Wednesday, December 23, 2020

PIL against OBC Act

You might have heard about the discriminatory West Bengal Backward Classes (Other than Scheduled Castes and Scheduled Tribes) (Reservation of Vacancies in Services and Posts) Act, 2012, popularly known as the OBC Act but not realised the level of discrimination and actual threat regarding the same. But Aatmadeep was quick to acknowledge the deep-rooted conspiracy implemented through this act by providing extra benefits to a particular minority community depriving other. If this allowed to continue, the day is not far when administration will be under total control of a particular community and that will not be a pleasant situation for us.

Hence, Aatmadeep has moved to the Calcutta High Court vide it’s petition WPA 8844 of 2020 dated 19th October, 2020 claiming the act to be ultra vires as it violates the basic spirit of the Constitution for the sake of political benefits of Mamata Banerjee Govt. The act is a blatant instance of appeasement politics indulged by Mamata Banerjee and is bound to cause irreparable loss and injury to future generations of Hindus in the days to come.

Despite being a new organisation, we have taken this initiative for the sake of our future generation especially when big guns have refused to fire. We believe, being a human rights organisation, its our duty to ensure oppression of no one and appeasement of no one. But this case is going to incur huge financial burden on us as every single hearing will cost us more than what we can afford. Hence, we request you to help us by donating to the account mentioned below and be a part of the battle we are fighting against the whimsical and arbitrary decision by Mamata Banerjee govt. 

Vandemataram.


*Aatmadeep*

*Central Bank of India*

*Account No – 3823441382*

*IFSC Code – CBIN0280111*

Monday, December 21, 2020

মমতার পরিণতি

 সেলুলয়েডে সুচিত্রা সেনের পর, বাস্তবের কঠিন জমিতে, পশ্চিমবঙ্গের মহানায়িকা হবার যোগ্যতা একমাত্র মমতা ব্যানার্জীর ছিল। সিপিএমের অপশাসনের বিরুদ্ধে তাঁর দীর্ঘদিনের লড়াই এবং পরিশেষে, ২০১১ সালে, বামপন্থীদের ক্ষমতাচ্যুত করা তাঁকে সারা দেশের কাছে একটা আইকনে পরিণত করে। সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম নিয়ে তার আন্দোলন ঐতিহাসিক মর্যাদা পায়। আজ সিঙ্গুরে টাটা কোম্পানির প্রস্তাবিত কারখানা নিয়ে যে যতই অশ্রুপাত করুক না কেন, সেই চুক্তিতে যে all is well ছিলনা সেটা পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আদেশেই স্পষ্ট হয়ে গেছে।


কিন্তু কথায় বলে যে প্রদীপের নীচেই অন্ধকার সবচেয়ে বেশী হয় আর সেই প্রথা মেনেই, সিপিএমের অপশাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া মমতা ব্যানার্জী, নিজে ক্ষমতায় এসেই শুরু করলেন ক্ষমতার অপব্যবহার। সংখ্যালঘু তোষণ ও আর্থিক দুর্নীতি হয়ে উঠলো তাঁর কাজের সমার্থক। একথা অনস্বীকার্য যে ক্ষমতায় আসার চাবিকাঠি হিসাবে, মমতা ব্যানার্জী হয়তো এমন কিছু অশুভ শক্তির সাথে আপোষ করেছিলেন যার মূল্য তাঁকে, ক্ষমতায় আসার পর, কড়ায়গণ্ডায় চুকাতে হয়েছিল। ইমামভাতা, নলিয়াখালী দাঙ্গার মূল চক্রী, আহমেদ হাসান ইমরানকে রাজ্যসভার সাংসদ করা, সারদা বা রোজভ্যালীর মত চিটফান্ডগুলিকে অনৈতিক সুবিধা দেয়া, কালিয়াচকে জেহাদিদের হামলা বা জামায়েত-এর সভায় মধ্যমণি হওয়া ইত্যাদি ঘটনাচক্র সেই অশুভ আঁতাতের পরিচায়ক।

কিন্তু এত কিছুর পরেও, শুধুমাত্র মমতা ব্যানার্জীর সেই মহানায়িকা ইমেজের কারণে, জনগণ তাঁর উপর পুনরায় নিজেদের আস্থা রাখেন ২০১৬ সালের নির্বাচনে এবং শত অভিযোগ সত্ত্বেও তাঁর নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসকে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশী আসন দিয়ে ক্ষমতাসীন করেন। সবাই আশাবাদী ছিলেন যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের একচ্ছত্র নেত্রী এবার আগের ভুল শুধরে, নতুন ইনিংস শুরু করবেন। কিন্তু হায়, ভবি ভোলবার নয়। জীবনের প্রায় অর্ধেকটা সময় মাটিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলন করে কাটিয়ে দেয়া মমতা ব্যানার্জী যে মাত্র পাঁচ বছর রাজসিংহাসনে বসার ও আগেপিছে লালবাতি নিয়ে চলার অভ্যাসে যে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন, এটা কারুর কল্পনাতেই ছিলনা।

জনবিচ্ছিন্ন মমতার নতুন অগ্রাধিকার হয়ে গেল স্বজনপোষণ। ক্ষমতার ঔদ্ধত্যে ও অযোগ্য স্তাবকদের প্ররোচনায় তিনি নিজের মাত্রা হারালেন। তিনি ভেবেছিলেন যে এই রাজ্যে তাঁর ক্ষমতার পক্ষে একমাত্র বিপদ বামপন্থীরা, তাই তিনি তাদেরকে, তাদেরই কায়দায় নিয়ন্ত্রণ করতে থাকেন। বিজেপিকে তিনি কখনই সেভাবে নিজের সরকারের পক্ষে বিপজ্জনক বলে মনে করেননি তার পিছনে কারণ মূলত দু'টো। ১) ২০১১ সালে, তাঁর ক্ষমতায়নের পিছনে অন্যতম শক্তি ছিল রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় Justice for People নামক NGO-র মাধ্যমে তাঁকে আইনি সাহায্য হোক বা দেশজুড়ে তাঁর বামবিরোধী ইমেজ গড়ে তোলা- সঙ্ঘের অবদান অপরিসীম। ২) অটল বিহারি বাজপেয়ী সরকারের শরিক ও মন্ত্রী থাকার প্রেক্ষিতে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বর সাথে তাঁর ব্যক্তিগত সখ্যতা।

কিন্তু ক্ষমতার গর্বে মদমত্ত মমতা ভুলে গেছিলেন যে বিজেপিতে ঘটে যাওয়া পালাবদলের ফলে তাঁর পরিচিত নেতৃত্ব চলে গেছেন পিছনের সারিতে আর উদয় হয়েছে এক নতুন জাতীয়তাবাদী মুখের, যার নাম নরেন্দ্র মোদী। মমতার পক্ষে দ্বিতীয় আঘাত ছিল তপন ঘোষের নেতৃত্বে হিন্দু সংহতির উত্থান। মমতার যেসব সংখ্যালঘু তোষণের ঘটনা বিজেপি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে চুপচাপ মেনে নিত, সেগুলি নিয়েই সোচ্চার হলেন তপন'দা। সম্পূর্ণ বাঙালী জাতীয়তাবাদী সংগঠন হিসাবে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে, মমতার তোষণের কথা তপন'দা ছড়িয়ে দিতে লাগলেন দেশেবিদেশে। এর পরিণতিতে, মমতার পূর্বতন বামবিরোধী ইমেজ পরিণত হল 'জেহাদি দিদি'তে।

আজ ২০২১ সালের নির্বাচন যখন মাত্র ছয় মাস দূরে, তখন মমতা ব্যানার্জী উপলব্ধি করতে পারছেন যে তিনি কতটা নিঃসঙ্গ এবং অসহায় হয়ে পড়েছেন। বছরের পর বছর ধরে, মহরমের জন্যে দুর্গাপূজার বিসর্জন বন্ধ করে দেয়া মমতা ব্যানার্জী আজ নিজের হিন্দুত্ব প্রমাণ করার জন্যে প্রাণপাত করছেন। OBC আইনে সংশোধন করে, একটা বিশেষ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাড়তি সুবিধা দেয়া এবং সেটা নিয়ে বিভিন্ন জনসভায় গর্ব করা মমতা ব্যানার্জীর সরকার আজ কোর্টে, আত্মদীপ দ্বারা ফাইল করা জনস্বার্থ মামলায়, উত্তর দিতে পারছেন না।

মমতা ব্যানার্জী যতই কাজী নজরুল ইসলামের "একই বৃন্তে দুটি কুসুম" আউড়ান বা সেই অনুপ্রেরণাতে নিজের দলের প্রতীক বানান, তিনি বোধহয় কবির 'ভজন' কবিতাটা ভুলে গেছিলেন যেখানে কবি বলেছেন -

"চিরদিন কাহারো 
সমান নাহি যায়।
আজিকে যে রাজাধিরাজ 
কাল সে ভিক্ষা চায়।"

এই সরল সত্যটা মমতা ব্যানার্জী ভুলে গিয়েছিলেন আর তাই তাঁর মত জননেত্রীকেও, নিজের দল ও নির্বাচন পরিচালনা করার জন্যে, টাকা দিয়ে বিশেষজ্ঞ ভাড়া করতে হচ্ছে। তিনি নিজেও বুঝেছেন যে দলীয় কর্মীদের উপর তাঁর আর নিয়ন্ত্রণ নেই। পুলিশকে ব্যবহার করে তিনি যতটুকু সাম্রাজ্য রক্ষার চেষ্টা করছেন, আদর্শ নির্বাচন বিধি চালু হতেই, যখন পুলিশের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের কাছে, ভাঙন আরও বড় রূপ নেবে। মমতা ব্যানার্জীর কাছে সুযোগ ছিল পশ্চিমবঙ্গের নতুন রূপকার হবার। তাঁর কাছে সুযোগ ও যোগ্যতা - দুই-ই ছিল অথচ নিজের কর্মফলের কারণে ইতিহাস তাঁকে মনে রাখবে শুধু "জেহাদি দিদি" বা "সারদা রাণী" হিসাবে। এই পরিণতি তাঁর প্রাপ্য ছিলনা ঠিকই কিন্তু এই পরিণতি তিনি আর এড়াতেও পারবেন না। মমতার স্তাবকরাই এখন তাঁর ফুটো নৌকা ছেড়ে, বিজেপি জাহাজে উঠতে আগ্রহী। মমতার দলের লোকদের নিয়ে গঠিত বিজেপি ক্ষমতায় আসলে "অপুত্রকের পুত্র হবে না নির্ধনের ধন" সেই বিতর্ক যথাসময়ে উঠবে তবে মহানায়িকার নাটকের এই পর্যায়ের ড্রপসিন পড়ার মানে যবনিকাপাতের ঘন্টা বেজে গেছে।

Thursday, September 10, 2020

আশায় মরে চাষা

 সন্দেশখালির কথা মনে আছে? হ্যাঁ, দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার সেই সন্দেশখালির কথাই বলছি যেখানে ২০১৯ সালের ৯ই জুন, নির্বাচন পরবর্তী সংঘর্ষে নিহত হয়েছিলেন প্রদীপ মন্ডল, সুশান্ত মন্ডল সহ তিন বিজেপি কর্মী এবং তৃণমূল কংগ্রেসের এক কর্মী। ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছিল বিজেপি কর্মীরা। "কড়ি নিন্দা" মার্কা রাজনাথ সিং এর বদলে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে এসেছিলেন অমিত শাহ আর তাই কর্মীরা আশায় বুক বেঁধেছিল যে এবার একটা হেস্তনেস্ত হবেই।

কর্মীদের আশার আগুনে ঘি ঢেলে, কেন্দ্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে ঘটনার তদন্ত করবে জাতীয় তপশিলি জাতি কমিশন। কমিশনের সদস্যরা ১৫ই জুন ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেন আর কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে ডাকা হয়েছিল রাজ্য পুলিশের ডিজি, মুখ্যসচিব সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকদের। দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলায় হওয়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লালবাজার, অর্থাৎ কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর, অভিযানও করলো বিজেপি। দলীয় কর্মীদের আশালতা ততক্ষণে প্রায় সপ্তম স্বর্গে পৌছে গেছে।

আর তারপর? না, তার আর পর নেই, সব ওখানেই শেষ। আজ, সেই ঘটনার ১৫ মাস পরে, প্রদীপ মন্ডলের নাম তো দূরের কথা, সন্দেশখালির ঘটনা কতজন কর্মীর মনে আছে সেটা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ আছে। কারণ পার্টির কাছে কর্মীর মৃত্যু নেহাতই একটা ইস্যু। রাত পোহালে যদি নতুন ইস্যু এসে যায়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই পুরনো ইস্যু প্রাসঙ্গিকতা হারায়। কিন্তু বিষয়টা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ ছিল আর তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে RTI দায়ের করেছিলাম।

RTI তে তিনটি বিষয় জানতে চেয়েছিলাম, ১) পশ্চিমবঙ্গে, গত ১০ বছরে, তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর ক'টা অত্যাচারের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কমিশন রাজ্যে এসেছে। ২) রাজ্যে আসার পর কমিশনের প্রতিনিধিরা কি রিপোর্ট দিয়েছেন এবং ৩) সেই রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সরকার কি ভূমিকা গ্রহণ করেছেন।

আমাকে অবাক করে দিয়ে আজ জাতীয় তপশিলি জাতি কমিশন জানিয়েছে যে ১নং প্রশ্নের কোন তথ্যই তাদের কাছে নেই আর ২ ও ৩ নং প্রশ্নের জন্যে তারা আমার অনুরোধ কলকাতা অফিসে পাঠিয়েছেন যদি সেখানে কোন তথ্য থেকে থাকে। এখন প্রশ্ন হল যে জাতীয় তপশিলি জাতি কমিশন তাহলে সন্দেশখালিতে এসেছিল কেন?

ঋণমুক্ত

 অনেকদিন আগের কথা, শহরের এক লেখক একটা প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে বেড়াতে গেছেন। প্রথমবার গ্রামে গেছেন, যা দেখছেন সেটাই ভাল লাগছে। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, সেই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আরও একদিন সেখানে থাকবেন। আরও ভালভাবে গ্রাম দেখবেন যাতে সেটা নিয়ে তিনি ভাল লেখা লিখতে পারেন।


রাতে থাকার সিদ্ধান্ত তো নিলেন, কিন্তু থাকবেন কোথায়? গ্রামে তো আর শহরের মত হোটেল নেই। গাড়িতে রাত কাটাতে পারেন কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তির পর, গাড়িতে ঘুমালে ক্লান্তি মিটবেনা। একটু হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানোর যায়গা দরকার। লেখক রাস্তায় দেখা হওয়া কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু রাত্রিবাসের কোন খোঁজ দিতে পারলনা। অবশেষে সেই লেখক এক গ্রামবাসীর দেখা পেলেন যে জানালো যে পাশের গ্রামে একটা ছোট সরাইখানা মত আছে, সেখানে তিনি রাত কাটাতে পারেন। লেখক তো হাতে চাঁদ পেলেন, গাড়ি নিয়ে চললেন পাশের গ্রামে।

পাশের গ্রামে পৌছে, কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে, তিনি অবশেষে সেই সরাইখানায় পৌছালেন। তার বেশভূষা আর সঙ্গে গাড়ি দেখে সরাইখানার মালিক বুঝে গেল যে বেশ শাঁসালো মক্কেল, তাই সে ঘরের চারগুন ভাড়া হাঁকলো। লেখক বেচারার তখন ক্লান্তিতে অবস্থা বেহাল, তাই তিনি সেই ভাড়াতেই রাজী হলেন, তবে থাকার আগে একবার ঘর দেখে নিতে চাইলেন। সরাইখানার মালিক তাকে অর্ধেক ভাড়া অ্যাডভান্স হিসাবে জমা দিতে বললেন, ঘর পছন্দ নাহলে সেটা ফেরত দিয়ে দেবেন। লেখক তার মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকা কাউন্টারে জমা দিয়ে, এক কর্মচারীর সাথে ঘর দেখতে গেলেন।

টাকা পাওয়া মাত্রই সরাইখানার মালিক ছুটলেন মাংসের দোকানে, সেখানে অনেক বাকি পড়ে গিয়েছিল। ১০০ টাকা দিয়ে তিনি ঋণমুক্ত হলেন। সেই ১০০ টাকা পাওয়া মাত্রই কসাই ছুটলেন তার বাঁধা গণিকার কাছে, বেচারিকে অনেকদিন টাকা দেয়া হয়নি। গণিকাকে ১০০ টাকা দিয়ে কসাইও ঋণমুক্ত হলেন। এদিকে গণিকারও সরাইখানাতে, যেখানে তিনি খরিদ্দারদের নিয়ে আসতেন, টাকা বাকি পড়েছিল। কসাই টাকা শোধ করতেই, তিনি সেই টাকা সরাইখানার মালিককে দিয়ে তিনিও ঋণমুক্ত হলেন।

ইতিমধ্যে সেই লেখক ঘর দেখে ফিরে এসেছেন আর যে দাম তাকে দিতে হচ্ছে, সেই অনুযায়ী ঘরের অবস্থা দেখে তার মোটেই পছন্দ হয়নি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে রাতটা তিনি গাড়িতেই কাটাবেন। কাউন্টারে ফিরে এসে সেই কথা তিনি সরাইখানার মালিককে জানালেন এবং অ্যাডভান্স করা টাকা ফেরত চাইলেন। এরকম শাঁসালো খদ্দের ফস্কে যাওয়ায় মালিকের একটু দুঃখ হল ঠিকই কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী, বিনা বাক্যব্যয়ে তাকে টাকা ফেরত দিয়ে দিলেন।

দিনের শেষে, যার টাকা তার কাছেই ফিরে গেল আর মাঝখান থেকে তিনজন ঋণমুক্ত হয়ে গেলেন। দয়া করে কেউ এটার সাথে বলিউড ও রাজনীতির সম্পর্ক খুঁজবেন না। এটা নিছকই একটা গল্প।

Sunday, August 23, 2020

বাকস্বাধীনতা

 ভারতের বিচার ব্যবস্থা একটা যুগসন্ধিক্ষণের মুখে দাঁড়িয়ে আছে আর এই পরিস্থিতি তৈরী হয়ে বিখ্যাত আইনজীবী, প্রশান্ত ভূষণের দু'টি ট্যুইটের পরিপ্রেক্ষিতে। নিজের ট্যুইটে ভূষণ সুপ্রিম কোর্টের ভূমিকা এবং প্রধান বিচারপতির আচরণ নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তোলেন। তাঁর এই ট্যুইটের প্রেক্ষিতে, সর্বোচ্চ আদালত, বিচারপতি অরুণ মিশ্রর নেতৃত্বাধীন একটা বেঞ্চের অধীনে, ভূষণের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে, আদালত অবমাননার মামলা করেন। নিজেদের এই মামলা থেকে বাঁচাতে ট্যুইটার স্বতঃপ্রণোদিতভাবে প্রশান্ত ভূষণের ট্যুইটগুলি ইতিমধ্যেই মুছে দিলেও বিতর্ক এতে থামেনি, বরং ইন্টারনেটে বাকস্বাধীনতার হয়ে সওয়াল করা Internet Freedom Foundation ট্যুইটার ইন্ডিয়াকে এই আচরণের জন্যে সমালোচনা করেছে। ভূষণের করা এই ট্যুইটের ভিত্তিতে, আদালতের নেয়া অবস্থানের ভিত্তিতেই প্রশ্ন উঠেছে যে বাকস্বাধীনতার সীমা কতটা এবং ভারতের বিচার বিভাগ কি সমালোচনার উর্ধ্বে? 


