Saturday, November 10, 2018

সংকল্প

যে জাতির অর্থও নেই বা ক্ষত্রিয় শক্তি নেই তাদের পক্ষে অস্তিত্ব রক্ষা শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব। বাঙালীরা আজ বিশ্বনাগরিক হতে গিয়ে নিঃস্বনাগরিকে পরিণত হয়েছে। একই পরিস্থিতি হয়েছিল কাশ্মীরে, কাশ্মীরের হিন্দুরা কাশ্মীরিয়ৎ-র ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের আত্মপরিচয় বিস্মৃত হয়েছিল আর সেটারই পরিণতিতে তাদের মাতৃভূমি ছেড়ে আজ উদ্বাস্তুর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। দিল্লী কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি।

যে দিল্লী ঘরের কাছে কাশ্মীরের হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারেনি তারা সুদূর বাংলায় হিন্দুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করবে, এটা নেহাতই কষ্টকল্পনা। NRC কে হাতিয়ার করে আসামকে যেভাবে হিন্দু শূন্য করার পরিকল্পনা চলছে, এরপর সেটা পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হতে পারে। কলমের এক খোঁচায় যেভাবে আসামের ৩০ লক্ষ হিন্দুকে অবৈধ নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়ত কিছুদিন পরে এই রাজ্যেও ঘটবে।

এমতাবস্থায়, বাংলা ও বাঙালীকে রক্ষার দায় শুধুমাত্র বাঙালীদের। অন্যরাজ্যের লোকেরা আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাতে পারেন কিন্তু নিজেদের অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি রক্ষার দায় সম্পূর্ণভাবে আমাদের। ১৯৪৭ সালে যে দেশ ভাগ হয়েছিল তখন বাঙালীর থেকে মতামত গ্রহণ করা হয়নি। মানচিত্রের উপর দাগ কেটে ভাগ করে দেয়া হয়েছিল ভারতমাতাকে। আজ আবার সেই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে যার পরিণতিতে আরেকটা দেশভাগ অনিবার্য হয়ে উঠছে।

কিন্তু ১৯৪৭-এ আমাদের পূর্বপুরুষেরা যেভাবে বিনাযুদ্ধে দেশমায়ের বিভাজন মেনে নিয়েছিলেন, এবার আর সেটা না হতে দিতে সিংহবাহিনী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বাংলা তথা ভারতের একতা ও অখন্ডতা রক্ষার যে কাজে আমরা ব্রতী হয়েছি সেটার সাফল্য আমাদের প্রজন্মে নাই আসতে পারে কিন্তু ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে আমাদের এই প্রতিরোধের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখতে হবে যাতে এটা ভবিষ্যতে মশালে পরিণত হতে পারে আর প্রয়োজনে দাবানলের সৃষ্টি করতে পারে। ১৪০০ বছরের লড়াই এক প্রজন্মে শেষ হবেনা কিন্তু অগ্নিশিখাকে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে যাতে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম আগুনের অভাবে কাঙ্খিত লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত না হয়।

No comments:

Post a Comment