হিন্দুত্ববাদীরা আমাকে ক্ষমা করবেন কিন্তু অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আদেশে আমি উল্লসিত হতে পারছিনা। যারা বলছেন যে এই রায়ের মাধ্যমে, বিভক্ত হিন্দুজাতির আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হলো - আমি তাদের সাথে সহমত নই কারণ আদালতের রায় কখনই কোন জাতির আদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনা। আদালত মানে শুধু তথ্য, প্রমাণ আর আইনের পর্যালোচনা, সেখানে কোন জাতির আদর্শ প্রতিষ্ঠার যেটা মূল শর্ত হল - স্বাভিমান - সেটা বিবেচিত হয়না।
আর সেই কারণেই আদালত অতি সহজে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে "unlawful destruction" বলে অবিহিত করতে পারেন। আদালতের রায়ে উল্লসিত হিন্দুত্ববাদীরা এটা স্বীকার করে নিলেও আমি স্বীকার করিনা। আমি বিশ্বাস করি যে জাতীয় পরিচয়ের উপর কলঙ্ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত যেকোন চিহ্নকে ধ্বংস করার অধিকার সেই জাতির আছে। আর সেই কারণেই বার্লিন প্রাচীর ভাঙা জার্মানদের কাছে unlawful নয়, গর্বের প্রতীক। কিন্তু আদালত আদর্শের বদলে আইন নিয়ে বেশী আগ্রহী। তাই বাবরি মসজিদের মত কলঙ্ক মুছে দেয়ার ঘটনা তার কাছে বেআইনি। যেখানে আইন আর আদর্শ - একে অপরের পরিপূরক না হয়ে, পরস্পরবিরোধী হয়ে যায়, সেখানে আদালতের রায়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়না।
আজকে আদালতের রায় পক্ষে গেছে বলে যারা এটাকে হিন্দুত্ববাদের জয় ভাবছেন তারা বোধহয় ভুলে গেছেন যে বছর খানেক আগে, এই আদালতই সবরীমালা মন্দির নিয়ে কি রায় দিয়েছিলেন, শনি-সিংনাপুর নিয়ে কি রায় দিয়েছিলেন। আদালতের রায়ে আদর্শ খুঁজে পাওয়া হিন্দুত্ববাদীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়ন করার ক্ষেত্রেই সেই আদালতের রায়ের সাথে একমত তো? বাস্তব হল যে হিন্দুরা এই লড়াইটা তখনই হেরে গেছে যখন তারা তাদের বিশ্বাস ও আদর্শের সার্টিফিকেট যোগার করার জন্যে নিজেদের উদ্যোগের উপর ভরসা না রেখে, আদালতের মুখাপেক্ষী হয়ে গেছেন।
অথচ শুরুতে ব্যাপারটা মোটেই সেরকম ছিলনা। এই রাম মন্দির বানানোর জন্যে কলকাতার কোঠারি ভাইদের (রাম ও শরদ) মত বহু দেশভক্ত প্রাণ দিয়েছেন। করসেবা করার জন্যে, হাজার বাধাবিঘ্ন পেড়িয়ে বহু হিন্দু অযোধ্যায় গেছেন। "ইয়েহ তো পেহলি ঝাঁকি হ্যায়, মথুরা-কাশী বাকি হ্যায়" স্লোগানে মুখরিত হয়েছে সরযু নদীর পার। কিন্তু এরপরই বদলাতে থাকে আন্দোলনের অভিমুখ। সামাজিক পালাবদলের মুখ হিসাবে শুরু হওয়া রাম মন্দির আন্দোলন ক্রমেই পরিণত হয় রাজনৈতিক আন্দোলনে। আর তাই হিন্দুজাতির সত্যিকারের আদর্শ প্রতিষ্ঠা হওয়ার দিন আজ পরিগণিত হয় বেআইনি কাজ হিসাবে।
