Thursday, November 28, 2019

জেহাদি আগ্রাসনের প্রতিরোধ

জেহাদি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে, হিন্দুদেরও মুসলমানদের অনুকরণ করা জরুরী নয়। প্রত্যেকটা জাতির মানসিকতা, অভ্যাস, গঠন আলাদা। এক জাতির কাঠামো, আরেকজনের উপর বসিয়ে দিলে সেটা খাপ খায়না। যারা ভাবেন যে হিন্দুরা গন্ডা গন্ডা বাচ্চা প্রসব করলে জেহাদি প্রতিরোধ গড়ে উঠবে, আমি তাদের সাথে সহমত নই। যারা মুসলমানদের কাছে অত্যাচারিত হিন্দুরা কেন তাদের অত্যাচার নিয়ে সোচ্চার হননা বলে প্রশ্ন তোলেন, আমি তাদের প্রতি করুণা প্রকাশ করি।

আচ্ছা, বলুন তো, ভারত আর পাকিস্তানের লড়াই নিয়ে কত দিবস, কত সিনেমা তৈরী হয়েছে কিন্তু ভারত আর চীনের যুদ্ধ নিয়ে ক'টা দিবস বা ক'টা সিনেমা হয়েছে? না, ব্যর্থতাকে কেউ সেলিব্রেট করেনা। এই কয়েকদিন আগে, ডোকলাম নিয়ে চীনের সাথে যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, সেটার সমাধানেরও কোন দিবস পালন করা হয় কি? না, সমঝোতার মাধ্যমে লব্ধ বিষয়ে উল্লাস করা যায়না। এই কারণেই মুসলমানদের কাছে অত্যাচারিত হিন্দুরা তাদের অত্যাচার নিয়ে নীরব। পরাজয়ের কথা বুক ফুলিয়ে বলা যায়না।

একইভাবে, যারা মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে রোখার জন্যে হিন্দুদেরও গন্ডা গন্ডা বাচ্চা নিতে উৎসাহ দেন, তাদের সেই মানসিকতাকেও আমার অন্ধ অনুকরণ ছাড়া আর কিছু মনে হয়না। ভারতবর্ষ মুসলমানদের নয়, হিন্দুদের। মুসলমানরা এদেশে এসেছিল আক্রমণকারী হিসাবে, লুট করতে। তাই এই দেশের প্রতি তাদের কোন মমত্ব নেই। কিন্তু হিন্দুদের সেটা আছে। ভারতের বর্তমান জনসংখ্যা যেখানে ইতিমধ্যেই ১৩০ কোটি পার হয়ে গেছে আর রিসোর্স সীমিত - সেখানে, নেতাদের খিদে মেটানোর পর, নিয়ন্ত্রণহীন জনসংখ্যার প্রয়োজন কতটা মেটানো সম্ভব হবে?

ইসলামি আগ্রাসনের সামনে হিন্দুদের ব্যাকফুটে থাকার একমাত্র কারণ হল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হিন্দুরা ইসলামকে বিপদ বলে মনে করেনা। যেখানে হিন্দুদের সংখ্যা বেশী, সেখানে তারা মুসলমানদের ত্বাকিয়ার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে থাকে আর এইভাবে আস্তে আস্তে যখন দুই পক্ষই সমান সমান অবস্থায় আসে, তখন তারা আপোষ করা শুরু করে আর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলেই, অনিবার্য পরিণতি হিসাবে এলাকা ত্যাগ করে। এই প্রবণতা দিনের পর দিন, এলাকার পর এলাকায় ঘটে চলেছে কারণ হেরে যাওয়ার গ্লানি সবাই লুকাতে চায়।

এমতাবস্থায় যারা ভাবছেন যে শুধু সমাজের তথাকথিত নিম্নবর্গের মাধ্যমে এই আগ্রাসনকে প্রতিহত করা যাবে, তাঁরা, আমার মতে, বাস্তব সম্পর্কে অবহিত নন। ইসলামিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই মোটেই একমুখী নয় যে কুরুক্ষেত্রের মত এসপারওসপার হয়ে যাবে। এই লড়াই যতটা মাটিতে হবে, ঠিক ততটাই হবে বৌদ্ধিক জগতে। এই লড়াইয়ে রাজনৈতিক দলগুলি সহ তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রশাসনকে - নিজেদের স্বপক্ষে আনতে না পারলেও অন্তত নিস্ক্রিয় রাখতে হবে - যেটা ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময়, মোদী অনেকাংশেই করেছিলেন। আজ্ঞে হ্যাঁ, গুজরাট দাঙ্গার সময়, মোদী মোটেই গোধরাতে রেলের কামরা জ্বালিয়ে করসেবকদের পুড়িয়ে মারা এবং সেটাতে উল্লাস প্রকাশ করা জেহাদীদের উপর আক্রমণ করেননি, সেই কাজ গুজরাটের হিন্দুরাই করেছিল। মোদী শুধু কিছু সময়ের জন্যে প্রশাসনকে নিস্ক্রিয় করে রেখেছিলেন যাতে বিচারের সাম্যতা বজায় থাকে।

ইসলামিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্যে সমাজের 'হোয়াইট কলার'দের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা অনিবার্য। যারা এই সত্যকে অস্বীকার করে, শুধু তথাকথিত নিম্নবর্গের দ্বারা এই কাজ করতে চাইছেন, তাদের সাফল্য নিয়ে আমার সংশয় আছে। সমাজ রক্ষার, ভবিষ্যৎ রক্ষার দায় যে গোটা সমাজের, এই বোধ সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মধ্যেই আসতে হবে। হিন্দুদের একজোট হওয়ার জন্যে ধর্ম ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। তাই সমাজ রক্ষার এই কাজ যে হিন্দুদের ধার্মিক কর্তব্য, এই উপলব্ধি হিন্দুদের মধ্যে আসা দরকার।

Thursday, November 21, 2019

মমতার NRC বিরোধ

আচ্ছা, NRC তে "ধর্মীয় ভেদাভেদ" হচ্ছে বলে দাবী করা মমতা ব্যানার্জীকে কখনও বলতে শুনেছেন যে এক দেশে হিন্দু ও মুসলমানদের জন্যে আলাদা দেওয়ানী আইন থাকার তিনি বিরোধী? অথবা কখনও সংসদে শুধু অ্যাঙলো ইন্ডিয়ানদের মনোনীত প্রতিনিধি থাকা নিয়ে তিনি সরব হয়েছেন? ইমামভাতা চালু করার সময় এই "ধর্মীয় ভেদাভেদের" কথা তাঁর মাথায় ছিল? মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার অভিযোগে তারক বিশ্বাসকে অথবা বাদুরিয়া কান্ডে এক নাবালককে তাঁর প্রশাসনের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গ্রেপ্তার করার সময় অথচ একই অভিযোগে কবীর সুমনের ক্ষেত্রে নিস্ক্রিয় থাকার সময় এই "ধর্মীয় ভেদাভেদ" কোথায় ছিল?

আজ NRC নিয়ে অমিত শাহর ঘোষণার পর মমতা ব্যানার্জী যে "ধর্মীয় ভেদাভেদের" জিগির তুলছেন তার একমাত্র কারণ হল সম্ভাব্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে মুসলমানদের উল্লেখ না থাক। মমতা যদি সত্যিই সাম্যে বিশ্বাস করতেন তাহলে উপরোক্ত ঘটনাগুলিতে তাঁর আচরণ ভিন্ন হতো। আজ তিনি যে NRC-র বিরোধিতা করছেন সেটার একমাত্র কারণ তাঁর মুসলিম তোষণ। আজ মুখ বাঁচাতে তিনি আসামের বাঙালীদের দোহাই দিলেও বাস্তবে তিনি আসামের বাঙালীদের নিয়ে ততটাই নিরাসক্ত ছিলেন যতটা ছিল রাজ্যের অন্যান্য দল। আমি নিজে, আসাম NRC-র খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে থেকে রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিকে সেটা নিয়ে এবং সেটার পরিণতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অবগত করিয়েছি। নবান্ন এবং লালবাজারে গিয়ে, ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছি কিন্তু তখন মমতা ব্যানার্জীর প্রশাসন সেটায় কান দেননি। তাই আজ যখন মমতা ব্যানার্জী আসামের উল্লেখ করেন তখন সেটাকে আমার কুমীরের কান্নার চেয়ে বেশী কিছু মনে হয়না।

