Wednesday, October 20, 2021

মোদী ও মমতা

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর থেকেই কংগ্রেসকে দুর্বল করার জন্যে নরেন্দ্র মোদীর অন্যতম অস্ত্র হয়ে উঠেছেন মমতা ব্যানার্জী। এই কারণেই গোয়া বা আসামের কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধরা, আম আদমি পার্টির মত হিন্দি বলয়ের পার্টির বদলে, তৃণমূল কংগ্রেসের মত একটা আঞ্চলিক দলে যোগদান করছে। মমতার হাতে বিপুল সংখ্যক বিধায়ক থাকায়, বিক্ষুব্ধদের প্রলুব্ধ করার জন্যে, রাজ্যসভার আসন তো আছেই। এইভাবে, জাতীয় রাজনীতিতে, রাহুল গান্ধীর বদলে নম্বর দুই হতে চাইছেন মমতা ব্যানার্জী।


২০২৪-এর নির্বাচনে মোদীকে লড়তে হবে বিপুল পরিমাণ প্রতিষ্ঠান (anti-incumbency) বিরোধিতার সাথে সাথে হিন্দুত্ববাদীদের একটা বড় অংশের বিরুদ্ধে। 'সবকা বিশ্বাস' অর্জন করতে গিয়ে 'হিন্দু হৃদয় সম্রাটে'র আসন এখন টলোমলো। এরসাথে যুক্ত হয়েছে দলের প্রমুখদের সীমাহীন ঔদ্ধত্য আর বানিয়া নীতি। এমতাবস্থায় কংগ্রেস যদি, নিজেদের বর্তমান ৪৫ সাংসদ সংখ্যাকে একশো'র উপরে নিয়ে যায় তাহলে বাড়তি আসনগুলি সরাসরি প্রভাবিত করবে বিজেপিকে আর সেক্ষেত্রে বিজেপি সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাতে বাধ্য। এই কারণেই মোদী কংগ্রেসের আসন কমাতে বদ্ধপরিকর আর সেক্ষেত্রে তার সেরা বাজী অবশ্যই মমতা।


এটা মমতা'র জন্যে সম্পূর্ণ win-win পরিবেশ। তিনি নিজে চরম উচ্চাকাঙ্খী হলেও এটা বোঝেন যে জাতীয় স্তরে মোদীর বিকল্প হওয়ার মত যোগ্যতা তার এখনও নেই। তাই আপাতত তিনি ২ নম্বর আসন পেলেই খুশী থাকবেন আর চোখ রাখবেন ১৯৯৬ এর মত পরিস্থিতি তৈরী হয় কিনা যেখানে ডামাডোলের বাজারে, দেবেগৌড়া বা গুজরালের মত, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সুযোগ পেয়ে যান। কে বলতে পারে যে তুমুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও বাজপেয়ী সরকার যেভাবে সোনিয়ার কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হয়েছিল, শাইনিং ইন্ডিয়া বা ফিল গুড-এর মৌতাতে থেকে 'বিকাশ পুরুষ' বা 'লৌহ পুরুষে'র যে পরিণতি হয়েছিল, ২০২৪ এ সেটার পুনরাবৃত্তি হবেনা? এটা মাথায় রেখেই মোদী এখন মমতা'কে জাতীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় রেখে যাবেন আর মমতাও সুযোগের সদ্ব্যবহার করে যাবেন। হ্যাঁ, এতে বঙ্গ বিজেপি রসাতলে যাবে ঠিকই তবে আরিয়ান খানের আব্বার কি একটা ডায়লগ আছে না, "কুছ পানে কে লিয়ে কুছ খোনা পড়তা হ্যায়" আর বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব ও কার্যকলাপ দেখার পরে, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে তাদের বলি দিতে মোদীর কোন কুন্ঠা হবেনা।

No comments:

Post a Comment