Tuesday, November 19, 2019

শবরীমালা ও আদালত

ভারতের সর্বোচ্চ বিচারালয় দ্বারা, শবরীমালা মন্দিরে হিন্দু মহিলাদের প্রবেশাধিকারের সাথে, মসজিদ বা দরগাতে মুসলিম মহিলাদের প্রবেশাধিকার বা পারসিক মহিলাদের তাদের উপাস্য সূর্য মন্দিরে প্রবেশাধিকার বা মুসলিম মহিলাদের খৎনা করার পদ্ধতির যৌক্তিকতা বিচার যুক্ত করার সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র মূল বিষয়ের অতিসরলীকরণ নয়, একইসাথে বিচারের নামে প্রহসন।

উপরোক্ত বাকি উদাহরণগুলির ক্ষেত্রে, লিঙ্গভিত্তিক বিভাজন হলেও শবরীমালার ক্ষেত্রে সেটা হয়না। শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদেরও প্রবেশ করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। প্রবেশাধিকার নেই শুধু একটা নির্দিষ্ট বয়সসীমার মধ্যে অবস্থানকারী, ঋতুমতী মহিলাদের। এটার কারণ শবরীমালার ঐ বিশেষ মন্দিরে, পূজ্য দেবতার সামাজিক অবস্থান। কৌমার্য পালনকারী দেবতার সামনে, ঋতুমতী মহিলাদের উপস্থিতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত বিভাজন নয়, সংযম।

আর হিন্দুরা যেহেতু তাদের উপাস্য দেবতাকেও নিজেদের পরিবারের অঙ্গ হিসাবে বিবেচনা করেন তাই সেই দেবতার সুখসাচ্ছন্দ্যের খেয়াল রাখা হিন্দুদের কর্তব্য। বহু বাড়িতেই গৃহদেবতাকে তিন বেলা ভোজন উৎসর্গ করা হয়, রাত্রে তার শয়নের জন্যে বিছানার ব্যবস্থা করা হয়, আর এই সবই হয় সেই মূর্তির মধ্যে হিন্দুরা পরিবারের এক সদস্যকে দেখতে পায় বলে। হিন্দুরা মূর্তিপূজক কারণ মূর্তির মধ্যে সে প্রাণের অবস্থান খুঁজে পায়। দুর্গাপূজার সময় আমরা মাটির মূর্তিকে পূজা করিনা, তাঁর মধ্যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করে, চক্ষুদান করে, তাঁকে মৃন্ময়ী থেকে চিন্ময়ী করে তুলি। আবার বিসর্জনের আগে, ঘট বিসর্জনের মাধ্যমে তাঁকে পুনরায় মৃন্ময়ী করে, জলে বিসর্জন দেয়া হয়।

এই সরল সত্যটা যদি সুপ্রিম কোর্টের মহামান্য বিচারপতিরা উপলব্ধি করতে না পারেন আর শবরীমালার সাথে অন্য ঘটনাগুলোর একযোগে বিচার করেন তাহলে সেটা প্রহসন হয়ে দাঁড়াবে। আইন যদি ন্যায়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তাহলে ন্যায় প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, আইনের পরিবর্তন প্রয়োজন।

No comments:

Post a Comment