Friday, June 19, 2020

পশ্চিমবঙ্গের ভবিষ্যৎ

"যাদৃশো জায়তে রাজা, তাদৃশো'স্য জনো ভবেৎ" অর্থাৎ দেশের রাজা অর্থাৎ প্রধান যেমন হয়ে থাকেন, সেই দেশের প্রজারাও তেমনি হবেন। নেতৃত্বর গুণাবলীর উপরেই অনুগামীদের কর্মদক্ষতা নির্ভর করে। এই কারণেই ভারতের প্রাক্তন সেনাধ্যক্ষ, জেনারেল ভি.কে. সিং বলেছিলেন যে "সিংহের নেতৃত্বাধীন একপাল হরিণ, হরিণের নেতৃত্বাধীন একদল সিংহ অপেক্ষা বেশী ভয়ঙ্কর"।

হিন্দুরা বরাবরই সাহসী জাতি কিন্তু তাদের দুর্ভাগ্য যে তারা নেতৃত্ব হিসাবে পেয়েছে গান্ধী-নেহরুর মত ভীতু ও চরিত্রহীনদের। উল্টোদিকে, মুসলিমরা বরাবরই ভীরুর জাত হওয়া সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্বে ছিল আলি ভাতৃদ্বয় ও জিন্নার মত ব্যক্তিগণ। ফলে যখন হিন্দুদের মাতৃভূমিকে টুকরো করার পরিকল্পনা করা হলো তখন হিন্দুরা সেটার বিরোধিতা করার সাহস দেখাতে পারলো না, ইসলামিক দাবীর সামনে মাথা ঝুঁকাতে বাধ্য হলো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সবচেয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেয়া দুটি রাজ্য- বাংলা আর পাঞ্জাবকে টুকরো করেই জন্ম নিল পবিত্র ইসলামিক জমি- পাকিস্তান, কারণ দুটি প্রদেশেই মুসলিমরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই একই কারণে স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরেও কাশ্মীর থেকে বিতাড়িত হলো হিন্দুরা। একটি সার্বভৌম দেশের সরকার মিলিটারি দিয়েও মুসলিমবহুল কাশ্মীরে হিন্দুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলো না। ২৭ বছর পার হয়ে গেলেও আজও কাশ্মীরের হিন্দুরা নিজভূমে পরবাসী।

আজ পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের সামনেও একইরকমভাবে উদ্বাস্তু হওয়ার পরিণতির ইঙ্গিত স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা মুসলিমবহুল হওয়ার সাথে সেখানকার হিন্দুদের অধিকার সঙ্কুচিত হচ্ছে। কাংলাপাহাড়ি, তেহট্ট, নন্দীগ্রাম প্রভৃতি স্থানে হিন্দুদের পূজাপাঠের অধিকার খর্ব হচ্ছে। মালদা, মুর্শিদাবাদের মত মুসলিমবহুল জেলায় হিন্দুদের শঙ্খধ্বনি, মঙ্গলধ্বনি এমনকি শ্মশানযাত্রার উপরেও নানারকম বিধিনিষেধ জারি করা হচ্ছে। হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, নদীয়া, বীরভূম সহ বিভিন্ন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে মাথা চাড়া দিচ্ছে জেহাদি কার্যকলাপ যার শিকার হচ্ছে সাধারণ হিন্দুরা। কিন্তু তারপরের প্রশাসন, মিডিয়া, একেবারে নীরব পাছে "সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি" নষ্ট হয়। নিজেদের জীবন ও সম্পত্তি বিসর্জন দিয়ে সম্প্রীতি রক্ষার দায় শুধু হিন্দুদের।

শুধু প্রশাসন কেন, আগামীদিনে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখা এই রাজ্যের বিরোধী দলগুলিও এই জেহাদি বিপদ সম্পর্কে মৌন। মুসলিম ভোটের লোভ তো আছেই, তারসাথে এদের ভীরু মানসিকতাও তাদের মৌনতার অন্যতম কারন। বিরোধী দলগুলির নেতৃবৃন্দ তাদের সহজাত ভীরু মানসিকতার কারণেই ইসলামিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ করতে ভয় পায়। আর তাদের এই ভীরুতাই প্রবাহিত হয় তাদের অনুগামীদের মধ্যে, ফলে পর্যাপ্ত দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাদেরও ভীরুতা গ্রাস করে।

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের আগে শ্রীকৃষ্ণ যখন শান্তিপ্রস্তাব নিয়ে কৌরবদের সভায় গেছিলেন এবং তাঁর প্রস্তাব যখন দুর্যোধন ফিরিয়ে দিয়েছিল তখন সেই সভায় ভীষ্ম আর দ্রোণাচার্যের মত মহারথী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা যদি একবার বলতেন যে তাঁরা দুর্যোধনের হয়ে এই অন্যায় যুদ্ধে লড়াই করবেননা তাহলে দুর্যোধনকে যুদ্ধের ব্যাপারে আরেকবার ভাবতে হতো। ভীষ্ম বা দ্রোণ যুদ্ধ না করার কথা ঘোষণা করলে কৃপাচার্য, অশ্বত্থামাও সেই পথ অনুসরণ করতেন। কিন্তু অসীম জ্ঞানী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সেরকম ঘোষণা করেননি। তাদের আনুগত্য ধর্মের চেয়েও বেশী সিংহাসনের প্রতি ছিল। তাই কৌরবসভা থেকে ফিরে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন যে, "ন চ ভীষ্ম ন চ দ্রোণো যুক্তং তত্রাহতুর্বচ"। একমাত্র বিদুরই এমন ব্যক্তি ছিলেন যিনি সভাগৃহে শান্তিপ্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। "সর্বে তমনুবর্ভন্তে ঋতে বিদুরমচ্যুত"।

এমতাবস্থায়, পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের সাহসিকতায় উদ্বুদ্ধ করারই প্রত্যেকের প্রাথমিক লক্ষ্য হওয়া উচিত। এমন জ্ঞানীগুণী লোকের আমাদের দরকার নেই যারা জেহাদি আগ্রাসনের সামনে ভীষ্ম আর দ্রোণের মত অসহায় হয়ে থাকবে আর হিন্দুদের সংযম ও সংস্কারের উপদেশ দেবে। যারা ১৯৪৭-এ দেশভাগ রুখতে পারেনি, ১৯৯০-এ কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি তারা আগামীদিনে পশ্চিমবাংলার হিন্দুদের রক্ষা করবে এটা ভাবা মুর্খামি। তাই হিন্দুদের মাটি বাঁচানোর লড়াই হিন্দুদেরই দলমত নির্বিশেষে, একজোট হয়ে করতে হবে। এই খন্ডিত বাংলাকে যদি প্রকৃতই ধর্মনিরপেক্ষ রাখতে হয়, তাহলে সংঘর্ষ থেকে পিছু হটলে চলবেনা। প্রত্যেকের মধ্যে দৃঢ়তা আনতে হবে যে আমরা কখনই বাংলার সংস্কৃতিকে, বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির সামনে বিকিয়ে দেবনা।

জয় মা কালী।

No comments:

Post a Comment