এই বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতে প্রশান্ত ভূষণের হয়ে দাঁড়িয়েছেন আরেকজন বিখ্যাত আইনজীবী, দুষ্ম্যত্ম দাভে। আদালতে তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় সওয়াল করেছেন যে ভূষণের ট্যুইট বাকস্বাধীনতার সীমাকে মোটেই অতিক্রম করেনি বরং আদালতই নিজের ক্ষমতার সীমারেখা অতিক্রম করে এই মামলা করেছে। দাভের যুক্তির সামনে বিচারপতি মিশ্রকেও বলতে হয়েছে যে তিনি নিজেও বাকস্বাধীনতার পক্ষপাতী আর সেই কারণেই তাঁর ২০ বছরের চাকরি জীবনে এটাই প্রথম আদালত অবমাননার মামলা যেটা তিনি গ্রহণ করেছেন।


এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে যে প্রশান্ত ভূষণের ট্যুইট কি সত্যিই আদালতকে অবমাননা করেছে? এই প্রসঙ্গে বিচার চলাকালীন বিচারপতি মন্তব্য করেছেন যে তাঁর এই ট্যুইটের ফলে নাকি ভারতের বিচার ব্যবস্থার কাঠামো নড়ে গেছে। এটাই যদি বাস্তব হয়ে থাকে তাহলে তো এটাই এখন থেকে ট্যুইটারের বিজ্ঞাপন হওয়া উচিত যে তাদের মঞ্চ এতটাই শক্তিশালী যে সেটা বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের বিচার ব্যবস্থাকে পর্যন্ত নাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এইসব হালকা মন্তব্যে কান না দিয়ে যদি কেসের মেরিট ধরে বিচার করা হয় তাহলে কি এটা অস্বীকার কোন যায়গা আছে যে বিগত কয়েক বছরে, দেশের সর্বোচ্চ বিচারালয় এমন সব আদেশ জারি করেছেন যেটা মোটেই আমাদের দেশের বিচার বিভাগের মূলমন্ত্র, সত্যমেব জয়তে-র সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়?


উদাহরণ স্বরূপ আসাম NRC এর উদাহরণ টানা যেতে পারে যেখানে তদানীন্তন প্রধান বিচারপতির অঙ্গুলিহেলনে পরিচালিত হয়েছিল সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া আর টার্গেট করা হয়েছিল বাঙালি হিন্দুদের? একইভাবে রামজন্মভূমি মামলাতে, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারীর মত, ওয়াকফ বোর্ডকে দেয়া হয়েছে জমি। একটা জমির টাইটেল স্যুট সংক্রান্ত মামলায়, যে পক্ষ নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবে, তারই তো জমির মালিকানা পাওয়া উচিত। একইভাবে, জাল্লিকাট্টু থেকে শবরীমালা, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিতাড়ন থেকে শনি সিংনাপুর মন্দির, প্রতিটা ক্ষেত্রেই বিচার বিভাগের অতি সক্রিয়তা বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। PM Care Fund, যেখানে কোটি কোটি টাকা জমা হয়েছে এবং সেই সংক্রান্ত আইনকে retrospective, মানে আইন আজ পাশ হলেও বলবৎ হবে আগের থেকে, ভিত্তিতে পরিবর্তন করা হচ্ছে আর তার সাথে সরকারি ফান্ড বলে সেটাতে CSR এর টাকা নেয়ার পরেও সেই ফান্ডকে RTI এবং CAG থেকে আড়াল করা হচ্ছে, তখন সেই ফান্ডের স্বচ্ছতার ব্যাপারে সর্বোচ্চ আদালতের ভূমিকা কি? এই প্রসঙ্গে প্রশান্ত ভূষণের দ্বারা পুরনো একটা সাক্ষাৎকারে বিচারকদের দুর্নীতি নিয়ে করা অভিযোগকেও টেনে আনা হয়েছে। মজার কথা হচ্ছে এই বিষয়ে কয়েকদিন আগেই বম্বে বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি, ইকবাল চাগলা, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস কাগজে লিখেছেন যে তাঁর সভাপতিত্বেই বার অ্যাসোসিয়েশন পাঁচ জন বিচারককে দুর্নীতির সাথে যুক্ত বলে রেজোল্যুশন পাশ করেন। আর হ্যাঁ, দুর্নীতি সবসময়ই যে টাকা নিয়ে হবে সেটা নয়, টাকার বদলে কোন পদ, বা পরিবারের কারুর কোন সুবিধা করে দেয়া ইত্যাদিও দুর্নীতির অঙ্গ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে অবসর গ্রহণের কিছুদিন পরেই, ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি, রঞ্জন গোগোই, সংসদের উচ্চ কক্ষের সদস্য হিসাবে মনোনীত হন।


এই মামলায় আদালত কতটা মরিয়া হয়ে গেছে সেটা একটা বিষয় উল্লেখ করলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে যে বিচারপতিরা দেশের প্রধান অধিবক্তা বা অ্যাটর্নি জেনারেল, শ্রী বেনুগোপালকেও আদালতে তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্য পেশ করতে দিচ্ছেন না। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে অ্যাটর্নি জেনারেল কিন্তু সরকারের প্রতিনিধি নন, সেই কাজ সলিসিটর জেনারেল করেন, বরং তিনি দেশের সর্বোচ্চ জুডিশিয়াল অফিসার যার দায়িত্ব সংবিধানের ভিত্তিতে সরকার ও বিচার বিভাগকে উপযুক্ত পরামর্শ দেয়া। আর সেই অ্যাটর্নি জেনারেল যখন আদালতে দাঁড়িয়ে ভূষণের স্বপক্ষে কথা বলছেন, তখন শুধু তাকে থামিয়ে দেয়া হচ্ছে তাই নয়, আদালতের রেকর্ডে তাঁর নামের উল্লেখও থাকছেনা। পরে নিজেদের ভুল বুঝে সেটা সংশোধন করা হয়।


এই প্রসঙ্গে এটা উল্লেখ করে রাখি যে আদালত অবমাননার দায়ে এই অধমের বিরুদ্ধেও হয়তো আগামীকাল মামলা হতে পারে কারণ গত ২১শে আগস্ট, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সংক্রান্ত একটা মামলার রায় দিতে গিয়ে, সর্বোচ্চ আদালত সেই ব্যক্তির আর পদে না থাকার যে বালখিল্য যুক্তি দিয়ে, মামলাটা খারিজ করেছেন সেটা আমার কাছে হাস্যকর। কোন ব্যক্তি আর সেই পদে নেই বলে, তার বিরুদ্ধে সেই পদের অপব্যবহার সংক্রান্ত কোন অভিযোগ করা যাবেনা এই যুক্তি মানলে তো একটা প্রশাসনিক রদবদল ঘটালেই যেকোন সরকারি কর্মীর অপরাধ মার্জিত হয়ে যাবে। এই যুক্তিতে তো 2G কেসে টেলিকম মন্ত্রী থাকাকালীন ডি রাজা বা অগাস্তা হেলিকপ্টার কেসে ভারতীয় বায়ুসেনার তৎকালীন প্রধান, ত্যাগীর বিরুদ্ধে সহ সারদা, নারদা ইত্যাদি কেসে অনেকের বিরুদ্ধেই আর কোন তদন্ত হওয়া উচিত নয়, কারণ তারা আর সেই পদে নেই।


বিচার বিভাগের প্রতি প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্যই সম্মান থাকা উচিত কিন্তু সেই সম্মান বজায় রাখার দায়িত্ব স্বয়ং বিচার বিভাগের। এই বিষয়ে Collector Land Acquisition vs Mst. Katiji & Ors মামলায় (AIR 1987, SC 1353) আদালত নিজেই স্পষ্টাক্ষরে লিখেছেন যে, "It must be grasped that judiciary is respected not on account of its power to legalize injustice on technical grounds but because it is capable of removing injustice and is expected to do so."। এই প্রসঙ্গে একটা ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করে এই লেখা শেষ করছি। Emperor vs Tilak [(1908) 10 BOMLR 848] মামলা, যার শুনানি ১৩ই জুলাই থেকে ২২শে জুলাই অবধি ৮ দিন ধরে হাইকোর্টে চলেছিল। মামলাতে লোকমান্য তিলকের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন সেই সময় কলকাতা হাইকোর্টের বিখ্যাত ব্যারিস্টার, LP Evans Pugh এবং Garth। শুনানির কিছু পর্যায়ে মহম্মদ আলি জিন্নাহও তিলকের হয়ে সওয়াল করেন। শুনানি শেষ হলে, মামলার পার্সি বিচারপতি ডাবর, সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাচারীর মত, জুড়িদের প্রতি বিশেষ নির্দেশ প্রদান করেন আর সেই নির্দেশে তিনি বলেন যে, "“If one talks of patriotism in connection with bombs, bombs that effect murders, you are the judges of the question whether such a discussion tends or does not tend to bring Government established by law in India into hatred or contempt in the minds of the readers.”। এই নির্দেশের ফলে জুড়িদের রায় ৭-২ হিসাবে খন্ডিত হয় আর সেই খন্ডিত রায়ের ফলে, তিনি নিজের বিশেষাধিকার প্রয়োগ করে, লোকমান্য তিলককে, তাঁর কেশরী পত্রিকায়, বাংলায় সহিংস বিপ্লবী আন্দোলনকে সমর্থন করে লেখার জন্যে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। 


ডাবরের এই রায়ে খুশী হয়ে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইটহুড উপাদি দেয় এবং বম্বে বার অ্যাসোসিয়েশন তার সম্মানে ডিনারের আয়োজন করে। এই খবর জিন্নাহর চেম্বারে আসা মাত্রই তিনি ক্ষুরধার ভাষায় বার অ্যাসোসিয়েশনকে চিঠি লেখেন যে "the Bar should be ashamed to want to give a dinner to a judge who had obtained a knighthood by doing what the Government wanted and by sending a great patriot to jail." অর্থাৎ তিলকের মত দেশভক্তকে কারাদণ্ডাদেশ দেয়া আর সরকারের পদলেহন করে নাইটহুড পাওয়া ব্যক্তির সম্মানে ডিনার আয়োজন করার জন্যে বার অ্যাসোসিয়েশনের লজ্জা হওয়া উচিত।


লেখার শেষ করবো Evelyn Beatrice Hall নাম্নী এক লেখিকার, যিনি S.G. Tallentyre ছদ্মনামে লিখতেন, বিখ্যাত সেই উক্তি দিয়ে, "I do not agree with what you have to say, but I'll defend to the death your right to say it" মানে অপরের বক্তব্য আমার মনের মত নাও হতে পারে কিন্তু তার বক্তব্য রাখার অধিকারকে আমি কখনই অস্বীকার করতে পারিনা। বিচারালয় হোক বা প্রশাসন, তারা যদি ক্ষেত্রবিশেষে চুপ থাকে আর ক্ষেত্রবিশেষে মুখর হয়, তাহলে সেটা অন্যায়।

Sunday, August 16, 2020

প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস

প্রতি বছর ১৬ই আগস্ট আমাদের ১৯৪৬ সালের ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে'র কথা মনে করিয়ে দেয় আর প্রশ্ন তোলে যে আমরা কতটা প্রস্তুত আছি। সেদিন জিন্নাহর আহ্বানে হওয়া প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের মর্ম হিন্দুরা প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারা ভেবেছিল যে সেটা কোনও ছুটির দিন। তাদের ভুল ভাঙলো যখন সংযুক্ত বাংলার তদানীন্তন প্রধান, সোহরাওয়ার্দীর প্রত্যক্ষ মদতে, কলকাতার অলিগলিতে, জেহাদিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরীহ হিন্দুদের উপর। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নামে কুখ্যাত সেই হত্যাকাণ্ডের সময়, বাংলার কষাই নামে কুখ্যাত সোহরাওয়ার্দীর আদেশে প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়। এই আক্রমণ আর কয়েকদিন চললে কলকাতা হিন্দু শূন্য হয়ে যেত যদি গোপাল পাঁঠা (মুখোপাধ্যায়), বিজয় সিং নাহারের মত হিন্দুরা, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে, একযোগে রুখে না দাঁড়াতেন এবং জেহাদিদেরকে তাদের ভাষাতেই জবাব না দিতেন। হিন্দু প্রতিরোধ গড়ে ওঠার পরেই সোহরাওয়ার্দী সেনা নামাতে বাধ্য হন।

১৯৪৬ সালে প্রতিরোধের পরেও প্রায় ছয় দশক ধরে এই কলকাতাতেই বসবাস করেছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায় ওরফে গোপাল পাঁঠা কিন্তু না কোন রাজনৈতিক দল আর না কোন সামাজিক সংগঠন তাঁর কীর্তি ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ইতিহাস বাঙালীর কাছে তুলে ধরেনি। অ্যাকাডেমিক মহলে বা স্থানীয় এলাকায় তিনি পরিচিত নাম হলেও, আপামর বাঙালীর কাছে তিনি ছিলেন অপরিচিত। আর অ্যাকাডেমিক কারণেও যারা ১৯৪৬ সালের পরিকল্পিত হিন্দুহত্যা এবং পরবর্তীতে হিন্দুদের প্রতিরোধের কথা জেনেছিলেন, তাঁরাও বিষয়টা নিয়ে আর খুব বেশী এগোননি। তাই ২০০৫ সাল অবধি তিনি কলকাতাতে জীবিত থাকলেও, তাঁর একমাত্র সাক্ষাৎকারটাও একজন বিদেশীর নেয়া।

চাকা ঘুরতে শুরু করলো ২০১৩ সাল থেকে যখন প্রবাসী কিছু সমর্থকের প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতে ৪৬ এর গণহত্যা ও গোপাল পাঁঠার ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, স্বর্গীয় তপন ঘোষ। তার পর থেকে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত, প্রতি বছর মুসলিম লীগের ডাকে হওয়া প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস আর হিন্দুদের প্রতিরোধের স্মৃতিতে আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠান। সেই বিশেষ দিনটা তে, কলকাতার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে গোপাল পাঁঠার উত্তরাধিকারীরা। বাঙালীকে তাঁর ভুলে যাওয়া ইতিহাস এবং লড়াইয়ের সাফল্য পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছিল তপন দা।

তাঁর এই লড়াই সহজ ছিলনা। সমাজের বিভিন্ন হিন্দু বিরোধী শক্তির সাথে সাথে, হিন্দুত্বের তথাকথিত ধ্বজাধারী দলটিও তপনদার এই অনুষ্ঠান কে ব্যর্থ করতে উদ্যোগী হয়েছিল। ২০১৪ সালের এই বিশেষ দিনটাতেই, হঠাৎ তাদের ফুটবল প্রেম জেগে উঠেছিল। তাদের দলের সমর্থকরা যাতে তপনদার অনুষ্ঠানে না যায়, সেই জন্যে সেই বছর ১৬ আগস্ট আয়োজিত হয়েছিল পদযাত্রা। আর সেই পদযাত্রার সামনের সারিতে ছিলেন তৎকালীন রাজ্য বিজেপির এক নেতা যিনি বর্তমানে পূর্ব ভারতের একটা রাজ্যে রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত আছেন এবং তপনদার প্রয়াণের পর, সোশাল মিডিয়ায় আয়োজিত বিভিন্ন ওয়েবিনারে সুন্দর সুন্দর কথা বলে আসছেন। যাই হোক, তপনদার সভার সাফল্যে দেখে, সেই ফুটবল প্রেম আর টেঁকেনি আর তপনদার সৌজন্যে আজ বাঙালীও পেয়ে গেছে তাদের নিজস্ব আইকন।

