Sunday, July 5, 2020

গুরুপূর্ণিমা


আজ গুরুপূর্ণিমা। স্মরণাতীত কাল থেকে, আজকের দিনটি ভারতবর্ষে গুরু পূজনের দিন হিসাবে পালিত। যদিও গুরুকে তাঁর শিষ্যরা প্রতিদিনই শ্রদ্ধা জানান কিন্তু আজকের দিনে যেহেতু মহর্ষি ব্যাসদেবের জন্ম, তাই দিন মাহাত্ম্য হিসাবে আজকের দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়।

সামাজিক জীবনের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই গুরুর প্রয়োজন আবশ্যিক। ছোটবেলায় বাড়ির গুরুজনেরা শিশুর গুরুর ভূমিকা পালন করেন। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পরে জীবনে আসেন শিক্ষাগুরু। শিক্ষা অন্তে, কর্মজীবনে প্রবেশ করলে সেখানে এবং গার্হস্থ্য জীবনেও উপযুক্ত গুরুর পথনির্দেশ সেই ক্ষেত্রগুলিকে সুন্দর করে তোলে।

ব্যক্তি ও সমাজজীবনের প্রতিটা পর্যায়ে গুরুর অপরিসীম ভূমিকা থাকলেও সাথে এটাও মাথায় রাখা উচিত যে প্রত্যেকের গুরুই, যিনি নশ্বর দেহের অধিকারী, তাঁর প্রতিটা সিদ্ধান্তই নির্ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাই তাঁকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু বা মহেশ্বরের সাথে তুলনা করা মানে উভয়েরই অপমান। কোনও অযোগ্য ব্যক্তিও কিছুলোকের কাছে, কিছু সময়ের জন্যে, গুরু হিসাবে স্বীকৃতি পেতেও পারে। এমতাবস্থায়, তাকে ঈশ্বরত্ব প্রদান মানে ঘোড়ার আগে গাড়ি জুতে চালানোর প্রচেষ্টা মাত্র। কারণ প্রকৃত গুরু নিজে কখনই লক্ষ্য নন, আর তিনি সেটা সাজার চেষ্টাও করেন না, বরং লক্ষ্যে পৌছানোর পথপ্রদর্শক মাত্র। সম্ভবত এই কারণেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা, ডাক্তারজী, কোন ব্যক্তি গুরুর বদলে ধ্যেয় বা আদর্শের প্রতীক গেরুয়া পতাকাকে বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের গুরু হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন।

প্রকৃত গুরুর পথনির্দেশ যেমন জীবনকে সুন্দর পথে নিয়ে যেতে পারেন তেমনি গুরু যদি স্থুল স্বার্থ দ্বারা প্রভাবিত হন, তাহলে তার পথনির্দেশ শিষ্যদের বিভ্রান্ত করতে বাধ্য। এমতাবস্থায় আমাদের প্রত্যেকের কাছেই এমন একজন গুরু আছেন যে কখনও বিপথে চালিত করতে পারেনা, আর সেই গুরু হলেন আত্মদীপ বা আমাদের বিবেক। এই কারণেই পরিনির্বাণের সময়, ভগবান বুদ্ধ, নিজের অবর্তমানে, শিষ্যদেরকে আত্মদীপের পথে চলার পরামর্শ দিয়েছিলেন। আপনি জীবনে অন্য গুরুর সান্নিধ্যে যদি নাও পান, আপনার ভিতরের গুরু, কম্পাসের মত, সবসময়ই আপনাকে ঠিক রাস্তা চিনিয়ে দেবে। তবে আপনি সেই রাস্তায় চলবেন কিনা, সেটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।

No comments:

Post a Comment