Monday, May 3, 2021

ঠোঁট ও কাপের ফাঁক

দলবদলু বা ভোলবদলুদের দিয়ে যে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়না সেই শিক্ষা, আশা করি, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব পেয়েছেন। রাজীব ব্যানার্জী, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, প্রবীর ঘোষাল বা বৈশালী ডালমিয়া, সব্যসাচী দত্ত, জিতেন্দ্র তিওয়ারি বা শীলভদ্র দত্তরা নিজেদের লার্জার দ্যান লাইফ ইমেজ বানাতে পেরেছিলেন কেবলমাত্র মমতা ব্যানার্জীর ইমেজ আর প্রশাসনিক সাহায্যকে মূলধন করে। তাদের ব্যক্তিগত সাপোর্ট বেস শূন্য।

একইভাবে, নন্দীগ্রামে হিন্দুদের উপর চরম অত্যাচার করা শুভেন্দু অধিকারী, যে দলবদল করেই হিন্দুত্ববাদীদের কাছে ব্লু আইড বয় হয়ে গিয়েছিল, কোনরকমে নিজের আসন রক্ষা করতে পারলেও পূর্ব মেদিনীপুরের ১৬টা আসনের মধ্যে ১০টা জিতে গিয়েছে তৃণমূল। যে লোকসভা থেকে শুভেন্দু দুইবার জয়ী হয়েছিলেন সেই তমলুক লোকসভার অন্তর্গত ৭টা বিধানসভার মধ্যে মাত্র দু'টোতে জিততে পেরেছে শুভেন্দুর নতুন দল। নন্দীগ্রামে মমতা ব্যানার্জীকে অন্তত ৫০ হাজার ভোটে না হারাতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার দাবী করা শুভেন্দু অধিকারী নিজের কথা রাখেন কিনা সেটা তো জনগণ নজরে রাখবেই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে যে জনগণ কিন্তু সব মনে রাখে আর সময়মত শোধ দিয়ে দেয়।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ভেবেছিল যে আসাম আর ত্রিপুরার মত পশ্চিমবঙ্গেও দলবদলুরা আসলেই সরকার হেঁটে হেঁটে বাড়ি চলে আসবে আর তাদের সেই কল্পনায় হাওয়া দিয়েছিল এই রাজ্যের দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন কিছু দলবদলুরা।  পরিণতিতে, বিজেপির আমও গেছে আর ছালাও গেছে। এরসাথে যোগ করুন বিজেপি নেতাদের মাত্রাছাড়া ঔদ্ধত্য। ক্ষমতায় আসার আগেই তাদের প্রতিটা আচরণে অহংকার চুইয়ে পড়েছে। সমর্থকরা সামান্য ক্ষোভ বা অভিমান প্রকাশ করলেই তাদের সাথে কুকুর- বেড়ালের মত ব্যবহার করেছে রাজ্য নেতা ও তাদের স্তাবকরা। এর মূল্য তো দিতেই হবে।

নির্বাচনে হারার পর, খুব প্রত্যাশিতভাবে, বিজেপি ও তার আইটি সেল সব দোষ দেবে মছলিখোর বাঙালীদের। সোশ্যাল মিডিয়াতে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা নিদান দেবেন যে বাঙালীরা সহী হিন্দু নয়, তাই বিজেপিকে ভোট দেয়নি। অথচ ফলাফল যদি উল্টো হতো, তাহলে রাজ্য বিজেপিতে গজিয়ে উঠতো প্রচুর 'চাণক্য' আর সোশ্যাল মিডিয়ার যোদ্ধারা হয়ে উঠতেন কলিযুগের অর্জুন। কিন্তু হায়, সেরকম যেহেতু হয়নি তাই সব দোষ বঙ্গালীর। ব্যর্থতা বরাবরই অনাথ হয় আর এখানেও তার ব্যতিক্রম হবেনা। 

অনেকে বলতে পারেন যে ঊনিশের নির্বাচনে বিজেপি দলবদলুদের নিয়ে তো সাফল্য পেয়েছিল। তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে ২০১৯এ দলবদলু নিয়েও সাফল্যলাভের দু'টো কারণ ছিল - ১. প্রধানমন্ত্রী হিসাবে মোদীর কোন বিকল্প না থাকা এবং ২. পুলবামা হামলা ও পরবর্তীতে বালাকোটে এয়ার স্ট্রাইক নিয়ে দেশজুড়ে জাতীয়তাবাদের জোয়ার। ২০২১ এ, এই রাজ্যের নির্বাচনে, মমতা ব্যানার্জীর বিকল্প মুখ কে? জনগণ যখন মমতাকে সরানোর জন্যে বোতাম টিপবে, তখন সে মমতার বদলে কার মুখ ভাববে, দিলীপ, শুভেন্দু, মুকুল, অর্জুন, লকেট, স্বপন নাকি অন্য কেউ? আগেও বহুবার বলেছি নির্দিষ্ট কোন মুখ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনে যাওয়া মূর্খতা। সেই কথা যখন বলেছি তখন অনেক দলদাস আসাম, ত্রিপুরা বা উত্তরপ্রদেশের দৃষ্টান্ত দিয়ে, সেই সিদ্ধান্তকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করেছিল। তখন যেটা বলেছিলাম, এখনও সেটাই বলবো, প্রত্যেকটা রাজ্যের চরিত্র আলাদা, একটা কমন ফর্মুলা সব যায়গাতে চলেনা। তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের চিন্তার যায়গাটাও বুঝতে পারছি। কোন মুখ ঘোষণা করা হয়নি বলে আজ দলের বিধায়ক সংখ্যা তবু ৭৭ এ গেছে, মুখ বলে দিলে যে অন্তর্ঘাতের ফলাফল কি হতো সেটা শ্রী রামই জানেন।

No comments:

Post a Comment