Saturday, June 20, 2020

সম্পূর্ণা

আচ্ছা, ধরুন আমার বাড়িতে চোর ঢুকে, বেশ কিছু জিনিস নিয়ে পালাচ্ছিল। এমন সময় আমি সজাগ হয়ে গেলাম এবং চোরকে তাড়া করলাম। তাড়া খেয়ে পালাবার সময়, আমার সাথে ধাক্কাধাক্কিতে, চোরের ঝোলা থেকে, আমার বাড়ি থেকেই চুরি করা একটা মোবাইল পড়ে গেল আর আমি, চোরকে ধরতে না পারলেও, একটা মোবাইল ফেরত নিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এমতাবস্থায়, আমি কি সেই মোবাইলটা পেয়েছি বলে উল্লসিত হবো নাকি বাকি জিনিস হারানোর জন্যে দুঃখিত হবো এবং সেগুলো পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করবো?

না, পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত হতে পারছিনা কারণ এটাও, আমার কাছে, সেই পড়ে যাওয়া মোবাইলের মতই, আংশিক প্রাপ্তি। আচ্ছা, জেহাদি হাত থেকে ছিনিয়ে আনা নিজেদেরই অংশ নিয়ে যদি রাজ্যের জন্মদিন পালন করতে হয়, তাহলে কি ১৫ আগস্ট, ১৯৪৭ কে ভারতের জন্মদিন হিসাবে ধরতে হবে? আমাদের দেশের ইতিহাস, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ইত্যাদি তাহলে মাত্র সত্তর বছরের? তাহলে তো বলতে হবে যে নেহরু ঠিকই বলেছিলেন যে India is a nation in making। না, নেহরু ঠিক বলেননি, ভারতের জন্ম মোটেই ১৯৪৭ সালে নয়, রাজনৈতিক বিভাজন মোটেই দেশের জন্মদিন নির্ধারণ করেনা।

একইভাবে, বঙ্গমাতার জন্মদিনও মাত্র কয়েক দশকের পুরনো ঘটনা নয়। মা কে খন্ডিত করলেই তার জন্মদিন বদলে যায়না। রবীন্দ্রনাথের স্মৃতিবিজড়িত শিলাইদহ, মাস্টারদার স্মৃতিবিজড়িত চট্টগ্রাম, মাইকেল মধুসূদন দত্তের যশোর প্রভৃতি স্থান বিহীন বঙ্গমাতা আজও খন্ডিতা। তাই, ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষায়, মা যা ছিলেন আর মা যা হবেন, আমি সেটার স্বপ্ন দেখি, মা যা হয়েছেন, সেটা নিয়ে উল্লসিত হতে পারিনা। তাই আমার কাছে পশ্চিমবঙ্গ সৃষ্টি উল্লাসের নয়, বেদনার স্মৃতি বয়ে আনে। বিজাতীয় আরবী সংস্কৃতির কাছে পরাজয়ের বেদনা, নিজের দেশের ঐতিহ্যবাহী ভূমিখণ্ড হারানোর বেদনা, নিজের মাতৃভূমিকে জেহাদিদের হাতে খন্ডিত হতে দেয়ার বেদনা। আর এই বেদনার উপশম সেদিন হবে যেদিন আমরা মায়ের খন্ডিত অংশ পুনরুদ্ধার করতে পারবো। আমার মা পূর্ব আর পশ্চিমে বিভক্ত নয়, তিনি সম্পূর্ণা।

No comments:

Post a Comment