Thursday, February 24, 2022

যুদ্ধের পরিণতি

কম্যুনিস্টদের চিরকালীন স্লোগান "লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই" আর যুদ্ধ শুরু হলেই সেই স্লোগান বদলে "যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই" এর ভনিতা মাথায় রেখেই বলছি যে আমি যুদ্ধের পক্ষপাতী নই। শুধু আমি কেন, আমার মনে হয় যুদ্ধের প্রতি আকর্ষণ কেবল তাদেরই রয়েছে যাদের পরিবারের কেউ কখনই যুদ্ধক্ষেত্রে যায়নি। সৈনিক যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত থাকে কিন্তু সে কখনও যুদ্ধ চায়না। দুর্ভাগ্যবশত, যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতাটা সৈনিকের হাতে থাকেনা।


যুদ্ধ একেবারে অন্তিম পথ আর সেই পথ বেছে নেয়ার আগে, যাবতীয় বিকল্প পর্যালোচনা করে দেখা দরকার। এই কারণেই, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে ওঠার সময়েও স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ, শান্তিদূত হয়ে, কৌরব রাজসভায় গিয়েছিলেন এবং পান্ডবদের প্রতি হওয়া যাবতীয় বঞ্চনার প্রতিদান হিসাবে মাত্র পাঁচটা গ্রাম প্রার্থনা করেছিলেন। কংস ও শিশুপালকে বধ করা শ্রীকৃষ্ণের এহেন সিদ্ধান্তে অখুশি হয়ে, দ্রৌপদী তাঁকে নিজের খোলাচুল দেখিয়ে, দুঃশাসনের রক্ত দিয়ে সেই চুল বাঁধার প্রতিজ্ঞা মনে করালে শ্রীকৃষ্ণ তাকেও তিরস্কার করে বলেন যে যুদ্ধ হলে যত সৈন্য নিহত হবেন, তাদের প্রাণের থেকে দ্রৌপদীর চুলের মূল্য বেশী নয়।


ভাবুন তো, অপারেশন পরাক্রমের সময়, "ইস বার আড়-পার কি লড়াই হোগি" বলে সৈন্যদের সীমান্তে নিয়ে গিয়ে, একটাও গুলি ছোঁড়ার আদেশ না দিয়ে, যখন ফিরিয়ে আনা হলো তখন দেখা গেল যে সেই কাজে, অপারেশন বিজয়, মানে কার্গিল বিজয়ের অভিযান থেকেও বেশী সৈন্য মারা গেছেন। সৌরভ কালিয়া, হেমরাজ, সন্তোষ বাবু, রাজেশ ওরাং, গঙ্গাধর দোলুই বা বিশ্বজিত ঘোড়াইয়ের মত অসংখ্য সৈনিক যারা দেশের হয়ে যুদ্ধে প্রাণ বলিদান দিয়েছেন তাদের কতজনের কথা আমাদের মনে আছে? ১৫ই আগস্ট আর ২৬শে জানুয়ারির দেশভক্তি বাকি ৩৬৩ দিন হারিয়ে যায়।


আর এটা দোষের নয়, বরং এটাই স্বাভাবিক। ঠিক ততটাই স্বাভাবিক শহীদদের পরিবারের তাদের সদস্যর অনুপস্থিতি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা। কেউ হারায় সন্তান, কেউ স্বামী আর কেউ তার বাবাকে। হ্যাঁ, এদের অনেকেই রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সামরিক সম্মান পান কিন্তু সেটা কখনই তাদের উপস্থিতির বিকল্প নয়। অশোকচক্র খোদিত সার্টিফিকেট মানে সেটা রাজনৈতিক শাসনের স্বীকৃতি কিন্তু সমাজ কতদিন তাদের বলিদানকে মনে রাখে? কাশ্মীর হোক বা নকশাল অধ্যুষিত এলাকা - প্রায়শই শহীদ হন আমাদের জওয়ান, কতজন জানি তাদের কথা?