গতকালই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে রাম মন্দির রায়ের পর, তারা "আপাতত" (এখানে "আপাতত" মানে যতদিন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আছে পড়ুন।) কাশী আর মথুরা নিয়ে কোন আন্দোলনে যাবেননা। কারণটাও খুব স্বাভাবিক, এখন আন্দোলনে গেলে সঙ্ঘ পরিবারকে প্রশাসনের প্রধান হিসাবে, বিজেপির সাথে সংঘাতে যেতে হবে আর সেটা গোটা পরিবারের কখনোই কাম্য নয়। তাই "আপাতত" এই বিরতি। কেন্দ্রে ও রাজ্যের বিজেপি সরকার যখন বিদায় নেবে, তখন আবার কাশী বা মথুরার পুনরুদ্ধার ইস্যু হতে পারে, "আপাতত" নয়।
আগেকার দিনে, নিজেদের সমাজের উচ্চবর্ণ হিসাবে দাবী করে, যেভাবে একশ্রেণীর ব্রাহ্মণ নিদান হাঁকতো অবিকল সেই ধারায় আজ হিন্দুদের কোন আন্দোলনে, কখন যাওয়া উচিত, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে, সেটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সঙ্ঘ পরিবার আর সেটাকেই হিন্দুদের বিজয় বলে মনে করছেন হিন্দুত্ববাদীরা। তাই ২.৭৭ একর জমিতে, মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলেও কেন তারা মসজিদ গড়ার জন্যে, সেই অযোধ্যাতেই প্রায় দ্বিগুণ পরিমান জমি পাবে, কেন একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সরকার সেই জমি অধিগ্রহণ করে দেবে, কেন সরকারের অধিগ্রহণ করা জমিতে তৈরী মসজিদে মেয়েদের প্রবেশাধিকার থাকবেনা আর সেটা সংবিধানের ১৫ নং ধারায়, সাম্যের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কিনা - এইসব প্রশ্ন তোলার লোক নেই। রাম মন্দির নিয়ে, তথাকথিত, হিন্দুত্ববাদীদের বর্তমান মানসিকতার সাথে দেশভাগের সময় কংগ্রেস নেতৃত্বের মানসিকতার যথেষ্ট মিল রয়েছে। কংগ্রেসের তৎকালীন নেতারা যেমন ভাবতেন যে বহুদিন তো আন্দোলন করলাম, জেল গেলাম, এবার তো একটু ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করি, বর্তমানে হিন্দুত্ববাদীদের নেতৃত্বও একই মানসিকতার শিকার। ফলে আদালতের রায়ে জয় আর আদালতের রায়েই আদর্শ প্রতিষ্ঠা।
জয় শ্রী রাম।
আর সেই কারণেই আদালত অতি সহজে ১৯৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধ্বংসকে "unlawful destruction" বলে অবিহিত করতে পারেন। আদালতের রায়ে উল্লসিত হিন্দুত্ববাদীরা এটা স্বীকার করে নিলেও আমি স্বীকার করিনা। আমি বিশ্বাস করি যে জাতীয় পরিচয়ের উপর কলঙ্ক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত যেকোন চিহ্নকে ধ্বংস করার অধিকার সেই জাতির আছে। আর সেই কারণেই বার্লিন প্রাচীর ভাঙা জার্মানদের কাছে unlawful নয়, গর্বের প্রতীক। কিন্তু আদালত আদর্শের বদলে আইন নিয়ে বেশী আগ্রহী। তাই বাবরি মসজিদের মত কলঙ্ক মুছে দেয়ার ঘটনা তার কাছে বেআইনি। যেখানে আইন আর আদর্শ - একে অপরের পরিপূরক না হয়ে, পরস্পরবিরোধী হয়ে যায়, সেখানে আদালতের রায়ে আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয়না।
আজকে আদালতের রায় পক্ষে গেছে বলে যারা এটাকে হিন্দুত্ববাদের জয় ভাবছেন তারা বোধহয় ভুলে গেছেন যে বছর খানেক আগে, এই আদালতই সবরীমালা মন্দির নিয়ে কি রায় দিয়েছিলেন, শনি-সিংনাপুর নিয়ে কি রায় দিয়েছিলেন। আদালতের রায়ে আদর্শ খুঁজে পাওয়া হিন্দুত্ববাদীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিতাড়ন করার ক্ষেত্রেই সেই আদালতের রায়ের সাথে একমত তো? বাস্তব হল যে হিন্দুরা এই লড়াইটা তখনই হেরে গেছে যখন তারা তাদের বিশ্বাস ও আদর্শের সার্টিফিকেট যোগার করার জন্যে নিজেদের উদ্যোগের উপর ভরসা না রেখে, আদালতের মুখাপেক্ষী হয়ে গেছেন।
