Wednesday, November 29, 2023

লক্ষ কন্ঠে গীতা পাঠের আগে কোরান পড়ুন

'হিন্দুত্ববাদী'দের উদ্যোগে ব্রিগেড ময়দানে 'লক্ষ কন্ঠে গীতাপাঠ'-এর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী থাকলেও এই অনুষ্ঠান, আমার কাছে, কোনও হিন্দুত্ববাদী কর্মসূচি নয়। এর পিছনে যশ, অর্থ, রাজনৈতিক স্বার্থ সহ একাধিক বিষয় থাকতে পারে কিন্তু ধর্ম রক্ষা বা হিন্দু স্বার্থ রক্ষা একেবারেই নেই। আমার এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হিন্দুত্বের সার্টিফিকেটধারীরা আমাকে 'পতিত হিন্দু' বলে দাগাতে পারেন কিন্তু আমি মনে করি, লক্ষ কেন, কোটি কন্ঠেও গীতার বাছাই করা কয়েকটি অধ্যায় পাঠ করলে হিন্দুদের কোন উপকার হবে। কেন? এবার সেটাই বলছি।

প্রথমত, গীতা, যোগ বা আয়ুর্বেদের মত বিষয়গুলি হিন্দুদের proprietary নয়, বরং এগুলো সমগ্র বিশ্বকে সনাতন সংস্কৃতির উপহার। গীতা পাঠ ও তার উপলব্ধি একজন ইহুদি বা ফরাসি'কে ততটাই অনুপ্রাণিত করবে যতটা একজন হিন্দুকে। শ্রীমৎভগবতগীতা'র শিক্ষা সার্বজনীন। 

দ্বিতীয়ত, আমি মনে করি গীতা'র কয়েকটি বাছাই অধ্যায় পাঠের পরিবর্তে যদি কোরান শরীফের বাছাই কয়েকটি অধ্যায় পাঠ করা হতো তাহলে সেটা অনেক বেশী কার্যকর হতো। কারণ, গীতা পাঠের অনুষ্ঠানে গীতার মাহাত্ম্য ও সনাতন ধর্মের গরিমার কথা শুনে একদল ভাববে যে সনাতন ধর্ম এত মহান, সে নিশ্চয়ই অবিনশ্বর কিন্তু তারা ভুলে যাবে যে সনাতন ধর্ম এত মহান হওয়া সত্ত্বেও তার ধারণকারী ভূমির পরিমান কালেকালে কিভাবে সঙ্কুচিত হয়ে বর্তমান পরিস্থিতিতে এসেছে এবং এখনও সঙ্কুচিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

তৃতীয়ত, গীতার এই বাছাই কয়েকটি অধ্যায় পাঠের পরিণতিতে অন্যদল ভেবে নেবে যে গীতার মত অন্য ধর্মগ্রন্থগুলিতেও নিশ্চয়ই একই কথা বলা হয়েছে। তারা কোনদিন অন্যদের ধর্মগ্রন্থের একটা পাতা না উল্টেও, অন্ধের হস্তীদর্শনের মত, সেগুলি সম্পর্কে মনগড়া ধারণা তৈরী করে নেবে।

হিন্দুদের যদি গীতাপাঠ করতেই হয় তাহলে সেটা তারা ব্যক্তিগত উদ্যোগে করুক, সাংগঠনিকভাবে নয়। কোন ব্যক্তি নিজের চরিত্রের কতটা বিকাশ করতে চায় বা পারে সেটা একান্তই তার ব্যক্তিগত বিষয়। যদি এরকম উদ্যোগ সাংগঠনিকভাবে নেয়া হয় তাহলে সেক্ষেত্রে আমি কোরান পাঠের আয়োজনকে স্বাগত জানাবো। সেক্ষেত্রে হিন্দুদের 'সব ধর্মে একই কথা বলা আছে' এই ভ্রান্ত ধারণার অবসান হবে এবং তারা আশু বিপদ থেকে সতর্ক থাকতে পারবে। আর সেই কাজ যদি প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে হয় তাহলে সেটা বিরাট সাফল্য।