তাই যুদ্ধ হওয়া উচিত অন্তিম বিকল্প আর সেই যুদ্ধ এমন হওয়া উচিত যাতে সেই যুদ্ধের পরবর্তীতে বাকি সব যুদ্ধের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়। যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা খেলে, সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে, কর্পোরেট দুনিয়ার খবরদারি কাম্য নয়। রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধের আবহে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যে বার্তালাপের উদ্যোগ নিয়েছেন আশা করি সেটা কার্যকর হবে এবং যুদ্ধের ছায়া কেটে যাবে। আমাদের ভুলে গেলে চলবেনা যে বর্তমানে যুযুধান পক্ষের কাছে যেসব মারণাস্ত্র আছে সেগুলি ব্যবহৃত হলে পরবর্তী যুদ্ধ কিন্তু আবার সেই তীর-ধনুক দিয়ে লড়তে হবে।

Tuesday, February 22, 2022

সম্মানের মূল্য

ল্যান্সনায়ক হেমরাজ, যার কাটা মুন্ডু নিয়ে ফুটবল খেলেছিল পাকিস্তান সেনা আর ২০১৪ সালে, নিজের নির্বাচনী প্রচারে, সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে, ভোট চেয়েছিলেন মোদী কিন্তু ক্ষমতায় আসার প্রায় আট বছর হতে চললেও সেই হেমরাজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি মোদী। বরং বিনা নিমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী, নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে। শুধু হেমরাজ কেন, পাঠানকোট, উড়ি বা পুলবামা'র কোন শহীদের পরিবারের সাথেই দেখা করেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোন সদস্য অথচ ৪৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ঔরঙ্গজেব জঙ্গীদের আক্রমণে শহীদ হওয়া মাত্রই তার বাড়িতে পৌছে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, নির্মলা সীতারমণ সহ তদানীন্তন সেনাপ্রধান, বিপিন রাওয়াত। তফাৎটা স্পষ্ট।


একইভাবে, ২০০৭ সালে রিজওয়ানুর হত্যার পরে, সেটা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী, মমতা ব্যানার্জী। পুলিশি অত্যাচার ও ভুয়ো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় করেছিলেন রাজ্য রাজনীতি অথচ খোদ তারই শাসনে, বাদুড়িয়ার নিতাই দাস, ভিন্ন ধর্মে প্রেম করার জন্যে, তাকে হত্যা করে, ব্লেড দিয়ে গায়ের চামড়া ছাড়িয়ে নিলেও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলে দেয় যে "আঘাতের কোন চিহ্ন নেই"। আবার সুদূর রাজস্থানে, আফ্রাজুল নিহত হলে, সেই মমতা'ই কেঁদে ওঠেন। একইভাবে, দাড়িভিটে, পুলিশের গুলিতে, রাজেশ আর তাপসের হত্যা নিয়ে টুঁশব্দ না করা মমতা ব্যানার্জীই এখন আনিশ খানের মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৎপর হয়ে উঠেছেন।


দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রবি, রুদ্রেশ, অঙ্কিত সক্সেনা বা কমলেশ তিওয়ারি'র মত জাতীয়তাবাদের হত্যা করা হলে বা পালঘাটে সাধুদের হত্যা নিয়ে এমনকি ভুয়ো NRC প্রক্রিয়ার পরিণতিতে, আসামে ডজনখানেক হিন্দুর আত্মহত্যা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী একটা কথাও বলেননা কিন্তু এক হতাশাগ্রস্ত বামপন্থী ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করলে সেটাতে তিনি ভারতমাতা কে সন্তানহারা হতে দেখেন।


এতগুলো কথা বলার কারণ একটাই, হিন্দুরা যাতে নিজেদের ভোটের মূল্য বুঝতে পারে। মুসলমান বা কম্যুনিষ্টদের ক্ষেত্রে একটা 'কৌম' ফ্যাক্টর কাজ করে যেটা হিন্দুদের ক্ষেত্রে ব্যপকভাবে অনুপস্থিত। 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান বা খয়রাতিতেই সন্তুষ্ট সমাজ কখনই নিজেদের প্রাপ্য পেতে পারেনা। অন্যকে দোষারোপ করতে পারে, বঞ্চনা নিয়ে হাহাকার করতে পারে কিন্তু সম্মান পেতে পারেনা।

Sunday, February 20, 2022

আমাদের দায়িত্ব

বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে Exclusion শব্দটার সংস্কৃতে কোন প্রতিশব্দ নেই, কারণ হিন্দুরা Inclusion এ বিশ্বাসী। আর এই কারণেই ৮০০ বছরের মুসলিম শাসন ও ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের পরেও ভারতবর্ষ ইসলাম বা খ্রিস্টানের অধীন হয়ে যায়নি, নিজের স্বরূপ বজায় রেখেছে।