মমতা ব্যানার্জী যদি সত্যি এই রাজ্য তথা দেশের ভাল চাইতেন তাহলে তিনি NRC-র বিরোধিতার বদলে, সেটার পূর্বশর্ত হিসাবে ভারত-বাংলাদেশ ও ভারত-নেপাল সীমান্ত সিল করার দাবী জানাতেন। সীমান্ত খোলা রেখে, NRC-র মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণ ও বিতাড়ন করা, ফুটো পাত্রে জল ঢেলে ভরারই নামান্তর। কিন্তু তিনিও জানেন আর কেন্দ্রও জানে যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করা মানে শুধু এই দেশের কিছু রাজনীতিবিদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়াই নয়, একইসাথে বাংলাদেশও শুকিয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশ টিঁকেই আছে ভারত থেকে চোরাপথে যাওয়া সামগ্রীর উপরে। শুল্ক দিয়ে সব সামগ্রী কেনার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। আর বাংলাদেশে সেরকম পরিস্থিতি তৈরী হলে তার ফয়দা নেবে চীন। অল্পদিনের মধ্যেই চীনের উপনিবেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। সরকার এই ঝুঁকি নিতে পারেননা আর তাই সীমান্ত কিছুটা অরক্ষিতই থাকবে।

তবে এতকিছুর পরেও আমার ধারণা যে মোদী সরকার যদি হিন্দু শরণার্থীদের স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত রাখার কোন আইন সংসদে আনেন আর সেটা পাশ করানোর দায় একান্তই মমতার দলের উপর বর্তায়, সেক্ষেত্রে মমতা সব বিকল্প খোলা রাখবেন। এমতাবস্থায়, আগামীকাল ইডেনে খেলা দেখার পর, মমতার সাথে শেখ হাসিনার বৈঠকে, তিস্তার জল নিয়ে কি সিদ্ধান্ত হয়, সেদিকে নজর থাকবে। মনমোহনের শাসনকাল থেকে তিস্তা জল চুক্তিকে ঠেকিয়ে রাখা মমতা যদি, দিল্লীতে মোদীর সাথে হওয়া বৈঠকের পর, এখন চুক্তিতে রাজী হন আর বিনিময়ে আত্রেয়ীর জল নিয়ে কোন আশ্বাস লাভ করেন তাহলে বুঝতে হবে যে খেলা অনেক গভীরে।

Tuesday, November 19, 2019

মোদী সরকার - সেকাল ও একাল

সাল ২০০৮, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্যে ৭৫% বৃত্তি ঘোষণা করলেন মনমোহন সিং-এর নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার। ক্ষোভে ফেটে পড়লেন গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী, নরেন্দ্র মোদী। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে একটা বিশেষ সম্প্রদায়ের তোষণের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন হিন্দু হৃদয় সম্রাট। কেন্দ্রের এই তোষণমূলক সিদ্ধান্ত গুজরাটে চলবে না, সিদ্ধান্ত নিলেন মোদী।

কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত রাজ্য সরকার না মানায়, আদম চাকি নামে ভুজের এক কংগ্রেসি কর্মী গুজরাট হাইকোর্টে দায়ের করলেন জন স্বার্থ মামলা। গুজরাটের তৎকালীন মোদী সরকার, কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক এবং জনগণের মধ্যে, ধর্মের ভিত্তিতে, বিভেদ করার চক্রান্ত বলে, সেই জন স্বার্থ মামলার বিরোধিতা করেন।

গুজরাট হাইকোর্টের দু'টি ডিভিশন বেঞ্চ সেই মামলায় দুইরকম রায় দেন। এবং ২০১৩ সালে ৫ জন বিচারক দ্বারা গঠিত সাংবিধানিক বেঞ্চ রায় দেন যে কেন্দ্রের সেই সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক ধারাকে লঙ্ঘন করেনি। গুজরাট সরকার হাইকোর্টের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টে।

তারপর ৬ বছরে সবরমতী দিয়ে অনেক জল বয়ে গেছে। গুজরাটের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সেই মামলা সুপ্রিম কোর্টে ঝুলে ছিল। অবশেষে গত ১৭ই অক্টোবর, সুপ্রিম কোর্ট সেই মামলাকে ভিত্তিহীন বলে খারিজ করে দেন কারণ কেন্দ্রের মোদী সরকার ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘুদের প্রদেয় বৃত্তির পরিমান ৭৫% থেকে বাড়িয়ে ১০০% করে দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে, কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার দ্বারা সংখ্যালঘুদের জন্যে ৭৫% বৃত্তিকে অসাংবিধানিক এবং জনগণের মধ্যে, ধর্মের ভিত্তিতে, বিভেদ করার চক্রান্ত বলে অবিহিত করা মোদী নিজে প্রধানমন্ত্রী হয়ে সেটা ১০০% করে দিয়েছেন। এখন অবশ্য সেটা আর অসাংবিধানিক এবং জনগণের মধ্যে, ধর্মের ভিত্তিতে, বিভেদ করার চক্রান্ত নয়, বরং 'সবকা সাথ, সবকা বিশ্বাসের' অঙ্গ।

