Thursday, October 14, 2021

কুমিল্লার ঘটনা

কুমিল্লা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে কাঁদুনি গাইতে পারেন, অ্যাংরি রিঅ্যাক্ট করতে পারেন, বুদ্ধিজীবীদের একদেশদর্শীতার জন্যে গালাগাল দিতে পারেন, লম্বা লম্বা থিওরি নামাতে পারেন বা এই সুযোগে নিজের দলের প্রচারটাও সেরে নিতে পারেন কিন্তু এর কোনটাতেই আরেকটা কুমিল্লা হওয়া বন্ধ হবেনা। 


ব্রাহ্মণবেড়িয়া, নাসিরনগর, কুমিল্লা ইত্যাদি হতেই থাকবে কারণ গত কয়েকশো বছর ধরে, খুব সুপরিকল্পিতভাবে, হিন্দুদের নিবীর্যকরণের পরিকল্পনা চলছে, শক্তিহীন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে আর দুর্বল কেবলমাত্র বিলাপই করতে পারে, প্রতিশোধ নিতে পারেনা। তাই বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, মূলত হিন্দুদের, উপর ক্রমাগত অত্যাচার হওয়া সত্ত্বেও কোন সংখ্যালঘু সংগঠন মানববোমার কথা ভাবেনা, ঈদের জমায়েতে বাস চালিয়ে দেয়ার কথা ভাবেনা। তারা খালি প্রত্যাশায় থাকে যে ভারত তাদের বাঁচাবে, আমেরিকা তাদের বাঁচাবে। তাদের অবচেতন মনে 'মিলেমিশে থাকার' মানসিকতার শিকড় এখনও এমন গভীরভাবে ঢুকে গেছে যে প্রিয়া সাহা'র মত কেউ হিন্দুদের উপর হওয়া নিয়মিত অত্যাচার নিয়ে সোচ্চার হলে, তার বিরুদ্ধেই ফতোয়া জারি করে।


বাংলাদেশের বহু হিন্দুই পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের এলাকায় জমি কিনে রেখেছে যাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে পালিয়ে আসতে পারে কিন্তু মজার কথা হলো যে পালিয়ে আসার পরেও, তারা কখনই স্বীকার করবেনা যে তারা তাদের ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে হওয়া অত্যাচারের প্রেক্ষিতে পালিয়ে এসেছে। কেউ অজুহাত দেবে মা'য়ের চিকিৎসার, কেউ ছেলের উচ্চশিক্ষার বা কেউ মেয়ের বিয়ের। বরং নিজেদের সেকুলার প্রমাণ করার জন্যে, মোদী কেন CAB বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে, প্রতিবেশী দেশ থেকে আগত লোকেদের ধর্মীয় পরিচয়কে নাগরিকত্ব দেয়ার মাপকাঠি বানিয়েছেন, সেটা নিয়ে লেকচার দেবে।


বাংলাদেশের হিন্দুরা যতদিন পর্যন্ত না তাদের এই দ্বিচারিতা থেকে মুক্তি পাবে ততদিন তারা অত্যাচারের শিকার হতেই থাকবে। কিল খেয়ে কিল হজম করা ব্যক্তিদের কেউ রক্ষা করতে পারেনা। লাখখানেক রোহিঙ্গা যদি গোটা পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে তাহলে বাংলাদেশের এক কোটি হিন্দু সেটা পারবেনা, এই কথা আমি বিশ্বাস করিনা। কিন্তু অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে তাদের নিজেদের ঠকানোর প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশের এক কোটি হিন্দু যদি, একযোগে, তাদের উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে সোচ্চার হয় এবং ভারতে আশ্রয় চায় তাহলে গ্যারান্টি দিতে পারি যে ভারত সহ গোটা পৃথিবী তাদের পাশে দাঁড়াবে। এবার সিদ্ধান্ত তাদের যে তারা সোশ্যাল মিডিয়ার আন্দোলনেই খুশী, কালো রঙের ডিপিতেই খুশী নাকি চিরস্থায়ী সমাধান চান।

No comments:

Post a Comment