ঠিক একইভাবে Secularism শব্দটারও কোন প্রতিশব্দ সনাতন সংস্কৃতিতে ছিলনা। ধর্মনিরপেক্ষতা নামক অনুবাদ এখানে প্রক্ষিপ্ত। অন্য সম্প্রদায়ের প্রার্থনাপদ্ধতি বা আচার-অনুষ্ঠানে বাধা দেয়ার মানসিকতা সনাতন ধর্মে কোনদিনই ছিলনা, তাই জোর করে ধর্মনিরপেক্ষতা ঢোকানোর দরকার হয়নি। ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ বা চার্চ হিন্দু রাজাদের অনুগ্রহের ফলেই তৈরি হয়। এই সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে ১৯৪৭ সালে, তথাকথিত, স্বাধীনতা লাভের পর যখন দেশের সংবিধানে ভারতের সংস্কৃতিকে সনাতন সংস্কৃতি বলে স্বীকৃতি দেয়ার বদলে মিশ্র অর্থাৎ খিচুড়ি সংস্কৃতি বলে অবিহিত করা হয়।


পৃথিবীর অন্য কোন দেশে আক্রমণকারীর সংস্কৃতিকে সেই দেশের সংস্কৃতি বলে মান্যতা দেয়া হয়নি। কিন্তু নেহরু, কালাম আজাদ, প্যাটেলরা সেই কাজটাই করেছিলেন নিজেদের মৌরুসিপাট্টা কায়েম রাখার স্বার্থে। সাথে পেয়েছিলেন নিজেদের বশংবদ কম্যুনিস্টদের। তাই সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল ২৫ থেকে ৩০ ধারা যেগুলো বিশেষ সুবিধা দিয়েছে কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের। এইভাবে, সম্পূর্ণ সাংবিধানিক বৈধতা পেয়েছিল হিন্দুদের প্রতি বঞ্চনা ও বিদ্বেষ। আর এই কাজে, কফিনে শেষ পেরেকটি মারেন ইন্দিরা গান্ধী যখন তিনি বিরোধী বিহীন সংসদে আইন পাশ করে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণা করে দেন।


এতগুলো কথা বলার কারণ একটাই, হিন্দুদের খ্রীষ্টমাস পালন। রামকৃষ্ণ মিশনে খ্রীষ্টমাস পালনে যারা গেল গেল রব তোলেন তাদের জানা দরকার যে এই পরম্পরা কিন্তু স্বয়ং বিবেকানন্দই শুরু করেছিলেন। আর তার কারণ ছিল হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষায় ভারতের হিন্দুদের নিস্পৃহতা। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর কাজের জন্যে যত অনুদান পেতেন সেটার সিংহভাগই আসতো বিদেশী ভক্তদের থেকে। সেই ভক্তরা খ্রিস্টান হলেও বিবেকানন্দের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষার জন্যে মুক্ত হস্তে দান করতেন। তাই তাদের খুশী করার জন্যে এবং সনাতন সংস্কৃতির Inclusive চরিত্র মেনে মিশনে খ্রীষ্টমাস পালন করতে বিবেকানন্দ কোন অন্যায় দেখেননি। 


আজও যারা মিশনে খ্রীষ্টমাস পালন নিয়ে বা ইস্কনে ইফতারের আয়োজন নিয়ে ফেসবুকে সোচ্চার হন তারা নিজেরা হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষায় ঠিক কত টাকা খরচ করেন? আবার বলছি, ধর্ম ও সমাজ রক্ষা, কোন রাজনৈতিক দলের ফান্ডে বা নিজের পরিবারের কল্যাণ কামনায় মন্দিরে পুজো দেয়ার কথা বলছিনা। উদাহরণ স্বরূপ, একজন হিন্দু নিজের ধর্মরক্ষার কাজে জেলে গেলে তার আইনি খরচের দায়িত্ব বা তার পরিবারের ভরনপোষণের দায়িত্ব, একজন বিধর্মী তার স্বধর্মে ফিরে আসলে তাকে কিছুদিন আশ্রয় দেয়ার দায়িত্ব, ইত্যাদি। মাসে ২০০-২৫০ টাকার ডাটা প্ল্যান মোবাইলে অ্যাক্টিভেট করে, ফেসবুকে জ্ঞান দেয়া ছাড়া তাদের অবদান কতটা? ডিজিটাল হিন্দু দিয়ে হিন্দু সমাজ বাঁচবেনা, দরকার ফিজিক্যাল হিন্দু আর যতদিন না সেই কাজ পূর্ণমাত্রায় শুরু হবে ততদিন অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার কোন অধিকার আমাদের নেই।

Monday, February 14, 2022

ভারতীয় না ভারতের?

