Monday, May 31, 2021

বিজেপির হতাশা

নারদা কান্ডে চার্জশিট পেশের সময় গ্রেপ্তারি হোক বা মুখ্যসচিব পদে এক্সটেনশন দেয়ার পর বদলির আদেশ, এসবই আসলে অমিত শাহর হতাশার বহিঃপ্রকাশ মাত্র। তিনি এখনও ভাবতেই পারছেননা যে রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে, চলতি ভাষায়, মুরগী বানিয়ে, নিজেদের পকেট ভারী করেছেন। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপি নিজেদের যাবতীয় শক্তি ঢেলে দেয়ার পরেও যে ফল হয়েছে তা নিঃসন্দেহে বিপর্যয়। 

আসলে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবস্থা অনেকটা বলিউডে ক্যাটরিনা কাইফের মত হয়েছে। দীর্ঘদিন বলিউডে কাজ করার পরেও, ক্যাটরিনার হিন্দি উচ্চারণ এতটাই যান্ত্রিক যে এখনও তিনি খাঁটি ভারতীয়র ভূমিকায় খাপ খাওয়াতে পারেননা। তাকে যদি কোন সিনেমায় 'গাঁও কি গোরী' হিসাবে দেখানো হয় তাহলে সেই সিনেমার পরিণতি কি হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। এই কারণে চিত্রনাট্য তৈরীই করা হয় তাকে প্রবাসী ভারতীয় হিসাবে দেখাতে। প্রায় একইরকম সমস্যা ছিল বাংলা সিনেমাতে অরুন্ধতী দেবীর। তার অ্যাপেয়ারেন্সটা এতটাই বনেদী ছিল যে তাকে গ্রামের কোন সরল, সাধাসিধা মেয়ের ভূমিকায় মানাতনা। এই নিয়ে তিনি নিজেও ক্ষেদ প্রকাশ করেছেন কিন্তু পরিচালকের কিছু করার ছিলনা।

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবস্থাও হয়েছে সেই ক্যাটরিনা কাইফের মত। যাই করুক না কেন, 'জয় শ্রী রাম' না বললে ঠিক কমফোর্ট জোনে যেতে পারেনা। এমনকি কফি হাউসের দখল নিতেও গেছিল গেরুয়া গেঞ্জি পরে। না, কফি হাউস বাংলার সংস্কৃতির একমাত্র প্রতীক নয় কিন্তু যারা সেটার দখল নিতে যাচ্ছে, তারা তো সেটা ভেবেই যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে, যস্মিন দেশে, যদাচার করতে বাধা কোথায়? বাধা সেই ক্যাটরিনা কাইফ। তাকে NRI দেখালে তবে কনফিডেন্স আর কমফোর্ট পায় আর বঙ্গ বিজেপির কনফিডেন্স আর কমফোর্ট হলো গেরুয়া শার্ট আর জয় শ্রী রাম। 

এরইফলে, মমতা ব্যানার্জী ক্রমাগত বিজেপিকে বহিরাগত বলে আক্রমণ করেছেন আর বিজেপিও নিজেদের চেনা ফর্মুলার বাইরে না বেরিয়ে, সেই অভিযোগকেই যথার্থ প্রমাণ করেছে। পশ্চিমবঙ্গে লাভ জেহাদ যে একটা বড় বিপদ সেটা নিয়ে তপন ঘোষ প্রথম যখন সোচ্চার হয়েছিল তখন সেটার মধ্যে মাটির গন্ধ ছিল। কেউ সেটাকে বাঙালী পরিচয়ের প্রতি থ্রেট বলে ভাবেনি। কিন্তু বিজেপি নেতারা যখন তাদের ভাষণে 'অ্যান্টি-রোমিও স্কোয়াড' তৈরীর প্রতিশ্রুতি দেন, বাঙালী তখন সেটার সাথে একাত্ম হতে পারেনা। বরং আতঙ্কিত হয় যে এই রাজ্যকেও বোধহয় বদলানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

বঙ্গবিজেপি যতদিন না পর্যন্ত এই ক্যাটরিনা কাইফ সিনড্রোম থেকে বেরোতে পারবে, তাদের পক্ষে সাফল্য পাওয়া কঠিন। অনেকেই হয়তো এটা শুনে ২০১৯ এর ১৮টা আসনের উদাহরণ দেবেন কিন্তু তারা ভুলে যাবেননা যে সেই নির্বাচন হয়েছিল পুলবামা আর বালাকোটের আবহে, জাতীয়তাবাদের প্রেক্ষাপটে। সেই লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আঞ্চলিক পরিচয়ের থেকেও জাতীয় পরিচয় নির্ণায়ক ভূমিকা পালন করেছিল। তবে সময় কখনও থেমে থাকেনা। রাজনীতিতে সাফল্য আর ব্যর্থতা - দুই-ই ক্ষণস্থায়ী। ভুল থেকে যে দল তাড়াতাড়ি শিক্ষা নিতে পারবে, তারই লাভ।

No comments:

Post a Comment