Wednesday, September 27, 2023

হিজাব সংস্কৃতি

শরীর এবং সমাজ - উভয়েরই একটা নিজস্ব গঠনতত্ত্ব থাকে, সেখানে কোন ফরেন এলিমেন্ট খুব সহজে গ্রহণযোগ্য হয়না। এই কারণেই হাজারটা ফ্যাক্টর মিলিয়ে কারুর লিভার বা হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হলেও অনেকক্ষেত্রেই গ্রহীতার শরীর সেটা মানিয়ে নিতে পারেনা। রোগীর মৃত্যুও হয়।


একইভাবে, সমাজ, জাতি সবারই একটা গঠনতন্ত্র আছে। বিদেশী সংস্কৃতি বা প্রথা সেখানে খুব সহজে প্রবেশাধিকার পায়না। এরকমই একটা বিদেশী সংস্কৃতি হলো হিজাব। মেয়েদের পর্দানশীন রাখা ভারতের সংস্কৃতি নয়। হিন্দুসমাজে পর্দাপ্রথার প্রচলন হয় মুসলিম আক্রমনের পরে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে ভারতের যেসব অঞ্চলগুলি দীর্ঘদিন মুসলিমদের অধীনে ছিল, সেখানেই এই পর্দাপ্রথার প্রচলন ঘটেছে। উত্তর ও পূর্বভারতেই তা প্রধানতঃ সীমাবদ্ধ। স্থানভেদে তার রুপ আলাদা – পাঞ্জাবে দোপাট্টা তো বাংলায় ঘোমটা। 


“এ দেশে মেয়েদের পর্দা নেই, কোনদিনও ছিলনা। উত্তর ভারতের এই ম্লেচ্ছ বর্বরতা মারাঠা দেশ কখনও স্বীকার করে নেয়নি।“ – না, এই কথাগুলি বালাসাহেব ঠাকরে বা কোন তথাকথিত উগ্রহিন্দুনেতার নয়। এ দাবী বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের। তিনি তাঁর মধুমালতী কাহিনীতে বামন রাওকে দিয়ে এই সত্য প্রকাশ করেছেন। এতে যদি কেউ শরদিন্দুবাবুকে উগ্রবাদী ভাবতে চান তো ভাবতেই পারেন, কিন্তু এতে সত্য বদলাবেনা।


ইসলামে নারীর অবস্থান শুধু ভোগ্যপন্য হিসাবে। নারীদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতার কোন স্থান সেখানে নেই। তাই নিজের ভোগের জিনিসকে অন্যের থেকে লুকিয়ে রাখার জন্যেই বোরখা ও হিজাবের প্রচলন। তার সৌন্দর্য্য যাতে অন্য কারুর দৃষ্টি আকর্ষন না করে তাই তাকে পর্দানশীন করার চেষ্টা। আর সম্প্রতি কর্ণাটক সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিজাব বিতর্কের সময় এই সাংস্কৃতিক বিভাজন'টা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খোদ এই রাজ্যে বহু তথাকথিত 'সেকুলার'ও হিজাব মেনে নিতে পারেনি আর তাই হিজাব আজও ফরেন এলিমেন্ট।


এই 'ফরেন এলিমেন্ট' তকমা ঘুচিয়ে, হিজাব'কে বাঙালীর পরিচিত ও 'ঘরের জিনিস' করে তোলার লক্ষ্যেই নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যার প্রমাণ নীচের ছবিতে স্পষ্ট। দোকানে, বাড়িতে বাঙালী যখন নিয়মিত এই শব্দটা দেখবে, সেই শাড়ি কিনবে, পরবে, তখন সেটা নিয়ে তার মানসিক জড়তা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। ঠিক যেভাবে সত্যনারায়ণ'কে সত্যপীর বানিয়ে তার ব্রতকথার শেষে "আমীন" ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বা বনদেবী'কে বনবিবি বানিয়ে দেয়া হয়েছে।


এগুলো হলো সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আপনার অজ্ঞাতেই আপনার মননশক্তি'কে প্রভাবিত করার প্রয়াস। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বিক্রিত (বিকৃতও বটে) পত্রিকাগোষ্ঠীর পোষ্য সাহিত্যিকরা দীর্ঘদিন ধরেই 'এ বাড়ির সিন্নির সাথে ও বাড়ির ফিরনি'কে মিলিয়ে এসেছেন কিন্তু এতকিছুর পরেও এপারে কালিয়াচক, ধুলাগড়, তেলেনিপাড়া, বাদুড়িয়া এবং ওপারে ব্রাহ্মণবেড়িয়া, নাসিরনগর ইত্যাদি বন্ধ হয়নি। কারণ শরীর হোক সমাজ, ফর্মুলাটা এক - গ্রহীতার মানিয়ে না নিয়ে মৃত্যু অবধারিত।

Thursday, September 21, 2023

মহিলা সংরক্ষণ আইন - উৎসাহ না অপমান?

