক্ষেত্রে সুনাগরিকের দায়িত্ব প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তাদের উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে বাধ্য করা। নিজেদের দৈনন্দিন কাজের সাথে সাথে, যদি আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজও সাধারণ নাগরিকদেরই করতে হয়, তাহলে খামোখা ট্যাক্স দিয়ে পুলিশ-প্রশাসন রাখার তো দরকারই নেই। আমি ট্যাক্সও দেবো, আবার বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে অস্ত্রও ধরবো, দু'টো তো একসাথে চলতে পারেনা। 

হ্যাঁ, রাজনৈতিক সমীকরণের স্বার্থে, সাধারণ নাগরিকদের অ্যাড্রেনালিন ক্ষরণ করানোর জন্যে, অনেক উস্কানিমূলক বক্তব্য বাজারে ছাড়া হবে কিন্তু একটা জিনিস ভেবে দেখুন, যারা আপনাদের আইন হাতে নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, তাদের নিজেদের পরিবারের কতজন সেই পথের পথিক হয়েছেন। আজ আবেগের বশে কোন বেআইনি কাজ করে আপনি যদি আইনি জটিলতার সম্মুখীন হন, তখন সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে আপনার পরিবার। তাই আবেগে ভেসে যাওয়ার আগে, নিজের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন যে আপনি যেটা করছেন, সেটা আপনার ও আপনার পরিবারের ত্যাগের উপযুক্ত তো? আত্মদীপ বা বিবেকের আলোয় পথ চলতে শিখুন।