Wednesday, September 27, 2023

হিজাব সংস্কৃতি

শরীর এবং সমাজ - উভয়েরই একটা নিজস্ব গঠনতত্ত্ব থাকে, সেখানে কোন ফরেন এলিমেন্ট খুব সহজে গ্রহণযোগ্য হয়না। এই কারণেই হাজারটা ফ্যাক্টর মিলিয়ে কারুর লিভার বা হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট হলেও অনেকক্ষেত্রেই গ্রহীতার শরীর সেটা মানিয়ে নিতে পারেনা। রোগীর মৃত্যুও হয়।


একইভাবে, সমাজ, জাতি সবারই একটা গঠনতন্ত্র আছে। বিদেশী সংস্কৃতি বা প্রথা সেখানে খুব সহজে প্রবেশাধিকার পায়না। এরকমই একটা বিদেশী সংস্কৃতি হলো হিজাব। মেয়েদের পর্দানশীন রাখা ভারতের সংস্কৃতি নয়। হিন্দুসমাজে পর্দাপ্রথার প্রচলন হয় মুসলিম আক্রমনের পরে। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে ভারতের যেসব অঞ্চলগুলি দীর্ঘদিন মুসলিমদের অধীনে ছিল, সেখানেই এই পর্দাপ্রথার প্রচলন ঘটেছে। উত্তর ও পূর্বভারতেই তা প্রধানতঃ সীমাবদ্ধ। স্থানভেদে তার রুপ আলাদা – পাঞ্জাবে দোপাট্টা তো বাংলায় ঘোমটা। 


“এ দেশে মেয়েদের পর্দা নেই, কোনদিনও ছিলনা। উত্তর ভারতের এই ম্লেচ্ছ বর্বরতা মারাঠা দেশ কখনও স্বীকার করে নেয়নি।“ – না, এই কথাগুলি বালাসাহেব ঠাকরে বা কোন তথাকথিত উগ্রহিন্দুনেতার নয়। এ দাবী বাঙলা সাহিত্যের অন্যতম প্রাণপুরুষ শরদিন্দু বন্দোপাধ্যায়ের। তিনি তাঁর মধুমালতী কাহিনীতে বামন রাওকে দিয়ে এই সত্য প্রকাশ করেছেন। এতে যদি কেউ শরদিন্দুবাবুকে উগ্রবাদী ভাবতে চান তো ভাবতেই পারেন, কিন্তু এতে সত্য বদলাবেনা।


ইসলামে নারীর অবস্থান শুধু ভোগ্যপন্য হিসাবে। নারীদের স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতার কোন স্থান সেখানে নেই। তাই নিজের ভোগের জিনিসকে অন্যের থেকে লুকিয়ে রাখার জন্যেই বোরখা ও হিজাবের প্রচলন। তার সৌন্দর্য্য যাতে অন্য কারুর দৃষ্টি আকর্ষন না করে তাই তাকে পর্দানশীন করার চেষ্টা। আর সম্প্রতি কর্ণাটক সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হিজাব বিতর্কের সময় এই সাংস্কৃতিক বিভাজন'টা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। খোদ এই রাজ্যে বহু তথাকথিত 'সেকুলার'ও হিজাব মেনে নিতে পারেনি আর তাই হিজাব আজও ফরেন এলিমেন্ট।


এই 'ফরেন এলিমেন্ট' তকমা ঘুচিয়ে, হিজাব'কে বাঙালীর পরিচিত ও 'ঘরের জিনিস' করে তোলার লক্ষ্যেই নতুন ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে যার প্রমাণ নীচের ছবিতে স্পষ্ট। দোকানে, বাড়িতে বাঙালী যখন নিয়মিত এই শব্দটা দেখবে, সেই শাড়ি কিনবে, পরবে, তখন সেটা নিয়ে তার মানসিক জড়তা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। ঠিক যেভাবে সত্যনারায়ণ'কে সত্যপীর বানিয়ে তার ব্রতকথার শেষে "আমীন" ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে বা বনদেবী'কে বনবিবি বানিয়ে দেয়া হয়েছে।


এগুলো হলো সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। আপনার অজ্ঞাতেই আপনার মননশক্তি'কে প্রভাবিত করার প্রয়াস। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বিক্রিত (বিকৃতও বটে) পত্রিকাগোষ্ঠীর পোষ্য সাহিত্যিকরা দীর্ঘদিন ধরেই 'এ বাড়ির সিন্নির সাথে ও বাড়ির ফিরনি'কে মিলিয়ে এসেছেন কিন্তু এতকিছুর পরেও এপারে কালিয়াচক, ধুলাগড়, তেলেনিপাড়া, বাদুড়িয়া এবং ওপারে ব্রাহ্মণবেড়িয়া, নাসিরনগর ইত্যাদি বন্ধ হয়নি। কারণ শরীর হোক সমাজ, ফর্মুলাটা এক - গ্রহীতার মানিয়ে না নিয়ে মৃত্যু অবধারিত।

Thursday, September 21, 2023

মহিলা সংরক্ষণ আইন - উৎসাহ না অপমান?

