Saturday, March 30, 2024

বিজেপির রণনীতি

কিছুদিন আগেও এই রাজ্যের বিভিন্ন অংশে তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে তারা সাধারণ মানুষের বাড়ি গিয়ে প্রচার করতে পর্যন্ত দ্বিধা করছিল পাছে সেখান থেকে 'চোর' আর 'তোষণকারী' বলে ভাগিয়ে দেয়। বিজেপি'র জন্যে খোলা মাঠ পড়ে ছিল কিন্তু রাখে মোদী মারে কে? জনগণ যাতে বিকল্প হিসাবে বেছে না নেয় তাই ফর্মুলা২১ মানে ২০২১ সালের নীতি মেনে এবারেও অর্জুন সিং বা তাপস রায়ের মত দলবদলুদের মাথায় তুলে নেয়া হলো। পবন সিং-এর মত বাঙালী বিদ্বেষী মুখকে প্রার্থী করা হলো। প্যারাসুট দিয়ে অনির্বাণ গাঙ্গুলীর পরজীবি নেতাদের আসরে নামানো হলো। দুধ কুমার মন্ডলের মত জননেতাকে বঞ্চিত করে হালে যোগ দেয়া জনৈক অবসরপ্রাপ্ত IPS অফিসারকে বীরভূমের প্রার্থী করে দেয়া হলো।


এরসাথে যোগ করুন চার বছরের বেশী সময় ধরে অপেক্ষার পর নির্বাচনের ঠিক আগে CAA প্রণয়ন করা এবং বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তৃণমূল কংগ্রেসকে তার বিরোধিতা করার সুযোগ করে দেয়া। সেদিন এক TV শো'তে দেখলাম তৃণমূলের জনৈক মুখপাত্র, কৃশানু মিত্র, CAA সংক্রান্ত আলোচনায় বর্ধমানের জৌগ্রামের (যদিও এলাকার নামটা মুখপাত্রের মনে ছিলনা) পলাশ অধিকারীর পরিবারের বেঙ্গালুরুতে আটক হওয়া নিয়ে সোচ্চার হলেন এবং তদানীন্তন বিজেপি সরকারকে বাঙালী বিদ্বেষী বলে প্রচার করলেন। মজার কথা হলো যে তার প্রতিপক্ষ হিসাবে আলোচনায় থাকা বিজেপি'র প্রতিনিধি, শঙ্কুদেব পান্ডা, এর উত্তরে কোন যুৎসই উত্তর দিতে না পেরে চিৎকার করে 'তৃণমূল রোহিঙ্গাদের এই রাজ্যে বসাতে চায়' বুলি আউড়ে গেলেন। শঙ্কুদেব হয়তো জানেইনা যে পলাশ অধিকারীর কেসটা কি আর সেটাতে এই রাজ্যের প্রশাসন কি ভূমিকা নিয়েছিল। আসলে দলে শক্ত খুঁটি ধরা থাকলে তথ্যের জ্ঞান আজকাল আর খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে বিবেচিত হয়না নাহলে শঙ্কুদেব বলতে পারতো যে কর্ণাটক পুলিশ যখন পশ্চিমবঙ্গ সরকার থেকে পলাশদের বিষয়ে তথ্য চেয়েছিল তখন কিভাবে প্রশাসন বর্ধমানের গ্রামে, তার বিদ্যালয়ে এমনকি হাবড়া'তে তার জন্মস্থানের তথ্যও সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছিল। পলাশের প্রথম উকিল যখন হাল ছেড়ে দিয়েছিল তখন আত্মদীপ কিভাবে সেই কেসের নতুন ওকালতনামা নেয় এবং দিব্যা নামের এক উকিল নতুন করে কেস সাজিয়ে তাদের মুক্তি পেতে সাহায্য করে।


