Monday, July 10, 2023

রাজনীতির সেফটি ভালব

বাড়িতে প্রেসার কুকার তো প্রায় সবারই আছে কিন্তু সেটাতে যে সেফটি ভালব, যেটাকে সাদা বাংলায় আমরা 'সিটি' বলি, থাকে সেটার উপযোগিতা কখনও খেয়াল করেছেন? এই 'সিটি' বা সেফটি ভালব'টা বানানো হয় প্রেসার কুকারের আয়ু ও নিরাপত্তার কথা ভেবে। নীচে থেকে আসা তাপে প্রেসার কুকারের ভিতর যে বাস্পের প্রবল চাপের সৃষ্টি হয় সেটা যদি জমতেই থাকে তাহলে কুকারটা ফেটে যাবে। কিন্তু রান্না সম্পূর্ণ করতে গেলে যতটা চাপের প্রয়োজন সেটা একবারে তৈরী হয়না। এই দ্বিমুখী চাহিদার কথা ভেবেই তৈরী হয়েছে সেফটি ভালব। কুকারের ভিতরে চাপ খুব বেড়ে গেলে কিছুটা বাস্প সেটা বের করে দেয়, ফলে কুকার নিরাপদ থাকে আর নীচের থেকে নিয়মিত তাপের ফলে পুনরায় যে বাস্পচাপ তৈরী হয় সেটা খাবারকে সুসিদ্ধ করে তোলে।


এই ফর্মুলা মেনেই অবসরপ্রাপ্ত ব্রিটিশ আমলা, অ্যালান অক্টাভিয়ান হিউম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভারতের জাতীয় কংগ্রেস। ১৮৫৭ সালে সিপাহীদের গুঁতো খাওয়ার পরে আরেকটা বিদ্রোহ ব্রিটিশ রাজ সামলাতে পারতনা। তাই তদানীন্তন ভাইসরয়, লর্ড ডাফরিনের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি এমন একটা মঞ্চ তৈরী করেন যা সশস্ত্র সংগ্রামের বদলে, আবেদনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ করবে। লালা-বাল-পালের অন্যতম লালা লাজপত রায়ও ২০১৬ সালে প্রকাশিত তার ইয়াং ইন্ডিয়া বইতে একই কথা বলেছেন। হিউমের দূরদৃষ্টি যে প্রখর ছিল সেটা নিয়ে সন্দেহ নেই। বিশেষত বাল গঙ্গাধর তিলকের পর যখন গান্ধীর হাতে কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ যায় তখন থেকেই কংগ্রেস বিপ্লবীদের - ভগৎ সিং হোক বা সুভাষ বোস - পিছন থেকে ছুড়ি মারতে শুরু করে।


পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রহসন দেখার পর আজ যারা শুভেন্দু অধিকারী'র কিছু বক্তব্যে নিজেদের অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ বাড়াচ্ছেন তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে এটাই সেই সেফটি ভালব থিওরিরই একটা অংশ। ৩০৩ জন সাংসদ নিয়ে নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকা মোদী-শাহ'র বিজেপি'র বিরুদ্ধে সমর্থকদের জমে ওঠা ক্ষোভ প্রশমনের এটা একটা উপায় মাত্র। কারণ নেতারাও জানে যে এই ক্ষোভের আয়ু বেশীদিন নয়। তাই ক্ষোভ যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না চলে যায় তাই শুভেন্দু'র বাতেলা চলবে কিন্তু দিনের শেষে তারও ট্যুইটারে পিনড পোস্ট থাকবে মোদীর সাথে সাক্ষাতের ছবি। মেড়া তো তার খুঁটির জোরেই লড়ে, তাই না?