Thursday, September 10, 2020

ঋণমুক্ত

 অনেকদিন আগের কথা, শহরের এক লেখক একটা প্রত্যন্ত গ্রামের দিকে বেড়াতে গেছেন। প্রথমবার গ্রামে গেছেন, যা দেখছেন সেটাই ভাল লাগছে। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, সেই ব্যক্তি সিদ্ধান্ত নিলেন যে আরও একদিন সেখানে থাকবেন। আরও ভালভাবে গ্রাম দেখবেন যাতে সেটা নিয়ে তিনি ভাল লেখা লিখতে পারেন।


রাতে থাকার সিদ্ধান্ত তো নিলেন, কিন্তু থাকবেন কোথায়? গ্রামে তো আর শহরের মত হোটেল নেই। গাড়িতে রাত কাটাতে পারেন কিন্তু সারাদিনের ক্লান্তির পর, গাড়িতে ঘুমালে ক্লান্তি মিটবেনা। একটু হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানোর যায়গা দরকার। লেখক রাস্তায় দেখা হওয়া কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, কিন্তু রাত্রিবাসের কোন খোঁজ দিতে পারলনা। অবশেষে সেই লেখক এক গ্রামবাসীর দেখা পেলেন যে জানালো যে পাশের গ্রামে একটা ছোট সরাইখানা মত আছে, সেখানে তিনি রাত কাটাতে পারেন। লেখক তো হাতে চাঁদ পেলেন, গাড়ি নিয়ে চললেন পাশের গ্রামে।

পাশের গ্রামে পৌছে, কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে, তিনি অবশেষে সেই সরাইখানায় পৌছালেন। তার বেশভূষা আর সঙ্গে গাড়ি দেখে সরাইখানার মালিক বুঝে গেল যে বেশ শাঁসালো মক্কেল, তাই সে ঘরের চারগুন ভাড়া হাঁকলো। লেখক বেচারার তখন ক্লান্তিতে অবস্থা বেহাল, তাই তিনি সেই ভাড়াতেই রাজী হলেন, তবে থাকার আগে একবার ঘর দেখে নিতে চাইলেন। সরাইখানার মালিক তাকে অর্ধেক ভাড়া অ্যাডভান্স হিসাবে জমা দিতে বললেন, ঘর পছন্দ নাহলে সেটা ফেরত দিয়ে দেবেন। লেখক তার মানিব্যাগ থেকে ১০০ টাকা কাউন্টারে জমা দিয়ে, এক কর্মচারীর সাথে ঘর দেখতে গেলেন।

টাকা পাওয়া মাত্রই সরাইখানার মালিক ছুটলেন মাংসের দোকানে, সেখানে অনেক বাকি পড়ে গিয়েছিল। ১০০ টাকা দিয়ে তিনি ঋণমুক্ত হলেন। সেই ১০০ টাকা পাওয়া মাত্রই কসাই ছুটলেন তার বাঁধা গণিকার কাছে, বেচারিকে অনেকদিন টাকা দেয়া হয়নি। গণিকাকে ১০০ টাকা দিয়ে কসাইও ঋণমুক্ত হলেন। এদিকে গণিকারও সরাইখানাতে, যেখানে তিনি খরিদ্দারদের নিয়ে আসতেন, টাকা বাকি পড়েছিল। কসাই টাকা শোধ করতেই, তিনি সেই টাকা সরাইখানার মালিককে দিয়ে তিনিও ঋণমুক্ত হলেন।

ইতিমধ্যে সেই লেখক ঘর দেখে ফিরে এসেছেন আর যে দাম তাকে দিতে হচ্ছে, সেই অনুযায়ী ঘরের অবস্থা দেখে তার মোটেই পছন্দ হয়নি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে রাতটা তিনি গাড়িতেই কাটাবেন। কাউন্টারে ফিরে এসে সেই কথা তিনি সরাইখানার মালিককে জানালেন এবং অ্যাডভান্স করা টাকা ফেরত চাইলেন। এরকম শাঁসালো খদ্দের ফস্কে যাওয়ায় মালিকের একটু দুঃখ হল ঠিকই কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী, বিনা বাক্যব্যয়ে তাকে টাকা ফেরত দিয়ে দিলেন।

দিনের শেষে, যার টাকা তার কাছেই ফিরে গেল আর মাঝখান থেকে তিনজন ঋণমুক্ত হয়ে গেলেন। দয়া করে কেউ এটার সাথে বলিউড ও রাজনীতির সম্পর্ক খুঁজবেন না। এটা নিছকই একটা গল্প।

No comments:

Post a Comment