Monday, June 21, 2021

আমার চোখে পশ্চিমবঙ্গ দিবস

আচ্ছা, ধরুন আমার বাড়িতে চোর ঢুকে, বেশ কিছু জিনিস নিয়ে পালাচ্ছিল। এমন সময় আমি সজাগ হয়ে গেলাম এবং চোরকে তাড়া করলাম। তাড়া খেয়ে পালাবার সময়, আমার সাথে ধাক্কাধাক্কিতে, চোরের ঝোলা থেকে, আমার বাড়ি থেকেই চুরি করা একটা মোবাইল পড়ে গেল আর আমি, চোরকে ধরতে না পারলেও, একটা মোবাইল ফেরত নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এমতাবস্থায়, আমি কি সেই মোবাইলটা পেয়েছি বলে উল্লসিত হবো নাকি বাকি জিনিস হারানোর জন্যে দুঃখিত হবো এবং সেগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবো?

না, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত হতে পারছিনা কারণ এটাও, আমার কাছে, সেই পড়ে যাওয়া মোবাইলের মতই, আংশিক প্রাপ্তি। আচ্ছা, জেহাদি হাত থেকে ছিনিয়ে আনা নিজেদেরই অংশ নিয়ে যদি রাজ্যের জন্মদিন পালন করতে হয়, তাহলে কি ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ কে ভারতের জন্মদিন হিসাবে ধরতে হবে? আমাদের দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ইত্যাদি তাহলে মাত্র সত্তর বছরের? তাহলে তো বলতে হবে যে নেহরু ঠিকই বলেছিলেন যে India is a nation in making। না, নেহরু ঠিক বলেননি, ভারতের জন্ম মোটেই ১৯৪৭ সালে নয়, রাজনৈতিক বিভাজন মোটেই দেশের জন্মদিন নির্ধারণ করেনা।

একইভাবে, বঙ্গমাতার জন্মদিনও মাত্র কয়েক দশকের পুরনো ঘটনা নয়। মা কে খন্ডিত করলেই তার জন্মদিন বদলে যায়না। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ, মাস্টারদার স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম, মাইকেল মধুসূদন দত্তের যশোর প্রভৃতি স্থান বিহীন বঙ্গমাতা আজও খন্ডিতা। তাই, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়, মা যা ছিলেন আর মা যা হবেন, আমি সেটার স্বপ্ন দেখি, মা যা হয়েছেন, সেটা নিয়ে উল্লসিত হতে পারিনা। তাই আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টি উল্লাসের নয়, বেদনার স্মৃতি বয়ে আনে। বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির কাছে পরাজয়ের বেদনা, নিজের দেশের ঐতিহ্যবাহী ভূমিখণ্ড হারানোর বেদনা, নিজের মাতৃভূমিকে জেহাদিদের হাতে খন্ডিত হতে দেয়ার বেদনা। আর এই বেদনার উপশম সেদিন হবে যেদিন আমরা মায়ের খন্ডিত অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারবো। আমার মা পূর্ব আর পশ্চিমে বিভক্ত নয়, তিনি সম্পূর্ণা।

Saturday, June 19, 2021

কালনেমির লঙ্কাভাগ

জাতীয় সুরক্ষার নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভাজন করার পরিকল্পনা আসলে বিজেপির রাজনৈতিক হতাশার প্রতিফলন। বিগত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে, সম্পূর্ণ কম্যুনিস্ট কায়দায়, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষ গড়ে তোলার কাজ করে চলেছে বিজেপি। কম্যুনিস্টদের শ্রেণীশত্রুর অনুকরণে, বিজেপি জন্ম দিয়েছে জাতিশত্রুর। বাঙালীর সাথে অবাঙালীর, জেলার সাথে শহরের, এমনকি একই এলাকার বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যেও, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে, পারস্পরিক বিদ্বেষ ছড়ানোর কাজ করে গেছে বিজেপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলি। এককালে এই পদ্ধতি নিয়েছিল বামপন্থীরা। কৃষকের সাথে জমির মালিকের দ্বন্দ্ব, শ্রমিকের সাথে কারখানা মালিকের দ্বন্দ্ব, ছাত্রের সাথে শিক্ষকের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। অথচ মজার কথা হলো, বিরোধরত প্রতিটা পক্ষেরই প্রতিনিধিত্ব করতো বামপন্থীরা। পশ্চিমবঙ্গে, নির্বাচনের আগে, বিজেপিও ঐ একই লাইন নিয়েছিল।