🔴 ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। 


🟡 ভারতে দু'জন মহিলা, প্রতিভা দেবীসিং পাটিল ও দ্রৌপদী মূর্মু দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন।


🟢 ভারতের ২৪ জন মহিলা বিভিন্ন রাজ্য/কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের রাজ্যপাল/লেঃ গভর্নর পদে আসীন ছিলেন অথবা আছেন।


🔵 ভারতে ১৬ জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয়েছেন -

১.    সুচেতা কৃপালনী (উঃ প্রঃ)

২.    শশিকলা কাকোদকর (গোয়া)

৩.    আনয়ারা তৈমুর (আসাম)

৪.    নন্দিনী সতপথী (ওড়িশা)

৫.    মেহবুবা মুফতি (জঃ ও কাঃ)

৬.    শীলা দীক্ষিত (দিল্লি) 

৭.    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (পঃ বঃ)

৮.    মায়াবতী (উঃ প্রঃ)

৯.    রাজিন্দর কৌর ভাট্টাল (পাঞ্জাব)

১০.  জানকী রামচন্দ্রন (তাঃ নাঃ)

১১.  সুষমা স্বরাজ (দিল্লি)

১২.  রাবরী দেবী (বিহার)

১৩.  বসুন্ধরা রাজে (রাজস্থান)

১৪.  জয়ললিতা (তাঃ নাঃ)

১৫.  উমা ভারতী (মঃ প্রঃ)

১৬.  অনাদিবেন প্যাটেল (গুজরাট)


🟠 ভারতে ১০০ জনেরও বেশী মহিলা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক ও বিধান পরিষদে আসীন আছেন বা ছিলেন।


প্রায় এক দশক ক্ষমতাসীন থাকার পর হঠাৎ একদিন মনে হলো যে রাজনীতিতে মহিলাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে আর পেশ করা হলো 'নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম' বা মহিলা সংরক্ষণ আইন। শুধু পেশ হওয়া নয়, নতুন আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথা ভেঙে, সেই বিল সিলেক্ট কমিটিতে না গিয়ে পাশও হয়ে গেল আর সেটাও কোন সংশোধনী ছাড়াই কারণ কোনও দলই লাভের গুড় ছাড়তে বা বিরাট সংখ্যক মহিলা ভোটারদের কাছে অপ্রিয় হতে রাজী নয়।


সংবিধানের এত বড় একটা সংশোধন হয়ে গেল কিসের ভিত্তিতে? এই সংশোধনী পেশ করার আগে সরকার কি রাজনীতিতে মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে কোন সার্ভে করিয়েছিল? ভারত ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশে কি রাজনীতিতে মহিলাদের এত ব্যপক অংশগ্রহণ দেখা যায়? দু'টি প্রশ্নেরই উত্তর হলো - "না"। আধুনিক গণতন্ত্রের পীঠস্থান বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত কোন মহিলাকে নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান বলে নির্বাচন করতে পারেনি কিন্তু ভারত সেটা হেলায় একাধিকবার করেছে আর তার একমাত্র কারণ হলো ভারত হিন্দুবহুল দেশ।


হ্যাঁ, কেবলমাত্র হিন্দুবহুল দেশ বলেই রাজনীতিতে মহিলাদের এই অংশগ্রহণ দেশবাসী খোলা মনে মেনে নিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে বহুগুণ বেশী মহিলারা রাজনীতিতে সক্রিয় ও প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছেন। কারণ হিন্দুদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কার মানুষের লিঙ্গের ভিত্তিতে বিচার করতে শেখায়না। কিন্তু দেশবাসীর এত সদর্থক মানসিকতার পরেও, প্রায় এক দশক শাসন করার পর, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন "রাজনীতিতে মহিলাদের সাথে বৈষম্য"র অজুহাত দিয়ে আইনে বদল করেন তখন সেটাকে হিন্দুদের উদার মানসিকতার প্রতি অপমান ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না।