Sunday, August 9, 2020

প্রাইভেট চ্যাট

কোন মতবাদ বা দর্শনের সাফল্য সেটায় বিশ্বাসীদের মানব সম্পদের উপর নির্ভরশীল। আমার বা আপনার কাছে সেই মতবাদ বা দর্শন ভুল বা অযৌক্তিক হতেই পারে কিন্তু সেটা সেই মতবাদের প্রসারণের ক্ষেত্রে determining factor নয়। উদাহরণ স্বরূপ ইসলাম বা বৈষ্ণবদের কথা বলা যেতে পারে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এদের প্রসার ঘটেছে কারণ এদের অনুগামীরা এই মতবাদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ আর সেটা প্রসারের জন্যে তাঁরা যেকোন পর্যায়ে যেতে পারেন।


এর সম্ভবত একটা কারণ মতবাদগুলির rigidity। তার ফলে, এদের অনুগামীদের কাছে সবকিছুই হয় সাদা, নয় কালো, মাঝামাঝি কোন স্থান নেই। উল্টো  দিকে সনাতন সংস্কৃতি অনেক বেশী flexible। সেখানে সাদা আর কালোর মিশেলে ধুসর রঙের অস্তিত্বও স্বীকৃত। এই flexibility ই এককালে সনাতন ধর্মের প্রসারে সহায়ক হয়েছে আবার এটাই সেই সেই ধর্মের ক্ষয়িষ্ণুতার অন্যতম কারণ। একই সংস্কৃতি যে কারণে প্রসারিত হয়েছে, সেই কারণেই সঙ্কুচিত হয়েছে এটা বোঝা একটু কষ্টকর আর সেখানেই আসে অনুগামীদের ভূমিকা।


অনুগামীরা যদি সংস্কৃতি বা দর্শনের প্রতি আন্তরিকভাবে বিশ্বাসী না হয়, কেবলমাত্র ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে সেই সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে থাকে বা ব্যবহার করে থাকে, তাহলে এই পরিণতি স্বাভাবিক। উদাহরণ স্বরূপ পশ্চিম বা উত্তর ভারতের বেশ কিছু পরিবারের কথা বলা যায় যারা নিজেদের বাড়িতে নিরামিষ ভোজন করলেও বাইরে অনায়াসেই আমিষ খেয়ে থাকেন। কেউ আমিষ খাবেন না নিরামিষ সেটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত কিন্তু সম্পত্তি পাওয়ার স্বার্থে, বাড়ির বয়স্কদের খুশি রাখার জন্যে বাড়িতে নিরামিষ খাওয়া আর বাইরে আমিষ খাওয়া - এটা নিছক প্রতারণা, সাদা বাংলায় hypocrisy।


একইভাবে, যারা নিজেদের পাব্লিক পোস্টে, জনগণকে হিন্দুত্ব ও বাঙালিত্বর তত্ত্ব ও আদর্শ নিয়ে গুরুগম্ভীর বাণী বিতরণ করে থাকেন আর প্রাইভেটলি মহিলাদের নিয়ে, এমন বোন সম্পর্কের মেয়েদের নিয়েও, ধারাবাহিকভাবে নোংরামি করে চলে আর সেই কথা প্রকাশ্যে চলে আসলে, যার মাধ্যমে বাইরে এসেছে তাকে টার্গেট করার জন্যে জেহাদিদের কাছে আমন্ত্রণ জানায়, মাফ করবেন, তারা আমার কাছে "take it easy" নেয়ার মত নয়। একইসাথে, যেসব বিদগ্ধজনেরা এই ঘটনাকে "shit happens" বলে লঘু করে দেয়ার চেষ্টা করছে তাদের দেখে, হিন্দু মহিলাদের উপর জেহাদিদের দ্বারা হওয়া অত্যাচারের প্রেক্ষিতে, মুসলমানদের উচ্চবর্গের প্রতিবাদ বিহীন থাকার কারণ নিয়ে লেখা শরৎচন্দ্রের সেই কথা মনে পড়ে যাচ্ছে যে "বাপু, সুযোগ পাইলে তো আমিও ঐ কাজই করিতাম"।

Thursday, August 6, 2020

প্রশাসন দখল

হিন্দুরা যখন নরেন্দ্র মোদীর হাতে ধরে শ্রী রাম মন্দিরের ভূমি পূজন নিয়ে উচ্ছসিত হচ্ছে ঠিক তখনই, সেই নরেন্দ্র মোদীর 'হুনর হাত' ধরে, খুবই সুপরিকল্পিত উপায়ে, কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক মহলে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে চলেছে মুসলমানরা। ২০১৬ সালে যেখানে UPSC তে সফল হওয়া মুসলমান প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২.৫%, মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই সেটা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। 

এই বছর UPSC তে সফল হওয়া ৪০ জন মুসলমান প্রার্থীর মধ্যে ২৭ জনই হলো জাকাত ফাউন্ডেশনের শিক্ষার্থী। জাকাত ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন শিকাগো নিবাসী হালিল ডেমির আর এই সংস্থায় বার্ষিক অনুদানের পরিমাণ প্রায় ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

ভারতের প্রশাসনে এইভাবে বিদেশী পুঁজি আর বিদেশী সংস্কৃতির ক্রমবর্ধমান অনুপ্রবেশ এবং আগামী দিনে সেটার পরিণতি নিয়ে কি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ বা দেশবাসীরা আদৌও সচেতন?

https://www.news18.com/news/india/upsc-registers-40-increase-in-number-of-successful-muslim-candidates-this-year-2758205.html

Saturday, August 1, 2020

ধর্মের লড়াই

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগেই শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করেছিলেন যে সেই যুদ্ধে তিনি অস্ত্র ধারণ করবেননা। তাঁর এই ঘোষণাই দুর্যোধনকে উদ্বুদ্ধ করেছিল নিরস্ত্র কৃষ্ণের বদলে আঠার অক্ষৌহিণী সৈন্য নিতে। কিন্তু যুদ্ধের অষ্টম দিন ভীষ্ম যখন যুদ্ধক্ষেত্রে পান্ডবসেনার সামনে মূর্তিমান ত্রাসের মত আবির্ভূত হলেন, তাঁর অনন্য যুদ্ধশৈলীর প্রভাবে পান্ডবসেনারা যখন প্রবল ঝড়ের সামনে শুকনো পাতার মত উড়ে যেতে লাগলো এবং অর্জুন সহ পান্ডবদের সমস্ত মহারথীরা যখন দিশেহারা তখন স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তার বীরত্বের মিথ্যা অহংকারের জন্যে তিরস্কার করলেন। এরপর তিনি আপন প্রতিজ্ঞা ভুলে, নিজের সারথির আসন ছেড়ে একটি ভেঙে যাওয়া রথের চাকা নিয়ে ভীষ্মকে আক্রমন করলেন।

আক্রমনোদ্যত শ্রীকৃষ্ণকে দেখেই ভীষ্ম নিজের অস্ত্র ত্যাগ করলেন। ভয়ে নয়, ভক্তিতে। এরপর তিনি করজোড়ে কৃষ্ণকে তাঁর শপথের কথা স্মরণ করিয়ে বললেন যে তিনি যদি তাঁর প্রতিজ্ঞা পালন না করেন তাহলে সমাজ তাঁকে নিন্দা করবে। এর উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছিলেন সে কথা কালজয়ী। ভীষ্মের কথার প্রত্যুত্তরে তিনি দার্ঢ্যপূর্ণ কন্ঠে বলেন যে “লড়াই যখন ধর্মের সাথে অধর্মের তখন ব্যক্তিসত্বা মূল্যহীন। আজ আপনি অধর্মের পক্ষ নিয়ে লড়াই করছেন আর ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্যে আপনার পরাজয় আবশ্যিক। তাই আপনাকে পরাজিত করার জন্যে যদি আমাকে নিজের প্রতিজ্ঞা ভেঙে অস্ত্র ধারণ করতে হয় তো আমি সেই কাজের দায় নিতে প্রস্তুত”। 

সত্য কি সেটা জেনেও সত্যের পাশে না দাঁড়ানোর জন্যে মূলত দু'টো বিষয় দায়ী। এক, অসত্যের প্রতি আসক্তি - সেটার কারণ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন ব্যক্তিগত নিষ্ঠাকে সামাজিক দায়িত্বর উপরে স্থান দেয়া, অসত্য থেকে ক্ষণিকের লাভ, সত্যের সঙ্গ দেয়ার সাহসের অভাব ইত্যাদি। এবং দুই, চিন্তাভাবনার স্থিতিজাড্যতা। এই রোগে যারা আক্রান্ত তারা যত জ্ঞানীই হোক না কেন, সত্যের সঙ্গ দেয়ার সাহস তাদের থাকেনা। দুর্যোধন যেমন বলেছিলেন যে "জানামি ধর্মং অপি; নঃ চঃ মে প্রবৃত্তি, জানামি অধর্মং অপি; নঃ চঃ মে নিবৃত্তি", এরাও ঠিক তেমনই অধর্মকে জেনেও সেটার সঙ্গ দিয়ে চলে নিজেদের সাহসিকতার অভাবে।

মহাভারতের সময়ে ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য প্রমূখরা ব্যক্তিগত ভাবে জ্ঞানী হলেও কুরুক্ষেত্রে তাঁরা অধর্মের পক্ষেই সামিল হয়েছিলেন আর তাই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অর্জুন দ্বিধাগ্রস্ত হলে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তাকে গীতার জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। আজকে যারা অন্যায় কে জেনেও, নীরব থেকে সেটার পক্ষ নিচ্ছে, তাদের ধ্বংস কিভাবে হবে?

Monday, July 27, 2020

সৈন্যদল

যেকোন যুদ্ধে, যত বড় রাজা-মহারাজারাই জড়িত থাকুন না কেন, সৈন্যদের ভূমিকা অপরিসীম। যুদ্ধের কৌশল সেনাপতি তৈরী করতে পারেন কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে সেটা সঠিকভাবে প্রয়োগের দায়িত্ব সৈন্যদলের। যুদ্ধ শেষে, জয় করা জমির দখল রাখার জন্যেও প্রয়োজন এই সৈন্যদলের। আর ক্ষাত্রশক্তিতে সমৃদ্ধ এই সৈন্যদের একটা বড় অংশের কাছে সেনাবাহিনীতে যোগদান করার মূল প্রেরণা হলো গ্রাসাচ্ছাদন এবং পরিবার প্রতিপালন।  কেবলমাত্র আদর্শগত কারণেও অনেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে, কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগন্য।

হ্যাঁ, আজকের দিনে, যখন সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, তখন এটা আমাদের অনেকের পক্ষেই মেনে নেয়া কষ্টকর, বিশেষ করে যাদের পরিবারের কেউই সেনাবাহিনীতে যুক্ত নয়, যে সেনাদলে যোগদানের পিছনে দেশপ্রেম প্রধান অনুপ্রেরণা নয়, কিন্তু এটাই বাস্তব। সেনাবাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের দেশপ্রেম আমাদের সমান বা তার থেকে অনেক বেশী এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সেটা তাদের যথেষ্ট প্রেরণাও প্রদান করে কিন্তু সেনাবাহিনীতে যোগদানের সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেশপ্রেম মূল প্রেরণা থাকেনা। আর রাষ্ট্র সেটা জানে বলেই বিভিন্ন কালখণ্ডের কার্যকাল নির্ধারণ করে থাকে। দেশপ্রেম একমাত্র প্রেরণা হলে, সেনাদলে যোগদান থেকে অবসর নেয়ার মধ্যেকার সময়ের আর কোন কালখণ্ড নির্ধারণ করার প্রয়োজনই হতনা।

ক্ষাত্রশক্তির এই সংগঠনকে আজ আমরা দেশপ্রেমের সাথে জড়িয়ে দেখলেও, আমরা যদি একটু পিছিয়ে যাই তাহলে দেখবো যে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগে, যুধিষ্ঠির দুই পক্ষের সেনাদের কাছেই আহ্বান জানিয়েছেন যে তাঁরা যদি চান, তাহলে পক্ষ বদল করতে পারেন। একইভাবে, স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, নিজের অধীনে থাকা আঠারো অক্ষৌহিণী সৈন্য দুর্যোধনকে দিয়ে দিয়েছিলেন যেখানে তিনি নিজে পাণ্ডবদের পক্ষ নিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। অতএব, এটা স্পষ্ট যে সৈন্যদের জন্যে পক্ষ, অর্থাৎ আদর্শ, প্রধান নয়, নিজেদের গ্রাসাচ্ছাদন ও পরিবারের নিরাপত্তা পেলে তারা যেকোন পক্ষের হয়েই নিজেদের ক্ষাত্রশক্তির প্রমাণ দিতে পারে। আর এই কারণেই ভারতের সেনারা, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মঞ্চের হয়ে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে লড়াই করতে গিয়েও, নিজেদের বীরত্বের জন্যে প্রশংসিত হয়েছেন।

ধান ভানতে গিয়ে শিবের গীতটা একটু দীর্ঘ হয়ে গেল বলে ক্ষমাপ্রার্থী কিন্তু আজ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পারস্পরিক দোষারোপের ফলে কিন্তু সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই সংগঠনগুলির মাঠেঘাটে কাজ করা সৈন্যরা। তারা কোন একটা সংগঠনের আদর্শে কাজ করলেও, তাদের প্রাথমিক প্রয়োজন, অর্থাৎ, গ্রাসাচ্ছাদন এবং পরিবার প্রতিপালন, যদি প্রভাবিত হয়, তাহলে কেবলমাত্র আদর্শের জোরে, তাঁরা দীর্ঘদিন সংগঠনে যুক্ত থাকতে পারবে না। তাই নেতৃবৃন্দের এই সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত যে তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য কি, একে অপরকে দোষারোপ করা নাকি নিজেদের শক্তি সংরক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা করা। মনে রাখতে হবে যে সময় হলো সবচেয়ে শক্তিশালী তাই বাকিটা সময়ের হাতেই ছেড়ে দিলাম।

Sunday, July 26, 2020

কার্গিল বিজয় দিবস

কার্গিল দিবসে ভারতের মহান সৈনিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর সময় আমরা যেন সেই সৈনিকদের না ভুলে যাই যারা অপারেশন পরাক্রমে শহীদ হয়েছিলেন। সরকারি হিসাবে অপারেশন পরাক্রমে ৭৯৮ জন সৈন্য শহীদ হয়েছিলেন আর এই সংখ্যাটা কার্গিল বিজয়ে শহীদ হওয়া সৈন্য সংখ্যা থেকে অনেক বেশী। 

"ইস বার আর-পার কি লড়াই হোগি"- বলেছিলেন তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী। সারা দেশ থেকে সৈন্যদের নিয়ে গিয়ে কাশ্মীরে জমায়েত করানো হয়েছিল। কিন্তু কোন অদৃশ্য চাপে অথবা অজানা কারনে, আর-পার কি লড়াই তো দূরের কথা, একটা গুলি পর্যন্ত চালানোর অনুমতি পায়নি ভারতীয় সেনা। সীমান্তের ওপার থেকে চালানো পাকিস্তানি সেনাদের গুলিতে অসহায়ভাবে শহীদ হয়েছিলেন আমাদের জওয়ানরা। বিক্রম বাটরা ও সৌরভ কালিয়ার হত্যাকারীরা সেদিন কোন শাস্তি পায়নি।

শাস্তি অবশ্য হেমরাজের হত্যাকারীরাও পায়নি। হেমরাজকে মনে আছে তো? হেমরাজ, যার কাটা মাথা দিয়ে পাকিস্তানিরা ফুটবল খেলেছিল। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার আগে বিভিন্ন নির্বাচনী জনসভায় মোদীজী হেমরাজের কথা বলতেন। হেমরাজের সঙ্গে হওয়া নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে মনমোহন সরকার কোন ভূমিকা নেয়নি বলে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করতেন। আজ ছয় বছরের বেশী হয়ে গেছে মোদীজী এই দেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু আজ অবধি তিনি দেশের জন্যে প্রাণ বলিদানকারী, হেমরাজের পরিবারের সাথে দেখা করেননি। তাঁর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নওয়াজ শরীফ আমন্ত্রিত হয়েছেন কিন্তু হেমরাজের বিধবা স্ত্রী কোন আমন্ত্রণ পাননি।

তাই বন্ধু আজ কার্গিল বিজয় দিবস উদযাপন করার সময় একটু ভাবুন যে শহীদদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা কতটা আন্তরিক আর কতটা দেখনাই। কোন একটি বিশেষ দিবস আসলেই আমাদের শহীদ প্রেম উথলে ওঠে, দেশভক্তির গান শোনার হিড়িক লেগে যায় কিন্তু সত্যিই কি আমরা শহীদদের ত্যাগ মনে রেখেছি? সত্যিই কি আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল? প্রশ্নটা আজকের দিনে গায়ে একটু জ্বালা ধরালেও উত্তরটা কিন্তু সত্যি জানা দরকার।