এইসব ঘটনাপ্রবাহ দেখে আমি সন্দিহান যে মোদী এখনই পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে চুড়ান্ত ধাক্কা দিতে কতটা আগ্রহী। প্রথম তালিকা প্রকাশের পরে শুভেন্দু অধিকারী যেভাবে কৃষ্ণনগর গিয়ে 'রাজমাতা' বা 'রানীমা'কে এলাকার প্রার্থী হতে রাজী করালেন সেটা দেখে এটা মনে হওয়া স্বাভাবিক যে ২০২৪ এ যে গোটা দেশের সাথে এই রাজ্যেও লোকসভা নির্বাচন হবে সেটা বিজেপির কেন্দ্র ও রাজ্য নেতৃত্বের হয়তো জানা ছিলনা। এই কারণে হোমওয়ার্ক করে রাখতে পারেনি। এখনও রাজ্যের দুটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা বাকি। সমর্থকেরা হয়তো অন্য রাজ্যের উদাহরণ টেনে বলবেন যে সেগুলিতেও বাকি আছে কিন্তু দলের মতে যে রাজ্যে সাংবিধানিক কাঠামো ভেঙে পড়েছে এবং যারা সেই ভাঙার দায়ে অভিযুক্ত তারা যেখানে সমস্ত আসনে ইতিমধ্যেই প্রার্থী ঘোষণা করে দিয়েছে সেখানে প্রার্থী নির্বাচনে এই গড়িমসি সমর্থক ও ভোটার - কাউকেই পজিটিভ বার্তা দেয়না।

Friday, March 29, 2024

দশ বছরের পার্থক্য

"এবার কেন্দ্র ভারতবর্ষ"- এক শতাব্দীরও বেশী সময় আগে এই স্বপ্ন দেখেছিলেন এক নরেন্দ্র আর এই বিরাট কালখণ্ড পার করে এসে সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করছেন আরেক নরেন্দ্র। ভাবুন, আজ থেকে দশ বছর আগে ভারতীয়দের মধ্যে আত্মপরিচয় নিয়ে গর্ববোধ কতটা ছিল, হিন্দু হিসাবে জাত্যাভিমান কতটা ছিল, ধর্মপালনের প্রবৃত্তি কতটা ছিল আর আজ কতটা আছে। আগে সিনেমাতে নায়ক ৭৮৬ এর বিজ্ঞাপন করতো, মৌলবীর দেয়া তাবিজ গুলি থেকে তার প্রাণ বাঁচাতো আর এখন যুবসমাজ স্বেচ্ছায় হাতের ট্যাটুতে ত্রিশূল বা ওম চিহ্ন বানায়। বাইকে বজরঙবলীর পতাকা লাগিয়ে ঘোরে। এটাই পার্থক্য।


ISRO নতুন গজিয়ে ওঠা কোন সংস্থা নয়, সে আগেও বিভিন্ন মিশন পরিচালনা করেছে কিন্তু ভাবুন তো দশ বছর আগে দেশের ক'টা লোক ISRO এর কার্যকলাপ নিয়ে গর্ব করা তো দূরের কথা, তার খোঁজখবর অবধি রাখতো? চন্দ্রযান বা মঙ্গলযান নিয়ে দেশজুড়ে উন্মাদনা দশ বছর আগে কেউ কল্পনায় আনতে পারতো? HAL, DRDO, মাজেগাঁও ডক ইয়ার্ড বা BEL এর নাম অবধি জানতো? অগ্নি, তেজস, ব্রহ্মস ইত্যাদির সাফল্য নিয়ে পারিবারিক আলোচনা এক দশক আগেও ভাবা গিয়েছিল? গোটা দেশের মধ্যে আজ যে আত্মীকরণ দেখা যাচ্ছে এটাই দশ বছরের প্রাপ্তি।


