Wednesday, June 3, 2020

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি

আগেও বলেছি, আবারও বলছি পশ্চিমবঙ্গের জনগণ বিজেপির জন্যে প্রস্তুত হলেও বিজেপি পশ্চিমবঙ্গের জন্যে কতটা প্রস্তুত সেটা আমি এখনও নিশ্চিত নই এবং ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারবনা যতক্ষণ না পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারী বা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মত কোন হেভিওয়েট নেতা তৃণমূল ছেড়ে বেড়িয়ে না আসেন অথবা সৌরভ গাঙ্গুলীর মত কোন জনপ্রিয় মুখ বিজেপিতে যোগদান না করেন।

তবে এটা নিশ্চিত যে তৃণমূল কংগ্রেসের, বড় থেকে ছোট, অনেক নেতাই ধরে নিয়েছেন যে ২০২১-এই গল্প শেষ আর তাই যে যার সাধ্যমত লোটালুটিতে সামিল হয়েছেন। করোনা হোক বা সাইক্লোন - লুটের রাজত্ব চলছে সর্বস্তরে। দিদি-মোদী সেটিং-এ এতদিন আস্থা থাকলেও সেটার স্থায়িত্ব নিয়ে অনেকেই এখন সন্দিহান। পুলিশের একটা বড় অংশও, শুধু উপরমহল নয়, সিভিক ভলান্টিয়ার লেভেলেও, আর দিদির উপর বাজী রাখতে পারছেন না, অপেক্ষায় আছেন বিজেপির।

কিন্তু মোদী-শাহর মাথায় কি রয়েছে সেটা নিয়ে সবাই ধন্ধে। রাজ্যের নবনিযুক্ত কমিটি, যা আদতে নতুন বোতলে পুরনো মদ, সেই ধন্ধ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে যে মোদী-শাহ আদৌ পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্ব সরাসরি নিতে আগ্রহী নাকি, ভাইপোর জুজু দেখিয়ে, দিদিকে সামনে রেখে যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান আর্থিক ও সামাজিক পরিস্থিতি যেমন দাঁড়িয়েছে, এমতাবস্থায় সরাসরি দায়িত্ব নিলে সেটার সম্পূর্ণ দায়ভার গিয়ে চাপবে মোদী আর শাহর উপরে। মোদী-শাহকে ভাবতে হবে যে সেরকম পরিস্থিতিতে দায় নেয়ার মত যোগ্য মুখ এই রাজ্যে দলের আছে কিনা। বাংলাদেশ ও নেপাল সীমান্ত, জনসংখ্যার ভারসাম্যের দ্রুত পরিবর্তন, শিল্পপতিদের বিরূপ মনোভাব, এরকম অনেক বিষয়ের বোঝা এসে পড়বে দলের উপর যেগুলির জন্যে এখন অন্যকে দোষারোপ করেই দিব্যি কেটে যাচ্ছে।

এর সাথে আছে রাজ্যে কম্যুনিস্টদের উপস্থিতি যা নিঃসন্দেহে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের জন্যে অসুখকর বিষয়। এটা নিশ্চিত যে তৃণমূল একবার সরকার থেকে চলে গেলে দলটারই আর অস্তিত্ব থাকবেনা কারণ বাস্তবে এটা কোন দলই নয়, রাজ্য থেকে সিপিএম কে সরানোর একটা আন্দোলন মাত্র। এমতাবস্থায়, বিজেপি সরকার গড়লে যদি তৃণমূল কংগ্রেস ভেঙে যায় তাহলে স্বাভাবিক উত্থান হবে কম্যুনিস্টদের আর যেকোন দিনে, মোদীর কাছে, বিপক্ষ হিসাবে, কম্যুনিস্টদের থেকে মমতা ব্যানার্জী অনেক বেশী কাম্য।

তাই আমি এখনও ২০২১ এ, বিজেপির আগ্রহ নিয়ে সন্দিহান। আপনারা প্রশ্ন তুলতে পারেন যে, যদি বিজেপি নাও চায়, কিন্তু জনগণ চায়, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন হলেও তো জনগণ বিজেপিকে ভোট দিতে পারে, সেক্ষেত্রে কি হবে? ঠিকই বলেছেন, এরকম হতেই পারে তবে আমি বিশ্বাস করি যে মোদী-শাহ যদি এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে না চান, তাহলে রাজ্য নেতারা একের পর এক ভুলভাল বক্তব্য দিয়ে যাবেন যাতে তাদের থেকে স্বাভাবিক ভোটও সরে যায় আর সেরকম পরিস্থিতিতে, রাজ্যের কোন নেতা যদি নির্বাচনের আগে, গোর্খাল্যান্ড বা রাজ্যের স্বার্থ বিরোধী কোন বিষয়কে সমর্থন জানিয়ে দেন, তাহলেও আমি অবাক হবনা। নির্বাচন মিটলে কোন কেন্দ্রীয় নেতা সেই বক্তব্যকে নস্যাৎ করে দিতেই পারেন।

তাই আমি এখনই স্রোতে ভাসতে রাজী নয়। আগামী দুই-তিন মাসের ঘটনাবলীর উপর শুধু নজর রেখে যাবো।

https://bangla.hindustantimes.com/nation-and-world/pm-modi-much-popular-than-mamata-banerjee-in-west-bengal-says-c-voter-survey-31591109268643.html

No comments:

Post a Comment