আগেও বলেছি আর আবারও বলছি যে ভারতে বসবাসকারী হিন্দু আর মুসলমানদের মধ্যে মিলনের ক্ষেত্রে একমাত্র বাধা হল অসভ্য আরবী সংস্কৃতি ও মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ যা তাদেরকে বসবাসকারী দেশ ও সেখানকার সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বদলে সেটাকে অপমানিত করার ও ধ্বংস করার শিক্ষা দেয়।


ভারতের মুসলমানরা যদি এদেশে আগত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের মত ভারতের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তাহলে তাদের পৃথক ধর্মাচরণ কখনই তাদের সাথে হিন্দুদের বৈরীতার সম্পর্ক তৈরি করবেনা। সনাতন ধর্মের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী, গৌতম বুদ্ধকে যদি হিন্দুরা বিষ্ণুর দশাবতারের একজন হিসাবে মেনে নিতে পারে তাহলে আমি, প্রসূন মৈত্র, গ্যারান্টি দিচ্ছি হিন্দুদের তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর সাথে মহম্মদকেও জুড়ে নিতে হিন্দুদের বিন্দুমাত্র আপত্তি থাকবেনা।


কিন্তু সেক্ষেত্রে একমাত্র শর্ত হলো এদেশের সনাতন ধর্ম ও সংস্কৃতির সাথে মানিয়ে চলা। ব্যাপারটা এমন কিছু কঠিনও নয় কারণ বিশ্বের বৃহত্তম মুসলমান জনসংখ্যার দেশ, ইন্দোনেশিয়াতে আজও সনাতন সংস্কৃতিকে উপযুক্ত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। তাদের উপাসনা পদ্ধতির ভিন্নতা কখনোই সংস্কৃতির পথে বাধা হয়ে যায়নি। ভারতে এই প্রথার একমাত্র বাধা হলো আরবি সাম্রাজ্যবাদ। অর্থের জোরে তারা ভারতে বসবাসকারী মুসলমানদের, ভারতীয় মুসলমানের বদলে ভারতের মুসলমান বানিয়ে রেখেছে।


ব্যাপারটা যদি একটু গোলমেলে লাগে তাহলে বোঝার জন্যে RSS-এর উদ্যোগে গড়ে ওঠা রাষ্ট্রীয় মুসলিম মঞ্চ আর মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের উদাহরণ দেখুন। যতক্ষণ প্রাথমিক শব্দ রাষ্ট্রীয় ছিল ততক্ষণ এই সংগঠনের উদ্যোক্তারা বসে বসে মাছি মেরেছেন আর নাম বদলে মুসলিম-এ প্রাথমিকতা দেয়ার পরেই সংগঠনের ব্যপ্তি ঘটেছে। এটা আলাদা প্রশ্ন যে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নামের মধ্যে হিন্দু শব্দ না থাকা সত্ত্বেও কেন আলাদা মুসলিম মঞ্চ তৈরী করতে হলো আর তৈরী করে কি বার্তা দেয়া হলো। একই যুক্তি কম্যুনিস্টদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য যারা চিরকাল ভারতের of India) কম্যুনিস্ট পার্টি রয়ে গেল, কখনোই ভারতীয় (Indian) কম্যুনিস্ট পার্টি হতে পারলো না।

Thursday, February 10, 2022

জেহাদি পরিকল্পনা ও আপনার ভবিষ্যৎ

বিগত পাঁচ বছরে মাত্র ৬১০ জন কাশ্মীরী হিন্দু নিজেদের সম্পত্তি ফেরত পেয়েছেন। কাগজে সম্পত্তি ফেরত পেলেও, এদের মধ্যে কতজন, নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সুনিশ্চিত হয়ে, বাস্তবে সেই সম্পত্তিতে বসবাস করছেন সেই তথ্য প্রকাশিত হয়নি। তবে পাঁচ বছরে ৬১০ জন মানে প্রতি বছর গড়ে ১২০ জন মানে মাসে মাত্র ১০ জন।