আগেই বলেছিলাম যে হিন্দু ছেলেরা সুন্নত আর মেয়েরা খৎনা করিয়ে নিন, NRC থেকে বৃত্তি - সবকিছুতেই বাড়তি অধিকার পেয়ে যাবেন।

https://timesofindia.indiatimes.com/india/centre-to-fully-fund-minority-scholarships/articleshow/71860501.cms

রামজন্মভূমি মামলা

হিন্দুত্ববাদীরা আমাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে আমি উল্লসিত হতে পারছিনা। যারা বলছেন যে এই রায়ের মাধ্যমে, বিভক্ত হিন্দুজাতির আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলো - আমি তাদের সাথে সহমত নই কারণ আদালতের রায় কখনই কোন জাতির আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা। আদালত মানে শুধু তথ্য, প্রমাণ আর আইনের পর্যালোচনা, সেখানে কোন জাতির আদর্শ প্রতিষ্ঠার যেটা মূল শর্ত হল - স্বাভিমান - সেটা বিবেচিত হয়না।

আর সেই কারণেই আদালত অতি সহজে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে "unlawful destruction" বলে অবিহিত করতে পারেন। আদালতের রায়ে উল্লসিত হিন্দুত্ববাদীরা এটা স্বীকার করে নিলেও আমি স্বীকার করিনা। আমি বিশ্বাস করি যে জাতীয় পরিচয়ের উপর কলঙ্ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত যেকোন চিহ্নকে ধ্বংস করার অধিকার সেই জাতির আছে। আর সেই কারণেই বার্লিন প্রাচীর ভাঙা জার্মানদের কাছে unlawful নয়, গর্বের প্রতীক। কিন্তু আদালত আদর্শের বদলে আইন নিয়ে বেশী আগ্রহী। তাই বাবরি মসজিদের মত কলঙ্ক মুছে দেয়ার ঘটনা তার কাছে বেআইনি। যেখানে আইন আর আদর্শ - একে অপরের পরিপূরক না হয়ে, পরস্পরবিরোধী হয়ে যায়, সেখানে আদালতের রায়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়না।

আজকে আদালতের রায় পক্ষে গেছে বলে যারা এটাকে হিন্দুত্ববাদের জয় ভাবছেন তারা বোধহয় ভুলে গেছেন যে বছর খানেক আগে, এই আদালতই সবরীমালা মন্দির নিয়ে কি রায় দিয়েছিলেন, শনি-সিংনাপুর নিয়ে কি রায় দিয়েছিলেন। আদালতের রায়ে আদর্শ খুঁজে পাওয়া হিন্দুত্ববাদীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়ন করার ক্ষেত্রেই সেই আদালতের রায়ের সাথে একমত তো? বাস্তব হল যে হিন্দুরা এই লড়াইটা তখনই হেরে গেছে যখন তারা তাদের বিশ্বাস ও আদর্শের সার্টিফিকেট যোগার করার জন্যে নিজেদের উদ্যোগের উপর ভরসা না রেখে, আদালতের মুখাপেক্ষী হয়ে গেছেন।

অথচ শুরুতে ব্যাপারটা মোটেই সেরকম ছিলনা। এই রাম মন্দির বানানোর জন্যে কলকাতার কোঠারি ভাইদের (রাম ও শরদ) মত বহু দেশভক্ত প্রাণ দিয়েছেন। করসেবা করার জন্যে, হাজার বাধাবিঘ্ন পেড়িয়ে বহু হিন্দু অযোধ্যায় গেছেন। "ইয়েহ তো পেহলি ঝাঁকি হ্যায়, মথুরা-কাশী বাকি হ্যায়" স্লোগানে মুখরিত হয়েছে সরযু নদীর পার। কিন্তু এরপরই বদলাতে থাকে আন্দোলনের অভিমুখ। সামাজিক পালাবদলের মুখ হিসাবে শুরু হওয়া রাম মন্দির আন্দোলন ক্রমেই পরিণত হয় রাজনৈতিক আন্দোলনে। আর তাই হিন্দুজাতির সত্যিকারের আদর্শ প্রতিষ্ঠা হওয়ার দিন আজ পরিগণিত হয় বেআইনি কাজ হিসাবে।