Friday, July 24, 2020

স্মৃতিচারণ

১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। এগারো বা বারো ক্লাসে তখন পড়ছি। তপনদা তখনও বিদ্যার্থী পরিষদের প্রান্তীয় সংগঠন সম্পাদকের দায়িত্বে। তারই কথায়, মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়ার পরে, বেলডাঙাতে একমাস বিদ্যার্থী পরিষদের বিস্তারক হিসাবে থাকার পর, বহরমপুর থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রথম শিক্ষাবর্ষ শেষ করে (সৌভাগ্যক্রমে বহরমপুর ক্যাম্পে বৌদ্ধিক বিভাগের প্রমূখ ছিল তপনদা), প্রায় দু'মাস পরে বাড়ি ফিরেছি। তখন দোতলায় একটাই ঘর ছিল। ফলে আমি আর ছোড়দি, নীচে বড় ঘরে শুতাম। ছোড়দি ক্যাম্প খাটে আর আমি চৌকিতে।

তখন তপনদা মাঝেমধ্যেই আসতেন, রাতে থাকতেন। তপনদা রাতে থাকলে ছোড়দি অন্য ঘরে ঘুমাতো। এরকমই একদিন তপনদা এসেছিল আর শোয়ার সময় কে কোথায় শোবে, মানে ক্যাম্প খাটে কে শোবে আর চৌকিতে কে শোবে সেটা নিয়ে দ্বিধা। ক্যাম্প খাটে শুলে ফ্যানের হাওয়া বেশী লাগবে আর চৌকিতে শুলে যায়গা বেশী পাবে। তাই সিদ্ধান্ত নিতে পারছিনা যে কোথায় শুতে বলবো।

কিছুক্ষণ আমার সমস্যা পর্যবেক্ষণ করার পরে সমাধানটা তপনদাই করে দিলো। আমাকে জিজ্ঞাসা করলো যে, "তোর কোনটায় শুতে ইচ্ছে করছে? যেটায় তোর নিজের শুতে ইচ্ছা করছে, সেখানে আমাকে শুতে দে, কারণ মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল যে নিজের জন্যে সেরা টা বেছে নেয়া।" যাবতীয় সমস্যার সমাধান শেষে, দু'জনে একসাথে চৌকিতেই শুলাম এবং আরও অনেক রাত্রির মত, সে রাত্রিটাও গল্প (নাকি তর্ক?) করেই কেটে গেল। পরেরদিন সকালে তপনদা চা-জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে গেলেও, সেই শিক্ষাটা এখনও মনে আছে।

Saturday, July 18, 2020

কুম্ভীরাশ্রু

সালটা ২০১৭। ১৪ই ফেব্রুয়ারী, হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠা দিবসে, ধর্মতলায় লক্ষাধিক হিন্দুর সমাগমে আয়োজিত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের স্মরণাতীত কালের বৃহত্তম সমাবেশ। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং-র সমাবেশকে ব্যর্থ করার জন্যে, একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ফুটবল প্রেমও হাওয়ায় উবে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের অবিসংবাদিত হিন্দু নেতা হিসাবে তপন ঘোষ স্বীকৃত। হিন্দুত্ব ভাঙিয়ে করেকম্মে খাওয়া বহু নেতারই মুখোশ খুলে পড়েছে। এমতাবস্থায়, তপন ঘোষকে বদনাম করার জন্যে, একটা বিশেষ 'ভবনে' রচিত হলো ষড়যন্ত্র। ১৭ই সেপ্টেম্বর 'দৈনিক যুগশঙ্খ' কাগজের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হলো "মমতার হয়ে চরম হিন্দুত্বের তাস খেলতে ময়দানে তপন ঘোষ"
শীর্ষক একটা খবর, যেখানে তপনদাকে, একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগসাজশ করে, আরেকটা রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কাজ করার অভিযোগ আনা হলো।

অভিযোগ তো আনা হলো, কিন্তু অভিযোগটা করলো কে? না, সে প্রশ্নের কোন উত্তর লেখায় নেই, পুরোটাই নাকি "সূত্র" মারফত জানা গেছে। ব্র‍্যান্ডেড হিন্দু সংগঠনগুলির সমর্থনে প্রকাশিত সেই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সেই দিনই সংবাদপত্রের দপ্তরে প্রতিবাদপত্র পাঠালেন হিন্দু সংহতির তদানীন্তন সভাপতি, দেবতনু ভট্টাচার্য।
কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে সেই প্রতিবাদপত্র প্রকাশিত হয়না। দু'দিন পরে, আমি পুনরায় প্রতিবাদপত্র পাঠাই কিন্তু সেটাও প্রকাশিত হয়না। অতএব বাধ্য হয়েই দ্বারস্থ হতে প্রেস কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার।

মজার কথা হচ্ছে যে প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ জানাতেই 'দৈনিক যুগশঙ্খ' প্রতিবাদপত্রটা প্রকাশ করে এবং সেখানেও নিজেদের কলম চালিয়ে, হিন্দু সংহতির 'দল-নিরপেক্ষ' অবস্থানকে, 'ধর্ম নিরপেক্ষ' বানিয়ে দেয়।
এরপর প্রেস কাউন্সিলের থেকে সংবাদপত্রের জবাবদিহি চাওয়া হলে, যুগশঙ্খের তদানীন্তন প্রধান সাংবাদিক (জানিনা এখনও ঐ পদে আছেন কিনা), রক্তিম দাশ আমাকে ফোন করেন এবং যাবতীয় "ভুল বোঝাবুঝি" মিটিয়ে নেয়ার জন্যে অনুরোধ করেন। আমি তার অনুরোধে সাড়া দেয়ার জন্যে শর্ত রাখি যে এই "ভুল বোঝাবুঝি" মেটানোর একটাই উপায় আর সেটা হলো যুগশঙ্খ কে, ঐ একই যায়গায় এটা প্রকাশ করতে হবে যে তাদের প্রকাশিত খবর মিথ্যা ছিল। রক্তিম বাবুর সাথে হওয়া কথোপকথন নীচে দেয়া ১ নং লিঙ্কে ক্লিক করে শুনতে পারেন।

তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। আমি ২০১৮ সালের মার্চ মাসে, দেবদত্তর গ্রামের বাড়িতে হওয়া বৈঠকে, তপনদা, দেবতনুদা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে এবং সম্মতিতে হিন্দু সংহতি থেকে পদত্যাগ করেছি। ২০১৮ সালের ৩ রা আগস্ট, তপনদা তার প্রতিষ্ঠিত হিন্দু সংহতি বিলুপ্ত করে দেয়ার কথা বলেছেন আর সাথে এটাও বলেছেন কেউ যদি সেই সংগঠনের 'গুডউইল' ভাঙিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে চায়, তাহলে তিনি তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ জানাবেন না তবে তাদের কে, সংগঠনের গুডউইলের সাথে, লায়াবিলিটিও বহন করতে হবে। 

এতসব ঘটনা যখন ঘটছে, প্রেস কাউন্সিলের সাথে চিঠি চালাচালি চালিয়েই যাচ্ছিলাম এবং সেখানে ক্ষতিপূরণ হিসাবে পত্রিকার ক্ষমা চাওয়ার পাশাপাশি, আর্থিক ক্ষতিপূরণও দাবী করেছিলাম।

সরকারি কাজ তাই দীর্ঘসূত্রিতা স্বাভাবিক আর সেই সূত্র মেনেই, দীর্ঘদিন চিঠি চালাচালির মাধ্যমে উত্তর ও প্রত্যুত্তরের পালা চলার পরে অবশেষে ২০১৯ সালের জুন মাসে, আমাকে চিঠি দিয়ে,
শুনানির দিন হিসাবে ৯ই জুলাই ধার্য্য করা হয় ।

আমি বর্তমানে হিন্দু সংহতির সাথে যুক্ত না থাকলেও ঘটনা ঘটার সময় যেহেতু যুক্ত ছিলাম তাই দায় এড়িয়ে যেতে চাইনি। ১৯শে জুন কাউন্সিলের চিঠি পাওয়া মাত্রই সেই বিষয়ে তপনদা ও বর্তমানে হিন্দু সংহতির সভাপতি দেবতনুদা-র কাছে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলাম। দু'জনের থেকেই কোন মতামত না পেয়ে, ৬ই জুলাই তাদের রিমাইন্ডার দেয়ার পরে, দেবতনুদা জানায় যে এই বিষয়ে হিন্দু সংহতি আর এগোতে চায়না। দেবতনুদা-র মতামত জানার পরে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসাবে তপনদা-র মতামত জানার কথা দেবতনুদা কে জানাই। আর ৮ই জুলাই তপনদা জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনিও এই বিষয় নিয়ে আর এগোতে চাননা। এই বিষয়ে বিশদ বিবরণ দ্বিতীয় লিঙ্কে ক্লিক করে পড়তে পারেন।

এতদূর অবধি যা চলেছিল সেটা মেনে নিয়েছিলাম আর এই ভেবে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম যে "অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে..." কাব্যে হয়, বাস্তবে নয় কিন্তু ভুল ভাঙলো প্রেস কাউন্সিল থেকে পাওয়া ১৩ই সেপ্টেম্বরের চিঠিতে যেখানে অভিযোগকারী হিসাবে আমাকে জানানো হয়েছে যে নির্দিষ্ট শুনানিতে উপস্থিত না থাকার জন্যে আমার মামলা বাতিল করা হয়েছে। এটা হওয়ারই ছিল, তাই অবাক হইনি। অবাক হলাম সেই চিঠিতে লেখা একটা তথ্যে যেখানে
প্রেস কাউন্সিল জানিয়েছে যে হিন্দু সংহতির পক্ষ থেকে, সংগঠনের সম্পাদক, শ্রী সুন্দর গোপাল দাস, ২রা জুলাই প্রেস কাউন্সিলকে জানিয়েছেন যে যুগশঙ্খের সম্পাদক নাকি এই অভিযোগের ভিত্তিতে ক্ষমা চেয়েছেন আর সেটা কাগজে প্রকাশিতও হয়েছে, তাই হিন্দু সংহতি আর এই মামলা চালাতে আগ্রহী নয়।

যুগশঙ্খ কবে তাদের এই মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের জন্যে ক্ষমা চাওয়ার খবর প্রকাশ করেছে সেটা আমার তো চোখে পড়েনি, আপনাদের কারুর নজরে আসলে অবশ্যই অবগত করাবেন। তাহলে তপনদার মৃত্যুর পর, তার লেগাসীর দাবীদার হিসাবে যারা মাঠে নেমেছেন এবং সোশাল মিডিয়াতে অশ্রুপাত করছেন, তাদের সেই চোখের জলের কতটা কুম্ভীরাশ্রু আর কতটা প্রকৃত, সেটা বুঝতে সুবিধা হবে।

https://soundcloud.com/user2320526raktim-das-chief-reporter-jugasankhakha

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10156675866459865&id=620989864

Sunday, July 5, 2020

শ্রী তপন ঘোষ ও বঙ্গসমাজ

তপনদা করোনা আক্রান্ত হয়ে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর, এখন যারা তপনদার কথা ও কাজের কথা ভেবে আক্ষেপ করছেন তাদের জন্যে গঙ্গাজলে গঙ্গাপূজা করলাম। তপনদা পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুদের জন্যে কি করেছে সেটার মূল্যায়ন তার সমসাময়িক হিন্দু সমাজ করতে পারেনি আর সেটা সমাজের দুর্ভাগ্য, তপনদার নয়। তপনদা কর্মযোগী, নদীর স্রোতের মত বয়েই যাবেন কিন্তু আশঙ্কা করছি যে তাকে চিনতে না পারার মূল্য দেয়ার জন্যে হিন্দু সমাজ প্রস্তুত তো?

বড্ড দেরী করে ফেলেছেন। এটা শুধু আপনার দোষ নয়। এটা আমাদের জাতির দোষ। জাতিটা বড্ড বুড়ো হয়ে গেছে। পুড়লে সাধু উড়লে ছাই, তবে সাধুর গুন গাই। কিন্তু তখন আর গুন গেয়ে কি হবে? সেই সাধু তো আর কিছু করতে পারবে না। আমেরিকার হিন্দুরা ২০০৬ সালে তপনদাকে চিহ্নিত (identify) করেছিল। স্বীকৃতি দিয়েছিল। বিপুলভাবে সাহায্য করেছিল। তাকে তিনবার আমেরিকায় নিয়ে গেছে। ওরাই দাদার একবার নেপাল, একবার লন্ডন যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে। এমনকি ইজরায়েলও যে গেছেন সেটাও ওদেরই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায়।

আপনারা একটু নিজেদের সঙ্গে ওদের তুলনা করে দেখুন। ওরা জানতে পারল, বুঝতে পারল, আপনারা এত কাছে থেকেও পারলেন না কেন? ওই স্থবিরতা। স্থিতি জাধ্য। Inertia. এটাই তমোগুনের চিহ্ন। হিন্দুরা নির্বোধের মতো একে সত্ত্বগুণ ভাবে। স্বামীজি বলেছিলেন, সারা দেশে রজোগুণের বন্যা বইয়ে দে। খুব কম হয়েছে। 

যাই হোক, বড্ড দেরী হয়ে গেছে। যদি এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন, তাহলে সবাইকে বলে যান, উঠতি সূর্যকে নমস্কার করতে। ডুবন্ত সূর্যকে নয়। আর যৌবনকে স্বীকৃতি দিতে ও ভরসা করতে। সাদা মাথাকে নয়।

গুরুপূর্ণিমা


আজ গুরুপূর্ণিমা। স্মরণাতীত কাল থেকে, আজকের দিনটি ভারতবর্ষে গুরু পূজনের দিন হিসাবে পালিত। যদিও গুরুকে তাঁর শিষ্যরা প্রতিদিনই শ্রদ্ধা জানান কিন্তু আজকের দিনে যেহেতু মহর্ষি ব্যাসদেবের জন্ম, তাই দিন মাহাত্ম্য হিসাবে আজকের দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়।

সামাজিক জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই গুরুর প্রয়োজন আবশ্যিক। ছোটবেলায় বাড়ির গুরুজনেরা শিশুর গুরুর ভূমিকা পালন করেন। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরে জীবনে আসেন শিক্ষাগুরু। শিক্ষা অন্তে, কর্মজীবনে প্রবেশ করলে সেখানে এবং গার্হস্থ্য জীবনেও উপযুক্ত গুরুর পথনির্দেশ সেই ক্ষেত্রগুলিকে সুন্দর করে তোলে।

ব্যক্তি ও সমাজজীবনের প্রতিটা পর্যায়ে গুরুর অপরিসীম ভূমিকা থাকলেও সাথে এটাও মাথায় রাখা উচিত যে প্রত্যেকের গুরুই, যিনি নশ্বর দেহের অধিকারী, তাঁর প্রতিটা সিদ্ধান্তই নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই তাঁকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা মহেশ্বরের সাথে তুলনা করা মানে উভয়েরই অপমান। কোনও অযোগ্য ব্যক্তিও কিছুলোকের কাছে, কিছু সময়ের জন্যে, গুরু হিসাবে স্বীকৃতি পেতেও পারে। এমতাবস্থায়, তাকে ঈশ্বরত্ব প্রদান মানে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে চালানোর প্রচেষ্টা মাত্র। কারণ প্রকৃত গুরু নিজে কখনই লক্ষ্য নন, আর তিনি সেটা সাজার চেষ্টাও করেন না, বরং লক্ষ্যে পৌছানোর পথপ্রদর্শক মাত্র। সম্ভবত এই কারণেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা, ডাক্তারজী, কোন ব্যক্তি গুরুর বদলে ধ্যেয় বা আদর্শের প্রতীক গেরুয়া পতাকাকে বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুরু হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন।

প্রকৃত গুরুর পথনির্দেশ যেমন জীবনকে সুন্দর পথে নিয়ে যেতে পারেন তেমনি গুরু যদি স্থুল স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হন, তাহলে তার পথনির্দেশ শিষ্যদের বিভ্রান্ত করতে বাধ্য। এমতাবস্থায় আমাদের প্রত্যেকের কাছেই এমন একজন গুরু আছেন যে কখনও বিপথে চালিত করতে পারেনা, আর সেই গুরু হলেন আত্মদীপ বা আমাদের বিবেক। এই কারণেই পরিনির্বাণের সময়, ভগবান বুদ্ধ, নিজের অবর্তমানে, শিষ্যদেরকে আত্মদীপের পথে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আপনি জীবনে অন্য গুরুর সান্নিধ্যে যদি নাও পান, আপনার ভিতরের গুরু, কম্পাসের মত, সবসময়ই আপনাকে ঠিক রাস্তা চিনিয়ে দেবে। তবে আপনি সেই রাস্তায় চলবেন কিনা, সেটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।