ভাবুন, কেন্দ্রে গত সাড়ে সাত বছর ধরে নরেন্দ্র মোদী সরকার, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী, সারা দেশে জাতীয়তাবাদের জোয়ার অথচ তারপরেও দিল্লী নিরাপত্তা দিতে পারেনি কাশ্মীরের বিতাড়িত হিন্দুদের। এখন পরিকল্পনা হচ্ছে যে তাদেরকে ট্রান্সিট ক্যাম্পে রাখার ঠিক যেমন হিটলারের আমলে ইহুদিদের ঘেটো বানিয়ে রাখা হতো। কাশ্মীরের মূল ধারায় তারা কোনদিনই যুক্ত হতে পারবেনা যতদিন না কেন্দ্র সরকার, বাজপেয়ী প্রণীত ইন্সানিয়ৎ, জমহুরিয়াৎ আর কাশ্মীরিয়ৎ, যা আদতে ইসলামিয়তের মায়া থেকে বেরিয়ে, উপত্যকার জনবিন্যাসের ভারসাম্য ঘটাবেন।


দিল্লীর নাকের ডগায় থাকা কাশ্মীরে হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যে ভারত সরকার ব্যর্থ হয়েছে তারা সুদূর পশ্চিমবঙ্গে হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারবে বলে এখনও বিশ্বাস করেন? জনসংখ্যার বিন্যাস বদল হওয়ার সাথে সাথেই পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম এগিয়ে চলেছে কাশ্মীর হওয়ার পথে আর কর্ণাটক, কেরালা রাজ্যগুলি এগিয়ে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ বা আসাম হওয়ার পথে। আজ থেকে দশ-পনেরো বছর আগেও, বারাসাত, বসিরহাট সহ রাজ্যের অন্যান্য সীমান্ত সন্নিহিত অঞ্চলে গিয়ে আপনি ক'জনকে বোরখা, হিজাব, লুঙ্গি বা টুপি পরে রাস্তায় চলতে দেখতেন? আজ সেই যায়গাগুলিতেই আবার গিয়ে দেখুন, বাজী রাখছি, মনে হবে বাংলাদেশে এসে গেছেন। এটাই ইসলামের বিস্তারের স্বাভাবিক নিয়ম। সংখ্যাবৃদ্ধির সাথে সাথেই নিজেদের আলাদা আইডেন্টিটি প্রকাশ হতে থাকে, দাবী বাড়তে থাকে।


কর্ণাটকের বোরখা বিতর্কও একই পরিকল্পনার অঙ্গ। ২০০১ সালের জনগণনাতে দক্ষিণ কর্ণাটকে, যে এলাকার একটি কলেজে ইদানীং বোরখা বিতর্ক শুরু হয়েছে, মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ৪,১৮,৯০৪ জন অর্থাৎ ২২.০৭ শতাংশ আর ২০১১ সালেই সেটা বেড়ে দাঁড়ায় ৫,০১,৮৯৬ জন অর্থাৎ ২৪.০২ শতাংশে। ২০২১ এর গণনা প্রকাশিত হলে দেখবেন সেটা হয়তো ২৬ শতাংশ পেড়িয়ে গেছে আর তাই এলাকায় শুরু হয়ে গিয়েছে বোরখার দাবী ঠিক যেভাবে তেহট্টের বিদ্যালয়ে, নবী দিবস পালনের দাবীতে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল সরস্বতী পূজা। মহরমের জন্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ঝাড়খন্ডে স্থগিত করে দেয়া হয়েছিল দুর্গাপূজার বিসর্জন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে পশ্চিমবঙ্গে বিসর্জন বন্ধ করেছিল দিদি'র সরকার, ঝাড়খন্ডে বন্ধ করেছিল বিজেপি সরকার আর পাটনা'তে একই কাজ করেছিল বিজেপির শরীক, নীতিশ কুমারের সরকার।


এতকিছুর পরেও যদি আপনি আগত দিনের ছবি দেখতে না পারেন এবং রাজনৈতিক দল বা তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনের উপরে ভরসা করেই নিজের ভাগ্য সঁপে দেন তাহলে আপনার চিন্তাশক্তি ও বাস্তববোধের উপর প্রশ্নচিহ্ন উঠতে বাধ্য। আপনার পরিবার ও সম্পত্তি রক্ষার প্রাথমিক দায়িত্ব একান্তই আপনার। ফায়ার ব্রিগেড আছে বলে বাড়িতে যদি অগ্নিনির্বাপণের কোন ব্যবস্থা না রাখেন তাহলে ক্ষতিটা আগুন বা সরকারের নয়, আপনারই হবে আর দায়টা আপনাকেই নিতে হবে।

