Friday, June 7, 2019

প্রশান্ত কিশোরের নিযুক্তি


২০২১ সালের কথা মাথায় রেখে প্রশান্ত কিশোরের নিয়োগ প্রমাণ করছে যে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্যে মমতা ব্যানার্জীর নিজের ভাবমূর্তির উপর ভরসায় চিড় ধরেছে। কিন্তু সাথে তার সাথে এটাও প্রমাণ করছে যে এখনও মমতা ব্যানার্জীর সেই নমনীয়তা আছে  যা পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাকে অন্যরকম ভাবতে সাহায্য করে। রাজনীতিতে এই নমনীয়তাই নেতানেত্রীদের নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ও জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
প্রশান্ত কিশোর কতটা সফল হবেন সেটার উত্তর ভবিষ্যতের গর্ভে কিন্তু তার প্রাথমিক কাজ যে, মমতা ব্যানার্জীর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ও সরকারের জনপ্রিয়তা পুনরুদ্ধার করা হবে, সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। মমতা ব্যানার্জী ও তার বর্তমান পরামর্শদাতাগণ যতই চোখ বুঝে থাকুন, প্রশান্ত কিশোরের মত ধুরন্দর স্ট্র‍্যাটেজিস্ট এটা বুঝবেন যে এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল যে মুসলিম ভোট পেয়েছে, সেটা আগামীতে কমবে। এই নির্বাচনে বিজেপি যে এরকম সাফল্য পাবে, সেটা তাদের ধারণাতে ছিলনা। ইতিহাস সাক্ষী যে এই রাজ্যের মুসলমানরা সবসময়ই আঞ্চলিক দলের বদলে জাতীয় দলকে পছন্দ করে আর এই কারণেই মালদা, মুর্শিদাবাদ ও উত্তর দিনাজপুরের মত মুসলিম বহুল জেলায় তৃণমূল কখনই সেরকম সাফল্য পায়নি যেটা অন্যান্য জেলায় পেয়েছে।
এই রাজ্যে বিজেপির বিকল্প শক্তি হিসাবে উঠে আসার ফলে, মুসলমানরা স্বাভাবিকভাবেই তাদের দিকে সরতে থাকবে। বিজেপিতে মুসলমান ভোট বৃদ্ধির ফলে তাদের মধ্যে 'সেকুলার' হওয়ার প্রবণতাও বাড়বে। এমতাবস্থায়, প্রশান্ত কিশোরের প্রাথমিক কাজ হবে মমতার #হিজাবি_দিদি ভাবমূর্তি বদলানো এবং তরুণ প্রজন্মের মন জয় করতে MSME এর অধীন বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে #কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা। ইদানীং মমতা ব্যানার্জী বিভিন্ন জনসভা, সাংবাদিক সম্মেলন ও আলাপচারিতায় যে ভাষা ব্যবহার করছেন সেটা মাথায় রেখে প্রশান্ত কিশোর যদি মুখ্যমন্ত্রীর কোন মিডিয়া মুখপাত্র নিয়োগ করেন, তাহলেও আমি অবাক হবনা। কিন্তু দিনের শেষে সবটাই নির্ভর করবে মমতা ব্যানার্জী তার নিয়োজিত উপদেষ্টার কথা কতটা শুনছেন, সেটার উপর। নিয়োগের ক্ষেত্রে যে নমনীয়তা তিনি দেখিয়েছেন, পরামর্শ পালনের ক্ষেত্রেও সেই নমনীয়তা বজায় রাখলে তিনি নিজের হৃত জমির অনেকটাই পুনরুদ্ধার করতে পারেন কিন্তু নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঔদ্ধত্যের কারণে তিনি যদি সেটা না করেন তাহলে তার আম ও ছালা- দু'টো হারাতে ২০২১ অবধি অপেক্ষা করতে হবেনা।

Thursday, June 6, 2019

মোদী ২.০

গত ১২ই ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে, এই ফেসবুকেই লিখেছিলাম যে দিল্লীর রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ থাকার ফলে নরেন্দ্র মোদীকে কিভাবে অরুণ জেটলীর মত নেতাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে ছিলেন। সেই পোস্টের লিঙ্কও দিয়ে দিলাম আগ্রহীরা লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন। (https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10156231022014865&id=620989864)। সেদিনই বলেছিলাম যে অরুণ জেটলী, সুষমা স্বরাজ বা রাজনাথ সিং দের সরকারে নেয়াটা মোদীর ইচ্ছা নয়, বাধ্যবাধকতা। রাজধানীর রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার কারণে বিজেপির এই প্রবীণ নেতানেত্রীরা প্রত্যেকেই নিজেকে প্রধানমন্ত্রী পদের উপযুক্ত বলে মনে করতেন, কিন্তু দেশের লোকের, তাদের উপর, সেই বিশ্বাস ছিলনা।

