Thursday, May 20, 2021

প্ল্যান বি

অজয় দেবগণের দৃশ্যম সিনেমাটার কথা মনে আছে? মূল সিনেমাটা শুনেছি যে একটা মালয়ালম সিনেমা থেকে 'অনুপ্রাণিত', তবে মূল সিনেমাটা আমি দেখিনি বলে অজয় দেবগণের সিনেমাটার কথাই বলছি। সিনেমাটাতে অজয় দেবগণ বারবার নিজের পরিবারের নির্দোষ হওয়ার কথা বললেও আর সেটাকে বিভিন্ন সাক্ষী সমর্থন করলেও হঠাৎ একজন সাক্ষী বলেন যে অজয় ও তার পরিবারের সাথে তার সেই ঘটনার দিনের পরেও দেখা হয়েছিল আর তাই তার এতকিছু বিশদে মনে আছে। এটা শুনেই গোয়া পুলিশের ডিআইজির ভূমিকায় অভিনয় করা টাবু বুঝতে পেরে যান যে অজয় কিভাবে পুলিশকে বোকা বানিয়েছে।


হ্যাঁ, ঐ সিনেমার মতই কৈলাশ, মুকুল, দিলীপ বা শিবপ্রকাশরা পশ্চিমবঙ্গ নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে মোদী-শাহ-নাড্ডাদের একটা সিনেমা দেখিয়েছেন। তারা খুব পরিকল্পিত ভাবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর সামনে সিনেমার মত দৃশ্য তুলে ধরে দেখিয়েছেন যে বঙ্গ বিজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। আর এই দৃশ্য দেখিয়ে তারা শুধু কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর থেকে নয়, বিভিন্ন টিকিট প্রাপক ও ব্যবসায়ীদের থেকেও বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের এই দৃশ্য রচনা দেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বর মত স্থানীয় কর্মীরাও আশায় বুক বেঁধেছিল। কিন্তু তারা কেউই বুঝতে পারেনি যে আনারকলি সিনেমার রাজসভায়, পৃথ্বিরাজ কাপুর আকবর সাজতে পারেন কিন্তু তার ফলে তিনি বাস্তবে আকবর হয়ে যাবেন না। 

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও রাজ্যের কর্মীরা স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবের রুক্ষ জমিতে মুখ থুবড়ে পড়েন নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরে। বঙ্গ বিজয় নিশ্চিত ভেবে বিজেপি তার যাবতীয় শক্তি পশ্চিমবঙ্গে উজাড় করে দিয়েছিল। নরেন্দ্র মোদীর প্রায় দুই ডজন সভা হোক বা অর্ণবকে দিয়ে রিপাবলিকের বাঙলা চ্যানেল খোলানো- কার্পণ্য করা হয়নি এতটুকু। অথচ তারপরেও যখন দেখা যায় ২০০ আসনে জয়লাভের দাবী করা বিজেপি বাস্তবে ১০০ টা আসনেও জিততে পারেনি তখন মুখরক্ষা করার জন্যে বিজেপিকে কিছু একটা করতেই হতো নাহলে ক্যাডারদের সামলানো যেতনা।

এই ড্যামেজ কন্ট্রোলের প্রথম ধাপ হিসাবে প্রচার করা হলো যে বিজেপি নাকি একশ'র বেশী আসনে ১০০০ এর কম ভোটে হেরেছে। যদিও বাস্তব হলো যে ১০০০ এর কম ভোটে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয়েছে মাত্র ৭টা আসনে আর তারমধ্যে বিজেপি জিতেছে - দিনহাটা, ঘাটাল, বলরামপুর ও কুলটি - ৪টি আসনে আর হেরেছে - জলপাইগুড়ি, তমলুক ও দাঁতন - ৩টি আসনে। এরপরে প্রচার হলো যে রাজ্যের সব আসনের পূনঃর্গণনা চেয়ে তারা নাকি আদালতের শরণাপন্ন হবে কিন্তু ফলপ্রকাশের পর দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনও তারা আদালতে যেতে পারলেন না।

আসলে তাদের এই প্রচারগুলির সবক'টাই ছিল ক্যাডারদের ও ডোনারদের বোকা বানানো যাতে তারা জবাবদিহি চাইতে না পারে। এখন রাজ্যের দুই ক্যাবিনেট মন্ত্রী সহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার যে খেলা চলছে সেটাও সেই distraction game এর অঙ্গ। তাই নারদা কেসে, CBI এর পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে সংসদের স্পিকারদের কাছে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারী, কাকলী ঘোষ দস্তিদারদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার অনুমতি চাওয়া হলেও আজ অবধি সেই অনুমতি পাওয়া যায়না। "বহুত হুয়া ভ্রষ্টাচার, আব কি বার মোদী সরকার" স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদী যে ভ্রষ্টাচারের বিরুদ্ধে কতটা কঠোর তার প্রমাণ অগাস্তা ওয়েস্টল্যান্ড, 2G, এয়ারসেল ম্যাক্সিস থেকে সুনন্দা পুস্করের মৃত্যুর তদন্তেই প্রমাণিত। সারদা কেসে সুদীপ ব্যানার্জী, মদন মিত্র, তাপস পাল সহ বিভিন্ন অভিযুক্তরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হলেও তদন্তের কোন পরিণতি আজও হয়নি। তাই আজ CBI হঠাৎ ঘুম থেকে জেগে, চারজনকে গ্রেপ্তার করে, হেফাজতে রাখার জন্যে যতই অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলকে কলকাতা হাইকোর্টে নিয়ে আসুন, মোদী সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ থেকেই যাবে।

No comments:

Post a Comment