Tuesday, November 27, 2018

কারুর পৌষ মাস...

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদী ঢাকঢোল পিটিয়ে, মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের জন্যে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক থেকে মাত্র ৫৯ মিনিটে ঋণ পাওয়ার জন্যে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। এই ঋণের আবেদন করার জন্যে একটা অনলাইন পোর্টালও তৈরি করা হয়েছে যেটা হল www.psbloansin59minutes.com যেখানে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে আগ্রহী ব্যক্তিরা ঋনের জন্যে আবেদন করতে পারেন।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে এর আগে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্যে ঋণ দেয়া হত SIDBI(Small Industries Development Bank of India) বা তার পরিচালিত কোন প্রকল্পের অধীনে। এবারই প্রথম এই বরাত দেয়া হল ২০১৫ সালে বিনোদ মোধা, জিনাদ শাহ এবং অভিরুক চক্রবর্তী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত CapitaWorld Platform Pvt. Ltd. নামক একটা বেসরকারি সংস্থাকে যাদের ঠিকানা হল 301 Optionz Building, 3rd Floor, Opp. Hotel Nest, Off CG Road, Ahmedabad, Gujarat। কেন্দ্র সরকারের দাবী যে রীতিমত সরকারি দরপত্র (Tender) হেঁকে তারপর এই কন্ট্রাক্ট দেয়া হয়েছে। এবার দেখা যাক যে ২২শে জানুয়ারী জারি করা দরপত্রে কি ছিল।

দরপত্রে পরিস্কার লেখা ছিল (পৃষ্ঠা ১৫) যে এই কাজে সহায়ক হতে চাওয়া কোম্পানিকে ২০১২ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে (১ নং ছবি)। কিন্তু কাজের বরাত পাওয়া CapitaWorld Platform Pvt. Ltd. কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে। ঐ দরপত্রের ১৬ নং পৃষ্ঠায় শর্ত দেয়া ছিল যে সহায়ক কোম্পানিকে বিগত তিন বছরে অন্তত ৫০ (পঞ্চাশ) কোটি টাকা আয় করতে হবে (২ নং ছবি)। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর ২০১৬ সালের মার্চ মাসে কোম্পানিটির লস ছিল ৩৮,৮৮৮ টাকা। পরের বছর, একই সময়ে কোম্পানির আয় বেড়ে হয় ১৫,৬৮০ টাকা। এরপরেই মালিকানার পরিবর্তন ঘটে এবং CapitaWorld Platform Pvt. Ltd. কোম্পানির ৬০% শেয়ারের বিনিময়ে CapitaWorld Platform Global কোম্পানির সাবসিডিয়ারিতে পরিণত করা হয়। মজার ব্যাপার হল যে এই CapitaWorld Platform Global কোম্পানিরও যৌথ মালিক হলেন বিনোদ মোধা এবং জিনাদ শাহ। এখানেই শেষ নয়। CapitaWorld Platform Pvt. Ltd.-এর ৩২.১% শেয়ার থাকে JVKM Associates-র কাছে যার মালিক হলেন বিনোদ মোধা, জিনাদ শাহ এবং ক্রুণাল শেঠ। ২০১৮ সালের ১৬ই এপ্রিল, রেজিস্টার অফ কোম্পানিজ-র কাছে দাখিল করা তথ্যে কোম্পানির শেয়ারের মূল্য ১২৯.৩৯ টাকা স্থির করা হয়। উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হল যে শেয়ারের দাম নির্ধারণ করার জন্যে OMMS & Associates নামক একটা সংস্থা দ্বারা কোম্পানির ভ্যালুয়েশনে CapitaWorld Platform-র আগের রোজগার ও সম্পত্তির বদলে "potential earning capacity" অর্থাৎ 'আয় করার ক্ষমতা'কে মাপকাঠি হিসাবে ধরা হয়। এরপর জুলাই মাসে কোম্পানির আয়ে জোয়ার আসে যখন SIDBI সমেত ৯ (নয়) টা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ১২৯.৩৯ টাকা দরে কোম্পানির মোট ৩২,২৮,৪৬৬ শেয়ারের মধ্যে ১৭,৪৩,৩২১ টা শেয়ার কিনে নেয় এবং CapitaWorld Platform স্বাভাবিকভাবেই দরপত্রে দেয়া ৫০ কোটির শর্ত পূরণ করে ফেলে।