অথচ শুরুতে ব্যাপারটা মোটেই সেরকম ছিলনা। এই রাম মন্দির বানানোর জন্যে কলকাতার কোঠারি ভাইদের (রাম ও শরদ) মত বহু দেশভক্ত প্রাণ দিয়েছেন। করসেবা করার জন্যে, হাজার বাধাবিঘ্ন পেড়িয়ে বহু হিন্দু অযোধ্যায় গেছেন। "ইয়েহ তো পেহলি ঝাঁকি হ্যায়, মথুরা-কাশী বাকি হ্যায়" স্লোগানে মুখরিত হয়েছে সরযু নদীর পার। কিন্তু এরপরই বদলাতে থাকে আন্দোলনের অভিমুখ। সামাজিক পালাবদলের মুখ হিসাবে শুরু হওয়া রাম মন্দির আন্দোলন ক্রমেই পরিণত হয় রাজনৈতিক আন্দোলনে। আর তাই হিন্দুজাতির সত্যিকারের আদর্শ প্রতিষ্ঠা হওয়ার দিন আজ পরিগণিত হয় বেআইনি কাজ হিসাবে।
গতকালই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে রাম মন্দির রায়ের পর, তারা "আপাতত" (এখানে "আপাতত" মানে যতদিন বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আছে পড়ুন।) কাশী আর মথুরা নিয়ে কোন আন্দোলনে যাবেননা। কারণটাও খুব স্বাভাবিক, এখন আন্দোলনে গেলে সঙ্ঘ পরিবারকে প্রশাসনের প্রধান হিসাবে, বিজেপির সাথে সংঘাতে যেতে হবে আর সেটা গোটা পরিবারের কখনোই কাম্য নয়। তাই "আপাতত" এই বিরতি। কেন্দ্রে ও রাজ্যের বিজেপি সরকার যখন বিদায় নেবে, তখন আবার কাশী বা মথুরার পুনরুদ্ধার ইস্যু হতে পারে, "আপাতত" নয়।
আগেকার দিনে, নিজেদের সমাজের উচ্চবর্ণ হিসাবে দাবী করে, যেভাবে একশ্রেণীর ব্রাহ্মণ নিদান হাঁকতো অবিকল সেই ধারায় আজ হিন্দুদের কোন আন্দোলনে, কখন যাওয়া উচিত, নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ বিবেচনা করে, সেটার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সঙ্ঘ পরিবার আর সেটাকেই হিন্দুদের বিজয় বলে মনে করছেন হিন্দুত্ববাদীরা। তাই ২.৭৭ একর জমিতে, মুসলমানদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হলেও কেন তারা মসজিদ গড়ার জন্যে, সেই অযোধ্যাতেই প্রায় দ্বিগুণ পরিমান জমি পাবে, কেন একটা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের সরকার সেই জমি অধিগ্রহণ করে দেবে, কেন সরকারের অধিগ্রহণ করা জমিতে তৈরী মসজিদে মেয়েদের প্রবেশাধিকার থাকবেনা আর সেটা সংবিধানের ১৫ নং ধারায়, সাম্যের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী কিনা - এইসব প্রশ্ন তোলার লোক নেই। রাম মন্দির নিয়ে, তথাকথিত, হিন্দুত্ববাদীদের বর্তমান মানসিকতার সাথে দেশভাগের সময় কংগ্রেস নেতৃত্বের মানসিকতার যথেষ্ট মিল রয়েছে। কংগ্রেসের তৎকালীন নেতারা যেমন ভাবতেন যে বহুদিন তো আন্দোলন করলাম, জেল গেলাম, এবার তো একটু ক্ষমতার স্বাদ উপভোগ করি, বর্তমানে হিন্দুত্ববাদীদের নেতৃত্বও একই মানসিকতার শিকার। ফলে আদালতের রায়ে জয় আর আদালতের রায়েই আদর্শ প্রতিষ্ঠা।
জয় শ্রী রাম।
No comments:
Post a Comment