সমাজের এই ভেদাভেদকে কাজে লাগিয়ে, বিজেপি ভেবেছিল, বিরাট সাফল্য পাবে। কিন্তু নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর যখন সেই স্বপ্ন ভেঙে যায় তখন সেটা গ্রহণ করা তাদের পক্ষে সহজ হয়না। পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচন ছিল মোদী আর শাহর কাছে সম্মান রক্ষার লড়াই আর সেই লড়াইয়ে, অযোগ্য নেতাদের উপর নির্ভর করে, মোদী আর শাহ সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত। এই ফলাফলে তাদের হাত থেকে শুধু পশ্চিমবঙ্গই হাতছাড়া হয়নি, জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব পড়েছে। আর ঠিক এই কারণেই, ফল প্রকাশের পর, রাজ্যপাল হোক বা সিবিআই, বিজেপির হাতে যা অস্ত্র আছে, সেগুলো বিজেপি প্রয়োগ করে যাচ্ছে যাতে মমতা ব্যাকফুটে থাকেন। 

এই খেলারই নতুন অঙ্গ হলো পশ্চিমবঙ্গকে ত্রিখন্ডিত করার প্রস্তাব। 'জাতীয় সুরক্ষার' স্বার্থে নাকি এটা আবশ্যিক। তাই গোর্খাল্যান্ড, জঙ্গলমহল আর মধ্যভূমি নিয়ে, রাজ্যকে তিন টুকরো করার প্রস্তাব হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। বিজেপির মতে, হিমালয় থেকে সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত দেশের একমাত্র রাজ্যকে তিন টুকরো করে দিলেই নাকি 'অপুত্রকের পুত্র হবে আর নির্ধনের ধন, মর্তে স্বর্গসুখ, মরলে বৈকুন্ঠ গমণ' একদম নিশ্চিত। গতকাল বিজেপির এক নেতার সাথে এই বিষয়ে কথা চলাকালীন তিনি বললেন যে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে, রাজ্যকে ভেঙে, তিনটে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা নাকি আশু প্রয়োজন। আমি যখন পালটা জানতে চাইলাম যে বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত তো আসাম আর ত্রিপুরারও আছে, সেখানেও কি একই পদক্ষেপ নেয়া হবে? তখন তার উত্তর যে ওখানকার পরিস্থিতি আলাদা।

আসলে পশ্চিমবঙ্গে পরাজয় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। আর যে পরিমাণ অর্থ তারা খরচ করেছে, সেটার পর মেনে নেয়াও খুব সহজ নয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা হোসপাইপে করে অর্থ ঢেলেছেন ঠিকই কিন্তু সেটা ঠিক যায়গায় পড়েছে কিনা সেটা নিয়ে তারা চোখ বুজে ছিলেন। আজ যখন চোখ খুলেছে তখন দেখছেন যে টাকাও নেই আর ক্ষমতাও নেই। কেন্দ্রে এককভাবে ৩০৩ জন সাংসদ আর খোদ এই রাজ্য থেকে ১৮ জন সাংসদ থাকলেও রাজ্যের নেতারা নিজেরা কেন্দ্রীয় নিরাপত্তার আড়ালে লুকিয়ে আছেন। নিজেদের আরামদায়ক ঘরে বসে, কর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার কথা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে বড় বড় কথা বলে আর আক্রান্তদের ছবি দেখিয়ে টাকা তুলেই তাদের দৌড়ে শেষ। রাজ্য নেতারা একে অপরের নামে বিষোদগার করে যাচ্ছেন। প্রত্যেকেরই অভিযোগ যে অন্যজন টাকা খেয়েছে। এমতাবস্থায়, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর কাছে কুমিরের শেষ বাচ্চা হলো রাজ্য ভাগ। তারাও জানে যে দলদাসরা, সব ভুলে, আবার ঝাঁপিয়ে পড়বে। তাই তো সেই নেতা অনায়াসেই বলতে পারেন যে, "লোকসভা নির্বাচন আসতে তো এখনও তিন বছর বাকি। ততদিনে সবাই সব কিছু ভুলে যাবে"।

