Sunday, February 20, 2022

আমাদের দায়িত্ব

বিবেকানন্দ বলেছিলেন যে Exclusion শব্দটার সংস্কৃতে কোন প্রতিশব্দ নেই, কারণ হিন্দুরা Inclusion এ বিশ্বাসী। আর এই কারণেই ৮০০ বছরের মুসলিম শাসন ও ২০০ বছরের ইংরেজ শাসনের পরেও ভারতবর্ষ ইসলাম বা খ্রিস্টানের অধীন হয়ে যায়নি, নিজের স্বরূপ বজায় রেখেছে।


ঠিক একইভাবে Secularism শব্দটারও কোন প্রতিশব্দ সনাতন সংস্কৃতিতে ছিলনা। ধর্মনিরপেক্ষতা নামক অনুবাদ এখানে প্রক্ষিপ্ত। অন্য সম্প্রদায়ের প্রার্থনাপদ্ধতি বা আচার-অনুষ্ঠানে বাধা দেয়ার মানসিকতা সনাতন ধর্মে কোনদিনই ছিলনা, তাই জোর করে ধর্মনিরপেক্ষতা ঢোকানোর দরকার হয়নি। ভারতের প্রাচীনতম মসজিদ বা চার্চ হিন্দু রাজাদের অনুগ্রহের ফলেই তৈরি হয়। এই সংস্কৃতির প্রচলন ঘটেছে ১৯৪৭ সালে, তথাকথিত, স্বাধীনতা লাভের পর যখন দেশের সংবিধানে ভারতের সংস্কৃতিকে সনাতন সংস্কৃতি বলে স্বীকৃতি দেয়ার বদলে মিশ্র অর্থাৎ খিচুড়ি সংস্কৃতি বলে অবিহিত করা হয়।


পৃথিবীর অন্য কোন দেশে আক্রমণকারীর সংস্কৃতিকে সেই দেশের সংস্কৃতি বলে মান্যতা দেয়া হয়নি। কিন্তু নেহরু, কালাম আজাদ, প্যাটেলরা সেই কাজটাই করেছিলেন নিজেদের মৌরুসিপাট্টা কায়েম রাখার স্বার্থে। সাথে পেয়েছিলেন নিজেদের বশংবদ কম্যুনিস্টদের। তাই সংবিধানে যুক্ত হয়েছিল ২৫ থেকে ৩০ ধারা যেগুলো বিশেষ সুবিধা দিয়েছে কেবলমাত্র সংখ্যালঘুদের। এইভাবে, সম্পূর্ণ সাংবিধানিক বৈধতা পেয়েছিল হিন্দুদের প্রতি বঞ্চনা ও বিদ্বেষ। আর এই কাজে, কফিনে শেষ পেরেকটি মারেন ইন্দিরা গান্ধী যখন তিনি বিরোধী বিহীন সংসদে আইন পাশ করে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ ঘোষণা করে দেন।


এতগুলো কথা বলার কারণ একটাই, হিন্দুদের খ্রীষ্টমাস পালন। রামকৃষ্ণ মিশনে খ্রীষ্টমাস পালনে যারা গেল গেল রব তোলেন তাদের জানা দরকার যে এই পরম্পরা কিন্তু স্বয়ং বিবেকানন্দই শুরু করেছিলেন। আর তার কারণ ছিল হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষায় ভারতের হিন্দুদের নিস্পৃহতা। স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর কাজের জন্যে যত অনুদান পেতেন সেটার সিংহভাগই আসতো বিদেশী ভক্তদের থেকে। সেই ভক্তরা খ্রিস্টান হলেও বিবেকানন্দের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষার জন্যে মুক্ত হস্তে দান করতেন। তাই তাদের খুশী করার জন্যে এবং সনাতন সংস্কৃতির Inclusive চরিত্র মেনে মিশনে খ্রীষ্টমাস পালন করতে বিবেকানন্দ কোন অন্যায় দেখেননি। 


আজও যারা মিশনে খ্রীষ্টমাস পালন নিয়ে বা ইস্কনে ইফতারের আয়োজন নিয়ে ফেসবুকে সোচ্চার হন তারা নিজেরা হিন্দু ধর্ম ও সমাজ রক্ষায় ঠিক কত টাকা খরচ করেন? আবার বলছি, ধর্ম ও সমাজ রক্ষা, কোন রাজনৈতিক দলের ফান্ডে বা নিজের পরিবারের কল্যাণ কামনায় মন্দিরে পুজো দেয়ার কথা বলছিনা। উদাহরণ স্বরূপ, একজন হিন্দু নিজের ধর্মরক্ষার কাজে জেলে গেলে তার আইনি খরচের দায়িত্ব বা তার পরিবারের ভরনপোষণের দায়িত্ব, একজন বিধর্মী তার স্বধর্মে ফিরে আসলে তাকে কিছুদিন আশ্রয় দেয়ার দায়িত্ব, ইত্যাদি। মাসে ২০০-২৫০ টাকার ডাটা প্ল্যান মোবাইলে অ্যাক্টিভেট করে, ফেসবুকে জ্ঞান দেয়া ছাড়া তাদের অবদান কতটা? ডিজিটাল হিন্দু দিয়ে হিন্দু সমাজ বাঁচবেনা, দরকার ফিজিক্যাল হিন্দু আর যতদিন না সেই কাজ পূর্ণমাত্রায় শুরু হবে ততদিন অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার কোন অধিকার আমাদের নেই।

No comments:

Post a Comment