Thursday, June 17, 2021

আগামীর রাজনীতি

উপর্যুপরি তিনবার পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে জেতার পর, এবার, খুব স্বাভাবিকভাবেই, মমতা ব্যানার্জীর কাছে পাখির চোখ হল দিল্লীর মসনদ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১৪ তে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হওয়ার আগে, নরেন্দ্র মোদীও তিনবার তার দলকে গুজরাট বিধানসভাতে বিজয়ী করেছিলেন। তবে নরেন্দ্র মোদীর মত মমতা ব্যানার্জী কোন সর্বভারতীয় দলের নেত্রী নন, তার সঙ্গে শারদ পাওয়ারের সামঞ্জস্য বেশী। পাওয়ার যেমন মহারাষ্ট্রকে ভিত্তি করে, সর্বভারতীয় স্তরে উঠেছিলেন, মমতাও একইভাবে, পশ্চিমবঙ্গকে ভিত্তি করে, জাতীয় রাজনীতিতে নিজের যায়গা বানাতে চাইবেন।

বিগত নির্বাচনে ব্যপক সাফল্য লাভের পর, মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্বে তৃণমূল প্রথমেই চাইবে বঙ্গ বিজেপিকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে আর এই কাজে প্রধান সেনাপতি হবেন মুকুল রায় - দলবদল ও দলভাঙানোর খেলাতে যিনি প্রায় কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌছে গেছেন। একটা জিনিস এখানে খেয়াল রাখবেন, প্রধান সেনাপতি বলেছি, রাজা নয়। কারণ এক্ষেত্রে রাজার ভূমিকা নেবেন অভিষেক ব্যানার্জী, যিনি খুব সন্তর্পণে যুব তৃণমূল থেকে মূল ধারায় যুক্ত হয়ে গেছেন। বঙ্গ বিজেপিকে ভাঙার সাথে সাথে, তৃণমূলের লক্ষ্য হবে ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড এবং আসাম সহ দেশের বিভিন্ন বাঙালী বহুল এলাকায় নিজেদের প্রভাব বিস্তার করা। তৃণমূলের বাড়তি সুবিধা হল যে আগামী এক বছর পার্টির যাবতীয় নজর থাকবে উত্তর প্রদেশের দিকে, তাই পশ্চিমবঙ্গে পার্টির অবস্থা সামলানোর লোক খুবই কম।

একটা বিষয় এখানে উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে যে বিগত ছয়-সাত মাসে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাজকর্মের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের চরম অভাব দেখা যাচ্ছে। কৃষক আন্দোলন হোক বা নতুন IT আইন, সরকারের অসহায়তা প্রতি ক্ষেত্রেই ফুটে উঠছে। ভাবা যায়, বিশ্বের বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের কৃষকদের মধ্যে এমন প্রভাব নেই যা আন্দোলনের গতিধারা নির্ধারণ করতে পারে! নরেন্দ্র মোদীর মুশকিল হচ্ছে যে না তিনি খুব বেশী সহযোগীকে বিশ্বাস করেন না খুব বেশী সহযোগী তাকে বিশ্বাস করেন। এই কারণেই তার পীযুষ গোয়েল বা নির্মলা সীতারামনকে ক্ষমতার অতিরিক্ত দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে।

তবে তৃণমূলের এই পরিকল্পনা যতটা সহজে বললাম, অতটা সহজে বাস্তবায়িত হবেনা তার প্রধান কারণ প্রধানমন্ত্রী পদে নরেন্দ্র মোদীর ইমেজ। এখনও অবধি বিরোধী দলগুলি যার কোন বিকল্প তুলে ধরতে পারেনি। মমতা ব্যানার্জী পশ্চিমবঙ্গে অসম্ভব জনপ্রিয় হতে পারেন কিন্তু এখনও অবধি তার সর্বভারতীয় ইমেজ মোদীর তুলনায় নগন্য। মোদীর যেভাবে গুজরাট মডেলের বিকাশ দিয়ে সারা ভারতে জনপ্রিয় হয়েছিলেন মমতাও, আগামী তিন বছর, একইভাবে, চাইবেন রাজ্যের উন্নয়নকে মার্কেটিং করতে আর তিনি যাতে সেই কাজে সফল না হন তাই মমতা ব্যানার্জীর ইমেজের উপর বারবার আক্রমণ হবে, কখনও নারদা কেস নিয়ে বা কখনও রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে যাতে মমতাকে সবসময় ব্যাকফুটে খেলতে হয়।

তাই, আপনারা তৈরী থাকুন, ২০২৪ এর নির্বাচন, যেকোন রাজনীতির ছাত্রর কাছে, একটা শিক্ষনীয় বিষয় হতে চলেছে। মোদী আর মমতার দ্বৈরথ যে খুবই আকর্ষণীয় হতে চলেছে সেটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।

No comments:

Post a Comment