গতকালই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে রাম মন্দির রায়ের পর, তারা "আপাতত" (এখানে "আপাতত" মানে যতদিন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আছে পড়ুন।) কাশী আর মথুরা নিয়ে কোন আন্দোলনে যাবেননা। কারণটাও খুব স্বাভাবিক, এখন আন্দোলনে গেলে সঙ্ঘ পরিবারকে প্রশাসনের প্রধান হিসাবে, বিজেপির সাথে সংঘাতে যেতে হবে আর সেটা গোটা পরিবারের কখনোই কাম্য নয়। তাই "আপাতত" এই বিরতি। কেন্দ্রে ও রাজ্যের বিজেপি সরকার যখন বিদায় নেবে, তখন আবার কাশী বা মথুরার পুনরুদ্ধার ইস্যু হতে পারে, "আপাতত" নয়।

আগেকার দিনে, নিজেদের সমাজের উচ্চবর্ণ হিসাবে দাবী করে, যেভাবে একশ্রেণীর ব্রাহ্মণ নিদান হাঁকতো অবিকল সেই ধারায় আজ হিন্দুদের কোন আন্দোলনে, কখন যাওয়া উচিত, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে, সেটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সঙ্ঘ পরিবার আর সেটাকেই হিন্দুদের বিজয় বলে মনে করছেন হিন্দুত্ববাদীরা। তাই ২.৭৭ একর জমিতে, মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলেও কেন তারা মসজিদ গড়ার জন্যে, সেই অযোধ্যাতেই প্রায় দ্বিগুণ পরিমান জমি পাবে, কেন একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সরকার সেই জমি অধিগ্রহণ করে দেবে, কেন সরকারের অধিগ্রহণ করা জমিতে তৈরী মসজিদে মেয়েদের প্রবেশাধিকার থাকবেনা আর সেটা সংবিধানের ১৫ নং ধারায়, সাম্যের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কিনা - এইসব প্রশ্ন তোলার লোক নেই। রাম মন্দির নিয়ে, তথাকথিত, হিন্দুত্ববাদীদের বর্তমান মানসিকতার সাথে দেশভাগের সময় কংগ্রেস নেতৃত্বের মানসিকতার যথেষ্ট মিল রয়েছে। কংগ্রেসের তৎকালীন নেতারা যেমন ভাবতেন যে বহুদিন তো আন্দোলন করলাম, জেল গেলাম, এবার তো একটু ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করি, বর্তমানে হিন্দুত্ববাদীদের নেতৃত্বও একই মানসিকতার শিকার। ফলে আদালতের রায়ে জয় আর আদালতের রায়েই আদর্শ প্রতিষ্ঠা।

জয় শ্রী রাম।

শবরীমালা ও আদালত

ভারতের সর্বোচ্চ বিচারালয় দ্বারা, শবরীমালা মন্দিরে হিন্দু মহিলাদের প্রবেশাধিকারের সাথে, মসজিদ বা দরগাতে মুসলিম মহিলাদের প্রবেশাধিকার বা পারসিক মহিলাদের তাদের উপাস্য সূর্য মন্দিরে প্রবেশাধিকার বা মুসলিম মহিলাদের খৎনা করার পদ্ধতির যৌক্তিকতা বিচার যুক্ত করার সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র মূল বিষয়ের অতিসরলীকরণ নয়, একইসাথে বিচারের নামে প্রহসন।

উপরোক্ত বাকি উদাহরণগুলির ক্ষেত্রে, লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন হলেও শবরীমালার ক্ষেত্রে সেটা হয়না। শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদেরও প্রবেশ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। প্রবেশাধিকার নেই শুধু একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে অবস্থানকারী, ঋতুমতী মহিলাদের। এটার কারণ শবরীমালার ঐ বিশেষ মন্দিরে, পূজ্য দেবতার সামাজিক অবস্থান। কৌমার্য পালনকারী দেবতার সামনে, ঋতুমতী মহিলাদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিভাজন নয়, সংযম।

আর হিন্দুরা যেহেতু তাদের উপাস্য দেবতাকেও নিজেদের পরিবারের অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করেন তাই সেই দেবতার সুখসাচ্ছন্দ্যের খেয়াল রাখা হিন্দুদের কর্তব্য। বহু বাড়িতেই গৃহদেবতাকে তিন বেলা ভোজন উৎসর্গ করা হয়, রাত্রে তার শয়নের জন্যে বিছানার ব্যবস্থা করা হয়, আর এই সবই হয় সেই মূর্তির মধ্যে হিন্দুরা পরিবারের এক সদস্যকে দেখতে পায় বলে। হিন্দুরা মূর্তিপূজক কারণ মূর্তির মধ্যে সে প্রাণের অবস্থান খুঁজে পায়। দুর্গাপূজার সময় আমরা মাটির মূর্তিকে পূজা করিনা, তাঁর মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, চক্ষুদান করে, তাঁকে মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী করে তুলি। আবার বিসর্জনের আগে, ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে তাঁকে পুনরায় মৃন্ময়ী করে, জলে বিসর্জন দেয়া হয়।

