Friday, October 15, 2021

অসি বনাম মসি

অশুভকে ধ্বংসের প্রতীক মা দুর্গার পুজোকে বাঙালী 'শারোদৎসব' বানাবে, আরাধনার সময় মা'কে অস্ত্রহীন করে অসহায় মহিলার প্রতীক বানাবে, যবনদের দোকান থেকে হালাল মাংস কিনে, সেটা কবজি ডুবিয়ে খেলেও বলি প্রথা নিয়ে আপত্তি করবে, সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে পূজামণ্ডপে আযানের সময়সূচি টানাবে আর তারপরেও আশা করবে যে বাকি সবাই যেন তাদের 'মেধা'কে সম্মান করে। বিগত কয়েক দশক ধরে, শৌর্য ও সাহসিকতার মত গুণাবলীকে, তথাকথিত, বৌদ্ধিক ক্ষমতার থেকে হীন দৃষ্টিতে দেখা বাঙালীর পতনের অন্যতম কারণ।


ঘটনা কতটা সত্যি সেটা বোঝা যায় আমাদের ক্ষুদিরাম বা নেতাজী প্রীতির বদলে গান্ধীভক্তি দেখে। সংঘাতের বদলে আপোষকেই আমরা আমাদের মূলমন্ত্র হিসাবে মেনে নিয়েছি। তাই ক্ষুদিরাম এখন বাঙালীর কাছে "বাড় খাওয়া" র প্রতীক। আর এই স্বভাব কিন্তু একদিনে হয়নি, হয়েছে বছরের পর বছর আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ভ্রান্ত শিক্ষার ফলশ্রুতিতে। বর্তমান প্রজন্মে এই মানসিকতার জন্যে, তার পূর্ববর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ তাদের পরিবারও সমানভাবে দায়ী। আর তার সঙ্গে দায়ী আমাদের ধর্মগুরুরা যারা সমাজকে ধর্মের শিক্ষা অর্থাৎ সামাজিক কর্তব্য পালনের শিক্ষা দেয়ার বদলে, তাঁদের শিষ্যদেরকে কেবলমাত্র আত্মবিকাশ ও আত্মপ্রচারের পথে চালিত করেছেন।


এরই ফলস্বরূপ বাঙালী, বিশেষত, তাদের যুবসমাজ এমন এক ট্যাঁশ প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে যাদের সামনে সমাজের জন্যে কাজ করার কোন পরিকল্পনা নেই, পিছনে কোন অনুপ্রেরণা নেই। ফলে শিঁকড় বিহীন, বিবেক শূন্য এই যুবসম্প্রদায় স্রোতের জলে কচুরিপানার মত ভেসে চলেছে লক্ষ্যহীন ভাবে। পুঁথিগত শিক্ষার ফলে তাঁদের মধ্যে বিদ্যা তো আসছে কিন্তু অভাব দেখা দিচ্ছে শিক্ষার। যে শিক্ষা তার পাওয়া উচিত ছিল তার পরিবার থেকে, শিক্ষকদের থেকে, ধর্মীয় গুরুদের থেকে। শিক্ষার অভাবের ফলে তাদের জীবন শুধু বর্তমান কেন্দ্রিক হয়ে গেছে।


অথচ অন্যান্য ধর্মসম্প্রদায়ের মধ্যে এই অসুবিধা নেই। তাদের পরিবার, সমাজ, ধর্মগুরুরা আজও তাদের কারবালার কথা বলে অনুপ্রাণিত করেন, গ্বাজা এ হিন্দের স্বপ্ন দেখিয়ে তাদের ভবিষ্যতের লক্ষ্য স্থির করে দেন। ফলে নিজেদের শিঁকড়ের সাথে তাদের যোগসূত্র প্রতিদিন আরও দৃঢ় হয়। আর তাদের এই দৃঢ়তার সামনে হীনমন্যতায় ভোগে বাঙালী যুবসমাজ। তাই তাদেরই অনুকরণ করে, অনুসরণ করে, নিজেদের সীমাবদ্ধতা লুকাতে চায়। আর কচুরিপানার পক্ষে সেটা খুব অস্বাভাবিক নয়।


হালাল খাদ্যে সম্মতি দেয়া, বিদ্যালয়ে সরস্বতী পূজার সঙ্গে নবী দিবস পালনে সম্মত হওয়া, মসজিদের সামনে দিয়ে শবদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় হরিধ্বনি না দেয়া, এই সবই আপোষের পরিচায়ক। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী যে আপোষের দ্বারা কোন জাতি নিজের পরিচয় ও অস্তিত্ব রক্ষা করতে পারেনি। সেটাই যদি পারতো তাহলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগের পরেও, হিন্দুবহুল ভারতে কাশ্মীর বা কালিয়াচক বা আজাদ ময়দান ঘটতো না, ভারতের মাটিতে "ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে, ইনশাল্লাহ ইনশাল্লাহ" বা "আফজল হাম শরমিন্দা হ্যায়, তেরে কাতিল জিন্দা হ্যায়" স্লোগান উঠতো না।


আপোষ করে পরিচয় ও ধর্ম রক্ষা করা যায়না। মহাভারতের সময়ে, কৌরবদের থেকে মাত্র পাঁচটা গ্রামের দাবী হোক বা বর্তমান সময়ে বিদ্যালয়ে চিরাচরিত সরস্বতী পূজার দাবী - আবেদন নিবেদনের দ্বারা কখনই অধিকার প্রতিষ্ঠা করা যায়না। অধিকার কোন ভিক্ষা নয় যা চাইলে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, অধিকার হল দাবী যা দাবীদারের মধ্যে ছিনিয়ে নেয়ার শক্তি থাকা দরকার। যারা বলেন যে অসির চেয়ে মসির ক্ষমতা বেশী, আমি তাদেরকে শুধু এটাই মনে করিয়ে দিতে চাই যে মসি তখনই অসির চেয়ে শক্তিশালী যখন সেই মসির সুরক্ষায় একটা অসি নিযুক্ত থাকে।

1 comment:

  1. Casinos Near Casinos Near Hollywood, FL area | MapYRO
    1. 포천 출장마사지 Casino in 경기도 출장마사지 Hollywood, 경산 출장안마 FL area. The following companies have been added to the map. Casinos in the 천안 출장안마 area. Avis Casino Resort. Hollywood, FL (FL) 서귀포 출장안마

    ReplyDelete