এলাকার নেতাদের ঘুষ না দিয়েও সরকারি প্রকল্পের টাকা সরাসরি নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ঢুকে যাবে কতজনের ধারণা ছিল বা ঘরে বসেই লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেয়া যাবে কতজন ভাবতে পেরেছিলেন? রক্তাক্ত কাশ্মীরে যে ট্রেন ছুটবে আর ভ্রমণপিয়াসী বাঙালী সপরিবারে সেই ট্রেনে ঘোরার ছবি ফেসবুকে দেবে এটা দশ বছর আগে কারুর আন্দাজ ছিল? ইউক্রেন থেকে ইন্দোনেশিয়া যে কূটনৈতিকভাবে ভারতের সাহায্যপ্রার্থী হবে কেউ ভাবতে পেরেছিলেন? এটাই বা কার কল্পনা ছিল যে একের পর এক আরব দেশগুলিতে যে হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়ে সনাতন ধর্মের বিস্তার ঘটবে? ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা চলাকালীন ইতালিয় নাবিকদের নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়া দেখে অভ্যস্ত ভারতীয়রা কখনও ভাবতে পেরেছিল যে কাতারের সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরেও আটজন ভারতীয় নিরাপদে দেশে ফিরে আসবে?


এগুলো সবই সম্ভব হয়েছে দেশে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন ব্যক্তির নেতৃত্বে একটা শক্তিশালী সরকার আছে বলে। এমন একজন ব্যক্তি যাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটা টিম যেখানে জয়শঙ্কর, অশ্বিনী বৈষ্ণব, নীতিন গডকরি, রাজীব চন্দ্রশেখর প্রমূখ লোকেরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করছেন। চাল চুরি, ত্রিপল চুরি, রেশন চুরি'র মত ছেঁদো বিষয়ে এরা ভাবিত নন কারণ তাদেরও স্বপ্ন হলো "ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে" আর সেই লক্ষ্য পূরণের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এক ও অদ্বিতীয় - নরেন্দ্র মোদী।

Wednesday, March 20, 2024

গণতন্ত্র ও নির্বাচন

যেকোন 'তন্ত্র' সফল হওয়ার জন্যে যার নামে তন্ত্র, তার শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন। যেমন, রাজতন্ত্রে যদি রাজা দুর্বল হয়ে যায় তাহলে দেশে মাৎস্যন্যায় দেখা দেয়। একনায়কতন্ত্রে যদি সেই একনায়ক দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তার দশা কি হয় তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ চেসেস্কু। দলতন্ত্রে যদি দল দুর্বল হয়ে যায় তাহলে তার পরিণতি কি হয় তার প্রমাণ পশ্চিমবঙ্গের সিপিএম।


একইভাবে, গণতন্ত্র সফল হওয়ার জন্যে জনগণের শক্তিশালী হওয়া আবশ্যক। সেটা না হলে শাসক রাষ্ট্রক্ষমতার অপব্যবহার করবেই। শুধু পাঁচ বছর অন্তর ভোট দেয়াই গণতন্ত্র নয়, প্রকৃত গণতন্ত্র হল শাসকের উপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা। আধুনিক যুগের ইতিহাসে পৃথিবীর প্রাচীনতম গণতান্ত্রিক দেশ আমেরিকাতে জনগণ এই নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখে বলেই প্রবল প্রতাপান্বিত আমেরিকার রাষ্ট্রপতি, নিক্সনকে নিছক ফোনের বার্তালাপ বিনা অনুমতিতে রেকর্ড করার জন্যে ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারিতে ইস্তফা দিতে হয়। 


আমেরিকার দীর্ঘদিনের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের সাপেক্ষে ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাস নেহাতই শিশু তাই আমরা প্রায়শই ভুলে যাই যে কেন্দ্র বা রাজ্যের শাসকদলের প্রশংসা করা জনগণের দায়িত্ব নয়, সে কাজের জন্যে তাদের যথেষ্ট সক্ষম ও শক্তিশালী মিডিয়া টিম আছে। জনগণের দায়িত্ব তাদের ত্রুটি, বিশেষত সেগুলো যেগুলোকে তারা অর্থ ও জনবল দ্বারা ঢাকতে চায়, প্রকাশ করা। তাদের যে কাজের ফলে তাদের রাজনৈতিক লাভ হলেও সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সেগুলিকে তুলে ধরা। কিন্তু তারপরেও পাঁচ বছর পর আসে সেই একটা দিন যেদিন জনগনকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে তারা কার হাতে পরবর্তী পাঁচ বছরের দায়িত্ব তুলে দেবে। আগামী ১৯শে এপ্রিল থেকে ১লা জুন অবধি দেশের বিভিন্ন অংশে খন্ডে খন্ডে আসবে সেই দিন যখন জনগণকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে দেশের দায়িত্ব কার হাতে দেবে।