🔴 ভারতের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ছিলেন বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী। 


🟡 ভারতে দু'জন মহিলা, প্রতিভা দেবীসিং পাটিল ও দ্রৌপদী মূর্মু দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন।


🟢 ভারতের ২৪ জন মহিলা বিভিন্ন রাজ্য/কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের রাজ্যপাল/লেঃ গভর্নর পদে আসীন ছিলেন অথবা আছেন।


🔵 ভারতে ১৬ জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হয়েছেন -

১.    সুচেতা কৃপালনী (উঃ প্রঃ)

২.    শশিকলা কাকোদকর (গোয়া)

৩.    আনয়ারা তৈমুর (আসাম)

৪.    নন্দিনী সতপথী (ওড়িশা)

৫.    মেহবুবা মুফতি (জঃ ও কাঃ)

৬.    শীলা দীক্ষিত (দিল্লি) 

৭.    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (পঃ বঃ)

৮.    মায়াবতী (উঃ প্রঃ)

৯.    রাজিন্দর কৌর ভাট্টাল (পাঞ্জাব)

১০.  জানকী রামচন্দ্রন (তাঃ নাঃ)

১১.  সুষমা স্বরাজ (দিল্লি)

১২.  রাবরী দেবী (বিহার)

১৩.  বসুন্ধরা রাজে (রাজস্থান)

১৪.  জয়ললিতা (তাঃ নাঃ)

১৫.  উমা ভারতী (মঃ প্রঃ)

১৬.  অনাদিবেন প্যাটেল (গুজরাট)


🟠 ভারতে ১০০ জনেরও বেশী মহিলা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী, বিধায়ক ও বিধান পরিষদে আসীন আছেন বা ছিলেন।


প্রায় এক দশক ক্ষমতাসীন থাকার পর হঠাৎ একদিন মনে হলো যে রাজনীতিতে মহিলাদের সাথে বৈষম্য করা হচ্ছে আর পেশ করা হলো 'নারীশক্তি বন্দন অধিনিয়ম' বা মহিলা সংরক্ষণ আইন। শুধু পেশ হওয়া নয়, নতুন আইন প্রনয়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রথা ভেঙে, সেই বিল সিলেক্ট কমিটিতে না গিয়ে পাশও হয়ে গেল আর সেটাও কোন সংশোধনী ছাড়াই কারণ কোনও দলই লাভের গুড় ছাড়তে বা বিরাট সংখ্যক মহিলা ভোটারদের কাছে অপ্রিয় হতে রাজী নয়।


সংবিধানের এত বড় একটা সংশোধন হয়ে গেল কিসের ভিত্তিতে? এই সংশোধনী পেশ করার আগে সরকার কি রাজনীতিতে মহিলাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নিয়ে কোন সার্ভে করিয়েছিল? ভারত ছাড়া পৃথিবীর আর কোন দেশে কি রাজনীতিতে মহিলাদের এত ব্যপক অংশগ্রহণ দেখা যায়? দু'টি প্রশ্নেরই উত্তর হলো - "না"। আধুনিক গণতন্ত্রের পীঠস্থান বলে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত কোন মহিলাকে নিজেদের রাষ্ট্রপ্রধান বলে নির্বাচন করতে পারেনি কিন্তু ভারত সেটা হেলায় একাধিকবার করেছে আর তার একমাত্র কারণ হলো ভারত হিন্দুবহুল দেশ।


হ্যাঁ, কেবলমাত্র হিন্দুবহুল দেশ বলেই রাজনীতিতে মহিলাদের এই অংশগ্রহণ দেশবাসী খোলা মনে মেনে নিয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের থেকে বহুগুণ বেশী মহিলারা রাজনীতিতে সক্রিয় ও প্রশংসনীয় ভূমিকা নিয়েছেন। কারণ হিন্দুদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কার মানুষের লিঙ্গের ভিত্তিতে বিচার করতে শেখায়না। কিন্তু দেশবাসীর এত সদর্থক মানসিকতার পরেও, প্রায় এক দশক শাসন করার পর, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে নরেন্দ্র মোদী সরকার যখন "রাজনীতিতে মহিলাদের সাথে বৈষম্য"র অজুহাত দিয়ে আইনে বদল করেন তখন সেটাকে হিন্দুদের উদার মানসিকতার প্রতি অপমান ছাড়া আর কিছুই মনে হয়না।