Sunday, August 16, 2020

প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস

প্রতি বছর ১৬ই আগস্ট আমাদের ১৯৪৬ সালের ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে'র কথা মনে করিয়ে দেয় আর প্রশ্ন তোলে যে আমরা কতটা প্রস্তুত আছি। সেদিন জিন্নাহর আহ্বানে হওয়া প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবসের মর্ম হিন্দুরা প্রথমে বুঝতে পারেনি। তারা ভেবেছিল যে সেটা কোনও ছুটির দিন। তাদের ভুল ভাঙলো যখন সংযুক্ত বাংলার তদানীন্তন প্রধান, সোহরাওয়ার্দীর প্রত্যক্ষ মদতে, কলকাতার অলিগলিতে, জেহাদিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নিরীহ হিন্দুদের উপর। গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং নামে কুখ্যাত সেই হত্যাকাণ্ডের সময়, বাংলার কষাই নামে কুখ্যাত সোহরাওয়ার্দীর আদেশে প্রশাসন ছিল নিষ্ক্রিয়। এই আক্রমণ আর কয়েকদিন চললে কলকাতা হিন্দু শূন্য হয়ে যেত যদি গোপাল পাঁঠা (মুখোপাধ্যায়), বিজয় সিং নাহারের মত হিন্দুরা, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সমর্থনে, একযোগে রুখে না দাঁড়াতেন এবং জেহাদিদেরকে তাদের ভাষাতেই জবাব না দিতেন। হিন্দু প্রতিরোধ গড়ে ওঠার পরেই সোহরাওয়ার্দী সেনা নামাতে বাধ্য হন।

১৯৪৬ সালে প্রতিরোধের পরেও প্রায় ছয় দশক ধরে এই কলকাতাতেই বসবাস করেছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায় ওরফে গোপাল পাঁঠা কিন্তু না কোন রাজনৈতিক দল আর না কোন সামাজিক সংগঠন তাঁর কীর্তি ও প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ইতিহাস বাঙালীর কাছে তুলে ধরেনি। অ্যাকাডেমিক মহলে বা স্থানীয় এলাকায় তিনি পরিচিত নাম হলেও, আপামর বাঙালীর কাছে তিনি ছিলেন অপরিচিত। আর অ্যাকাডেমিক কারণেও যারা ১৯৪৬ সালের পরিকল্পিত হিন্দুহত্যা এবং পরবর্তীতে হিন্দুদের প্রতিরোধের কথা জেনেছিলেন, তাঁরাও বিষয়টা নিয়ে আর খুব বেশী এগোননি। তাই ২০০৫ সাল অবধি তিনি কলকাতাতে জীবিত থাকলেও, তাঁর একমাত্র সাক্ষাৎকারটাও একজন বিদেশীর নেয়া।

চাকা ঘুরতে শুরু করলো ২০১৩ সাল থেকে যখন প্রবাসী কিছু সমর্থকের প্রয়াসের পরিপ্রেক্ষিতে ৪৬ এর গণহত্যা ও গোপাল পাঁঠার ভূমিকা নিয়ে সরব হলেন হিন্দু সংহতির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, স্বর্গীয় তপন ঘোষ। তার পর থেকে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত, প্রতি বছর মুসলিম লীগের ডাকে হওয়া প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস আর হিন্দুদের প্রতিরোধের স্মৃতিতে আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠান। সেই বিশেষ দিনটা তে, কলকাতার রাস্তায় দাপিয়ে বেড়িয়েছে গোপাল পাঁঠার উত্তরাধিকারীরা। বাঙালীকে তাঁর ভুলে যাওয়া ইতিহাস এবং লড়াইয়ের সাফল্য পুনরায় মনে করিয়ে দিয়েছিল তপন দা।

তাঁর এই লড়াই সহজ ছিলনা। সমাজের বিভিন্ন হিন্দু বিরোধী শক্তির সাথে সাথে, হিন্দুত্বের তথাকথিত ধ্বজাধারী দলটিও তপনদার এই অনুষ্ঠান কে ব্যর্থ করতে উদ্যোগী হয়েছিল। ২০১৪ সালের এই বিশেষ দিনটাতেই, হঠাৎ তাদের ফুটবল প্রেম জেগে উঠেছিল। তাদের দলের সমর্থকরা যাতে তপনদার অনুষ্ঠানে না যায়, সেই জন্যে সেই বছর ১৬ আগস্ট আয়োজিত হয়েছিল পদযাত্রা। আর সেই পদযাত্রার সামনের সারিতে ছিলেন তৎকালীন রাজ্য বিজেপির এক নেতা যিনি বর্তমানে পূর্ব ভারতের একটা রাজ্যে রাজ্যপাল হিসাবে নিযুক্ত আছেন এবং তপনদার প্রয়াণের পর, সোশাল মিডিয়ায় আয়োজিত বিভিন্ন ওয়েবিনারে সুন্দর সুন্দর কথা বলে আসছেন। যাই হোক, তপনদার সভার সাফল্যে দেখে, সেই ফুটবল প্রেম আর টেঁকেনি আর তপনদার সৌজন্যে আজ বাঙালীও পেয়ে গেছে তাদের নিজস্ব আইকন।

No comments:

Post a Comment