Friday, June 26, 2020

সীমান্ত সংঘর্ষ



লাদাখ সীমান্তে চীনের সাথে বেড়ে ওঠা উত্তপ্ত পরিস্থিতির কারণে, আজ যারা "যুদ্ধ চাই, যুদ্ধ চাই" বলে উত্তেজক বিবৃতি দিচ্ছেন তাদের মধ্যে কতজনের যুদ্ধকালীন বা যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা আছে সেটা নিয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। চীনের মত একটা দেশের সাথে সরাসরি যুদ্ধে যাওয়া মানে যে মোবাইলে পাবজি বা ফ্রি-ফায়ার গেম অথবা হলিউড সিনেমার মত নয়, এই উপলব্ধি যাদের আছে, তারা কখনই, কেবলমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যে বা নিজেদের জাতীয়তাবাদী প্রমাণের জন্যে, যুদ্ধের ধুঁয়া তুলতে পারেন না।

যেকোন পরিস্থিতিতেই যুদ্ধ হল অন্তিম বিকল্প আর সেই বিকল্প গ্রহণের আগে অন্যান্য পথ অবশ্যই দেখে নেয়া উচিত আর বর্তমানে মোদী সরকার সেটাই করছেন। যুদ্ধ মানে শুধু অর্থক্ষয় নয়, একইসাথে বহু মানুষের অমূল্য জীবনহানির নিশ্চিত পরিণতি। ভেবে দেখুন, পাণ্ডবদের সাথে দুর্যোধন ক্রমাগত অন্যায় করে যাওয়ার পরেও, দুই পক্ষের প্রত্যক্ষ সংঘাত এড়ানোর জন্যে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ শান্তিদূতের ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। অথচ যুদ্ধ যে হবেই এটা তিনি জানতেন আর সেই জন্যেই কৌরবদের প্রতিপক্ষ দ্রুপদের সাথে পাণ্ডবদের বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ করেছিলেন।

যে শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর কুরুক্ষেত্রের প্রাঙ্গণে অর্জুনকে যুদ্ধ করার অনুপ্রেরণা দিয়েছেন, যে শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধ চলাকালীন ভীষ্মকে বধ করার জন্যে, নিজের শপথ ভেঙে, অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন, সেই শ্রীকৃষ্ণই কিন্তু যুদ্ধ ঠেকাতে শান্তিদূত হয়ে নিজে এগিয়ে এসেছিলেন। তাঁর এই ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে ভীম এবং দ্রৌপদী যখন তাঁকে নিজ নিজ শপথের কথা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তখন সেই শ্রীকৃষ্ণই দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তাদের বলে দিয়েছিলেন যে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে যে ক্ষয়ক্ষতি হবে তার সাপেক্ষে ভীম ও দ্রৌপদীর প্রতিজ্ঞা মূল্যহীন। তাঁর পরিস্কার বক্তব্য ছিল যে যুদ্ধ এড়ালে যদি তাদের ব্যক্তিগত প্রতিজ্ঞাভঙ্গ হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে খুবই কম মূল্য দেয়া হয়েছে।

আজকে যদি সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয় তাহলে তার প্রভাব কেবলমাত্র সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকবেনা, সারা দেশে সেটার প্রভাব পড়তে বাধ্য। আজ যারা যুদ্ধের দাবীতে সোচ্চার হচ্ছেন, তারা যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে বাজারে বিভিন্ন সামগ্রীর প্রাপ্তির সম্ভাবনা ও তাদের দাম নিয়ে সচেতন তো? গত ১৭ দিন ধরে ক্রমাগত পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মিম বানাবেন, মোদীর চোদ্দগুষ্টি উদ্ধার করবেন আবার দাবী করবেন যে যুদ্ধ হোক? ভেবে দেখুন, কর্ণের বধের আগের রাতে, কুন্তী যখন তার শিবিরে গিয়ে তার এবং অর্জুন - উভয়েরই প্রাণরক্ষার প্রতিশ্রুতি চেয়েছিলেন তখন কর্ণ তাঁকে প্রতিপ্রশ্ন করেছিলেন যে, ইতিহাস যদি কখনও তাঁকে জিজ্ঞাসা করে যে গান্ধারী তো যুদ্ধে নিজের পুত্রদের বলি দিয়েছেন, কিন্তু তিনি কি দিয়েছেন? ইতিহাসের সেই প্রশ্নের সামনে, তিনি নিজের জন্মদাত্রীকে অসহায় অবস্থায় দেখতে পারবেন না, তাই একজনের বলিদান আবশ্যিক। আজকে আমরা, যুদ্ধের দাবীদাররা, সেই বলিদান দেয়ার জন্যে প্রস্তুত আছি তো?

সন্তোষ বাবু বা রাজেশ ওরাংদের মৃতদেহ বহন করতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? যেসব ক্ষেত্রে স্বদেশী বিকল্প আছে, আমরা অর্থের চিন্তা না করে, সেই বিকল্প বেছে নিতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? যুদ্ধের খরচ তোলার জন্যে, বাড়তি করের বোঝা বহন করতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? যুদ্ধ চলাকালীন, সেনাবাহিনীর নিষ্ঠা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুললে, তার মুখ ভেঙে দিতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? প্রশাসনের নেয়া যেকোন সিদ্ধান্ত বিনা প্রশ্নে মেনে নিতে আমরা প্রস্তুত আছি তো? 

উপরের সবক'টা প্রশ্নের উত্তরই যদি সদর্থক হয়, তখনই আমাদের যুদ্ধের দাবী শোভা পায়, তার আগে নয়। আর এই কথাগুলির উত্তর কি হতে পারে, সেটা নরেন্দ্র মোদী খুব ভাল করেই জানেন। আর জানেন বলেই তিনি প্রত্যক্ষ সংঘাতকে শেষ বিকল্প হিসাবেই রেখেছেন। আর এই কারণেই তিনি বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্ণায়ক ভূমিকা গ্রহণকারী অর্থনীতি ও কূটনীতি দিয়ে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপর ভরসা আছে যে তিনি দেশের সার্বভৌমত্ব ও সেনার স্বাভিমান রক্ষা করতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম।

Saturday, June 20, 2020

সম্পূর্ণা

আচ্ছা, ধরুন আমার বাড়িতে চোর ঢুকে, বেশ কিছু জিনিস নিয়ে পালাচ্ছিল। এমন সময় আমি সজাগ হয়ে গেলাম এবং চোরকে তাড়া করলাম। তাড়া খেয়ে পালাবার সময়, আমার সাথে ধাক্কাধাক্কিতে, চোরের ঝোলা থেকে, আমার বাড়ি থেকেই চুরি করা একটা মোবাইল পড়ে গেল আর আমি, চোরকে ধরতে না পারলেও, একটা মোবাইল ফেরত নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এমতাবস্থায়, আমি কি সেই মোবাইলটা পেয়েছি বলে উল্লসিত হবো নাকি বাকি জিনিস হারানোর জন্যে দুঃখিত হবো এবং সেগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবো?

না, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত হতে পারছিনা কারণ এটাও, আমার কাছে, সেই পড়ে যাওয়া মোবাইলের মতই, আংশিক প্রাপ্তি। আচ্ছা, জেহাদি হাত থেকে ছিনিয়ে আনা নিজেদেরই অংশ নিয়ে যদি রাজ্যের জন্মদিন পালন করতে হয়, তাহলে কি ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ কে ভারতের জন্মদিন হিসাবে ধরতে হবে? আমাদের দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ইত্যাদি তাহলে মাত্র সত্তর বছরের? তাহলে তো বলতে হবে যে নেহরু ঠিকই বলেছিলেন যে India is a nation in making। না, নেহরু ঠিক বলেননি, ভারতের জন্ম মোটেই ১৯৪৭ সালে নয়, রাজনৈতিক বিভাজন মোটেই দেশের জন্মদিন নির্ধারণ করেনা।

একইভাবে, বঙ্গমাতার জন্মদিনও মাত্র কয়েক দশকের পুরনো ঘটনা নয়। মা কে খন্ডিত করলেই তার জন্মদিন বদলে যায়না। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ, মাস্টারদার স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম, মাইকেল মধুসূদন দত্তের যশোর প্রভৃতি স্থান বিহীন বঙ্গমাতা আজও খন্ডিতা। তাই, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়, মা যা ছিলেন আর মা যা হবেন, আমি সেটার স্বপ্ন দেখি, মা যা হয়েছেন, সেটা নিয়ে উল্লসিত হতে পারিনা। তাই আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টি উল্লাসের নয়, বেদনার স্মৃতি বয়ে আনে। বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির কাছে পরাজয়ের বেদনা, নিজের দেশের ঐতিহ্যবাহী ভূমিখণ্ড হারানোর বেদনা, নিজের মাতৃভূমিকে জেহাদিদের হাতে খন্ডিত হতে দেয়ার বেদনা। আর এই বেদনার উপশম সেদিন হবে যেদিন আমরা মায়ের খন্ডিত অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারবো। আমার মা পূর্ব আর পশ্চিমে বিভক্ত নয়, তিনি সম্পূর্ণা।

Friday, June 19, 2020

পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ

"যাদৃশো জায়তে রাজা, তাদৃশো'স্য জনো ভবেৎ" অর্থাৎ দেশের রাজা অর্থাৎ প্রধান যেমন হয়ে থাকেন, সেই দেশের প্রজারাও তেমনি হবেন। নেতৃত্বর গুণাবলীর উপরেই অনুগামীদের কর্মদক্ষতা নির্ভর করে। এই কারণেই ভারতের প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ, জেনারেল ভি.কে. সিং বলেছিলেন যে "সিংহের নেতৃত্বাধীন একপাল হরিণ, হরিণের নেতৃত্বাধীন একদল সিংহ অপেক্ষা বেশী ভয়ঙ্কর"।

হিন্দুরা বরাবরই সাহসী জাতি কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে তারা নেতৃত্ব হিসাবে পেয়েছে গান্ধী-নেহরুর মত ভীতু ও চরিত্রহীনদের। উল্টোদিকে, মুসলিমরা বরাবরই ভীরুর জাত হওয়া সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্বে ছিল আলি ভাতৃদ্বয় ও জিন্নার মত ব্যক্তিগণ। ফলে যখন হিন্দুদের মাতৃভূমিকে টুকরো করার পরিকল্পনা করা হলো তখন হিন্দুরা সেটার বিরোধিতা করার সাহস দেখাতে পারলো না, ইসলামিক দাবীর সামনে মাথা ঝুঁকাতে বাধ্য হলো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেয়া দুটি রাজ্য- বাংলা আর পাঞ্জাবকে টুকরো করেই জন্ম নিল পবিত্র ইসলামিক জমি- পাকিস্তান, কারণ দুটি প্রদেশেই মুসলিমরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই একই কারণে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হলো হিন্দুরা। একটি সার্বভৌম দেশের সরকার মিলিটারি দিয়েও মুসলিমবহুল কাশ্মীরে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলো না। ২৭ বছর পার হয়ে গেলেও আজও কাশ্মীরের হিন্দুরা নিজভূমে পরবাসী।

আজ পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের সামনেও একইরকমভাবে উদ্বাস্তু হওয়ার পরিণতির ইঙ্গিত স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা মুসলিমবহুল হওয়ার সাথে সেখানকার হিন্দুদের অধিকার সঙ্কুচিত হচ্ছে। কাংলাপাহাড়ি, তেহট্ট, নন্দীগ্রাম প্রভৃতি স্থানে হিন্দুদের পূজাপাঠের অধিকার খর্ব হচ্ছে। মালদা, মুর্শিদাবাদের মত মুসলিমবহুল জেলায় হিন্দুদের শঙ্খধ্বনি, মঙ্গলধ্বনি এমনকি শ্মশানযাত্রার উপরেও নানারকম বিধিনিষেধ জারি করা হচ্ছে। হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, নদীয়া, বীরভূম সহ বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাথা চাড়া দিচ্ছে জেহাদি কার্যকলাপ যার শিকার হচ্ছে সাধারণ হিন্দুরা। কিন্তু তারপরের প্রশাসন, মিডিয়া, একেবারে নীরব পাছে "সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি" নষ্ট হয়। নিজেদের জীবন ও সম্পত্তি বিসর্জন দিয়ে সম্প্রীতি রক্ষার দায় শুধু হিন্দুদের।

শুধু প্রশাসন কেন, আগামীদিনে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখা এই রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও এই জেহাদি বিপদ সম্পর্কে মৌন। মুসলিম ভোটের লোভ তো আছেই, তারসাথে এদের ভীরু মানসিকতাও তাদের মৌনতার অন্যতম কারন। বিরোধী দলগুলির নেতৃবৃন্দ তাদের সহজাত ভীরু মানসিকতার কারণেই ইসলামিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। আর তাদের এই ভীরুতাই প্রবাহিত হয় তাদের অনুগামীদের মধ্যে, ফলে পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরও ভীরুতা গ্রাস করে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে শ্রীকৃষ্ণ যখন শান্তিপ্রস্তাব নিয়ে কৌরবদের সভায় গেছিলেন এবং তাঁর প্রস্তাব যখন দুর্যোধন ফিরিয়ে দিয়েছিল তখন সেই সভায় ভীষ্ম আর দ্রোণাচার্যের মত মহারথী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যদি একবার বলতেন যে তাঁরা দুর্যোধনের হয়ে এই অন্যায় যুদ্ধে লড়াই করবেননা তাহলে দুর্যোধনকে যুদ্ধের ব্যাপারে আরেকবার ভাবতে হতো। ভীষ্ম বা দ্রোণ যুদ্ধ না করার কথা ঘোষণা করলে কৃপাচার্য, অশ্বত্থামাও সেই পথ অনুসরণ করতেন। কিন্তু অসীম জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেরকম ঘোষণা করেননি। তাদের আনুগত্য ধর্মের চেয়েও বেশী সিংহাসনের প্রতি ছিল। তাই কৌরবসভা থেকে ফিরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, "ন চ ভীষ্ম ন চ দ্রোণো যুক্তং তত্রাহতুর্বচ"। একমাত্র বিদুরই এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি সভাগৃহে শান্তিপ্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। "সর্বে তমনুবর্ভন্তে ঋতে বিদুরমচ্যুত"।

এমতাবস্থায়, পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের সাহসিকতায় উদ্বুদ্ধ করারই প্রত্যেকের প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। এমন জ্ঞানীগুণী লোকের আমাদের দরকার নেই যারা জেহাদি আগ্রাসনের সামনে ভীষ্ম আর দ্রোণের মত অসহায় হয়ে থাকবে আর হিন্দুদের সংযম ও সংস্কারের উপদেশ দেবে। যারা ১৯৪৭-এ দেশভাগ রুখতে পারেনি, ১৯৯০-এ কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি তারা আগামীদিনে পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের রক্ষা করবে এটা ভাবা মুর্খামি। তাই হিন্দুদের মাটি বাঁচানোর লড়াই হিন্দুদেরই দলমত নির্বিশেষে, একজোট হয়ে করতে হবে। এই খন্ডিত বাংলাকে যদি প্রকৃতই ধর্মনিরপেক্ষ রাখতে হয়, তাহলে সংঘর্ষ থেকে পিছু হটলে চলবেনা। প্রত্যেকের মধ্যে দৃঢ়তা আনতে হবে যে আমরা কখনই বাংলার সংস্কৃতিকে, বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির সামনে বিকিয়ে দেবনা।

জয় মা কালী।

Tuesday, June 16, 2020

মন্দির সংস্কার


পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত বাঁকুড়ার মন্দিরগুলির গায়ের পোড়ামাটির কাজ বহুদিন ধরেই এলাকার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। ১৯৯৭ সালে, জেলা সদর বিষ্ণুপুরের মন্দিরগুলো ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ মর্যাদা পেয়ে সংরক্ষণের কাজ শুরু হলেও, জেলার অন্যান্য অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে থাকা মন্দিরগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ অবহেলিত রয়ে গেছে। এরকমই কয়েকটা মন্দির রয়েছে শুশুনিয়া পাহাড় সংলগ্ন কাদাশোল, নতুনগ্রাম, বেলিয়াতোড় এবং বেলুট-গোবিন্দপুর গ্রামগুলিতে। ধর্মেশ্বর, লক্ষীনারায়ন বা শিবের যে মন্দিরগুলি এইসব যায়গায় রয়েছে, সংরক্ষণের অভাবে সেইগুলির কয়েকটা পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে আর এখনই উদ্যোগ না নিলে, বাকিগুলিরও একই পরিণতি হবে।

এলাকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ তপশিলি জাতি এবং ৩০ শতাংশ তপশিলি উপজাতিভুক্ত এবং অধিকাংশই দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করেন। অধিকাংশ মানুষের জীবিকা কৃষি বা পশুপালন হলেও, কেবলমাত্র বৃষ্টির জলের উপর নির্ভরশীল হয়ে, অনুর্বর জমিতে চাষাবাদ যথেষ্টই কষ্টসাধ্য। ফলে গ্রামের অধিকাংশ সক্ষম পুরুষ ও মহিলারা কাজের খোঁজে মূলত 'পূবে যান' মানে জেলার পূর্বদিকে অবস্থিত বর্ধমান, আসানসোল প্রভৃতি যায়গায় যান এবং ইঁটভাটা বা কলকারখানায় শ্রমিক হিসাবে কাজ করেন।
এত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও, গ্রামবাসীরা নিজেরাই সাধ্যানুযায়ী চাঁদা তুলে একটা শিব মন্দিরের সংস্কার করেন (৪ নং ছবি) এবং সেখানে গত ৯ই ফেব্রুয়ারী, সনাতন সংস্কৃতি অনুসারে, শুদ্ধি অনুষ্ঠান ও নরনারায়ণের সেবা করা হয়। কিন্তু সংস্কারের জন্যে যথেষ্ট অর্থ না থাকায়, মন্দিরে চিরাচরিত পোড়ামাটির কাজের বদলে সাধারণ ইঁট ও সিমেন্টের ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এরসাথে যদি দৈনিক দুধ, মধু, ঘি, প্রসাদ এবং পূজারীর দক্ষিণা যোগ করা হয় তাহলে প্রতিটা মন্দিরের বার্ষিক খরচ দাঁড়ায় প্রায় দুই থেকে তিন লক্ষ টাকা। বাৎসরিক উৎসব পালনের খরচও প্রায় তিন লক্ষ টাকা।
মন্দিরগুলিকে তাদের পুরনো রূপ ফিরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী প্রতিটা মন্দির সংস্কারের খরচ লাগবে প্রায় ৬ (ছয়) লক্ষ টাকা এবং সময় লাগবে কম করে হলেও ছয় মাস। অর্থাৎ পাঁচটা মন্দির সংস্কারের মোট খরচ প্রায় ৩০ (তিরিশ) লক্ষ টাকা এবং তাদের বার্ষিক খরচ প্রায় ১০ (দশ) লক্ষ টাকা।

এমতাবস্থায়, আত্মদীপ-এর পক্ষ থেকে আমরা, সমাজের সকলের সক্রিয় সহযোগিতার মাধ্যমে, মন্দিরগুলিকে সংস্কার করে, তাদের পুরনো রূপ ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছি। এই উদ্দেশ্যে আমরা ক্রাউড ফান্ডিং শুরু করেছি যার মাধ্যমে, যেকোন ব্যক্তি, তাঁর সাধ্যানুযায়ী সাহায্য করতে পারবেন। এই কাজে সহযোগিতা করতে আপনারা নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে অনুদান দিতে পারেন বা https://milaap.org/fundraisers/support-prasun-maitra/upi_deeplink এই লিঙ্কে ক্লিক করে UPI এর মাধ্যমে সরাসরি অনুদান দিতে পারেন। আমাদের ঐতিহ্যকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমাদের গৌরবময় সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করানো আমাদের কর্তব্য।

https://milaap.org/fundraisers/support-prasun-maitra?utm_source=whatsapp&utm_medium=fundraisers-title&mlp_referrer_id=960287




Friday, June 12, 2020

চুপিচুপি

স্তাবক চ্যানেলগুলির ঢক্কানিনাদের মাঝে, অজয় শুক্লার মত প্রতিরক্ষা বিষয়ে অভিজ্ঞ সাংবাদিক যখন দাবী করেন যে লাদাখ অঞ্চলে চীন তাদের ভারতের অভ্যন্তরে অধিকৃত অঞ্চলের দখল এখনও ছাড়েনি এবং সরকার যখন সেই বিষয়ে নীরব থাকে, তখন এটা আন্দাজ করা স্বাভাবিক যে এমন কিছু সত্যিই ঘটছে যা সরকারের পক্ষে গৌরবজনক নয়। গত ১২ এবং ১৩ই মে, চীনের সৈন্যারা যে ভারতের সৈন্যদের সরাসরি সংঘাত হয় এবং ৭২ জন ভারতীয় সৈন্যকে, চিকিৎসার জন্যে স্থানান্তরিত করা হয়, অজয় শুক্লার এই দাবী কিন্তু এখনও খন্ডন করেনি সরকার।



তারমানে লাদাখের গালোয়ান ও পেনং অঞ্চলে, কোভিডের কারণে ভারতীয় সেনা তাদের নিয়মিত টহলদারি বন্ধ করার সুযোগে, চীন ভারতের ভূখণ্ডের কিছু অংশ দখল করেছে এবং ভারতীয় সৈন্যদের আক্রমণও করেছে। পাকিস্তান নিয়ে গলাবাজি করা সরকারের, চীনের আগ্রাসন নিয়ে নীরবতা অনেক কিছুই বুঝিয়ে দিচ্ছে। পাকিস্তানের বেলায় যে পেটোয়া চ্যানেলগুলি, মোবাইল টাওয়ারের সিগনাল ধরে, বালাকোটে নিহতদের সংখ্যা অবধি বলে দিচ্ছিল আজ জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে যে ঢাকঢাক গুড়গুড় চলছে, সেটা মোটেই ভারতের পক্ষে সুখকর নয়।

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর থেকে একটা 'কড়ি নিন্দা' তো দেশবাসী আশা করতেই পারে, তাই না?

Wednesday, June 3, 2020

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি

আগেও বলেছি, আবারও বলছি পশ্চিমবঙ্গের জনগণ বিজেপির জন্যে প্রস্তুত হলেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জন্যে কতটা প্রস্তুত সেটা আমি এখনও নিশ্চিত নই এবং ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারবনা যতক্ষণ না পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী বা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মত কোন হেভিওয়েট নেতা তৃণমূল ছেড়ে বেড়িয়ে না আসেন অথবা সৌরভ গাঙ্গুলীর মত কোন জনপ্রিয় মুখ বিজেপিতে যোগদান না করেন।

তবে এটা নিশ্চিত যে তৃণমূল কংগ্রেসের, বড় থেকে ছোট, অনেক নেতাই ধরে নিয়েছেন যে ২০২১-এই গল্প শেষ আর তাই যে যার সাধ্যমত লোটালুটিতে সামিল হয়েছেন। করোনা হোক বা সাইক্লোন - লুটের রাজত্ব চলছে সর্বস্তরে। দিদি-মোদী সেটিং-এ এতদিন আস্থা থাকলেও সেটার স্থায়িত্ব নিয়ে অনেকেই এখন সন্দিহান। পুলিশের একটা বড় অংশও, শুধু উপরমহল নয়, সিভিক ভলান্টিয়ার লেভেলেও, আর দিদির উপর বাজী রাখতে পারছেন না, অপেক্ষায় আছেন বিজেপির।

কিন্তু মোদী-শাহর মাথায় কি রয়েছে সেটা নিয়ে সবাই ধন্ধে। রাজ্যের নবনিযুক্ত কমিটি, যা আদতে নতুন বোতলে পুরনো মদ, সেই ধন্ধ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে যে মোদী-শাহ আদৌ পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব সরাসরি নিতে আগ্রহী নাকি, ভাইপোর জুজু দেখিয়ে, দিদিকে সামনে রেখে যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, এমতাবস্থায় সরাসরি দায়িত্ব নিলে সেটার সম্পূর্ণ দায়ভার গিয়ে চাপবে মোদী আর শাহর উপরে। মোদী-শাহকে ভাবতে হবে যে সেরকম পরিস্থিতিতে দায় নেয়ার মত যোগ্য মুখ এই রাজ্যে দলের আছে কিনা। বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্ত, জনসংখ্যার ভারসাম্যের দ্রুত পরিবর্তন, শিল্পপতিদের বিরূপ মনোভাব, এরকম অনেক বিষয়ের বোঝা এসে পড়বে দলের উপর যেগুলির জন্যে এখন অন্যকে দোষারোপ করেই দিব্যি কেটে যাচ্ছে।

এর সাথে আছে রাজ্যে কম্যুনিস্টদের উপস্থিতি যা নিঃসন্দেহে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্যে অসুখকর বিষয়। এটা নিশ্চিত যে তৃণমূল একবার সরকার থেকে চলে গেলে দলটারই আর অস্তিত্ব থাকবেনা কারণ বাস্তবে এটা কোন দলই নয়, রাজ্য থেকে সিপিএম কে সরানোর একটা আন্দোলন মাত্র। এমতাবস্থায়, বিজেপি সরকার গড়লে যদি তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে যায় তাহলে স্বাভাবিক উত্থান হবে কম্যুনিস্টদের আর যেকোন দিনে, মোদীর কাছে, বিপক্ষ হিসাবে, কম্যুনিস্টদের থেকে মমতা ব্যানার্জী অনেক বেশী কাম্য।

তাই আমি এখনও ২০২১ এ, বিজেপির আগ্রহ নিয়ে সন্দিহান। আপনারা প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, যদি বিজেপি নাও চায়, কিন্তু জনগণ চায়, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হলেও তো জনগণ বিজেপিকে ভোট দিতে পারে, সেক্ষেত্রে কি হবে? ঠিকই বলেছেন, এরকম হতেই পারে তবে আমি বিশ্বাস করি যে মোদী-শাহ যদি এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে না চান, তাহলে রাজ্য নেতারা একের পর এক ভুলভাল বক্তব্য দিয়ে যাবেন যাতে তাদের থেকে স্বাভাবিক ভোটও সরে যায় আর সেরকম পরিস্থিতিতে, রাজ্যের কোন নেতা যদি নির্বাচনের আগে, গোর্খাল্যান্ড বা রাজ্যের স্বার্থ বিরোধী কোন বিষয়কে সমর্থন জানিয়ে দেন, তাহলেও আমি অবাক হবনা। নির্বাচন মিটলে কোন কেন্দ্রীয় নেতা সেই বক্তব্যকে নস্যাৎ করে দিতেই পারেন।

তাই আমি এখনই স্রোতে ভাসতে রাজী নয়। আগামী দুই-তিন মাসের ঘটনাবলীর উপর শুধু নজর রেখে যাবো।

https://bangla.hindustantimes.com/nation-and-world/pm-modi-much-popular-than-mamata-banerjee-in-west-bengal-says-c-voter-survey-31591109268643.html

Tuesday, May 26, 2020

আইনের শাসন

গত রবিবার (১৭ই মে) রাতে, তিন গাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে, আমাকে বীজপুর থানায় নিয়ে গিয়ে গ্রেপ্তারের পর, সেই খবর বাড়ির লোককে জানানো হয়নি।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশানুসারে, গ্রেপ্তার করতে আসা অফিসারের নিজের পরিচয়জ্ঞাপক পোশাক পরে আসা উচিত অথচ আমাকে গ্রেপ্তার করতে আসা প্রত্যেক অফিসারই ছিলেন বিনা ইউনিফর্মে।

আমার বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ এনেছে Injuring or defiling place of worship with intent to insult the religion of any class.—Whoever destroys, damages or defiles any place of worship, or any object held sacred by any class of persons with the intention of thereby insulting the religion of any class of persons or with the knowledge that any class of persons is likely to consider such destruction, damage or defile­ment as an insult to their religion, shall be punishable with imprisonment of either description for a term which may extend to two years, or with fine, or with both. তারমানে, পুলিশের অভিযোগ অনুসারে আমি একটা বিশেষ ধর্ম সম্প্রদায়ের অপমানের উদ্দেশ্যে তাদের প্রার্থনা কক্ষ ধ্বংস করেছি। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী দ্বারা 'ফাইনাল গাজি' প্রকাশের খবর, একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রার্থনা কক্ষ ধ্বংসের সমানুপাতিক অথবা তাদের দ্বারা স্বীকৃত মানে any object held sacred by any class of persons মানে তাদের দ্বারা পবিত্র হিসাবে মান্যতা প্রাপ্ত কোন বিষয়ের উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সমালোচনা করা হয়েছে। এমতাবস্থায়, পুলিশের অভিযোগ যদি যথার্থ বলে মানতে হয় তাহলে মেনে নিতেই হবে যে "গাজি" শব্দের যে ব্যখ্যা আমার পোস্টে দেয়া হয়েছে, সেটা সত্য।

মজার কথা হল যে অ্যারেস্ট মেমো আমি সই করে দিলেও, সেটার কপি আজ অবধি আমি বা আমার পরিবার পায়নি।

এতকিছুর পরেও, গত ১৮ই মে, আদালতের কাছে পুলিশ আমাকে পুনরায় তাদের হেফাজতে নেয়ার দাবী প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং আমার পক্ষে দাঁড়ানো ৫ জন উকিলের সম্মিলিত প্রতিবাদ এবং যুক্তির সামনে পুলিশের দাবী ভেসে গেছে।

তবে খেলা তো সবে শুরু হলো, এটা এবার চলতেই থাকবে। আর পরবর্তী প্রত্যেকটা শুনানিতে পুলিশের খামতি এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একজন সাধারণ নাগরিককে হেনস্থা করার প্রসঙ্গ উঠতেই থাকবে। থানায় এবং কমিশনারেটে, দু'বার জিজ্ঞাসাবাদের পর, কেন হঠাৎ মাঝরাতে গ্রেপ্তার করার প্রয়োজন দেখা দিলো। দেখা যাক, দেশের সংবিধান, আদালতের মাধ্যমে কার পাশে দাঁড়ান।

Sunday, May 24, 2020

বিবেকের ডাক


স্রোতের বিরুদ্ধে সাঁতার কাটার অভ্যাসটা আজকের নয়, বহুদিনের। সেভেনে পড়াকালীন, সালটা ১৯৯০, সিপিএমের সূর্য তখন মধ্যআকাশে, ক্লাসে মহাপুরুষের ছবি হিসাবে লেনিনের ছবি লাগানোর বিরোধিতা করে বা টেরেসার সেবার আড়ালে ধান্ধাবাজীর কথা প্রকাশ্যে বলে ABTA-র সদস্য মাস্টারমশাইদের কাছে অপ্রিয় হয়েছি। SFI-র ডাকা বনধের দিনে স্কুলে উপস্থিত হয়ে বনধ সফল করতে স্কুলে উপস্থিত থাকা পুরসভার চেয়ারম্যানের সাথে ঝগড়া করে বহু নেতার কাছে অপ্রিয় হয়েছি। কিন্তু বিবেকবোধকে বিসর্জন দিয়ে কখনও স্রোতে গা ভাসানোর সহজ খেলায় যোগ দেইনি।
সেদিনও দেইনি, আজও দেবনা। আজ যারা ভাবছে মোদী মোদী করলেই জেহাদি সমস্যা মিটে যাবে সেই স্তাবকদের সাথে আমি একমত নই। স্তাবকরা নিজেদের দায় এড়াতে, জয়ধ্বনি দিয়েই ক্ষান্ত হতে পারে, কিন্তু আমি পারিনা। এই ধারার স্তাবকতা তখনও দেখেছি যখন বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন সঙ্ঘ পরিবারের সাথে যুক্ত থাকার ফলে পরিবারের সদস্যদের উল্লাস, স্তাবকতা আর হাঁফ ছেড়ে বাঁচার মানসিকতা খুব কাছের থেকে দেখেছি। বিকাশ পুরুষ আর লৌহ পুরুষের যুগলবন্দী নিয়ে চর্চা চুপ করিয়ে দিয়েছিল বহু অপ্রিয় প্রশ্ন। জহরলাল নেহরুর পরে জম্মু ও কাশ্মীরের হিন্দুদের সবচেয়ে বেশী ক্ষতি করার জন্যে দায়ী বাজপেয়ীকে প্রশ্ন করার ক্ষমতা ছিলনা স্তাবকদের। কিন্তু চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়। ২০০৪ সালে বিকাশ পুরুষের সরকার পতনের পরেই উঠতে লাগলো প্রশ্ন। লৌহ পুরুষের জিন্না বয়ান বা গুজরাটের দাঙ্গা (যা আদতে হিন্দুদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই ছিল) কেন্দ্রীয় সরকারের উপর একটা কুৎসিত দাগ জাতীয় বক্তব্য আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিল।

কিন্তু মজার কথা হল যে, প্রশ্নগুলির উত্তর না পেয়েই ২০০৯ সালে সেই লৌহ পুরুষকেই তথাকথিত হিন্দুত্ববাদীরা প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করলো। অর্থাৎ যে ব্যক্তিকে দল চালানোর অযোগ্য মনে করে দলের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল তাকেই দেশ চালানোর যোগ্য হিসাবে মনোনীত করা হলো। কিন্তু দেশের লোক সেই বিশ্বাসঘাতকে তাদের নেতা হিসাবে গ্রহণ করলো না, আর ২০০৪ থেকে নিম্নমুখী হওয়া বিজেপির গ্রাফ আরও নেমে গেল।
২০১৪ সালে মোদীর নেতৃত্বে নির্বাচনে লড়ার সিদ্ধান্ত যাকে ইংরেজিতে বলে more compulsion than choice। ২০০২ পরবর্তী সময়ে মোদীর যে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হয়েছিল তারই প্রতিফলন ঘটে ২০১৪ ও ২০০৯ সালের ভোটে। সেই লোকসভা নির্বাচন ছিল মোদীর, বিজেপি নয়, বাকিদের লড়াই। সারাজীবন সেকুলারদের (পড়ুন মুসলিম তোষণবাদীদের) চাপে বিপর্যস্ত হওয়া হিন্দু জনতা মনপ্রাণ ঢেলে আশীর্বাদ করে নির্বাচন করলো মোদী সরকার। কিন্তু এত বড় দেশের দায়িত্ব কি একজনের পক্ষে সামলানো সম্ভব? তারও কি ভুলচুক হতে পারে না? সেক্ষেত্রে সেটা ধরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব কার? স্তাবকরা সেটা করবেনা কারন তাদের প্রত্যেকের কিছু না কিছু নিহিত স্বার্থ আছে কিন্তু যারা জেহাদি শক্তিকে দমন করার জন্যে মোদীকে নির্বাচিত করেছেন তাদের কাছে মোদী লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য পূরণের অস্ত্র মাত্র। সেই অস্ত্রে যদি মরচে ধরে বা ধার কমে যায় তাহলে সেটাকে শোধন করার অধিকার প্রত্যেক হিন্দুর আছে। তাই আমি মোদীর হিন্দু স্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করলে যদি স্তাবকদের গায়ে জ্বালা ধরে তাহলে আমি নিরুপায়।