নরেন্দ্র মোদী ঘোষিত প্রকল্প অনুযায়ী, এই পোর্টালের সূত্রে কোন ঋন নীতিগতভাবে অনুমোদিত হলেই CapitalWorld Platform আবেদকের থেকে পাবে ১০০০ টাকা। এছাড়া ব্যাঙ্ক দ্বারা ঋণ অনুমোদন হওয়ার পরে সেই ঋণের ০.৩৫% পাবে CapitalWorld Platform। মোদীর ঘোষণার পরের দিনই ঐ সাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সেই কাউন্টার এখন সরিয়ে নেয়া হয়েছে, মোট ১.৬৯ লক্ষ রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে ২৩,৫৮২ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের ০.৩৫% হিসাবে কোম্পানির প্রাপ্তি হয়ে ৮২.৫৩ কোটি। মাত্র একদিনে সাড়ে বিরাশী কোটি আয়, এবার ভাবুন কয়েক লক্ষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের উদ্যোগীরা আবেদন করলে কোম্পানির কতটা আয় হতে পারে।

দাঁড়ান, এখনও শেষ হয়নি। এই বিপুল পরিমান আয়ের সঙ্গে যোগ করুন এবার তথ্যের অধিকার। ঋণের জন্যে আবেদন করতে হলে প্রত্যেক আবেদককে আধার, প্যান কার্ড সহ বিগত ছয় মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট (PDF ফরম্যাটে) সহ তিন বছরের ইনকাম ট্যাক্স ডিটেলসও (XML ফরম্যাটে) জমা দিতে হবে। অর্থাৎ আবেদন করার পর, প্রতিটা আবেদকের ঠিকুজিকোষ্ঠী এখন কোম্পানির অধীনে। আপনার দেয়া এই তথ্যকে কোম্পানি যেভাবে খুশী ব্যবহার করতে পারে (৩ নং ছবি)। ঋণের T&C অংশে কোম্পানি লিখেই দিয়েছে যে "you submit or make available for inclusion on the Platform, you grant the company a perpetual, irrevocable, non-terminable, worldwide, royalty-free and non-exclusive license to use, copy, distribute, publicly display, modify, create derivative works, and sublicense such Materials or any part thereof (as well as use the name that you submit in connection with such submitted content) unless specially agreed otherwise by the company." শুধু তাই নয়, আপনার দেয়া এই তথ্য যদি চুরি, হ্যাকড, আক্রান্ত হয় তাহলেও তার কোন দায় CapitalWorld Platform কোম্পানির থাকবেনা, "in case of any data theft/hacking/attack/any event beyond its control, the company does not guarantee data security and accepts no responsibility or liability for any loss or damage arising as consequence of such event/s" আর সেটাও স্পষ্টভাবে লেখা আছে ঐ সাইটে (৪ নং ছবি)। আর হ্যাঁ, সাইটে এটাও লেখা আছে যে এই সাইটের মাধ্যমে আবেদন করার অর্থই হল সাইটে উল্লেখিত সব শর্তগুলি মেনে নেয়া।

SIDBI কে এড়িয়ে, টেন্ডারের নিয়ম ভেঙে, ২০১৫ সালে গুজরাটে গজিয়ে ওঠা একটা কোম্পানিকে এইভাবে কামিয়ে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হল কাদের স্বার্থে?? উত্তরের অপেক্ষায় থাকলাম।




Thursday, November 15, 2018

সময়

ভারতকেশরী, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় একটা কথা বলেছিলেন, "অতীতকে গ্রহণ করো যুগানুকূল করে আর বিদেশী সংস্কৃতিকে গ্রহণ করো দেশানুকূল করে"।

অতীত আমাদের কাছে প্রেরণা, শিক্ষা কিন্তু অতীত যদি বর্তমানকে সর্বদা নিয়ন্ত্রণ করে যায় তাহলে ভবিষ্যত অনিশ্চিত হতে বাধ্য। হিন্দু সমাজ বরাবরই গতিশীল। হ্যাঁ, টুলো পন্ডিতরা কিছু সময়ের জন্যে তার গতিপথ রোধ করতে পারলেও, গতিশীলতাকে ধ্বংস করতে পারেনি আর তাই হিন্দু সমাজ বিভিন্ন যুগে সংস্কারিত হয়েছে বুদ্ধ, নানক, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, নারায়ণ গুরু বা আম্বেদকরের মত ব্যক্তিদের নিরলস প্রচেষ্টায়।

উল্টোদিকে, মুসলিম সমাজের মধ্যে সেই গতিশীলতারই অভাব। ফলে এখনও তারা ১৪০০ বছর আগের স্মৃতি আকড়ে বসে আছে। সুদূর আরবে, জলের অভাবে শুধু হাতের তালু ও পায়ের পাতা ভিজিয়ে প্রার্থনা করা হত বলে নদীমাতৃক এই দেশে এখনও তারা সেই অভ্যাস চালিয়ে যাচ্ছে। বিদেশী সংস্কৃতিকে অনুকরণ করতে গিয়ে তারা নিজেদের সংস্কারিত করতে পারেনি অথচ খোদ আরবে এখন মসজিদ ভেঙে রাস্তা, হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে।