পাঁচ বছর ক্ষমতায় থেকে, দিল্লীর রাজনীতিতে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর, আজ দেখুন জেটলী ও স্বরাজ - দু'জনেই সরকারের বাইরে। উত্তর প্রদেশের রাজনীতির সুবাদে রাজনাথ সিংকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের দায়িত্ব দেয়া হলেও, Appointments Committee of the Cabinet এবং Cabinet Committee on Political Affairs এর মত গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে তিনি ব্রাত্য। আরেকজন প্রবীন নেতা, নীতিন গডকরি ও CCS এর মত গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে জায়গা পাননি। মোট আটটা কমিটির প্রত্যেকটাতেই একটা নাম Common- অমিত শাহ - মোদীর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী।

২০১৪ সালের মোদী, দিল্লীর পুরনো নেতাদের প্রভাব ও রাজনীতির সাথে অপরিচিত হলেও, ২০১৯ এর মোদী অনেকটাই পরিণত। সংসদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাকে বাড়তি মনোবল যুগিয়েছে। তাই আগামীদিনে রাজনাথ বা গডকড়িদের প্রভাব কমতে থাকবে আর বাড়বে সীতারামন, পীযুষ গোয়েল আর জয়শঙ্করদের প্রভাব। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেন শাহ আর দোভাল। শাহ যদি যুগপৎ দল আর মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান, যদি বিজেপির সংবিধান অনুসারে সেটা সম্ভব নয়, তাহলে আমি অবাক হবনা কারণ এই কাজে, আজকের দিনে মোদীর কাছে শাহ-র চেয়ে ভাল কেউ নেই। বাকি রইল সংবিধানের কথা, মোদীর পক্ষে সেটা বদলানো কোন বড় ইস্যু নয়। After all, মানুষের জন্যে আইন, আইনের জন্যে মানুষ নয়।

Wednesday, June 5, 2019

বাঙালীত্ব

লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই, বিজেপির বিভিন্ন নেতা ও তাদের IT Cell পশ্চিমবঙ্গের একটা খণ্ডিত মানচিত্র বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে যাচ্ছে। উক্ত মানচিত্রে, কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবীকৃত গোর্খাল্যান্ডের অংশকে, পশ্চিমবঙ্গের অংশ হিসাবে দেখানো হচ্ছেনা। পাকিস্তান যেমন তাদের অধিকৃত কাশ্মীরকে বাদ দিয়ে ভারতের মানচিত্র প্রকাশ করে, ব্যাপারটা অনেকটাই সেরকম। এটা একবার হলে, ভুল বলে মেনে নেয়া যেত, কিন্তু যেহেতু এটা বিভিন্ন নেতার দ্বারা বারবার করা হচ্ছে, তাই এটা স্পষ্ট যে এটা কোন অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি নয়, বরং বৃহৎ কোন ষড়যন্ত্রের অংশ।

এমতাবস্থায়, সকল বাঙালীর দায়িত্ব এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সোচ্চার হওয়া। এখানে উল্লেখ্য যে আমি বাঙালী বলতে শুধু বাংলাভাষীদের কথা বলছিনা, এই রাজ্যে বসবাসকারী হিন্দি, পাঞ্জাবী, তামিল, তেলেগু ইত্যাদি ভাষাভাষীদের কথাও বলছি। বাঙালী পরিচয় শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক নয়, এরসাথে ভারতের সনাতন সংস্কৃতিরও যোগসূত্র রয়েছে। বাংলায় বসবাসকারী যে কারুর জন্যে বাংলার স্বার্থ রক্ষা সর্বোপরি হওয়া কাম্য।

প্রত্যেকটা রাজ্যের একটা আলাদা পরিচয় থাকে, আর সেই পরিচয় পরিলক্ষিত হয় সেই রাজ্যের অধিবাসীদের আচরণে। কর্মসূত্রে অন্য রাজ্য থেকে এখানে এসে, কয়েক প্রজন্ম ধরে এই রাজ্যে বসবাসকারী ভিন রাজ্যের বাসিন্দারা যদি এখনও নিজেদের বাঙালী পরিচয় নিয়ে এবং রাজ্যের স্বার্থরক্ষা নিয়ে কুন্ঠায় থাকেন তাহলে তাদের সাথে সেই মুসলানদের কোন তফাৎ থাকবেনা যারা ১৯৪৭ সালে বঙ্গমাতাকে টুকরো করে, নিজেদের বখরা বুঝে নিয়েছিল। একইভাবে, যেসব বাংলাভাষীরা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যে রাজ্যকে পুনরায় খন্ডিত করার প্রয়াসের হাওয়া দিচ্ছেন, তারাও সেই মুসলমানদের মতই ঘৃণিত।

এই রাজ্য বা অন্য রাজ্যে বসবাসকারী যেকোন বাঙালীর জন্যে এই বাংলা শুধু একটা ভূমিখণ্ড নয়, এটা তাদের আবেগ, অভিমান এবং অস্তিত্বের পরিচয়। কোন নেতা বা দল যদি নিজেদের স্বার্থে সেই পরিচয়কে বিকৃত করে, তাহলে বাংলার অপমান, বাঙালীর অপমান। ১৯৪৭-এর ঘরপোড়া গরু বাঙালী আজ তাই সিঁদুরে মেঘ দেখে সন্দিহান। বাঙালী একবার পরজীবিদের কাছে নিজেদের জমি খুইয়েছে, সেই ভুল কিন্তু সে দ্বিতীয়বার করবেনা।