Thursday, June 17, 2021

আগামীর রাজনীতি

উপর্যুপরি তিনবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর, এবার, খুব স্বাভাবিকভাবেই, মমতা ব্যানার্জীর কাছে পাখির চোখ হল দিল্লীর মসনদ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১৪ তে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার আগে, নরেন্দ্র মোদীও তিনবার তার দলকে গুজরাট বিধানসভাতে বিজয়ী করেছিলেন। তবে নরেন্দ্র মোদীর মত মমতা ব্যানার্জী কোন সর্বভারতীয় দলের নেত্রী নন, তার সঙ্গে শারদ পাওয়ারের সামঞ্জস্য বেশী। পাওয়ার যেমন মহারাষ্ট্রকে ভিত্তি করে, সর্বভারতীয় স্তরে উঠেছিলেন, মমতাও একইভাবে, পশ্চিমবঙ্গকে ভিত্তি করে, জাতীয় রাজনীতিতে নিজের যায়গা বানাতে চাইবেন।

বিগত নির্বাচনে ব্যপক সাফল্য লাভের পর, মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃণমূল প্রথমেই চাইবে বঙ্গ বিজেপিকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে আর এই কাজে প্রধান সেনাপতি হবেন মুকুল রায় - দলবদল ও দলভাঙানোর খেলাতে যিনি প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌছে গেছেন। একটা জিনিস এখানে খেয়াল রাখবেন, প্রধান সেনাপতি বলেছি, রাজা নয়। কারণ এক্ষেত্রে রাজার ভূমিকা নেবেন অভিষেক ব্যানার্জী, যিনি খুব সন্তর্পণে যুব তৃণমূল থেকে মূল ধারায় যুক্ত হয়ে গেছেন। বঙ্গ বিজেপিকে ভাঙার সাথে সাথে, তৃণমূলের লক্ষ্য হবে ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড এবং আসাম সহ দেশের বিভিন্ন বাঙালী বহুল এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা। তৃণমূলের বাড়তি সুবিধা হল যে আগামী এক বছর পার্টির যাবতীয় নজর থাকবে উত্তর প্রদেশের দিকে, তাই পশ্চিমবঙ্গে পার্টির অবস্থা সামলানোর লোক খুবই কম।

একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে যে বিগত ছয়-সাত মাসে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাজকর্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের চরম অভাব দেখা যাচ্ছে। কৃষক আন্দোলন হোক বা নতুন IT আইন, সরকারের অসহায়তা প্রতি ক্ষেত্রেই ফুটে উঠছে। ভাবা যায়, বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের কৃষকদের মধ্যে এমন প্রভাব নেই যা আন্দোলনের গতিধারা নির্ধারণ করতে পারে! নরেন্দ্র মোদীর মুশকিল হচ্ছে যে না তিনি খুব বেশী সহযোগীকে বিশ্বাস করেন না খুব বেশী সহযোগী তাকে বিশ্বাস করেন। এই কারণেই তার পীযুষ গোয়েল বা নির্মলা সীতারামনকে ক্ষমতার অতিরিক্ত দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে।

তবে তৃণমূলের এই পরিকল্পনা যতটা সহজে বললাম, অতটা সহজে বাস্তবায়িত হবেনা তার প্রধান কারণ প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর ইমেজ। এখনও অবধি বিরোধী দলগুলি যার কোন বিকল্প তুলে ধরতে পারেনি। মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে অসম্ভব জনপ্রিয় হতে পারেন কিন্তু এখনও অবধি তার সর্বভারতীয় ইমেজ মোদীর তুলনায় নগন্য। মোদীর যেভাবে গুজরাট মডেলের বিকাশ দিয়ে সারা ভারতে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মমতাও, আগামী তিন বছর, একইভাবে, চাইবেন রাজ্যের উন্নয়নকে মার্কেটিং করতে আর তিনি যাতে সেই কাজে সফল না হন তাই মমতা ব্যানার্জীর ইমেজের উপর বারবার আক্রমণ হবে, কখনও নারদা কেস নিয়ে বা কখনও রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে যাতে মমতাকে সবসময় ব্যাকফুটে খেলতে হয়।

তাই, আপনারা তৈরী থাকুন, ২০২৪ এর নির্বাচন, যেকোন রাজনীতির ছাত্রর কাছে, একটা শিক্ষনীয় বিষয় হতে চলেছে। মোদী আর মমতার দ্বৈরথ যে খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