এই সরল সত্যটা যদি সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিরা উপলব্ধি করতে না পারেন আর শবরীমালার সাথে অন্য ঘটনাগুলোর একযোগে বিচার করেন তাহলে সেটা প্রহসন হয়ে দাঁড়াবে। আইন যদি ন্যায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন।

ইলেক্টরাল বন্ড - দ্বিতীয় পর্ব

২০১৭ সালের বাজেটে ইলেক্টরাল বন্ড প্রস্তাব করার মাত্র চার দিন আগে, ২৮শে জানুয়ারি, মহামান্য কেন্দ্র সরকার উপলব্ধি করেন যে ব্যাঙ্কের দ্বারা বিক্রি হওয়া বন্ডের মাধ্যমে বেনামী অনুদান গ্রহণ করতে হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আইনে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন এবং তারপরেই অর্থমন্ত্রকের থেকে শনিবার একটা নোট পাঠানো হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়াতে। ঐ দিনই বেলা ১-৪৫ মিনিটে পাঁচ লাইনের একটা ইমেইল পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কে যেখানে তাদেরকে "খুব তাড়াতাড়ি জবাব" দিতে বলা হয়।

৩০শে জানুয়ারি, সোমবার, ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে জবাব দেয়া হয় আর সেখানে বলা হয় যে ইলেক্টরাল বন্ড এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আইনে পরিবর্তন খুবই খারাপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। তারা বলেন যে এই সিদ্ধান্তের ফলে অর্থ পাচারের (money laundering) পরিমান বাড়বে এবং ব্যাঙ্ক দ্বারা জারি করা নোটের গুরুত্ব হ্রাস পাবে যা ব্যাঙ্কের কার্যাবলীর মূল ধারার পরিপন্থী। নিজেদের মন্তব্যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক জানায় যে প্রস্তাবিত ইলেক্টরাল বন্ড বাস্তবে 'বিয়ারার বন্ডে' পরিণত হবে এবং অস্বচ্ছ ব্যবস্থার জন্ম দেবে যেখানে মালিকানা চিহ্নিত করা মোটেই সহজ হবেনা। ব্যাঙ্ক বলে, "Bearer instruments have the potential to become currency and if seized in sizeable quantities can undermine faith in banknotes issued by RBI. The bonds are bearer bonds and are transferable by delivery. Hence who finally and actually contributes the bond to the political party will not be known”।

সাধারণ অবস্থায়, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এরকম কড়া উত্তর সরকারকে বিষয়টা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করতো কিন্তু এক্ষেত্রে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা ইতিমধ্যেই সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে মনস্থির করে নিয়েছিলেন আর তাই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বক্তব্য ঐ দিনই খারিজ করে দেন রেভেনিউ সেক্রেটারি, হাসমুখ আদিয়া। তাঁর নোটে তিনি বলেন যে, "It apppears to me that the RBI has not understood the proposed mechanism of having pre-paid instruments for the purpose of keeping the identity of the donor secret, while ensuring the donation is made only out of fully tax paid money of a person" এবং সেটা পাঠিয়ে দেন আর্থিক বিষয়ক দপ্তরের সেক্রেটারি, তপন রায় এবং অর্থমন্ত্রী, অরুণ জেটলীকে। যদিও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক চিঠি পাওয়ার পর, তাদের কর্মদিবসের প্রথম দিনেই সেটার উত্তর দেন তবুও হাসমুখ আদিয়া তার নোটে লেখেন যে, "This advice has come quite late at a time when the Finance Bill is already printed. We may, therefore, go ahead with our proposal"। এরপর ঐ দিনই নোটে সই করেন তপন রায় এবং অরুণ জেটলী।