Monday, July 10, 2023

রাজনীতির সেফটি ভালব

বাড়িতে প্রেসার কুকার তো প্রায় সবারই আছে কিন্তু সেটাতে যে সেফটি ভালব, যেটাকে সাদা বাংলায় আমরা 'সিটি' বলি, থাকে সেটার উপযোগিতা কখনও খেয়াল করেছেন? এই 'সিটি' বা সেফটি ভালব'টা বানানো হয় প্রেসার কুকারের আয়ু ও নিরাপত্তার কথা ভেবে। নীচে থেকে আসা তাপে প্রেসার কুকারের ভিতর যে বাস্পের প্রবল চাপের সৃষ্টি হয় সেটা যদি জমতেই থাকে তাহলে কুকারটা ফেটে যাবে। কিন্তু রান্না সম্পূর্ণ করতে গেলে যতটা চাপের প্রয়োজন সেটা একবারে তৈরী হয়না। এই দ্বিমুখী চাহিদার কথা ভেবেই তৈরী হয়েছে সেফটি ভালব। কুকারের ভিতরে চাপ খুব বেড়ে গেলে কিছুটা বাস্প সেটা বের করে দেয়, ফলে কুকার নিরাপদ থাকে আর নীচের থেকে নিয়মিত তাপের ফলে পুনরায় যে বাস্পচাপ তৈরী হয় সেটা খাবারকে সুসিদ্ধ করে তোলে।


এই ফর্মুলা মেনেই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ আমলা, অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। ১৮৫৭ সালে সিপাহীদের গুঁতো খাওয়ার পরে আরেকটা বিদ্রোহ ব্রিটিশ রাজ সামলাতে পারতনা। তাই তদানীন্তন ভাইসরয়, লর্ড ডাফরিনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি এমন একটা মঞ্চ তৈরী করেন যা সশস্ত্র সংগ্রামের বদলে, আবেদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ করবে। লালা-বাল-পালের অন্যতম লালা লাজপত রায়ও ২০১৬ সালে প্রকাশিত তার ইয়াং ইন্ডিয়া বইতে একই কথা বলেছেন। হিউমের দূরদৃষ্টি যে প্রখর ছিল সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষত বাল গঙ্গাধর তিলকের পর যখন গান্ধীর হাতে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ যায় তখন থেকেই কংগ্রেস বিপ্লবীদের - ভগৎ সিং হোক বা সুভাষ বোস - পিছন থেকে ছুড়ি মারতে শুরু করে।


পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রহসন দেখার পর আজ যারা শুভেন্দু অধিকারী'র কিছু বক্তব্যে নিজেদের অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়াচ্ছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে এটাই সেই সেফটি ভালব থিওরিরই একটা অংশ। ৩০৩ জন সাংসদ নিয়ে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকা মোদী-শাহ'র বিজেপি'র বিরুদ্ধে সমর্থকদের জমে ওঠা ক্ষোভ প্রশমনের এটা একটা উপায় মাত্র। কারণ নেতারাও জানে যে এই ক্ষোভের আয়ু বেশীদিন নয়। তাই ক্ষোভ যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় তাই শুভেন্দু'র বাতেলা চলবে কিন্তু দিনের শেষে তারও ট্যুইটারে পিনড পোস্ট থাকবে মোদীর সাথে সাক্ষাতের ছবি। মেড়া তো তার খুঁটির জোরেই লড়ে, তাই না?

