Wednesday, June 5, 2019

বাঙালীত্ব

লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই, বিজেপির বিভিন্ন নেতা ও তাদের IT Cell পশ্চিমবঙ্গের একটা খণ্ডিত মানচিত্র বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে যাচ্ছে। উক্ত মানচিত্রে, কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দাবীকৃত গোর্খাল্যান্ডের অংশকে, পশ্চিমবঙ্গের অংশ হিসাবে দেখানো হচ্ছেনা। পাকিস্তান যেমন তাদের অধিকৃত কাশ্মীরকে বাদ দিয়ে ভারতের মানচিত্র প্রকাশ করে, ব্যাপারটা অনেকটাই সেরকম। এটা একবার হলে, ভুল বলে মেনে নেয়া যেত, কিন্তু যেহেতু এটা বিভিন্ন নেতার দ্বারা বারবার করা হচ্ছে, তাই এটা স্পষ্ট যে এটা কোন অনিচ্ছাকৃত ত্রুটি নয়, বরং বৃহৎ কোন ষড়যন্ত্রের অংশ।

এমতাবস্থায়, সকল বাঙালীর দায়িত্ব এই মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সোচ্চার হওয়া। এখানে উল্লেখ্য যে আমি বাঙালী বলতে শুধু বাংলাভাষীদের কথা বলছিনা, এই রাজ্যে বসবাসকারী হিন্দি, পাঞ্জাবী, তামিল, তেলেগু ইত্যাদি ভাষাভাষীদের কথাও বলছি। বাঙালী পরিচয় শুধুমাত্র ভাষাভিত্তিক নয়, এরসাথে ভারতের সনাতন সংস্কৃতিরও যোগসূত্র রয়েছে। বাংলায় বসবাসকারী যে কারুর জন্যে বাংলার স্বার্থ রক্ষা সর্বোপরি হওয়া কাম্য।

প্রত্যেকটা রাজ্যের একটা আলাদা পরিচয় থাকে, আর সেই পরিচয় পরিলক্ষিত হয় সেই রাজ্যের অধিবাসীদের আচরণে। কর্মসূত্রে অন্য রাজ্য থেকে এখানে এসে, কয়েক প্রজন্ম ধরে এই রাজ্যে বসবাসকারী ভিন রাজ্যের বাসিন্দারা যদি এখনও নিজেদের বাঙালী পরিচয় নিয়ে এবং রাজ্যের স্বার্থরক্ষা নিয়ে কুন্ঠায় থাকেন তাহলে তাদের সাথে সেই মুসলানদের কোন তফাৎ থাকবেনা যারা ১৯৪৭ সালে বঙ্গমাতাকে টুকরো করে, নিজেদের বখরা বুঝে নিয়েছিল। একইভাবে, যেসব বাংলাভাষীরা রাজনৈতিক স্বার্থের জন্যে রাজ্যকে পুনরায় খন্ডিত করার প্রয়াসের হাওয়া দিচ্ছেন, তারাও সেই মুসলমানদের মতই ঘৃণিত।

এই রাজ্য বা অন্য রাজ্যে বসবাসকারী যেকোন বাঙালীর জন্যে এই বাংলা শুধু একটা ভূমিখণ্ড নয়, এটা তাদের আবেগ, অভিমান এবং অস্তিত্বের পরিচয়। কোন নেতা বা দল যদি নিজেদের স্বার্থে সেই পরিচয়কে বিকৃত করে, তাহলে বাংলার অপমান, বাঙালীর অপমান। ১৯৪৭-এর ঘরপোড়া গরু বাঙালী আজ তাই সিঁদুরে মেঘ দেখে সন্দিহান। বাঙালী একবার পরজীবিদের কাছে নিজেদের জমি খুইয়েছে, সেই ভুল কিন্তু সে দ্বিতীয়বার করবেনা।

No comments:

Post a Comment