স্তাবকরা তাদের যুক্তিহীনতা ও মেধাগত দৈন্যদশার প্রেক্ষিতে আমার বা আমার সংঠনের অবস্থানকে, তাদের সহজ যুক্তিতে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের সাথে জুড়ে, আত্মতুষ্টি লাভ করতে পারে বা যে নেতার খিদমতগারি করছে, তার সুনজরে পড়ার উপায় মনে করতে পারে, কিন্তু সেটাতে বাস্তবটা বদলাবেনা। যে #আত্মদীপ বা বিবেকের মত অনুসারে এতদিন কাজ করে এসেছি, এখনও তাই করবো। মমতা ব্যানার্জী বহুদিন থেকেই আমাকে পশ্চিমবঙ্গে, ওনার ভাষায়, "দাঙ্গাবাজ" বলে চিহ্নিত করে এসেছেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে, তাঁর অন্যতম স্তাবক, রাজ্যের তদানীন্তন পুলিশ প্রধান এবং বর্তমানে অবসরভাতা হিসাবে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদ প্রাপ্ত, সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ কে দিয়ে এই মর্মে সাংবাদিক সম্মেলনও করিয়েছিলেন যে আমিই নাকি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক গুজব ছড়ানোর মূল পান্ডা। খবরে নামটা প্রকাশ না করলেও ইঙ্গিত স্পষ্ট।

তবে ২০১৭ সালে সেই ঢাকঢোল পিটিয়ে করা ঘোষণার পরে, তিন বছরের বেশী সময় কেটে গেলেও, মমতা ব্যানার্জীর প্রশাসন জেহাদিদের নিয়ন্ত্রণ করতে আজও সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তাই আজও ঘটে চলে আসানসোল, টিকিয়াপাড়া বা তেলেনিপাড়া আর প্রশাসন রেশন পৌছে দিয়ে আসে ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তর বাড়িতে পাছে 'দুধেল গাই' রা সপাটে লাথি মারে। তাই ধুলাগড় দাঙ্গার পরে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ অধিকর্তা, সব্যসাচী রমন মিশ্র কে সেই পদ থেকে সড়িয়ে দেয়া হলেও, তেলেনিপাড়ার পরেও হুমায়ুন কবীর নিজের পদে দিব্যি বহাল রয়েছেন। দিদি যাঁর "ফাইনাল গাজি" বই উদ্বোধন করেন, তাঁর সাতখুন মাফ না হোক, তেলেনিপাড়া তো মাফ হতেই পারে।

আগেই বলেছি যে স্রোতের সাথে সাঁতার কাটতে সবাই পারে কিন্তু আমার কাছে বিবেকটা অনেক বেশী মূল্যবান। তাই তাদের পছন্দ হোক আর নাই হোক, প্রশাসনকে আয়না দেখানোর কাজটা চালিয়েই যাবো। বর্তমানে প্রশাসনে কর্মরত বা অবসরভাতা প্রাপ্ত কিছু ব্যক্তি, চেয়ারের জোরে, নিজেদের ঈশ্বর বলে ভাবতেই পারেন আর সেই ভাবনার বশীভূত হয়ে আমার মত সাধারণ নাগরিকদের, অন্যায়ভাবে, গ্রেপ্তার করাতেই পারেন কিন্তু দিনের শেষে, আদালতে তাদের নিজেদেরই মুখ পোড়ে। জনগণের কাছে নিজেদের প্রহসনে পরিণত করেন। অতএব, যে যাই বলুক আর যে যাই করুক, #আত্মদীপের আলোতে, আমার মেয়ে সহ হিন্দুদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যাতে অসভ্য আরবী সংস্কৃতির ভার বহন করতে না হয়, বোরখা পরতে না হয়, সেই লড়াই জারী থাকবে।

https://timesofindia.indiatimes.com/city/kolkata/tighten-screw-on-social-media-rumour-mongering-cm-to-dgp/articleshow/57195139.cms

Friday, May 22, 2020

Pets

WB Police, pet of Mamata Banerjee, tried their best to suppress voice of conscience by illegally arresting me in the night of 17th May but they forgot about about something called the Constitution. After 3 days of conditional bail, given on Monday, asking me not to make activities in social media for 3 days, today court has given me bail. Now, it is quite evident that WB Police is working as party cadre of Trinamool & trying to choke every single voice against irregularities of party and the govt. Its disgraceful to find IPS officers, incapable to stop communal violence, are using their authority to target voice of opposition. What a poor role model of parenting they are setting before their children.

পোষ্যবর্গ

মমতা ব্যানার্জীর পোষ্য পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ তাদের সর্বশক্তি লাগিয়ে দিয়েছিল সত্যের কন্ঠরোধ করতে আর সেই কারণেই তারা দু'বার জিজ্ঞাসাবাদের পরেও, গত ১৭ই মে রাতে আমাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে অবৈধভাবে গ্রেপ্তার করে এবং সেই খবর বাড়ির লোককে জানানোর প্রয়োজনবোধ করেনা। কিন্তু ক্ষমতার মদগর্বে তারা ভুলে গিয়েছিল যে দেশে সংবিধান নামে একটা জিনিস আছে। মহামান্য আদালত ১৮ তারিখেই, পুলিশের আবেদন অগ্রাহ্য করে, আমাকে তিন দিনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেন এবং তিন দিনের জন্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোন কার্যকলাপ করতে নিষেধ করেন। আজ আদালতে পুনরায় মামলা উঠলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। তবে পুলিশের আচরণে এটা স্পষ্ট যে পুলিশ তৃণমূলের দলদাস হিসাবে কাজ করছে এবং দল ও সরকারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ উঠলেই, অন্যায়ভাবে অভিযোগকারীর গলা চেপে ধরতে চাইছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক যে দাঙ্গা ঠেকাতে অক্ষম IPS অফিসাররা নিজেদের পদের অপব্যবহার করে বিরোধীদের আওয়াজকে থামিয়ে দিতে চাইছেন। এরপরেও এরা নিজেদের সন্তানদের  চোখে চোখ রেখে, আদর্শের কথা বলতে পারেন কি?

Saturday, May 16, 2020

Experience at Commissionerate

Today, again, I was called by police. This time it was Barrackpore Police Commissionerate. He told that many complaints have been filed against me alleging fanning of Telenipara violence. I asked him what stopped police to act against perpetrators? Didn’t non-action of police allowed riot to blow? Then he asked if I had shot the videos myself. I said, no and claimed to have received from source. He asked for details of sources but I denied to provide. He asked how can I be sure those were of that area? I asked him if he accompanied Neil Armstrong to Moon, if not, how on Earth could he know that he stepped on the Moon? I continued by saying he knows that as it was told by a credible source. Similarly the videos I shared was from credible sources. Yet, if he consider those were false & fabricated, he is free to take appropriate action. Then I reminded him that I filed complaint against Muslim Buddhijibi Mahal for posting vulgar images about Hindu Gods & Goddesses in this commissionerate, hate speech by Kabir Suman to Kolkata Police but nobody took action and now they are calling me as I exposed the reality. The officer warned me that he’ll arrest me if I do any such thing in future. I replied that I’ll continue to my constitutional duties & he is also free to do his duty. If our duties confront each other, let the court of law take the call on who was right & who was wrong.

এবার কান্ড কমিশনারেটে

আজকে আবার ব্যারাকপুর কমিশনারেটে আমাকে যেতে বলা হয়েছিল। কোন অফিসে যাবো, সেটা না জানায়, বীজপুর থানা থেকে একটা এসকোর্ট ভ্যানও দেয়া হয়। বাড়ি থেকে ১১ঃ১৫ নাগাদ বেড়িয়ে, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে এসকোর্ট ভ্যানের সাথে দেখা হয় এবং অতঃপর সোজা কমিশনারেটের এক বড় কর্তার অফিস।

সংশ্লিষ্ট অফিসার আমার কুশলাদি এবং পারিবারিক খোঁজখবর নেয়ার পর জানালেন যে আমার বিরুদ্ধে নাকি এই মর্মে অনেক অভিযোগ জমা পরেছে যে আমি দাঙ্গা ছড়াচ্ছি। ওনার উত্তর শুনে আমিও বললাম যে আমার কাছেও অনেক অভিযোগ এসেছে যে পুলিশ সময়মত উপযুক্ত ভূমিকা গ্রহণ করেনি আর সেটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ যে আজ নদীর একপারের পুলিশকে, অন্য পারের পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই উত্তরটা অফিসারের পছন্দসই হয়নি, তাই তিনি প্রসঙ্গ বদলে জানতে চাইলেন যে আমি এই দাঙ্গা কারা করছে সেই বিষয়ে কিছু জানি কিনা। আমি ওনাকে স্পষ্ট ভাষায় জানালাম নির্দিষ্টভাবে কোন তথ্য না থাকলেও তারাই করছে যাদের মনে এই নিশ্চয়েতা আছে যে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবেনা।

এই উত্তরটাও ওনার পছন্দ হলনা। এবার উনি জানতে চাইলেন যে এই ভিডিওগুলো আমি নিজে গিয়ে শুট করেছি কিনা আর সাথে উনি ভিডিওগুলো ওনাকে পাঠিয়ে দিতেও বললেন। ভিডিওগুলো পাঠিয়ে বলে দিলাম যে এগুলো নিজে শুট করিনি তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পেয়েছি। এর উত্তরে উনি বললেন যে সূত্র যে নির্ভরযোগ্য সেটা কি করে বুঝলাম। তারা তো অন্য কোথাকার ভিডিও তুলে, এলাকার বলে দাবী করতে পারেন। এর উত্তরে আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে উনি নীল আর্মস্ট্রং-র সাথে চাঁদে গিয়েছিলেন কিনা! উনি প্রশ্নটা বুঝতে না পারায়, আবার করলাম এবং স্বাভাবিকভাবেই ওনার উত্তর নঞর্থক হওয়ায় বললাম যে তাহলে নীল আর্মস্ট্রং যে চাঁদেই গিয়েছিলেন, সেটা নিয়ে নিশ্চিত হলেন কিভাবে? কারণ সেটা নাসার মত একটা বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা বলেছিল, তাই তো? আমার ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা তাই। আমিও ভিডিওগুলো এরকম নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকেই পেয়েছি। যে কারণে আমার পোস্টের দু'দিন পরেই টাইমস নাউ চ্যানেলেও ঐ ব্যক্তিদের সাক্ষাতকার দেখানো হয়েছে। এরপরেও যদি প্রশাসনের মনে হয় ভিডিওগুলো মিথ্যা, তাহলে তারা অনায়াসে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারেন।

এরপর আমি ওনাকে মনে করিয়ে দিলাম যে বছর তিনেক আগে, খোদ ওনার কমিশনারেটেই আমি পশ্চিমবঙ্গ মুসলিম বুদ্ধিজীবী মহলের কিছু সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করতে পারে এমন পোস্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছিলাম, আজ অবধি সেটা নিয়ে কোন ব্যবস্থাই তাঁর প্রশাসন নেয়নি। কবীর সুমনের হেট স্পিচের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশে জানানো অভিযোগ আজও সেরকম অবস্থাতেই পড়ে আছে। আর আমি তেলেনিপাড়া নিয়ে বাস্তব তথ্য তুলে ধরায়, ওনার পুলিশ আমার থেকে কৈফিয়ত চাইছেন, আমাকে দাঙ্গাবাজ বলছেন। প্রশাসন যদি ধারাবাহিকতার সাথে দ্বিচারিতা চালিয়ে যায় তাহলে নাগরিকদের কাছে আর বিকল্প কি থাকে?

আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই উনি বললেন যে আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ জমা পড়েছে আর এটাই আমাকে দেয়া শেষ ওয়ার্নিং। এরপর যদি এরকম কাজ করি তাহলে ওনারা গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হবেন আর সেটা আমার কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারের জন্যে সুখকর হবেনা। উত্তরে আমিও ওনাকে জানিয়ে দিলাম যে আমার কর্মক্ষেত্র ও পরিবারের ভালমন্দের খেয়াল রাখতে আমি একাই যথেষ্ট আর তাই যদি এরকম ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটে, আমার ভূমিকাও অপরিবর্তিত থাকবে। সংবিধান অনুসারে আমার যা অধিকার আছে সেটা আমি পালন করবো আর সংবিধান অনুসারে ওনাদের যে অধিকার আছে সেটা ওনারা পালন করুন। দু'জনের পথে যদি সংঘাত ঘটে তাহলে কোনটা ঠিক সেটা নাহয় আদালতেই ফয়সালা হবে।

ধন্যবাদ জানিয়ে বেড়িয়ে আসার সময় মনে পড়লো যে বীজপুর থানার বড়বাবু বলেছিলেন যে উনি সোমবার আমাকে ত্রাণ বিতরণ করতে দেবেন না। সেই কথা ওনাকে জিজ্ঞাসা করায় উনি স্পষ্ট বলে দিলেন যে আমরা যেহেতু রেজিস্টার্ড NGO, তাই ত্রাণ দিতে আপত্তি করার কোন অবকাশই নেই। পুনরায় ওনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে অফিস ছাড়লাম।

গতকালের অভিজ্ঞতা

কাল অ্যাপোলো হাসপাতালে গিয়েছিলাম একজন পরিচিতাকে ডিসচার্জড করিয়ে আনতে। হাসপাতালে থাকাকালীনই মা ফোন করে জানালো যে বাড়িতে থানার বড়বাবু এসেছিলেন, আমি না থাকায় ফেরার পর থানায় দেখা করতে বলে গেছেন।

হাসপাতাল থেকে ফিরলাম ৫ঃ৩০ নাগাদ। তারপর বীজপুর থানার বড়বাবুকে ফোন করাতে, উনি ৬ টা নাগাদ থানায় আসতে বললেন। যথাসময়ে থানায় পৌছালাম এবং বাইরে অপেক্ষা করতে লাগলাম, সঙ্গে ছিল অর্পিতা। ৬ঃ৪৫ এ বড়বাবু আসলেন এবং আমি ভিতরে ঢুকলাম।

আমাকে দেখেই বড়বাবুর মেজাজ সপ্তমে। আমি নাকি দাঙ্গাবাজ (শব্দটা পরিচিত লাগছে কি?)। আমি, আমার স্বভাব অনুযায়ী, খুবই শান্তভাবে জানতে চাইলাম ওনার এরকম সার্টিফিকেট প্রদানের কারণটা কি। ওনার বক্তব্য যে তেলেনিপাড়া নিয়ে আমি নাকি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ভগ্ন করেছি। আমি গোলা মানুষ, ব্যাপারটা ঠিক আমার কাছে পরিস্কার হলনা। জানতে চাইলাম যে উনি কি বলতে চাইছেন যে তেলেনিপাড়ার ঘটনায় রাজ্যের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে? এতে উনি আরও তেতে উঠলেন এবং বললেন যে, তেলেনিপাড়ার ঘটনায় নয়, সেটা নিয়ে আমার করা পোস্টে সম্প্রীতি নষ্ট হয়েছে। এই কথা শুনে আমি তো আর ঠাঁই পাইনা, ঘটনাতে যদি সম্প্রীতি নষ্ট না হয়, তাহলে সেটা নিয়ে বলাতে নষ্ট হয় কেমন করে? এই প্রশ্ন করাতেই উনি মেজাজ হারালেন আর বললেন যে উনি আমার ফোন সিজ করবেন আর আমার কথাবার্তা ভিডিও রেকর্ড করে, আমাকে জেলে ঢুকাবেন। এরপর উনি জানতে চাইলেন যে ভিডিও গুলি আমি নিজে শুট করেছি কিনা। নঞর্থক উত্তর দেয়ায় উনি ওগুলো ডিলিট করতে বলতেন। এরও উত্তর নঞর্থক হওয়ায় উনি জানতে চাইলেন যে আমি ওগুলো কোথা থেকে পেয়েছি। উত্তরে আমি পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিলাম যে সেটা আমি জানাবনা। আমি পোস্ট করেছি, সব দায় আমার। উনি যদি গ্রেপ্তার করতে চান, তাহলে যেন আজকেই করেন কারণ কাল কোর্ট থেকে জামিনের বিষয়ে আমি নিশ্চিত। তাছাড়া রবিবার আর সোমবার আমাকে বেহালা আর হালিসহরে ত্রাণ বিতরণ করতে যেতে হবে। "আপনার মত দাঙ্গাবাজকে আমি আমার এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করতেই দেবনা", চিৎকার করে উঠলেন তিনি। আমিও, আমার স্বভাব অনুযায়ী, শান্তভাবেই জানালাম, ত্রাণ তো আমি দেবই, পারলে উনি রুখে দেখান।

নিজেকে বেশ একটা কেউকেটা গোছের মনে হচ্ছিল কিন্তু সেই প্রলোভন দমন করেই ওনাকে বললাম যে ফালতু ফোন নিয়ে লাভ নেই কারণ আমার টাইমলাইন সম্পূর্ণ পাব্লিক, নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন আর যে যে ভিডিও নিয়ে ওনার আপত্তি আছে, সেগুলো তো আমি নিজেই ওনাকে ফরওয়ার্ড করে দিতে পারি। অতঃপর, আরেকটা ঘরে গেলাম আর খোলা হল আমার ফেসবুক। গত দু'মাসের পোস্ট ঘেঁটেও ওনারা উত্তেজক কোন লেখা পেলেন না। বরং ওনার সেই দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ওনাকে জানালেন যে, "স্যার, উনি তো অনেক ভাল ভাল কাজই করেছেন। গুজরাট থেকে ট্রেনও নিয়ে এসেছেন।" (সত্যি বলছি, আমি যে গুজরাট থেকে ট্রেন এনেছি, এটা আমি নিজেও জানতাম না)।

এই শুনে বড়বাবু বললেন যে আমার যখন এতটাই পরিচিতি আছে যে "ট্রেন চালাতে পারি", তাহলে খামোখা এরকম সাম্প্রদায়িক পোস্ট কেন করি। দুটোরই কারণ এক - আমি বললাম। আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে আপনার কি মনে হয়, আমি উদ্যোগ না নিলে সরকার গুজরাট থেকে ট্রেন চালাতনা? নিশ্চয়ই চালাতো, হয়তো আরও দু'দিন পরে। আমি ঘটনাটা নিয়ে লেগে থাকায়, কাজটা একটু আগে হয়েছে। ঠিক একইভাবে, তেলেনিপাড়ার হিংসা নিয়ে আমার পোস্ট ফেসবুক ও ট্যুইটারে ভাইরাল হওয়ার পরেই সরকার এলাকার সংশ্লিষ্ট অধিকারীর সাথে, আরও অধিকারীকে এলাকার দায়িত্ব দিয়েছেন। উত্তরে বড়বাবু জানালেন যে তেলেনিপাড়ার ক্ষেত্রে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সেটাই তো উনি জানতেন না। "সেটা আপনার দুর্ভাগ্য"- আমি বললাম কিন্তু আপনি জানতেন বলে তো আর বাস্তব বদলাবে না!

