Thursday, June 10, 2021

সহী হিন্দু

অনেক ভেবেচিন্তে দেখলাম যে ভারতে সহী হিন্দু যদি কেউ থেকে থাকে তাহলে সেটা একমাত্র বাঙালী, অন্য কেউ নয়। এটা শুনে আশ্চর্য হবেননা, বরং ভেবে দেখুন, সহমত হবেন। আচ্ছা, একটু বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি।

দেখুন, হিন্দুরা কোনদিন বলপূর্বক কারুর জমি দখল করতে যায়নি, বরং শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্যেই হোক বা আক্রমণকারীদের হামলার ফলে নিজেদের জমির অধিকার হারিয়েছে। বাঙালীদের ক্ষেত্রেও দেখুন একই অবস্থা। দেশভাগ হোক বা ল্যান্ড বিল এগ্রিমেন্ট -নিজের জমি ছাড়তে বাঙালী সবার আগে। এমনকি অন্য দেশ বা রাজ্য থেকে ব্যক্তিদের জমি ছাড়তে ছাড়তে, নিজেরা বাস্তুচ্যুত হলেও বাঙালীর কোন হুশ নেই।

এবার আসুন সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে। এককালে সারা বিশ্বে সনাতন ধর্মের যে প্রভাব বিস্তৃত হয়েছিল সেটা হয়েছিল মূলতঃ সাংস্কৃতিক কারণে। একইভাবে, বাঙালীরাও বিশ্বাস করে যে রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ আর নন্দন দিয়েই তারা সারা বিশ্বকে জয় করতে পারবে। আপনি দেশের যেকোন রাজ্যে যান, সেখানে বিহার বা উত্তর প্রদেশের মূলগত জনগোষ্ঠী যেখানে বাস করে সেটা সেখানকার পরিবেশ দেখে নিজেই বুঝতে পারবেন। এমনকি ওড়িয়া বা তামিল অধ্যুষিত এলাকাতেও একই যুক্তি প্রযোজ্য। কিন্তু কোন যায়গা বাঙালী অধ্যুষিত হলে সেখানকার আলাদা কোন পরিচয় গড়ে ওঠেনা।

একইভাবে, বিজাতীয় সংস্কৃতিকে আপন করতে, যেটা বসুধৈব কুটুম্বকমের ভিত্তি, বাঙালীর কোন জুড়ি নেই। তাই বিরিয়ানি থেকে খৈনী, ধোকলা থেকে গুটকা - সবেতেই তার চরম উৎসাহ কিন্তু যাবতীয় বাছবিচার শুরু হয় মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে। মহরমের তাজিয়ায় বাঙালী হিংসা না দেখলেও চড়কের ঘূর্ণী তাকে ব্যথিত করে। মাংসের দোকানে লাইন দিয়ে, আড়াই পোচে কাটা মাংস কিনতে তার আপত্তি না থাকলেও বলিপ্রথা তার কাছে চরম নিষ্ঠুরতার নিদর্শন।

পরমতসহিষ্ণুতার চরম নিদর্শন দেখিয়ে বাঙালী রামনবমীতে টিনের তলোয়ার আর DJ নিয়ে মিছিল করতে পারে কিন্তু কাংলাপাহাড়িতে দুর্গাপূজা বা তেহট্টে সরস্বতী পূজা বন্ধ হলে তার কিছু এসে যায়না। ধুপের মত সে নিজেকে পুড়িয়েই অন্যকে খুশী করতে চায়। আর এই প্রবৃত্তিই তাকে এতটা পরনির্ভরশীল করে দিয়েছে যে যেকোন আগ্রাসনের সময় সে অন্যদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকে, নিজে এগোতে পারেনা। এরপরেও কি বাঙালীদেরই একমাত্র সহী হিন্দু বলা যাবেনা?

No comments:

Post a Comment