Tuesday, February 22, 2022

সম্মানের মূল্য

ল্যান্সনায়ক হেমরাজ, যার কাটা মুন্ডু নিয়ে ফুটবল খেলেছিল পাকিস্তান সেনা আর ২০১৪ সালে, নিজের নির্বাচনী প্রচারে, সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করে, ভোট চেয়েছিলেন মোদী কিন্তু ক্ষমতায় আসার প্রায় আট বছর হতে চললেও সেই হেমরাজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেননি মোদী। বরং বিনা নিমন্ত্রণে উপস্থিত হয়েছিলেন তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী, নওয়াজ শরিফের জন্মদিনে। শুধু হেমরাজ কেন, পাঠানকোট, উড়ি বা পুলবামা'র কোন শহীদের পরিবারের সাথেই দেখা করেননি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার কোন সদস্য অথচ ৪৪ রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের ঔরঙ্গজেব জঙ্গীদের আক্রমণে শহীদ হওয়া মাত্রই তার বাড়িতে পৌছে গিয়েছিলেন তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী, নির্মলা সীতারমণ সহ তদানীন্তন সেনাপ্রধান, বিপিন রাওয়াত। তফাৎটা স্পষ্ট।


একইভাবে, ২০০৭ সালে রিজওয়ানুর হত্যার পরে, সেটা নিয়ে সোচ্চার হয়েছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী, মমতা ব্যানার্জী। পুলিশি অত্যাচার ও ভুয়ো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট নিয়ে তোলপাড় করেছিলেন রাজ্য রাজনীতি অথচ খোদ তারই শাসনে, বাদুড়িয়ার নিতাই দাস, ভিন্ন ধর্মে প্রেম করার জন্যে, তাকে হত্যা করে, ব্লেড দিয়ে গায়ের চামড়া ছাড়িয়ে নিলেও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলে দেয় যে "আঘাতের কোন চিহ্ন নেই"। আবার সুদূর রাজস্থানে, আফ্রাজুল নিহত হলে, সেই মমতা'ই কেঁদে ওঠেন। একইভাবে, দাড়িভিটে, পুলিশের গুলিতে, রাজেশ আর তাপসের হত্যা নিয়ে টুঁশব্দ না করা মমতা ব্যানার্জীই এখন আনিশ খানের মৃত্যুর ক্ষেত্রে তৎপর হয়ে উঠেছেন।


দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রবি, রুদ্রেশ, অঙ্কিত সক্সেনা বা কমলেশ তিওয়ারি'র মত জাতীয়তাবাদের হত্যা করা হলে বা পালঘাটে সাধুদের হত্যা নিয়ে এমনকি ভুয়ো NRC প্রক্রিয়ার পরিণতিতে, আসামে ডজনখানেক হিন্দুর আত্মহত্যা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী একটা কথাও বলেননা কিন্তু এক হতাশাগ্রস্ত বামপন্থী ছাত্র রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করলে সেটাতে তিনি ভারতমাতা কে সন্তানহারা হতে দেখেন।


এতগুলো কথা বলার কারণ একটাই, হিন্দুরা যাতে নিজেদের ভোটের মূল্য বুঝতে পারে। মুসলমান বা কম্যুনিষ্টদের ক্ষেত্রে একটা 'কৌম' ফ্যাক্টর কাজ করে যেটা হিন্দুদের ক্ষেত্রে ব্যপকভাবে অনুপস্থিত। 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান বা খয়রাতিতেই সন্তুষ্ট সমাজ কখনই নিজেদের প্রাপ্য পেতে পারেনা। অন্যকে দোষারোপ করতে পারে, বঞ্চনা নিয়ে হাহাকার করতে পারে কিন্তু সম্মান পেতে পারেনা।

No comments:

Post a Comment