Sunday, June 6, 2021

টিকা নেয়ার শিক্ষা

অবশেষে বিড়াল, থুড়ি, আমার ভাগ্যেও শিকে ছিঁড়লো, মানে টিকা জুটলো। পরশুদিন বিকালে দেখলাম যে সোদপুরের সুরক্ষা ডায়গনিস্টিক সেন্টারে আজকের স্লট খালি আছে। অতএব, করে দিলাম কর্তাগিন্নির বুকিং।

সকাল ১০-১১টার স্লট বুক করা ছিল। আজ ওখানে,অর্পিতাকে নিয়ে, ১০ঃ৩০ নাগাদ পৌঁছে দেখলাম লম্বা লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে শুনলাম যে সকাল ৯টার স্লটে বুকিং করা অনেকেই তখনও টিকা পাননি। সিড়ির ঘর হয়ে লাইনটা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেছে। লাইনে, পুরুষ আর মহিলা নিয়ে প্রায় জনা চল্লিশেক দাঁড়িয়ে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন সিনিয়র সিটিজেনও আছেন। আধঘন্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকার পরেও উল্লেখযোগ্য স্থান পরিবর্তন হলনা। লাইনে সবাই এই ধীর গতিতে কাজ হওয়া থেকে শুরু করে মোদীর টিকানীতি - সবকিছু নিয়েই আলোচনা করছে কিন্তু তাতেও লাইন এগিয়ে চললো না। বুঝলাম যে লাইনে দাঁড়িয়ে, আলোচনা করে গায়ের ঝাল মিটতে পারে কিন্তু কাজের কাজ কিছু হবেনা। অতএব বাধ্য হয়েই, লাইনে এড়িয়ে ভিতরে ঢুকলাম।

ভিতরে গিয়ে, সেন্টারের ইনচার্জ কে আছেন জানতে চাওয়ায় প্রথমে উপস্থিত কয়েকজন কর্মচারী মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন আর তারপর একজন জন মহিলা বললেন যে তিনি আজকে দায়িত্বে আছেন। আমি তাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলাম যে এতজন লোক, এতক্ষণ ধরে, এভাবে দাঁড়িয়ে আছে, তাদের বসার কোন ব্যবস্থা নেই কেন? উত্তরে উনি অসহায়ের মত বললেন যে "আমাদের এত লোককে বসতে দেয়ার মত পরিকাঠামো নেই"। পরিকাঠামো নেই তাহলে স্লট নিলেন কেন? টিকা বেচে আয় করবেন আর ক্রেতাদের ন্যুনতম স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রাখবেন না, এটা তো হয়না - উত্তর দিলাম আমি। আমার কথা শুনে ভদ্রমহিলা বললেন যে আপনি চলুন স্যার, আপনারটা করিয়ে দিচ্ছি। মাথাটা গরম হয়ে গেলেও, খুব ঠান্ডা স্বরেই বললাম যে, অসুবিধাটা শুধু আমার নয়, অন্যদেরও হচ্ছে। ওভাবে ঘেষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে থাকলে, এখান থেকেও রোগ ছড়াতে পারে, আপনি সেটার দায়িত্ব নিচ্ছেন তো? ভদ্রমহিলা আমতা-আমতা করে বললেন যে, "আসলে আজকে তো রবিবার, তাই কর্মী সংখ্যা কম। তাছাড়া, কম্পিউটারে বিল বের করতেও কিছু অসুবিধা হচ্ছে"। কম্পিউটারে বিল করতে অসুবিধা হলে, হাতে লেখা বিল দিন, আমি বললাম। আমরা তো টিকা নিতে এসেছি, বিল নয়। টিকাকরণ শেষ হয়ে গেলে নাহয় কম্পিউটারে আপডেট করে নেবেন। আর একটা এক্সেল শীটে এক থেকে পঞ্চাশ অবধি তালিকা প্রিন্ট নিয়ে সবাইকে দিয়ে দিন। সবাই আলাদা যায়গায় বসুক, যখন যার নম্বর আসবে, সে ডাক পাবে।

মজার কথা হলো যে আমি যখন সবার হয়ে সেন্টারের সাথে তর্ক করছি তখন উপস্থিত আর কেউ আমার সমর্থনে এগিয়ে আসলো না। বুঝলাম, এদের ক্ষোভও সেই শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রতি প্রতিবাদ করার মতো। যাইহোক, ভদ্রমহিলা তারপর দু'জনকে ডেকে কিছু বললেন আর আমাকে আবার অনুরোধ করলেন আগে টিকা নিয়ে নিতে। আমি আর ওনার কথা ফেললাম না, উপরে গিয়ে, হ্যাঁ, লাইনে থাকা বাকিদের আগেই, দুজনের টিকার দাম দিয়ে, টিকা নিলাম। ও হ্যাঁ, এবার হাতে লেখা বিলই দেয়া হলো। টিকা নেয়ার পরে, কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন নেমে আসছি তখন সিড়িতে দেখলাম তিন-চারজন দাঁড়িয়ে আছেন আর সেন্টারের অন্য একটা অংশ খুলে দেয়ায়, বাকিরা সেখানে বসে আছেন। আর কি, দু'জনে হাসতে হাসতে গাড়ির দিকে চললাম।

No comments:

Post a Comment