এরইমধ্যে বড়বাবুর ফোনে তাঁর কোন উচ্চতর আধিকারিক ফোন করলেন এবং আমাকে ফোন দিতে বললেন। সেই অধিকারী আমাকে বললেন যে ওনার সাথে তো আমার পরিচয় আছে, কথাবার্তাও হয়। তাহলে এরকম যে ঘটনা থানায় ঘটছে, সেটা ওনাকে জানাইনি কেন? আমি বিনীতভাবে জানালাম যে আইনকে সাহায্য করা আমার কর্তব্য আর সেটাই করছি। ব্যক্তিগত কারণে খামোখা ওনাদের বিরক্ত করতে আমার ইচ্ছা হয়নি। তারপর উনি বড়বাবুর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন, বড়বাবুর মুখের অভিব্যক্তি দেখে আন্দাজ করতে পারলাম যে কি কথা হলো।

ইতিমধ্যে ঘন্টা দেড়েক সময় কেটে গেছে। আমি এবার সরাসরি বললাম যে আপনি কি আমাকে গ্রেপ্তার করছেন? যদি করেন, তাহলে আমার স্ত্রী বাইরে গাড়িতে বসে আছেন, ওনাকে দায়িত্ব নিয়ে বাড়ি পৌছে দেবেন। উত্তরে উনি প্রায় লাফিয়ে উঠলেন আর বললেন, না স্যার, এখন তো গ্রেপ্তার করার প্রশ্নই উঠছেনা। আমি তাহলে যেতে পারি, জিজ্ঞাসা করলাম। ওনার সদর্থক উত্তর পেয়ে বেরোতে যাবো তখন উনি পিছন থেকে বললেন যে বাইরে একটা কুকুর বাঁধা আছে, একটু সাবধানে যাবেন। আমি বললাম, জানি, ওর নাম 'হান্ড্রেড' তো? ও আমাকে খুবই ভালবাসে। তারপর ওনার অভিব্যক্তি দেখার অপেক্ষা না করেই বেরিয়ে আসলাম আর 'হান্ড্রেড' যথারীতি আদর খাওয়ার জন্যে লাফিয়ে উঠলো। তারপর ওকে একটু আদর করে, থানা থেকে বেরিয়ে আসলাম।

Thursday, May 14, 2020

নিধিরামের সাফল্য


আপনারা অবগত আছেন যে গুজরাটের সুরাট ও ভালসারে আটক বাঙালীদের কিছু আর্থিক সাহায্য এবং স্থানীয় পরিচিতদের মাধ্যমে তাদের রেশনের ব্যবস্থা #আত্মদীপ-এর উদ্যোগে করা হয়েছে। সুরাটে আটকে যাওয়া এইরকমই একজন ব্যক্তি গতকাল রাত সাড়ে দশটা নাগাদ ফোন করেন এবং কবে বাড়িতে ফিরতে পারবেন এই হতাশায় কান্নাকাটি শুরু করেন। বাকি রাজ্যের লোকেরা ফিরে যাচ্ছে আর ওনারা আটকে আছেন, এই বলে তিনি হতাশায় ভেঙে পড়েন। ভদ্রলোকের অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে, আমি ওনাকে আশ্বস্ত করি যে সাতদিনের মধ্যেই গুজরাট থেকে ওনাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করবো।

ওনাকে তো আশ্বস্ত করে দিলাম কিন্তু আমি নিজে তো ঢাল-তলোয়ার বিহীন নিধিরাম সর্দার। তাই কাল রাত থেকেই শুরু করলাম বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ।
পাব্লিকলি ট্যুইটারে লেখা থেকে শুরু করে মেসেজ করা শুরু করলাম প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের। আজ সারাদিন ধরে লেগেছিলাম এই কাজেই যাতে ঐ ব্যক্তিকে দেয়া কথার খেলাপ না হয়ে যায়। কেন্দ্র ও রাজ্য প্রশাসনের এবং উভয় ক্ষেত্রের শাসক দলের বিভিন্ন নেতানেত্রীদের কাছে সারাদিন ধরে চললো দরবার।

কিছুক্ষণ আগে সুরাট থেকে সেই ভদ্রলোক ফোন করে জানালেন যে তাঁরা মেসেজ পেয়েছেন যে গুজরাট থেকে পশ্চিমবঙ্গে ফেরার জন্যে তিনটি ট্রেন দেয়া হয়েছে। সারাদিন ধরে যে কাজে রত ছিলাম, দিনের শেষে সেটা সাফল্যের মুখ দেখলে ভাল তো লাগেই কিন্তু এক্ষেত্রে ভাললাগার থেকেও বেশী ছিল তৃপ্তি যে তাঁরা অবশেষে ঘরে ফিরতে পারবেন।
পরে যখন ঐ ব্যক্তির থেকে মেসেজের কপিটা চাইলাম, দেখলাম যে গুজরাট থেকে ৩টে নয়, ৫টা ট্রেন দেয়া হয়েছে। ভদ্রলোক আবারও ফোন করছেন যে সেই ট্রেনে তাঁরা কিভাবে ফিরবেন সেটার পদ্ধতি জানতে। কালকে সারাদিন হয়তো এটা নিয়েই কেটে যাবে। তবে
এটা হওয়াতে যা আনন্দ পেয়েছি, সেটা বলে বুঝাতে পারবনা।

Tuesday, May 12, 2020

ঘরে ফেরার গল্প


ভিনরাজ্যে আটক হওয়া শ্রমিকদের ফেরানোর উদ্দেশ্যে চালু হওয়া ট্রেন পরিসেবা নিয়ে মমতা ব্যানার্জী প্রশাসনকে লেখা অমিত শাহর চিঠিতে রাজনৈতিক পয়েন্ট নেয়ার খেলা থাকতে পারে, কিন্তু সেটা মোটেই কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার পরিচায়ক নয়। বরং আমার মনে হয় যে এই চিঠি চালাচালি দু'পক্ষের সম্মিলিত একটা খেলা যাতে জনগণের দৃষ্টি মূল বিষয় থেকে অনেকটাই দূরে থাকে। মূল বিষয়টা তাহলে কি? মূল বিষয় হলো ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের #নিরাপদে, প্রথমে নিজ রাজ্যে আর তারপর নিজেদের বাড়িতে পৌছানো। ঠিক যেমনটা বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানে #নিরাপদ শব্দটাকে ইচ্ছা করেই হাইলাইট করেছি কারণ সেটাই প্রাথমিক শর্ত।

এবার চিঠি চালাচালির খেলা থেকে একটু নজর ঘুরিয়ে দেখুন যে শ্রমিকদের আনার জন্যে যে ট্রেন চালু করা হচ্ছে, সেটাকে রাজধানী এক্সপ্রেসের সমান মর্যাদা দেয়া হয়েছে। মানে, ট্রেনের ভাড়া, গতি এবং গমনপথ হবে রাজধানীর সমতুল্য। অর্থাৎ প্রায় দু'মাস ধরে কর্মহীন শ্রমিকদের গুনতে হবে রাজধানীর সমপরিমাণ ভাড়া আর সেই ট্রেনে কোনও সামাজিক দূরত্বের নিয়ম মানা হবেনা, মানে সব আসনের জন্যেই বুকিং নেয়া হবে। তারমানে সামাজিক দূরত্বের নিয়ম উপেক্ষা করে, প্রত্যেকটা কামরায় ৪৫ জনের বদলে আসবেন ৭২ জন। রাজধানীর হিসাবে ভাড়া নেয়া হলেও আগত শ্রমিকদের দেয়া হবেনা খাবার ও বিছানা, সেটাতে নাকি সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়বে, যদিও প্রতি কামরায় ২৭ জন বাড়তি লোক নিলে অবশ্য সংক্রমণ বৃদ্ধির কোন সম্ভাবনা নেই। শ্রমিকরা রাজধানীর ভাড়া গুনে ট্রেনে চাপলেও, তাদের বাড়ি থেকেই নিয়ে আসতে হবে খাবার ও বিছানা। তবে সেটার জন্যে তাদের রেল ভাড়াতে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। এমনকি একটা কামরাতে ৭২ জন লোক ট্রেনের টয়লেট ব্যবহার করলেও, সেটা নিয়মিত পরিস্কার করার কোন পরিকাঠামো ট্রেনে থাকবেনা। মানে প্রতি কামরাতে ৭২ জনকে পুরো ভগবানের ভরসায় যাত্রাপথ পাড়ি দিতে হবে। তবে ভারতীয় রেল মোটেই হৃদয়হীন নয়, তাই তারা ট্রেনে, আজ্ঞে হ্যাঁ, রাজধানীর সমপর্যায়ের ট্রেনে, প্যাকেটজাত খাবার বিক্রি করবেন যা শ্রমিকরা কিনে খেতে পারেন।

এরকম তিনশোটা ট্রেন চালানোর পর, মহামান্য রেলমন্ত্রী, পীযুষ গোয়েল, হাসিহাসি মুখে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে PM Care Fund-এ রেলের পক্ষ থেকে অর্থ জমা করবেন আর মিডিয়াতে সেই ছবি দেখে আর স্তাবকদের প্রশংসা শুনে আমরা ধন্য ধন্য করবো যে ভারতীয় রেল কি দারুণ কাজই না করেছে। এরইমধ্যে যদি খবর আসে যে ভিনরাজ্য থেকে আগত কোন শ্রমিকের মধ্যে করোনা সংক্রমণের লক্ষ্মণ দেখা গেছে, আমরা চোখ বুজে সেই 'ছোটলোক লেবার'টাকেই গালাগালি করবো আর চায়ের কাপে তুফান তুলে সিদ্ধান্ত নেবো যে এদের জন্যেই ভারতে ভাল কিছু হবেনা।

https://indianexpress.com/article/india/railways-trains-begin-irctc-rajdhani-booking-india-lockdown-coronavirus-6404346/

Monday, May 11, 2020

জনসংখ্যা

যারা বলেন যে জনসংখ্যা গণতন্ত্রের নিয়ন্ত্রক, আমি তাদের সাথে সহমত নই। ভারতে হিন্দুদের জনসংখ্যা এখনও ৮০ শতাংশের কাছাকাছি আর মুসলিমদের জনসংখ্যা সেখানে ১৫ শতাংশ মত। অথচ তারপরেও, OBC-A কোটা হোক বা জমজমের পানি আনার নিয়ম, দেশের অধিকাংশ নীতি নির্ধারিত হয় ভাইজানদের স্বার্থের কথা মাথায় রেখে। তাহলে জনসংখ্যা কিভাবে নিয়ন্ত্রক হলো?

গোটা পৃথিবীর সাপেক্ষে, ইহুদীদের জনসংখ্যা কত? অথচ দেখুন তাবড়-তাবড় দেশগুলির উপর তারা ছড়ি ঘুরিয়েই যাচ্ছে। উল্টোদিকে, ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতবর্ষের অবস্থানটা লক্ষ্য করুন। আসলে গণতন্ত্র বলুন আর অন্য যেকোন তন্ত্র, তাদের প্রকৃত নিয়ন্ত্রক হলো অর্থ যেটার নিয়ন্ত্রণ রয়েছে বণিক শ্রেণীর হাতে। এই কারণেই ইহুদী হোক বা মারোয়ারী, প্রভাব বিস্তারের জন্যে তাদের সংখ্যার দরকার হয়না।

যারা ভাবছেন যে হিন্দুরাও মুসলমানদের মত গণ্ডাগণ্ডা বাচ্চা পয়দা করলেই 'ভারত আবার জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে', তারা মূর্খের স্বর্গে বসবাস করছেন। হ্যাঁ, হিন্দুদের জনসংখ্যা ৮০% থেকে কমে ৫০% শতাংশ হলে তাদের গলার স্বর আরও কমবে ঠিকই কিন্তু সেটা ৮৫% হলেও তাদের স্ট্যাটাসে আহামরি কোন পরিবর্তন ঘটবেনা। নিজেদের অধিকার অর্জন করার ক্ষমতা রাখার মেকানিজম তৈরী না হলে, শুধু জনসংখ্যা দিয়ে লাভের লাভ কিছুই হবেনা, বরং দেশের আরও বিপদ বাড়বে।

Sunday, May 10, 2020

লকডাউন

যথেষ্ট হয়েছে লকডাউন, যথেষ্ট হয়েছে আতঙ্ক নিয়ে বাঁচা, এটাকে বেঁচে থাকা বলেনা। দেশ জুড়ে খুলে দেয়া হচ্ছে মদের দোকান, সেখানে নিয়মকানুন শিকেয় তুলে ভীড় জমাচ্ছে লক্ষ লক্ষ লোক, অথচ দেশে নাকি লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে বিদেশ থেকে, বিনা পরীক্ষাতে, নিয়ে আসা হচ্ছে বহু মানুষ, যাদের আগমনের সাথে সাথেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সরকার মরকজ নিয়ে নীরব, মরকজের প্রধান, মৌলানা সাদকে আজও গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ব্র‍্যান্ডেড হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের প্রধান বলছেন কয়েকজনের জন্যে কোন সম্প্রদায়কে দায়ী করা যায়না অথচ দলদাসরা 'সিঙ্গল সোর্স' নিয়ে সোশাল মিডিয়াতে ট্রেন্ড করছে।

লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, ইত্যাদি গালভরা কথার পরেও করোনার প্রকোপ বেড়েই চলেছে। আক্রান্তের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বিমানচালক, বিমানসেবিকা, সৈন্যবাহিনীতে কর্মরত ব্যক্তিরা। ভিন রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকদের ঘরে ফেরার ব্যবস্থা না করেই যেমন হঠাৎ করে চালু করা হয়েছিল লকডাউন, তেমনি হঠাৎই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে এবার তাদের ফেরাতে হবে। কর্তার ইচ্ছায় কর্ম, তাই ফেরানোর পদ্ধতি সুনির্দিষ্ট করার আগেই সেটা নিয়ে ঘোষণা হয়ে গেছে যাতে রাজনৈতিক ফয়দা তোলা যায়। আর এই 'তু তু ম্যায় ম্যায়' এর চক্করে বেচারা শ্রমিকদের অবস্থা এখন করুণ। পায়ে হেঁটে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিতেও তারা আর ভীত নয়। প্রশাসনের উপর কতটা ভরসা থাকলে কেউ এতটা ঝুঁকি নিতে পারে সেটা ভাবুন।

তাই এই লোকদেখানো লকডাউন চালিয়ে আর কোন লাভ নেই। প্রত্যেকটা সরকারই আস্তে আস্তে সব ক্ষেত্রই চালু করে দেবে কিন্তু লকডাউন তোলার কথা সরাসরি ঘোষণা করবেনা যাতে পরবর্তী পরিস্থিতির দায় সরাসরি তাদের উপর না পড়ে। কিন্তু এরই মধ্যে লাভের গুড় তারা খেতেই থাকবে, সেটা মদের উপর বাড়তি রাজস্ব বসিয়েই হোক বা পেট্রোল ও ডিজেলের উপর বাড়তি এক্সাইজ ডিউটি, প্রতিমাসে সরকারি কর্মীদের একদিনের বেতন প্রধানমন্ত্রীর ফান্ডে নিয়েই হোক বা রেশনে আসা অতিরিক্ত সামগ্রীর পার্টি অফিসের মাধ্যমে ব্যবসা - এরপরেও বলবেন যে দুর্যোগের কোন ভাল দিক নেই?