Thursday, June 10, 2021

সহী হিন্দু

অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম যে ভারতে সহী হিন্দু যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে সেটা একমাত্র বাঙালী, অন্য কেউ নয়। এটা শুনে আশ্চর্য হবেননা, বরং ভেবে দেখুন, সহমত হবেন। আচ্ছা, একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি।

দেখুন, হিন্দুরা কোনদিন বলপূর্বক কারুর জমি দখল করতে যায়নি, বরং শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্যেই হোক বা আক্রমণকারীদের হামলার ফলে নিজেদের জমির অধিকার হারিয়েছে। বাঙালীদের ক্ষেত্রেও দেখুন একই অবস্থা। দেশভাগ হোক বা ল্যান্ড বিল এগ্রিমেন্ট -নিজের জমি ছাড়তে বাঙালী সবার আগে। এমনকি অন্য দেশ বা রাজ্য থেকে ব্যক্তিদের জমি ছাড়তে ছাড়তে, নিজেরা বাস্তুচ্যুত হলেও বাঙালীর কোন হুশ নেই।

এবার আসুন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। এককালে সারা বিশ্বে সনাতন ধর্মের যে প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল সেটা হয়েছিল মূলতঃ সাংস্কৃতিক কারণে। একইভাবে, বাঙালীরাও বিশ্বাস করে যে রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ আর নন্দন দিয়েই তারা সারা বিশ্বকে জয় করতে পারবে। আপনি দেশের যেকোন রাজ্যে যান, সেখানে বিহার বা উত্তর প্রদেশের মূলগত জনগোষ্ঠী যেখানে বাস করে সেটা সেখানকার পরিবেশ দেখে নিজেই বুঝতে পারবেন। এমনকি ওড়িয়া বা তামিল অধ্যুষিত এলাকাতেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। কিন্তু কোন যায়গা বাঙালী অধ্যুষিত হলে সেখানকার আলাদা কোন পরিচয় গড়ে ওঠেনা।

একইভাবে, বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আপন করতে, যেটা বসুধৈব কুটুম্বকমের ভিত্তি, বাঙালীর কোন জুড়ি নেই। তাই বিরিয়ানি থেকে খৈনী, ধোকলা থেকে গুটকা - সবেতেই তার চরম উৎসাহ কিন্তু যাবতীয় বাছবিচার শুরু হয় মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে। মহরমের তাজিয়ায় বাঙালী হিংসা না দেখলেও চড়কের ঘূর্ণী তাকে ব্যথিত করে। মাংসের দোকানে লাইন দিয়ে, আড়াই পোচে কাটা মাংস কিনতে তার আপত্তি না থাকলেও বলিপ্রথা তার কাছে চরম নিষ্ঠুরতার নিদর্শন।

পরমতসহিষ্ণুতার চরম নিদর্শন দেখিয়ে বাঙালী রামনবমীতে টিনের তলোয়ার আর DJ নিয়ে মিছিল করতে পারে কিন্তু কাংলাপাহাড়িতে দুর্গাপূজা বা তেহট্টে সরস্বতী পূজা বন্ধ হলে তার কিছু এসে যায়না। ধুপের মত সে নিজেকে পুড়িয়েই অন্যকে খুশী করতে চায়। আর এই প্রবৃত্তিই তাকে এতটা পরনির্ভরশীল করে দিয়েছে যে যেকোন আগ্রাসনের সময় সে অন্যদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে, নিজে এগোতে পারেনা। এরপরেও কি বাঙালীদেরই একমাত্র সহী হিন্দু বলা যাবেনা?

Sunday, June 6, 2021

টিকা নেয়ার শিক্ষা

অবশেষে বিড়াল, থুড়ি, আমার ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়লো, মানে টিকা জুটলো। পরশুদিন বিকালে দেখলাম যে সোদপুরের সুরক্ষা ডায়গনিস্টিক সেন্টারে আজকের স্লট খালি আছে। অতএব, করে দিলাম কর্তাগিন্নির বুকিং।

