Thursday, November 21, 2019

মমতার NRC বিরোধ

আচ্ছা, NRC তে "ধর্মীয় ভেদাভেদ" হচ্ছে বলে দাবী করা মমতা ব্যানার্জীকে কখনও বলতে শুনেছেন যে এক দেশে হিন্দু ও মুসলমানদের জন্যে আলাদা দেওয়ানী আইন থাকার তিনি বিরোধী? অথবা কখনও সংসদে শুধু অ্যাঙলো ইন্ডিয়ানদের মনোনীত প্রতিনিধি থাকা নিয়ে তিনি সরব হয়েছেন? ইমামভাতা চালু করার সময় এই "ধর্মীয় ভেদাভেদের" কথা তাঁর মাথায় ছিল? মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত করার অভিযোগে তারক বিশ্বাসকে অথবা বাদুরিয়া কান্ডে এক নাবালককে তাঁর প্রশাসনের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে গ্রেপ্তার করার সময় অথচ একই অভিযোগে কবীর সুমনের ক্ষেত্রে নিস্ক্রিয় থাকার সময় এই "ধর্মীয় ভেদাভেদ" কোথায় ছিল?

আজ NRC নিয়ে অমিত শাহর ঘোষণার পর মমতা ব্যানার্জী যে "ধর্মীয় ভেদাভেদের" জিগির তুলছেন তার একমাত্র কারণ হল সম্ভাব্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে মুসলমানদের উল্লেখ না থাক। মমতা যদি সত্যিই সাম্যে বিশ্বাস করতেন তাহলে উপরোক্ত ঘটনাগুলিতে তাঁর আচরণ ভিন্ন হতো। আজ তিনি যে NRC-র বিরোধিতা করছেন সেটার একমাত্র কারণ তাঁর মুসলিম তোষণ। আজ মুখ বাঁচাতে তিনি আসামের বাঙালীদের দোহাই দিলেও বাস্তবে তিনি আসামের বাঙালীদের নিয়ে ততটাই নিরাসক্ত ছিলেন যতটা ছিল রাজ্যের অন্যান্য দল। আমি নিজে, আসাম NRC-র খসড়া তালিকা প্রকাশের আগে থেকে রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তিকে সেটা নিয়ে এবং সেটার পরিণতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে অবগত করিয়েছি। নবান্ন এবং লালবাজারে গিয়ে, ব্যক্তিগতভাবেও জানিয়েছি কিন্তু তখন মমতা ব্যানার্জীর প্রশাসন সেটায় কান দেননি। তাই আজ যখন মমতা ব্যানার্জী আসামের উল্লেখ করেন তখন সেটাকে আমার কুমীরের কান্নার চেয়ে বেশী কিছু মনে হয়না।

মমতা ব্যানার্জী যদি সত্যি এই রাজ্য তথা দেশের ভাল চাইতেন তাহলে তিনি NRC-র বিরোধিতার বদলে, সেটার পূর্বশর্ত হিসাবে ভারত-বাংলাদেশ ও ভারত-নেপাল সীমান্ত সিল করার দাবী জানাতেন। সীমান্ত খোলা রেখে, NRC-র মাধ্যমে অনুপ্রবেশকারী চিহ্নিতকরণ ও বিতাড়ন করা, ফুটো পাত্রে জল ঢেলে ভরারই নামান্তর। কিন্তু তিনিও জানেন আর কেন্দ্রও জানে যে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সিল করা মানে শুধু এই দেশের কিছু রাজনীতিবিদের রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়াই নয়, একইসাথে বাংলাদেশও শুকিয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশ টিঁকেই আছে ভারত থেকে চোরাপথে যাওয়া সামগ্রীর উপরে। শুল্ক দিয়ে সব সামগ্রী কেনার ক্ষমতা বাংলাদেশের নেই। আর বাংলাদেশে সেরকম পরিস্থিতি তৈরী হলে তার ফয়দা নেবে চীন। অল্পদিনের মধ্যেই চীনের উপনিবেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। সরকার এই ঝুঁকি নিতে পারেননা আর তাই সীমান্ত কিছুটা অরক্ষিতই থাকবে।

তবে এতকিছুর পরেও আমার ধারণা যে মোদী সরকার যদি হিন্দু শরণার্থীদের স্বার্থ সম্পূর্ণভাবে সুরক্ষিত রাখার কোন আইন সংসদে আনেন আর সেটা পাশ করানোর দায় একান্তই মমতার দলের উপর বর্তায়, সেক্ষেত্রে মমতা সব বিকল্প খোলা রাখবেন। এমতাবস্থায়, আগামীকাল ইডেনে খেলা দেখার পর, মমতার সাথে শেখ হাসিনার বৈঠকে, তিস্তার জল নিয়ে কি সিদ্ধান্ত হয়, সেদিকে নজর থাকবে। মনমোহনের শাসনকাল থেকে তিস্তা জল চুক্তিকে ঠেকিয়ে রাখা মমতা যদি, দিল্লীতে মোদীর সাথে হওয়া বৈঠকের পর, এখন চুক্তিতে রাজী হন আর বিনিময়ে আত্রেয়ীর জল নিয়ে কোন আশ্বাস লাভ করেন তাহলে বুঝতে হবে যে খেলা অনেক গভীরে।

No comments:

Post a Comment