Tuesday, February 8, 2022

আসন্ন বিপদ

২০০৭ সালে পেশ করা রঙ্গনাথ মিশ্র কমিটির রিপোর্ট অনুসারে, মুসলমান ও খ্রিষ্টানদেরও তপশিলি জাতিভুক্ত হওয়ার সুবিধা দেয়ার কথা বিবেচনা করছেন নরেন্দ্র মোদী সরকার। সংবিধানের ৩৪১ নং ধারায় প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার অনুযায়ী বর্তমানে শুধু হিন্দু, শিখ আর বৌদ্ধরাই তপশিলি জাতিভুক্ত হিসাবে বিবেচিত হয়।


মিশ্র কমিটির রিপোর্টে, তপশিলি জাতি হিসাবে বিবেচিত হওয়ার মাপকাঠি হিসাবে ধর্মীয় পরিচয়কে গ্রাহ্য না করে, সব দলিতদেরই তপশিলভুক্ত করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১২ সালে মমতা ব্যানার্জী সরকারের পাশ করা OBC-A আইন অনুসারে, যে SC রা খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম SC সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদেরকে পিছনের দরজা দিয়ে সংরক্ষণের সুবিধা দেয়ার জন্যে OBC তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই বৈষম্যমূলক আইন বাতিলের দাবীতে আত্মদীপ-এর দায়ের করা জনস্বার্থ মামলাটি এখনও আদালতের বিবেচনাধীন।


নরেন্দ্র মোদী সরকার যদি সত্যিই, মিশ্র কমিটির রিপোর্ট মেনে, মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের তপশিলি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন তাহলে সেটার ফলে প্রকৃত তপশিলি জাতির ব্যক্তিরা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাধ্য। তপশিলি জাতিভুক্তদের অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্যে পাশ করা সংবিধানের ৩৪১(১) ধারাও এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপন্ন হবে। সুনীতা সিং বনাম উত্তর প্রদেশ ও অন্যান্য মামলায় [(2018) 2 SCC 493] সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছেন যে "the caste or community of a person is to be decided on the basis of her/his birth in the said community" মানে কোন ব্যক্তির জাত ও সম্প্রদায় নির্ধারিত হবে সেই সম্প্রদায়ে তার জন্মের ভিত্তিতে।


যদিও তথাকথিত লিবারেল, যারা জাতের প্রসঙ্গ উঠলেই মনুবাদ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদকে গালাগালি করে আর এই প্রথা প্রচলনের জন্যে হিন্দু ধর্মকে ছোট দেখায় এবং জাত-পাত বিহীন উদার ধর্ম হিসাবে ইসলাম বা খ্রিষ্ট ধর্মের তুলনা টানে, তারা অবশ্য কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে কোন অন্যায় দেখবেনা আর হিন্দুত্বের নামে ভোটের একচ্ছত্র অধিকার নিয়ে বসে থাকা বিজেপি সরকারের সিদ্ধান্ত বলে বহু হিন্দুত্ববাদী এই সিদ্ধান্তে কোন অন্যায় দেখবেনা কিন্তু এর ফলে তপশিলি জাতিভুক্ত ব্যক্তিদের অধিকার ও সীমা শুধু খর্ব হবে তাই নয়, এটা বাস্তবায়িত হলে তাদের প্রতিযোগিতা হবে সেই তপশিলি জাতিভুক্তদের সাথে যাদের কাছে সংখ্যালঘু নামক একটা বাড়তি রক্ষাকবচ আছে। ফলে, শিক্ষা হোক কর্মসংস্থান, সব যায়গাতেই থাবা বসাবে নব্য তপশিলিরা আর সঙ্কুচিত হতে থাকবে প্রকৃত তপশিলিদের, যাদের সুরক্ষা ও অগ্রগতির জন্যে এই আইনের সৃষ্টি, স্থান। মমতা হিন্দু OBC দের ভাগ কাটবেন, মোদী SC দের ভাগ কাটবেন আর সাধারণ মানুষ রাজনীতির উপর ভরসা করেই নিজেদের সঁপে দেবেন আর ভাগ্যকে দোষারোপ করবেন।


https://m.economictimes.com/news/india/centre-mulls-panel-to-explore-scheduled-caste-benefits-for-muslim-christian-dalits/articleshow/89104198.cms