আরব জানে যে তার নিজের দেশের লোকসংখ্যা দিয়ে পৃথিবীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, তাই তারা বিভিন্ন দেশে আরবীদের ক্লোন তৈরি রাখছে যারা থাকবে অন্য দেশে কিন্তু আনুগত্য থাকবে আরবের প্রতি। আর এই কাজে আরবের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল ইসলাম।

ইসলামের কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাসকারী মুসলিমরা সেদেশের সংস্কৃতির সাথে একাত্ম হতে পারছেনা। আর একাত্ম না হতে পারার জন্যেই সবসময় তাদের মধ্যে নিরাপত্তাহীণতা কাজ করে। আর সেটাকেই কাজে লাগায় আরবীয় সংস্কৃতি। খনিজ তেলের কল্যাণে আরবের অর্থের অভাব নেই আর সেই অর্থের একটা বড় অংশই ব্যয় করা হচ্ছে অমুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসকারী মুসলিমদের মধ্যে নিরাপত্তাহীণতার বোধ তৈরি করার কাজে।

আজ উত্তরপ্রদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের কোন মুসলিম জেহাদের নামে দেশ বিরোধী কোন কাজে লিপ্ত হয়ে, নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে নিহত হলে আরবের কিছু যায় আসেনা কিন্তু তার মা বা স্ত্রী কি একইরকম নির্লিপ্ত থাকতে পারে? তার অনুপস্থিতি কি তার পরিবারের উপর প্রভাব ফেলেনা? অবশ্যই  ফেলে কিন্তু সেটা যাতে প্রকাশ না পায় তাই আরবের টাকায় সেই মৃত্যুকে গরিমান্বিত করার চেষ্টা করা হয় শহীদের মর্যাদা দিয়ে কিন্তু যে দেশের মাটিতে তাদের জন্ম হচ্ছে, তারা বড় হচ্ছে, এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মও জন্ম নেবে সেই দেশের ক্ষতি করলে লাভটা কার হবে? এই প্রশ্ন যাতে তাদের মনে না আসে তাই প্রতি শুক্রবার করে চলে মগজ ধোলাই যাতে মুসলিমদের বসবাসকারী দেশের প্রতি নয়, আরবের প্রতি আনুগত্য বজায় থাকে।

Saturday, November 10, 2018

সংকল্প

যে জাতির অর্থও নেই বা ক্ষত্রিয় শক্তি নেই তাদের পক্ষে অস্তিত্ব রক্ষা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব। বাঙালীরা আজ বিশ্বনাগরিক হতে গিয়ে নিঃস্বনাগরিকে পরিণত হয়েছে। একই পরিস্থিতি হয়েছিল কাশ্মীরে, কাশ্মীরের হিন্দুরা কাশ্মীরিয়ৎ-র ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়েছিল আর সেটারই পরিণতিতে তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে আজ উদ্বাস্তুর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দিল্লী কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি।

যে দিল্লী ঘরের কাছে কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি তারা সুদূর বাংলায় হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে, এটা নেহাতই কষ্টকল্পনা। NRC কে হাতিয়ার করে আসামকে যেভাবে হিন্দু শূন্য করার পরিকল্পনা চলছে, এরপর সেটা পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হতে পারে। কলমের এক খোঁচায় যেভাবে আসামের ৩০ লক্ষ হিন্দুকে অবৈধ নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ত কিছুদিন পরে এই রাজ্যেও ঘটবে।

এমতাবস্থায়, বাংলা ও বাঙালীকে রক্ষার দায় শুধুমাত্র বাঙালীদের। অন্যরাজ্যের লোকেরা আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারেন কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি রক্ষার দায় সম্পূর্ণভাবে আমাদের। ১৯৪৭ সালে যে দেশ ভাগ হয়েছিল তখন বাঙালীর থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়নি। মানচিত্রের উপর দাগ কেটে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল ভারতমাতাকে। আজ আবার সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে যার পরিণতিতে আরেকটা দেশভাগ অনিবার্য হয়ে উঠছে।

কিন্তু ১৯৪৭-এ আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেভাবে বিনাযুদ্ধে দেশমায়ের বিভাজন মেনে নিয়েছিলেন, এবার আর সেটা না হতে দিতে সিংহবাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলা তথা ভারতের একতা ও অখন্ডতা রক্ষার যে কাজে আমরা ব্রতী হয়েছি সেটার সাফল্য আমাদের প্রজন্মে নাই আসতে পারে কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের এই প্রতিরোধের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হবে যাতে এটা ভবিষ্যতে মশালে পরিণত হতে পারে আর প্রয়োজনে দাবানলের সৃষ্টি করতে পারে। ১৪০০ বছরের লড়াই এক প্রজন্মে শেষ হবেনা কিন্তু অগ্নিশিখাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে যাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আগুনের অভাবে কাঙ্খিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়।