Saturday, June 24, 2023

বাঙালীত্ব

ভারতে, সঙ্ঘী আর কম্যুনিস্ট - উভয়ের কাছেই পৃথিবীটা দ্বিমাত্রিক। সঙ্ঘীদের কাছে "মছলিখোর বংগালী" সহী হিন্দু নয় আর ঠিক একইভাবে, কম্যুনিস্টদের কাছে, ভারতমাতার জয়ধ্বনি দেয়া বাঙালীরা আসল বাঙালী নয়।


এই কারণেই কিছু অমর্ত্য সেন বা সাগরিকা ঘোষের মত বাঙালীর দেশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্যে সঙ্ঘীরা বাঙালী সমাজকে কাঠগড়ায় তুলতে পারে কিন্তু তিস্তা শীতলবাড় বা হেমন্ত কারকাড়ের জন্যে তারা সম্পূর্ন মারাঠা জাতিকে নিয়ে কদর্য মন্তব্য করেনা অথবা হর্ষদ মেহতা, কেতন পারেখ বা নীরব মোদীর জন্যে সব গুজরাটিকেই চোর বলেনা। আসলে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে সঙ্ঘীদের রাজনৈতিক অসাফল্য তাদের এই দুই জাতির বিরুদ্ধে আক্রোশের মূল কারণ।

উল্টোদিকে কম্যুনিস্টরা, যারা ভেনেজুয়েলাতে বৃষ্টি হলে কলকাতাতে ছাতা খুলে ঘোরে বা নিকারাগুয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উত্থানে পশ্চিমবঙ্গে বনধ ডাকে তারা কিন্তু কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতরা জেহাদি অত্যাচারের কারণে গৃহচ্যুত হলে কোন প্রতিবাদ করেনা কারণ তারা বাঙালী নয়। ঘরের পাশে বাংলাদেশে অসহায় হিন্দু বাঙালীদের ক্রমাগত রাষ্ট্রীয় আক্রমণেও কম্যুনিস্টদের কোন বনধ ডাকতে দেখা যায়না। হয়ত নিকারাগুয়া বা কিউবার নাগরিকদের থেকে বাংলাদেশের হিন্দুরা কম বাঙালী।

কিন্তু সৌভ্যাগ্যের বিষয় হল যে এই দুই মতাদর্শের বাইরেও হিন্দু বাঙালীর অস্তিত্ব ছিল, আছে এবং তাদের সংখ্যাই প্রতিদিন বাড়ছে যারা মছলিও খায় আবার বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠে ভারত মাতার জয়ধ্বনিও দেয়। যারা গঙ্গার পবিত্র জলে অবগাহন করে, মা কালীর মূর্তির সামনে দেশমাতৃকার মুক্তির জন্যে জীবনদানের শপথ গ্রহণ করতো, যাদের কাছে "বন্দেমাতরম" এখনও একটা প্রেরণা। তাদের কাছে, শুধুমাত্র "জয় শ্রী রাম" বলাই হিন্দুত্বের পরিচায়ক নয়, "জয় মা কালী" হুঙ্কারও তাদের দেহে অ্যাড্রেনালিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। যাদের কাছে হিন্দুত্ব আর বাঙালিত্ব বিপ্রতীপ নয়, সমানুপাতিক ও পরিপূরক।

বকচ্ছপ

সারা পৃথিবীতে সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার প্রেরণা মূলত দু'টি - অর্থ ও ক্ষমতা। সাধারণ হিন্দুরা, বিশেষত বাঙালীরা, সেটার সাথে আদর্শ'কে যোগ করে, 'রাজনৈতিক মতাদর্শ' নামক এমন একটা বকচ্ছপ বানিয়েছে যেটা তাদের না যোগাতে পারে অর্থ, না দিতে পারে ক্ষমতা বরং লাভের মধ্যে কেড়ে নেয় তাদের সামাজিক নিরাপত্তা।

সভ্যতা'র মাপকাঠি

সভ্যতার অগ্রগতি মানে শুধু উন্নত জীবনযাত্রা বা প্রযুক্তি নির্ভরশীলতা নয়, সভ্যতার অগ্রগতি মানে 'বিশ্বাস' থেকে 'কৌতূহল'-এ উপনীত হওয়া। সভ্যতা মানে নিজের অজ্ঞানতাকে স্বীকার করে, অজানাকে জানতে চাওয়া। সভ্যতা মানে আত্মকেন্দ্রীক মানসিকতা থেকে সার্বজনীন উন্নয়নে আগ্রহী হওয়া। সভ্যতা মানে স্মৃতি ও কল্পনার বশীভূত না হয়ে জীবন উপভোগ করা।