এই সংশোধনী পাশ হওয়ার আগে, দেশের কর্পোরেট গ্রুপগুলিকে, তাদের বার্ষিক হিসাবে, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলকে দেয়া অনুদানের হিসাব দেখাতে হত এবং সেই অনুদান কখনোই তাদের বিগত তিন বছরের গড় মুনাফার ৭.৫ শতাংশের বেশী হতে পারতনা। তাছাড়াও বিদেশী কোন কোম্পানিও ভারতের কোন রাজনৈতিক দলকে অনুদান দিতে পারতনা। কিন্তু মোদী সরকারের এই আইন পরিবর্তনের পর এখন দেশীয় কোম্পানি, বিদেশী কোম্পানি এমনকি বাস্তবে অস্তিত্ব বিহীন বেনামী কোম্পানিগুলোও যত ইচ্ছা বন্ড কিনতে পারে এবং তাদের পছন্দসই দলে অনুদান দিতে পারে। আগের পোস্টেই লিখেছি যে আর্থিক বিষয়ক দপ্তরের সেক্রেটারির নোটের ভিত্তিতে, এই বন্ডের ক্রেতা ও গ্রহিতার পরিচয় ব্যাঙ্ক গোপন রাখবে এবং রাজনৈতিক দলগুলিও সেই লেনদেনের কোন হিসাব রাখতে হবেনা।

কংগ্রেসের দুর্নীতির সাথে বিজেপির দুর্নীতির তফাৎ একটাই - কংগ্রেস দুর্নীতি করে আইন ভেঙে আর বিজেপি দুর্নীতিকে আইনানুগ করার জন্যে, আইনটাকেই বদলে নেয়।

ইলেক্টরাল বন্ড - প্রথম পর্ব

২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে, বিজেপি শুধু অনলাইন আর চেকের মাধ্যমে ৭০০ কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৫৬ কোটি টাকা, মানে অর্ধেকেরও বেশী, দিয়েছে টাটাদের নিয়ন্ত্রিত প্রোগ্রেসিভ ইলেকটোরাল ট্রাস্ট আর ৫৪.২৫ কোটি টাকা দিয়েছে প্রুডেন্ট ইলেকটোরাল ট্রাস্ট যা গঠিত হয়েছে ভারতী গ্রুপ, হিরো মোটোকর্প, ওরিয়েন্ট সিমেন্ট, জুবিল্যান্ট ফুডওয়ার্কস, ডিএলএফ, জেকে টায়ার সহ অন্যান্য সংস্থাদের নিয়ে।

এই টাকার অঙ্ক দেখে চমকাবেন না, এটা হিমশৈলের চুড়া মাত্র। এই অনুদানের মধ্যে নগদ আর ইলেকটোরাল বন্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানের কোন হিসাব নেই। এবার প্রশ্ন আসতেই পারে যে নগদ টাকার নাহয় হিসাব পাওয়া কঠিন, কিন্তু ইলেকটোরাল বন্ডের হিসাব নেই কেন? বিশেষত, ২০১৭ সালে এই বন্ড চালু করার সময়, তদানীন্তন অর্থমন্ত্রী, অরুণ জেটলী, সংসদে যে বক্তব্য রেখেছিলেন তার শিরোনাম ছিল "Transparency in Electoral Funding" এবং বক্তৃতার শেষে তিনি দাবী করেছিলেন যে "This reform will bring about greater transparency and accountability in political funding, while preventing future generation of black money"। এটাই যদি ঘটনা হয়ে থাকে তাহলে এই ইলেকটোরাল বন্ডের হিসাব ধরা হলনা কেন?

উত্তর জানতে হলে, জেটলীর এই ঘোষণার ঠিক চার মাস পরে, ২০১৭ সালের জুন মাসে, এই বন্ডের প্রয়োগ নিয়ে তদানীন্তন আর্থিক বিষয়ক মন্ত্রকের সেক্রেটারি, তপন রায়ের নোট পড়তে হবে যেখানে বলা হয়েছে "The information regarding purchaser and payee shall be kept secret by the issuer bank"। সেই নোটেই আরও বলা হয়েছে যে "These details would also be beyond the purview of RTI"। এখানেই শেষ নয়, নোটে বলা হয়েছে যে "Political parties would be exempted from keeping records of names and addresses of those who contributed through electoral bonds"। অর্থাৎ যে ইলেকটোরাল বন্ডকে কেন্দ্র সরকার দুর্নীতি ও কালো টাকার বিরুদ্ধে অস্ত্র বলে ঘোষণা করে, সংসদে পাশ করালেন, তাকেই চুপিসারে লেনদেন গোপন রাখার আইন হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে দিলেন।