শিকড়

হ্যাঁ, ওদেরও ইচ্ছে করে আমাদের সাথে মিলেমিশে মায়ের পূজো করতে, অঞ্জলি দিতে, বাজি ফাটাতে। আর করবেনাই বা কেন, কয়েক প্রজন্ম আগে তো ওরা আমাদেরই একজন ছিল। আজ নাহয় বিদেশী আরবী শক্তির প্রভাবে ওরা আলাদা হয়ে গেছে, কিন্তু তারফলে তো আর শিকড়ের টান ভুলে যেতে পারেনা।

কালো বোরখার আড়ালে নিজের সত্ত্বাকে হারিয়ে ফেলিস না। তিন সতীন নিয়ে সংসার করার জন্যে বা ফি বছর বাচ্চা পয়দা করার জন্যে তোর জন্ম হয়নি। আর এমন বাচ্চা পয়দা করেই বা লাভ কি যাকে কিছুদিন পরেই তোকে জিহাদের জন্যে বলি দিয়ে দিতে হবে? অসভ্য আরবী সংস্কৃতির অনুসরণ করতে গিয়ে নিজেই নিজের নাড়িকাটা সন্তানের মৃত্যু পরোয়ানায় সই করতে পারবি তো?

ফিরে আয় বোন, নিজেদের শিকড়ে ফিরে আয় আর এই জগতের সব আনন্দ প্রানভরে উপভোগ কর। পড়াশুনা কর, খেলাধুলা কর, নিজের ইচ্ছায় প্রেম কর। জীবনটা তো তোর নিজের, এটাকে সারাজীবন কালো বস্তায় ভরে নিজেকে বঞ্চিত করিসনা। আয়, আমরা সবাই মিলে মা কালীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করি আর বর্বর আরবীয় সংস্কৃতি থেকে তোদের মুক্তির আশীর্বাদ কামনা করি।


সঙ্ঘী আর বামপন্থী

ভারতে, সঙ্ঘী আর কম্যুনিস্ট - উভয়ের কাছেই দুনিয়াটা দ্বিমাত্রিক। সঙ্ঘীদের কাছে "মছলিখোর বাংগালী" সহী হিন্দু নয় আর ঠিক একইভাবে, কম্যুনিস্টদের কাছে, ভারতমাতার জয়ধ্বনি দেয়া বাঙালীরা আসল বাঙালী নয়।

এই কারণেই কিছু অমর্ত্য সেন বা সাগরিকা ঘোষের মত বাঙালীর দেশ বিরোধী কার্যকলাপের জন্যে সঙ্ঘীরা বাঙালী সমাজকে কাঠগড়ায় তুলতে পারে কিন্তু তিস্তা শীতলবাড় বা হেমন্ত কারকাড়ের জন্যে তারা সম্পূর্ন মারাঠা জাতিকে নিয়ে কদর্য মন্তব্য করেনা। আসলে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে সঙ্ঘীদের রাজনৈতিক অসাফল্য তাদের এই দুই জাতির বিরুদ্ধে আক্রোশের মূল কারণ।

উল্টোদিকে কম্যুনিস্টরা, যারা ভেনেজুয়েলাতে বৃষ্টি হলে কলকাতাতে ছাতা খুলে ঘোরে বা নিকারাগুয়ায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উত্থানে পশ্চিমবঙ্গে বনধ ডাকে তারা কিন্তু কাশ্মীরে হিন্দু পন্ডিতরা জেহাদি অত্যাচারের কারণে গৃহচ্যুত হলে কোন প্রতিবাদ করেনা কারণ তারা বাঙালী নয়। ঘরের পাশে বাংলাদেশে অসহায় হিন্দু বাঙালীদের ক্রমাগত রাষ্ট্রীয় আক্রমণেও কম্যুনিস্টদের কোন বনধ ডাকতে দেখা যায়না। হয়ত নিকারাগুয়া বা কিউবার থেকে বাংলাদেশের হিন্দুরা কম বাঙালী।

কিন্তু সৌভ্যাগ্যের বিষয় হল যে এই দুই মতাদর্শের বাইরেও হিন্দু বাঙালীর অস্তিত্ব আছে যারা মছলিও খায় আবার বজ্রনির্ঘোষ কন্ঠে "ভারত মাতা কি জয়" বলে জয়ধ্বনিও দেয়। যাদের কাছে শুধুমাত্র "জয় শ্রী রাম" বলাই হিন্দুত্বের পরিচায়ক নয়, "জয় মা কালী" হুঙ্কারও তাদের দেহে অ্যাড্রেনালিনের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে। যাদের কাছে হিন্দুত্ব আর বাঙালিত্ব বিপ্রতীপ নয়, সমানুপাতিক ও পরিপূরক।