সকাল ১০-১১টার স্লট বুক করা ছিল। আজ ওখানে,অর্পিতাকে নিয়ে, ১০ঃ৩০ নাগাদ পৌঁছে দেখলাম লম্বা লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে শুনলাম যে সকাল ৯টার স্লটে বুকিং করা অনেকেই তখনও টিকা পাননি। সিড়ির ঘর হয়ে লাইনটা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেছে। লাইনে, পুরুষ আর মহিলা নিয়ে প্রায় জনা চল্লিশেক দাঁড়িয়ে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সিটিজেনও আছেন। আধঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরেও উল্লেখযোগ্য স্থান পরিবর্তন হলনা। লাইনে সবাই এই ধীর গতিতে কাজ হওয়া থেকে শুরু করে মোদীর টিকানীতি - সবকিছু নিয়েই আলোচনা করছে কিন্তু তাতেও লাইন এগিয়ে চললো না। বুঝলাম যে লাইনে দাঁড়িয়ে, আলোচনা করে গায়ের ঝাল মিটতে পারে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবেনা। অতএব বাধ্য হয়েই, লাইনে এড়িয়ে ভিতরে ঢুকলাম।

ভিতরে গিয়ে, সেন্টারের ইনচার্জ কে আছেন জানতে চাওয়ায় প্রথমে উপস্থিত কয়েকজন কর্মচারী মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন আর তারপর একজন জন মহিলা বললেন যে তিনি আজকে দায়িত্বে আছেন। আমি তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম যে এতজন লোক, এতক্ষণ ধরে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের বসার কোন ব্যবস্থা নেই কেন? উত্তরে উনি অসহায়ের মত বললেন যে "আমাদের এত লোককে বসতে দেয়ার মত পরিকাঠামো নেই"। পরিকাঠামো নেই তাহলে স্লট নিলেন কেন? টিকা বেচে আয় করবেন আর ক্রেতাদের ন্যুনতম স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রাখবেন না, এটা তো হয়না - উত্তর দিলাম আমি। আমার কথা শুনে ভদ্রমহিলা বললেন যে আপনি চলুন স্যার, আপনারটা করিয়ে দিচ্ছি। মাথাটা গরম হয়ে গেলেও, খুব ঠান্ডা স্বরেই বললাম যে, অসুবিধাটা শুধু আমার নয়, অন্যদেরও হচ্ছে। ওভাবে ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকলে, এখান থেকেও রোগ ছড়াতে পারে, আপনি সেটার দায়িত্ব নিচ্ছেন তো? ভদ্রমহিলা আমতা-আমতা করে বললেন যে, "আসলে আজকে তো রবিবার, তাই কর্মী সংখ্যা কম। তাছাড়া, কম্পিউটারে বিল বের করতেও কিছু অসুবিধা হচ্ছে"। কম্পিউটারে বিল করতে অসুবিধা হলে, হাতে লেখা বিল দিন, আমি বললাম। আমরা তো টিকা নিতে এসেছি, বিল নয়। টিকাকরণ শেষ হয়ে গেলে নাহয় কম্পিউটারে আপডেট করে নেবেন। আর একটা এক্সেল শীটে এক থেকে পঞ্চাশ অবধি তালিকা প্রিন্ট নিয়ে সবাইকে দিয়ে দিন। সবাই আলাদা যায়গায় বসুক, যখন যার নম্বর আসবে, সে ডাক পাবে।

মজার কথা হলো যে আমি যখন সবার হয়ে সেন্টারের সাথে তর্ক করছি তখন উপস্থিত আর কেউ আমার সমর্থনে এগিয়ে আসলো না। বুঝলাম, এদের ক্ষোভও সেই শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতি প্রতিবাদ করার মতো। যাইহোক, ভদ্রমহিলা তারপর দু'জনকে ডেকে কিছু বললেন আর আমাকে আবার অনুরোধ করলেন আগে টিকা নিয়ে নিতে। আমি আর ওনার কথা ফেললাম না, উপরে গিয়ে, হ্যাঁ, লাইনে থাকা বাকিদের আগেই, দুজনের টিকার দাম দিয়ে, টিকা নিলাম। ও হ্যাঁ, এবার হাতে লেখা বিলই দেয়া হলো। টিকা নেয়ার পরে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন নেমে আসছি তখন সিড়িতে দেখলাম তিন-চারজন দাঁড়িয়ে আছেন আর সেন্টারের অন্য একটা অংশ খুলে দেয়ায়, বাকিরা সেখানে বসে আছেন। আর কি, দু'জনে হাসতে হাসতে গাড়ির দিকে চললাম।