সুপ্রিম কোর্টের নোটিশ পাওয়ার পরে, FCRA আইনে, রেট্রোসপেকটিভ হিসাবে পরিবর্তন এনে, জেটলী আগেই বিজেপি ও কংগ্রেসকে বিদেশী মূদ্রা সংক্রান্ত কেসে বাঁচিয়ে ছিলেন। তাঁর মস্তিস্ক প্রসূত নতুন আইডিয়া ছিল এই বন্ড। ইলেকটোরাল বন্ড চালু করা হলে সেটা দুর্নীতির সহায়ক হবে সেটা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া আগেই জানিয়েছিল। কিন্তু তাদের মতামতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, তৎকালীন রেভেনিউ সেক্রেটারি, হাসমুখ আদিয়ার নোটকে হাতিয়ার করে, কিভাবে সেই বিল পাশ করানো হল, সে সম্পর্কে পরে লিখবো।

https://www.bloombergquint.com/politics/bjp-declares-receiving-donations-over-rs-700-crore-in-fy-2018-19

মোদীর বঙ্গ নীতি

পশ্চিমবঙ্গ তথা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখে আমার মনে হয়না যে মোদী, ২০২১ সালের নির্বাচনে, মমতাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ইচ্ছুক বা প্রস্তুত। আর মোদীর সাথে দিল্লীতে শেষ বৈঠকের পর মমতাও সেটা বুঝে গেছেন।

কথাটা দলদাসদের কাছে অপ্রিয় হলেও, আমার মতে, বাস্তবে মমতার ক্ষমতায় থাকাই মোদীর কাছে সুবিধাজনক। এর অনেকগুলো কারণ আছে- ১) দেশের সব রাজ্যকে এক রঙে রাঙিয়ে তুললে সেটা বিদেশে ভারতের গণতন্ত্র সম্পর্কে মোটেই ভাল বিজ্ঞাপন হবেনা। ২) বাংলা আর কেরল হচ্ছে বিজেপির কাছে পাঞ্চিং ব্যাগের মত। এই দুই রাজ্যে হিন্দুদের উপর হওয়া অত্যাচার ভাঙিয়ে বিজেপির রাজনৈতিক লাভ। এই কারণেই উত্তর প্রদেশে কমলেশ তিওয়ারির মত হাইপ্রোফাইল হত্যা নিয়ে বিজেপির আইটি সেল নীরব থাকে আর জাঙ্গিপুর হত্যা নিয়ে সরব হয়। ৩) বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি এমন শোচনীয় পর্যায়ে পৌছে গেছে যে সেটার পুনরুদ্ধার স্বল্পমেয়াদে সম্ভব নয় অথচ বিজেপি ক্ষমতায় আসলে, জনগণের প্রত্যাশার দায়ভার তাদেরকে বহন করতে হবে। ৪) পশ্চিমবঙ্গে দলের মুখ হিসাবে যোগ্য নেতার অভাব। ৫) ক্ষমতা থেকে সরে গেলে তৃণমূল দলটাই বিলুপ্ত হয়ে যাবে আর তখন তাদের হৃত যায়গা পুনরুদ্ধার করবে সিপিএম। যে কোন দিনে, মোদীর কাছে, প্রতিপক্ষ হিসাবে, কম্যুনিস্টদের থেকে মমতা অনেক বেশী গ্রহণযোগ্য।

এই কারণে, এই রাজ্য থেকে লোকসভা নির্বাচন নিয়ে মোদী যতটা উদ্যোগী ছিলেন, যেহেতু সেটা সরাসরি তাঁর সরকারের ক্ষমতাকে প্রভাবিত করতো, বিধানসভা নিয়ে অতটা উদ্যোগী হবেননা। কিন্তু এরপরেও দুটো 'কিন্তু' রয়ে যায়। প্রথম 'কিন্তু' হলেন, অমিত শাহ। মোদী অমিত শাহর মতামতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন আর শাহ যদি রাজনৈতিক অঙ্ক কষে, পশ্চিমবঙ্গ জয়ে দলের লাভ দেখেন, তাহলে মোদী নিঃসন্দেহে তার পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। অমিত শাহর পরেই যে নামটা আসবে সেটা হলো রাজ্যসভা সাংসদ, স্বপন দাসগুপ্ত। দিল্লীতে মোদীর পড়শী এবং রাজনীতিতে নতুন চাণক্য স্বপন বাবুর মতামতও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করবে।

দ্বিতীয় 'কিন্তু' হল এই রাজ্যের জনগণের মনোভাব। ২০২১ এর নির্বাচন যদি অবাধ নির্বাচন হয়, তাহলে বিজেপি চাক বা নাই চাক, তৃণমূলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট বিজেপির বাক্সে গিয়ে, তাদেরকেই জয়মাল্য পরাতে পারে। সেক্ষেত্রে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বিকল্প পরিস্থিতি নিয়ে পুনরায় পর্যালোচনা করতে হবে।