প্রশ্ন যখন সার্বিকভাবে দেশের তখন আমি কখনোই কোন আঞ্চলিক দলকে সেই দায়িত্বভার দেবনা। কারণ যেকোন আঞ্চলিক দল খুব স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক স্বার্থে তাদের ক্ষুদ্র অঞ্চল নিয়ে এতটা সংবেদনশীল থাকে যে দেশের বৃহত্তর স্বার্থকে তারা উপেক্ষা করে। তাছাড়া একাধিক রাজনৈতিক দল একজোট হয়ে যদি কেন্দ্রে কোন সরকার গঠন করে তাহলে তাদের স্থায়িত্ব যে কতটা ক্ষণস্থায়ী হয় তার দৃষ্টান্ত দেবেগৌড়া বা গুজরাল সরকারের পরিণতি হিসাবে আমাদের সামনেই আছে।


জাতীয় দল হিসাবে কংগ্রেসকেও আমি বেছে নেবনা তার কারণ জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে তাদের আপোষের ইতিহাস। নেহেরুর সময় চীন আগ্রাসন হোক বা নৌসেনা ও উপকূল রক্ষী বাহিনীকে সরিয়ে নিয়ে দাউদ ইব্রাহিমকে বম্বেতে বিস্ফোরক প্রবেশে সাহায্য - সবই হয়েছে কংগ্রেস আমলে। তাদের না বাছার আরেকটা কারণ হলো তাদের জিনে থাকা হিন্দুবিদ্বেষ। গভীর রাতে শঙ্করাচার্যকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হোক বা ওয়াকফ আইন, ধর্মস্থান সংক্রান্ত আইন - সব ক্ষেত্রেই তাদের নেতৃত্বের হিন্দু বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে।


নোটা কখনোই আমার পছন্দ হবেনা কারণ বর্তমান প্রেক্ষিতে সেটা ভোট নষ্ট করা ছাড়া আর কিছু নয়। নোটা'তে এক লক্ষ ভোট পড়লেও সেটা হাজার ভোট পাওয়া প্রার্থীকে হারাতে পারবেনা যদি সেটা বাকি প্রার্থীদের মধ্যে সর্বাধিক হয়। তাছাড়া সামাজিক কাজে আমাদের নিয়মিত যাদের সাথে সাংস্কৃতিক সংঘাত হয় এবং ভবিষ্যতেও হবে তারা কখনোই নোটা'তে ভোট দেবেনা, দেবে কৌমের স্বার্থে।


এমতাবস্থায় আমারও কর্তব্য স্বজাতির স্বার্থ সুরক্ষিত করার জন্যে ভোট দেয়া। আর সেটা করতে গিয়ে আমি কখনোই কোন দলকে "অতটা হিন্দুত্ববাদী নয়" বলে হিন্দুবিদ্বেষী কোন দলকে নিজের মূল্যবান ভোট দেবনা। হ্যাঁ, ভোট দেয়ার আগে অবধি নিজের ভোটের মূল্য উসুল করতে সেই দলকে দেশের ও স্বজাতির স্বার্থ রক্ষার জন্যে বাধ্য করাটাও আমারই দায়িত্ব আর সেই কাজ করার দায়িত্ব আমি অন্য কাউকে ইজারা দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারিনা কারণ দেশও আমার আর সংস্কৃতিটাও আমার। এর রক্ষা আমার দায়িত্ব।